পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০২৯-[৭] ’আমর ইবনুল ’আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কুরআনে ১৫টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) শিখিয়েছেন। এর মাঝে তিনটি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) মুফাসসাল সূরায় এবং দু’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সূরাহ্ আল হাজ্জ-এর মধ্যে। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
عَن عَمْرو بن الْعَاصِ قَالَ: أَقْرَأَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسُ عَشْرَةَ سَجْدَةً فِي الْقُرْآنِ مِنْهَا ثَلَاثٌ فِي الْمُفَصَّلِ وَفِي سُورَةِ الْحَجِّ سَجْدَتَيْنِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সর্বমোট পনেরটি। এ অভিমত পোষণ করেন ইমাম আহমাদ, লায়স, ইসহাক্ব, মালিকী মাযহাবের ইবনু ওয়াহ্ব, শাফি‘ঈ মাযহাবের ইবনুল মুনযির এবং একদল ‘আলিম। এরা সূরাহ্ সাদ-এর সাজদাকে তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হিসেবে গণ্য করেছেন।
ইমাম শাফি‘ঈ বলেনঃ তিলাওয়াতের সিজদা্ চৌদ্দটি, তন্মধ্যে সূরাহ্ হাজ্জে দু’টি সিজদা্ এবং মুফাসসাল সূরাগুলোতে তিনটি। তাঁর মতে সূরাহ্ সাদ-এর সিজদা্ এর অন্তর্ভুক্ত নয় বরং তা সাজদায়ে শুকর।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ বলেনঃ তিলাওয়াতের সিজদা্ ১৪টি তবে সূরাহ্ হাজ্জের দ্বিতীয় সিজদা্ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে তিনি সূরাহ্ সাদ-এর সাজদাকে এর অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।
ইমাম মালিক বলেন, তিলাওয়াতের সিজদা্ সর্বমোট এগারটি। তিনি মুফাসসাল সূরাসমূহের সিজদা্ এবং সূরাহ্ সাদ-এর সিজদাকে তিলাওয়াতের সাজদার অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন না।
এক্ষেত্রে ইমাম আহমাদ ও তাঁর অনুসারীদের অভিমতই সঠিক। জেনে রাখা ভাল যে, তিলাওয়াতের সাজদাসমূহের স্থান নিম্নরূপঃ
১) সূরাহ্ আল্ আ‘রাফ-এর শেষে
২) সূরাহ্ আর্ রা‘দ (১৩ : ১৫)-এর بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ শব্দে
৩) সূরাহ্ আন্ নাহল (১৬ : ৫০)-এর وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ শব্দে
৪) সূরাহ্ বানী ইসরাঈল (১৭ : ১০৯)-এর وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا শব্দে
৫) সূরাহ্ মারইয়াম (১৯ : ৫৮)-এর خَرُّوْا سُجَّدًا وَبُكِيًّا শব্দে
৬) সূরাহ্ আল হাজ্জ (২২ : ১৮)-এর إِنَّ اللّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ শব্দে
৭) সূরাহ্ আল ফুরক্বান (২৫ : ৬০)-এর وَزَادَهُمْ نُفُورًا শব্দে
৮) সূরাহ্ আন্ নামল (২৭ : ২৬)-এর رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ শব্দে
৯) সূরাহ্ আস্ সিজদা্ (৩২ : ১৫)-এর خَرُّوْا سُجَّدًا শব্দে
১০) সূরাহ্ সোয়াদ (৩৮ : ২৪)-এর وَخَرَّ رَاكِعًا وَأَنَابَ শব্দে
১১) সূরাহ্ হামীম আস্ সিজদা্ (৪১ : ৩৭)-এর إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ শব্দে
১২, ১৩ ও ১৪) মুফাসসাল সূরাসমূহের সূরাহ্ নাজম, সূরাহ্ ইনশিক্বাক্ব ও সূরাহ্ আ‘লাকে
১৫) সূরাহ্ আল হাজ্জ এর দ্বিতীয় সিজদা্ ।
সিনদী বলেনঃ যারা সূরাহ্ হাজ্জের দ্বিতীয় সিজদাকে তিলাওয়াতের সিজদা্ হিসেবে গণ্য করে না তারা বলেন হাদীসের সানাদে একজন রাবী আছেন যিনি ইবনু মানীন তিনি অপরিচিত। তবে এ ক্ষেত্রে একাধিক হাদীস এসেছে যাতে বলা যায় যে, এ হাদীসটি দলীলযোগ্য।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩০-[৮] ’উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! সূরাহ্ আল হাজ্জ (হজ/হজ্জ)-এর কি দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার কারণে এমন মর্যাদা? জবাবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। যে ব্যক্তি এ দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে না সে যেন এ দু’টি আয়াত তিলাওয়াত না করে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসের সূত্র মজবুত নয়। আর মাসাবীহ হতে শারহুস্ সুন্নাহর মতো ’’সে দু’টো সাজদার আয়াত যেন না পড়ে’’-এর স্থলে ’’তাহলে সে যেন এ সূরাকে না পড়ে’’ এসেছে।)[1]
