পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৮-[১২] ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার সময় মাটিতে তাঁর হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতে ও সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে উঠতে হাঁটুর আগে হাত উঠাতে দেখেছি। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ وَضَعَ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: (إِذَا سَجَدَ) যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করবে হাঁটু আগে রাখবে তার পরে হাত।
যারা সাজদার সময় হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার পক্ষে গেছেন- এ হাদীসটি দলীল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
(وَإِذَا نَهَضَ) সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) থেকে দাঁড়ানোর সময় হাত উঠাতেন হাঁটুর পূর্বে যারা হাদীসটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা বলেন, সালাতে সিজদা্ থেকে উঠার সময় হাতকে আগে উঠাতে হবে।
তাদের দলীলঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন সালাতে সিজদা্ হতে দাঁড়ানোর সময় দু’ হাতের উপর ভর করে দাঁড়াতে।
তবে আবূ দাঊদ-এর এ রিওয়ায়াতটি শায তথা প্রসিদ্ধ সিক্বাহ্ বাবীর বর্ণিত হাদীসের বিপরীত তথা দুর্বল হাদীস।
সহীহ যা আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন আহমাদ হতে বর্ণিত, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী ব্যক্তি যেন সালাতে হাতের উপর ভর না দিয়ে বসে।
আর ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ বলেন, সুন্নাত হলো উঠার সময় যেন হাতের উপর ভর দিয়ে উঠে। কেননা মালিক ইবনু হুওয়াইরিস রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের বৈশিষ্ট্যে বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে তার মাথা উঠাতেন ধীরস্থিরভাবে বসতেন। অতঃপর জমিনের উপর ভর দিয়ে উঠতেন- (নাসায়ী)। আর বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, বসতেন এর জমিনের উপর ভর দিতেন, অতঃপর দাঁড়াতেন।
আর ‘আবদুর রাযযাক্ব বর্ণনা করেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে, ‘‘তিনি সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) হতে যখন মাথা উঠাতেন তখন দু’ হাতের উপর ভর করে উঠতেন দু’ হাত উঠানোর পূর্বে।’’
আর এটা সুস্পষ্ট কথা যে, এটি সালাত আদায়কারী ব্যক্তিকে সাহায্য করে।
সুতরাং আমাদের নিকট প্রাধান্য, যে ব্যক্তি হাঁটুদ্বয় আগে উঠাবে হাতের পূর্বে আর হাত জমিনের উপর ভর দিবে হাঁটু জমিনের উপর ভর দিবে না।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৮৯৯-[১৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার সময় যেন উটের বসার মতো না বসে, বরং দু’ হাত যেন হাঁটুর আগে মাটিতে রাখে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]
আবূ সুলায়মান খাত্ত্বাবী বলেন, এ হাদীসের চেয়ে ওয়ায়িল-এর আগের হাদীসটি বেশী মজবুত। কেউ কেউ বলেন, এ হাদীসটি মানসূখ বা রহিত।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يبرك الْبَعِير وليضع يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ. وَالدَّارِمِيُّ قَالَ أَبُو سُلَيْمَانَ الْخَطَّابِيُّ: حَدِيثُ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ أَثْبَتُ مِنْ هَذَا وَقِيلَ: هَذَا مَنْسُوخ
ব্যাখ্যা: (فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيْرُ) উট যেভাবে বসে সেভাবে যেন না বসে, অর্থাৎ- হাতের পূর্বে যে হাঁটু না রাখে যেরূপ উট বসে।
(وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ) হাঁটুর আগে হাত মাটিতে রাখবে। উটের মতো যেন না বসে। হাত যেন পূর্বে মাটিতে রাখে তারপর হাঁটু।
হাদীসটি প্রমাণ করে হাঁটুর পূর্বে হাতকে মাটিতে রাখা ভালো বা মুস্তাহাব।
আওযা‘ঈ বলেনঃ আমি মানুষদেরকে পেয়েছি তারা হাঁটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখে এবং এটা আহমাদ-এর রিওয়ায়াতে বর্ণিত।
অনুরূপ আরো হাদীস এসেছে যা ইবনু খুযায়মাহ্ সংকলন করেছেন এবং সহীহ বলেছেন, দারাকুত্বনী হাকিম, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখতেন।’’
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৯০০-[১৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ ’’আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ’আ-ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দান কর)। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ: «اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَعَافِنِي وَارْزُقْنِي» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالتِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (كَانَ النَّبِيُّ ﷺ كَانَ يَقُوْلُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মাঝখানে বলতেন। ফরয ও নফল উভয় সালাতে (اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ) আমার পাপ ক্ষমা করো অথবা আনুগত্যের স্বল্পতা, ত্রুটি।
(وَارْحَمْنِيْ) আমার প্রতি রহম করো তোমার পক্ষ হতে আমার ‘আমলের প্রতিদানে না অথবা আমার ‘ইবাদাত গ্রহণ করার মাধ্যমে আমার প্রতি রহম কর। (وَارْحَمْنِيْ) আমাকে সৎ পথ দেখাও সৎ ‘আমলের মাধ্যমে অথবা সত্যের উপর অটুট রাখো।
(وَعَافِنِيْ) আমাকে স্বস্তিতে রাখো দুনিয়া ও আখিরাতের সকল মুসীবাত হতে অথবা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল প্রকার রোগ থেকে। (وَارْزُقْنِيْ) আমাকে উত্তম বিষয়ক দান কর অথবা তোমার আনুগত্যে তাওফীক্ব দান কর আমাকে অথবা আখিরাতে আমাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন কর।
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সিজদা্ ও তার মর্যাদা
৯০১-[১৫] হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মাঝখানে বলতেন, ’’রব্বিগফিরলী’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও)। (নাসায়ী ও দারিমী)[1]
وَعَنْ حُذَيْفَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ: «رَبِّ اغْفِرْ لي» . رَوَاهُ النَّسَائِيّ والدارمي