১১৩৮

পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম

১১৩৮-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইমামের পূর্বে কোন ’আমল করো না। ইমাম তাকবীর দিলে তোমরাও তাকবীর দিবে। ইমাম যখন বলবে ’ওয়ালায্ যোল্লীন’, তোমরা বলবে ’আমীন’। ইমাম রুকূ’ করলে তোমরা রুকূ’ করবে। ইমাম যখন বলবে ’সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’, তোমরা বলবে ’’আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু’’। বুখারী, মুসলিম; তবে ইমাম বুখারী ’’ওয়াইযা- ক্বা-লা ওয়ালায্ যোল্লীন’’ উল্লেখ করেননি। (মুত্তাফাকুন ’আলায়হি)[1]

بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ إِذَا كَبَّرَ فكبروا وَإِذا قَالَ: وَلَا الضَّالّين. فَقُولُوا: آمِينَ وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا: اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَك الْحَمد إِلَّا أَنَّ الْبُخَارِيَّ لَمْ يَذْكُرْ: وَإِذَا قَالَ: وَلَا الضَّالّين

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا تبادروا الامام اذا كبر فكبروا واذا قال: ولا الضالين. فقولوا: امين واذا ركع فاركعوا واذا قال: سمع الله لمن حمده فقولوا: اللهم ربنا لك الحمد الا ان البخاري لم يذكر: واذا قال: ولا الضالين

ব্যাখ্যা: (لَا تُبَادِرُوا الْإِمَامَ) অর্থাৎ তোমরা তাকবীর, রুকূ‘, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) এবং এগুলো থেকে উঠা ও ক্বিয়াম (কিয়াম), সালাম ইত্যাদির ক্ষেত্রে ইমামের অগ্রগামী হবে না। (إِذَا كَبَّرَ فكبروا) অর্থাৎ ইহরামের জন্য অথবা সাধারণ তাকবীর। সুতরাং সালাতের এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থাতে পরিবর্তনের জন্য যে সকল তাকবীর ব্যবহার করা হয়। সকল তাকবীরকে অন্তর্ভুক্ত করবে। ইমাম আবূ দাঊদ একটু বেশি বর্ণনা করেছেন; (আর তোমরা তাকবীর দিবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম তাকবীর না দিবে।) وَإِذَا قَالَ: وَلَا الضَّالّيْنَ অর্থাৎ অতঃপর وَلَا الضَّالّيْنَ এর পর ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে (فَقُولُوا: امِينَ) অর্থাৎ ইমামের আমীনের সাথে মুক্তাদীর ‘আমীন’ মিলিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য না। (وَإِذَا رَكَعَ) অর্থাৎ যখন রুকূ‘ শুরু করবে। (فَارْكَعُوا) আবূ দাঊদ একটু বেশি বর্ণনা করেছেন (আর ইমাম যতক্ষণ পর্যন্ত রুকূ' না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা রুকূ' করবে না।) অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত রুকূ' করতে শুরু না করবে তবে রুকূ' সমাপ্ত না করা পর্যন্ত এ অর্থ উদ্দেশ্য না। যেমন শব্দ থেকে বুঝা যাচ্ছে। (আর যখন সিজদা্ দিবে) অর্থাৎ যখন সিজদা্ দিতে শুরু করবে।

অতঃপর তোমরা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর আর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদা্ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ইমাম সিজদা্ না করবে। হাফিয বলেনঃ এ অংশটি উত্তম ধরনের বৃদ্ধিকরণ। যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (ইমাম যখন তাকবীর দিবে অতঃপর তোমরা তাকবীর দিবে) এ উক্তি দ্বারা মুক্তাদীর তাকবীর ইমামের তাকবীরের সাথে মিলে যাওয়াকে উদ্দেশ্য করার যে সম্ভাবনা ছিল তা দূর করে দিচ্ছে। ‘আয়নী বলেনঃ সেই সাথে হাফিযও বলেন, আবূ দাঊদের এ বর্ণনা মুক্তাদীর তাকবীর ইমামের তাকবীরের সাথে হওয়া বা আগে হওয়াকে দূর করণে স্পষ্ট।

(وَإِذَا قَالَ: سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه فَقُولُوا: اللّهُمَّ رَبَّنَا لَك الْحَمد) উল্লেখিত হাদীসাংশ দ্বারা ঐ সকল লোক দলীল গ্রহণ করেছেন যে, ইমামের কর্তব্য (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه) শোনানো আর মুক্তাদীর কর্তব্য হাম্দ পাঠ করা।

