পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
সাজদার অধ্যায়, অর্থাৎ- সাজদার পদ্ধতি বর্ণনার অধ্যায় এবং এ ব্যাপারে যে ফাযীলাত বর্ণিত হয়েছে সেই সংক্রান্ত আলোচনা। কেননা সিজদা্ একটি বিশেষ ধরনের ’ইবাদাত। সাজদার আভিধানিক অর্থ হলো, নত হওয়া বা ঝুঁকে পড়া। আর শারী’আতের পরিভাষায় বিশেষ পদ্ধতিতে ললাটকে মাটির উপরে রাখাকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বলে। কেউ কেউ বলেছেন, ’ইবাদাতের উদ্দেশে মাটির উপর ললাট রাখাকে সিজদা্ বলে।
৮৮৭-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে শরীরের সাতটি হাড়; যথা কপাল, দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের পাতার অগ্রভাগের সাহায্যে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কাপড়, দাড়ি ও চুল একত্রিত করে বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أُمِرْتُ أَنْ أَسْجُدَ عَلَى سَبْعَةِ أَعْظُمٍ عَلَى الْجَبْهَةِ وَالْيَدَيْنِ وَالرُّكْبَتَيْنِ وَأَطْرَافِ الْقَدَمَيْنِ وَلَا نَكْفِتَ الثِّيَاب وَلَا الشّعْر»
ব্যাখ্যা: (عَلَـى الْجَبْهَةِ) জাবহাহ্ তথা কপাল দ্বারা উদ্দেশ্য দুই চোখের ভুরু থেকে মাথার চুলের ঝুঁটি পর্যন্ত। আবার কারো মতে, কপালের দু’ অংশ।
আবার কারো মতেঃ নাক কপালের অংশ যেমন- মুসলিম, নাসায়ীর বর্ণনায় এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অর্থাৎ- আমি আদিষ্ট হয়েছি সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে। আর চুল ও কাপড় যেন না গোছাই। ইমাম সিন্দী বলেন, কপাল ও নাক চেহারার অংশ। সুতরাং সে দু’টিকে মিলে একটি অঙ্গ সাতটি অঙ্গের মধ্যে (সাত অঙ্গ বলতে) কপাল, নাক। বুখারী মুসলিমের রিওয়ায়াত বর্ণনায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কপাল বলে নাকের দিকে ইশারা করেছেন।
‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন আঙ্গুলসমূহ পরস্পর লাগাতেন এবং দু’ হাত দু’ ঘাড়ের কাছাকাছি রাখতেন এবং দু’ কনুই উঁচু করতেন আর হাতের তালুর উপর ভর দিতেন।’’
(وَأَطْرَافِ الْقَدَمَيْنِ) দু’ পায়ের আঙ্গুলসমূহের পেটের উপর দু’ পাকে খাড়া করবে এবং পায়ের পিছনদ্বয়কে উঁচু করবে আর পায়ের পিঠকে ক্বিবলার দিকে করবে।
উল্লিখিত হাদীসটি সাত অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব হিসেবে প্রমাণ করে।
আমার নিকট (ভাষ্যকার) প্রথম মতটিই বেশী শক্তিশালী এবং এটা বেশী শুদ্ধ ইমাম শাফি‘ঈ এ অধ্যায়ের হাদীস দ্বারা এবং ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন যাতে এসেছে,
‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শ্রবণ করেছেন। তিনি বলেন, যখন বান্দা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে সে যেন সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। (মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্)
মারফূ' সূত্রে হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
‘‘নিঃসন্দেহে হাত সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে যেমন- চেহারা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে আর যখন তার চেহারাকে রাখবে হাত যেন রাখে আর যখন উঠাবে হাত যেন উঠায়।’’ (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী)
ইবনু দাক্বীক্ব বলেছেনঃ হাদীস অন্যতম সুস্পষ্টতর হলো এ অঙ্গগুলোর কোন কিছু সাজদার সময় খোলা রাখাটা আবশ্যক না।
সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) বলতে বুঝায় অঙ্গসমূহ মাটিতে রাখা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা বা না রাখা প্রসঙ্গ না।
দু’ হাঁটু ঢেকে রাখাটা আবশ্যক, কেননা ঢেকে না রাখলে লজ্জাস্থান প্রকাশের সম্ভাবনা আছে।
আর দু’ পা খোলার রাখার বিষয়টি অপরিহার্য নয়। এ ব্যাপারে সূক্ষ্ম দলীল রয়েছে। আর মোজা মাসাহর সময়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা হয় মোজা পরিহিত অবস্থায়। আর মোজা খুললে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) নষ্ট হয়ে যাবে উযূ নষ্ট হলে সালাতও বাতিল হবে (সুতরাং পা খোলার বিষয়টি অপরিহার্য না)।
