পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
এ অধ্যায়ে সুতরার বর্ণনা এসেছে। আর সুতরাহ্ (সুতরা) হলো, সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী তার সামনে যা পুঁতে রাখে। সেটা লাঠি অথবা তীর অথবা অন্য কিছু হতে পারে। এটা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো, সালাত আদায়কারীর সাজদার জায়গার ভেতর দিয়ে যাতে কেউ যাতায়াত না করে এবং মুসল্লীর দৃষ্টি এর বাইরে না যায়। ইবনুল হুমাম ফাতহুল কাদীরে উল্লেখ করেন, সুতরার উদ্দেশ্য হলো সালাত আদায়কারীর মনোযোগকে একনিষ্ঠ করে রাখা।
৭৭২-[১] (’আবদুল্লাহ) ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে ঈদগাহে চলে যেতেন। যাবার সময় তাঁর সাথে একটি বর্শা নিয়ে যাওয়া হতো। এ বর্শা সামনে রেখে তিনি সালাত আদায় করতেন। (বুখারী)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْدُو إِلَى الْمُصَلَّى وَالْعَنَزَةُ بَيْنَ يَدَيْهِ تُحْمَلُ وَتُنْصَبُ بِالْمُصَلَّى بَيْنَ يَدَيْهِ فَيصَلي إِلَيْهَا. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘আনাযাহ্ বলা হয় সুতরাকে, যা লাঠির চেয়ে লম্বা এবং তীরের চেয়ে খাটো। এটাকে মুসল্লার সামনে পুঁতে রাখা হয়। এটা মুসল্লার সামনে থাকে। বুখারীর রিওয়ায়াতে এসেছে, ঈদের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে সুতরাহ্ (সুতরা) রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং তিনি এ সুতরাকে তাঁর সামনে পুঁতে রাখতেন। উল্লেখ্য যে, সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সামনে পুঁতে রাখা হয় এমন লম্বা জিনিসকেই সুতরাহ্ বলে। যদিও তা ছোট হয়। আর এ সুত্রার সামনে দিয়ে অন্যান্য লোকের যাতায়াত করাতে কোন অসুবিধা নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৩-[২] আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার মক্কার ’আবত্বাহ’ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে একটি চামড়ার লাল তাঁবুতে দেখতে পেলাম। বিলালকে দেখলাম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উযূ (ওযু/ওজু/অজু)-র পানি হাতে তুলে নিতে। আর (অন্যান্য) লোকেদেরকে দেখলাম উযূর অবশিষ্ট পানি নিবার জন্য কাড়াকাড়ি করছে। যারা তাঁর ব্যবহারের অবশিষ্ট উযূর পানি আনতে পেরেছে তারাই তা’ বারাকাতের জন্যে সারা শরীর ও মুখমণ্ডল ে মাখছে। আর যারা উযূর পানি আনতে পারেনি তারা সঙ্গী সাথীদের (যারা পানি পেয়েছে) ভিজা হাত স্পর্শ করছে। এরপর আমি বিলালকে দেখলাম, হাতে একটি বর্শা নিল ও তা মাটিতে পুঁতে দিল। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এলেন। কাপড়ের কিনারা সামলে লোকদেরকে নিয়ে দুই রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সে বর্শাটি তখন তাঁর সামনে ছিল। এ সময় মানুষ ও জন্তু-জানোয়ারকে দেখলাম বর্শার বাইরে দিয়ে যাতায়াত করছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَن أَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ وَهُوَ بِالْأَبْطَحِ فِي قُبَّهٍ حَمْرَاءَ مِنْ أَدَمٍ وَرَأَيْتُ بِلَالًا أَخَذَ وَضُوءَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَأَيْتُ النَّاسَ يبتدرون ذَاك الْوَضُوءَ فَمَنْ أَصَابَ مِنْهُ شَيْئًا تَمَسَّحَ بِهِ وَمن لم يصب مِنْهُ شَيْئا أَخَذَ مِنْ بَلَلِ يَدِ صَاحِبِهِ ثُمَّ رَأَيْتُ بِلَالًا أَخَذَ عَنَزَةً فَرَكَزَهَا وَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مُشَمِّرًا صَلَّى إِلَى الْعَنَزَةِ بِالنَّاسِ رَكْعَتَيْنِ وَرَأَيْت النَّاس وَالدَّوَاب يَمرونَ من بَين يَدي العنزة
ব্যাখ্যা: ‘‘বুত্হান’’ হলো মক্কা ও মদীনায় মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম। মিনার মাঠ থেকে বন্যা এসে এখানে থামে। এটা মক্কায় অনেকটা কাছাকাছি। সেখানে ছোট ছোট পাথর পাওয়া যায়।
