পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪২-[৭] ’আলী ও মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কোন লোক যখন জামা’আতের সালাতে শরীক হওয়ার জন্যে আসবে তখন ইমাম যে অবস্থায় থাকবে ও যে কাজ করবে সেও সে কাজ করবে। (তিরমিযী; তিনি বলেন, হাদীসটি গরীব)[1]

عَنْ عَلِيٍّ وَمُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ الصَّلَاةَ وَالْإِمَامُ عَلَى حَالٍ فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ

عن علي ومعاذ بن جبل رضي الله عنهما قالا: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا اتى احدكم الصلاة والامام على حال فليصنع كما يصنع الامام» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب

ব্যাখ্যা: (وَالْإِمَامُ عَلى حَالٍ) দাঁড়ানো অথবা রুকূ‘ অথবা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) অথবা বৈঠকের ক্ষেত্রে। (فَلْيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ) সে যেন তাকবীরে ইহরাম দেয় এবং দন্ডায়মান অথবা রুকূ' অথবা এছাড়া অন্য যে অবস্থায় ইমাম থাকে সে অবস্থায় ইমামের অনুকূল হয়। ইমাম সালাতের যে অংশ আগে আদায় করে নিয়েছে তা আদায়ের মাধ্যমে ইমামের বিপরীত কাজ করবে না। বরং মুক্তাদী ইমামের সাথে ঐ কাজে প্রবেশ করবে যা ইমাম আদায় করছে। অতঃপর রুকূ', সিজদা্ (সিজদা/সেজদা), ক্বিয়াম (কিয়াম) ও বৈঠকে ইমামের অনুসরণ করবে। হাদীসটি ঐ অবস্থার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে মিলিত হবে তার উপর আবশ্যক ইমামকে সালাতের যে কোন অংশে পাবে ইমামের সাথে শরীক হবে। ‘‘ইমাম যে কোন অবস্থায় আছে’’ এ বাণীর স্পষ্টতার কারণে। রুকূ‘, সিজদা্, ক্বিয়াম (কিয়াম), বৈঠক এদের মাঝে পার্থক্য ছাড়া করবে না। ইমাম তিরমিযী বলেন, ‘ইলম বিশারদদের নিকট এর উপরেই ‘আমল।

(رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ) ইমাম তিরমিযী একে হাজ্জাজ বিন আরত্বাত থেকে সালাতের শেষ বর্ণনা করেন। তিনি আবূ ইসহাক আস্ সুবায়‘ঈ থেকে তিনি হুরায়রাহ্ ইবনু ইয়ারীম থেকে, তিনি ‘আলী থেকে বর্ণনা করেন এবং ‘আমর বিন মুররাহ্ থেকেও বর্ণনা করেছেন, তিনি ‘আবদুর রহমান বিন আবী লায়লা থেকে, তিনি মু‘আয বিন জাবাল থেকে। এর শাহিদ রয়েছে, যা ইবনু আবী শায়বাহ্ এক আনসারী লোক থেকে মারফূ' সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল যে আমাকে রুকূ‘ অথবা দাঁড়ানো অথবা বসাবস্থায় পাবে সে যেন আমার সঙ্গে হয়ে যায় আমি যে অবস্থায় থাকি এবং মদীনাবাসীদের মানুষ থেকে সা‘ঈদ বিন মানসূর যা সংকলন করেছেন তা ইবনু আবী শায়বার শব্দের মতো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৩-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্যে সালাতে আসলে আমাদেরকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) অবস্থায় পেলে তোমরাও সাজদায় যাও। আর এ সাজদাকে (কোন রাক্’আত) হিসেবে গণ্য করবে না। তবে যে লোক (ইমামের সাথে) এক রাক্’আতপ্রাপ্ত হবে সে সম্পূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পেয়ে গেল। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلَا تَعُدُّوهُ شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً فقد أدْرك الصَّلَاة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا جىتم الى الصلاة ونحن سجود فاسجدوا ولا تعدوه شيىا ومن ادرك ركعة فقد ادرك الصلاة» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: (فَاسْجُدُوا) হাদীসাংশে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইমামকে সাজদারত অবস্থাতে পাবে ঐ ব্যক্তির জন্য ইমামের সাথে সাজদাতে জড়িত হওয়া শারী‘আত সম্মত।

