পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
তিলাওয়াতে সিজদার হুকুম সম্পর্কে ’আলিমগণের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে।
শাফি’ঈ এবং হানাবেলাদের নিকট তিলাওয়াতের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। মালিকীদের নিকট সাধারণ সুন্নাত আর হানাফীদের মতে তা ওয়াজিব। যারা ওয়াজিব বলেন তাদের দলীলঃ
১. হাদীসঃ ’আদম সন্তানকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে আদেশ করা হয়েছিল তারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে জান্নাতের অধিকারী হয়েছে। আর আমাকেও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে আদেশ করা হয়েছিল আমি তা অস্বীকার করে জাহান্নামী হয়েছি’। অত্র হাদীসে আদম সন্তানের প্রতি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার নির্দেশ রয়েছে। আর নির্দেশ হলো ওয়াজিব হওয়ার দলীল। আর আয়াত দ্বারাও অনুরূপ বুঝা যায়। কেননা আয়াত তিন প্রকারেরঃ
১ম প্রকার- যাতে সিজদা্ করার স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যেমন আল্লাহর বাণী ’’আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর এবং ’ইবাদাত কর’’- (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩: ৬২)। ’’সিজদা্ কর এবং নৈকট্য অর্জন কর’’- (সূরাহ্ আল ’আলাক্ব ৯৬: ১৯)।
২য় প্রকার- যাতে সাজদার নির্দেশ সত্ত্বেও তা থেকে কাফিরদের বিরত থাকার বর্ণনা। যেমন আল্লাহর বাণী ’’তাদের কি হলো যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং তাদের নিকট কুরআন তিলাওয়াত করা হলে তারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে না’’- (সূরাহ্ আল ইনশিক্বাক্ব ৮৪: ২০-২১)।
’’আর যখন তাদের বলা হয় তোমরা রহমানের উদ্দেশে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) কর তারা বললো রহমান কে? তুমি যাকে সিজদা্ করতে আদেশ করবে তাকেই কি আমরা সিজদা্ করব? তাদের অমান্য আরো বেড়ে গেল’’- (সূরাহ্ আল ফুরক্বান ২৫: ৬০)।
৩য় প্রকার- নবীদের সিজদা্ করার ঘটনা বর্ণনা এবং আল্লাহর কালাম শুনে যারা সাজদাতে লুটিয়ে পড়ে তাদের প্রশংসা। আল্লাহর নির্দেশ পালন করা, কাফিরদের বিরোধিতা করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের অনুসরণ করা এসবই ওয়াজিব।
উপরোক্ত দলীলের জওয়াবে বলা হয় যে, উল্লেখিত দুই আয়াতের নির্দেশ এবং ইবলীসের উক্তির দ্বারা ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ বিষয় বরং ঐ নির্দেশ দ্বারা মানদূব (সুন্নাত) সাব্যস্ত হয়। এর দলীল যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সূরাহ্ আন্ নাজম পাঠ করলাম তাতে তিনি সিজদা্ করলেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ না করা সিজদা্ পরিত্যাগ করা বৈধতার প্রমাণ। ইমাম শাফি’ঈ এমনটিই বলেছেন, কেননা যদি তা ওয়াজিব হতো তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তীতে হলেও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার নির্দেশ দিতেন।
১০২৩-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আন্ নাজম-এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছেন। তার সাথে মুসলিম, মুশরিক, জিন্ ও মানুষ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছে। (বুখারী)[1]
بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: سَجَدَ النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم بِالنَّجْمِ وَسَجَدَ مَعَهُ الْمُسْلِمُونَ وَالْمُشْرِكُونَ وَالْجِنُّ وَالْإِنْسُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আন্ নাজম পাঠান্তে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছেন’ ত্ববারানীতে ‘মক্কা’ শব্দের উল্লেখ রয়েছে। এতে বুঝা যায় অত্র অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে ইবনু মাস্‘ঊদ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীস একই ঘটনার বর্ণনা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছিলেন তাঁর প্রতি সিজদা্ করার আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে এবং তাঁর প্রতি মহান আল্লাহর মহা নি‘আমাতের শুকরিয়া তথা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিমিত্তে। এ হাদীসটি মুফাস্সাল সূরাগুলোতে সিজদা্ করার বিষয় বিধিবদ্ধ হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
‘মুসলিমগণও তাঁর সাথে সিজদা্ করলেন’ মুসলিমগণের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ছিল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণের নিমিত্তে (وَالْمُشْرِكُونَ) ‘মুশরিকগণও সিজদা্ করে’ অর্থাৎ যে সকল মুশরিক তার নিকট উপস্থিত ছিল তারাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। মুশরিকগণের সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার কারণ ছিল উক্ত সূরাতে তাদের দেব-দেবীর নাম যথা লাত, উজ্জা ও মানাতের উচ্চারণ। অর্থাৎ এগুলোর নাম শুনার কারণে তারা সিজদা্ করেছিল।
হাদীসের এ অংশ থেকে প্রমাণিত হয়, কোন ব্যক্তি সাজদার আয়াত পাঠ করলে তার শ্রবণকারীর জন্যও সিজদা্ করার বিধান বিধিবদ্ধ।
(وَالْجِنُّ) জিনেরাও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ কথাটি হয়তো বা সরাসরি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে পরবর্তীতে শুনেছেন অথবা অন্য কোন সাহাবী থেকে শুনেছেন। কেননা তার বয়স অল্প থাকাতে তিনি ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০২৪-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সূরাহ্ ইনশিকাক ও সূরাহ্ আল ’আলাক্ব-এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَجَدْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي: (إِذا السَّمَاء انشقت)
و (اقْرَأ باسم رَبك)
رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: সূরাহ্ আল ইনশিক্বাক্ব এবং সূরাহ্ ‘আলাক্ব মুফাসসাল সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হয় যে, সূরাহ্ মুফাসসালে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা বিবিবদ্ধ। খুলাফায়ে রাশিদাহ্, তিন ইমাম এবং একদলে ‘আলিমদের মতে সূরাহ্ মুফাসসালে তিলাওয়াতের সিজদা্ সিদ্ধ। জমহূর ‘আলিমদের মতে মুফাসসাল সূরাসমূহে তিলাওয়াতের সিজদা্ সিদ্ধ নয়। কেননা আবূ সালাআহ্ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি এমন এক সূরাতে সিজদা্ করলেন যাতে আমি লোকদের সিজদা্ করতে দেখিনি। এতে বুঝা যায় যে, লোকজন মুরসাল সূরাসমূহে সিজদা্ করা পরিত্যাগ করেছেন এবং এর উপর ‘আমল অব্যাহত আছে।
ইবনু ‘আবদুল বার এর জবাবে বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খুলাফায়ে রাশিদার বিরুদ্ধাচরণকে কোন ‘আমল বলা যায় কি? ইমাম বুখারী এবং অন্যরা আবূ রাফি' থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর পিছনে ইশার সালাত আদায় করলাম। তিনি তাতে সূরাহ্ ইনশিক্বাক্ব পাঠ করলেন এবং তিলাওয়াতের সিজদা্ করলেন। আমি বললাম, এটা কি? তিনি বললেন, আমি আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পিছনে এ সূরাতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছি। অতএব তাঁর সাথে সাক্ষাতের আগ পর্যন্ত (মৃত্যু পর্যন্ত) সিজদা্ করতেই থাকব।
পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০২৫-[৩] ইবনু ’উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করতেন, আর আমরা তাঁর নিকটে থাকতাম, তখন তিনি সাজদায় গেলে আমরাও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতাম। এ সময় এত ভিড় হত যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল মাটিতে রাখার জায়গা পেতো না যার উপর সে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ (السَّجْدَةَ)