কেননা এর বাহ্যিক দিক হল বিভক্তি, যা অংশীদারীত্ব এর পরিপন্থী। রুকূ‘র অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ) হাদীসটির মূলের ভিত্তিতে বুখারী ও মুসলিম। তবে ব্যবহৃত শব্দগুলা মুসলিমের, বুখারীর না। বুখারী এবং মুসলিমে হাদীসটির অনেক সানাদ ও শব্দ রয়েছে। সে সানাদগুলো থেকে বুখারী ‘‘কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণাঙ্গতা’’ অধ্যায়ে যা সংকলন করেছেন তা হল (ইমাম কেবল এজন্য বানানো হয়েছে যাতে তার অনুসরণ করা হয়। সুতরাং তাঁর বিপরীত কাজ তোমরা করবে না। সুতরাং তিনি যখন রুকূ‘ করবেন তোমরাও তখন রুকূ‘ করবে) আর যখন (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه) বলবেন তখন তোমরা (رَبَّنَا لَك الْحَمد) বলবে। আর তিনি যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবেন তখন তোমরাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। আর যখন তিনি বসে সালাত আদায় করবেন তখন তোমরাও সকলে বসে সালাত আদায় করবে।

আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করবে কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যতা। আর এটা মুসলিমেও আছে। তবে মুসলিমে ‘‘তোমরা কাতার সোজা কর’’ অংশ থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। তবে তিনি একটু বেশি উল্লেখ করেছেন ‘‘অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলবে তোমরাও তাকবীর বলবে’’। হাদীসে উল্লেখিত ‘‘আর তোমরা ইমামের বিপরীত কাজ করবে না’’ অংশ দ্বারা ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও তাঁর অনুসারীরা ঐ ব্যাপারে দলীল প্রহণ করেছেন যে, নফল সালাত আদায়কারীর পেছনে ফরয সালাত আদায়কারী সালাত আদায় করবে না। কেননা নিয়্যাতের ভিন্নতা এ ব্যাপক ও সাধারণ উক্তির অধীন।

তবে এর উত্তরে বলা হয়েছে এ ব্যাপক বিষয়টি শুধু প্রকাশ্য কার্যাবলীর ক্ষেত্রে ভিন্নতার উপর প্রয়োগ হবে অপ্রকাশ্য কার্যাবলীর ক্ষেত্রে না। আর তা এমন, যে ব্যাপারে মুক্তাদী অবহিত না। যেমন নিয়্যাত। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীন্নতর ধরণসমূহ তাঁর ‘‘আর ইমাম যখন তাকবীর দিবে তখন তোমরাও তাকবীর দিবে.....’’ শেষ পর্যন্ত। এ উক্তি ও অনুল্লেখিত আরও যা এর উপর ক্বিয়াস ধরে নেয়া যাবে তার মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবং সে ধরণগুলোর মধ্যে থেকে একটি এই যা ইমাম বুখারী ‘‘তাকবীরে সাড়াদান করা’’ অধ্যায়ে সংকলন করেছেন। আর তা হল ‘‘ইমাম কেবল এজন্য বানানো হয়েছে যাতে তার অনুসরণ করা হয়। সুতরাং ইমাম যখন তাকবীর দিবে তখন তোমরাও তাকবীর দিবে। আর ইমাম যখন রুকূ‘ করবে তখন তোমরাও রুকূ' করবে। আর ইমাম যখন (سَمِعَ اللّهُ لِمَنْ حَمِدَه) বলবে তখন তোমরা (رَبَّنَا لَك الْحَمد) বলবে। আর যখন সিজদা্ করবে তখন তোমরাও সিজদা্ করবে। যখন ইমাম বসে সালাত আদায় করবে তখন তোমরাও সকলে বসে সালাত আদায় করবে।’’ হাদীসটিকে ইমাম আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী এবং ইবনু মাজাহও বর্ণনা করেছেন সেই সাথে বায়হাক্বী ২য় খন্ড ৯২ পৃষ্ঠা; তবে বুখারী (وَإِذا قَالَ: ﴿وَلَا الضَّالّيْنَ﴾ فَقُولُوا: امِينَ) অংশটুকু বর্ণনা করেননি। আর বুখারীতে কোন সানাদে ‘‘তোমরা ইমামের আগে কোন কাজ করবে না’’ অংশটুকু নেই। এ শব্দটিও এককভাবে ইমাম মুসলিমের।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৪: সালাত (كتاب الصلاة)