(وَلَا تَعُدُّوهُ) আবূ দাঊদে আছে (وَلَا تَعُدُّوهَا) স্ত্রী লিঙ্গের সর্বনাম দ্বারা। এভাবে মাজদুবনু তায়মিয়্যাহ্ মুনতাক্বা গ্রন্থে জাযারী জামি‘উল উসূল গ্রন্থে ৬ষ্ঠ খন্ডে ৪০৬ পৃষ্ঠাতে। অর্থ ঐ সাজদাকে তোমরা কিছু গণ্য করবে না।

(شَيْئًا) রাক্‘আত পাওয়া ইহকালের হুকুম বিবেচনায়। কেননা এতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পেলেও রুকূ‘ ছুটে যায় এবং এর মাধ্যমে পরকালের পুণ্য ছাড়া আর কিছু অর্জন হয় না।

(فَقَدْ أدْرَكَ الصَّلَاةَ) এক মতে বলা হয়েছে এখানে রাক্‘আত দ্বারা রুকূ‘ উদ্দেশ্য। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) দ্বারা রাক্‘আত উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ' পেল সে রাক্‘আত পেল অর্থাৎ ঐ রাক্‘আতটি তার জন্য বিশুদ্ধ হল। সে রাক্‘আতের মর্যাদা অর্জন করল। সুতরাং হাদীসটি জমহূরের মতের দলীল। তাদের মতে রুকূ‘রত অবস্থায় ইমামকে পাওয়া ঐ রাক্‘আত পাওয়া তবে এ মতের সামালোচনা করা হয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে রাক্‘আত বলতে রাক্‘আতের সমস্ত অংশই উদ্দেশ্য। রুকূ' এবং রুকূ‘র পরের অংশের উপর রাক্‘আতের প্রয়োগ রূপকার্থে। কোন নিদর্শন ছাড়া মাজাযের দিকে প্রত্যাবর্তন করা যাবে না। যেমন বারা এর হাদীস কর্তৃক মুসলিমে এ ‘‘অতঃপর আমি তাঁর ক্বিয়াম (কিয়াম) পেয়ে রুকূ‘ করলাম, তাতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করলাম, তারপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলাম। কেননা ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদায় মুক্বাবালাতে রাক্‘আত সংঘটিত হওয়া একটি ক্বারীনাহ্। যা ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করছে যে, নিশ্চয় রাক্‘আত দ্বারা রুকূ' উদ্দেশ্য এবং এখানে এমন কোন নিদর্শন নেই যা রাক্‘আতের প্রকৃত অর্থ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।’’ সুতরাং এ হাদীসাংশের মাধ্যমে ঐ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করা ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকূ‘ পাবে সে ঐ রাক্‘আত পাবে’’ অস্পষ্টতা থেকে মুক্ত না।