وَنَحْنُ عِنْدَهُ فَيَسْجُدُ وَنَسْجُدُ مَعَهُ فَنَزْدَحِمُ حَتَّى مَا يَجِدُ أَحَدُنَا لِجَبْهَتِهِ مَوْضِعًا يَسْجُدُ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যা: يَقْرَأُ - السَّجْدَةَ ‘‘সাজদার আয়াত পাঠ করতেন’’ অর্থাৎ পূর্বের আয়াতের সাথে অথবা পরবর্তী আয়াতের সাথে সাজদার আয়াত পাঠ করতেন অথবা বৈধতা প্রমাণের জন্য পৃথকভাবে শুধু সাজদার আয়াত পাঠ করতেন। এটাও বলা হয় যে, তিনি এমন সূরাহ্ পাঠ করতেন যাতে সাজদার আয়াত বিদ্যমান। বুখারীর বর্ণনাতে এ অর্থের সমর্থন পাওয়া যায় যাতে উল্লেখ আছে তিনি আমাদের নিকট এমন সূরাহ্ পাঠ করতেন যাতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) রয়েছে।
‘ভিড়ের কারণে আমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি সিজদা্ করার জন্য কপাল রাখার জায়গা পেত না’ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার জায়গা পাওয়া না গেলে কি করবে? এ বিষয়ে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
‘উমার (রাঃ) বলেনঃ যে জায়গা না পাবে সে তার ভাই এর পিঠের উপর সিজদা্ করবে। ইমাম বায়হাক্বী এটি সহীহ সানাদে বর্ণনা করেছেন। ‘আত্বা এবং যুহরী বলেন, সে বিলম্ব করবে, অন্যরা সিজদা্ শেষে মাথা উঠানোর পর সে সিজদা্ করবে। এটা ইমাম মালিক এবং জমহূর ‘আলিমদের অভিমত।
হাদীসের শিক্ষাঃ সিজদা্ এর আয়াত শ্রবণকারীও সিজদা্ করবে যদি তিলাওয়াতকারী সিজদা্ করে। এতে এ ইঙ্গিতও পাওয়া যায় তিলাওয়াতকারী সিজদা্ না করলে শ্রবণকারী সিজদা্ করবে না। হানাবেলা এবং মালিকী ‘আলিমগণের এ অভিমত। পক্ষান্তরে ইমাম শাফি‘ঈর মতে তিলাওয়াতকারী সিজদা্ না করলেও শ্রোতা সিজদা্ করবে। হানাফীদের অভিমত ও তাই। তবে আমার (মুবারকপূরী) মতে হাম্বালী ও মালিকীদের অভিমত প্রকাশমান।
পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০২৬-[৪] যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে সূরাহ্ নাজম পাঠ করেছি। তিনি এতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেননি। (বুখারী, মুসলিম)[1]
بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ
وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ: قَرَأْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ (والنجم)
فَلم يسْجد فِيهَا
ব্যাখ্যা: (فَلم يسْجد فِيهَا) ‘তিনি তাতে সিজদা্ করলেন না’। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেননি এটা বুঝানোর জন্য যে, সিজদা্ এর আয়াত পাঠ করে সিজদা্ না করাও বৈধ। যদি সিজদা্ করা ওয়াজিব হতো তাহলে তিনি সিজদা্ করার নির্দেশ দিতেন।
যারা মনে করেন মুফাসসাল সূরাসমূহে সিজদা্ করা বিধিবদ্ধ নয় এ হাদীস তাদের দলীল। যেমন ইমাম মালিক। আর যারা মনে করেন সূরাহ্ ‘আন্ নাজম’-এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) নেই এটি তাদেরও দলীল যেমন আবূ সাওর।
এর জওয়াব এই যে, এ অবস্থায় সিজদা্ না করা এটা বুঝায় না যে, তিনি তা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন। বরং এখানে বিভিন্ন সম্ভাবনা রয়েছে।
১. হয়তঃ তার উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ছিল না।
২. হয়ত সময়টি মাকরূহের সময় ছিল আর যায়দ ইবনু সাবিত মনে করেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনা কারণেই সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেননি।
৩. যায়দ (রাঃ)-এর কথার অর্থ এটাও হতে পারে যে, তখন তিনি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেননি বরং পরবর্তীতে করেছেন।
