পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪৪-[২৩] (’আবদুল্লাহ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’’বিসমিল্লা-হ’’-এর সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করতেন। (তিরমিযী;[1]
ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসের সানাদ শক্তিশালী নয়।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْتَتِحُ صَلَاتَهُ بِ (بِسم الله الرَّحْمَن الرَّحِيم)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَاكَ
ব্যাখ্যা: বিসমিল্লা-হ সহকারে শুরু করার অর্থ হলো বিসমিল্লা-হ-কে চুপে চুপে পড়তেন। কেননা পূর্বে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’ দ্বারাই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করতেন, এভাবে উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪৫-[২৪] ওয়ায়িল ইবনু হূজর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি সালাতে ’’গয়রিল মাগযূবি ’আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়া-ল্লীন’’ পড়ার পর সশব্দে ’আমীন’ বলেছেন। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ, দারিমী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَن وَائِل بن حجر قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يقْرَأ: (غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين)
فَقَالَ: آمِينَ مَدَّ بِهَا صَوْتَهُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: সালাতে ‘আমীন’ বলা সম্পর্কে ইমামদের মতভেদঃ আল জামা‘আতের ইজমা বা ঐকমত্য সিদ্ধান্ত যে, ফাতিহার সমাপ্তিতে ‘আমীন’ বলা মুস্তাহাব। জাহিরী সম্প্রদায় বলেন ওয়াজিব এবং রাফিজীগণ বলেন ‘আমীন’ বলা বিদ্‘আত। তাদের মতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত ইমাম ‘আমীন’ বলবে কি না? ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও মালিক (রহঃ) বলেন, ইমাম ‘আমীন’ বলবে না। কেবলমাত্র মুক্তাদীগণই ‘আমীন’ বলবে। তবে ইমাম শাফি‘ঈ ও আহমাদ (রহঃ) বলেন, ইমামও ‘আমীন’ বলবে। কেননা, এক হাদীসে বর্ণিত আছে ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে, তোমরা তখন ‘আমীন’ বলবে।
যে সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) চুপে চুপে পড়তে হয় সে সালাতে, ‘আমীন’ চুপে চুপে বলতে হবে। এতে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রকাশ্যে ‘আমীন’ বলার মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ সর্বাবস্থায় ইমাম ও মুক্তাদী উভয় চুপে চুপে ‘আমীন’ বলবে। ইমাম আহমাদ ও শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন যে, সালাত আদায়কারী ইমাম হন বা মুক্তাদী হন ‘আমীন’ প্রকাশ্যে উচ্চারণ করতে হবে। মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন ইমাম ‘আমীন’ বলবে তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। ‘আমীন’ জেহরী হওয়ার বিষয়টি বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪৬-[২৫] আবূ যুহায়র আন্ নুমায়রী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলাম। আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট এলাম যিনি (সালাতের মধ্যে) আল্লাহর কাছে আকুতি-মিনতির সাথে দু’আ করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি তার জন্য জান্নাত ঠিক করে নিল, যদি সে এতে মোহর লাগায়। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! কি দিয়ে মোহর লাগাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’আমীন’ দিয়ে। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن أبي زُهَيْر النميري قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتِ يَوْمٍ فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ قَدْ أَلَحَّ فِي الْمَسْأَلَةِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