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فُضِّلَتْ سُورَةُ الْحَجِّ بِأَنَّ فِيهَا سَجْدَتَيْنِ؟ قَالَ: نَعَمْ وَمَنْ لَمْ يَسْجُدْهُمَا فَلَا يَقْرَأْهُمَا . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِالْقَوِيِّ. وَفِي الْمَصَابِيحِ: «فَلَا يَقْرَأها» كَمَا فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যা: وَمَنْ لَمْ يَسْجُدْهُمَا فَلَا يَقْرَأْهُمَا যারা এ দু’টি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে না তারা যেন সাজদার আয়াত দু’টি না পাঠ করে। শায়খ আহমাদ শাকির বলেনঃ কিছু ‘আলিমের মতে এ হাদীসের মর্মার্থ হলো যে ব্যক্তি সিজদা্ এর আয়াতের নিকটবর্তী হলো কিন্তু তার সিজদা্ করার ইচ্ছা নেই তাহলে সে সাজদার আয়াত পাঠ করবে না।
কারো কারো মতে এ হাদীসের মর্মার্থ হলো কুরআন তিলাওয়াতকারীকে এ উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে যে, যারা আয়াতদ্বয় পাঠ করবে তারা যেন সিজদা্ করে। কুরআন পাঠকারীর যেমন এ দু’টি আয়াত পাঠ ত্যাগ করা উচিত নয় অনুরূপভাবে অত্র আয়াত পাঠকারী পক্ষে তিলাওয়াতের সিজদা্ ত্যাগ করাও উচিত নয়। অত্র হাদীসটিও পূর্বের হাদীসের মতো সূরাহ্ হাজ্জে দু’টি তিলাওয়াতের সিজদা্ বিধিবদ্ধ হওয়ার দলীল। আর এ অভিমত ‘উমার, আলী, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার, আবূ মূসা, আবুদ্ দারদা, ‘আম্মার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের।
ইবনু কুদামাহ্ উক্ত সাহাবীগণের নাম উল্লেখ করার পর বলেনঃ তাদের যামানায় তাদের এ অভিমতের বিপরীতে কোন অভিমত পাওয়া যায় না তাই তাকে ইজমা বলা যায়। আবূ ইসহাক্ব বলেনঃ আমি সত্তর বৎসর যাবৎ লোকদেরকে সূরাহ্ হাজ্জে দু’টি সিজদা্ করতে দেখছি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ আমি যদি সূরাহ্ হাজ্জের একটি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পরিত্যাগ করতাম তবে প্রথমটিই পরিত্যাগ করতাম কেননা প্রথমটি হলো সংবাদ আর দ্বিতীয়টি হলো আদেশ। আর আদেশের অনুসরণ করা উত্তম।
আমি (মুবারকপূরী) বলছিঃ হাদীস ও সাহাবীগণের আসার দ্বারা সূরাহ্ হাজ্জের দু’টি সিজদা্ রমাণিত হওয়ার পর কোন অভিমতের গুরুত্ব নেই। বরং সূরাহ্ হাজ্জের দু’টি সিজদা্ বিধিবদ্ধ।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩১-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন, তারপর কিয়াম করলেন। তারপর রুকূ’ করলেন। মানুষেরা মনে করলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তানযীল আস্ সিজদা্ সূরাহ্ পড়েছেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَجَدَ فِي صَلَاةِ الظُّهْرِ ثُمَّ قَامَ فَرَكَعَ فَرَأَوْا أَنَّهُ قَرَأَ تَنْزِيلَ السَّجْدَةَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অতঃপর ‘দাঁড়িয়ে রুকূ' করলেন’ ইবনু মালিক বলেনঃ অর্থাৎ যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) শেষ করে দাঁড়ালেন তখন রুকূ‘ করলেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দাঁড়ানো অবস্থায় কোন কিছু পাঠ না করেই রুকূ' করেন যদিও দাঁড়ানোর পর ক্বিরাআত (কিরআত) করা বৈধ। মুল্লা ‘আলী ক্বারী বলেনঃ বরং তিলাওয়াতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) থেকে দাঁড়িয়ে পুনরায় ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করা উত্তম। এই ক্বিরাআত ত্যাগ করার কারণ এও হতে পারে যে, সালাত দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল অথবা তিনি এরূপ করেছেন তা যে বৈধ তা বর্ণনা করার উদ্দেশে।
হাদীসের শিক্ষাঃ নীরবে ক্বিরাআত (কিরআত) করা হয় এমন সালাতেও তিলাওয়াতের সিজদা্ বিধিসম্মত।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩২-[১০] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে কুরআন মাজীদ পাঠ করতেন। যখন সাজদার আয়াতে পৌঁছতেন তাকবীর বলে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিতেন। আমরাও তাঁর সাথে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতাম। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعنهُ: أَنه كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ عَلَيْنَا الْقُرْآنَ فَإِذَا مَرَّ بِالسَّجْدَةِ كَبَّرَ وَسجد وسجدنا مَعَه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসের শিক্ষাঃ
