পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
তাশাহুদের মধ্যে দু’আ করা- এর অর্থ হচ্ছে সালাতের শেষে দরূদ পাঠ করার পর দু’আ করা। আর তা হবে, সালাম ফিরানোর পূর্বে। এ সময় দু’আ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
৯৩৯-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে (সালাম ফিরাবার আগে) দু’আ করতেন। বলতেন,
’’আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন ’আযা-বিল কবরি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি। ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়া ফিতনাতিল মামা-তি। আল্লা-হুমা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল মা’সামি ওয়াল মাগরামি’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি কবরের ’আযাব থেকে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। আমি তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি গুনাহ ও দেনার বোঝা হতে।)।
এক ব্যক্তি বলল, হে নবী! আপনি দেনার বোঝা হতে বড় বেশী পানাহ চেয়ে থাকেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কেউ যখন দেনাদার হয় তখন কথা বলে, মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو فِي الصَّلَاةِ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أعوذ بك من المأثم والمغرم» فَقَالَ لَهُ قَائِل مَا أَكثر مَا تستعيذ من المغرم يَا رَسُول الله فَقَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَرِمَ حَدَّثَ فَكَذَبَ وَوَعَدَ فَأَخْلَفَ»
ব্যাখ্যা: (كَانَ يَدْعُو فِي الصَّلَاةِ) সালাতের মধ্যে দু‘আ করতেন। অর্থাৎ- তিনি তাশাহুদের পরে সালামের ফিরানোর পূর্বে দু‘আ করতেন যার প্রমাণ বহন করছে এর পরের হাদীস। আর এ হাদীসের মধ্যে শেষ তাশাহুদের পরে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার স্থান সুনির্দিষ্ট ও নির্ধারিত এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস মুত্বলাক বা অনির্দিষ্ট, সুতরাং মুত্বলাক বা অনির্দিষ্টের উপর মুক্বাইয়াদ বা নির্দিষ্ট হাদীস প্রাধান্যময় হবে।
(اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ) হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের ‘আযাব হতে, উক্ত হাদীসে ক্ববরের শাস্তির প্রমাণ পাওয়া যায় এবং বাতিলপন্থী সম্প্রদায় ‘‘মু‘তাযিলা’’ যারা কবরের ‘আযাবকে অস্বীকার করে তাদেরকে এ হাদীস দ্বারা প্রতিহত করা হয়েছে আর এ সংক্রান্ত হাদীস মুতাওয়াতির যা ইতিপূর্বে আলোচনা হয়ে গেছে।
(وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْح) আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি তোমার নিকট মাসীহ হতে।
ফিতনাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য পরীক্ষা।
ফিতনাহ্ (ফিতনা) দ্বারা হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও ও গীবত হয় এবং অন্যান্য অর্থ বুঝানো হয়।
মাসীহ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
কারো মতে- মাসীহ দ্বারা উদ্দেশ্য দাজ্জাল। আবার কারো মতে ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) ।
কিন্তু দাজ্জাল উদ্দেশ্য নিলে নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। আর দাজ্জালকে ‘‘মাসীহ’’ উপাধি দেয়ার ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে।