উত্তম হলো হাতের তালুদ্বয় ও কপালকে খোলা রাখা কেননা উভয় দ্বারা সরাসরি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। বাকী অঙ্গগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি না। আর কপাল ও নাককে একত্রিত করে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করা ওয়াজিব।
আর আবূ হানীফাহ্ বলেন, শুধুমাত্র নাকের উপর সীমাবদ্ধ করা বৈধ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমি আদিষ্ট হয়েছি সাত অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে তন্মধ্যে কপাল এবং তিনি হাত দিয়ে ইশারা করেন নাকের উপর।’’ তাঁর এ ইশারা প্রমাণ করে যে, তিনি নাককেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর হাদীস রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাজদার সময় কপালের সাথে নাককে জমিনে মিলায় না তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হয় না।
আর আহমাদে বর্ণিত ওয়ায়িল-এর হাদীস। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জমিনের উপর কপাল ও নাককে রেখে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে দেখেছি।
আর আবূ হুমায়দ হতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ করতেন তখন নাক ও কপালকে জমিনে লাগাতেন।’’ তিরমিযী আবূ দাঊদ ইবনু খুযায়মাহ্ বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিযী সহীহ বলেছেন।
যখন তোমাদের কেউ সিজদা্ করবে সে যেন তার নাককে জমিনের উপর রাখে কারণ এ ব্যাপারে তোমরা আদেশপ্রাপ্ত।
ইমাম আবূ হানীফার মতের সপক্ষে দলীল পেশ করা হয়েছে যা বুখারী মুসলিমের হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে আদিষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে কপাল এবং তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করেছেন নাককে কপাল বলতে নাককেই বুঝানো হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৮৮-[২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ঠিক মত করবে। তোমাদের কেউ যেন সাজদায় কুকুরের মতো জমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اعْتَدِلُوا فِي السُّجُودِ وَلَا يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ انْبِسَاطَ الْكَلْبِ»
ব্যাখ্যা: (اِعْتَدِلُوْا فِي السُّجُوْدِ) দু’ হাতের তালু জমিনের উপর রাখার ধীরস্থিরতা অবলম্বন করো।
আর দু’হাতের দু’ কনুই উঁচু রাখবে জমিন ও শরীরের দু’ পার্শ্ব থেকে। পেট রান থেকে এমনভাবে দূরে থাকবে পর্দা না থাকলে যেন বগলের ভিতরটা দেখা যাবে। এটাই হচ্ছে বিনয় প্রকাশের নমুনা এবং কপাল ও নাককে জমিনের উপর রাখার চূড়ান্ত রূপ আর সালাতে অলসতা দূর করার অন্যতম মাধ্যম।
ইবনু দাক্বীক্ব বলেছেনঃ ধীরস্থির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শারী‘আতের নিয়ম অনুসারে সাজদার ধরণটা বর্ণনা করা আর রুকূ‘র বিষয়টি উদ্দেশিত ইন্দ্রিয়যোগ্য অনুভূতি যা সাজদায় নয়, বরং এখানে হলো পিঠ ও ঘাড়কে সোজা রাখা আর উদ্দেশ্য হলো শরীরের নীচের অংশকে উপরে রাখা এবং উপরের অংশকে নীচে রাখা (মাথা নীচে যাচ্ছে আর পিঠ পা উপরে থাকছে)।
আর হাদীসে নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি হলো (কুকুরের মতো হাত বিছিয়ে সিজদা্ করবে না) সালাতে অলসতা ও গুরুত্ব কম দেয়া।
আবূ দাঊদ তাঁর ‘মারাসীল’-এ ইয়াযীদ ইবনু আবী হানী হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়রত মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এবং বললেন, তোমরা যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে। তোমরা তোমাদের শরীরের গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত) তথা পেটকে জমিনের সাথে মিশাবে/মিলিত করবে।
(وَلَا يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ) কুকুরের মতো যেন মাটিতে হাত বিছিয়ে না দেয় কুকুরের হাত বিছানো হলো কনুই সহকারে দু’হাতের তালু মাটিতে রাখা।
অনুরূপ হাদীস এসেছে আহমাদ ও তিরমিযীতে এবং ইবনু খুযায়মাহ্ জাবির (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত।