এক মতে বলা হয়েছে এর অর্থ হল যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক্‘আত পাবে সে ইমামের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) পাবে। অর্থাৎ তার জন্য জামা‘আতের সাওয়াব অর্জন হবে। একে সমর্থন করছে এ ‘‘যে ব্যক্তি সালাতের এক রাক্‘আত পেল সে মর্যাদা লাভ করল’’ শব্দে আবূ হুরায়রার হাদীস। এক বর্ণনাতে আছে ‘‘সে সালাত ও তার মর্যাদা লাভ করল’’। ত্বীবী বলেনঃ এ হুকুমটি জুমু‘আর ক্ষেত্রে। আর এ ব্যক্তি সালামের পূর্বে সালাতের কিছু অংশ পেলে জামা‘আতের সাওয়াব পাবে না। মালিক-এর মাজহাব সে পূর্ণ এক রাক্‘আত পাওয়া ছাড়া জামা‘আতের মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। চায় তা জুমু‘আর সালাতের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য সালাতের ক্ষেত্রে হোক। একমতে বলা হয়েছে এর অর্থ হল যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাতের এক রাক্‘আত পাবে সে সালাত পাবে তথা ইমামের অনুগত হওয়া, আনুগত্যকে আঁকড়িয়ে ধরা ও অন্যান্য কারণে জামা‘আতে সালাত আদায়ের হুকুম লাভ করবে। একে সমর্থন করছে যা এ ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে এক রাকাআত পেল সে সালাত পেল’’ শব্দে বর্ণিত হয়েছে তা।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ কিতাবের হাদীসটির বাচনভঙ্গির বাহ্যিক দিক ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করছে যে, রাক্‘আত দ্বারা রুকূ‘ উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে নিদর্শন হল রসূলের বাণীঃ ‘‘যখন তোমরা আগমন করবে আর আমরা সাজদারত অবস্থায় থাকব তখন তোমরা সেজদা করবে’’। এখানে প্রথমে সাজদার উল্লেখ, তারপর রাক্‘আতের উল্লেখ ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করছে যে, এখানে রাক্‘আত দ্বারা রুকূ' উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে রসূলের বাণীতে আরও প্রমাণ রয়েছে ‘‘তোমরা তাকে কিছু গণ্য করবে না’’। অর্থাৎ ইমামের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পাওয়ার হুকুমের বর্ণনা। দুনিয়ার হুকুমের বিবেচনাতে সে সাজদাকে রাক্‘আত পাওয়ার মাঝে গণ্য করা যাবে না। আর এটি নীচের বাক্যতে রুকূ' পাওয়ার হুকুম বর্ণিত হওয়াকে দাবি করছে। অর্থাৎ প্রথম বাক্যের রাক্‘আতকে রুকূ' গণ্য করা হবে এবং যে ব্যক্তি রুকূ' পাবে সে রাক্‘আত পাবে। পক্ষান্তরে শেষ বাক্যটিকে জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের মর্যাদা বর্ণনার উপর অথবা তার হুকুম বর্ণনার উপর প্রয়োগ করা অসম্ভব বিষয়। কেননা তখন উভয় বাক্যের মাঝে কোন সামঞ্জস্যতা থাকবে না এবং জামা‘আতের সাওয়াব অর্জনও রুকূ' পাওয়ার উপর নির্ভর করে না। বরং সালাতের একটি অংশ পাওয়ার মাধ্যমে সে সাওয়াব অর্জন হবে। চাই তা জুমু‘আর সালাতের ক্ষেত্রে হোক বা অন্য সালাতের ক্ষেত্রে হোক।

অপর পক্ষে ‘‘সে মর্যাদা লাভ করল অথবা সে সালাত ও তার মর্যাদা লাভ করল’’। এ বর্ণনাটি আবূ হুরায়রার অন্য আরেকটি হাদীস। এটি দুর্বল বর্ণনা হওয়া সত্ত্বেও এতে প্রথম বাক্যটি নেই। এর উপর ভিত্তি করে কিতাবের হাদীসটি ‘‘যে রুকূ‘ পাবে সে রাক্‘আত পাবে’’ এর উপর প্রমাণ বহনে কোন অস্পষ্টতা নেই। বিশেষ করে যে ব্যক্তি বৈপরীত্য অর্থকে বিবেচনা করে ঐ ব্যক্তির মাজহাব অনুপাতে। কেননা প্রথম বাক্যটি তার অর্থের দিক দিয়ে ঐ কথার উপর প্রামাণ বহন করে যে, যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ‘ অবস্থায় পাবে সে ওটাকে রাক্‘আত গণ্য করবে। তবে হাদীসটি দুর্বল। যেমন অচিরেই জানা যাবে। এতে ‘‘সাহাবী যখন হাদীস বর্ণনা করে ঐ হাদীসের বিপরীত ‘আমল তখন ধর্তব্য হবে যার প্রতি সে ‘আমল করেছে তা’’ এমন কথা ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে।