১. কারণ তার এক চোখ কানা হবে।
২. মুখমন্ডলের এক পাশে কোন ভ্রূ থাকবে না ও চোখও থাকবে না।
৩. পৃথিবীতে ভ্রমণকে সে সহজ করে নিবে তথা নিমিষেই বা নির্ধারিত দিনে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে বিচরণ করবে তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ আল্লাহ তা‘আলা মক্কা মদীনাহ্ বিশেষভাবে প্রোটোকল বা সংরক্ষণ করে রাখবেন বলে।
৪. কেননা তাকে ‘ঈসা (আঃ) মাসীহ বায়তুল আক্বসার কোন দূর্গে হত্যা করবেন।
আর ‘ঈসা (আঃ) -কে ‘‘মাসীহ’’ উপাধি দেয়ার ক্ষেত্রেও মতানৈক্য রয়েছে-
১. কেননা তিনি তাঁর মায়ের পেট হতে তৈল মালিশ করার মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন।
২. কেননা যাকারিয়্যা (রাঃ) তাকে স্পর্শ বা লালন-পালন করেছেন।
৩. কেননা তিনি কোন ব্যাধিগ্রস্ত লোককে স্পর্শ করলেই সুস্থ হয়ে যেত।
৪. তিনি পৃথিবীকে দ্রুত স্পর্শকারী তথা দ্রুত ভ্রমণকারী এবং অনেক স্থান ভ্রমণ করবেন।
৫. কারো মতে তার পায়ে মাটি স্পর্শ করতো না প্রভৃতি। আর মাজদ সিরাজী অভিধান লেখক ‘ঈসা (আঃ) কে মাসীহ উপাধি দেয়ার ক্ষেত্রে (৫০) পঞ্চাশটি কারণ লিখেছেন ‘‘মাশারেক আন্ওয়ার’’ নামক কিতাবের ব্যাখ্যায়।
দাজ্জাল তথা ধোঁকাবাজ মিথ্যুক, প্রতিশ্রত, মিথ্যুক, যে শেষ যামানায় প্রকাশ পাবে, আরেক অর্থ দাঁড়ায় প্রত্যেক বিপর্যয়কারী পথভ্রষ্ট।
আর মাসীহে দাজ্জালের ফিতনাহ্ (ফিতনা) দ্বারা উদ্দেশ্য সে দাজ্জালের হাতে স্বাভাবিকের বাহিরে অলৌকিক বিষয়াদি বা ক্ষমতা প্রকাশ পাবে যা দুর্বল প্রকৃতির ঈমানদারকে ফিতনায় ফেলে দিবে বা পথভ্রষ্ট করবে।
(وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ) আর আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়া ও আখিরাতের পরীক্ষা হতে।
ইমাম কুরতুবী বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মৃত্যুর উপস্থিতি ও কবরে জিজ্ঞাসাবাদের ফিতনাহ্ (ফিতনা) হতে সে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। এ দু’ এর ভয়ানক অবস্থা হতে সে পরিত্রাণ চায় এবং এখানে যাতে সুদৃঢ় অবস্থায় থাকে তার প্রার্থনা করছে।
ইবনু দাক্বীক্ব বলেন, ফিত্বনাহ্ মাহ্ইয়া দুনিয়ার পরীক্ষা যা মানুষের জীবনে আসে বিপদ-আপদ, প্রবৃত্তি, অজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে এবং মৃত্যুর সময় শেষ অবস্থা (তথা ঈমানী অবস্থায় মৃত্যুবরণ না করা)।
ফিতনাতুল মামা-ত তথা মৃত্যুর পরীক্ষা দ্বারা উদ্দেশ্য মৃত্যুর সময়। কবরের পরীক্ষা যেমন আসমার হাদীসে এসেছে বুখারীতে ‘‘নিশ্চয় তোমরা অনুরূপ ক্ববরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।’’
ইমাম ত্বীবী বলেন, দুনিয়ার পরীক্ষা দ্বারা উদ্দেশ্য ধৈর্য ও সন্তুষ্টি দূরীভূত হওয়া এবং বিপদাপদে পতিত হওয়া, পাপ কাজে অতিরঞ্জিতভাবে জড়িয়ে থাকা, সঠিক পথকে ছেড়ে দেয়া। আর মৃত্যুর পরীক্ষা দ্বারা উদ্দেশ্য মুনকার নাকীরের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া ভীত-সন্ত্রস্ত ও হতবদ্ধির সাথে, আর কবরের ‘আযাব এবং সেখানকার কঠিন ও ভীতিকর অবস্থা।
উল্লিখিত হাদীসে একটি প্রশ্ন জাগে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ তো তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন, তারপরেও কেন তিনি পাপ হতে দূরে থাকার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন?