এ হাদীস থেকে যে বিষয়টি প্রমাণিত হয় সেটি হচ্ছে ব্যবহৃত পানি পবিত্র এবং এটা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খাস নয়। আরো জানা গেল, সালাতের জামা‘আতে শুধু ইমামের সামনে সুতরাহ্ থাকাই যথেষ্ট। তাহলে এর সামনে দিয়ে যাতায়াতে সালাতের কোন ক্ষতি হয় না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৪-[৩] নাফি’ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খোলা জায়গায় সালাত আদায় করলে) নিজের উটকে সামনে আড়াআড়িভাবে বসিয়ে উটের দিকে মুখ করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারীর বর্ণনায় এ কথাও রয়েছে যে, নাফি’ বলেন, আমি ইবনু ’উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, উট মাঠে চরাতে গেলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন কি করতেন? উত্তরে ইবনু ’উমার (রাঃ) বলেন, তখন তিনি উটের ’হাওদা’ নিতেন এবং হাওদার পিছনের ডাণ্ডাকে সামনে রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন।[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَنْ نَافِعٍ عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعَرِّضُ رَاحِلَتَهُ فَيصَلي إِلَيْهَا. وَزَادَ الْبُخَارِيُّ قُلْتُ: أَفَرَأَيْتَ إِذَا هَبَّتِ الرِّكَابُ. قَالَ: كَانَ يَأْخُذُ الرَّحْلَ فَيُعَدِّلُهُ فَيُصَلِّي إِلَى آخرته
ব্যাখ্যা: সওয়ারীকে সামনে রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, অর্থাৎ- সওয়ারীকে তিনি ক্বিবলার দিকে তাঁর সামনে বসিয়ে দিতেন। যাতে কোন ব্যক্তির চলাচলের ক্ষেত্রে সুতরাহ্ (সুতরা) হিসেবে কাজ করে।
আয্ যাহাবী বলেনঃ সওয়ারী পুরুষ হোক বা স্ত্রী হোক এ কাজে ব্যবহার করা যাবে। এ হাদীস থেকে আরো জানা গেল যে, পশু-পাখীর মুখোমুখি হয়ে সালাত আদায় করা জায়িয এবং উটের নিকটবর্তী হয়েও সালাত আদায় করা জায়িয।
মুসল্লীর সামনে দিয়ে গমন করার পরিমাণ হলো যতদূর পর্যন্ত মুসল্লীর দৃষ্টি যায় ক্বিবলার দিক থেকে ততটুকু ভিতর দিয়ে গমন না করা।
শাফি‘ঈ ও হাম্বালীগণ বলেন, এর পরিমাণ হলো ৩ হাত আর এ গমন নিষিদ্ধ হবে তখন যখন মুসল্লীর সামনে দিয়ে কেটে যাওয়া হবে। কেউ যদি মুসল্লীর পাশ দিয়ে ক্বিবলার দিকে যায় তবে তা নিষিদ্ধ নয়।
আর এ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে। কেউ যদি বসে থাকে অথবা শুয়ে থাকে তবে তা নিষেধের আওতায় আসবে না।
আর এ নিষেধাজ্ঞা সকল মুসল্লীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফরয, নফল যাই হোক না কেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৫-[৪] ত্বলহাহ্ (রাঃ) ইবনু ’উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার সময় হাওদার পিছনের দিকে লাঠির মতো কোন কিছু সুতরাহ্ বানিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সালাত আদায় করবে। এরপর তার সামনে দিয়ে কে এলো আর গেল তার কোন পরোয়া করবে না। (মুসলিম)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَنْ طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا وَضَعَ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ مِثْلَ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ فَليصل وَلَا يبال من مر وَرَاء ذَلِك» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: মুসল্লী ব্যক্তি সুতরার নিকটবর্তী হয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে আর সুতরার সামনে দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করলে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না উক্ত হাদীসে এ কথাই বুঝানো হয়েছে।