অর্থাৎ এ কথা না বলা আবশ্যক হয়ে যাচ্ছে যে, যে ব্যক্তি রুকূ' পাবে সে রাক্‘আত পাবে। কেননা যা বর্ণনা করেছে আর বিপরীত ফাতাওয়া দিয়েছে। ইমাম বুখারী ‘‘জুয্উল ক্বিরাআতে’’ ৩৯ পৃষ্ঠাতে সংকলন করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রুকূ' করার পূর্বে ইমামকে ক্বিয়াম (কিয়াম) অবস্থায় পাওয়া ছাড়া তোমার জন্য যথেষ্ট হবে না’’। তারই আরেক শব্দে ৬৪ পৃষ্ঠাতে আছে তিনি বলেন, তুমি যখন সম্প্রদায়কে রুকূ' অবস্থায় পাবে তখন তাকে রাক্‘আত হিসেবে গণ্য করবে না। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমার নিকট হক হল নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ' অবস্থায় পাবে এবং তার সাথে রুকূ‘তে শরীক হবে সে ঐ রুকূ‘কে তার জন্য রাক্‘আত হিসেবে গণ্য করবে না। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গত হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৪-[৯] আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাকবীর তাহরীমাসহ(মাসেহ) আল্লাহর জন্যে জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেন তার জন্যে দু’ প্রকার মুক্তি তার জন্য বরাদ্ধ করা হয়। এক জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর দ্বিতীয় মুনাফিক্বী থেকে মুক্তি। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَ لَهُ بَرَاءَتَانِ: بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاق . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن انس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من صلى لله اربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الاولى كتب له براءتان: براءة من النار وبراءة من النفاق . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: (بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ) জাহান্নাম থেকে মুক্তির সম্ভাবনা ছোট ও বড় সকল প্রকার গুনাহ মাফ হওয়া ছাড়া।

(وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاق) ত্বীবী বলেনঃ অর্থাৎ ইহকালে তাকে মুনাফিক্বের ‘আমল করা থেকে নিরাপদে রাখবেন এবং নিষ্ঠাপূর্ণ ‘আমলের জন্য তাকে তাওফীক দিবেন। পরকালে তাকে মুনাফিক্বের শাস্তি থেকে নিরাপদে রাখা হবে অথবা সে ব্যক্তি মুনাফিক্ব না বলে তার পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করা হবে। কেননা মুনাফিক্বরা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলস অবস্থায় দাঁড়ায় আর এ অবস্থা তার বিপরীত। হাদীসটি ইমামের সাথে তাকবীরে উলা পাওয়া মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করছে। ইবনু হাজার বলেন, প্রথম তাকবীর পাওয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্। ক্বারী বলেন, সালাফদের থেকে যখন প্রথম তাকবীর ছুটে যেত তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে তিনদিন শোক পালন করতেন এবং জামা‘আত ছুটে গেলে সাতদিন শোক পালন করতেন। ইমামের সাথে প্রথম তাকবীরের মর্যাদা সম্পর্কে আরও অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা আনাস (রাঃ)-এর হাদীসকে সমর্থন করে।