এটা তোমাদের কেউ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলে ধীরস্থিরভাবে যেন করে আর কুকুরের মতো যেন হাত মাটিতে না বিছায়।
ইবনু হাজার বলেন, সাজদায় এ অবস্থাটা তথা কুকুরের মতো হাত বিছানো জঘন্য অবস্থা। বিশেষ করে এটা বিনয় নম্রতার বিপরীত তবে যে লম্বা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে হাতের তালুর উপর ভর করাটা কষ্টকর হয় তাহলে হাতের কনুই হাঁটুর উপর রাখবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সংবাদ অনুযায়ী।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৮৯-[৩] বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার সময় তোমরা দু’ হাতের তালু জমিনে রাখবে। উভয় হাতের কনুই উপরে উঁচিয়ে রাখবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا سَجَدْتَ فضع كفيك وارفع مرفقيك رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (فَضَعْ كَفَّيْكَ) তোমার দু’ হাতের তালুদ্বয় জমিনের উপর আঙ্গুলসমূহকে সংকুচিত করে খোলা অবস্থায় দু’ কাঁধ অথবা কান বরাবর রেখে হাতের তালুদ্বয়ের উপর ভর দিবে।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯০-[৪] মায়মূনাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় নিজের দু’ হাত জমিন ও পেট হতে পৃথক করে রাখতেন, এমনকি যদি একটি ছাগলের বাচ্চা তাঁর হাতের নিচ দিয়ে চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো। এগুলো হলো আবূ দাঊদ-এর শব্দ।[1] যেমন ইমাম বাগাবী শারহুস্ সুন্নাহ্’য় সানাদসহ ব্যক্ত করেছেন।
সহীহ মুসলিমে প্রায় অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। মায়মূনাহ্ (রাঃ)বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন, তখন ছাগলের বাচ্চা তাঁর দু’ হাতের মাঝ দিয়ে (পেট ও হাতের ভিতর দিয়ে) চলে যেতে চাইলে যেতে পারতো।[2]
[2] সহীহ : মুসলিম ৪৬৯, নাসায়ী ১১০৯, ইবনু মাজাহ্।
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَن مَيْمُونَة قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ جَافَى بَيْنَ يَدَيْهِ حَتَّى لَوْ أَنَّ بَهْمَةً أَرَادَتْ أَنْ تَمُرَّ تَحْتَ يَدَيْهِ مرت. هَذَا لفظ أبي دَاوُد كَمَا صَرَّحَ فِي شَرْحِ السُّنَّةِ بِإِسْنَادِهِ وَلِمُسْلِمٍ بِمَعْنَاهُ: قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سجد لوشاءت بهمة أَن تمر بَين يَدَيْهِ لمرت
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯১-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিতেন, তার হাত দু’টিকে এমন প্রশস্ত রাখতেন যে, তার বগলের নিচের শুভ্রতাও দেখা যেত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَالِكٍ بن بُحَيْنَة قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ فَرَّجَ بَيْنَ يَدَيْهِ حَتَّى يَبْدُوَ بَيَاض إبطَيْهِ
ব্যাখ্যা: (فَرَّجَ بَيْنَ يَدَيْهِ) তার দু’হাত (বাহুদ্বয়) পাজর হতে পৃথক রাখতেন, এমনকি বগলের শুভ্রতা দেখা যেত বা প্রকাশ হত।
হাফিয ইবনু হাজার আল আসক্বালানী বুখারীর শারহ ফাতহুল বারীতে এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, আমরা (সাহাবীগণ) আমাদের প্রতিটি হাতকে পাঁজর হতে (যা হাতের কাছাকাছি) দূরে রাখতাম।
কুরতুবী বলেনঃ সাজদাতে এ পদ্ধতিটা অবলম্বন করলে কপালের উপর ভারের চাপটা কম পড়ে এবং তার নাক ও কপালের কষ্টের প্রভাবটা লঘু হয় আর মাটিতে মেশার পরেও কষ্টটা তেমন মনে হয় না।
ত্ববারানী ও অন্যরা ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে সহীহ সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা হিংস্র প্রাণীর মতো হাত বিছাবে না (সাজদারত অবস্থায়) তোমার দু’ হাতের তালুর উপর ভর দিবে এবং তোমার বগলকে প্রকাশ করবে যখন তুমি এমনটি করবে তাহলে তোমার সকল অঙ্গ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলো।