বিলাল (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বায় সালাত আদায় করলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁর ও কা‘বার দেয়ালের মধ্যে মাত্র তিন গজ দূরত্ব ব্যবধান ছিল।
সুতরাং মুসল্লী সুত্রার কাছাকাছি গিয়ে সালাত আদায় করবে। অনুরূপভাবে দু’ কাতারের মধ্যবর্তী স্থানেও ফাঁকা থাকবে। অর্থাৎ- মুসল্লী যাতে স্বাভাবিকভাবে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিতে পারে এতটুকু দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৬-[৫] আবূ জুহায়ম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারী ব্যক্তির সামনে দিয়ে যাতায়াতকারী এতে কি গুনাহ হয়, যদি জানতো তাহলে সে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর সামনে দিয়ে যাতায়াত অপেক্ষা চল্লিশ..... পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করতো। এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ নাযর বলেন, ঊর্ধ্বতন রাবী চল্লিশ দিন অথবা চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বছর বলেছেন তা আমার মনে নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَن أبي جهيم قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ» . قَالَ أَبُو النَّضر: لَا أَدْرِي قَالَ: «أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَو سنة»
ব্যাখ্যা: মুসল্লীর সাজদার সম্মুখে চলাফেরা করা নিষেধ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি সাজদার স্থানের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করবে সেই এ ধমকির আওতায় পড়বে। সাজদার স্থান দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ স্থান পর্যন্ত যেখানে মুসল্লী সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিবে। তার ভিতর দিয়ে সুতরাহ্ (সুতরা) বা আড়াল ছাড়া অতিক্রম করলে সে এ ধমকির আওতায় পড়ে যাবে। বিনয়ীভাবে তাকালে যে স্থানটুকু দৃষ্টিতে পড়বে ততটুকু সাজদার স্থান। সাজদার স্থান সে স্থানটুকু হতে পারে যা সিজদা্ (সিজদা/সেজদা), ক্বিয়াম (কিয়াম) ও রুকূ‘ করতে ব্যবহৃত হয়। তার ভিতর থেকে অতিক্রম করলে সেও এ ধমকির আওতায় পড়ে যাবে। তার ভিতর হাঁটাহাঁটি করা নিষেধ।
আন্তরিক বিনয়ীভাবে সালাত আদায় করতে যতদূর দৃষ্টি যায় ততটুকু সাজদার স্থান আল্লাহই ভালো জানেন। হাদীসে উল্লিখিত ৪০ দ্বারা ৪০ বছর বা ৪০ দিন বা ৪০ মাস উদ্দেশ্য নয়। কিছ সংখ্যক মুহাদ্দিসের মতে এখানের সংখ্যা সীমাবদ্ধতা উদ্দেশ্য নয়। বরং অনির্দিষ্টকাল উদ্দেশ্য। যেমন আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত (لَكَنْ اَنْ يِّقِفَ مِاءَةُ عَامٍ خَيْرًا لَّه مِنَ الْخُطْوَةِ الَّتِىْ خَطَاهَا) বুঝা গেল, সাজদার স্থান থেকে অতিক্রম করা শক্ত গুনাহ, কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। সেটা থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৭-[৬] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন কেউ কিছুর আড়াল দিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) শুরু করে, আর কেউ আড়ালের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে চায় তাকে বাধা দিবে। সে বাধা অমান্য করলে তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কারণ চলাচলকারী (মানুষের আকৃতিতে) শায়ত্বন (শয়তান)। এ বর্ণনাটি বুখারীর। মুসলিমেও এ মর্মে বর্ণনা আছে।[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنَ النَّاسِ فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَدْفَعْهُ فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ» . هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ وَلمُسلم مَعْنَاهُ
ব্যাখ্যা: এখানে আড়াল দ্বারা সুতরাকে বুঝানো হয়েছে। তাই যে মুসল্লীর সামনে কোন সুতরাহ্ (সুতরা) নেই সেক্ষেত্রে বাধা দেয়া বা মারামারি করা যৌক্তিক নয়।
