পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৩৬-[১] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতাম। বস্তুতঃ তিনি যখন ’সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ পাঠ করতেন, তখন যে পর্যন্ত তিনি সাজদার জন্যে তাঁর কপাল মাটিতে না লাগাতেন, আমাদের কেউ নিজ পিঠ ঝুকাতেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا قَالَ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» . لَمْ يَحْنِ أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم جَبهته على الأَرْض
ব্যাখ্যা: (حَتّى يَضَعَ النَّبِيُّ ﷺ جَبهته على الأَرْض) বুখারীর এক বর্ণনাতে এসেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতক্ষণ পর্যন্ত সাজদারত অবস্থায় মাটিতে পতিত না হতেন। অতঃপর নাবীর পরে আমরা সাজদাতে পতিত হতাম অর্থাৎ এভাবে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজের সূচনা অপেক্ষা সাহাবীদের কাজের সূচনা পরে হত এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) থেকে উঠার আগে তাদের সাজদাতে যাওয়া শুরু হত। কেননা কোন কাজ যেমন ইমামের আগে করা যাবে না তেমনি ইমামের কোন কাজের হুবহু বিপরীতও করা যাবে না। হাদীসটিতে এমন কোন দলীল নেই যে, ইমাম কোন রুকন পূর্ণাঙ্গ না করা পর্যন্ত মুক্তাদী সে রুকনের কাজ শুরু করবে না। যা ইবনু জাওযীর মতের পরিপন্থী।
মুসলিমে ‘আমর বিন হুরায়স-এর হাদীসে এসেছে ‘‘আমাদের কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত তার পিঠ বাঁকাতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে সিজদারত না হতেন’’। আবূ ই‘য়ালা-তে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণিত আছে ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাতে যেতে সক্ষম না হতেন’’। ‘আয়নী বলেন, এ সকল হাদীসের অর্থ স্পষ্ট যে, ইমাম কোন রুকন শুরু করার পর মুক্তাদী সে রুকন শুরু করবে এবং ইমাম সে রুকন সমাপ্ত করার পূর্বে করতে হবে।
হাফিয এ দু’টি হাদীস উল্লেখের পর বলেনঃ ইমাম ও মুক্তদীর পারস্পারিক কাজ একই সময়ে না মিলানোর ব্যাপারে হাদীসদ্বয়ের বাচনভঙ্গি স্পষ্ট।
ইবনু দাক্বীক্ব আল ঈদ বলেনঃ বারার হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজের অনুকরণে সাহাবীদের কাজ বিলম্ব হওয়ার উপর প্রমাণ করছে। তা এভাবে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রুকনে পৌঁছার ইচ্ছা করেছেন সে রুকনে যতক্ষণ পর্যন্ত জড়িত না হতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কাজ শুরু করার সময়ে না। অপর হাদীসের শব্দ ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করবে অর্থাৎ রসূলের ঐ বাণী উদ্দেশ্য ‘‘অতঃপর তিনি ইমাম যখন রুকূ‘ করে তারপর তোমরা রুকূ' করবে আর যখন সিজদা্ করবে তখন তোমরা সিজদা্ করবে’’। নিশ্চয় এ হাদীসটি রুকূ‘, সাজদার অগ্রগামীতাকে দাবি করবে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ বারা, ‘আমর বিন হুরায়স, আনাস (রাঃ) এবং আরও যা এ সকল হাদীসের অর্থে প্রমাণ করছে সকল হাদীস ঐ ব্যাপারে দলীল যে, ইমামের সকল কাজে মুক্তাদীর অনুসরণ করা আবশ্যক এবং সুন্নাত হচ্ছে ইমাম এক কাজ থেকে অন্য কাজের দিকে স্থানান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের পরে স্থানান্তরিত হবে অর্থাৎ কোন রুকনে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের সাথে সাথে যাবে না। বরং ইমাম কোন অবস্থানে যাওয়ার ইচ্ছা করা থেকে মুক্তাদী কিছু বিলম্ব করবে।
ইমাম শাফি‘ঈ এ মতের দিকে গিয়েছেন এটাই হক। হানাফীগণ এ সকল হাদীসগুলোকে ঐদিকে চাপিয়ে দিয়েছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন স্থূল হয়েছিলেন তখন তিনি মুক্তাদীগণ তাঁর অগ্রগামী হয়ে যাবেন এ আশংকায় তিনি এ নির্দেশ তাদেরকে দিয়েছেন। তবে বিষয়টিকে এভাবে অন্য দিকে চাপিয়ে বা ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দলীল আবশ্যক। এ হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, এক রুকন থেকে আরেক রুকনের দিকে পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণের জন্য ইমামের দিকে দৃষ্টি দেয়া বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৩৭-[২] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন এবং বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের ইমাম। তাই তোমরা রুকূ’ করার সময়, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার সময়, দাঁড়াবার সময় সালাম ফিরাবার সময় আমার আগে যাবে না, আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে আমার সম্মুখ দিয়ে পেছন দিক দিয়ে দেখে থাকি। (মুসলিম)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَلَمَّا قَضَى صَلَاتَهُ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ: أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي إِمَامُكُمْ فَلَا تَسْبِقُونِي بِالرُّكُوعِ وَلَا بِالسُّجُودِ وَلَا بِالْقِيَامِ وَلَا بِالِانْصِرَافِ: فَإِنِّي أَرَاكُمْ أَمَامِي وَمن خَلْفي . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَلَا تَسْبِقُونِي بِالرُّكُوعِ وَلَا بِالسُّجُودِ وَلَا بِالْقِيَامِ وَلَا بِالِانْصِرَافِ) হাদীস থেকে অর্জন উল্লেখিত অবস্থাগুলোতে ইমামের অনুকরণ তথা ইমামের কাজের পর মুক্তাদী কাজ করবে তবে কতিপয় বিদ্বান উল্লেখিত দলীলের মাধ্যমে ইমাম ও মুক্তাদীর কাজ একই সময় সমাধা করাকে বৈধ বলেছেন। কিন্তু এ ধরনের প্রমাণ বহন করে যে, মুক্তাদী সালাতে কোন কাজ ইমামের আগে করবে না। অপরদিকে উল্লেখিত ভাষ্যের অর্থ প্রমাণ বহন করছে যে, প্রতিটি কাজ মুক্তাদীকে ইমামের পরে করতে হবে। পক্ষান্তরে মুক্তাদীর কাজ ইমামের সাথে সাথে হতে হবে এ ব্যাপারে হাদীসটি নিশ্চুপ। ইমাম নাবাবী বলেনঃ হাদীসে (انصراف) শব্দ দ্বারা সালাম ফিরানো উদ্দেশ্য।
এছাড়া এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, মুক্তাদী দু‘আ পাওয়ার উদ্দেশ্য ইমামের পূর্বে সালাতের স্থান থেকে উঠে যাওয়াকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য। অথবা (انصراف) দ্বারা সালাতের স্থান থেকে উঠে যাওয়াকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য এ কারণেও হতে পারে যে, হয়ত সালাতে ইমামের কোন ভুল হবে অতঃপর তা স্মরণ হলে ইমাম তা দোহরাবে এমতাবস্থায় সে মসজিদে থাকলে ইমামের সাথে তা দোহরাবে যেমন যুল ইয়াদাঈন এর ঘটনাতে ঘটেছে। অথবা মহিলারা যাতে পুরুষদের আগে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। যেমন তাশাহুদের ক্ষেত্রে দু‘আর অধ্যায়ে আনাসের পূর্বোক্ত হাদীসে নিষেধাজ্ঞার কারণ বর্ণনাতে বলা হয়েছে।
আর তা ‘‘নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সালাতের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন এবং সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) থেকে তাঁর ফিরে যাওয়ার পূর্বে তাদেরকে ফিরতে নিষেধ করেছেন’’ এ শব্দে বর্ণনা করেছেন। অধ্যায়ের হাদীসের ব্যাখ্যাতে ত্বীবী বলেনঃ হাদীসে (انصراف) দ্বারা সালাত পরিসমাপ্তি করাও উদ্দেশ্য হতে পারে এবং মাসজিদ থেকে বের হওয়াও উদ্দেশ্য হতে পারে। ক্বারী বলেনঃ আগে পরের সাথে মিল না থাকাতে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি চূড়ান্ত পর্যায়ের বাতিল অবস্থায় রয়েছে এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে মুসল্লীদের বের হওয়া সম্পর্কে কোন নিষেধাজ্ঞাও জানা যায়নি।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, দ্বিতীয় সম্ভাবনাটিকে আমাদের এইমাত্র বর্ণনা করা আনাস (রাঃ)-এর হাদীস সমর্থন করছে। একে আরও সমর্থন করছে তাশাহুদে দু‘আ করা অধ্যায়ে উম্মু সালামার পূর্বোক্ত হাদীস। আর তা ‘‘নিশ্চয় রসূলের যুগে মহিলাগণ যখন ফরয সালাতের সালাম ফিরাতো তখন তারা দাঁড়িয়ে যেত এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পুরুষদের থেকে যারা রসূলের সাথে সালাত আদায় করত তারা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী বিলম্ব করত।
অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাঁড়াতো তখন পুরুষেরাও দাঁড়াতো। (أَمَامِي) অর্থাৎ সালাতের বাইরে আমার সামনে। (وَمن خَلْفي) অর্থাৎ সালাতের ভিতরাংশে অলৌকিক পদ্ধতিতে লক্ষ্য করা। অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে যেমন আমার সামনের দিক থেকে দেখতে পাই যেমন পেছন দিক থেকে দেখতে পাই।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৩৮-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইমামের পূর্বে কোন ’আমল করো না। ইমাম তাকবীর দিলে তোমরাও তাকবীর দিবে। ইমাম যখন বলবে ’ওয়ালায্ যোল্লীন’, তোমরা বলবে ’আমীন’। ইমাম রুকূ’ করলে তোমরা রুকূ’ করবে। ইমাম যখন বলবে ’সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’, তোমরা বলবে ’’আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু’’। বুখারী, মুসলিম; তবে ইমাম বুখারী ’’ওয়াইযা- ক্বা-লা ওয়ালায্ যোল্লীন’’ উল্লেখ করেননি। (মুত্তাফাকুন ’আলায়হি)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ إِذَا كَبَّرَ فكبروا وَإِذا قَالَ: وَلَا الضَّالّين. فَقُولُوا: آمِينَ وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا: اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَك الْحَمد إِلَّا أَنَّ الْبُخَارِيَّ لَمْ يَذْكُرْ: وَإِذَا قَالَ: وَلَا الضَّالّين
ব্যাখ্যা: (لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ) অর্থাৎ তোমরা তাকবীর, রুকূ‘, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) এবং এগুলো থেকে উঠা ও ক্বিয়াম (কিয়াম), সালাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইমামের অগ্রগামী হবে না। (إِذَا كَبَّرَ فكبروا) অর্থাৎ ইহরামের জন্য অথবা সাধারণ তাকবীর। সুতরাং সালাতের এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থাতে পরিবর্তনের জন্য যে সকল তাকবীর ব্যবহার করা হয়। সকল তাকবীরকে অন্তর্ভুক্ত করবে। ইমাম আবূ দাঊদ একটু বেশি বর্ণনা করেছেন; (আর তোমরা তাকবীর দিবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম তাকবীর না দিবে।) وَإِذَا قَالَ: وَلَا الضَّالّيْنَ অর্থাৎ অতঃপর وَلَا الضَّالّيْنَ এর পর ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে (فَقُولُوا: امِينَ) অর্থাৎ ইমামের আমীনের সাথে মুক্তাদীর ‘আমীন’ মিলিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য না। (وَإِذَا رَكَعَ) অর্থাৎ যখন রুকূ‘ শুরু করবে। (فَارْكَعُوا) আবূ দাঊদ একটু বেশি বর্ণনা করেছেন (আর ইমাম যতক্ষণ পর্যন্ত রুকূ' না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা রুকূ' করবে না।) অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রুকূ' করতে শুরু না করবে তবে রুকূ' সমাপ্ত না করা পর্যন্ত এ অর্থ উদ্দেশ্য না। যেমন শব্দ থেকে বুঝা যাচ্ছে। (আর যখন সিজদা্ দিবে) অর্থাৎ যখন সিজদা্ দিতে শুরু করবে।
অতঃপর তোমরা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদা্ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম সিজদা্ না করবে। হাফিয বলেনঃ এ অংশটি উত্তম ধরনের বৃদ্ধিকরণ। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (ইমাম যখন তাকবীর দিবে অতঃপর তোমরা তাকবীর দিবে) এ উক্তি দ্বারা মুক্তাদীর তাকবীর ইমামের তাকবীরের সাথে মিলে যাওয়াকে উদ্দেশ্য করার যে সম্ভাবনা ছিল তা দূর করে দিচ্ছে। ‘আয়নী বলেনঃ সেই সাথে হাফিযও বলেন, আবূ দাঊদের এ বর্ণনা মুক্তাদীর তাকবীর ইমামের তাকবীরের সাথে হওয়া বা আগে হওয়াকে দূর করণে স্পষ্ট।
(وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه فَقُولُوا: اللّهُمَّ رَبَّنَا لَك الْحَمد) উল্লেখিত হাদীসাংশ দ্বারা ঐ সকল লোক দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ইমামের কর্তব্য (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه) শোনানো আর মুক্তাদীর কর্তব্য হাম্দ পাঠ করা।
কেননা এর বাহ্যিক দিক হল বিভক্তি, যা অংশীদারীত্ব এর পরিপন্থী। রুকূ‘র অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ) হাদীসটির মূলের ভিত্তিতে বুখারী ও মুসলিম। তবে ব্যবহৃত শব্দগুলা মুসলিমের, বুখারীর না। বুখারী এবং মুসলিমে হাদীসটির অনেক সানাদ ও শব্দ রয়েছে। সে সানাদগুলো থেকে বুখারী ‘‘কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণাঙ্গতা’’ অধ্যায়ে যা সংকলন করেছেন তা হল (ইমাম কেবল এজন্য বানানো হয়েছে যাতে তার অনুসরণ করা হয়। সুতরাং তাঁর বিপরীত কাজ তোমরা করবে না। সুতরাং তিনি যখন রুকূ‘ করবেন তোমরাও তখন রুকূ‘ করবে) আর যখন (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه) বলবেন তখন তোমরা (رَبَّنَا لَك الْحَمد) বলবে। আর তিনি যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবেন তখন তোমরাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। আর যখন তিনি বসে সালাত আদায় করবেন তখন তোমরাও সকলে বসে সালাত আদায় করবে।
আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করবে কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যতা। আর এটা মুসলিমেও আছে। তবে মুসলিমে ‘‘তোমরা কাতার সোজা কর’’ অংশ থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। তবে তিনি একটু বেশি উল্লেখ করেছেন ‘‘অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলবে তোমরাও তাকবীর বলবে’’। হাদীসে উল্লেখিত ‘‘আর তোমরা ইমামের বিপরীত কাজ করবে না’’ অংশ দ্বারা ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও তাঁর অনুসারীরা ঐ ব্যাপারে দলীল প্রহণ করেছেন যে, নফল সালাত আদায়কারীর পেছনে ফরয সালাত আদায়কারী সালাত আদায় করবে না। কেননা নিয়্যাতের ভিন্নতা এ ব্যাপক ও সাধারণ উক্তির অধীন।
তবে এর উত্তরে বলা হয়েছে এ ব্যাপক বিষয়টি শুধু প্রকাশ্য কার্যাবলীর ক্ষেত্রে ভিন্নতার উপর প্রয়োগ হবে অপ্রকাশ্য কার্যাবলীর ক্ষেত্রে না। আর তা এমন, যে ব্যাপারে মুক্তাদী অবহিত না। যেমন নিয়্যাত। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীন্নতর ধরণসমূহ তাঁর ‘‘আর ইমাম যখন তাকবীর দিবে তখন তোমরাও তাকবীর দিবে.....’’ শেষ পর্যন্ত। এ উক্তি ও অনুল্লেখিত আরও যা এর উপর ক্বিয়াস ধরে নেয়া যাবে তার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবং সে ধরণগুলোর মধ্যে থেকে একটি এই যা ইমাম বুখারী ‘‘তাকবীরে সাড়াদান করা’’ অধ্যায়ে সংকলন করেছেন। আর তা হল ‘‘ইমাম কেবল এজন্য বানানো হয়েছে যাতে তার অনুসরণ করা হয়। সুতরাং ইমাম যখন তাকবীর দিবে তখন তোমরাও তাকবীর দিবে। আর ইমাম যখন রুকূ‘ করবে তখন তোমরাও রুকূ' করবে। আর ইমাম যখন (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه) বলবে তখন তোমরা (رَبَّنَا لَك الْحَمد) বলবে। আর যখন সিজদা্ করবে তখন তোমরাও সিজদা্ করবে। যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করবে তখন তোমরাও সকলে বসে সালাত আদায় করবে।’’ হাদীসটিকে ইমাম আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী এবং ইবনু মাজাহও বর্ণনা করেছেন সেই সাথে বায়হাক্বী ২য় খন্ড ৯২ পৃষ্ঠা; তবে বুখারী (وَإِذا قَالَ: ﴿وَلَا الضَّالّيْنَ﴾ فَقُولُوا: امِينَ) অংশটুকু বর্ণনা করেননি। আর বুখারীতে কোন সানাদে ‘‘তোমরা ইমামের আগে কোন কাজ করবে না’’ অংশটুকু নেই। এ শব্দটিও এককভাবে ইমাম মুসলিমের।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৩৯-[৪] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক ভ্রমণের সময় ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন। ঘটনাক্রমে তিনি নীচে পড়ে গেলেন। ফলে তাঁর ডান পাঁজরের চামড়া উঠে গিয়ে চরম ব্যথা পেলেন (দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারছিলেন না)। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বসে বসে আমাদেরকে (পাঁচ বেলা সালাতের) কোন এক বেলা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। আমরাও তার পেছনে বসে বসেই সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ করে তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ইমাম এ জন্যেই নির্ধারিত করা হয়েছে যেন তোমরা তাঁর অনুকরণ করো। তাই ইমাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করালে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে। ইমাম যখন রুকূ’ করবে, তোমরাও রুকূ’ করবে। ইমাম রুকূ’ হতে উঠলে তোমরাও রুকূ’ হতে উঠবে। ইমাম ’সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ বললে, তোমরা ’রব্বানা- লাকাল হামদু’ বলবে। আর যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করাবে, তোমরা সব মুক্তাদী বসে সালাত আদায় করবে।
ইমাম হুমায়দী (রহঃ) বলেন, ’ইমাম বসে সালাত আদায় করালে’ তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ নির্দেশ, তার প্রথম অসুস্থের সময়ের নির্দেশ ছিল। পরে মৃত্যুশয্যায় (ইন্তিকালের একদিন আগে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত আদায় করিয়েছেন। মুক্তাদীগণ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন। তিনি তাদেরকে বসে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেননি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ শেষ ’আমলের ওপরই ’আমল করা হয়। এগুলো হলো বুখারীর ভাষা। এর ওপর ইমাম মুসলিম একমত পোষণ করেছেন। মুসলিমে আরো একটু বেশী বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ইমামের বিপরীত কোন ’আমল করো না। ইমাম সিজদা্ করলে তোমরাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। (বুখারী)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكِبَ فَرَسًا فَصُرِعَ عَنْهُ فَجُحِشَ شِقُّهُ الْأَيْمَنُ فَصَلَّى صَلَاةً مِنَ الصَّلَوَاتِ وَهُوَ قَاعِدٌ فَصَلَّيْنَا وَرَاءَهُ قُعُودًا فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا صَلَّى قَائِما فصلوا قيَاما فَإِذا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَإِذَا رَفَعَ فَارْفَعُوا وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا رَبنَا وَلَك الْحَمد وَإِذا صلى قَائِما فصلوا قيَاما وَإِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا أَجْمَعُونَ»
قَالَ الْحُمَيْدِيُّ: قَوْلُهُ: «إِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا» هُوَ فِي مَرَضِهِ الْقَدِيمِ ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَالنَّاسُ خَلْفَهُ قِيَامٌ لَمْ يَأْمُرْهُمْ بِالْقُعُودِ وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ بِالْآخِرِ فَالْآخِرِ مِنْ فِعْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ. وَاتَّفَقَ مُسْلِمٌ إِلَى أَجْمَعُونَ. وَزَادَ فِي رِوَايَةٍ: «فَلَا تختلفوا عَلَيْهِ وَإِذا سجد فاسجدوا»
ব্যাখ্যা: (الْأَيْمَنُ) ‘আবদুর রাযযাক্ব-এর বর্ণনাতে এসেছে (তাঁর ডান পায়ের নলা) আর তা অক্ষর বিকৃত না যেমন অনেকে ধারণা করেছেন। ‘‘ছাদে এবং কাষ্ঠ খন্ডে সালাত আদায়’’ অধ্যায়ে বুখারীর বর্ণনা যার অনুকূল। তাতে আছে, অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ের নলা বা কাঁধ জখমযুক্ত হয়ে গেল। বলা হয়ে থাকে নলা এর বর্ণনাটি দেহের ডান পাশের জখমযুক্ত স্থানের ব্যাখ্যাকারী। কেননা রসূলের সারা শরীর জখমযুক্ত হয়নি। আর এ হাদীসটি আবূ দাঊদে জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে তার বিপরীত না। তাতে আছে (অতঃপর তাঁকে খেজুর বৃক্ষের খন্ডের উপর ফেলে দেয়া হল তারপর তার পা মচকে গেল) দু’টি হাদীসের একটি অপরটির বিরোধী না হওয়ার কারণ এটাও হতে পারে। হয়ত দু’টি বিষয়ই সংঘটিত হয়েছে।
হাফিয বলেনঃ ইবনু হিব্বান বর্ননা করেন, এ ঘটনাটি হিজরতের পঞ্চম সনে যিলহাজ্জ মাসে ছিল। (فَصَلّى) অর্থাৎ অতঃপর তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর পান কক্ষে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন। যেমন জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে। (صَلَاةً مِنَ الصَّلَوَاتِ) অর্থাৎ ফরয সালাতসমূহ। ক্বারী বলেনঃ এটা ইবারতের বাহ্যিক দিক। একমতে বলা হয়েছে, সালাত বলতে নফল সালাতসমূহ। এক বর্ণনাতে আছে, অতঃপর সালাতের সময় উপস্থিত হল। কুরতুবী বলেনঃ সালাত দ্বারা ফরয সালাত উদ্দেশ্য। কেননা এ সালাত তাদের অভ্যাস থেকে যা পরিচিতি লাভ করছে তা হল তাঁর সাহাবীগণ ফরয সালাতের জন্য একত্রিত হত। নফলের জন্য না। ইয়ায ইবনুল ক্বাসিম থেকে বর্ণনা করেন নিশ্চয় তা ছিল নফল সালাতে। তবে এ মতের সমালোচনা করা হয়েছে যে, আবূ দাঊদে জাবির (রাঃ)-এর বর্ণনাতে দৃঢ়ভাবে যা আছে তা হল নিশ্চয় তা ফরয সালাতে ছিল।
হাফিয বলেনঃ এ সালাত নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আমি অবহিত হতে পারিনি। তবে আনাসের হাদীসে আছে ‘‘সেদিন আমাদেরকে নিয়ে তিনি সালাত আদায় করালেন যেন তা দিনের যুহরের অথবা ‘আসরের সালাত।’’
(وَهُوَ قَاعِدٌ) ক্বাযী ‘আয়ায বলেন, সম্ভবত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কিছু পতিত হয়েছিল ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেঁতলে যাওয়াতে তিনি দাঁড়াতে বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে একে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে নিশ্চয়ই তা এরূপ না উক্তির মাধ্যমে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পা কেবল মচকে গিয়েছিল। যেমন আমরা জাবির (রাঃ)-এর হাদীস থেকে উল্লেখ করেছি এবং অনুরূপ আহমাদে আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনাতে এবং ইসমা‘ঈলী বর্ণনাতে এসেছে।
(فَصَلَّيْنَا وَرَاءَه قُعُودًا) এভাবে এ বর্ণনাতে আছে ‘‘নিশ্চয়ই তারা তার পেছনে বসা ছিল’’। এটি আনাস (রাঃ) থেকে যুহরী কর্তৃক মালিক-এর বর্ণনা। এর বাহ্যিক দিক ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে ইমাম বুখারী ও অন্যান্যগণ যা বর্ণনা করেছেন তার বিপরীত। আর তা এ শব্দে ‘‘অতঃপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায় করলেন এবং সম্প্রদায় তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করল। অতঃপর তিনি তাদের দিকে ইঙ্গিত করলেন তোমরা বস’’। উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় নিশ্চয় আনাসের এ বর্ণনাতে সংক্ষিপ্ততা রয়েছে।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বসার নির্দেশ দেয়ার পর অবস্থা যেদিকে গড়িয়েছে আনাস (রাঃ) তার উপরই যেন সীমাবদ্ধ থেকেছেন। বুখারীতে ছাদে সালাত আদায় অধ্যায়ে আনাস (রাঃ) থেকে হুমায়দ এর বর্ণনাতে এ শব্দে এসেছে, ‘‘অতঃপর তিনি তাদেরকে নিয়ে বসাবস্থায় সালাত আদায় করেছেন যে, এমতাবস্থায় তারা দাঁড়ানো। অতঃপর তিনি যখন সালাম ফিরালেন বললেন, ইমাম কেবল বানানো হয়েছে..... শেষ পর্যন্ত’’ আর এতেও সংক্ষিপ্ততা রয়েছে। কেননা সে তাঁর উক্তি ‘‘তাদেরকে তিনি বললেন, তোমরা বস’’ উল্লেখ করেনি।
উভয় হাদীসের সমন্বয়, প্রথমে সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছিল, অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বসার জন্য ইশারা করলে তারা বসে যায়। যুহরী এবং হুমায়দ প্রত্যেকে দু’টি বিষয়ের একটি বর্ণনা করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উভয় হাদীসকে একত্র করেছেন, অনুরূপভাবে মুসলিমে জাবির (রাঃ) উভয় হাদীসকে একত্র করেছেন। কুরতুবী উভয় হাদীসের মাঝে এ সম্ভাবনার কথা বলে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তাদের কতক শুরুতে বসা ছিল আর এ বিষয়টিকেই আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। আর কতকে দাঁড়ানো ছিল অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বসার ব্যাপারে ইঙ্গিত করে আর এটি ঐ বিষয় যা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি ছাড়া সাহাবীদের কতক বসে যাওয়ার বিষয়টিকে অসম্ভব মনে করে সমালোচনা করা হয়েছে, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি ছাড়া বসে যাওয়া মূলত ইজতিহাদের মাধ্যমে রহিতকরণকে দাবি করছে। কেননা সক্ষম ব্যক্তির ফরয সালাত মূলত দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়। অন্যান্যগণ উভয় নির্দেশের মাঝে এ সম্ভাবনা দিয়ে সমন্বয় সাধন করেছেন যে, ঘটনার একাধিকতা রয়েছে। তবে এতেও অসম্ভাবনা রয়েছে। কেননা আনাসের ঘটনা যদি পূর্বের ঘটনা হয় তাহলে ইজতিহাদের মাধ্যমে রহিতকরণ আবশ্যক হয়ে যাওয়ার যে কথাটি ইতিপূর্বে বলা হল তা আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে ‘‘অথচ ইজতিহাদের মাধ্যমে রহিত করা বিশুদ্ধ না’’। পক্ষান্তরে যদি পরের ঘটনা হয় তাহলে (إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِه) দোহরানোর প্রয়োজন ছিল না।
কেননা ইতিপূর্বে তাঁরা সাহাবীগণ রসূলের পূর্বোক্ত নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছে এবং রসূলের বসে সালাত আদায়ের কারণে তারাও বসে সালাত আদায় করেছে। ফাতহুল বারীতে এভাবেই আছে।
(لِيُؤْتَمَّ بِه) যাতে তার অনুসরণ করা হয় যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (فإذا صلى قائماً الخ) উক্তিটুকু (ليقتدي به) এর ব্যাখ্যা। আর অনুসরণকারীর অবস্থা এরূপ যে, সে অনুসরণীয় ব্যক্তির আগে কোন কাজ করবে না এবং তার সাথে সাথে কোন কাজ করবে না এবং কোন অবস্থানে তার আগে বাড়বে না বরং তার অবস্থাগুলো পর্যবেক্ষণ করবে।
তারপরে তার অনুরূপ কাজ করবে। আর এ কথার দাবি হল হাদীস যে অবস্থাগুলো ব্যাখা করে দিয়েছে এবং যেগুলোর ব্যাখ্যা করেনি বরং ক্বিয়াস করে সে অবস্থাগুলোর কোন অবস্থাতেই ইমামের বিরোধিতা করবে না। তবে তা বাহ্যিক কর্মগুলোর সাথে নির্দিষ্ট এবং তা গোপনীয় কাজগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে না। গোপনীয় কাজ বলতে সালাতের সকল অবস্থাতে মুক্তাদী কর্তৃক ইমামের অনুসরণ করা।
