পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২২-[১] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করেনি তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো না। (বুখারী ও মুসলিম;[1]
মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি উম্মুল কুরআন বা তার বেশি কিছু পড়েনি।
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا صَلَاةَ لمن لم يقْرَأ بِفَاتِحَة الْكتاب»
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: «لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآن فَصَاعِدا»
ব্যাখ্যা: ইবনু জারীর তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেছেনঃ সূরাহ্ আল ফাতিহাকে ফাতিহাহ্ নাম দেয়া হয়েছে কেননা ফাতিহাহ্ শব্দের অর্থ উন্মুক্তকারী আর এ কিতাবকে শুরু করা হয় ফাতিহাহ্ দ্বারা। সেটা দিয়ে সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া হয়। তাকে কুরআনের জননীও বলা হয়। যেমন মা থেকে যা আসে তা সব তার পরে হয়ে থাকে। মায়ের অস্তিত্ব তার সন্তানের আগে হয়ে থাকে তদ্রূপ সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্’র অবস্থা, উম্মুল কুরআন শব্দটি ফাতিহাতুল কিতাবের সাথে যথেষ্ট মিলও পাওয়া যায়। এ হাদীসটি প্রমাণ করছে যে, সালাতে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া ফরয। যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়েনি তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুদ্ধ হবে না।
‘আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীস সালাতের মধ্যে ফাতিহাকে নির্ধারিত করার ব্যাপারে নির্দেশ করছে। কেননা ফাতিহাহ্ ছাড়া সালাত যথেষ্ট হবে না।
সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়ার হুকুম:
সালাতে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া ফরয না ওয়াজিব- এ নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আহমাদ, শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর প্রসিদ্ধ মতে সালাতে সূরায় ফাতিহাহ্ পড়া ফরয। তারা আলোচ্য হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হাদীসে না-বাচক উক্তি দ্বারা নাজায়িয হওয়ার অর্থ গ্রহণ করেছেন। কারণ ফরয পরিত্যক্ত হলেই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নাজায়িয হয়।
ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পড়া ওয়াজিব। দলীল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক বেদুঈনকে শিক্ষা দেয়ার সময় বলেছিলেন কুরআন মাজীদের যেখান থেকেই তুমি পাঠ করা সহজ মনে করো সেখান থেকেই পাঠ করো। এজন্যে হানাফীগত বিশেষ কোন সূরাকে নির্দিষ্ট না করে ক্বিরাআত (কিরআত) পাঠকে ফরয বলেছেন এবং হাদীস দ্বারা তারা সূরাহ্ আল ফাতিহাকে ওয়াজিব বলেছেন। যাতে কুরআন ও হাদীসের মাঝে কোন বৈপরীত্য না থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৩-[২] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলো কিন্তু এতে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ- সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পাঠ করলো না তাতে তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ’’অসম্পূর্ণ’’ রয়ে গেল। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। এ কথা শুনে কেউ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যখন ইমামের পিছনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবো তখনও কি তা পাঠ করবো? উত্তরে তিনি বললেন, হাঁ তখনও তা পাঠ করবে নিজের মনে মনে। কারণ আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ’’আল্লাহ বলেছেন, আমি ’সালাত’ অর্থাৎ, সূরাহ্ ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করেছি, (এভাবে যে, হামদ ও সানা আমার জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর বান্দা যা চায় তা তাকে দেয়া হয়।
বান্দা বলে, সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো। যখন বান্দা বলে, আল্লাহ বড় মেহেরবান ও পরম দয়ালু। আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার গুণগান করলো। বান্দা যখন বলে, আল্লাহ কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিনের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করলো। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ!) আমরা একমাত্র তোমারই ’ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য কামনা করি, তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার (’ইবাদাত আল্লাহর জন্য আর দু’আ বান্দার জন্য)। আর আমার বান্দা যা চাইবে তা সে পাবে। বান্দা যখন বলে, (হে আল্লাহ)! তুমি আমাদেরকে সহজ ও সরল পথে পরিচালিত কর। সে সমস্ত লোকের পথে, যাদেরকে তুমি নি’আমাত দান করেছ। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি তোমার গযব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন, এটা আমার বান্দার জন্য, আর বান্দা যা চাইবে, সে তাই পাবে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ صَلَّى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ ثَلَاثًا غَيْرُ تَمَامٍ» فَقِيلَ لِأَبِي هُرَيْرَةَ: إِنَّا نَكُون وَرَاء الإِمَام فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِي نَفْسِكَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «قَالَ اللَّهُ تَعَالَى قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي نِصْفَيْنِ وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ (الْحَمد لله رب الْعَالمين)