(১) কুরআন শ্রবণকারীর নিকট যখন তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা হয় তখন পাঠকরীর সাথে শ্রবণকারীও সিজদা্ করবে।
(২) তিলাওয়াতের সাজদার জন্য তাকবীর বলা বিধিসম্মত।
(৩) ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ এবং হানাফীদের মতে তিলাওয়াতের সিজদা্ হতে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলাও বিধিসম্মত।
তিলাওয়াতের সাজদাকালে তাকবীর বলার সময় দু’হাত উত্তোলন করতে হবে কিনা এ বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। এ সিজদা্ সালাতের ভিতরে হোক বা বাইরে হোক হানাফীদের মতে হাত উত্তোলন করতে হবে।
ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদের মতে দু’হাত উত্তোলন করতে হবে। কেননা সালাতের বাইরে তা তাকবীরে ইহরাম। আর সালাতের ভিতরে হলেও অনুরূপ। তিলাওয়াতের সিজদা্ শেষে তাশাহুদ পাঠ এবং সালাম ফেরানো সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে।
হানাফীদের মতে তাতে তাশাহুদও নেই সালামও নেই। ইমাম আহমাদ হতে প্রসিদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে তাতে সালাম ফেরানো ওয়াজিব তবে তাশাহুদ পাঠের প্রয়োজন নেই। তবে সঠিক কথা হচ্ছে তিলাওয়াতের সিজদা্ এর তাকবীরের সময় হাত উত্তোলন তাশাহুদ পাঠ এবং সালাম ফেরানো কোনটাই বিধি সম্মত নয়। কেননা বিধান প্রণেতা হতে এ ধরনের কোন বিষয় বর্ণিত হয়নি।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩৩-[১১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন সাজদার আয়াত পাঠ করলেন। তাই (উপস্থিত) সকল সাহাবায়ে কিরাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সঙ্গে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। সাজদাকারীদের কেউ তো সওয়ারীর উপর ছিলেন, আর কেউ জমিনে সাজদাকারী। আরোহীরা তাদের হাতের ওপরই সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ عَامَ الْفَتْحِ سَجْدَةً فَسَجَدَ النَّاسُ كُلُّهُمْ مِنْهُمُ الرَّاكِبُ وَالسَّاجِدُ عَلَى الْأَرْضِ حَتَّى إِنَّ الرَّاكِبَ لَيَسْجُدُ عَلَى يَده. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: এমনকি আরোহী স্বীয় হাতের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতো এতে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, আরোহী ব্যক্তিকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার জন্য বাহন থেকে নামার প্রয়োজন নেই। কেননা বাহনের উপর নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বৈধ। আর তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) নফল।
আর এ হাদীস থেকে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আরোহী ব্যক্তির জন্য বাহনের উপরে স্বীয় হাতের উপর সিজদা্ করা বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩৪-[১২] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় যাওয়ার পর মুফাসসাল সূরার কোন সূরায় সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেননি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَسْجُدْ فِي شَيْءٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ مُنْذُ تَحَوَّلَ إِلَى الْمَدِينَةِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ইমাম মালিক (রহঃ) এ হাদীসকে তাঁর মতের দলীল পেশ করেছেন যে, মুফাসসাল সূরাসমূহে তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) নেই। কিন্তু এ হাদীসটি য‘ঈফ যা দলীলযোগ্য নয়। আর এটি সহীহ হলেও তা দলীলের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ ‘আলিমগণ এ বিষয়ে একমত যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সপ্তম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সূরাহ্ ইনশিক্বা-ক্ব ও সূরাহ্ ‘আলাক্ব তিলাওয়াতের পর সিজদা্ করেছি। আর সূরাহ্ ইনশিক্বা-ক্ব ও সূরাহ্ ‘আলাক্ব মুফাসসাল সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এতে প্রমাণিত হয় যে, মুফাসসাল সূরাতেও তিলাওয়াতের সিজদা্ বিধিসম্মত।