উত্তরে বলা হয়েছে-
* সত্যিকার অর্থে উম্মাতকে শিক্ষা দানের জন্য তিনি এমনটি করেছেন।
* তাঁর দু‘আটি ছিল উম্মাতের জন্য, অর্থাৎ- তখন এর অর্থ হবে ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার উম্মাতের জন্য।’’
* স্বয়ং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন বিনয় প্রকাশের জন্যে নিজকে আল্লাহর বান্দা বলে পরিচয়ের জন্যে এবং আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর বড়ত্ব প্রকাশের জন্যে তার নিকট নিজকে তুচ্ছ প্রকাশের জন্যে অতি উৎসাহিত হয়ে তার আদেশকে বাস্তবায়নের জন্যে।
আর দু‘আ কবূল হওয়া সত্ত্বেও বারবার আবেদন করাটা নিষেধ না, কেননা এর মাধ্যমে কল্যাণ অর্জিত হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আর হাদীসটিতে উম্মাতকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর উপর অবিচল থাকার জন্য তথা দু‘আ যেন নিয়মিত পড়ে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪০-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সালাতের শেষে শেষ তাশাহুদ পড়ে অবসর হয়ে যেন আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে পানাহ চায়। (১) জাহান্নামের ’আযাব। (২) কবরের ’আযাব। (৩) জীবন ও মৃত্যুর ফিতনাহ্ (ফিতনা)। (৪) মাসীহুদ্ দাজ্জালের অনিষ্ট। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُّدِ الْآخِرِ فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْ أَرْبَعٍ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُّدِ الْاخِرِ) যখন তোমাদের কেউ সালাতের শেষ (বৈঠকের) তাশাহুদ পাঠ হতে অবসর হবে।
এ হাদীস দ্বারা বুঝানো হয়েছে, আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা শেষ তাশাহহুদ পাঠ করার পরে। আল্লাহর কাছে চারটি জিনিস হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা মনে সে যা চায় সে দু‘আর পূর্বে।
(فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ) আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা ওয়াজিব, এ সমস্ত দু‘আর মাধ্যমে যেমনটি ইবনু হায়স ও তাউস-এর মতে, তবে জমহূররা নুদূব তথা ভালো, এর উপর মত দিয়েছেন।
(مِنْ أَرْبَعٍ) এ চারটি জিনিসের অতিরিক্তও দিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করা বৈধ যেমনটি ইতিপূর্বে ‘আয়িশার হাদীস গেছে ‘‘পাপ কাজ’’ ও ‘‘ঋণ’’ হতে।
(مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ) জাহান্নামকে পূর্বে আনা হয়েছে কারণ তা কঠিন ও চিরস্থায়ী।
(وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ) ‘‘মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট হতে’’ শেষে আনা হয়েছে এজন্যে যে, এটা শেষ যামানায় ক্বিয়ামাতের (কিয়ামতের) নিকটবর্তী সময় সংঘটিত হবে। তার জন্য কল্যাণ-অকল্যাণ উভয়টি রয়েছে। কল্যাণ হলো মু’মিন ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধি পাবে কারণ সে পড়বে তার চোখের মাঝখানে কাফির লেখা আছে এবং তা পড়ে তার বিশ্বাস আরো বেশি দৃঢ় হবে। আর অকল্যাণ হলো কাফির পড়বে না এবং তাকে জানবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪১-[৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এ দু’আ শিক্ষা দিতেন যেমন তাদেরকে কুরআনের সূরাহ্ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো,
’’আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিন ’আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ’আযা-বিল কবরি, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া- ওয়াল মামা-তি’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি হতে। তোমার নিকট আশ্রয় চাই দাজ্জালের পরীক্ষা হতে। তোমার কাছে আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা হতে।)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعَلِّمُهُمْ هَذَا الدُّعَاءَ كَمَا يُعَلِّمُهُمُ السُّورَةَ مِنَ الْقُرْآنِ يَقُولُ: «قُولُوا اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (كَانَ يُعَلِّمُهُمْ) তিনি তার সাহাবীগণকে ও তার পরিবারকে শিক্ষা দিতেন।
اَللّهُمَّ اِنِّـىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ.
‘‘আমি তোমার কাছে জাহান্নামের শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’’- কথাটি ইঙ্গিত বহন করে যে, জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তির কোন উপায় নেই তার সৃষ্টিকারীর নিকট আশ্রয় চাওয়া ব্যতিরেকে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪২-[৪] আবূ বকর আস্ সিদ্দীক্ব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিবেদন জানালাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি দু’আ বলে দিন যা আমি সালাতে (তাশাহুদের পর) পড়ব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দুআ পড়বে,