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى حَمِدَنِي عَبْدِي وَإِذَا قَالَ (الرَّحْمَن الرَّحِيم)
قَالَ اللَّهُ تَعَالَى أَثْنَى عَلَيَّ عَبْدِي وَإِذَا قَالَ (مَالك يَوْم الدّين)
قَالَ مجدني عَبدِي وَقَالَ مرّة فوض إِلَيّ عَبدِي فَإِذا قَالَ (إياك نعْبد وَإِيَّاك نستعين)
قَالَ هَذَا بَيْنِي وَبَيْنَ عَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ (اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالّين)
قَالَ هَذَا لِعَبْدِي وَلِعَبْدِي مَا سَأَلَ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উম্মুল কুরআন ছাড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিশুদ্ধ ও পূর্ণ হবে না। ইমাম আহমাদ, ইমাম শাফি‘ঈ-এর প্রসিদ্ধ মতে সালাতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পড়া ফরয। এটা ব্যতীত সালাত সহীহ হবে না। ইমাম বুখারী বলেন, সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ ক্বিরাআত (কিরআত) ফারযের (ফরযের/ফরজের) একটি অংশ।
সালাতকে আমি ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। এখানে উদ্দেশ্য হলো ফাতিহাহ্ পড়া। কারণ সালাত বিশুদ্ধ হবে না সেটা ব্যতীত। এ হাদীসেও প্রমাণ রয়েছে যে, ফাতিহাহ্ পড়া ফরয।
আয়াতগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি আয়াত আল্লাহর জন্যে আর শেষ তিন আয়াত বান্দার জন্যে এবং মধ্যবর্তী আয়াত অর্ধেক আল্লাহর জন্যে আর অর্ধেক বান্দার জন্যে বরাদ্দ।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৪-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ’’আলহামদু লিল্লা-হি রব্বিল ’আ-লামীন’’ দিয়ে শুরু করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَنَسٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبا بكر وَعمر رَضِي الله عَنْهُمَا كَانُوا يَفْتَتِحُونَ الصَّلَاةَ بِ «الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالمين» )
رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রকাশ্যভাবে সূরাহ্ ফাতিহার ক্বিরাআত (কিরআত) দিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করতেন। শুরুর দু‘আর পর সালাতে বিসমিল্লা-হ পড়া সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইমাম শাফি‘ঈ থেকে বর্ণিত আছে যে, বিসমিল্লা-হ পড়া ওয়াজিব। আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, বিসমিল্লা-হ পড়া মুস্তাহাব। আর এ মতামত ইমাম আহমাদ এর পক্ষ থেকেও প্রসিদ্ধ আছে। তারপর তারা সকলেই ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর বিরোধিতা করছেন, ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে বিসমিল্লা-হ স্বজোরে পড়া সুন্নাত। আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে বিসমিল্লা-হ পড়া সুন্নাত না। বরং বিসমিল্লা-হ পড়া মুস্তাহাব। ইসহাক ইবনু রবী‘আহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, বিসমিল্লা-হ স্বজোরে পড়া বা নিঃশব্দে পড়ার স্বাধীনতা থাকবে। ইবনু হাযম এ মত পোষণ করছেন। আর এটাই আমাদের নিকটে প্রণিধানযোগ্য।
বিসমিল্লা-হ সংক্রান্ত বিভিন্ন উক্তিতে বিসমিল্লা-হ চার প্রকার অর্জিত হয়।
(১) বিসমিল্লা-হ সম্পূর্ণভাবে কুরআনের আয়াত নয় তবে সূরাহ্ আন্ নামল-এর বিসমিল্লা-হ টি কুরআনের আয়াত। এ মত প্রকাশ করেছেন ইমাম মালিক, আওযা‘ঈ, ত্বহাবী, আবূ হানীফাহ্, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ এবং আরো কোন কোন সাহাবীগণ। ইবনু কুদামাহ্ এ মতকে পছন্দ করছেন।
(২) বিসমিল্লা-হ সূরাহ্ তাওবাহ্ ছাড়া সকল সূরার একটি আয়াত অথবা আয়াতের অংশ। এ মত প্রকাশ করছেন ইমাম শাফি‘ঈ ও তার সাথীগণ।
(৩) বিসমিল্লা-হ ফাতিহার প্রথমের আয়াত বাকী সূরার প্রথমের আয়াত নয়। এ মত প্রকাশ করছেন, ইমাম আহমাদ, ইসহাক, আবূ ‘উবায়দ, কুফাবাসী, মক্কাবাসী, ‘ইরাক্ববাসী।
(৪) বিসমিল্লা-হ মাসহাফের মধ্যে লেখা হয়েছে তার সব স্থানে কুরআনের স্বতন্ত্র একটি আয়াত। না এটা ফাতিহার আয়াত, না এটা অন্যান্য সূরার আয়াত। এটা সূরার মধ্যখানে পার্থক্য করার জন্যে নাযিল হয়েছে। এ মতটা আবূ বাকর রাযী জাসসাস ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর পছন্দনীয় মতামত।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৫-[৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইমাম যখন ’আমীন’ বলবে, তোমরাও ’আমীন’ বলবে। কারণ যে ব্যক্তির ’আমীন’ মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) আমীনের সাথে মিলে যায়, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহগুলো মাফ করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
আর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন ইমাম বলে, ’’গয়রিল মাগযূবি ’আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়াল্লীন’’, তখন তোমরা ’আমীন’ বলবে। কারণ যার ’আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র ’আমীন’ শব্দের সাথে মিলে যায় তার আগের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ শব্দগুলো সহীহুল বুখারীর।[2]