সুতরাং অনুসরণের সাথে সাথে কাজ করা, আগে কাজ করা এবং বিপরীত কাজ করাকে অস্বীকার করে। ইমাম নাবাবী বলেনঃ বাহ্যিক সকল ক্ষেত্রে ইমামের অনুকরণ করা আবশ্যক। হাদীসে এ বাহ্যিক কর্মগুলোর ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। সুতরাং রুকূ' এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর উল্লেখ নিয়্যাতের বিপরীত। কেননা নিয়্যাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে নিয়্যাত অন্য দলীল কর্তৃক সংকলিত হয়েছে। অন্য দলীল বলতে ক্বিরাআত (কিরআত) অধ্যায়ে মু‘আয-এর পূর্বোক্ত ঘটনা, অচিরেই হাদীসটি যে ব্যক্তি এক সালাতকে দু’বার আদায় করবে এ অধ্যায়ে আসছে। এ হাদীস দ্বারা আরও ঐ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ সম্ভব যে, ইমামের অনুকরণের অধীনে নিয়্যাত প্রবিষ্ট না।
কেননা ইমামের অনুকরণ ইমামের কর্মসমূহের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার দাবীদার। তার সকল অবস্থার ক্ষেত্রে না। উদাহরণ স্বরূপ যদি ইমামের উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যায় তাহলে বিদ্বানদের নিকট বিশুদ্ধ মতে এ ধরনের ইমামের পেছনে ঐ ব্যক্তির কি সালাত আদায় বৈধ হবে যে তার অবস্থা সম্পর্কে জানে না। অতঃপর অনুকরণ আবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও অনুকরণ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে অনুকরণের বিষয়গুলো থেকে একমাত্র তাকবীরে তাহরীমাহ্ ছাড়া অন্য কিছুকে শর্ত করা হয়নি। তবে সালাম ফিরানোর ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে মালিকীদের প্রসিদ্ধ মত হল, ইহরাম ও প্রথম তাশাহুদ এর ক্বিয়ামের সাথে সালামও শর্তারোপিত।
আর হানাফীগণ তাদের বিরোধিতা করে বলেছে; অনুকরণ ইমামের সাথে সাথে যথেষ্ট হবে। হানাফীগণ বলেন, অনুকরণের অর্থ হল বাস্তবায়ন করা। আর যে ব্যক্তি ইমামের কাজের মতো কাজ করবে তাকে বাস্তবায়নকারী বলে গণ্য করা যাবে। চাই তার সাথে অথবা তার পরে বাস্তবায়ন করুক। আর রুকনসমূহের ক্ষেত্রে ইমামের অগ্রগামী হওয়া হারাম এ ব্যাপারে প্রমাণ বহনকারী আবূ হুরায়রার হাদীস অচিরেই আসছে।
(فَإِذَا صَلّى قَائِما فصلوا قيَاما فَإِذا رَكَعَ فَارْكَعُوا)
বুখারীর এক বর্ণনাতে আছে (আর ইমাম যখন তাকবীর দিবে তখন তোমরাও তাকবীর দিবে আর যখন রুকূ' করবে তখন তোমরাও রুকূ' করবে) এখানে তাকবীর গোপন আছে, যা উদ্দেশিত।
(وَإِذَا رَفَعَ فَارْفَعُوا) বুখারীর এক বর্ণনাতে এসেছে ‘‘আর তিনি যখন তার মাথা উঠাবেন তখন তোমরাও মাথা উঠাবে। আর যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবেন তখন তোমরাও সিজদা্ করবে।’’ আর উঠানো কথাটি রুকূ' ও সিজদা্ উভয় থেকে মাথা উঠানোকে অন্তর্ভুক্ত করছে। অনুরূপ সকল সাজদাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
(رَبنَا لَك الْحَمد) এভাবে সকল কপিতে (لَكَ الْحَمد) (و) বর্ণ ছাড়া আছে। বুখারীতে (واو) বর্ণ সহকারে। হাফিয বলেনঃ এভাবে সকল বর্ণনাতে আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে (واو) বর্ণের মাধ্যমে আছে। তবে (তাকবীরের সাড়াদান অধ্যায়ের) যুহরী কর্তৃক লায়স-এর বর্ণনাতে (واو) বর্ণ ছাড়া আছে, অতঃপর কাশমিহীনী-এর বর্ণনাতে (واو) বর্ণ ছাড়া আছে। তবে (واو) বর্ণের বিদ্যমানতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কেননা তা অংশের উপর ‘আত্বফ হওয়ার কারণে তাতে অর্থের আধিক্যতা রয়েছে। (فَصَلُّوا جُلُوسًا أَجْمَعُونَ) হাফিয বলেন, এভাবে বুখারী ও মুসলিমের সকল সানাদে (واو) বর্ণের মাধ্যমে। অর্থাৎ (جلوسا) শব্দটি واۤو সহ বহুবচনের মাধ্যমে।
হাদীসে অনেক মাস্আলাহ্ আছে।
প্রথম মাসআলাহ্ঃ ইমামের অনুকরণ করা আবশ্যক, সুতরাং ইমাম ইহরামের তাকবীর থেকে অবসর নেয়ার পর ইহরামের জন্য তাকবীর দিতে হবে। ইমাম তার তাকবীরে তাহরীমাহ্ শেষ না করা পর্যন্ত সালাতে প্রবেশ করে না।
সুতরাং তাকবীরের মাঝে ইমামের অনুকরণ করা মূলত এমন ব্যক্তির অনুকরণ করা যে ব্যক্তি সালাতের মাঝে না। তবে তা রুকূ', সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ও অনুরূপ বিষয়ের বিপরীত। ইমাম রুকূ' শুরু করার পর রুকূ' করতে হবে। অতএব মুক্তাদীর রুকূ' যদি ইমামের রুকূ‘র সাথে সাথে হয় বা ইমামের আগে হয় তাহলে মুক্তাদী মন্দ কাজ করল তবে সালাত বাতিল হবে না। অনুরূপভাবে সাজদাতে আর ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদী সালাম ফেরাবে। অতঃপর মুক্তাদী যদি ইমামের আগে সালাম ফেরায় তাহলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে। তবে ইমামের পরে বা সাথে সালাম ফেরালে সালাত নষ্ট হবে না। কেননা এ অবস্থাতে মুক্তাদী স্বাধীন বা বাঁধনমুক্ত এক্ষেত্রে অনুকরণের প্রয়োজন নেই। তবে তা আগে সালাম ফেরানোর বিপরীত। কেননা তা অনুসরণের পরিপন্থী। এ উক্তিটি করেছেন কুস্তুলানী।
দ্বিতীয় মাস্আলাহ্ঃ ঘোড়াতে আরোহণ করা, স্বভাবে প্রকৃতির ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নেয়া যে ব্যক্তির কোন বিপদ বা সমস্যা এবং অনুরূপ কিছু যা এ ঘটনাতে সংঘটিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘটনার সাথে মিল এমন কিছু সংঘটিত হবে তার জন্য সান্ত্বনা লাভ করা শারী‘আত সম্মত এবং তাঁর মাঝে আছে উত্তম নমুনা।
তৃতীয় মাস্আলাহ্ঃ নিশ্চয় জ্বর এবং অনুরূপ সমস্যাদি যা মানুষের হয়ে থাকে তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হওয়াও সম্ভব। এ সমস্যার ক্ষেত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর কোন ক্রমে কম হওয়ার না। বরং এ সমস্যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা উঁচু করা, তাঁর আসন আরও মহিমান্বিত করা।
চতুর্থ মাস্আলাহ্ঃ কারো জখম বা অনুরূপ কোন সমস্যা হলে তার সেবা করা সুন্নাত।
পঞ্চম মাস্আলাহ্ঃ অপারগতার সময় বসে সালাত আদায় বৈধ। বসার ক্ষেত্রে ইমামের অনুকরণ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে দাঁড়ানোর উপর মুক্তাদীর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মুক্তাদী বসে সালাত আদায় করবে। এ ব্যাপারে ইমামগণ মতানৈক্য করেছেনঃ অতঃপর হাদীসটির বাহ্যিক দিক অবলম্বন করেছেন ইসহাক, আওযা‘ঈ, দাঊদ এবং বাহ্যিক দিক অবলম্বনকারীদের অবশিষ্টগণ। তারা বলেন, বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পিছনে বসে সালাত আদায় আবশ্যক। যদিও সম্প্রদায় সুস্থ থাকে।
ইবনু হাযম ‘আল মুহাল্লা’ গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডে ৬৯ পৃষ্ঠাতে বলেন, আমরা একটিই (এ মাসআলাটি) গ্রহণ করি তবে যে ব্যক্তি ইমামের পাশে সালাত আদায় করবে এবং মানুষকে ইমামের তাকবীর জানিয়ে দিবে সে ব্যক্তি বসে এবং দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে ইচ্ছাধীন। ইমাম আহমাদ ব্যাখ্যার পথ অবলম্বন করেছেন। তিনি বলেন, এলাকার স্থায়ী ইমাম যখন মুক্তি লাভের আশা করা যায় এমন রোগের কারণে বসে সালাত আদায় করবে তখন তার পেছনে মুক্তাদীরা বসে সালাত আদায় করা সুন্নাত। যদিও তারা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে সক্ষম এবং ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় বিশুদ্ধ হবে।
তার নিকট হাদীসটির হারাম ঐ দিকে গড়াবে যে, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ইমাম বসে সালাত আদায় করাবস্থায় মুক্তাদীরা বসে সালাত আদায় করবে এবং তা এলাকার এমন স্থায়ী ইমামের সাথে শর্তযুক্ত যার রোগ দূর হওয়ার আশা করা যায়। হাদীসে বসার ব্যাপারে নির্দেশটি সুন্নাত অর্থে ব্যবহৃত। তিনি বলেন, স্থায়ী ইমামের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। চাই ইমামের বসে সালাত আদায় করাকে দাবি করে এমন বিষয়টি হঠাৎ সংঘটিত হোক বা না হোক।
যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মরণের রোগ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোতে এসেছে। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বসার ব্যাপারে অনুমতি দেয়নি। কেননা তাদের ইমাম আবূ বাকর দন্ডায়মান অবস্থায় তার সালাত শুরু করেছিল। অতঃপর বাকী সালাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসাবস্থায় তাদের ইমামতি করেছেন। যা আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে উল্লেখিত রসূলের প্রথম অসুস্থাবস্থায় সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায়ের বিপরীত। কেননা তিনি প্রথমে বসাবস্থায় তার সালাত শুরু করেছিলেন, অতঃপর তাদেরকে বসতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইমাম শাফি‘ঈ, আবূ হানীফা এবং আবূ ইউসুফ ঐ দিকে গিয়েছেন, দাঁড়াতে সক্ষম এমন সালাত আদায়কারীর জন্য বসে ইমামতি করা ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় না করলে তার সালাত আদায় বৈধ হবে না। এটি মালিক-এর বর্ণনা যা ওয়ালীদ বিন মুসলিম তার থেকে বর্ণনা করেছেন।
তারা বলেন, আপত্তির কারণে বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে মুক্তাদীদের বসে সালাত আদায়ের নির্দেশ রহিত হয়ে গেছে। এর রহিতকারী হল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মরণের অসুস্থতায় মানুষ নিয়ে বসে সালাত আদায় করা এমতাবস্থায় সাহাবীগণ ও আবূ বাকর দাঁড়ানো। ইমাম শাফি‘ঈ এভাবেই স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং ইমাম বুখারী তার উস্তায হুমায়দী থেকে একে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি ইমাম শাফি‘ঈর ছাত্র। রহিত হওয়ার দাবি সম্পর্কে উত্তর অচিরেই আসছে। ইমাম মালিক নিজ থেকে প্রসিদ্ধ বর্ণনানুযায়ী ঐ দিকে গিয়েছেন যে, দাঁড়িয়ে অথবা বসে কোন অবস্থাতেই সালাত আদায় বৈধ হবে না। এটি ত্বহাবী বর্ণিত মুহাম্মাদের উক্তি। মালিকীরা বলেনঃ আপত্তিবশতঃ বসে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা ব্যক্তি, তার মতো বসা ব্যক্তির বা দন্ডায়মান ব্যক্তির ইমামতি করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নির্দিষ্ট।
কেননা আপত্তি বা আপত্তি ছাড়া যে কোন অবস্থাতে সালাতের ক্ষেত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগে বাড়া বিশুদ্ধ হবে না। তবে ‘আবদুর রহমান বিন আওফ ও আবূ বাকর-এর পেছনে রসূলের সালাত আদায় করার কারণে এ ধরনের উক্তিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অতঃপর যদি মেনেই নেয়া হয় কারো জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতি করা বৈধ হবে না। তাহলে এ ধরনের মাসআলাহ্ বসে ইমামতি করা নিষিদ্ধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করবে না। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর সাহাবীদের একটি দল বসে ইমামতি করেছেন।
তাঁদের মাঝে আছে উসায়দ বিন হুযায়র, জাবির, ক্বায়স বিন ক্বাহদ এবং আনাস বিন মালিক (রাঃ)। এ ব্যাপারে তাদের থেকে সানাদগুলো বিশুদ্ধ। এগুলোকে ‘আবদুর রাযযাক্ব, সা‘ঈদ বিন মানসূর ইবনু আবী শায়বাহ্ ও অন্যান্যগণ সংকলন করেছেন। বরং ইবনু হিব্বান ও ইবনু আবী শায়বাহ্ দাবি করেছেন বসে ইমামতি বিশুদ্ধ হওয়ার উপর সাহাবীগণ একমত। আবূ বাকর ইবনুল ‘আরাবী বলেন, আমাদের সাথীদের কাছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুস্থতার হাদীস সম্পর্কে নিখুঁত কোন উত্তর নেই। আর সুন্নাতের অনুসরণ করা উত্তম। সম্ভাবনার মাধ্যমে খাস প্রমাণিত হয় না।
তিনি বলেনঃ তবে আমি কতক শায়খকে বলতে শুনেছি; অবস্থা খাস করণের ধরণসমূহের একটি। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থা, তাঁর মাধ্যমে বারাকাত গ্রহণ এবং কেউ তাঁর বদল হতে না পারা যে, কোন অবস্থাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সালাত আদায়কে দাবি করেছে। এ বিশেষত্ব অন্য কারো জন্য না। সুতরাং দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা বসে সালাত আদায়ের যে ঘাটতি রয়েছে তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করা যায় না। সুতরাং রসূলের বসে সালাত আদায় করাতে কোন ঘাটতি নেই। আবূ বাকর ইবনুল ‘আরাবীর প্রথম উক্তি সম্পর্কে উত্তর হল তার প্রথম উক্তিটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আম বাণী দ্বারা প্রত্যাখ্যাত।
দ্বিতীয় উক্তিটি সম্পর্কে উত্তর হল নফল সালাতের ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে সক্ষম; তথাপিও এ ধরনের ব্যক্তি বসে সালাত আদায় করতে সাওয়াবের কমতি রয়েছে। অপরপক্ষে আপত্তিজনিত কারণে ফরয সালাতের ক্ষেত্রে না দাঁড়িয়ে বসে বা অন্য কোনভাবে সালাত আদায় করাতে সাওয়াবের ঘাটতি নেই। ইবনু দাক্বীক আল ঈদ বলেনঃ সুপরিচিত যে মূল হল যতক্ষণ পর্যন্ত খাসের উপর দলীল প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুকে খাস না করা।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর সাহাবীগণের একটি দল বসে ইমামতি করেছেন বিধায় বসে ইমামতি করার বিষয়টি রসূলের সাথে খাস করা দোষণীয়। বিদ্বানদের কতক দারাকুত্বনী এর কিতাবের ১৫৩ পৃষ্ঠাতে এবং বায়হাক্বী এর কিতাবের তৃতীয় খন্ড ৮০ পৃষ্ঠাতে মারফূ' সূত্রে শা‘বী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা খাসের ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। হাদীসটি হল (আমার পর কেউ যেন বসাবস্থায় ইমামতি না করে) তবে এ ব্যাপারে উত্তর দেয়া হয়েছে যে, হাদীসটি বাতিল। কেননা তা শা‘বী থেকে মুরসালরূপে জাবির জু’বী কর্তৃক বর্ণিত।