أَوْجَبَ إِنْ خَتَمَ . فَقَالَ: رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: بِأَيِّ شَيْءٍ يَخْتِمُ؟ قَالَ: «بآمين» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪৭-[২৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরাহ্ আল আ’রাফ দু’ ভাগে ভাগ করে মাগরিবের সালাতের দু’ রাক্’আতে তিলাওয়াত করলেন। (নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى الْمَغْرِبَ بِسُورَةِ (الْأَعْرَافِ)
فَرَّقَهَا فِي رَكْعَتَيْنِ. رَوَاهُ النَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর জন্য এটা বৈধ যে, তিনি ফরয সালাতেও একটি সূরাহ্ ভাগ করে অংশ বিশেষ এক রাক্‘আতে এবং অন্য অংশ আরেক রাক্‘আতে পাঠ করতে পারেন। তা মাকরূহ নয়। তবে ইমাম মালিক (রহ্ঃ) একই সূরাহ্ ভাগ করে দু’ রাক্‘আতে পাঠ করা মাকরূহ মনে করতেন। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন বলে তার নিকট হাদীস পৌঁছেনি। ইবনু ‘আবদুল বার এমনটিই বলেছেন। আর এটিই সঠিক।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪৮-[২৭] ’উক্ববাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উটের নাকশী ধরে ধরে সামনের দিকে চলতাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে ’উক্ববাহ্! আমি কি তোমাকে পাঠ করার মতো দু’টি উত্তম সূরাহ্ শিক্ষা দিব? তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ’’কুল আ’ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব’’ (সূরাহ্ ফালাক্ব) ও ’’কুল আ’ঊযু বিরব্বিননা-স’’ (সূরাহ্ আন্ না-স) শিখালেন। কিন্তু এতে আমি খুব খুশী হয়েছি বলে তিনি মনে করলেন না। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজ্রের (ফজরের) সালাতের জন্য উট হতে নামলেন। এ দু’টি সূরাহ্ দিয়েই আমাদেরকে সালাত আদায় করালেন। সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, কি দেখলে হে ’উক্ববাহ্। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: كُنْتُ أَقُودُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَاقَتَهُ فِي السَّفَرِ فَقَالَ لِي: «يَا عُقْبَةُ أَلَا أُعَلِّمُكَ خَيْرَ سُورَتَيْنِ قُرِئَتَا؟» فَعَلَّمَنِي (قُلْ أَعُوذُ بِرَبّ الفلق)
و (قل أَعُود بِرَبّ النَّاس)
قَالَ: فَلَمْ يَرَنِي سَرَرْتُ بِهِمَا جَدًّا فَلَمَّا نَزَلَ لِصَلَاةِ الصُّبْحِ صَلَّى بِهِمَا صَلَاةَ الصُّبْحِ لِلنَّاسِ فَلَمَّا فَرَغَ الْتَفَتَ إِلَيَّ فَقَالَ: «يَا عُقْبَةَ كَيْفَ رَأَيْتَ؟» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যা: সূরাদ্বয়ের অনেক মর্যাদা রয়েছে। অকল্যাণ হতে রক্ষা এবং আল্লাহরর স্মরণ লাভের জন্যে বিশেষভাবে দু’টি সূরাই অতি উত্তম। বর্ণিত আছে যে, একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক যাদুকরের যাদুটোনায় আক্রান্ত হলে জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এ সূরাদ্বয় পাঠ করলেন। সূরাদ্বয়ে এগারটি আয়াত রয়েছে। এগারটি আয়াতে এগারটি যাদুটোনার গিরা খুলে যায়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদুটোনার ক্ষতি হতে রক্ষা পান, এখনও সূরাদ্বয় পাঠ করলে যে কোন যাদুটোনা জাতীয় জিনিসের ক্ষতি হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪৯-[২৮] জাবির (রাঃ) ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন রাতে (অর্থাৎ- বৃহস্পতিবারে দিবাগত রাতে) মাগরিবের সালাতে ’’কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’’ (সূরাহ্ আল কা-ফিরূন) ও ’’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’’ (সূরাহ্ ইখলাস) পাঠ করতেন।[1] এ হাদীসটি শারহুস্ সুন্নাহ্’য় বর্ণিত হয়েছে।
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي صَلَاةِ الْمَغْرِبِ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ: (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)
و (قل هُوَ الله أحد)
رَوَاهُ فِي شرح السّنة