সহীহ মুসলিমের হাদীসের শব্দগুলোও এর মতই। আর সহীহুল বুখারীর অন্য একটি বর্ণনার শব্দ হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কুরআন তিলাওয়াতকারী, অর্থাৎ- ইমাম বা অন্য কেউ ’আমীন’ বলবে, তোমরাও সাথে সাথে ’আমীন’ বলো। আর যে ব্যক্তির ’আমীন’ শব্দ মালায়িকাহ্’র আমীন শব্দের সাথে মিলে যাবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।[3]
[2] সহীহ : বুখারী ৭৮২।
[3] সহীহ : বুখারী ৬৪০২।
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تقدم من ذَنبه)
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: إِذَا قَالَ الْإِمَامُ: (غَيْرِ المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين)
فَقُولُوا: آمِينَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ . هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ وَلِمُسْلِمٍ نَحْوُهُ
وَفِي أُخْرَى لِلْبُخَارِيِّ قَالَ: «إِذَا أَمَّنَ الْقَارِئُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تُؤَمِّنُ فَمَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلَائِكَةِ غفر لَهُ مَا تقدم من ذَنبه»
ব্যাখ্যা: ইমাম যখন ‘আমীন’ বলবে তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলবে। ইমাম বুখারী দলীল পেশ করলেন যে, ইমাম ‘আমীন’ সজোরে বলবে। মুক্তাদীও সাথে সাথে ‘আমীন’ বলবে। ইমাম শাফি‘ঈ ও জমহূরদের অভিমত ‘আমীন’ সজোরে বলা সুন্নাত, এটাই বেশী প্রণিধানযোগ্য।
‘আমীন’ বলার মধ্যে মালায়িকাহ্’র সমান সমান হওয়ার বিভিন্ন অর্থ হতে পারে যা নিম্নরূপ।
(১) মালায়িকাহ্ যখন ‘আমীন’ বলে সে ওয়াক্ত বা সময়ে তোমরাও ‘আমীন’ বলো। আর এটাই অধিকাংশের মতে সহীহ অর্থ। (২) কারো মতে তারা যেরূপ নিষ্ঠা ও বিনয়ের সাথে ‘আমীন’ বলে থাকেন তোমরাও অনুরূপভাবে বলো। (৩) আবার কারো অভিমত তারা যেভাবে ‘আমীন’ বলেন তোমরাও তাই করো, তাহলে মালায়িকার সাথে সমান সমান হবে।
অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবেঃ এখানে গুনাহ অর্থ সগীরাহ্, অর্থাৎ- ছোট গুনাহ। আল্লাহ স্বীয় কালামেই ঘোষণা দিয়েছেন; নেক ‘আমলের দ্বারা সগীরাহ্ গুনাহ মার্জনা হয়ে যায়। কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহও মার্জনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কেননা সালাতের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হলো ‘ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম। এতদভিন্ন নিঃস্বার্থ আল্লাহর মালায়িকাহ্’ও ‘আমীন’ বলে বান্দার জন্যে দু‘আ করেন। কাজেই কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহও মাফ হতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৬-[৫] আবূ মূসা আল্ আশ্’আরী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন জামা’আতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে, তোমাদের কাতারগুলোকে সোজা করবে। এরপর তোমাদের কেউ তোমাদের ইমাম হবে। ইমাম তাকবীর তাহরীমা ’আল্লা-হু আকবার’ বললে, তোমরাও ’আল্লা-হু আকবার’ বলবে। ইমাম ’’গয়রিল মাগযূবি ’আলায়হিম ওয়ালায্ যোয়া-ল্লীন’’ বললে, তোমরা আমীন বলবে। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের দু’আ ক্ববূল করবেন। ইমাম রুকূ’তে যাবার সময় ’আল্লা-হ আকবার’ বলবে ও রুকূ’তে যাবে। তখন তোমরাও ’আল্লা-হু আকবার’ বলে রুকূ’তে যাবে। ইমাম তোমাদের আগে রুকূ’ করবে। তোমাদের আগে রুকূ’ হতে মাথা উঠাবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা ওটার পরিবর্তে (অর্থাৎ- তোমরা পরে রুকূ’তে গেলে, আর পরে মাথা উঠালে ও ইমাম আগে রুকূ’তে গেলে আর আগে মাথা উঠালে, উভয়ের সময় এক সমান হয়ে গেল)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইমাম ’’সামি’আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলবে, তোমরা বলবে ’’আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’’ আল্লাহ তোমাদের প্রশংসা শুনেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا صَلَّيْتُمْ فَأَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ فَإِذَا كَبَّرَ فكبروا وَإِذ قَالَ (غير المغضوب عَلَيْهِم وَلَا الضَّالّين)
فَقُولُوا آمِينَ يُجِبْكُمُ اللَّهُ فَإِذَا كَبَّرَ وَرَكَعَ فَكَبِّرُوا وَارْكَعُوا فَإِنَّ الْإِمَامَ يَرْكَعُ قَبْلَكُمْ وَيَرْفَعُ قبلكُمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَتِلْكَ بِتِلْكَ» قَالَ: «وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ يسمع الله لكم» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : যখন তোমরা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করবে- তখন তোমার কাতার সোজা করবে এমনভাবে যাতে কোন রকম বাঁকা না থাকে এবং ফাঁকাও না থাকে। এর মর্মার্থ হলো কাতারগুলো সোজা করা। কাতারে মিশে মিশে দাঁড়ানো প্রথম কাতার পুরা করার পর পরের কাতার পুরা করবে। কাতারের মাঝে ফাঁকা স্থান পূরণ করা। ‘আল্লামা ‘আয়নী (রহঃ) বলেনঃ কাতার সোজা করা সালাতের সুন্নাতের মধ্যে অন্যতম। ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, কাতার সোজা করা ফরয। কেননা কাতার সোজা করা ইক্বামাতে সালাতের অন্তর্ভুক্ত।
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, ইমাম তাকবীর দেয়ার পিছে পিছে তাকবীর দিতে হবে। ইমামের আগে তাকবীর দেয়া যাবে না।