’’আল্লা-হুমা ইন্নী যলামতু নাফসী যুলমান কাসীরা। ওয়ালা- ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা- আনতা। ফাগফিরলী মাগফিরাতাম্ মিন ’ইনদিকা ওয়ারহামনী। ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম।’’
(অর্থাৎ- হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আমার নাফসের উপর অনেক যুলম করেছি। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই। অতএব আমাকে তোমার পক্ষ থেকে মাফ করে দাও। আমার ওপর রহম কর। তুমিই ক্ষমাকারী ও রহমতকারী।)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ عَلِّمْنِي دُعَاءً أَدْعُو بِهِ فِي صَلَاتِي قَالَ: «قُلْ اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عنْدك وارحمني إِنَّك أَنْت الغفور الرَّحِيم»
ব্যাখ্যা: (أَدْعُوْ بِه فِي صَلَاتِيْ ) শেষ তাশাহুদ অবসরে এবং আপনার ওপর দরূদ পাঠ শেষে আমি দু‘আ করি। ইমাম বুখারী (রহঃ) এ মতে অধ্যায় বেঁধেছেন بَابُ الدُّعَاءِ قَبْلَ السَّلَامِ ‘‘সালামের পূর্বে দু‘আ’’। অতঃপর তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করেন।
(ظَلَمْتُ نَفْسِيْ) ‘‘আমি যুলম করেছি আমার নাফসের উপর’’ ‘আযাব অপরিহার্য হয়েছে পাপ কাজে জড়িত হওয়ার কারণে অথবা প্রতিদান কম হবে।
হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ হাদীসের ভাষ্যে প্রমাণ হয় মানুষ ত্রুটি হতে মুক্ত না যদিও সে সত্যবাদী হয়।
আর সিনদী বলেনঃ মানুষের মধ্যে অনেক ত্রুটি রয়েছে যদিও সে অধিক সত্যবাদী কেননা আল্লাহর অফুরন্ত নি‘আমাত তার ওপর রয়েছে।
তার ক্ষমতা সামান্যতম নি‘আমাতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে সক্ষম হয় না বরং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সামষ্টিক আকারে হয় তারপরেও তা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দরকার। সুতরাং তার জন্য অপরাগতা ও অনেক ত্রুটির স্বীকৃতি অবশিষ্ট থেকে যায়। আর কেনই বা হবে না রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু‘আর ভান্ডারে নিজেই দু‘আ করেছেন।
(وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا أَنْتَ) ‘‘কেবলমাত্র তুমিই গুনাহ ক্ষমা করো’’ এ বাক্যে আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদের স্বীকৃতি আর এ স্বীকৃতির মাধ্যমে তার ক্ষমা কামনা করা। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ
‘‘তারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের ওপর যুলম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন?’’ (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩৫)
আল্লাহ এখানে ক্ষমা প্রার্থনাকারীর প্রশংসা করেছেন।
(إِنَّك أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ) ‘‘নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’’ দু’টিই আল্লাহর গুণ বাক্য শেষ করা হয়েছে ইতিপূর্বে বাক্যের বিপরীত غَفُوْرُ তথা ক্ষমার বিপরীতে اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করুন الرَّحِيْمُ দয়ার বিপরীতে ارْحَمْنِيْ আমার প্রতি রহম করুন।
আর এ হাদীসে অনেক শিক্ষা রয়েছে বিপদের সময় আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর নামের ওয়াসীলায় দু‘আ করা এবং অকল্যাণকে প্রতিহত করা।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪৩-[৫] ’আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান দিকে ও বাম দিকে এভাবে সালাম ফিরাতেন যে, আমি তাঁর গালের শুভ্রতা দেখতে পেয়েছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كُنْتُ أَرَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ يَسَارِهِ حَتَّى أرى بَيَاض خَدّه. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটি এখানে দলীল প্রমাণ করে ডান ও বাম দিকে তাকানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্তভাবে করা। আর জ্ঞাতব্য যে, সালাত হতে হালাল হওয়ার জন্য সালাম ফরয। এর পরিবর্তে অন্য কিছু গ্রহণযোগ্য হবে না।
কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ভুলকারী সাহাবীকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম শিক্ষা দেননি যদি ওয়াজিব হতো তাহলে অবশ্যই শিক্ষা দিতেন, কেননা মূলনীতি হলো প্রয়োজনের সময় ব্যাখ্যা না করা বৈধ নয়।
জবাব হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত ভুলকারী সাহাবীকে সব ওয়াজিব শিক্ষা দেননি যেমন তিনি তাশাহুদে বসা এবং আরো অন্যান্য সালাতের বিষয় শিক্ষা দেননি, বরং তিনি যা ভুল দেখেছেন তা শিক্ষা দিয়েছেন।