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫০-[২৯] ইবনু মাজাহ্ এ হাদীসটি ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে নকল করেছেন। কিন্তু এতে ’’লায়লাতুল জুমু’আহ্’’ (অর্থাৎ- জুমু’আর রাত) উল্লেখ নেই।[1]
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنِ ابْنِ عُمَرَ إِلَّا أَنه لم يذكر «لَيْلَة الْجُمُعَة»
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫১-[৩০] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি গুণে শেষ করতে পারব না যে, আমি কত বার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতের পরের ও ফজরের (ফজরের) সালাতের আগের দু’ (রাক্’আত) সুন্নাতে ’’কুল ইয়া- আইয়্যুহাল কা-ফিরূন’’ (সূরাহ্ আল কা-ফিরূন) ও ’’কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’’ (সূরাহ্ ইখলাস) তিলাওয়াত করতে শুনেছি। (তিরমিযী)[1]
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: مَا أحصي مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ وَفِي الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلَاةِ الْفَجْرِ: بِ (قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ)
و (قل هوا لله أحد)
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: (مَا أُحْصِىْ) ‘‘আমি গুণে শেষ করতে পারবো না’’ এ দ্বারা উদ্দেশ্য আধিক্য। অর্থাৎ- নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরাহদ্বয় মাগরিব ও ফাজরের (ফজরের) সুন্নাত সালাতে বেশী বেশী পাঠ করতেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, মাগরিব ও ফাজরের সুন্নাতে সূরাহ্ আল কা-ফিরূন ও সূরাহ্ আল ইখলা-স পাঠ করা মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫২-[৩১] এ হাদীসটি ইবনু মাজাহ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার বর্ণনায় ’’মাগরিবের পর’’ শব্দ নেই।[1]
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ إِلَّا أَنه لم يذكر: «بعد الْمغرب»
ব্যাখ্যা: (أَنَّه لَمْ يَذْكُرْ بَعْدَ الْمَغْرِبِ) ‘‘আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)’র বর্ণনায় মাগরিবের পর শব্দ উল্লেখ নেই।’’ অর্থাৎ- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এর বর্ণনাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের পরের দু’ রাক্‘আতে অত্র সূরাদ্বয় পাঠ করার কথা উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র ফাজরের (ফজরের) পূর্বের দু’ রাক্‘আত সুন্নাতে তা পাঠ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম, আবূ দাঊদ এবং ইমাম নাসায়ীও বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু মাজাহ্ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে মাগরিবের পরের দু’ রাক্‘আত সুন্নাতের কথা উল্লেখ আছে। অতএব তা মাগরিবের সুন্নাতেও পাঠ করা মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৩-[৩২] সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি অমুক লোক ছাড়া আর কোন লোকের পিছনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করিনি। সুলায়মান বলেন, আমিও ওই লোকের পিছনে সালাত আদায় করেছি। তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক্’আত অনেক লম্বা করে পড়তেন। আর শেষ দু’ রাক্’আতকে ছোট করে পড়তেন। ’আসরের সালাত ছোট করতেন। মাগরিবের সালাতে ক্বিসারি মুফাসসাল (সংক্ষিপ্ত) সূরাহ্ পাঠ করতেন। ’ইশার সালাতে আওসাতে মুফাসসাল (মধ্যম) সূরাহ্ পাঠ করতেন। আর ফজরের (ফজরের) সালাতে তিওয়ালি মুফাসসাল (দীর্ঘ) সূরাহ্ পাঠ করতেন।[1]
নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্ও এ বর্ণনাটি নকল করেছেন। কিন্তু তাঁর বর্ণনা ’আসরের সালাত ছোট করতেন পর্যন্ত।
وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: مَا صَلَّيْتُ وَرَاءَ أَحَدٍ أَشْبَهَ صَلَاةً بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فلَان. قَالَ سُلَيْمَان: صَلَّيْتُ خَلْفَهُ فَكَانَ يُطِيلُ الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الظّهْر ويخفف الْأُخْرَيَيْنِ ويخفف الْعَصْر وَيَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصَّلِ وَيَقْرَأُ فِي الْعِشَاءِ بِوَسَطِ الْمُفَصَّلِ وَيَقْرَأُ فِي الصُّبْحِ بِطِوَالِ الْمُفَصَّلِ. رَوَاهُ النَّسَائِيُّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ إِلَى ويخفف الْعَصْر
ব্যাখ্যা: (وَيَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِقِصَارِ الْمُفَصَّلِ) ‘‘তিনি মাগরিবের সালাতে কিসারে মুফাস্সাল সূরাহগুলো পাঠ করতেন।’’ সূরাহ্ আল বাইয়্যিনাহ্ থেকে সূরাহ্ আন্ না-স পর্যন্ত সূরাহগুলোকে কিসারে মুফাস্সাল বলা হয়। পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের সালাতে ত্বিওয়াল মুফাস্সাল ও কিসারে মুফাসসাল সব ধরনের সূরাহ্ পাঠ করতেন। তবে অধিকাংশ সময় কিসারে মুফাসসাল পাঠ করতেন। অতএব উভয় ধরনের সূরাহ্ পাঠ করাই সুন্নাত।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৪-[৩৩] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ফজরের (ফজরের) সালাতে ছিলাম। তিনি যখন ক্বিরাআত (কিরআত) শুরু করলেন, তখন তাঁর তিলাওয়াত করা কষ্টকর ঠেকল। তিনি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে বললেন, তোমরা মনে হয় ইমামের পিছনে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়। আমরা আরজ করলাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করি। তিনি বললেন, সূরাহ্ ফাতিহাহ্ ছাড়া আর কিছু পাঠ করবে না। কারণ যে ব্যক্তি এ সূরাহ্ পাঠ করবে না তার সালাত হবে না। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী ও নাসায়ী;[1]
নাসায়ী এ অর্থে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু আবূ দাঊদ-এর অপর এক বর্ণনায় আছেঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি হলো কুরআন আমার সাথে এভাবে টানাটানি করছে কেন? আমি যখন সশব্দে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করি তখন তোমরা সূরাহ্ ফাতিহাহ্ ছাড়া আর কিছু পাঠ করবে না।)[2]
[2] য‘ঈফ : আবূ দাঊদ ৮২৪। কারণ মাকহূল মুদাল্লিস রাবী সে عنعن দিয়ে হাদীস বর্ণনা করে থাকে।
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: كُنَّا خَلْفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ: «لَعَلَّكُمْ تقرؤون خَلْفَ إِمَامِكُمْ؟» قُلْنَا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: «لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَلِلنِّسَائِيِّ مَعْنَاهُ وَفِي رِوَايَةٍ لأبي دَاوُد قَالَ: «وَأَنا أَقُول مَالِي يُنَازعنِي الْقُرْآن؟ فَلَا تقرؤوا بِشَيْءٍ مِنَ الْقُرْآنِ إِذَا جَهَرْتُ إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآن»
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ফাজরের (ফজরের) সালাতে সূরাহ্ আর্ রূম পড়তে শুরু করলেন এবং তিনি তাতে ভুলের শিকার হন। অতঃপর দেখা গেল যে, এটা তাঁর পিছনে ইক্তিদাকারীর কারণে হয়েছিল যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতো না।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৫-[৩৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেহরী সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) অর্থাৎ- শব্দ করে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শেষ করে সালাত আদায়কারীদের দিকে ফিরে বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সাথে ক্বিরাআত (কিরআত) তিলাওয়াত করেছো? এক ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! (আমি পড়েছি)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই তো, আমি সালাতে মনে মনে বলছিলাম, কি হলো, আমি ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতে আটকিয়ে যাচ্ছি কেন? আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনার পর লোকেরা রসূলের পেছনে জেহরী সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল। (মালিক, আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انْصَرَفَ مِنْ صَلَاةٍ جَهَرَ فِيهَا بِالْقِرَاءَةِ فَقَالَ: «هَلْ قَرَأَ مَعِي أَحَدٌ مِنْكُمْ آنِفًا؟» فَقَالَ رَجُلٌ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: إِنِّي أَقُولُ: مَا لِي أُنَازَعُ الْقُرْآنَ؟ «. قَالَ فَانْتَهَى النَّاسُ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا جَهَرَ فِيهِ بِالْقِرَاءَةِ مِنَ الصَّلَوَاتِ حِينَ سَمِعُوا ذَلِكَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ نَحْوَهُ