আলোচ্য হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফাহ্, মালিক ও আহমাদ বলেন, ইমামের দায়িত্ব হলো ‘‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’’ বলা, আর মুক্তাদীর দায়িত্ব হলো ‘‘আল্লা-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’’ বলা। পক্ষান্তরে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, ইমাম ও মুক্তাদীর উভয়কে উভয়টা বলতে হবে। আর সকল ইমামের ঐকমত্য, যে ব্যক্তি একাকি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে সে উভয়টা বলবে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৭-[৬] মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এ শব্দগুলো আছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ইমামের ক্বিরাআত (কিরআত) তিলাওয়াত করার সময় তোমরা চুপ থাকবে।[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَقَتَادَةَ: «وَإِذا قَرَأَ فأنصتوا»
ব্যাখ্যা: ‘মনোযোগ সহকারে শুনার জন্যে নীরব থাকো’। এটা একমাত্র জিহরী (জেহরী) সালাতের ক্ষেত্রে। ইমামা আবূ হানীফাহ্, মালিক, আহমাদ, ইসহাক ইবনু রহওয়াইহ্ এ হাদীস দিয়ে দলীল দেন যে, স্বরবে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আর নীরবে সালাত কোন সালাতেই মুক্তাদী ইমামের পিছনে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়বে না। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে সর্বাবস্থায় মুক্তাদীর ওপর ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া ফরয।
ইমামের পিছনে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়ার ব্যাপারে সাহাবীগণের মাঝেও মতানৈক্য ছিল। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। ইবনু মুবারক-এর উক্তি দিয়েও উত্তর দেয়া যায়। তিনি বলেন, আমি ইমামের পিছনে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়েছি এবং অন্যান্য লোকজনও ক্বিরাআত (কিরআত) পড়েছে একমাত্র কুফানগরের এক সম্প্রদায় ইমামের পিছনে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তেন না। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর উক্তি রয়েছে যে, ইমামের পিছনে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া পছন্দ করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৮-[৭] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে প্রথম দু’ রাক্’আতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ এবং আরও দু’টি সূরাহ্ পাঠ করতেন। পরের দু’ রাক্’আতে শুধু সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করতেন। আর কখনও কখনও তিনি আমাদেরকে আয়াত শুনিয়ে পাঠ করতেন। তিনি প্রথম রাক্’আতকে দ্বিতীয় রাক্’আত অপেক্ষা লম্বা করে পাঠ করতেন। এভাবে তিনি ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও আদায় করতেন। এভাবে তিনি ফাজ্রের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقْرَأ فِي الظُّهْرِ فِي الْأُولَيَيْنِ بِأُمِّ الْكِتَابِ وَسُورَتَيْنِ وَفِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُخْرَيَيْنِ بِأُمِّ الْكِتَابِ وَيُسْمِعُنَا الْآيَةَ أَحْيَانًا وَيطول فِي الرَّكْعَة الأولى مَا لَا يطول فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ وَهَكَذَا فِي الْعَصْرِ وَهَكَذَا فِي الصُّبْح
ব্যাখ্যা: প্রথম রাক্‘আতে ক্বিরাআত (কিরআত) দীর্ঘায়িত করার কারণ হলো তাতে মুক্তাদীগণ সালাতে শরীক হওয়ার সুযোগ পায়। ইমাম শাফি‘ঈ, আহমাদ, মালিক, হানাফীদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) সহ প্রায় সমস্ত ইমামগণই বলেন, সকল সালাতেই প্রথম রাক্‘আতে ক্বিরাআত (কিরআত) দীর্ঘ এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে খাটো করে পড়াই উত্তম। এ হাদীসটি তাদের দলীল। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও আবূ ইউসুফ (রহঃ) বলেন, ফাজর (ফজর) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতীত সকল সালাতে উভয় রাক্‘আতে সমানভাবে দীর্ঘ কিংবা হ্রাস হওয়া উত্তম। মূলত ফাজরের (ফজরের) সময় নিদ্রা ও অসচেতনতার সময়। তাই মুক্তাদীদের সহানুভূতির লক্ষ্যে ক্বিরাআত (কিরআত) লম্বা করা বাঞ্ছনীয়। আর ক্বিরাআতের মধ্যে উভয় রাক্‘আতের মর্যাদা সমান। কাজেই উভয় রাক্‘আতেই সমপরিমাণ হওয়া উচিত। যেমন- অন্য আরেক হাদীস বর্ণিত আছে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজরের (ফজরের) প্রত্যেক রাক্‘আতে প্রায় ত্রিশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করতেন। আর প্রথম রাক্‘আত দীর্ঘ করতেন মানে বিসমিল্লা-হ, আ‘ঊযুবিল্লা-হ ও সানা ইত্যাদির দরুন দীর্ঘায়িত হত।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮২৯-[৮] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর ও ’আসরের সালাতে কত সময় দাঁড়ান তা আমরা অনুমান করতাম। আমরা অনুমান করলাম যে, তিনি যুহরের প্রথম দু’ রাক্’আতে ’সূরাহ্ আলিফ লাম মীম তানযিলুস্ সিজদা্ (সিজদা/সেজদা)’ পাঠ করতে যত সময় লাগে তত সময় দাঁড়াতেন। অন্য এক বর্ণনায়, প্রত্যেক রাক্’আতে ত্রিশ আয়াত পড়ার সমপরিমাণ সময় দাঁড়াতেন। আর পরবর্তী দু’ রাক্’আতের অর্ধেক সময় দাঁড়াতেন বলে অনুমান করেছিলাম। ’আসরের সালাতের প্রথম দু’ রাক্’আতে, যুহরের সালাতের শেষ দু’ রাক্’আতের সমপরিমাণ এবং ’আসর সালাতের শেষ দু’ রাক্’আতে যুহরের শেষ দু’ রাক্’আতের অর্ধেক সময় বলে অনুমান করেছিলাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كُنَّا نَحْزُرُ قِيَامَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ فَحَزَرْنَا قِيَامَهُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ قَدْرَ قِرَاءَةِ (الم تَنْزِيلُ)