আর জাবির মাতরূক। শা‘বী থেকে মুজালিদ এর বর্ণনা কর্তৃকও বর্ণনা করা হয়েছে জমহূর বিদ্বানগণ মুজালিদকে দুর্বল বলেছেন। ইআয তাদের কতক উস্তাদ থেকে বর্ণনা করেছেন সামষ্টিকভাবে শা‘বির উল্লেখিত হাদীস দ্বারা বসে ইমামতি করার বিষয়টি রহিত হয়েছে। তবে এর সমালোচনাতে বলা হয়েছে, যদি রহিত হওয়ার বিষয়টি বিশুদ্ধ মনে করা হয় তাহলে তা ইতিহাসের মুখাপেক্ষী। অথচ তা বিশুদ্ধ না যেমন আমরা অতিবাহিত করেছি।
(قَالَ الْحُمَيْدِيُّ) ইনি ইমাম বুখারীর উস্তায ও শাফি‘ঈর ছাত্র। তার নাম ‘আবদুল্লাহ বিন যুবায়র বিন ‘ঈসা বিন ‘উবায়দুল্লাহ বিন যুবায়র বিন ‘উবায়দুল্লাহ বিন হুমায়দ আল কুরাশী আল আসাদী আল মাক্বী আবূ বাকর। তিনি নির্ভরশীল, ফাক্বীহ, হাফিয ইবনু ‘উয়াইনাহ্ এর সাথীবর্গের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাবান।
হাকিম বলেন, ইমাম বুখারী যখন হুমায়দী এর কাছে কোন হাদীস পেতেন হুমায়দীর প্রতি আস্থার কারণে তখন তা অন্যের দিকে ঘোরাতেন না। যুহরাতে আছে বুখারী তার থেকে ৭৫টি হাদীস বর্ণনা করেছেন আর তা বুখারীর এককভাবে। তিনি মক্কাতে ২১৯ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। একমতে বলা হয়েছে এর পরে। আর এ হুমায়দী মূলত ঐ হুমায়দী না যিনি (الجمع بين الصحيحين) কিতাবের লেখক।
(هُوَ فِي مَرَضِهِ الْقَدِيمِ) অর্থাৎ তার এ অসুস্থতা যা ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে হয়েছিল। ক্বারী বলেনঃ অর্থাৎ যখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে ঈলা করেছিলেন। আর তাতে আছে প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ঈলা এর ঘটনা ৯ম হিজরীতে ছিল। আর আনাস (রাঃ), ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও জাবির (রাঃ)-এর হাদীসে ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ার উল্লেখিত ঘটনা ইবনু হিব্বান-এর তথ্যানুযায়ী ৫ম হিজরীতে। এ ব্যাপারে ‘আয়নী, কুস্তুলানীও তারীখুল খামীস-এর গ্রন্থকার দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন। (ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ ذلِكَ) অর্থাৎ তাঁর মরণের অসুস্থতাতে।
(جَالِسًا وَالنَّاسُ خَلْفَهُ قِيَامٌ لَمْ يَأْمُرْهُمْ بِالْقُعُودِ وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ بِالْآخِرِ فَالْآخِرِ مِنْ فِعْلِ النَّبِيِّ ﷺ) অর্থাৎ যার প্রতি ‘আমল করা আবশ্যক তা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ নির্দেশ যার উপর স্থির হবে। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’টি বিষয়ের শেষ বিষয় যা ছিল তা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে ইমামতি করা এবং মুক্তাদীরা তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা। যা ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করে যে, ইতিপূর্বে বিষয়টির হুকুম যা ছিল তা উঠে গেছে এবং রহিত হয়ে গেছে। এটিই আনাস (রাঃ) এর হাদীস এবং তাঁর হাদীসের অর্থে ব্যবহৃত অন্যান্য হাদীস সম্পর্কে প্রসিদ্ধ উত্তর। আর এ উত্তর তাদের তরফ থেকে যারা বসে ইমামাতকারী ব্যক্তির পেছনে মুক্তাদীদের দাঁড়ানোকে আবশ্যক মনে করে। আর এদিকেই বুখারীর ঝোঁক প্রকাশ পেয়েছে। যেমন তিনি হাদীসটি সংকলনের পর তার উস্তায হুমায়দীর এ কথাটি উল্লেখ করেছেন। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর সমালোচনা করেননি। তিনি ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে ‘আয়িশার হাদীস উল্লেখের পর কিতাবুল মারযাতে বলেছেন, হুমায়দী বলেন, এ হাদীসটি রহিত হয়ে গেছে। আবূ ‘আবদুল্লাহ (স্বয়ং বুখারী) বলেন, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ যে সালাত আদায় করেছেন তা বসে আদায় করেছেন। এমতাবস্থায় মানুষ তার পেছনে দাঁড়ানো ছিল।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, এ উত্তরে বহুদিক থেকে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন আছে। দিকগুলো থেকে একটি হল আনাসের হাদীস এবং তার হাদীসের অর্থে ব্যবহৃত হাদীস একটি কায়িদাহ্ কুল্লিয়্যাহ্ বা পূর্ণাঙ্গ নীতি। জাতির জন্য এক ব্যাপক আইন প্রণয়ন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার মরণের অসুস্থতায় যা প্রকাশ পেয়েছে তা আংশিক ঘটনা, অবস্থানকে প্রকাশ করছে না এবং অবস্থার বর্ণনা বহু সম্ভাবনা রাখে।
বুঝা যাচ্ছে না সে ঘটনা কি বসে সালাত আদায় করা ইমামের পেছনে মুক্তাদীদের বসে সালাত আদায়ের বিষয়টিকে রহিত করে দিচ্ছে নাকি এ কথা বর্ণনা করে দেয়ার জন্য যে, উল্লেখিত নির্দেশটি ওয়াজিবের জন্য না বরং সুন্নাতের জন্য অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে? কেননা তাদের ইমাম সালাত দাঁড়িয়ে শুরু করেছিল, অতঃপর ইমাম তাদেরকে মূল বসা ও জরুরী বসা এবং এমন রোগ যা দূর হওয়ার আশা করা যায় ও এমন রোগ যা দূর হওয়ার আশা করা যায় না এদের মাঝে পার্থক্য করণার্থে দাঁড়াতে স্বীকৃতি দেয়। এ ধরনের আংশিক ঘটনার মাধ্যমে রহিত করার দাবী করা দুর্বোধ্যতা থেকে মুক্ত না। বরং তা জটিল। ফায়যুল বারী গ্রন্থকার বলেন, রহিতকরণের ব্যাপারে উক্তি (مقلوب) এর সাথে সম্পৃক্ত করা যায় না। কেননা হাদীসটি ব্যাপক আইন প্রণয়ন, পূর্ণাঙ্গ সংরক্ষণ এর দিক থেকে অনেক অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন সুন্নাত বর্ণনা করা, ইমাম-মুক্তাদীর মাঝে লেনদেন বর্ণনা করা। অতঃপর বিশৃঙ্খলার অন্তর্ভুক্তসমূহ থেকে কোন অংশ রহিত করার ব্যাপারে উক্তি করা এবং বাকী সামষ্টিককে নিজ অবস্থায় বহাল রেখে, অতঃপর বহু সম্ভাবনা রাখে এমন আংশিক ঘটনা সম্পর্কে উক্তি করা বিভিন্নতার দিকে ঠেলে দেয় এবং তৃষ্ণা নিবারণ করে না।
আমার জীবনের শপথ! আমারা যদি এ মাসআলাটি না জানতাম যে, যখন আমাদের কারো স্মৃতি ঐ দিকে স্থানান্তরিত হল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বসে সালাত আদায় করা রহিতকরণকে বর্ণনা করে দেয়ার জন্য ছিল। আর আমরা কেবল মাযহাব সংরক্ষণার্থে এ মাসআলাটিকে নসখের দিকে ঠেলে দিয়েছি। অন্যথায় আহমাদের মাযহাব অনুপাতে উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় অর্জন হবে। নসখের মুখাপেক্ষী হবে না। পাঠককে লক্ষ্য করে তিনি (ফায়যুল বারী গ্রন্থকার) বলেন, আপনি লক্ষ্য করছেন না যে, আমাদের হানাফী নেতৃস্থানীয় লোকগণ কেন ক্বিবলার দিকে মুখ করে বা পিঠ করে প্রস্রাব পায়খানা করার বৈধতার মাসআলাকে বর্জন করেছেন? এ ব্যাপারে বর্ণিত ঘটনাগুলোর প্রতি তারা ভ্রক্ষেপ করেননি।
আর তারা বলেছেন, নিশ্চয় এগুলো এমন বর্ণনা যা অবস্থাকে প্রকাশ করছে না এবং আবূ আইয়ূব-এর হাদীস ব্যাপক আইন প্রণয়নকারী। সুতরাং আমি জানি না এ উভয়ের মাঝে কি পার্থক্য? তারা এ ক্ষেত্রে নসখের বা রহিতকরণের পথ অবলম্বন করেছেন। ওখানে অবলম্বন করেনি।
দ্বিতীয় দিকঃ নিশ্চয় রহিতকরণ সম্পর্কে উক্তিটি ঐ কথার উপর নির্ভরশীল যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সালাতে ইমাম ছিলেন এবং আবূ বাকর মুক্তাদী ছিলেন। এ ব্যাপারে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। সিনদী ইবনু মাজার হাশিয়াতে বলেন, তার উক্তিঃ আবূ বাকর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করেছিলেন (অর্থাৎ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মরণের রোগ) এর বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম ছিলেন। এর বিপরীত বর্ণনাও এসেছে। এ হাদীসের বর্ণনাসমূহের মাঝে পারস্পরিক বৈপরীত্যের কারণে যারা এ হাদীস দ্বারা (আর তিনি [ইমাম] যখন বসে সালাত আদায় করে তখন তোমরা বসে সালাত আদায় করো) হাদীস রহিত করার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করতে চায় তার দলীল গ্রহণ বাদ পড়ে গেল।
তিনি নাসায়ীর হাশিয়্যাতে এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখের পর বলেন, যার শব্দ হল আর এটা এ ঘটনাতে বিভিন্নতার উপকারিতা দেয়। আর এর উপর ভিত্তি করে এ মুজত্বরাব ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত ঐ হুকুমটির রহিত হওয়ার ব্যাপারে অর্জিত হুকুম অস্পষ্টতা থেকে মুক্ত না। এর উত্তরে বলা হয়েছে এ ধরনের মতবিরোধ দোষণীয় না। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতি করার বর্ণনাসমূহ সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও সর্বধিক প্রহণযোগ্য। কেননা এ বর্ণনাগুলো বুখারী ও মুসলিমে এসেছে। সুতরাং আবূ বাকরের ইমামতি করার বর্ণনাগুলো বুখারী, মুসলিমে এসেছে।
সুতরাং আবূ বাকর-এর ইমামতি করার বর্ণনাগুলোর উপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতি করার বর্ণনাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বুখারী, মুসলিমের অবদান থেকে যা পাচ্ছে তা হল তাদের উভয়ের নিকট প্রাধান্যযোগ্যতম হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতি করা কেননা তাঁরা উভয়ে তাঁদের সহীহদ্বয়ে ‘আয়িশার হাদীসের সানাদসমূহ থেকে কোন সানাদ উল্লেখ করেননি তবে ঐ হাদীসই উল্লেখ করেছেন যাতে বিভিন্ন নির্ভরশীল বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতির কথা আছে। অনুরূপভাবে তাঁরা তাঁদের সহীহদ্বয়ে আবূ বাকরের ইমামতির ব্যাপারে স্পষ্ট আনাসের হাদীস উল্লেখ করেননি। তা মূলত আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী, আবূ দাঊদ, আত্ ত্বয়ালিসী ও ত্বহাবীতে আছে। আর এটি ঘটনাটির একত্রতা নিরূপর্ণাথে।
পক্ষান্তরে ইবনু হিব্বান, ইবনু হাযম, বায়হাক্বী, যিয়া আল মাক্বদিসী এবং প্রমুখগণ ঘটনার বিভিন্নতার ব্যাপারে যে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন তা হল নিশ্চয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ইমাম ছিলেন একবার মুক্তাদী ছিলেন। মূলত এ ধরনের বর্ণনার মাঝে কোন বিরোধ নেই।
তৃতীয় দিকঃ নিশ্চয় এটা ঐ অবস্থার উপর নির্ভরশীল যে, সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন এটা অবিচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ সানাদে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়নি। পক্ষান্তরে যায়লা‘ঈ নাসবুর্ রায়াহ দ্বিতীয় খন্ডে ৪২ পৃষ্ঠাতে বায়হাক্বী’র কিতাবুল মারিফা থেকে যা উল্লেখ করেছেন তা হল, নিশ্চয় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মরণের রোগে আবূ বাকরকে মানুষকে নিয়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন, ঐ পর্যন্ত যে, বর্ণনাকারী বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরের পাশে বসে সালাত আদায় করছিলেন।
আর মানুষ আবূ বাকরের অনুসরণ করে সালাত আদায় করছিল। এমতাবস্থায় মানুষ আবূ বাকরের পেছনে দাঁড়ানো ছিল। অতঃপর এ হাদীসে সানাদ উল্লেখ করা হয়নি ফলে সানাদের অবস্থা জানা যায়নি। নিশ্চয় তা দলীলের যোগ্য তবে বিরোধী পক্ষের উপর দলীলযোগ্য হবে না। আর হাফিয ইমাম শাফি‘ঈ থেকে বর্ণনা করে ফাতহুল বারীতে যা বলেছেন তা হল ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে আসওয়াদ কর্তৃক ইবরাহীম নাখ‘ঈর বর্ণনাতে যা এসেছে তা হল মুক্তাদীদের দন্ডায়মান হওয়া। নিশ্চয়ই তিনি তা ‘আত্বা থেকে ইবনু জুরায়জ কর্তৃক ‘আবদুর রাযযাক্বের মুসান্নাফে স্পষ্টভাবে পেয়েছেন। অতঃপর তিনি হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে ‘‘অতঃপর মানুষ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন’’। অতঃপর তাতে ‘আয়িশার বর্ণনা মুআল্লাক্ব আর ‘আত্বা এর বর্ণনা মুরসাল। ইমাম আহমাদ বলেন, মুরসালের ক্ষেত্রে হাসান এবং ‘আত্বা এর মুরসাল অপেক্ষা অধিক দুর্বল সানাদ আর নেই। কেননা তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করতেন।
ইবনুল মাদীনী বলেন, ‘আত্বা প্রত্যেক ধরনের বর্ণনা গ্রহণ করতেন। আর সাহাবীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায় করেছেন। আবূ বাকর ছাড়া। ইবনু হিব্বান জাবির (রাঃ) থেকে আবূ যুবায়র-এর সানাদ কর্তৃক যা বর্ণনা করেন তার মাধ্যমে তিনি এ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। জাবির (রাঃ) বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হলেন, অতঃপর আমরা তাঁর পেছনে সালাত আদায় করলাম, এমতাবস্থায় তিনি বসে সালাত আদায় করছিলেন।
আর আবূ বাকর মানুষকে তাঁর তাকবীর শুনাচ্ছিলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে দাঁড়ানো দেখতে পান। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে ইঙ্গিত করলে আমরা বসে গেলাম। এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাম ফিরালেন তখন তিনি বললেন, তোমরা পারস্য (ইরান) ও (ইটালী’র) রুমবাসীদের মতো করার উপক্রম হয়েছিল। তবে তোমরা এমন করবে না। এটি একটি বিশুদ্ধ হাদীস। যা মুসলিম, ত্বহাবী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ সংকলন করেছেন।