ব্যাখ্যা: (فَانْتَهَى النَّاسُ عَنْ الْقِرَاءَةِ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ) ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথা শুনে তাঁর পেছনে জেহরী সালাতে লোকজন ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ বন্ধ করে দিয়েছিল।’’ ‘আল্লামা আলক্বারী বলেনঃ এ থেকে বুঝা যায় যে, যেসব সালাতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপে চুপে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন সেসব সালাতে সাহাবীগণ চুপে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করতেন। এটাই অধিকাংশ ‘আলিমদের মত। আমাদের (হানাফীদের) ইমাম, ইমাম মুহাম্মাদ এর অভিমতও তাই।
জেনে রাখা ভালো যে, হাদীসে বর্ণিত فَانْتَهَى النَّاسُ..... শেষ পর্যন্ত এ অংশটুকু আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর বক্তব্য নয়। বরং তা যুহরী (রহঃ)-এর বক্তব্য যা হাদীসের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ তাঁর সুনানে তা বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে যে, ইমাম আওযা‘ঈ যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন, যুহরী বলেনঃ মুসলিমগণ এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে ফলে তারা জেহরী সালাতে তার সাথে কিছু পাঠ করতো না। কিভাবেই বা তা আবূ হুরাইরাহ্’র বক্তব্য হতে পারে যেখানে তিনি স্বয়ং ফাতাওয়া দিতেন যে, ইমাম স্বরবে বা নীরবে যেভাবেই ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠ করুক মুক্তাদীগণ নীরবে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পাঠ করবে এবং তিনি তা পাঠ করার আদেশ দিতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৬-[৩৫] ইবনু ’উমার (রাঃ) এবং ’আবদুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী সালাতরত অবস্থায় তার পরওয়ারদিগারের সাথে একান্তে আলাপ করে। তাই তার উচিত সে কি আলাপ করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তিলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে। (আহমাদ)[1]
وَعَن ابْن عمر والبياضي قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِي رَبَّهُ فَلْيَنْظُرْ مَا يُنَاجِيهِ بِهِ وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ» . رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: সালাতে অন্তরকে উপস্থিত করা, অর্থাৎ- মনোযোগী হওয়া, বিনয়ী থাকা, মনে একাগ্রতা থাকা এবং যা পড়া হয় তা নিয়ে চিন্তা করা জরুরী।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৭-[৩৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম এজন্য নিয়োগ করা হয় যে, তাকে অনুসরণ করা হবে। তাই ইমাম ’আল্লা-হু আকবার’ বললে তোমরাও ’আল্লা-হু আকবার’ বলবে। ইমাম যখন ক্বিরাআত (কিরআত) তিলাওয়াত করবে, তোমরা তখন চুপ থাকবে। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: ইমাম মালিক ও আহমাদ-এর মতে, যে সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) জোরে পড়া হয় তাতে মুক্তাদী চুপ থাকবে ও শুনবে এবং ইমামের সাকতাতে ফাতিহাহ্ পড়বে। কিন্তু যে সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) চুপে চুপে পড়া হয় ইমামের পেছনে মনে মনে পড়বে।
ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ, আহমাদ, রহ্ওয়াই ও ইসহাক প্রমুখের মতে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর জন্যে সব সালাতেই শুধুমাত্র সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পড়া ওয়াজিব। অন্য ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া ওয়াজিব নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৮-[৩৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কুরআনের কোন অংশ শিখে নিতে সক্ষম নই। তাই আপনি আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমার জন্য যথেষ্ট হবে। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি এই (দু’আ) পড়ে নিবেঃ ’’আল্লাহ তা’আলা পবিত্র। সব প্রশংসা তাঁর। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা’বূদ নেই। আল্লাহ অতি বড় ও মহান। গুনাহ হতে বেঁচে থাকার শক্তি ও ’ইবাদাত করার তাওফীক্ব আল্লাহরই কাছে’’।
ঐ ব্যক্তি আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! এসব তো আল্লাহর জন্য। আমার জন্য কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য পড়বেঃ ’’হে আল্লাহ! আমার ওপর রহম কর। আমাকে নিরাপদে রাখ। আমাকে হিদায়াত দান কর। আমাকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দাও’’।
তারপর লোকটি নিজের দু’ হাত দিয়ে এভাবে ইশারা করলো আবার বন্ধ করলো যেন সে পেয়েছে বলে বুঝালো। এটা দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ ব্যক্তি তার দু’ হাত কল্যাণ দিয়ে ভরে নিল। (আবূ দাঊদ)[1] কিন্তু নাসায়ীর রাবীগণ এই বর্ণনা শেষ করেছেন ’’ইল্লা- বিল্লা-হ’’ পর্যন্ত।
وَعَنْ عَبْدُ اللَّهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي لَا أَسْتَطِيعُ أَنْ آخُذَ مِنَ الْقُرْآنِ شَيْئًا فَعَلِّمْنِي مَا يُجْزِئُنِي قَالَ: «قُلْ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ» . قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذَا لِلَّهِ فَمَاذَا لِي؟ قَالَ: «قُلْ اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي وَعَافِنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي» . فَقَالَ هَكَذَا بِيَدَيْهِ وَقَبَضَهُمَا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَّا هَذَا فَقَدَ مَلَأَ يَدَيْهِ مِنَ الْخَيْرِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَانْتَهَتْ رِوَايَةُ النَّسَائِيِّ عِنْد قَوْله: «إِلَّا بِاللَّه»
ব্যাখ্যা: এ হুকুম এমন ব্যক্তির জন্যে যে সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং সালাতের সময় উপস্থিত হওয়ার পূর্বে কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ করার সুযোগ পায়নি।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৫৯-[৩৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ’’সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-’’ (সূরাহ্ আল আ’লা-) পড়তেন, তখন বলতেন, ’’সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা-’’ (আমি আমার উচ্চ মর্যাদাবান রব্বুল ’আলামীনের পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كَانَ إِذَا قَرَأَ (سبح اسْم رَبك الْأَعْلَى)
قَالَ: (سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৬০-[৩৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি সূরাহ্ ওয়াত্ তীনি ওয়াযযায়তূন পড়তে পড়তে ’’আলায়সাল্ল-হু বিআহকামিল হা-কিমীন’’ (আল্লাহ কি সবচেয়ে বড় হাকিম নন?) পর্যন্ত পৌঁছবে, সে যেন বলে, ’’বালা-, ওয়াআনা- ’আলা- যা-লিকা মিনাশ্ শা-হিদীন’’ [সূরাহ্ আত্ তীন] (হাঁ, আমি এ কথার সাক্ষ্যদানকারীদের একজন)।
আর যে ব্যক্তি সূরাহ্ আল ক্বিয়া-মাহ্ পড়তে পড়তে ’’আলায়সা যা-লিকা বিক্ব-দিরীন ’আলা- আই ইউহয়্যিয়াল মাওতা-’’ (সে আল্লাহর কি এ শক্তি নেই যে, তিনি মৃতদেরকে জীবিত করে উঠাবেন), তখন সে যেন বলে, ’’বালা-’’ (হাঁ, তিনি তা করতে সমর্থ)।