السَّجْدَةِ - وَفِي رِوَايَةٍ: فِي كُلِّ رَكْعَةٍ قَدْرَ ثَلَاثِينَ آيَةً - وَحَزَرْنَا قِيَامَهُ فِي الْأُخْرَيَيْنِ قَدْرَ النّصْف من ذَلِك وحزرنا قِيَامَهُ فِي الرَّكْعَتَيْنِ الْأُولَيَيْنِ مِنَ الْعَصْرِ عَلَى قَدْرِ قِيَامِهِ فِي الْأُخْرَيَيْنِ مِنَ الظُّهْرِ وَفِي الْأُخْرَيَيْنِ مِنَ الْعَصْرِ عَلَى النِّصْفِ مِنْ ذَلِكَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা : আলোচ্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের শেষ রাক্‘আতে সূরাহ্ ফাতিহার সাথে অন্য সূরাহ্ পাঠ করতেন। চার রাক্‘আত বিশিষ্ট সালাতের শেষ দু’ রাক্‘আতে সূরাহ্ ফাতিহার পরেও অন্য সূরাহ্ পাঠ জায়িয আছে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩০-[৯] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাতে সূরাহ্ ’’ওয়াল্লায়লি ইযা- ইয়াগশা-’’ এবং অপর বর্ণনা মতে ’’সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-’’ পাঠ করতেন। ’আসরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)ও একইভাবে আদায় করতেন। কিন্তু ফাজ্রের (ফজরের) সালাতে এর চেয়ে লম্বা সূরাহ্ তিলাওয়াত করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ ب (اللَّيْل إِذا يغشى)
وَفِي رِوَايَةٍ بِ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى)
وَفِي الْعَصْرِ نَحْوَ ذَلِكَ وَفِي الصُّبْحِ أَطْوَلَ من ذَلِك. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: তারাবীহ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ব্যতীত এক রাক্‘আতে একটি পূর্ণ সূরাহ্ পাঠ করাই সুন্নাত। অংশবিশেষ পড়া জায়িয তবে সুন্নাত নয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকমই পড়তেন। কোন একটি সালাতের জন্যে বিশেষ কোন সূরাকে নির্দিষ্ট করে পড়েননি।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩১-[১০] জুবায়র ইবনু মুত্ব’ইম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরাহ্ ’তূর’ পাঠ করতে শুনেছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِ «الطُّورِ»
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩২-[১১] উম্মুল ফাযল বিনতু হারিস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মাগরিবের সালাতে সূরাহ্ মুরসালাত তিলাওয়াত করতে শুনেছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يقْرَأ فِي الْمغرب ب (المرسلات عرفا)
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদীস দু’টি দ্বারা বুঝা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন বিশেষ সালাতের বিশেষ সূরাকে নির্দিষ্ট করে পড়েননি। বরং একই সালাতে বিভিন্ন সূরাহ্ পড়েছেন। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে সূরাহ্ যে সালাতে অধিকাংশ সময় পড়েছেন। আমাদেরও সে সালাতে তা অধিকাংশ সময় পড়া উত্তম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্তাদীর অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে কখনও ক্বিরাআত (কিরআত) দীর্ঘ করেছেন আবার কখনো সংক্ষিপ্ত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৩-[১২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জামা’আতে সালাত আদায় করতেন, তারপর নিজ এলাকায় যেতেন ও এলাকাবাসীর ইমামতি করতেন। এক রাতে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’ইশার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন, তারপর নিজ এলাকায় গিয়ে তাদের ইমামতি করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাতে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পাঠ করতে শুরু করলেন। এতে বিরক্ত হয়ে এক লোক সালাম ফিরিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) থেকে পৃথক হয়ে গেল। একা একা সালাত আদায় করে এখান থেকে চলে গেল। তার এ অবস্থা দেখে লোকজন বিস্মিত হয়ে বলল, হে অমুক! তুমি কি মুনাফিক্ব হয়ে গেলে? উত্তরে সে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কখনও মুনাফিক্ব হয়নি। নিশ্চয়ই আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাবো। এ বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে জানাবো।
তারপর সে ব্যক্তি রসূলের কাছে এলো। বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি পানি সেচকারী (শ্রমিক), সারাদিন সেচের কাজ করি। মু’আয আপনার সাথে ’ইশার সালাত আদায় করে নিজের গোত্রের ইমামতি করতে এসে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ দিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করে দিলেন। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’আয-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, হে মু’আয! তুমি কি ফিতনাহ্ (ফিতনা) সৃষ্টিকারী? তুমি ’ইশার সালাতে সূরাহ্ ওয়াশ্ শামসি ওয়ায্ যুহা-হা-, সূরাহ্ ওয়ায্ যুহা-, সূরাহ্ ওয়াল্ লায়লী ইযা- ইয়াগশা-, সূরাহ্ সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা- তিলাওয়াত করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ مُعَاذُ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ يَأْتِي فَيَؤُمُّ قَوْمَهُ فَصَلَّى لَيْلَةً مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ ثُمَّ أَتَى قَوْمَهُ فَأَمَّهُمْ فَافْتَتَحَ بِسُورَةِ الْبَقَرَةِ فَانْحَرَفَ رَجُلٌ فَسَلَّمَ ثُمَّ صَلَّى وَحْدَهُ وَانْصَرَفَ فَقَالُوا لَهُ أَنَافَقَتْ يَا فُلَانُ قَالَ لَا وَاللَّهِ وَلَآتِيَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فلأخبرنه فَأَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا أَصْحَابُ نَوَاضِحَ نَعْمَلُ بِالنَّهَارِ وَإِنَّ مُعَاذًا صَلَّى مَعَكَ الْعِشَاءَ ثُمَّ أَتَى قَوْمَهُ فَافْتَتَحَ بِسُورَةِ الْبَقَرَةِ فَأَقْبَلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مُعَاذٍ فَقَالَ: يَا مُعَاذُ أَفَتَّانٌ؟ أَنْتَ اقْرَأ: (الشَّمْس وَضُحَاهَا (وَالضُّحَى)
(وَاللَّيْل إِذا يغشى)
و (وَسبح اسْم رَبك الْأَعْلَى)
ব্যাখ্যা: নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায়কারীর ইকতিদা সম্পর্কে ইমামদের মতভেদঃ ইমাম আবূ হানীফাহ্, মালিক ও আহমাদ (রহঃ)-এর এক মতানুযায়ী নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায়কারীর ইকতিদা জায়িয নেই। কারণ ইমাম মুক্তাদীর সালাতের যামিন হয়। আর এটা যুক্তিযুক্ত যে, নফল আদায়কারী দুর্বল এবং ফরয আদায়কারী শক্তিমান। দুর্বল কখনো শক্তিমানের যামিন হতে পারে না। সুতরাং নফল সালাত আদায়কারী কখনও ইমাম হিসেবে ফরয আদায়কারী মুক্তাদীর যামিন হতে পারে না।
ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর মতে ও আহমাদ (রহঃ) এক বর্ণনার মতে নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায়কারীর ইকতিদা জায়িয আছে। তাদের দলীল হলো- (১) আলোচ্য হাদীসে মু‘আয-এর ঘটনা যা জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে প্রথমে ফরয হিসেবে আদায় করে পরে নফল আদায়কারী হিসেবে ইমামতি করেন। যদি এটা জায়িয না হতো মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্য তাকে দ্বিতীয়বারের ইমামতি করতে নিষেধ করতেন।
(২) জিবরীল (আঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইমামতি করেছেন। অথচ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)-এর ওপর সালাত ফরয নয়। যদি এটা জায়িয না হতো তাহলে ফরয আদায়কারী মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল আদায়কারী জিবরীলের ইকতিদা করা কিভাবে জায়িয হলো?
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৪-[১৩] বারা (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ’ইশার সালাতে সূরাহ্ ’’ওয়াত্তীন ওয়ায্ যায়তূন’’ পাঠ করতে শুনেছি। আর তার চেয়ে মধুর স্বর আমি আর কারও শুনিনি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَن الْبَراء قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقْرَأ فِي الْعشَاء: (والتين وَالزَّيْتُون)
وَمَا سَمِعت أحدا أحسن صَوتا مِنْهُ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাতে প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ আত্ তীন এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে ইন্না- আনযালনা- পড়েছেন। কেননা সফরের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হালকা হওয়ার দাবীদার। আর মু‘আয-এর ঘটনাটি ছিল মুক্বীম অবস্থায়। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সফরের সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া মুক্বীমের সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) পড়ার মতো নয়।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৫-[১৪] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজ্রের (ফজরের) সালাতে সূরাহ্ ’ক্ব-ফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ’ ও এরূপ সূরাগুলো তিলাওয়াত করতেন। অন্যান্য সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) ফাজ্রের (ফজরের) চেয়ে কম দীর্ঘ হত। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ ب (ق وَالْقُرْآن الْمجِيد)
وَنَحْوِهَا وَكَانَتْ صَلَاتُهُ بَعْدُ تَخْفِيفًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (كَانَ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ بِقٓ وَالْقُرْانِ الْمَجِيْدِ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাজরের (ফজরের) সালাতে সূরাহ্ ক্ব-ফ ‘ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ’ পাঠ করতেন।’’ অর্থাৎ- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অধিকাংশ সময় ফাজরের (ফজরের) সালাতে তা পাঠ করতেন। তিনি তা সর্বদা পাঠ করতেন না। কেননা এটা সাব্যস্ত আছে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজরের (ফজরের) সালাতে সূরাহ ‘‘ইযাশ্ শামসু কুয়্যিরত’’ পাঠ করতেন। তেমনিভাবে মক্কাতে ফাজরের (ফজরের) সালাতে সূরাহ্ আল মু’মিনূন পাঠ করেছেন। মোটকথা, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজরের (ফজরের) সালাতে অন্যান্য সূরাও পাঠ করেছেন।