হক কথা হলো শারী‘আতসম্মত প্রত্যেক সালাত আদায়কারীর জন্য দু’টি সালাম, তা ব্যতিরেকে সালাত বৈধ হবে না।
আর এ মাস্আলায় অসংখ্য হাদীস, খবর এবং সাহাবীগণের বক্তব্যের সন্নিবেশ ঘটেছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪৪-[৬] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় শেষে আমাদের দিক মুখ ফিরিয়ে বসতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى أَقْبَلَ علينا بِوَجْهِهِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (إِذَا صَلّـى صَلَاةً أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِه) তথা যখন সালাত শেষ করতেন তখন মুক্তাদীদের দিকে চেহারা ফিরাতেন জরুরী উদ্দেশে।
আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো সালাত ও সালাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) হতে পরিবর্তন হতেন না। এ অধ্যায়ে অনুরূপ হাদীস যা যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালে বৃষ্টির সময় রাত্রে ছিল যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সমাপ্ত করলেন মুক্তাদীদের অভিমুখে হলেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) মধ্য রাতে পর্যন্ত দেরী করলেন। অতঃপর আমাদের উদ্দেশে বের হলেন আর যখন সালাত শেষ করলেন আমাদের দিকে তাঁর চেহারা ফিরালেন।
উপরোক্ত দু’টি হাদীস বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, ইয়াযীদ ইবনু আস্ওয়াদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হাজ্জ (হজ/হজ্জ) করলাম। বিদায় হাজ্জে তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ফাজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। অতঃপর বসা অবস্থায় পরিবর্তন হলেন এবং তাঁর চেহারাকে আমাদের অভিমুখে করলেন। (আহমাদ)
উপরোক্ত হাদীসসমূহ প্রমাণ করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে মুক্তাদীর দিকে ফিরানো শারী‘আতসম্মত। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি সর্বদাই করতেন যা প্রমাণ হয় كان শব্দ দিয়ে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪৫-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় শেষে ডান দিক মুখ ফিরিয়ে বসতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْصَرِفُ عَنْ يَمِينِهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (كَانَ النَّبِيَّ ﷺ يَنْصَرِفُ عَنْ يَمِينِه) মুসলিমের অন্য রিওয়ায়াতে রাবী বলেন, অধিকাংশ সময় আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছি ডান দিকে ফিরতেন। অনুরূপ নাসায়ীর রিওয়ায়াতে এ সমস্ত বর্ণনা প্রমাণ করে অধিকাংশ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান দিকে ফিরতেন, তবে মুসান্নিফ (রহঃ) বিরোধিতা করে উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত মাঝে মাঝে এমনটি করতেন সামনে এ বিষয়ে আলোচনা আসছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪৬-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যেন শায়ত্বনের (শয়তানের) জন্য নিজেদের সালাতের কোন অংশ নির্দিষ্ট না করে এ কথা ভেবে যে, শুধু ডান দিকে ঘুরে বসাই তার জন্য নির্দিষ্ট। আমি নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনেকবার বাম দিকেও ঘুরে বসতে দেখেছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَا يَجْعَلْ أَحَدُكُمْ لِلشَّيْطَانِ شَيْئًا مِنْ صَلَاتِهِ يَرَى أَنَّ حَقًّا عَلَيْهِ أَنْ لَا يَنْصَرِفَ إِلَّا عَنْ يَمِينِهِ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَثِيرًا يَنْصَرِفُ عَن يسَاره
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪৭-[৯] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় তাঁর ডান পাশে থাকতে পছন্দ করতাম। তিনি যেন সালাম ফিরাবার পর সর্বপ্রথম আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসেন। বর্ণনাকারী (বারা) বলেন, একদিন আমি শুনলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ’’রব্বি ক্বিনী ’আযা-বাকা ইয়াওমা তাব্’আসু আও তাজমা’উ ’ইবা-দাকা’’। অর্থাৎ- ’’হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার ’আযাব হতে বাঁচাও। যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের হাশরের (হাশরের) ময়দানে উঠাবে অথবা একত্র করবে’’। (মুসলিম)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَنِ الْبَرَاءِ قَالَ: كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ سَوَّلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ يُقْبِلُ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ قَالَ: فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: «رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ أَو تجمع عِبَادك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘কাতারের যে স্থানটি বেশি ভালো’ অধ্যায় অনুরূপ ইবনু মাজাহ্ও বেঁধে দেন بَابُ فَضْلِ مَيْمَنَةِ الصَّفِّ ডান কাতারের ফাযীলাতের অধ্যায়। আর ইমাম নাবাবী মুসলিমের শরাহতে অধ্যায় বেঁধে দেন بَابٌ اِسْتِحْبَابُ يَمِيْنِ الْإِمَامِ ‘‘ইমামের ডানে (দাঁড়ানো) ভালো এর অধ্যায়’’।