সেগুলো থেকে প্রথমঃ ‘উমারের হাদীস ইবনু মাজাহ ও সা‘ঈদ বিন মানসূর একে সংকলন করেছেন এর সানাদে দুর্বলতা ও বিচ্ছিন্নতা রয়েছে। দ্বিতীয়ঃ ‘আব্দুল্লাহ বিন আবূ আওফার হাদীস। আবূ নু‘আয়ম তার হিল্ইয়াহ্ গ্রন্থে একে সংকলন করেছেন। তার সানাদে হাসান বিন ‘আমারাহ্ আছে, সে দুর্বল। তৃতীয়ঃ আবূ কাহিল-এর হাদীস। ত্ববারানী একে তাঁর কাবীর গ্রন্থে, ‘উক্বায়লী যুআফাতে। হাকিম আবূ আহমাদ কুনাতে। ‘উক্বায়লী বলেন, এর সানাদ মাজহূল বা অজ্ঞাত। চতুর্থঃ আবূ হুরায়রার হাদীস। রাযযাক্ব এবং ‘উক্বায়লী একে সংকলন করেছেন। হায়সামী মাজমাউয যাওয়ায়িদে বলেন, ২য় খন্ড ১৩০ পৃষ্ঠা। ইমাম আহমাদ এর সানাদকে দুর্বল বলেছেন। পঞ্চমঃ আবুদ্ দারদার হাদীস। বাযযার এবং ইবনু আবী শায়বাহ্ একে সংকলন করেছেন। এর সানাদে একজন অপরিচিত বর্ণনাকারী আছে। হাফিয এ হাদীসগুলোকে তালখীসে ১২১ পৃষ্ঠাতে সমালোচনার সাথে উল্লেখ করেছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৫-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে লোক উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করেছে এবং ভালভাবে সে তার উযূ সমাপ্ত করেছে। তারপরে মসজিদে গিয়েছে। সেখানে লোকদেরকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে ফেলা অবস্থায় পেয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাকে ঐ সালাত আদায়কারীদের সমান সাওয়াব দান করবেন যারা সেখানে হাযির হয়ে সালাত পুরা করেছে। অথচ তাতে তাদের পুণ্য একটুও কমতি হবে না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وُضُوءَهُ ثُمَّ رَاحَ فَوَجَدَ النَّاسَ قَدْ صَلَّوْا أَعْطَاهُ اللَّهُ مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا وَحَضَرَهَا لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ م أُجُورهم شَيْئا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من توضا فاحسن وضوءه ثم راح فوجد الناس قد صلوا اعطاه الله مثل اجر من صلاها وحضرها لا ينقص ذلك م اجورهم شيىا» . رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: (ثُمَّ رَاحَ) অতঃপর সে মসজিদের দিকে গেল। হাদীসে (رَواحَ) দ্বারা সাধারণ যাওয়া উদ্দেশ্য। একে নাসায়ীর এক বর্ণনা সমর্থন করছে। তাতে আছে ‘‘অতঃপর সে সালাতের উদ্দেশে বের হল’’।

(قَدْ صَلَّوْا) তারা (জামা‘আতের সাথে) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিয়েছে।

(أَعْطَاهُ) ঐ ব্যক্তিকে যে জামা‘আতের সালাত শেষ হওয়ার পর আগমন করেছে।

(مِثْلَ أَجْرِ مَنْ صَلَّاهَا) জামা‘আতের সাথে যে সালাত আদায় করেছে।

(لَا يَنْقُصُ ذلِكَ) আল্লাহ তাকে তাদের সাওয়াবের মতো সাওয়াব দিবেন।

(من أُجُورهم) আবূ দাঊদে আছে (أُجرهم) এক বচন দ্বারা আওনুল মা‘বূদ-এর হাশিয়াতে (أُجرهم) লেখা আছে। অর্থাৎ জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সাওয়াব।

(شَيْئا) অর্থাৎ সাওয়াব অথবা ঘাটতি থেকে বরং তারা জামা‘আতে সালাত আদায় করার কারণে তাদের সাওয়াব পূর্ণাঙ্গভাবে ধার্য থাকবে। আর জামা‘আত ছুটে যাওয়া ব্যক্তির জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য চেষ্টা করাতে জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের প্রত্যেকের মতো সাওয়াব তার জন্যও থাকবে। সিনদী বলেনঃ হাদীসের বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই জামা‘আতের মর্যাদা লাভ নির্ভর করে মর্যাদা লাভের উদ্দেশ্য জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য চেষ্টা করার উপর। এ মর্যাদার ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি নেই। চাই জামা‘আতে সালাত পেয়ে থাকুক বা না পেয়ে থাকুক। সুতরাং যে ব্যক্তি জামা‘আতের একটি অংশ পাবে যদিও তাশাহুদের ক্ষেত্রে হোক তাহলে সে আরও উত্তমভাবে জামা‘আত পাবে এবং পুণ্য ও মর্যাদা চেষ্টা করার মাধ্যমে যা লাভ করা হয় এ লভ্যাংশ তার অন্তর্ভুক্ত না। সুতরাং যে ব্যক্তির উক্তি হাদীসের বিরোধিতা করবে তার উক্তি মূলত এ অধ্যায়ে ধর্তব্য না। (আবূ দাঊদ)

সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব এ অধ্যায় সম্পর্কে এক আনসারী লোক থেকে বর্ণনা করেন, আনসারী বলেনঃ আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এরপর তিনি হাদীস উল্লেখ করেন, আর তাতে আছে ‘‘অতঃপর ব্যক্তি মসজিদে এসে যদি জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর মসজিদে আসার পর যদি দেখতে পায় তারা সালাতের কিছু অংশ আদায় করে নিয়েছে এবং কিছু অংশ অবশিষ্ট আছে তাহলে এ ব্যক্তি যতটুকু পাবে তা আদায় করবে আর যতটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা পরে আদায় করে নিবে। এ ব্যক্তির অবস্থাও অনুরূপ। আর যদি মসজিদে আসার পর দেখতে পায় মানুষ সালাত আদায় করে নিয়েছে এরপর সে এসে সালাত আদায় করবে তাহলে তার মর্যাদাও অনুরূপ।’’ আবূ দাঊদ এ হাদীসটিকে এবং বায়হাক্বীও একই সানাদে সংকলন করেছে আবূ দাঊদ ও মুনযিরী এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer

পরিচ্ছেদঃ ২৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৪৬-[১১] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন এক লোক মসজিদে এমন সময় আসলেন, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করে ফেলেছেন। তিনি (তাকে দেখে) বললেন, এমন কোন মানুষ কি নেই যে তাকে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) দিবে তাঁর সঙ্গে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে। এ মুহূর্তে এক লোক দাঁড়ালেন এবং তার সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ وَقَدْ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ؟» فَقَامَ رَجُلٌ فيصلى مَعَه . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد

وعن ابي سعيد الخدري قال: جاء رجل وقد صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «الا رجل يتصدق على هذا فيصلي معه؟» فقام رجل فيصلى معه . رواه الترمذي وابو داود

ব্যাখ্যা: (جَاءَ رَجُلٌ) (এক লোক আসল) মসজিদে। আহমাদের এক বর্ণনাতে ৩য় খন্ডে ৪৫ পৃষ্ঠাতে এবং বায়হাক্বীর ৩য় খন্ডে ৬৯ পৃষ্ঠাতে এসেছে- নিশ্চয় একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল।

(وَقَدْ صَلّى رَسُولُ اللّهِ ﷺ) তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে যুহরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিয়েছেন। যেমন মুসনাদে আহমাদে (৩য় খন্ডে ৮৫ পৃষ্ঠাতে) এবং তাতে তিনি একটু বেশি উল্লেখ করেছেন। রাবী বলেনঃ অতঃপর তাঁর তথা রসূলের সাহাবীদের থেকে এক ব্যক্তি মসজিদে আসলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে অমুক! কোন্ জিনিস তোমাকে সালাত থেকে বাধা দিল? তারপর লোকটি এমন কিছু উল্লেখ করল যা আপত্তি স্বরূপ। বর্ণনাকারী বলেনঃ এরপর লোকটি সালাত আদায় করতে দাঁড়ালে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শেষ পর্যন্ত। হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদে বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ সহীহ এর বর্ণনাকারী সহীহ।

(أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلى هذَا) তার প্রতি দয়া করবে ও অনুগ্রহ করবে।