(وَكَانَ صَلَاتُه بَعْدُ تَخْفِيفًا) ‘‘তার পরবর্তী সালাতগুলো সংক্ষিপ্ত ছিল।’’ অর্থাৎ- ফাজরের (ফজরের) সালাত বাদে অন্যান্য সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) সংক্ষিপ্ত ছিল। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য পরবর্তীতে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাজরের (ফজরের) সালাতের ক্বিরাআত (কিরআত) সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৬-[১৫] ’আমর ইবনু হুবায়স (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফজরের (ফজরের) সালাতে ’’ওয়াল লায়লি ইযা- ’আস্’আস্’’ সূরাহ্ তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَن عَمْرو بن حُرَيْث: أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقْرَأ فِي الْفجْر (وَاللَّيْل إِذا عسعس)
رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (أَنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقْرَأُ فِي الْفَجْرِ وَاللَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ) ‘‘তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফজরের (ফজরের) সালাতে ‘‘ওয়াল লায়লি ইযা- ‘আস্‘আসা’’ পাঠ করতে শুনেছেন।’’ অর্থাৎ- তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফাজরের (ফজরের) সালাতে ঐ সূরাহ্ পাঠ করতে শুনেছেন যাতে ‘‘ওয়াল লায়লি ইযা- ‘আস্‘আসা’’ আয়াত বিদ্যমান আছে। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি শুধুমাত্র ঐ আয়াত পাঠ করেছেন। কেননা অধিকাংশ সময়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে পূর্ণাঙ্গ সূরাহ্ পাঠ করতেন। বরং কেউ কেউ বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ফরয সালাতে সূরার অংশ বিশেষ পাঠ করতেন না। তিনি শুধুমাত্র মাগরিবের সালাতে সূরাহ্ আ‘রাফ দু’ রাক্‘আতে ভাগ করে তিলাওয়াত করেছেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৭-[১৬] ’আবদুল্লাহ ইবনুস্ সায়িব (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় আমাদের ফাজ্রের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করিয়েছেন। তিনি সূরাহ্ আল মু’মিন তিলাওয়াত করা শুরু করলেন। তিনি যখন মূসা ও হারূন অথবা ’ঈসা (আঃ) এর আলোচনা পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন তার কাশি এসে গেলে (সূরাহ্ শেষ না করেই) তিনি রুকূ’তে চলে গেলেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ قَالَ: صَلَّى لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصُّبْحَ بِمَكَّةَ فَاسْتَفْتَحَ سُورَةَ (الْمُؤْمِنِينَ)
حَتَّى جَاءَ ذِكْرُ مُوسَى وَهَارُونَ أَوْ ذِكْرُ عِيسَى أَخَذَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَعْلَةٌ فَرَكَعَ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: ‘আম্বিয়াদের অতীত ঘটনাবলী স্মরণ পড়ায় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং তাঁর কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে যায়। ফলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূরাটি সমাপ্ত করতে পারেনি। সালাতে ক্বিরাআত (কিরআত) পড়তে গিয়ে কোন কোন কারণে যদি বাধা সৃষ্টি হয় আর এ পরিমাণ ক্বিরাআত (কিরআত) পড়া হয়ে থাকে যা দ্বারা সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুদ্ধ হয় তবে তৎক্ষণাৎ রুকূ‘তে যাওয়া যেতে পারে।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৮-[১৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন ফজরের (ফজরের) সালাতের প্রথম রাক্’আতে ’’আলিফ লা-ম্ মীম্ তানযীল’’ (সূরাহ্ আস্ সিজদা্) ও দ্বিতীয় রাক্’আতে ’’হাল আতা- ’আলাল ইনসা-নি’’ (অর্থাৎ- সূরাহ্ আদ্ দাহর) তিলাওয়াত করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقْرَأ فِي الْفجْر يَوْم الْجُمُعَة ب (الم تَنْزِيلُ)
فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى وَفِي الثَّانِيَةِ (هَل أَتَى على الْإِنْسَان)
ব্যাখ্যা: জুমু‘আর দিন এ সূরাহ্ দু’টি পড়ার মধ্যে সম্ভবত এর অন্তর্নিহিত কারণ রয়েছে। মানুষের সৃষ্টির সূচনা, পরিণতি ও পরকাল, আদামের সৃষ্টি, জান্নাত ও জাহান্নাম এবং এর অধিবাসীদের অবস্থার বিবরণ এবং অবশেষে দুনিয়ার ধ্বংস সাধন হওয়া তথা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) ক্বায়িম জুমু‘আর দিনেই। তাই প্রায়শঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত সূরাহ্ দু’টি পাঠ করতেন। তবে তিনি সর্বদা এটা পড়তেন না, বিভিন্ন সূরাহ্ পড়তেন। সালাতে সূরাহ্ সম্পূর্ণ পড়া উত্তম। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এমনই করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৩৯-[১৮] ’উবায়দুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারওয়ান আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে মদীনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে মক্কায় গেলেন। এ সময় আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) জুমু’আর সালাতে আমাদের ইমামতি করলেন। তিনি সালাতে সূরাহ্ আল জুমু’আহ্ প্রথম রাক্’আতে ও সূরাহ্ ’’ইযা- জা-আকাল মুনা-ফিকূন’’ (সূরাহ্ আল মুনা-ফিকূন) দ্বিতীয় রাক্’আতে তিলাওয়াত করলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জুমু’আর সালাতে এ দু’টি সূরাহ্ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَن عبيد الله بن أبي رَافع قَالَ: اسْتَخْلَفَ مَرْوَانُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَلَى الْمَدِينَةِ وَخَرَجَ إِلَى مَكَّةَ فَصَلَّى لَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْجُمُعَةَ فَقَرَأَ سُورَةَ (الْجُمُعَةِ)
فِي السَّجْدَةِ الْأُولَى وَفِي الْآخِرَة: (إِذا جَاءَك المُنَافِقُونَ)
فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقْرَأ بهما يَوْم الْجُمُعَة. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقْرَأُ بِهِمَا ) ‘‘আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জুমু‘আর দিন এ সূরাহ্ দু’টি তিলাওয়াত করতে শুনেছি।’’ অর্থাৎ- রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতে প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ জুমু‘আহ্ এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ মুনা-ফিকূন তিলাওয়াত করেছেন। তাই আমিও জুমু‘আর সালাতে এ সূরাহ্ দু’টি দু’ রাক্‘আতে তিলাওয়াত করলাম।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪০-[১৯] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ ঈদে ও জুমু’আর সালাতে সূরাহ্ ’’সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-’’ (সূরাহ্ আল আ’লা-) ও ’’হাল আতা-কা হাদীসুল গ-শিয়াহ্’’ (সূরাহ্ আল গ-শিয়াহ্) তিলাওয়াত করতেন। আর ঈদ ও জুমু’আহ্ একদিনে হলে, এ দু’টি সূরাহ্ তিনি দু’ সালাতেই পড়তেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ وَفِي الْجُمُعَةِ بِ (سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى)
و (هَل أَتَاك حَدِيث الغاشية)
قَالَ: وَإِذَا اجْتَمَعَ الْعِيدُ وَالْجُمُعَةُ فِي يَوْمٍ وَاحِدٍ قَرَأَ بِهِمَا فِي الصَّلَاتَيْنِ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ وَفِي الْجُمُعَةِ بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلى وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ) ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ ঈদের সালাতে এবং জুমু‘আর সালাতে ‘‘সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ‘লা-’’ এবং ‘‘হাল আতা-কা হাদীসুল গ-শিয়াহ্’’ সূরাহদ্বয় পাঠ করতেন।’’ অর্থাৎ- প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ আল আ‘লা- এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ আল গ-শিয়াহ্ পাঠ করতেন।
অত্র অধ্যায়ের হাদীসগুলো দ্বারা এটা সাব্যস্ত হলো যে, ইমামের জন্য সুন্নাত পদ্ধতি এই যে, তিনি জুমু‘আর সালাতে প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ আল জুমু‘আহ্ এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ আল মুনা-ফিকূন অথবা প্রথম রাক্‘আতে সূরাহ্ আ‘লা এবং দ্বিতীয় রাক্‘আতে সূরাহ্ আল গ-শিয়াহ্ পাঠ করবেন। এটাই জমহূর ‘উলামাগণের অভিমত। ইমাম আবূ হানীফাহ্ এবং তার অনুসারীগণ বলেন যে, ঈদে এবং জুমু‘আর সালাতে ইমাম সাহেব সূরাহ্ আল ফাতিহাহ্ পাঠ করার পর যে কোন সূরাহ্ স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী পাঠ করবেন। যদি অধিকাংশ সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণে এ সূরাহগুলো পাঠ করেন তবে তা ভাল। কিন্তু সর্বদাই শুধু এ সূরাহগুলো পাঠ করবেন না বরং কোন কোন সময় অন্যান্য সূরাহ্ও পাঠ করবেন। যাতে অন্যান্য সূরাহ্ পাঠ করা পরিত্যাগ করা লাযিম না হয়ে যায় এবং সাধারণ জনগণ মনে না করেন যে, ঈদের সালাতে এবং জুমু‘আর সালাতে শুধুমাত্র এ সূরাহগুলোই পাঠ করতে হয়। অর্থাৎ- তাদের মতে ঈদ ও জুমু‘আর সালাতে এ সূরাহগুলো পাঠ করা সুন্নাত নয়। তবে জমহূরের অভিমতই সঠিক। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ইবনু রুশদ এবং ইবনু ‘আবদুল বার (রহঃ) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্র অধ্যায়ে বর্ণিত সূরাহ্ ব্যতীত ঈদে ও জুমু‘আতে অন্য সূরাহ্ পাঠ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। অতএব এ সূরাহগুলো পাঠ করাই সুন্নাত।
পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে ক্বিরাআতের বর্ণনা
৮৪১-[২০] ’উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ)বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) একবার আবূ ওয়াক্বিদ আল্ লায়সী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ ঈদের সালাতে কি পাঠ করতেন? রাবী বলেন, তিনি উভয় ঈদের সালাতেই ’’ক্বাফ ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ’’ (সূরাহ্ ক্বাফ) ও ’’ইক্বতারাবাতিস সা-’আহ্’’ (সূরাহ্ আল ক্বামার) তিলাওয়াত করতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْقِرَاءَةِ فِى الصَّلَاةِ
وَعَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ: أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ سَأَلَ أَبَا وَاقِدٍ اللَّيْثِيَّ: (مَا كَانَ يَقْرَأُ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْأَضْحَى وَالْفِطْرِ؟ فَقَالَ: كَانَ يَقْرَأُ فِيهِمَا: ب (ق وَالْقُرْآن الْمجِيد)
و (اقْتَرَبت السَّاعَة)
رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: উপরে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস পরস্পর বিপরীত বর্ণিত হয়েছে। মূলত এটা বৈপরীত্য নয়। কারণ আমরা পূর্বেই বলেছি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় একই সালাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সূরাহ্ পাঠ করেছেন এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ অবগতি অনুসারে বর্ণনা করেছেন। ‘উমার (রাঃ) অবশ্য জানতেন যে, মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ ঈদে কি পড়েছেন তবুও লোকেদের সম্মুখে প্রমাণের উদ্দেশে প্রশ্ন করেছেন।