কারো মতেঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চেহারা আমাদের দিকে করতেন তথা ডানদিকে করতেন সালামের সময় বাম দিকের পূর্বে, সুতরাং আমরা (সাহাবীরা) ভালোবাসতাম সালামে তাঁর দৃষ্টি প্রথমে আমাদের দিকে পড়বে।
এর উপর হাদীসের দলীল প্রমাণিত হয় না যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষে ডানবাসীদের উপর ফিরতেন এবং বসা অবস্থায় ও ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) হতে ফিরে তাদের অভিমুখে হতেন। তবে কোন দ্বন্দ্ব হবে না সামুরাহ্ ও বারা এর হাদীসের মধ্যে যদি দলীল গ্রহণ করা হয় সকল মুক্তাদীর দিকে ফিরতেন।
بَابٌ يَسْتَقْبِلُ اِلْإِمَامِ النَّاسِ إِذَا سَلَّمَ ইমাম সালাম শেষে জনগণের উদ্দেশে অভিমুখী হবেন, অতঃপর তিনি শক্ত করে বলেছেন সুন্নাত হলো সকল মুক্তাদীমুখী হওয়া।
بَابُ الْاِنْفِتَالِ وَالْاِنْصِرَافِ عَنِ الْيَمِيْنِ وَالشِّمَالِ ডান ও বাম দিকে ফিরে বসার অধ্যায়ে আনাস (রাঃ)-এর আসার রয়েছে। ‘‘তিনি ডান ও বাম দিকে ফিরতেন।’’
আর কুসতুলানী বলেন, ব্যাখ্যায় اَلْاِنْفِتَالٌ শব্দের অর্থ সকল মুক্তাদীমুখী হওয়া। اَلْاِنْصِرَافُ শব্দের অর্থ প্রয়োজনে ডান ও বাম দিকে হওয়া।
অনুরূপ ব্যাখ্যা যায়ন ইবনু মুনীরও দিয়েছেন যে, ইমাম বুখারী অধ্যায় বেঁধে সমাধান করেছেন ইনফিতাল ও ইনসিরাফ-এর মধ্যে এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, কোন পার্থক্য নেই। আর সালাত আদায়কারীর মাঝে অবস্থান করে সকল মুক্তাদীমুখী হওয়া ও প্রয়োজনের উদ্দেশে ধাবিত হওয়ার হুকুমের মাঝে। قِنِيْ عَذَابَكَ আমাকে রক্ষা করুন আপনার অনুগ্রহ ও অনুকম্পার দ্বারা আর এটা উম্মাতকে শিক্ষাদান অথবা তার রবের প্রতি বিনয়ী হওয়া উদ্দেশ্য।
পরিচ্ছেদঃ ১৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - তাশাহুদের মধ্যে দু‘আ
৯৪৮-[১০] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় মহিলারা জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে সালাম ফিরাবার সাথে সাথে উঠে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতেন। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তাঁর সাথে যে সকল পুরুষ সালাতে শরীক হতেন, যতটুকু সময় আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য মঞ্জুর করতেন বসে থাকতেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দাঁড়াতেন সব পুরুষগণও দাঁড়িয়ে চলে যেতেন। (বুখারী; জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস ইন-শা-আল্লাহ بَابَ الضِّحْكِ -এ শীঘ্রই বর্ণনা করবো)[1]
بَابُ الدُّعَاءِ فِي التَّشَهُّدِ
وَعَن أم سَلمَة قَالَتْ: إِنَّ النِّسَاءَ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّ إِذَا سَلَّمْنَ مِنَ الْمَكْتُوبَةِ قُمْنَ وَثَبَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ صَلَّى مِنَ الرِّجَالِ مَا شَاءَ اللَّهُ فَإِذَا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ الرِّجَالُ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
وَسَنَذْكُرُ حَدِيثَ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ فِي بَاب الضحك إِن شَاءَ الله تَعَالَى
ব্যাখ্যা: قُمْنَ তথা বাড়ির উদ্দেশে বের হতেন আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্থানে বসে থাকতেন মহিলাদের চলে যাওয়া পর্যন্ত যাতে পুরুষ লোকেরা তাঁর (রসূলের) অনুসরণ করতে পারে, এ ব্যাপারে মহিলারা বাড়ী যাওয়া পর্যন্ত আর যাতে দু’ দলেই রাস্তায় একত্রিত হতে না পারে এর নিরাপত্তা বজায় থাকে রাস্তায় পুরুষ ও মহিলার সংমিশ্রণ হতে।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাম শেষে (اَللّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ، وَمِنْكَ السَّلَامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ) এ দু‘আ পড়ার সময় পর্যন্ত বসতেন।
হাদীসটি আরো প্রমাণ করে মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্য মহিলাদের উপস্থিত হওয়া সমস্যা নয় রবং বৈধ।