এ হাদীসটিসহ বুহায়নার হাদীস আর যা ইতিপূর্বে উল্লিখিত মায়মূনাহ্, বারা এবং আনাস (রাঃ)-এর হাদীস আর অনুরূপ একই অর্থের হাদীসগুলো প্রমাণ করে (হাতকে পাঁজর থেকে) দূরে রাখতে হবে আর হিংস্র প্রাণীর মতো হাতকে বিছানো নিষেধ। সুতরাং দূরে রাখা বা পৃথককরণ সাজদায় ওয়াজিব।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯২-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় গিয়ে বলতেন, ’’আল্লা-হুম্মাগফিরলী জামবী কুল্লাহূ দিক্কহূ ওয়া জিল্লাহূ ওয়া আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ’আলা- নিয়াতাহূ ওয়া সিররহূ’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল ছোট-বড়, আগে-পরের, গোপনীয় ও প্রকাশ্য গুনাহ মাফ করে দাও)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي سُجُودِهِ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخره وعلانيته وسره» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো তাসবীহের সাথে অথবা তাসবীহ ছাড়াই সাজদায় এবং দু‘আটি পড়তেন।
এখানে বড় গুনাহের পূর্বে ছোট গুনাহকে নিয়ে আসা হয়েছে, কেননা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের জন্ম হয় সগীরাহ্ (ছোট) গুনাহের অতিরিক্ত করার কারণে বা সীমালঙ্ঘনের কারণে এবং সেটাকে গুরুত্বহীন মনে করার কারণে যেন সগীরাহ্ গুনাহই কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহের সৃষ্টির মাধ্যম।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৩-[৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার বিছানায় পেলাম না। আমি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে আমার হাত রসূলের পায়ের উপর গিয়ে পড়ল। আমি দেখলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতরত। তাঁর পা দু’টি খাড়া হয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছেনঃ ’’আল্লা-হুম্মা আ’ঊযু বিরিযা-কা মিন সাখাত্বিকা ওয়া বিমু’আ-ফা-তিকা মিন ’উকূবাতিকা, ওয়া আ’ঊযুবিকা মিনকা লা- উহসী সানা-আন ’আলায়কা, আনতা কামা- আসনায়তা ’আলা- নাফসিকা’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তোমার অসন্তোষ ও গযব থেকে পানাহ চাই। তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার ’আযাব হতে মুক্তি চাই। তোমার কাছে তোমার রহমতের ওয়াসীলায় আশ্রয় চাই। আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। তুমি তেমন, যেমন তুমি নিজে তোমার প্রশংসা করেছো।)। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: فَقَدْتُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً مِنَ الْفِرَاشِ فَالْتَمَسْتُهُ فَوَقَعَتْ يَدِي عَلَى بَطْنِ قَدَمَيْهِ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ وَهُمَا مَنْصُوبَتَانِ وَهُوَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخْطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفسك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি দলীল হিসেবে প্রমাণ করে মহিলাকে স্পর্শ করলে উযূ ভঙ্গ হয় না। এটা তাদের জবাব যারা দাবী করে মহিলাকে স্পর্শ করলেই উযূ (ওযু/ওজু/অজু) ভেঙ্গে যায়।
উল্লিখিত হাদীস সাধারণভাবে প্রমাণ করে স্পর্শ করলে উযূ ভাঙ্গে না। এটাই প্রাধান্য মত।
‘আল্লামা সুয়ূত্বী হাদীসের শেষাংশের ব্যাখ্যায় বলেনঃ আমি তার শেষ সীমা পর্যন্ত যেতে পারবো না এবং তার জানাকে বেষ্টন করতে পারবো না। যেমন শাফা‘আতে হাদীসে এসেছে-
‘‘আমি তার প্রশংসা করছি যার পরিমাণ
আমি তা ব্যক্ত করতে সক্ষম না।’’
মালিক হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি তোমার নি‘আমাত ও ইহসানের গণনা করে শেষ করতে পারবো না এবং সে নি‘আমাতের জন্য তোমার প্রশংসা করারও সাধ্য রাখি না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৪-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর বান্দারা তাদের রবের বেশি নিকটে যায় সাজদারত অবস্থায়। তাই তখন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দু’আ করবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ ساجد فَأَكْثرُوا الدُّعَاء» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: সাজদার মাধ্যমে সবচাইতে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার যুক্তি হলো সে আল্লাহকে আহবানকারী, কেননা আল্লাহ তা‘আলা আহবানকারীর অতি নিকটবর্তী, যেমন আল্লাহ বলেন-