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩৫-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তিলাওয়াতের সাজদায় এ দু’আ পড়তেনঃ ’’সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্বাহূ ওয়া শাক্কা সাম্’আহূ ওয়া বাসারাহূ বিহাওলিহী ওয়া ক্যুওয়াতিহী’’ (অর্থাৎ আমার চেহারা ওই জাতে পাককে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করল যিনি একে সৃষ্টি করেছেন। নিজের শক্তি ও কুদরতের দ্বারা তাতে কান ও চোখ দিয়েছেন)। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী; ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي سُجُودِ الْقُرْآنِ بِاللَّيْلِ: «سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
ব্যাখ্যা: এ হাদীস এবং এর পরবর্তী হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিলাওয়াতের সাজদাতে যিকর তথা দু‘আ বিধিসম্মত। এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ফরয সালাতেই হোক বা নফল সালাতে অথবা সালাতের বাইরেই হোক। যারা বলেন, এ দু‘আ নফল সালাতে অথবা সালাতের বাইরে সাজদার সময় বলা যাবে তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই।
পরিচ্ছেদঃ ২১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০৩৬-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে আবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল! আজ রাত্রে আমি আমার নিজকে স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি একটি গাছের নিচে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছি। আমি যখন সাজদায়ে তিলাওয়াত করলাম তখন এ গাছটিও আমার সাথে সাজদায়ে তিলাওয়াত করল। আমি শুনলাম গাছটি এ দু’আ পড়ছেঃ ’’আল্ল-হুমমাকতুব্ লী বিহা- ’ইনদাকা আজরান ওয়াযা’ ’আন্নী বিহা- বেযরান, ওয়াজ্’আলহা- লী ’ইনদাকা যুখরান ওয়াতা ক্বববালহা- মিন্নী কামা- তাক্বব্বালতাহা- মিন ’আবদিকা দাঊদা’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! এ সাজদার জন্যে তোমার কাছে আমার জন্যে সাওয়াব নির্দিষ্ট করো। এর মাধ্যমে আমারা গুনাহ মাফ করে দাও। এ সাজদাকে তোমার নিকট সঞ্চিত সম্পদ বানিয়ে দাও। এ সিজদাকে এমনভাবে কবূল করো যেভাবে তুমি তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে কবূল করেছ।’’
ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদার আয়াত পাঠ করলেন, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিলেন। আমি তাকে ঐ বাক্যগুলো বলতে শুনেছি যা ঐ লোকটি গাছটিকে বলেছে বলে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী; ইবনু মাজাহও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন কিন্তু তার বর্ণনায় ’’ওয়াতাক্বব্বালহা- মিন্নী কামা- তাক্বব্বালতাহা- মিন ’আবদিকা, দাঊদ’’ উল্লেখ হয়নি। আর তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব পর্যায়ের।)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُنِي اللَّيْلَةَ وَأَنَا نَائِمٌ كَأَنِّي أُصَلِّي خَلْفَ شَجَرَةٍ فَسَجَدْتُ فَسَجَدَتِ الشَّجَرَةُ لِسُجُودِي فَسَمِعْتُهَا تَقُولُ: اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَقَرَأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَجْدَةً ثُمَّ سَجَدَ فَسَمِعْتُهُ وَهُوَ يَقُولُ مِثْلَ مَا أَخْبَرَهُ الرَّجُلُ عَنْ قَوْلِ الشَّجَرَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ. وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যা: (اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ) আমার জন্য তার বিনিময়ে অর্থাৎ সাজদার বিনিময়ে আপনার নিকট প্রতিদান সাব্যস্ত করুন। (ذُخْرًا) সঞ্চিত সম্পদ এটাও বলা হয়ে থাকে যে, (ذُخْرًا) অর্থ প্রতিদান। আর এখানে তার পুনরুল্লেখ এজন্য করা হয়েছে যে, দু‘আ দীর্ঘ হওয়াই বাঞ্চনীয়। এটাও বলা হয় যে, এ দ্বারা উদ্দেশ্য অর্জিত সাওয়াব বিনষ্ট ও বাতিল হওয়া থেকে নিরাপদ থাকার প্রার্থনা। ‘আমার নিকট থেকে তা তেমনভাবে গ্রহণ করুন যেভাবে গ্রহণ করেছেন আপনার বান্দা দাঊদ (আঃ) থেকে’ এর দ্বারা সকল ক্ষেত্রেই দাঊদ (আঃ)-এর মতো বুঝানো উদ্দেশ্য নয় বরং দু‘আ কবূল হওয়া উদ্দেশ্য। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, উল্লেখিত নাবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা প্রয়োজন।