ইবনু হিব্বান বলেন, আবূ বাকর-এর তাকবীর শোনানো একমাত্র রসূলের মরণের রোগেই হয়েছিল। কেননা প্রথম রোগে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত আদায় ‘আয়িশার পান কক্ষে হয়েছিল এবং তাঁর সাথে তাঁর সাহাবীদের একটি দল ছিল। তাঁরা এমন কারো প্রয়োজনবোধ করছিল না যে ব্যক্তি তাদেরকে তাকবীর শোনাবে। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মরণের রোগে সালাত আদায়ের বিপরীত। কেননা তা মসজিদে অনেক লোকের সাথে ছিল। তখন আবূ বাকর তাদেরকে তাকবীর শোনানোর প্রয়োজনবোধ করেছিল।
হাফিয ইবনু হাজার এ হাদীসকে রসূলের প্রথম রোগে ‘আয়িশার পান কক্ষে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ব্যাপারে আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের উপর চাপিয়ে দিয়ে উত্তর প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ এ হাদীসে তাকবীর শোনানোর ক্ষেত্রে আবুয্ যুবায়র-এর মুতাবা‘আহ্ (সমর্থনে অন্য হাদীস) কেউ আনতে পারেনি। আনাস (রাঃ) হাদীসটি সংরক্ষণ করেছেন এ অর্থ নিরূপণার্থে ঐ অবস্থাতে আবূ বাকর মানুষকে তাকবীর শোনানোর ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। কেননা ব্যপারটি ঐ দিকে চাপবে যে, ব্যথার কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আওয়াজ ক্ষীণ ছিল।
আর তাঁর অভ্যাস ছিল তাকবীর প্রকাশ করে পড়া। ঐ কারণে আবূ বাকর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাকবীরকে প্রকাশ করে পড়ছিলেন। হ্যাঁ, ‘আত্বার উল্লেখিত মুরসাল হাদীসে ‘‘এবং মানুষ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছে’’ এ উক্তির পর অবিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আমি পরে যা জেনেছি তা যদি আগে জানতাম তা হলে তোমরা কেবল বসেই সালাত আদায় করতে। সুতরাং তোমরা তোমাদের ইমামের মতই সালাত আদায় কর। যদি তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন তাহলে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর আর যদি বসে সালাত আদায় করে তাহলে তোমরাও বসে সালাত আদায় কর।’’ এ অতিরিক্ত অংশটুকু ইবনু হিব্বান-এর উক্তি ‘‘নিশ্চয়ই এ ঘটনাটি রসূলের মরণের রোগ ছিল’’-কে শক্তিশালী করছে।
অতঃপর আমি সিনদীকে লক্ষ্য করেছি তিনি বুখারীর হাশিয়াতে প্রথম খন্ডে ৮৮ পৃষ্ঠাতে তৃতীয় দৃষ্টির দিকটি উল্লেখ করেছেন। সর্বাধিক উত্তমভাবে তা স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাতে আলোচনা বিস্তৃত করেছেন, অতঃপর ভাল বলেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, রসূলের মরণের রোগ সম্পর্কে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে ঐ ব্যাপারে কোন দলীল নেই যে, সাহাবীগণ দাঁড়ানো ছিল। হ্যাঁ, প্রমাণিত হয়েছে যে, আবূ বাকর দাঁড়ানো ছিল আর সম্ভবত তিনি তাকবীর শোনানোর প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এভাবে বলা যাবে না যে, কতক বর্ণনাতে এসেছে নিশ্চয়ই তাঁরা দাঁড়িয়েছিল, কেননা তখন রহিতকরণের মূল উৎস ঐ সকল বর্ণনার উপর গড়াবে। সহীহ এর লেখক বা সহীহ গ্রন্থসমূহের লেখকদের বর্ণনার উপর না। তখন ঐ সকল বর্ণনার মাঝে দৃষ্টি দিতে হবে। ঐ বর্ণনাগুলো থেকে কোনটি কি ‘‘যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করবে তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে’’- এ হাদীসটির শক্তিকে অতিক্রম করছে কি-না? তারা যা উল্লেখ করেছে তা মূলত এ হাদীসের সমপর্যায়ে পৌঁছবে না। বরং এ হাদীসের কাছাকাছিও পৌঁছবে না। সুতরাং ঐ বর্ণনাগুলোর মাধ্যমে এ হাদীস রহিতকরণে কোন হুকুম উদ্দেশ্য করা যাবে না এবং যা বলা হয়েছে তা হল নিশ্চয়ই সাহাবীগণ সালাত আবূ বাকরের সাথে দাঁড়িয়ে শুরু করেছিল। এতে কোন মতবিরোধ নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি দাবি করবে এরপর সাহাবীগণ বসে গিয়েছিল তাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। অতঃপর যে রহিত হওয়ার দাবি করবে সে প্রমাণ উপস্থাপনের মুখাপেক্ষী হবে। পক্ষান্তরে যে রহিত হওয়াকে না করবে তার পক্ষে সম্ভাবনাই যথেষ্ট হবে। কেননা মূল হচ্ছে রহিত না হওয়া। শুধু সম্ভাবনার মাধ্যমে রহিত হওয়া প্রমাণিত হতে পাবে না।
সুতরাং তার উক্তি যে ব্যক্তি দাবি করবে এরপর নিশ্চয়ই তাঁরা বসেছিল তাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। এ কথাটি আলোচনার নীতিমালা বহির্ভূত। আর তা তার উপর নির্ভর করে যে, আমরা বলবঃ সাহাবীদের জানা পূর্বের হুকুমের প্রতি ‘আমল করণার্থে বাহ্যিকভাবে তাঁদের বসে সালাত আদায় করাই মূল। আর সাহাবীদের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা ঐ নির্দিষ্ট হুকুম রহিত হওয়া সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান লাভের পরই সম্ভব হতে পারে। তবে এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই।
সুতরাং আবশ্যক যে, সাহাবীগণ বসে সালাত আদায় করেছে। এরপরও যে ব্যক্তি এর বিপরীত ধারণা করবে তাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। বসে সালাত আদায় করার হুকুম সাহাবীগণের জানা থাকা সত্ত্বেও তারা সকলে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছে বলে যে উক্তি পাওয়া যায় তা রহিত হওয়ার অনুকূল। আর তা জানা গেছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দাঁড়ানোর ব্যাপারে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে, সুতরাং তা স্বভাবত অসম্ভব বিষয়কে মেনে নেয়া অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে উক্তি রয়েছে পূর্বের হুকুম সাহাবীদের প্রসিদ্ধ ও তার প্রতি তাঁদের ‘আমল থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত সাহাবীদের মাঝে ঐ হুকুম সম্পর্কে কেউ জানত না। এভাবে উক্তি রয়েছে, সম্ভবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসখের ব্যাপারে সাহাবীদের কাছে বর্ণনা দেয়ার কারণে ইতিপূর্বেই তাঁরা নসখ বা রহিত হওয়ার বিধান সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।
এ কারণেই তাঁরা সালাতে দাঁড়ানোর উপর অটল ছিল। কেননা খুবই অসম্ভব যে, বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে মুক্তাদীরা বসে সালাত আদায় করার রহিতকারী কোন হাদীস সাহবীদের কাছে থাকবে এবং তাঁরা তা জানার পরও বিষয়টি এমনভাবে গোপনীয়তা লাভ করবে যে, কেউ তা বর্ণনা করবে না।
চতুর্থ দিকঃ যখন সমন্বয় সাধন আপত্তিকর হবে তখন হাদীসকে রহিত হওয়ার দিকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর এখানে সমন্বয় সাধন আপত্তিকর না, বরং তা সম্ভব।
যেমন ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে নিশ্চয় তিনি দু’টি হাদীসকে দু’টি অবস্থার উপর টেনে এনে উভয়ের মাঝে সমন্বয় সাধন করেছেন। আর তা স্পষ্ট যা তাঁর মাযহাব কর্তৃক বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কতকে এভাবে সমন্বয় সাধন করেছেন যে, বসার ব্যাপারে নির্দেশ সুন্নাতের জন্য। আর ইমামের পেছনে তাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাপারে নির্দেশ বৈধতা বর্ণনা করে দেয়ার জন্য। ‘আত্বার পূর্বোক্ত মুরসাল বর্ণনা উল্লেখ করার পর হাফিয বলেন, বর্ণনাটি থেকে এ উপকারিতা নেয়া যাচ্ছে যে, ইমাম বসে সালাত আদায় করাবস্থায় পেছনে মুক্তদীদের বসে সালাত আদায়ের ব্যাপারে আবশ্যকতার যে নির্দেশ ছিল তা রহিত করে দেয়া হয়েছে।
কেননা ইমামের পেছনে মুক্তাদীরা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সালাত দোহরানোর নির্দেশ দেননি। তবে আবশ্যকতাকে যখন রহিত করে দেয়া হবে তখন বৈধতা অবশিষ্ট থেকে যাবে। আর বৈধতা সুন্নাতের পরিপন্থী না।
সুতরাং মুক্তাদীরা বসে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ নির্দেশকে মুস্তাহাব তথা সুন্নাতের উপর চাপিয়ে দিতে হবে। কেননা মুক্তাদীরা ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের ব্যাপারে স্বীকৃতি দেয়া এবং দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের কারণে তাদেরকে সালাত দোহরানোর ব্যাপারে নির্দেশ না দেয়ার মাধ্যমে আবশ্যকতাকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। দলীলসমূহের মাঝে এটি সমন্বয়ের দাবি।
৫ম দিকঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মরণের অসুস্থতার সালাতে বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে মুক্তাদীদের বসে সালাত আদায়ের ব্যাপারে নির্দেশই সংঘটিত হয়েছে, যেমন ‘আত্বার বর্ণনাতে অতিবাহিত হয়েছে। সুতরাং বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে মুক্তাদীদের বসে সালাত আদায়ের নির্দেশ রহিত হওয়ার ব্যাপারে রসূলের মরণের অসুস্থতার সালাত দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ সমস্যা মুক্ত না।
৬ষ্ঠ দিকঃ নিশ্চয়ই হাদীসটি ঐ অবস্থার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, ইমাম বসে সালাত আদায় করার সময় মুক্তাদীরাও বসে সালাত আদায় করা ইমামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ এর অন্তর্ভুক্ত। আর কোন সন্দেহ নেই যে, ইমামের অনুসরণ করা স্থায়ীভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত হুকুম রহিত না। জাবিরের হাদীসও ঐ অবস্থার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, ইমাম বসে সালাত আদায় করার সময় মুক্তাদীদের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় বৈধ না হওয়ার কারণ হল নিশ্চয়ই দাঁড়ানো যে সম্মান অংশীদারহীন একমাত্র আল্লাহর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে সে সম্মান আল্লাহ ছাড়া অন্যকে প্রদর্শনে পরিণত হয়।
আর ঐ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, এ ইল্লাত বা কারণ ও তার স্থায়িত্ব হুকুমের স্থায়িত্বকে দাবি করছে। সুতরাং বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে মুক্তাদীদের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় শরীয়াত সম্মত না হওয়া স্থায়ীভাবে আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে। আর তা ইল্লাতের স্থায়িত্বতার মুহূর্তে মা‘লূলের স্থায়িত্বের আবশ্যক হয়ে যাওয়ার কারণে। সুতরাং এ হুকুম রহিত হওয়ার ব্যাপারে উক্তি করা অসম্ভব মুক্ত না। সিনদী ইবনু মাজার হাশিয়াতে এটা বলেছেন। বুখারীও মুসলিমের হাশিয়াতেও অনুরূপ উল্লেখ করা হয়েছে।
৭ম দিকঃ আসল হল রহিত না হওয়া। বিশেষ করে এ অবস্থাতে তা দু’বার রহিত হওয়াকে দাবি করছে। কেননা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে সক্ষম এমন ব্যক্তির জন্য হুকুমের ক্ষেত্রে মূল হল তার বসে সালাত আদায় না করা অথচ যে মুক্তাদীর ইমাম বলে সালাত আদায় করেছে তার ক্ষেত্রে মুক্তাদীর সালাত বসে আদায় করার দিকে রহিত করে, এরপর আবার বসে সালাত আদায় রহিত করার দাবি করা দু’বার নসখ রহিতকরণ সংঘটিত হওয়াকে দাবি করছে। এমতাবস্থায় তা অসম্ভব।
আর এর অপেক্ষাও অসম্ভব ইতিপূর্বে ক্বাযী ‘আয়ায থেকে যা বর্ণনা করা হয়েছে, কেননা তা এ বিষয়টির তিনবার রহিতকরণকে দাবি করেছেন। অনুরূপভাবে যারা বসে সালাত আদায়কারী ব্যক্তির ইমামতিকে বিশুদ্ধ মনে করে না তারাও এ ব্যাপারে উত্তর দিয়েছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (এবং ইমাম যখন বসে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় কর।) এ উক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইমাম তাশাহুদ এবং দু’ সাজদার মাঝে বসার ক্ষেত্রে তাঁর অনুসরণ করা।
কেননা তিনি তা রুকূ‘, রুকূ‘ থেকে উঠা এবং সাজদার পর উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, সাহাবীগণ বসে সালাত আদায়কারী ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের বিষয়টিকে ঐ অবস্থার উপর চাপিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদের জন্য বসেছিলেন তখন মুক্তাদীরা তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়ালে তিনি তাদেরকে বসার ব্যাপারে নির্দেশ করেছিলেন। আর এ ব্যাপারে জাবিরের হাদীসে বর্ণিত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে। হাদীসটি হল ‘‘রুম ও পারস্যবাসীদের বাদশাহ তাদের সামনে থাকাকালে তারা বাদশাদের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকে আর তোমরা তাদের মত করার উপক্রম হয়েছিলে এখন জেনে নাও’’ তোমরা তাদের মতো করবে না।
সুতরাং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করবে তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে’’ এর অর্থ হল ইমাম যখন সালাতে বসাবস্থায় থাকবে তখন তোমরাও বসে থাকবে, দাঁড়িয়ে থাকার মাধ্যমে ইমামের বিপরীত করবে না। আর ইমাম যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় থাকবে তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে যাবে, বসার মাধ্যমে তাঁর বিপরীত করবে না।