আর যে ব্যক্তি সূরাহ্ ওয়াল মুরসালা-ত পড়তে পড়তে ’’ফাবি আইয়ি হাদীসিন বা’দাহূ ইউ’মিনূন’’ (এরপর এরা কোন কথার উপর ঈমান আনবে?’’) এ পর্যন্ত পৌঁছে সে যেন বলে, ’’আ-মান্না- বিল্লা-হ’’ (আমরা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি)।
আবূ দাঊদ, তিরমিযী এ হাদীসটিকে ’’শাহিদীন’’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: من قَرَأَ مِنْكُم ب (التِّين وَالزَّيْتُون)
فَانْتهى إِلَى (أَلَيْسَ الله بِأَحْكَم الْحَاكِمين)
فَلْيَقُلْ: بَلَى وَأَنَا عَلَى ذَلِكَ مِنَ الشَّاهِدِينَ. وَمن قَرَأَ: (لَا أقسم بِيَوْم الْقِيَامَة)
فَانْتَهَى إِلَى (أَلَيْسَ ذَلِكَ بِقَادِرٍ عَلَى أَن يحيي الْمَوْتَى)
فَلْيَقُلْ بَلَى. وَمَنْ قَرَأَ (وَالْمُرْسَلَاتِ)
فَبَلَغَ: (فَبِأَيِّ حَدِيث بعده يُؤمنُونَ)
فَلْيَقُلْ: آمَنَّا بِاللَّهِ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ إِلَى قَوْلِهِ: (وَأَنَا عَلَى ذَلِكَ مِنَ الشَّاهِدِينَ)
ব্যাখ্যা: ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে এবং সালাতের বাইরে এ জাতীয় দু‘আর বাক্য সংযোজন করা জায়িয আছে। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা শুধু নফল সালাতের জন্যে জায়িয। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে জায়িয নেই অবশ্য সালাতের বাইরে জায়িয আছে। তারা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করেন। এ হাদীস দ্বারা সালাতের বাইরে বা নফল সালাতের জন্যে নির্দিষ্ট করার পক্ষে দলীল পেশ করা সঠিক হয়নি যা প্রত্যাখ্যান করা যায় সাহাবীগণের আসার দিয়ে। আরো প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি পড়ে তার সাথে বা ইমামের সাথে নির্দিষ্ট নয় বরং যে পড়বে এবং যে শুনবে সবার জন্যেই এ তাসবীহ পড়া মুস্তাহাব।
পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৬১-[৪০] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কিছু সাহাবীগণের কাছে এলেন। তাদেরকে তিনি সূরাহ্ আর্ রহমানের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করে শুনালেন। সাহাবীগণ চুপ হয়ে শুনলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই সূরাটি আমি ’লায়লাতুল জিন্নি’ (জিন্দের সাথে দেখা হবার রাতে) জিন্দের পড়ে শুনিয়েছি। জিনেরা তোমাদের চেয়ে এর উত্তর ভালো দিয়েছে। আমি যখনই ’’ফাবি আইয়্যি আ-লা-য়ি রব্বিকুমা- তুকাযযিবা-ন’’ (তোমাদের রবের কোন নি’আমাতকে তোমরা অস্বীকার করতে পারবে) পর্যন্ত পৌঁছেছি, তখনই উত্তরে তারা বলে উঠেছে, ’’লা- বিশায়ইম্ মিন্ নি’মাতিকা রব্বানা- নুকাযযিবু ফালাকাল হামদ’’ (হে আমাদের রব! আমরা তোমার কোন নি’আমাতকে অস্বীকার করি না, তোমারই সব প্রশংসা)।(তিরমিযী;[1] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি গরীব।
তবে হাদীসটির ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত একটি শাহিদ হাদীস রয়েছে যেটি ইবনু জারীর আত্ ত্ববারী তার তাযামীরে এবং খত্বীব বাগদাদী তার تَارِيْخُ بَغْدَادِ (তা-রীখু বাগদা-দ)-এ এবং বাযযার সহ আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন। আর তাদের রাবীগণ সকলেই বিশ্বস্ত তবে ইয়াহ্ইয়া ইবনু সুলায়ম আত্ব ত্বয়িফী ব্যতীত যার স্মৃতিশক্তিতে দুর্বলতা রয়েছে। যদিও বুখারী মুসলিম তার হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। অতএব সার্বিক দিক বিবেচনায় হাদীসটি হাসান যদি আল্লাহ চায়। আর ইমাম সুয়ূত্বী (রহঃ) اَلدَّرُّ الْمَنْسُوْرُ (আদ্ দাররুল মানসূর) গ্রন্থে হাদীসের সানাদটি সহীহ আখ্যায়িত করায় শিথিলতা রয়েছে।
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَصْحَابه فَقَرَأَ عَلَيْهِم سُورَةَ الرَّحْمَنِ مِنْ أَوَّلِهَا إِلَى آخِرِهَا فَسَكَتُوا فَقَالَ: «لَقَدْ قَرَأْتُهَا عَلَى الْجِنِّ لَيْلَةَ الْجِنِّ فَكَانُوا أَحْسَنَ مَرْدُودًا مِنْكُمْ كُنْتُ كُلَّمَا أَتَيْتُ على قَوْله (فَبِأَي آلَاء رَبكُمَا تُكَذِّبَانِ)
قَالُوا لَا بِشَيْءٍ مِنْ نِعَمِكَ رَبَّنَا نُكَذِّبُ فَلَكَ الْحَمْدُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