(فَيُصَلِّيَ مَعَه) যাতে এর মাধ্যমে তার জামা‘আতের সাওয়াব অর্জন হয়। অতঃপর সে এমন অবস্থানে অবস্থান করবে যেন সে তার উপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করল। মাজহার বলেনঃ একে তিনি সদাক্বাহ্ (সাদাকা) বলে নামকরণ করেছেন তার কারণ হল সে তার উপর ২৬ গুণ সাওয়াবের মাধ্যমে সদাক্বাহ্ (সাদাকা) করে থাকে। কেননা যদি সে একাকী সালাত আদায় করে তাহলে তার কেবল একটি সালাতের সাওয়াব অর্জন হবে। অর্থাৎ যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে পূর্বে জামা‘আতে সালাত আদায় করেছেন তাদের মধ্যে হতে আবূ বাকর (রাঃ)। বায়হাক্বী এর ৩য় খন্ড ৭০ পৃষ্ঠাতে অন্য বর্ণনাতে আছে ‘‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করল তিনি হলেন আবূ বাকর (রাঃ)।’’

(فيصلى مَعَه) অতঃপর তিনি তার প্রতি মুক্তাদী হয়ে সালাত আদায় করলেন। এ হাদীসটি ঐ ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে যে, যে ব্যক্তি একাকীভাবে সালাত শুরু করবে তার সালাতে অপর ব্যক্তির শরীক হওয়া শারী‘আত সম্মত। যদিও শরীক ব্যক্তি ইতিপূর্বে জামা‘আতে সালাত আদায় করে থাকুক। এ হাদীস দ্বারা ইমাম তিরমিযী ঐ ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করছেন যে, কোন সম্প্রদায় জামা‘আত সহকারে এমন মসজিদে সালাত আদায় বৈধ যে মসজিদে সালাত আদায় হয়ে গেছে। আর তা তাবি‘ঈ ও সাহাবীদের থেকে একাধিক বিদ্বানের উক্তি। আহমাদ ও ইসহাক এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন। বিদ্বানদের অন্যান্যগণ বলেনঃ তারা একাকী সালাত আদায় করবে। এটি সুফ্ইয়ান, মালিক, ইবনুল মুবারক এবং শাফি‘ঈর উক্তি।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আমি বলব, ইমামদের থেকে যারা সালাত বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জামা‘আতে সালাত আদায়কে শর্তারোপ করেছেন অথবা জামা‘আতে সালাত আদায়কে শর্তারোপ না করে জামা‘আতে সালাত আদায়কে ফারযে আইন বলে সাব্যস্ত করেছেন তারা সাধারণভাবে জামা‘আতে বারংবার তাকে বৈধ বলেছেন। আর যারা জামা‘আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কে ফারযে আইন না হওয়ার মত পেশ করেছেন বা সুন্নাত বলেছেন তারা জামা‘আত না হওয়ার বারংবারতাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন অচিরেই তা জানা যাবে।

ইবনু মাস্‘ঊদ বৈধ বলেছেন। ইবনু আবী শায়বাহ্ তাঁর মুনান্নাফ গ্রন্থে সালামাহ্ বিন কুহায়ল থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইবনু মাস‘ঊদ মসজিদে প্রবেশ করলেন এমতাবস্থায় মুসল্লীরা সালাত আদায় করে নিয়েছে। অতঃপর ইবনু মাস্‘ঊদ ‘আলক্বামাহ্, মাসরূক ও আসওয়াদ-এর মাধ্যমে জামা‘আত করল। এ সানাদ বিশুদ্ধ। আর তা আনাস বিন মালিক-এর উক্তি। বুখারী তাঁর সহীহাতে বলেন, আনাস বিন মালিক এক মসজিদে আসলেন যেখানে সালাত আদায় হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি আযান দিয়ে ইক্বামাতের পর জামা‘আতে সালাত আদায় করলেন। হাফিয বলেনঃ আবূ ইয়া‘লা একে তার মুসনাদ গ্রন্থে মাওসূলভাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনু আবী শায়বাহ্ ও বায়হাক্বীও বর্ণনা করেছেন।