ইমাম নাবাবী বলেন, এসব ঐ ব্যক্তির জন্য যে সালাতে অবহেলা করে না বরং সতর্কতা অবলম্বন করে এবং সুতরার সামনে সালাত আদায় করে। অথবা এমন স্থানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে যেখানে তার সম্মুখ দিয়ে কেউ যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৮-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারী, গাধা ও কুকুর সালাত (সামনে দিয়ে অতিক্রম করে) নষ্ট করে। আর এর থেকে রক্ষা করে হাওদার (পেছনে দন্ডায়মান) ডাণ্ডার ন্যায় কিছু বস্ত্ত। (মুসলিম)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَقْطَعُ الصَّلَاةَ الْمَرْأَةُ وَالْحِمَارُ وَالْكَلْبُ. وَيَقِي ذَلِك مثل مؤخرة الرحل» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ তিনটি ফাসিদ করে দেয় অথবা মনোযোগ নষ্ট করে দেয়, যার কারণে সালাতের সাওয়াব কমে যায়। আর এটা তখন হয় যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর সম্মুখে কোন সুতরাহ্ (সুতরা) থাকে না।
মহিলা বলতে ঐ নারীকে বুঝানো হয়েছে যার মাসিক হয়, অর্থাৎ- সে এমন বয়সে পৌঁছেছে যে বয়স হলে হায়িয হয়। আর এ বিধান اَلْمَرْأَةُ শব্দ থেকেই বের হয়ে আসে। তাই কোন নাবালিকা মেয়ে যদি সালাত আদায়কারীর সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করে তবে তার সালাত নষ্ট হবে না।
সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে কুকুর যাতায়াত করলে সালাত ফাসিদ হয়ে যায়। অন্য হাদীসে কুকুর বলতে কালো কুকুরকে বুঝানো হয়েছে।
গাধা, কাফির, কুকুর ও মহিলা - এদের মধ্যে কেউ সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে গেলে সালাত নষ্ট হয়ে যায়, এ মর্মে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যাদের সকলেই নির্ভরযোগ্য। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো একটি হাদীস এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে যে, لَا يَقْطَعُ الصَّلَاةَ شَيْءٌ।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৭৯-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আমি তাঁর ও ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র মাঝখানে শুয়ে থাকতাম আড়াআড়িভাবে লাশ পড়ে থাকার মতো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ وَأَنَا مُعْتَرِضَةٌ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ كَاعْتِرَاضِ الْجَنَازَةِ
ব্যাখ্যা: (كَاعْتِرَاضِ) অর্থাৎ ঐ জিনিসকে বলা হয় যা দু’ বস্ত্তর মধ্যে আড়াল সৃষ্টি করে। এখানে এর অর্থ হবে শুয়ে ঘুমানো। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডান পাশে থেকে উত্তর দিকে সামনে আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতেন যেমনটি জানাযার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে মুসল্লীর সামনে রাখা হয়। ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর একটি রিওয়ায়াতের মধ্যে উল্লেখ আছে যে, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সামনে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে যায় এমন বিষয়ের আলোচনায় বলা হলো যে, মহিলা, কুকুর ও গাধা সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করলে সালাত বাতিল তথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন যে, তোমরা অবশ্য আমাদেরকে কুকুরের অন্তর্ভুক্ত করেছ। আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা আমাদেরকে কুকুরের সাথে সাদৃশ্য করেছো। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আদায় করতে দেখেছি এমতাবস্থায় আমি খাটের উপর তার ও ক্বিবলার মাঝে আড়াআড়ি হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কেউ আড়াআড়ি শুয়ে থাকলে সালাত বাতিল হবে না।