وَاِذَا سَأَلَكَ عِبَادِىْ عَنِّىْ فَاِنِّىْ قَرِيْبٌ اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ
‘‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্ত্তত আমি রয়েছি অতি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবূল করেনি যখন তারা আমার নিকট প্রার্থনা করে।’’ (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৮৬)
কেননা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হলো বিনয় প্রকাশ, নিজকে তুচ্ছ বা অতি নগণ্য ও চেহারাকে ধূসরিত করার চূড়ান্ত নমুনা। আর বান্দার এ অবস্থাটা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়।
ত্ববারানী তাঁর ‘কাবীর’ গ্রন্থে ভালো সানাদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করার পর প্রথম আদেশের বিষয় ছিল সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) এর মাধ্যমে যারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার হাসিল করে নিয়েছে। কিন্তু ইবলীসের বিরোধিতা করে আল্লাহর সাথে প্রথম নাফরমানী করেছে।
কারো বক্তব্যঃ বান্দা যে পরিমাণ নিজকে দূরে রাখে (সাজদার মাধ্যমে) সে তার রবের নিকট তার চেয়ে আরো বেশী নিকটবর্তী হয়।
আর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হলো বিনয় ভাব প্রকাশের ও অহংকার মুক্ত এবং নিজকে তুচ্ছ ভাবার এক চূড়ান্ত নমুনা।
ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এ নৈকট্য সম্মান মর্যাদা ও অবস্থানের দৃষ্টিকোণ থেকে দূরত্ব বা পরিমাপের সাথে সংশ্লিষ্ট না।
(فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ) তোমরা সাজদায় বেশি বেশি দু‘আ করো। কেননা এটা আল্লাহর অতি কাছাকাছি হওয়ার স্থান আর এ অবস্থায় দু‘আ কবূল হয়। কেননা মুনীব তার দাসকে তখনই বেশি ভালোবাসে যখন তার আনুগত্য করে এবং তার জন্য বিনয়ী হয়। আর তখন দাস মুনীবের কাছে যা আবেদন করে তাই তিনি মঞ্জুর করে।
হাদীসটি সাজদায় বেশি বেশি দু‘আ পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর এ হাদীসটি দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হবে না যারা বলে যে, সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) ক্বিয়ামের চেয়ে উত্তম।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৫-[৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তানরা যখন সাজদার আয়াত পড়ে ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে, শায়ত্বন (শয়তান) তখন কাঁদতে কাঁদতে একদিকে চলে যায় ও বলে হায় আমার কপাল মন্দ। আদম সন্তান সাজদার আদেশ পেয়ে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করলো, তাই তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সাজদার আদেশ দেয়া হয়েছিল আমি তা অমান্য করলাম। আমার জন্য তাই জাহান্নাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِي يَقُولُ: يَا وَيْلَتِي أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ فَأَبَيْتُ فَلِيَ النَّارُ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: ইমাম ত্বীবী বলেন, ইবলীসের এ আফসোস বা হতাশা মূলত আদম সন্তানদের বিরুদ্ধে হিংসার জন্য তার অসম্মানকর অবস্থা ও তার উপর লা‘নাতের চিত্র ফুটে উঠা প্রমাণ করে।
হাদীসটি সাজদার ফাযীলাত প্রমাণ করে।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৬-[১০] রবী’আহ্ ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাতের বেলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে থাকতাম। উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন মিসওয়াক, জায়নামায ইত্যাদি এগিয়ে দিতাম। একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, (দীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা কিছু চাও) চেয়ে নাও। আমি নিবেদন করলাম, আমার তো শুধু জান্নাতে আপনার সাহচর্য লাভই একমাত্র কাম্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (যে মর্যাদায় তুমি পৌঁছতে চাও এটা তো বড় কথা) এছাড়া আর কিছু চাও? আমি বললাম, এটাই আমার একমাত্র আবেদন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি বেশি বেশি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে (এ মর্যাদা লাভের জন্য) আমাকে সাহায্য কর। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَن ربيعَة بن كَعْب قَالَ: كُنْتُ أَبِيتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَيْتُهُ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ لِي: «سَلْ» فَقُلْتُ: أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ. قَالَ: «أَو غير ذَلِكَ؟» . قُلْتُ هُوَ ذَاكَ. قَالَ: «فَأَعِنِّي عَلَى نَفسك بِكَثْرَة السُّجُود» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি প্রমাণ করে কেউ যদি করো খিদমাত করে অথবা উপকার করে তাহলে তাকে প্রতিদান দেয়ার উদ্দেশে বলা যাবে তোমার প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে চাইতে পারো যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রবী‘আকে বলেছিলেন, তোমার চাওয়ার কিছু থাকলে আমার কাছে চাইতে পারো।
আর হাদীসটি সাব্যস্ত করে আল্লাহর নিকট মর্যাদা অর্জন ও তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার বড় মাধ্যম হলো সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)। আর জান্নাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গ লাভ করতে হলে সাজদাকেই মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে আর সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দ্বারা উদ্দেশ্য সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৭-[১১] মা’দান ইবনু ত্বলহাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের সন্ধান দিন যে কাজ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি খামোশ থাকলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। তিনি খামোশ (নীরব) রইলেন। তৃতীয়বার তাকে আবার একই প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আমি নিজেও এ বিষয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহকে বেশি বেশি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে থাকবে। কেননা আল্লাহকে তুমি যত বেশি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতে থাকবে, আল্লাহ তোমার মর্যাদা বাড়াতে থাকবেন। তোমার অতটা গুনাহ উক্ত সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিয়ে কমাতে থাকবেন। মা’দান বলেন, এরপর আবুদ্ দারদার সাথে দেখা করে তাকেও আমি একই প্রশ্ন করি। তিনিও আমাকে সাওবান (রাঃ)যা বলেছিলেন তাই বললেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْسُّجُوْدِ وَفَضْلِه
وَعَنْ مَعْدَانَ بْنِ طَلْحَةَ قَالَ: لَقِيتُ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقلت: أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ أَعْمَلُهُ يُدْخِلُنِي اللَّهُ بِهِ الْجَنَّةَ فَسَكَتَ ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَسَكَتَ ثُمَّ سَأَلْتُهُ الثَّالِثَةَ فَقَالَ: سَأَلْتُ عَنْ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ لِلَّهِ فَإِنَّكَ لَا تَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلَّا رَفَعَكَ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً» . قَالَ مَعْدَانُ: ثُمَّ لَقِيتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ لِي مِثْلَ مَا قَالَ لِي ثَوْبَانُ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীসটি বেশী বেশী সাজদার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে আর সাজদার দ্বারা উদ্দেশ্য সালাতের কারণও ইতোপূর্বে আলোচনা হয়েছে যেমন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীস বান্দা সবচেয়ে আল্লাহর অতি নিকটবর্তী হয় সাজদার সময় আর এটি কুরআনের আয়াতটিরই প্রতিনিধিত্ব হয়েছে।
‘‘তুমি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করো আল্লাহ অতি নিকটবর্তী হও।’’ (সূরাহ্ আল ‘আলাক্ব : ১৯)