ইবনু হাযম তার মুহাল্লা গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডে ২৩৮ পৃষ্ঠাতে বলেনঃ এটা এমন এক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যাতে সাহাবীদের থেকে আনাস (রাঃ)-এর কোন বিরোধিতাকারী পাওয়া যায় না। ‘আয়নী বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, আর তা এক বর্ণনাতে ‘আত্বা ও হাসানের উক্তি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘‘জামা‘আতের সালাত একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা উত্তম’’ এর বাহ্যিকতার প্রতি ‘আমলকরণে এটি আহমাদ, ইসহাক ও আশহুরের উক্তি।

এ ব্যাপারে হানাফীদের মাজহাব হল যা শামী খাযায়িন গ্রন্থ থেকে নকল করে দুররুল মুখতারের হাশিয়াতে উল্লেখ করেছেন। আর তা মাকরূহে তাহরীমী মনে করা হয়, এলাকার মসজিদে জামা‘আতের বারংবারতাকে। ‘‘এমন মাসজিদ যার ইমাম আছে। আযান ও ইক্বামাতের মাধ্যমে জামা‘আতে সালাত আদায় করা হয় বলে সবার জানা। তবে মসজিদের বাসিন্দাগণ ছাড়া যখন আযান ও ইক্বামাতের মাধ্যমে সেখানে প্রথমবার সালাত আদায় করা হবে অথবা মসজিদের বাসিন্দাগণ নিম্নস্বরে আযান দিয়ে সালাত আদায় করবে সে সময় ছাড়া। আর যদি মসজিদের বাসিন্দাগণ আযান ও ইক্বামাত ছাড়া বারংবার জামা‘আতে সালাত আদায় করে অথাবা মাসজিদটি রাস্তাতে হয় তাহলে বৈধ হবে। যেমন বৈধ হয় এমন মসজিদে যার কোন ইমাম, মুয়াযযিন নেই। আর এ কারণে তারা ইমাম ত্ববারানী আবূ বাকরাহ্ থেকে ক্বারী ও আওসাত্ব গ্রন্থে যা বর্ণনা করেছেন তার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন।

বর্ণনাটি হল, নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিক হতে আগমন করলেন এমতাবস্থায় তিনি সালাতের ইচ্ছা করছেন। তখন তিনি মানুষকে এ অবস্থায় পেলেন যে, তারা সালাত আদায় করে নিয়েছে। অতঃপর তিনি তার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে একত্র করে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। হায়সামী মাজমাউয্ যাওয়ায়িদ-এর ২য় খন্ডে ৪৫ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এর বর্ণনাকারীগণ নির্ভরশীল। হানাফীরা বলেন, যদি ২য় জামা‘আত বৈধই হত তাহলে মসজিদে জামা‘আত ছেড়ে তার বাড়িতে সালাত আদায়কে পছন্দ করতেন না। তারা বলেন, সাধারণ অনুমতিতে জামা‘আতের হ্রাসকরণ হয় এর অর্থ হল, যখন মুসল্লীরা জানতে পারবে এ জামা‘আত তাদের থেকে কোন মতেই ছুটবে না তখন তারা জামা‘আতের জন্য প্রস্ত্তত থাকবে না।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেনঃ আবূ বাকরার হাদীস দ্বারা বারংবার জামা‘আতে সালাত আদায় মাকরূহে তানযিহী বা তাহরীমী হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় আছে। কেননা তা ঐ ব্যাপারে উদ্ধৃতি না যে, নিশ্চয়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবারকে একত্রিত করলেন। অতঃপর তাদেরকে নিয়ে নিজ গৃহে সালাত আদায় করলেন। বরং এ সম্ভাবনা রাখছে যে, তিনি তাদেরকে মসজিদে সালাত আদায় করলেন। আর তাঁর বাড়ির দিকে যাওয়া মূলত তার পরিবারকে একত্র করার জন্য; সেখানে সালাত আদায়ের জন্য না। তখন এ হাদীস এলাকার মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় মুস্তাহাব হওয়ার দলীল হবে। যার ইমাম ও মুয়াযযিন আছে এবং বাসিন্দারা জানে তাতে একবার সালাত আদায় করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة) 4. Prayer
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৫ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে