পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
১০২১-[৮] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আসরের সালাত আদায় করালেন। তিনি তিন রাক্’আত পড়ে সালাম ফিরালেন তারপর ঘরে প্রবেশ করলেন। খিরবাক্ব নামক এক লম্বা হাতওয়ালা লোক দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! অতঃপর তাঁর নিকট ঘটনাটি আলোচনা করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাগান্বিত অবস্থায় নিজ চাদর টানতে টানতে মানুষের কাছে পৌঁছলেন অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, সে যা বলছে তা-কি সত্য? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আর এক রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন তারপর সালাম ফিরালেন, তারপর দু’টি সাহু সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিলেন তারপর সালাম ফিরালেন। (মুসলিম)[1]
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الْعَصْرَ وَسَلَّمَ فِي ثَلَاثِ رَكَعَاتٍ ثُمَّ دَخَلَ مَنْزِلَهُ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ الْخِرْبَاقُ وَكَانَ فِي يَدَيْهِ طُولٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَذَكَرَ لَهُ صَنِيعه فَخرج غَضْبَانَ يَجُرُّ رِدَاءَهُ حَتَّى انْتَهَى إِلَى النَّاسِ فَقَالَ: «أَصَدَقَ هَذَا؟» . قَالُوا: نَعَمْ. فَصَلَّى رَكْعَةً ثُمَّ سَلَّمَ ثُمَّ سَجَدَ سَجْدَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘‘তৃতীয় রাক্‘আতে সালাম ফিরালেন’’ মুসনাদে আহমাদে রয়েছে ‘‘তিন রাক্‘আত আদায় করে সালাম ফিরালেন’’। তবে অধিকাংশ বর্ণনায় রয়েছে তিন রাক্‘আতে সালাম ফিরালেন। ‘‘অতঃপর তিনি স্বীয় আবাসে প্রবেশ করলেন’’। এ অংশ থেকে জানা যায় ভুলবশতঃ ক্বিবলার দিক ছেড়ে দিলে এবং বেশী পরিমাণ হাঁটলেও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট হয় না। যুল্ ইয়াদায়নের ঘটনার পূর্বে বর্ণিত আবূ হুরায়রার হাদীস এবং ঘটনার ‘ইমরান বর্ণিত হাদীস অনেকের মতে একই ঘটনার বর্ণনা। ইমাম ইবনু খুযায়মাহ্ এবং ইমাম নাবাবী ও তার অনুসারীদের মতে হাদীস দু’টি ভিন্ন ঘটনার বর্ণনা। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ এ মত ভিন্নতার কারণ দুই হাদীসের বর্ণনার ভিন্নতা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাক্‘আত আদায় করার পর সালাম ফিরালেন এবং সালাত শেষে তিনি মসজিদের পাশে রাখা কাঠের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। পক্ষান্তরে ‘ইমরানের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাক্‘আত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন এবং সালাত শেষে তিনি স্বীয় আবাসে প্রবেশ করলেন। এতে বুঝা যায় দু’টি ভিন্ন ঘটনা। যারা দু’টি হাদীসকে একই ঘটনার বিবরণ বলে মনে করেন তারা হাদীস দু’টির সমন্বয় করেছেন এভাবে।
১. রাক্‘আত সংক্রান্ত বর্ণনার সমন্বয় এই যে, তৃতীয় রাক্‘আত বলতে তৃতীয় রাক্‘আতের শুরু করার সময়ে রাক্‘আত শুরু না করে সালাম ফিরিয়েছেন। এ সমন্বয়কে অনেকেই অসম্ভব বলে মনে করলেও তা এর চেয়ে বেশী অসম্ভব নয় যে, উভয় ঘটনায় একই ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করবেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে ঐ একই ব্যক্তির কথার সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন।
২. কাঠের নিকট যাওয়া ও স্বীয় আবাসে প্রবেশ সংক্রান্ত ঘটনার সমন্বয় এই যে, বর্ণনাকারী ‘ইমরান যখন দেখলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষে কাঠের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তখন তিনি মনে করেছেন যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় আবাসে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আর কাঠটি তাঁর আবাসের দিকেই ছিল। ঘটনা হয়ত এটিই হবে অন্যথায় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি অগ্রাধিকার পাবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের বিবরণের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকার কারণে।
পরিচ্ছেদঃ ২০. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাহু সিজদা্
১০২২-[৯] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সালাত আদায় করতে যে ব্যক্তি কম (রাক্’আত) পড়ার সন্দেহ করে, সে যেন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে যতক্ষণ পর্যন্ত বেশী আদায়ের সন্দেহ না করে। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «مَنْ صَلَّى صَلَاةً يَشُكُّ فِي النُّقْصَانِ فَلْيُصَلِّ حَتَّى يشك فِي الزِّيَادَة» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: ‘যে ব্যক্তির সালাতে সন্দেহ হয় যে, সে সালাতে কম করেছে তাহলে সে এ পরিমাণ সালাত করবে যাতে সালাতে বৃদ্ধির সন্দেহ সৃষ্টি হয়’ অর্থাৎ যে চার রাক্‘আত বিশিষ্ট সালাতে সন্দেহে পতিত হয় সে তিন রাক্‘আত আদায় করেছেন নাকি চার রাক্‘আত আদায় করেছেন তা হলে কম রাক্‘আতের ভিত্তি করে সালাত সম্পন্ন করবে। অতএব উল্লেখিত অবস্থাতে তার সালাতকে তিন রাক্‘আত ধরে নিয়ে আরেক রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে যাতে তার সন্দেহ হয় যে, সে কি চার রাক্‘আত আদায় করল নাকি পাঁচ রাক্‘আত আদায় করল। কেননা হতে পারে যে, সে প্রকৃতপক্ষে চার রাক্‘আতই আদায় করেছিল এবং যে রাক্‘আতটি সে পরে আদায় করল তা পঞ্চম রাক্‘আত। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি তার সালাতকে তিন রাক্‘আত ধরে নিয়ে আরো এক রাক্‘আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে নিল সে এখন সন্দেহ করবে যে, এটি কি চতুর্থ রাক্‘আত নাকি পঞ্চম রাক্‘আত। বৃদ্ধির সন্দেহ সৃষ্টি থেকে উদ্দেশ্য এটাই।