এটাই জমহূর ইমামদের অভিমত অর্থাৎ- ইমাম আবূ হানীফাহ্, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ, শাফি‘ঈ, মালিক প্রমুখ ও অন্যান্য ফিকহবিদদের মতামত এই যে, সালাত আদায়কারী লোকের সম্মুখ দিয়ে যা কিছু অতিক্রম করুক না কেন তাতে সালাত নষ্ট হবে না। তবে ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন যে, কালো কুকুর অতিক্রম করলে সালাত বিনষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মহিলা ও গাধা অতিক্রম করাতে সালাত নষ্ট হবে কি হবে না তা নিয়ে আমি দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি।
আহলে জাওয়াহিরগণ বলেন যে, মহিলা কুকুর ও গাধা সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বাতিল হয়ে যাবে চাই সামনে থাকুক বা সামনে থেকে অতিক্রম করুক। আর এগুলো ছোট হোক বা বড় হোক জীবিত হোক বা মৃত হোক সকল অবস্থাতেই সালাত নষ্ট হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই মত তবে মুমূর্ষু বা বেহুশ অবস্থায় থাকলে সালাত বিনষ্ট হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৮০-[৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি একটি মাদি গাধার উপর আরোহণ করে এলাম। তখন আমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার উপক্রম হয়ে গেছি। এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় অন্যান্য লোকজনসহ কোন দেয়ালের আড়াল ছাড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। আমি কাতারের এক পাশের সামনে দিয়ে চলে গেলাম। এরপর গাধাটাকে চরাবার জন্য ছেড়ে দিয়ে আমি কাতারে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমার এই কাজে কেউই কোন আপত্তি জানালো না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ السُّتْرَةِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَقْبَلْتُ رَاكِبًا عَلَى أَتَانٍ وَأَنَا يَوْمَئِذٍ قَدْ نَاهَزْتُ الِاحْتِلَامَ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي بِالنَّاسِ بِمِنًى إِلَى غَيْرِ جِدَارٍ فَمَرَرْتُ بَين يَدي الصَّفّ فَنزلت فَأرْسلت الْأَتَانَ تَرْتَعُ وَدَخَلْتُ فِي الصَّفِّ فَلَمْ يُنْكِرْ ذَلِك عَليّ أحد
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে গাধা চলাচল করলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নষ্ট হয় না। আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালকের অজ্ঞতাবশত চলাচল করলেও তা ধর্তব্য নয়। এ দু’টো বিষয় এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়। কেননা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) সময় নাবালক ছিল। তার বয়সের সংখ্যা নিয়ে তিন ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়, কেউ বলেছেন তখন তার বয়স ছিল ১৩ বৎসর। কেউ বলেছেন ১০ বৎসর। কেউ বলেছেন তার বয়স ছিল ১৫ বৎসর। বুঝা গেলো নাবালক অজ্ঞতাবশত চলাচলে কোন অসুবিধা হয় না। আর একটি বিষয় এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর সুতরাহ্ ধর্তব্য হবে। কেননা ইমাম বুখারীর (রহঃ) এ হাদীসটি ‘‘ইমামের সুতরাই মুসল্লীর সুত্রাহ্’’ এ অধ্যায় নিয়ে এসেছেন। আর এ হাদীসটিতে সে বিষয়ের আলোচনা থাকবে। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেয়ালবিহীন ময়দানে সালাত আদায় করছেন। তাঁর অভ্যাস ছিল ময়দানে সালাত আদায় করলে সুতরাহ্ (সুতরা) সামনে রেখে সালাত আদায় করতেন। এখানে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা ইমামের জন্য সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা হয়েছিল। তাই ইমামের পিছনের লোকেদের জন্যে সুতরাহ্ (সুতরা) হলো ইমাম নিজেই।