অনুরূপভাবে করবে রসূলের উক্তি ‘‘অতঃপর ইমাম যখন রুকূ‘ করবে তখন তোমরাও রুকূ‘ করবে আর যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে তখন তোমরাও সিজদা্ করবে’’ এর ক্ষেত্রে। তবে ইবনু দাক্বীক্ব আল ঈদ ও অন্যান্যগণ অসম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেছেন যে, হাদীসের সানাদসমূহের বাচনভঙ্গি এটাকে অস্বীকার করে। কেননা যদি রুকূ‘ করণের ক্ষেত্রে বসার নির্দেশ করা উদ্দেশ্য হত অবশ্যই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উক্তি ‘‘আর ইমাম যখন রুকূ‘ করে তখন তোমরা রুকূ‘ কর আর যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে তখন তোমরা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর’’ এর সাথে সামঞ্জস্য করার লক্ষ্যে বলতেন।
‘‘আর ইমাম যখন বসে তখন তোমরাও বস’’ অতএব বিষয়টির গতি যখন এ অবস্থা থেকে রসূলের উক্তি ‘‘আর ইমাম যখন বসে সালাত আদায় করবে’’ এর দিকে ঘুরে গেল তখন স্পষ্ট হয়ে গেল নিশ্চয় তা দ্বারা সমস্ত সালাত উদ্দেশ্য। আর একে সমর্থন যোগাচ্ছে আনাস (রাঃ)-এর ‘‘অতঃপর আমরা তাঁর পেছনে বসে সালাত আদায় করলাম’’ এ উক্তিকে। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী (রহঃ) বলেন, পূর্বোক্ত আলোচনাগুলো জানার পর আমার নিকট সর্বোত্তম ও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য উক্তি হল দু’ ঘটনার মাঝে সামঞ্জস্যতা সাধন করা যে, বসার ব্যাপারে নির্দেশ সুন্নাতের জন্য এবং রসূলের পেছনে সাহাবীদের দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাপারে নির্দেশ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তা বৈধতা বর্ণনা করার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি আপত্তিবশতঃ বসে ইমামতি করবে তাঁর পেছনে সালাত আদায়কারী মুক্তাদীদেরকে বসে ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা দেয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের ক্ষেত্রে নির্দেশ প্রমাণিত হওয়ার এবং এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসের আধিক্যতার কারণে বসে সালাত আদায় করাই উত্তম।
আর এ সমন্বয়কে সমর্থন করছে ঐ অবস্থা যে, এর উপরই রসূলের জীবদ্দশাতে ও তাঁর মরণের পর সাহাবীদের ‘আমল স্থায়িত্ব লাভ করেছে। হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারী এর ৩য় খন্ডে ৩৮২ পৃষ্ঠাতে ক্বায়স বিন ক্বাহ্দ, উসায়দ বিন হুযায়র এবং জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন তারা বসে সালাত আদায় করেছে এমতাবস্থায় মানুষ তাদের পেছনে বসা ছিল।
আর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে উল্লেখ করা হয়েছে নিশ্চয় তিনি বসার ব্যাপারে ফাতাওয়া দিয়েছেন। আরও উল্লেখ করা হয়েছে যারা এ আসারসমূহ উল্লেখ করেছে এবং এগুলোর সানাদকে বিশুদ্ধ বলেছেন তাদের কথা। ইবনু হাযম তার মুহাল্লা গ্রন্থের ৩য় খন্ডে ৭০ পৃষ্ঠাতেও এটা বর্ণনা করেছেন। দারাকুত্বনী তার কিতাবে ৫২ পৃষ্ঠাতে উসায়দ বিন হুযায়র থেকে সংকলন করেছেন। ১৬২ পৃষ্ঠাতে জাবির (রাঃ) থেকে সংকলন করা হয়েছে তারা দু’জন বসাবস্থায় ছিল এবং মুক্তাদীরাও বসাবস্থায় ছিল। ইবনু হিব্বান ‘আমলের ব্যাপারে ঐকমত্য দাবি করেছেন। যেমন তিনি এ ব্যাপারে নীরবতাকে উদ্দেশ্য করেছেন। কেননা তিনি এটা চারজন সাহাবী থেকে উল্লেখ করেছেন যাদের আলোচনা ইতিপূর্বে গেল। আর তিনি বলেন, চারজন ছাড়া সাহাবীদের অন্য কারো থেকে এটা উল্লেখ করা হয়নি। আর উল্লেখিত উক্তির বিপরীত উক্তি কোন বিশুদ্ধ বা দুর্বল সানাদে পাওয়া যায় না।
অনুরূপ ইবনু হাযম বলেন, সাহাবীদের কারো থেকে এর বিপরীত বর্ণনা করা হয়নি। পক্ষান্তরে ইমাম শাফি‘ঈ যা বলেনঃ তা হল নিশ্চয়ই এ সাহাবীগণ থেকে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হল নিশ্চয় তাঁরা বসাবস্থায় ইমামতি করেছে এবং তাঁদের পেছনে যারা মুক্তাদী ছিল তারাও বসাবস্থায় ছিল। এ বর্ণনাটিকে ঐ অবস্থার উপর চাপিয়ে দিতে হবে যে, এ সাহাবীদের মাঝে রহিত হওয়ার খবর পৌঁছেনি। অতঃপর এতে তাঁরা যা দাবী করেছে সে দাবির সম্পূর্ণই রহিত হওয়ার দাবি।
সেটা হল ‘আয়িশার হাদীস ইতিপূর্বে তাঁরা যা দাবী করেছে তার কোন অংশের উপর তা প্রমাণ বহন করে না। আর এ সাহাবীগণও এ বর্ণনার ব্যাপারে একাকী হয়ে যায়নি বরং সাহাবী ও তাবি‘ঈদের থেকে যারা তাদের পেছনে সালাত আদায় করেছে তাঁরা তাদের অনুকূল করেছেন। আর খুবই অসম্ভব যে, তাদের কারো কাছে রহিত হওয়ার খবর পৌঁছবে না।
(هذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ) উল্লেখিত হাদীসের শব্দ ‘‘ইমাম কেবল বানানো হয়েছে এজন্য যে, যাতে তার অনুসরণ করা হয়’’ বুখারীর এ অধ্যায়ে এসেছে।
(وَاتَّفَقَ مُسْلِمٌ) অর্থাৎ হাদীসটির মূলের ক্ষেত্রে বুখারীর সাথে মুসলিম একমত পোষণ করেছেন।
(فِي رِوَايَةٍ: فَلَا تَخْتَلِفُوْا عَلَيْهِ) ভাষ্যটুকুতে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন আছে, কেননা এ শব্দ আনাস (রাঃ)-এর হাদীসে নেই। বুখারীতে নেই, মুসলিমেও নেই। তবে হ্যাঁ বুখারী ও মুসলিমে তা আবূ হুরায়রার হাদীসে আছে। অতঃপর বুখারী এ শব্দে তা ‘কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণাঙ্গতা’ অধ্যায়ে সংকলন করেছেন।
ইমাম মুসলিম ‘মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করা’ অধ্যায়ে এনেছেন এবং এ শব্দের স্থান রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِه) এর পরে সানাদ পরম্পরাভাবে এসেছে। আর এর মাধ্যমে তিনি নফল সালাত আদায়কারীর পেছনে ফরয সালাত আদায়কারীর সালাত বৈধ না হওয়ার উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। আর তা ইমাম-মুক্তাদীর মাঝে নিয়্যাতের ভিন্নতা থাকার কারণে। আর তা দুর্বল। কেননা উদ্দেশ্য হল ভিন্ন না হওয়া। আর তা রসূলের ব্যাখ্যামূলক বাণী ইমাম-মুক্তাদীর ভিন্ন না হওয়া ‘‘অতঃপর যখন ইমাম রুকূ‘ করবে.....’’ শেষ পযন্ত এ দলীলের কারণে। উদ্দেশ্য খাপে খাপ মিলে গেল। আর যদি হাদীসাংশে নিয়্যাতের ক্ষেত্রে ভিন্নতা উদ্দেশ্য হত তাহলে অবশ্যই ফরয সালাত আদায়কারীর পেছনে নফল সালাত আদায় করা বৈধ হত না। অথচ সকলের ঐকমত্যে তা বৈধ।
(وَإِذَا سَجَدَ فَاسْجُدُوْا) হাদীসে এ অতিরিক্ত অংশ আনাস (রাঃ)-এর হাদীস কর্তৃক বুখারীতেও এসেছে। এককভাবে মুসলিমে আসেনি। যেমন লেখক ধারণা করেছেন। তবে এ অতিরিক্তের স্থান উল্লেখ করণে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। আর আনাসের এ হাদীস ইমাম আহমাদ, মালিক, শাফি‘ঈ ও রিসালাহ, উম্মু ও ইখতিলাফুর রিওয়ায়াতে সংকলন করেছেন। ইমাম তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ প্রমুখগণ।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৪০-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এমন সময় একদিন বিলাল (রাঃ)সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়েরর জন্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকতে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আবূ বকরকে লোকদের সালাত আদায় করাতে বলো। ফলে আবূ বকর (রাঃ) সে কয়দিনের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একটু সুস্থতা মনে করলেন। তিনি দু’ সাহাবীর কাঁধে ভর দিয়ে দু’পা মাটির সাথে হেঁচড়িয়ে সালাতের জন্যে মসজিদে আসলেন। মসজিদে প্রবেশ করলে আবূ বকর (রাঃ) রসূলের আগমন টের পেলেন ও পিছু হটতে আরম্ভ করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে সেখান থেকে সরে না আসার জন্যে আবূ বকরকে ইঙ্গিত করলেন। এরপর তিনি আসলেন এবং আবূ বকরের বাম পাশে বসে গেলেন। আর আবূ বকর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে বসে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আবূ বকর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের ইক্বতিদা করছেন। আর লোকেরা আবূ বকরের সালাতের ইকতেদা করে চলছেন। (বুখারী, মুসলিম; উভয়ের আর এক বর্ণনা সূত্রে আছে, আবূ বকর লোকদেরকে রসূলের তাকবীর স্বজোড়ে শুনাতে লাগলেন।)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: لَمَّا ثَقُلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ بِلَال يوذنه لصَلَاة فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ» فَصَلَّى أَبُو بَكْرٍ تِلْكَ الْأَيَّامَ ثُمَّ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَدَ فِي نَفْسِهِ خِفَّةً فَقَامَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ وَرِجْلَاهُ يخطان فِي الْأَرْضِ حَتَّى دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَلَمَّا سَمِعَ أَبُو بكر حسه ذهب أخر فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن لَا يتَأَخَّر فجَاء حَتَّى يجلس عَن يسَار أبي بكر فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يُصَلِّي قَائِمًا وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَاعِدًا يَقْتَدِي أَبُو بَكْرٍ بِصَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ مقتدون بِصَلَاة أبي بكر
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: يُسْمِعُ أَبُو بَكْرٍ النَّاسَ التَّكْبِير
ব্যাখ্যা: (لَمَّا ثَقُلَ رَسُولَ اللّهِ ﷺ) অর্থাৎ যে রোগে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেন ঐ রোগে যখন তিনি ভারি হয়ে পড়লেন।
(بالصَلَاة) অর্থাৎ সালাতের সময়ের উপস্থিত সম্পর্কে। এখানে শেষ ‘ইশা উদ্দেশ্য।
مُرُوا أَبَا بَكْرٍ أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ এ হাদীসাংশের মাধ্যমে আহলুস্ সুন্নাহ বা সুন্নাতের অনুসারীগণ আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফাতের ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন এবং তার কারণ হল নিশ্চয়ই সালাতের নেতৃত্ব বা ইমামতি যা বড় (কুবরা) ইমামাতি, আর দুনিয়ার নেতৃত্ব বা ইমামাতি যা ছোট (সুগরা) ইমামাতি এটি মূলত ইমামাতে কুবরা এর দায়িত্বের আওতাভুক্ত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ঐ অবস্থাতে সালাতের ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর এটি মূলত আবূ বাকর-এর কাছে ইমামাতে কুবরা হস্তান্তরের সর্বাধিক শক্তিশালী আলামত। এটা যেমন আমাদের বাদশারা মৃত্যুর সময় তাদের সন্তানদের কাউকে কর্তৃত্বের সিংহাসনে বসিয়ে থাকেন। এখন বাদশাহ তার কর্তৃত্ব সন্তানের নিকট হস্তান্তর করলে কেউ কি তাতে সন্দেহ করতে পারে? (সন্দেহ করতে পারে না) অতএব রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরের নিকট ইমামাতে কুবরা হস্থান্তরকরণে এটিই ঐ ব্যক্তির জন্য শক্তিশালী দলীল যার বক্ষকে আল্লাহ প্রশস্ত করেছেন। পার্থক্য স্পষ্ট থাকার কারণে ইমামাতে সুগরার উপর ইমামাতে কুবরা ক্বিয়াসী অধ্যায়ের আওতাভুক্ত না। শী‘আ সম্প্রদায় যেমন দাবি করেছে তাদের উক্তি প্রমাণ যদি শক্তিশালী স্পষ্ট হত তাহলে বিষয়টির সূচনালগ্নে তাদের মাঝে মতানৈক্য অর্জন হত না। এ ধরনের মন্তব্য জরুরী ভিত্তিতে বাতিল। কেননা রসূলের মরণের পর সময়টুকু হতাশাপূর্ণ সময় ছিল। কতই না স্পষ্ট বিষয় এমন আছে যা এ ধরনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা লাভ করে।
(ثُمَّ إِنَّ النَّبِيَّ ﷺ وَجَدَ فِي نَفْسِه خِفَّةً) বাহ্যিক দৃষ্টিতে বুঝা যাচ্ছে অসুস্থতার শিথিলতা অনুভবের মুহূর্তটা ছিল মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে বৃহস্পতিবার যুহরের সময়।
(بَيْنَ رَجُلَيْنِ) অর্থাৎ উভয়ের মাঝে ভর করে কঠিন দুর্বলতার দরুন ঝেঁকে ঝেঁকে হাঁটছিলেন। দু’ হাতের এক হাত একজনের কাঁধে অপর হাত অন্যজনের কাঁধে। আর উভয় ব্যক্তি হল ‘আব্বাস বিন ‘আবদুল মুত্ত্বালিব এবং ‘আলী বিন আবী ত্বলিব। যেমন তৃতীয় পরিচ্ছেদে আগত হাদীসে এসেছে এবং ইবনু হিব্বানে বর্ণনাতে এসেছে তিনি তাঁর অন্তরে অসুস্থতার হালকা অনুভব করলে বারীরাহ্ ও নাওবাহ্ এর মাঝে করে বের হলেন।
আর উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন করা হয় এভাবে যেমন নাবাবী বলেনঃ তিনি ঘর থেকে মাসজিদ পর্যন্ত এ দু’ ব্যক্তির মাঝে করে বের হলেন এবং ঐ স্থান থেকে সালাতে দাঁড়ানোর স্থান পর্যন্ত ‘আব্বাস ও ‘আলী (রাঃ) এর মাঝে করে বের হলেন। আবূ হাতিম বলেন, দু’ দাসীর মাঝে করে দরজা পর্যন্ত গেলেন এবং দরজা থেকে ‘আব্বাস ও ‘আলী (রাঃ) তাঁকে গ্রহণ করে মসজিদে নিয়ে যান। একমতে বলা হয়েছে হাদীসটিকে বহু সংখ্যার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আর এর উপর প্রমাণ বহন করে দারাকুত্বনীতে যা বর্ণিত আছে তা। তাতে আছে নিশ্চয় তিনি উসামাহ্ বিন যায়দ এবং ফাযল বিন ‘আব্বাস-এর মাঝে করে বের হয়েছিলেন। আর মুসলিমে যা আছে তা হল, নিশ্চয় তিনি ফাযল বিন ‘আব্বাস ও ‘আলী (রাঃ) এর মাঝে করে বের হলেন। আর তা মায়মূনার গৃহ থেকে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এর গৃহের দিকে আসার সময়।
(وَرِجْلَاهُ يَخُطَّانِ فِي الْأَرْضِ) অর্থাৎ তাঁর পাদ্বয় মাটিতে দাগ টানছিল। কেননা দুর্বলতার কারণে তিনি পাদ্বয়কে মাটি থেকে উঠাতে পারছিলেন না। নাবাবী বলেন, অর্থাৎ তিনি পাদ্বয়কে মাটি থেকে উঠাতে পারছিলেন না। মাটিতে রাখতে পারছিলেন না এবং পাদ্বয়ের উপর ভর করতে পারছিলেন না।