৪. এটাও হতে পারে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধতা বুঝানোর জন্য সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেননি। হাফিয ইবনু হাজার সর্বশেষ বিষয়টিকে অধিক সম্ভাবনা বলে মনে করেন। আর ইমাম শাফি‘ঈ দৃঢ়ভাবেই এটি বিশ্বাস করেন। কেননা যদি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিবই হতো তাহলে তিনি অবশ্যই নির্দেশ দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০২৭-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সূরাহ্ সাদ-এর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বাধ্যতামূলক নয়। অবশ্য আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ সূরায় সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে দেখেছি।[1]
بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ
وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: (سَجْدَةُ (ص)
لَيْسَ مِنْ عَزَائِمِ السُّجُودِ وَقَدْ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يسْجد فِيهَا
পরিচ্ছেদঃ ২১. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিলাওয়াতের সিজদা্
১০২৮-[৬] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, সূরাহ্ সাদ-এ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবো কি-না? উত্তরে তিনি (ইবনু ’আব্বাস) ’’তাঁর বংশধরের মধ্যে থেকে দাঊদ ও সুলায়মান’’ পাঠ করতে করতে এই বাক্য পৌঁছলেন- ’’সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর’’- (সূরাহ্ আল আন্’আম ৮৪-৯০)। অতঃপর বললেন, তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ লোকদের মধ্যে গণ্য যাদের প্রতি আগের নবীর আনুগত্য করার নির্দেশ ছিল। (বুখারী)[1]
بَابُ سُجُوْدِ الْقُرْانِ
وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ مُجَاهِدٌ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: أَأَسْجُدُ فِي (ص)
فَقَرَأَ: (وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُدَ وَسليمَان)
حَتَّى أَتَى (فبهداهم اقتده)
فَقَالَ: نَبِيُّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمَّنْ أَمر أَن يَقْتَدِي بهم. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ مِنْ عَزَائِمِ السُّجُوْدِ) ‘আবশ্যকীয় সিজদা্ নয়’ অর্থাৎ যে সকল সূরাতে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার নির্দেশ অথবা উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে এটি তার অন্তর্ভুক্ত নয়। দাঊদ (আঃ) সিজদা্ করেছিলেন এখানে তার বর্ণনা এসেছে আর আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বাণী فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ‘‘আপনি তাদের অনুসরণ করুন’’- এ নির্দেশ পালনার্থে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করেছেন। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় কোন কোন সুন্নাত আমল কোন কোন সুন্নাতের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ‘আল্লামা ‘আয়নী বলেনঃ হানাফী ও শাফি‘ঈদের মধ্যে এতে কোন বিরোধ নেই যে, সূরাহ্ ‘সাদ’-এ সিজদা্ আছে। মতভেদ শুধু এ বিষয়ে যে, এটি গুরুত্বপূর্ণ কিনা? ইমাম শাফি‘ঈর মতে এতে সাজদাটি গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং এটি সিজদা্ শুকর সালাতের বাইরে এ সিজদা্ করা মুস্তাহাব।
আমি (মুবারকপূরী) বলিঃ যদিও দাঊদ (আঃ) তাওবার নিমিত্তে সিজদা্ করেছিলেন আর আমরা শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে এ সিজদা্ করবো এ সত্ত্বেও এটি তিলাওয়াতের সিজদা্। আর তিলাওয়াতের সিজদা্ করার কারণ হলো সিজদা্ এর আয়াত তিলাওয়াত করা। অতএব আমার মতে হাক্ক বা সঠিক হলো সূরাহ্ ‘সাদ’ এর সাজদার আয়াত তিলাওয়াতান্তে সালাতের মধ্যেই হোক বা সালাতের বাইরেই হোক নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে সিজদা্ করা বিধিসম্মত।