পরিচ্ছেদঃ ২৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুক্তাদীর ওপর ইমামের যা অনুসরণ করা কর্তব্য এবং মাসবূকের হুকুম
১১৩৬-[১] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পেছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতাম। বস্তুতঃ তিনি যখন ’সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ’ পাঠ করতেন, তখন যে পর্যন্ত তিনি সাজদার জন্যে তাঁর কপাল মাটিতে না লাগাতেন, আমাদের কেউ নিজ পিঠ ঝুকাতেন না। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ مَا عَلَى الْمَأْمُومِ مِنَ الْمُتَابَعَةِ وَحُكْمِ الْمَسْبُوْقِ
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا قَالَ: «سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ» . لَمْ يَحْنِ أَحَدٌ مِنَّا ظَهْرَهُ حَتَّى يَضَعَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم جَبهته على الأَرْض
ব্যাখ্যা: (حَتّى يَضَعَ النَّبِيُّ ﷺ جَبهته على الأَرْض) বুখারীর এক বর্ণনাতে এসেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতক্ষণ পর্যন্ত সাজদারত অবস্থায় মাটিতে পতিত না হতেন। অতঃপর নাবীর পরে আমরা সাজদাতে পতিত হতাম অর্থাৎ এভাবে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজের সূচনা অপেক্ষা সাহাবীদের কাজের সূচনা পরে হত এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) থেকে উঠার আগে তাদের সাজদাতে যাওয়া শুরু হত। কেননা কোন কাজ যেমন ইমামের আগে করা যাবে না তেমনি ইমামের কোন কাজের হুবহু বিপরীতও করা যাবে না। হাদীসটিতে এমন কোন দলীল নেই যে, ইমাম কোন রুকন পূর্ণাঙ্গ না করা পর্যন্ত মুক্তাদী সে রুকনের কাজ শুরু করবে না। যা ইবনু জাওযীর মতের পরিপন্থী।
মুসলিমে ‘আমর বিন হুরায়স-এর হাদীসে এসেছে ‘‘আমাদের কোন লোক ততক্ষণ পর্যন্ত তার পিঠ বাঁকাতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে সিজদারত না হতেন’’। আবূ ই‘য়ালা-তে আনাস (রাঃ)-এর হাদীস কর্তৃক বর্ণিত আছে ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাতে যেতে সক্ষম না হতেন’’। ‘আয়নী বলেন, এ সকল হাদীসের অর্থ স্পষ্ট যে, ইমাম কোন রুকন শুরু করার পর মুক্তাদী সে রুকন শুরু করবে এবং ইমাম সে রুকন সমাপ্ত করার পূর্বে করতে হবে।
হাফিয এ দু’টি হাদীস উল্লেখের পর বলেনঃ ইমাম ও মুক্তদীর পারস্পারিক কাজ একই সময়ে না মিলানোর ব্যাপারে হাদীসদ্বয়ের বাচনভঙ্গি স্পষ্ট।
ইবনু দাক্বীক্ব আল ঈদ বলেনঃ বারার হাদীসটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাজের অনুকরণে সাহাবীদের কাজ বিলম্ব হওয়ার উপর প্রমাণ করছে। তা এভাবে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রুকনে পৌঁছার ইচ্ছা করেছেন সে রুকনে যতক্ষণ পর্যন্ত জড়িত না হতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কাজ শুরু করার সময়ে না। অপর হাদীসের শব্দ ঐ বিষয়ের উপর প্রমাণ বহন করবে অর্থাৎ রসূলের ঐ বাণী উদ্দেশ্য ‘‘অতঃপর তিনি ইমাম যখন রুকূ‘ করে তারপর তোমরা রুকূ' করবে আর যখন সিজদা্ করবে তখন তোমরা সিজদা্ করবে’’। নিশ্চয় এ হাদীসটি রুকূ‘, সাজদার অগ্রগামীতাকে দাবি করবে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ বারা, ‘আমর বিন হুরায়স, আনাস (রাঃ) এবং আরও যা এ সকল হাদীসের অর্থে প্রমাণ করছে সকল হাদীস ঐ ব্যাপারে দলীল যে, ইমামের সকল কাজে মুক্তাদীর অনুসরণ করা আবশ্যক এবং সুন্নাত হচ্ছে ইমাম এক কাজ থেকে অন্য কাজের দিকে স্থানান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের পরে স্থানান্তরিত হবে অর্থাৎ কোন রুকনে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের সাথে সাথে যাবে না। বরং ইমাম কোন অবস্থানে যাওয়ার ইচ্ছা করা থেকে মুক্তাদী কিছু বিলম্ব করবে।
ইমাম শাফি‘ঈ এ মতের দিকে গিয়েছেন এটাই হক। হানাফীগণ এ সকল হাদীসগুলোকে ঐদিকে চাপিয়ে দিয়েছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন স্থূল হয়েছিলেন তখন তিনি মুক্তাদীগণ তাঁর অগ্রগামী হয়ে যাবেন এ আশংকায় তিনি এ নির্দেশ তাদেরকে দিয়েছেন। তবে বিষয়টিকে এভাবে অন্য দিকে চাপিয়ে বা ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দলীল আবশ্যক। এ হাদীসটিতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে যে, এক রুকন থেকে আরেক রুকনের দিকে পরিবর্তিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণের জন্য ইমামের দিকে দৃষ্টি দেয়া বৈধ।