(فَلَمَّا سَمِعَ أَبُوْ بَكْرٍ حِسَّه) সিনদী বলেনঃ অতঃপর আবূ বাকর-এর অনুভূতি তথা অন্তর যখন বুঝতে পারল। একমতে বলা হয়েছে রসূলের নড়া-চড়া বা হালকা আওয়াজ।
(يتَأَخَّر) নিজ স্থান থেকে পিছিয়ে আসতে চাইল যাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্থানে দাঁড়াতে পারে।
(حَتّى يَجْلِسَ عَنْ يَّسَارِ أبيِ بَكْرٍ) এটিই হল ইমামের স্থান। আর এতে আগত বর্ণনাতে বসার সম্পর্কে যে অস্পষ্টতা রয়েছে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
এতে ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ রয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরকে তাঁর ডান দিকে করার কারণে তিনি ইমাম ছিলেন, মুক্তাদী ছিলেন না। ‘আয়নী বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরের ডানে কেবল এজন্য বসেনি; কেননা বামদিক ছিল রসূলের হুজরা বা কক্ষের দিক, সুতরাং তা রসূলের কাছে সর্বাধিক সহজ ছিল।
(يَقْتَدِي أَبُو بَكْرٍ بِصَلَاةِ رَسُولِ اللّهِ ﷺ) এ অংশটুকুতে ঐ সকল লোকদের দাবীকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যারা ধারণা করে থাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরের মুক্তাদী বা সালাতের অনুসরণকারী ছিলেন।
(وَالنَّاسُ مقتدون بِصَلَاة أبي بكر) অর্থাৎ এমনভাবে যে, আবূ বাকর মুক্তাদীদেরকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাকবীর শোনাচ্ছিল। কুস্তুলানী বলেনঃ মুক্তাদীরা আবূ বাকরের সালাতের মাধ্যমে রসূলের সালাতের দলীল গ্রহণ করেছিলেন। রসূলের সালাতের অনুসরণ করছিল। ক্বারী বলেনঃ তারা তাই করছিল যা আবূ বাকর করছিল। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিল এবং আবূ বাকর তাঁর পাশে দাঁড়ানো ছিল। আবূ বাকর সম্প্রদায়ের ইমাম ছিল এমন না। বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরের ইমাম ছিল। কেননা মুক্তাদীর অনুসরণ করা বৈধ না।
সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম, আর আবূ বাকর এবং মানুষেরা তাঁর মুক্তাদী ছিল। জেনে রাখা উচিত যে, ‘আয়িশার হাদীসের ক্ষেত্রে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে আর তা হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি ইমাম ছিলেন নাকি মুক্তাদী ছিলেন? এটি বুখারী, মুসলিম ও অনুরূপভাবে আহমাদের মুসনাদ কিতাবে আছে। মালিক-এর কিতাবে ‘‘ইমামের বসা সালাত আদায় করা’’ অধ্যায়ে আছে। নাসায়ীতে ‘‘যে ইমামের অনুসরণ করবে তার অনুসরণ করা’’ অধ্যায়ে এবং বাযযারও এটিকে বর্ণনা করেছেন যেমন হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেছেন। ইবনু হিব্বান উল্লেখ করেছেন যেমন হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেছেন। ইবনু হিব্বান উল্লেখ করেছেন যেমন যায়লাঈ বলেছেনঃ ইবনু মাজাহ ‘‘অসুস্থ অবস্থাতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত, যা উপকারিতা দিচ্ছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম এবং আবূ বাকর মা‘মূম ছিলেন’’ এ অধ্যায়ে।
ইবনু হাযম মুহাল্লা গ্রন্থের ৩য় খন্ডে ৬৭ পৃষ্ঠাতে। ইবনুল জারূদ মুনতাক্বা গ্রন্থে ১৬৬ পৃষ্ঠাতে। আহমাদ মুসনাদের ৬ষ্ঠ খন্ডে ১৫৯ পৃষ্ঠাতে। বায়হাক্বী তার সুনান গ্রন্থে ৩য় খন্ডে ৮২ পৃষ্ঠাতে। ইবনু মুনযির ও ইবনু খুযায়মাহ্ বর্ণনা করেন যেমন হাফিয বলেছেন, তিরমিযী ‘‘ইমাম যখন বসে সালাত আদায় করবে তখন তোমরাও বসে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে; যা উপকারিতা দিচ্ছে নিশ্চয়ই আবূ বাকরই ইমাম ছিল।’’ এ অধ্যায়ের পরের অধ্যায়ে। ইবনু খুযায়মাহ্ একে মুহাম্মাদ বিন বাশশার থেকে, তিনি আবূ দাঊদ আত্ ত্বয়ালিসী থেকে তিনি শু‘বাহ্ থেকে, তিনি আ‘মাশ থেকে, তিনি ইবরাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ এমন কিছু আছে যারা বলে আবূ বাকর কাতারে রসূলের সামনে আগে ছিল। আবার এমন কেউ আছে যারা বলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনিই আগে ছিলেন।
এ বর্ণনার বাহ্যিক দিক হল; ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উল্লেখিত অবস্থা স্বচক্ষে দেখেননি। হাফিয বলেনঃ তবে এ ব্যাপারে বর্ণনাসমূহ দৃঢ়তার সাথে একত্রিত হয়েছে যা ঐ অবস্থার উপর প্রমাণ বহন করে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ঐ সালাতের ইমাম ছিলেন। সে বর্ণনাগুলো থেকে এটি মূসা বিন আবী ‘আয়িশার বর্ণনা। যা ৩য় পরিচ্ছেদে আসবে। অতঃপর এ ব্যাপারে মতানৈক্য উল্লেখ করার পর বলেন, অতঃপর বিদ্বানদের মধ্যে থেকে যে প্রাধান্য দেয়া এর পথ অবলম্বন করেছেন তিনি ঐ বর্ণনাটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে বর্ণনাতে আবূ বাকর মুক্তাদী থাকার কথা দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে। কেননা আবূ মু‘আবিয়াহ্ (যে হাদীসটিকে এ শব্দে বর্ণনা করেছে যে, আবূ বাকর রসূলের সালাতের অনুসরণ করছিলেন এবং মানুষ আবূ বাকরের সালাতের অনুসরণ করছিল।) আ‘মাশ-এর হাদীসে অন্য অপেক্ষা বেশি সংরক্ষণকারী।
আর তাদের থেকে এমন কেউ আছে যে এর বিপরীত পথ অবলম্বন করেছে এবং আবূ বাকর ইমাম থাকার কথা প্রাধান্য দিয়েছে। তাদের মধ্য হতে এমনও আছে যে সকল হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধনের পথ অবলম্বন করেছে। (যেমন ইবনু হিব্বান, বায়হাক্বী ও ইবনু হাযম) অতঃপর ঘটনাটিকে তিনি বহু ঘটনার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন ‘‘অর্থাৎ নিশ্চয়ই আবূ বাকর একবার ইমাম ছিলেন আরেকবার মুক্তাদী ছিলেন’’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ব্যতীত সাহাবীদের হতে মতানৈক্যপূর্ণ বর্ণনা একে সমর্থন করেছে। অতঃপর এ বিষয়ে ইবনু ‘আব্বাস-এর একটি হাদীস আছে, নিশ্চয় আবূ বাকর (রাঃ) একজন মুক্তাদী ছিলেন, যেমন মূসা বিন আবী ‘আয়িশার বর্ণনাতে অচিরেই আসছে। এভাবে ইবনু মাজাতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে আরক্বাম বিন শুরাহবীল-এর বর্ণনাতে এবং আনাসের হাদীসে আছে নিশ্চয় আবূ বাকর ইমাম ছিলেন। ইমাম তিরমিযী ও নাসায়ী একে সংকলন করেছেন।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ অমি বলব, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে আরকামের হাদীস ইমাম আহমাদও তার কিতাবের প্রথম খন্ডে ২৩১, ২৫৫ ও ২৫৬ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন।
ত্বহাবী শারহুল আসারে ১ম খন্ডে ১৩০ পৃষ্ঠাতে। বায়হাক্বী তার সুনান গ্রন্থে ৩য় খন্ডে ৮১ পৃষ্ঠাতে। সকলের নিকট এ হাদীসের মূল আবূ ইসহাক আস্ সুরাইয়ী এর কাছে। যা তিনি আরক্বাম বিন শুরাহবীল থেকে বর্ণনা করেন। আবূ ইসহাক একজন মুদাল্লিস বর্ণনাকারী। শেষ বয়সে যার স্মৃতিতে বিশৃঙ্খলা চলে এসেছিল। এ হাদীসটিকে তিনি عنعنة পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী বলেনঃ আরক্বাম বিন শুরাহবীল থেকে তার শ্রুত হাদীস উল্লেখ করা হয় না। আনাস (রাঃ)-এর হাদীসকে ইমাম তিরমিযী বিশুদ্ধ বলেছেন। ইমাম আহমাদও একে তৃতীয় খন্ডে ১৫৯, ২৩৩, ২৪৩ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ তবে আমার নিকট প্রাধান্যতর উক্তি হল নিশ্চয়ই ঘটনা একটি।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর-এর ইমামতির ক্ষেত্রে মতানৈক্য একটি সালাতের ব্যাপারে। আর এ মতানৈক্য কেবল বর্ণনাকারীদের হস্তক্ষেপের কারণে। এটিই অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীসসমূহের ও সানাদসমূহের বাচনভঙ্গি এবং বুখারী ও মুসলিমের কর্ম থেকে স্পষ্ট। যেমন বুখারী ও মুসলিম তাঁদের সহীহ কিতাবদ্বয়ের মাঝে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন নির্ভরশীল বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে একমাত্র নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতি ছাড়া অন্য কোন হাদীস সংকলন না করণ ও আনাস (রাঃ)-এর হাদীস সংকলন না করণ। হাফিয বলেনঃ ইমাম শাফি‘ঈ স্পষ্ট করে দিয়েছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মরণের অসুস্থতায় মানুষকে নিয়ে মসজিদে মাত্র একবার সালাত আদায় করেছেন। আর তা হল এই সালাত যাতে তিনি বসে সালাত আদায় করেছেন। আবূ বাকর তাতে প্রথমে ইমাম ছিলেন তারপর মানুষকে তাকবীর শোনানো অবস্থায় মুক্তাদী হয়ে যান।
ইবনু ‘আবদুল বার বলেনঃ বিশুদ্ধ আসারসমূহ ঐ কথার উপর বর্তায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম ছিলেন। এ ঘটনাতে যা অতিবাহিত হয়েছে তা ছাড়াও অনেক উপকারিতা রয়েছে সকল সাহাবীর উপর আবূ বাকরকে অগ্রাধিকার দেয়া, প্রাধান্য দেয়া, কাতার থেকে পিছিয়ে থাকার মাধ্যমে, মর্যাদাবানকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে তাদের বয়োজ্যেষ্ঠের সাথে শিষ্টাচার প্রদর্শন।
কেননা আবূ বাকর পিছিয়ে আসতে চেয়েছিলেন যাতে পিছনের কাতারগুলোর সমান হয়ে যান কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাঁর স্থান হতে সরে আসতে দেননি। হাদীসে ইঙ্গিত করা কথা বলার স্থলাভিষিক্ত। ইঙ্গিতের উপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীমাবদ্ধ থাকা সম্ভবত তাঁর আওয়াজের দুর্বলতার কারণে। তারও সম্ভাবনা রাখছে ইঙ্গিত মূলত ঐ বিষয়টি জানিয়ে দেয়ার জন্য যে, যে ব্যক্তি সালাতে থাকে তাকে ইঙ্গিতের মাধ্যমে সম্বোধন করে কথা বলা অপেক্ষা উত্তম। হাদীসটিতে জামা‘আতের ব্যাপারে গুরুত্ব এবং তার ক্ষেত্রে কঠোরতাকে অবলম্বন করা হয়েছে যদিও রোগ জামা‘আত বর্জনের অবকাশ দিয়ে থাকে। হাদীসটিতে জামা‘আত বর্জনে অবকাশ উত্তম তথাপিও অসুস্থাবস্থায় জামা‘আতের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা বৈধ এ কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেছে।
ত্ববারী বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কেবল এজন্য করেছেন যাতে তারপর কোন ইমাম তার নিজের মাঝে সর্বনিম্ন আপত্তি পেলেই ইমামতি থেকে পিছিয়ে থাকতে না পারে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরকে এগিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মানুষকে এ কথা বুঝিয়ে দেয়া যে, আবূ বাকর ঐ বিষয়ের যোগ্য। এমনকি তিনি তাঁর পেছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। তিনি আরও প্রমাণ গ্রহণ করেছেন যে, প্রয়োজনে মুক্তাদীর স্থান পরিবর্তন করা বৈধ। আর এর মাধ্যমে তিনি বিনা প্রয়োজনে ইমামের স্থলাভিষিক্ত তৈরি করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। আর তা আবূ বাকরকে করা বৈধ। এটা মূলত ঐ ব্যক্তির মতো যে ব্যক্তি ইমামের কাছে পৌঁছে কাতারের চাপাচাপির কারণে তাঁর সাথে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করেছে। তিনি আরও দলীল গ্রহণ করেছেন কতক মুক্তাদী কতকের অনুসরণ করা বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে। আর তা শা‘বীর উক্তি এবং ত্ববারী এর বাছাই করা কথা। বুখারী এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যেমন গত হয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে এভাবে সমালোচনা করা হয়েছে যে, আবূ বাকর কেবল আওয়াজ পৌঁছিয়ে দিচ্ছিলেন। যেমন অচিরেই তা আসছে। আর এর উপর ভিত্তি করেই অনুসরণ বলতে মুক্তাদীদের কর্তৃক আবূ বাকর-এর আওয়াজের অনুসরণ করা। একে আরও সমর্থন করছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন এবং আবূ বাকর দাঁড়ানো ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের কতক কর্ম কতক মুক্তাদীদের নিকট অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এখান থেকেই আবূ বাকর তাদের ক্ষেত্রে ইমামের মতই। এর ব্যাখ্যা হল নিশ্চয়ই এ থেকে উদ্দেশ্য আবূ বাকর সালাতে ক্বিয়াম (কিয়াম), রুকূ‘, সাজদার ক্ষেত্রে তাঁর অবস্থার অনুসরণ করছিল। আবূ বাকর যেন তাঁর অনুসরণকারী। যেমন হাদীসে এসেছে ‘‘আর তুমি তাদের সর্বাধিক দুর্বল ব্যক্তির প্রতি খেয়াল রাখবে’’।
এ ধরনের অপব্যাখ্যা খুবই অসম্ভব। একে প্রত্যাখ্যান করেছে তার আগত বাণী ‘‘আবূ বাকর মানুষকে তাকবীর শোনাচ্ছিল’’ ত্ববারী এর মাধ্যমে ঐ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ইমাম তার প্রতি মুক্তাদীদের অনুসরণ বিচ্ছিন্ন করে সালাত বিচ্ছিন্ন না করে তিনি নিজেই অন্য আরেকজনের অনুসরণ করা। আর এ দলীল ঐ অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে, আবূ বাকর প্রথমে ইমামতি শুরু করে তারপর তাঁর প্রতি মুক্তাদীদের অনুসরণ বিচ্ছিন্ন করে তিনি নিজেই রসূলের অনুসরণ করলেন। এর মাধ্যমে তিনি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন যে, আপত্তিবশতঃ বসে সালাত আদায় করে এমন ব্যক্তির জন্য তার মতো আরেক ব্যক্তির বা দাঁড়াতে পারে এমন ব্যক্তির ইমামতি করা বিশুদ্ধ হবে। এটা মালিকী মতাবলম্বীদের মতের বিপরীত। আর এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে।
(مُتَّفق عَلَيْهِ) হাদীসটি ইমাম বুখারী কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন শব্দে ও সানাদে দীর্ঘাকারে ও সংক্ষিপ্তাকারে সংকলন করেছেন। আর উল্লেখিত বাচনভঙ্গি দীর্ঘ হাদীসের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইমাম বুখারী ‘‘একে ব্যক্তি ইমামের অনুসরণ করবে এবং মানুষ মুক্তাদীর অনুসরণ করবে’’ এ অধ্যায়ে সংকলন করেছেন। আর তাতে আছে ‘‘অতঃপর আবূ বাকর যখন সালাতে প্রবেশ করল তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাঝে নিজ শরীরকে হালকা অনুভব করলেন’’।
তাতে বর্ণনাকারীর উক্তি ‘‘অতঃপর আবূ বাকর ঐ দিনগুলোতে সালাত আদায় করালেন, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের হালকা পরিস্থিতি অনুভব করলেন’’ এ অংশটুকু নেই এবং (পিছিয়ে না আসতে) কথাটুকুও নেই। ‘‘অতঃপর তিনি যখন সালাতে প্রবেশ করলেন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুভব করলেন..... শেষ পর্যন্ত’’ এ বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হল, অর্থাৎ অতঃপর তিনি যখন মানুষকে নিয়ে সালাত আদায় করাতে ইমামতির পদে প্রবেশ করলেন এবং তাঁকে তাদের ইমাম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হল এবং এ দায়িত্ব পালনে অটল রইলেন তখন ঐ দিনগুলোর মাঝে কোন একদিন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের মাঝে হালকা পরিস্থিতি অনুভব করলেন।
অথবা ঐ দিনগুলোর মাঝে যখন আবূ বাকর সালাতে প্রবেশ করলেন তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাঝে হালকা পরিস্থিতি অনুভব করলেন এবং উদ্দেশ্য এটা না যে, আবূ বাকর যখন ঐ সালাতে প্রবেশ করলেন তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মাঝে হালকা পরিস্থিতি অনুভব করলেন। অতএব এ বর্ণনা আগত তৃতীয় পরিচ্ছেদের বর্ণনার বিপরীত হবে না। বুখারী ও মুসলিমের এক বর্ণনাতে এসেছে ‘‘আবূ বাকর মানুষকে তাকবীর শোনাচ্ছিলেন’’ অর্থাৎ আবূ বাকর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তাকবীর শোনাচ্ছিল বিধায় আবূ বাকর একজন মুকাব্বির ছিলেন, ইমাম না।
এ শব্দটি বর্ণনাকারীর এ ‘‘আবূ বাকর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের অনুসরণ করছিল এবং মানুষ আবূ বাকর-এর সালাতের অনুসরণ করছিল’’ এ উক্তির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করছে এবং ‘‘আবূ বাকর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের মাধ্যমে সালাত আদায় করছিল এবং মানুষ আবূ বাকরের সালাতের মাধ্যমে সালাত আদায় করছিল’’ এ উক্তির ব্যাখ্যা করছে। এতে ঐ ব্যাপারে দলীল রয়েছে যে, মুক্তাদীরা তাকবীরের অনুসরণ করবে এ লক্ষ্যে তাদের তাকবীর শোনানোর জন্য উঁচু আওয়াজ তাকবীর বলা বৈধ রয়েছে।
মুক্তাদীর জন্য মুকাব্বিরের আওয়াজের অনুসরণ করা বৈধ এবং আওয়াজ যে শোনায় ও শুনে উভয়ের সালাত বিশুদ্ধ হবে। এটা অধিকাংশের মত। এ ক্ষেত্রে মালিকী মাযহাবপন্থীদের বিরোধ ও ব্যাখ্যা রয়েছে। যে ব্যাপারে কোন দলীল নেই। হাদীসটিকে ইমাম বায়হাক্বীও ৩য় খন্ডে ৮১ হতে ৯৩ পৃষ্ঠার মাঝে সংকলন করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৪১-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক ইমামের পূর্বে (রুকূ’ সিজদা্ হতে) মাথা উঠায় সে-কি এ বিষয়ের ভয় করে না যে, আল্লাহ তা’আলা তার মাথাকে পরিবর্তন করে গাধার মাথায় পরিণত করবেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا يَخْشَى الَّذِي يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حمَار»
ব্যাখ্যা: (أَمَا يَخْشَى) নিশ্চয়ই এ কাজের কর্তা চেহারা বিকৃতির স্থানে রয়েছে এবং সে এর উপযুক্ত। সুতরাং তার উচিত এ শাস্তিকে ভয় করে চলা। এ ক্ষেত্রে ভয় না করে থাকার কোন সুযোগ নেই। এ অংশটুকু ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, এ কাজের কর্তা এ শাস্তির উপযুক্ত হবে এবং ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে না যে, যে ব্যক্তি এ কাজ করবে অকাট্যভাবে এ শাস্তি তার ওপর আরোপিত হবে। আল্লাহর কৃপার দরুন অনেক শাস্তি বান্দার ওপর আরোপিত হয় না; এ অবস্থা তার বিপরীতের উপর প্রমাণ বহন করে না। কেননা কতক এমন শাস্তি আছে বান্দা যার উপযুক্ত হয় এমতাবস্থায় পালনকর্তা আল্লাহ তা থেকে পাশ কেটে যান, ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তিনি অনেক অপরাধ থেকে পাশ কেটে চলেন’’।
(الَّذِىْ يَرْفَعُ رَأْسَه) যে তার মাথা রুকূ', সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) থেকে উঠায়। হাদীসটি রুকূ', সাজদার ব্যাপারে ব্যাপক উদ্ধৃতি। পক্ষান্তরে আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে ‘‘যে ব্যক্তি তার মাথা উঠায় এমতাবস্থায় ইমাম সাজদারত’’ এ শব্দের মাধ্যমে আলোচনাতে সাজদাকে নির্দিষ্ট করা যথেষ্টতার উপর ক্ষান্ত হওয়া অধ্যায়ের আওতাভুক্ত। আর তা হল একই হুকুমের ক্ষেত্রে অংশীদার এমন দু’টি বিষয়ের একটিকে উল্লেখ করা আর তা ঐ সময় যখন উল্লেখ করা বিষয়ের এমন কোন বৈশিষ্ট্য থাকবে যাতে উল্লেখ করা একটি বিষয়ের উল্লেখ একই হুকুমে অংশীদার দু’টি বিষয়কে বুঝাতে যথেষ্ট হবে। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে রুকূ‘র হুকুম রেখে সাজদার হুকুম বর্ণনা করা উভয়ের হুকুম একই হুকুমের আওতাভুক্ত হওয়াতে আর তা হল ইমামের অগ্রগামী হওয়া। দু’টি বিষয়ের একই হুকুমের আওতাভুক্ত হওয়ার উদাহরণ আল্লাহর বাণীতেঃ ‘‘এমন পোষাকসমূহ যা তোমাদের উত্তপ্ততা থেকে রক্ষা করবে’’- (সূরাহ্ আন্ নাহল ১৬ : ৮১)। অর্থাৎ ঠান্ডা থেকেও রক্ষা করবে। বিপরীত বিষয়ের উল্লেখ করা হয়নি। আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে রুকূ‘র উল্লেখ না করে শুধু সাজদার উল্লেখ এ কারণে যে, বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করণে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)-রুকূ' অপেক্ষা নিকটবর্তী হয় সাজদারত অবস্থায়। অপর দিকে রুকূ‘ ও সাজদার জন্য অবনত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অগ্রগামী হওয়ার ক্ষেত্রে মারফূ‘ সূত্রে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক ত্ববারানী ও রাযযার সংকলিত হাদীসে ধমক বর্ণিত হয়েছে। আর তা হল যে ব্যক্তি ইমামের আগে তার মাথাকে উঁচু নীচু করে তার সামনের কেশ গুচ্ছ শায়ত্বনের (শয়তানের) হাতে। হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ-এর ২য় খন্ডে ৭৮ পৃষ্ঠাতে বলেনঃ এর সানাদ হাসান। মালিক এবং ‘আবদুর রাযযাক্ব তার থেকে মাওকূফরূপে বর্ণনা করেন। হাফিয বলেন, আর তা মাহফূজ বা সংরক্ষিত।
(رَأْسَه رَأْسَ حمَار) মুসলিমের বর্ণনাতে আছে ‘‘তার আকৃতি গাধার আকৃতিতে’’ তার আরেক বর্ণনাতে আছে ‘‘আল্লাহ তার চেহারাকে গাধার চেহারাতে পরিণত করে দিবেন’’। হাফিয বলেনঃ স্পষ্ট যে, তা বর্ণনাকারীদের হস্তক্ষেপের কারণে। ক্বাযী ‘আয়ায বলেনঃ এই বর্ণনাগুলো ঐকমত্য সমর্থিত। কেননা চেহারা মাথার অন্তর্ভুক্ত এবং আকৃতির বৃহদাংশ তাতেই রয়েছে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ হাদীসে ব্যবহৃত (الصورة) শব্দটি হাদীসে ব্যবহৃত (الوجه) এর উপরও ব্যবহার করা হয় পক্ষান্তরে (الرَأْسَ) এর বর্ণনাকারী অনেক এবং তা ব্যাপক ও নির্ভরযোগ্য। হাদীসে নির্দিষ্ট করে (الرَأْسَ) তথা মাথার উপর শাস্তি পতিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে কেননা মাথার মাধ্যমেই অপরাধ সংঘটিত হয় এবং তা ব্যাপক। একমতে বলা হয়েছে সুস্পষ্ট যে, বিভিন্ন ঘটনার কারণে বর্ণনা বিভিন্ন রকম। ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনায় এ ‘‘আল্লাহ তার মাথাকে কুকুরের মাথাতে পরিবর্তন করে দিবেন’’ এ শব্দের মাধ্যমে একে এবং এ শাস্তির ক্ষেত্রে মতানৈক্য করা হয়েছে। একমতে বলা হয়েছে, এ বিষয়টি রূপক অর্থগত নির্দেশের দিকে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন বোকা, গাধা যে গুণে গুণান্বিত। অর্থ আল্লাহ তাকে গাধার মতো বোকা বানিয়ে দিবেন, সুতরাং তা রূপক অর্থগত বিকৃতি। ত্বীবী বলেন, ইমামের প্রতি যে অনুসরণের নির্দেশ করা হয়েছে সম্ভবত মুক্তাদী যখন তার প্রতি ‘আমল করবে না এবং ইমাম ও মুক্তাদীর কি অর্থ তা বুঝবে না তখন তাকে নির্বুদ্ধিতার ক্ষেত্রে গাধার সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিল, অতঃপর সে দায়িত্বভার বহন করেনি তাদের দৃষ্টান্ত ঐ গাধার মতো যে পুস্তকের বোঝা বহন করে।’’
এবং এ রূপক অর্থকে প্রাধান্য দেয়া হবে আর তা এ কারণে যে, এ ধরনের কাজের কর্তা অনেক হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বাহ্যিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়নি। এক মতে বলা হয়েছে এটি তার বাহ্যিক অবস্থার দিকে গড়াবে এবং উদ্দেশ্য বাহ্যিক আকৃতি পরিবর্তন। কেননা এ জাতির মাঝে প্রকাশ্য বিকৃতি ঘটতে কোন বাধা নেই। যেমন সহীহুল বুখারীর মাগাযী পর্বে আবূ মালিক আল আশ্‘আরী বর্ণিত হাদীস এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছে। কেননা তাতে বিকৃতির আলোচনা আছে এবং এর শেষে রয়েছে ‘‘আর অন্যদেরকে তিনি ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত বানর ও শুকরে বিকৃত করে রাখবেন’’ এবং এ বিষয়টি বাহ্যিক অবস্থার উপর প্রয়োগ এ ‘‘আল্লাহ তার মাথাকে কুকুরের মাথায় পরিবর্তন করে দিবেন’’ শব্দে বর্ণিত ইবনু হিব্বান-এর বর্ণনাকে শক্তিশালী করবে। গাধার নির্বুদ্ধিতার বিষয়ে তারা যা উল্লেখ করেছে এ বর্ণনার সাথে তার সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে এ হাদীসটি রূপক অর্থকে দূর করে দিচ্ছে বা অসম্ভবপর করে দিচ্ছে।
এ রূপক অর্থকে আরও অসম্ভব করে দিচ্ছে ভবিষ্যৎকালীন বিষয়ের মাধ্যমে শাস্তি বর্ণনা করা ও অর্জিত পরিবর্তনের উপর প্রমাণ বহনকারী শব্দের কারণে। যদি নির্বুদ্ধিতার কারণে গাধার সাথে মানুষের সাদৃশ্য দেয়া হত তাহলে অবশ্যই বলতেনঃ ‘‘তার মাথা গাধার মাথা’’ কেননা উল্লেখিত নির্বুদ্ধিতার গুণটি উল্লেখিত কাজ করার সময়ে ঐ কাজের কর্তার অর্জন হয়েছে, সুতরাং তার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎকালীন ক্রিয়া (يَخْشى) বলা ভাল হবে না। যদিও ঐ কাজটি নির্বুদ্ধিতার কারণে হওয়ায় তুমি এ কাজটি করলে নির্বুদ্ধিতায় পতিত হবে। পক্ষান্তরে রূপক অর্থকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে কারণ স্বরূপ যা বলা হয়েছে তা হলঃ ইমামের আগে কাজ করার কর্তা অনেক হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বাহ্যিক পরিবর্তন সাধিত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নিশ্চয় হাদীসের মাঝে এমন কিছু নেই যা ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, ঐ শাস্তি সংঘটিত হবেই বরং ঐ কাজের কর্তা শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে এবং ঐ কাজটি হওয়া সম্ভব এর উপর প্রমাণ বহন করছে। যাতে ঐ কাজের মুহূর্তে শাস্তি সংঘটিত হতে পারে। তবে কোন কিছুর সম্মুখীন হওয়া থেকে ঐ জিনিস সংঘটিত হওয়া আবশ্যক না। আমরা প্রথম হাদীসের ব্যাখ্যাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। তবে হাদীসের বাহ্যিক দিক ইমামের পূর্বে মাথা উঠানোরে অবৈধতাকে দাবি করছে।
আর তা এ কারণে যে, ইমামের পূর্বে মাথা উঠানোর ক্ষেত্রে বিকৃতির হুমকি দেয়া হয়েছে। আর তা অত্যন্ত কঠিন শাস্তি। আর এ ব্যাপারে ইমাম নাবাবী শারহুল মুহাযযাবে দৃঢ় মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং হারাম বলে আখ্যা দিয়েছেন। অধিকাংশ ‘আলিমগণ ঐ মতের উপর রয়েছে যে, এ কাজের কর্তা পাপী হবে তবে তার সালাত যথেষ্ট হবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নষ্ট হয়ে যাবে।
ইমাম আহমাদ এক বর্ণনাতে ও আহলে যাহির এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন আর তা ঐ অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে, নিষেধাজ্ঞা এবং চেহারা বিকৃতির হুমকি সালাতের বিশৃঙ্খলাকে দাবি করে। আর এ অধ্যায়ের দ্বিতীয় হাদীস আনাসের হাদীসে রুকূ‘, সিজদা্, ক্বিয়াম (কিয়াম), বৈঠকে ইমামের অগ্রগামী হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মুগনী কিতাবে ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি তার কিতাবে বলেন, এ হাদীসের কারণে যে ব্যক্তি ইমামের আগে সালাতে কোন কাজ করবে তার কোন সালাত নেই। তিনি বলেন, যদি তার কোন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) থাকত তাহলে তার জন্য সাওয়াবের আশা করা হত এবং তার ব্যাপারে শাস্তির আশংকা করা হত না। হাদীসে উম্মাতের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্ণাঙ্গ দয়া, তাদের কাছে হুকুম আহকাম ও যার কারণে তাদেরকে সাওয়াব বা শাস্তি দেয়া হবে তার বর্ণনা রয়েছে। এর মাধ্যমে তিনি ইমামের সাথে সাথে কাজ করার উপর দলীল গ্রহণ করেছেন। অথচ এতে এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই। কেননা হাদীসটি তার ভাষ্যের মাধ্যমে মুক্তাদী ইমামের আগে কাজ করা নিষিদ্ধ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। তার অর্থের মাধ্যমে ইমামের পর পর কাজ করার উপর প্রমাণ বহন করছে। পক্ষান্তরে ইমামের সাথে সাথে কাজ করার ব্যাপারে হাদীসে চুপ থাকা হয়েছে।