পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৮-[১৫] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলাম। দেখলাম, তিনি একটি মাদুরের উপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছেন, তার উপরই সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) দিচ্ছেন। তিনি [আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ)] বলেন, আমি দেখলাম তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক কাপড় পরিধান করেই বিপরীত দিক হতে কাঁধের উপর পেঁচিয়ে সালাত আদায় করছেন। (মুসলিম)[1]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَيْتُهُ يُصَلِّي عَلَى حَصِيرٍ يَسْجُدُ عَلَيْهِ. قَالَ: وَرَأَيْتُهُ يُصَلِّي فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ مُتَوَشِّحًا بِهِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাই বা মাদুরের উপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করছিলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাটি এবং মুসল্লীর মাঝে কোন বস্ত্ত যেমন- কাপড়, চাটাই, পশম, চুল বা অন্য কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলেও সালাত বৈধ হবে।
আরো প্রমাণ হয় যে, গরম বা ঠাণ্ডা বা এ জাতীয় কোন সমস্যা ছাড়া মাটির উপর সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা সর্বাধিক উত্তম। কারণ সালাতের নিগুঢ় রহস্য হচ্ছে বিনয়, নম্রতা, নতি ও বশ্যতা স্বীকার করা। আর বিনয়ী হওয়ার জন্য মাটিই অধিকতর উপযোগী।
মুতাওয়াশশিহান অর্থাৎ- কাপড়ের দুই প্রান্ত বিপরীত দিক হতে কাঁধের উপর ফেলে। তাওয়াশশুহ পদ্ধতি হলো, ডান কাঁধের উপর ফেলা কাপড়ের মাথাকে বাম হাতের নিচ দিয়ে এনে এবং বাম কাঁধের উপর ফেলা কাপড়ের মাথাকে ডান হাতের নিচ দিয়ে এনে বুকের উপর বাঁধা। এতে করে কাপড়টা ইযার বা লুঙ্গি এবং চাদরের বিকল্প হয়ে যাবে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৬৯-[১৬] ’আমর ইবনু শু’আয়ব (রহঃ) হতে, তিনি তার পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি [’আবদুল্লাহ (রাঃ)] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খালি পায়ে ও জুতা সহকারে উভয় অবস্থায় সালাত আদায় করতে দেখেছি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي حافيا ومتنعلا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনো খালি পায়ে আবার কখনো জুতা পায়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখেছি।
পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৭০-[১৭] মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের সাথে এক কাপড়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি তা গিরা লাগিয়ে পিছনে ঘাড়ের উপর বেঁধে রেখেছিলেন। তখন তার অন্যান্য কাপড় খুঁটির উপর রাখা ছিল। একজন তাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি এক লুঙ্গিতেই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন (অথচ আপনার আরও কাপড় ছিল)? উত্তরে তিনি বললেন, তোমার মতো আহাম্মককে দেখাবার জন্য আমি এ কাজ করেছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কালে আমাদের কার কাছেই বা দু’টি কাপড় ছিল? (বুখারী)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ قَالَ: صَلَّى جَابِرٌ فِي إِزَارٍ قَدْ عَقَدَهُ مِنْ قِبَلِ قَفَاهُ وثيابه مَوْضُوعَة على المشجب قَالَ لَهُ قَائِلٌ تُصَلِّي فِي إِزَارٍ وَاحِدٍ فَقَالَ إِنَّمَا صَنَعْتُ ذَلِكَ لِيَرَانِيَ أَحْمَقُ مِثْلُكَ وَأَيُّنَا كَانَ لَهُ ثَوْبَانِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: ‘‘আল মিশজাব’’ হলো তিন পায়া বিশিষ্ট তাক অথবা আলনা, যার তিন মাথা একত্রে মিলিত থাকে এবং পায়াগুলোর মাঝে ফাঁকা থাকে। এর উপরে কাপড় রাখা হয়। কখনো তাতে পানি ঠাণ্ডা করার জন্য মশক বা পানির পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হতো।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনা মতে জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তি ছিলেন ‘উবাদাহ্ ইবনুল ওয়ালীদ ইবনু ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি ঘাড়ের উপর ইযার গিট দিয়ে এবং অন্য কাপড় তাকের উপর রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের জন্য করেছি যেন তোমার মতো আহাম্মক ব্যক্তি দেখে শিখতে পারে। এখানে আহাম্মক দ্বারা জাহিল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অজ্ঞ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। এ কথার দ্বারা জানানো হচ্ছে যে, এরূপ করা বৈধ।
হাদীসের শেষ অংশের দ্বারা অর্থ হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সাহাবীগণের অধিকাংশের আর্থিক দৈন্যের পরিচয় মেলে। এজন্যে দু’টি কাপড় সংগ্রহ করে তাতে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় বাধ্যতামূলক ছিল না।
পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - সাত্র (সতর)
৭৭১-[১৮] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা সুন্নাত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমরা এভাবে এক কাপড়েই সালাত আদায় করেছি। তাতে আমাদেরকে দোষারোপ করা হয়নি। এ কথার উপর ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) বললেন, যখন আমাদের কাপড়ের অভাব ছিল তখন এক কাপড়ে সালাত আদায় করা হতো। আল্লাহ তা’আলা এখন আমাদেরকে প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছেন। তাই এখন দুই কাপড়েই সালাত আদায় করা উত্তম। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: الصَّلَاةُ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ سُنَّةٌ كُنَّا نَفْعَلُهُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا يُعَابُ عَلَيْنَا. فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: إِنَّمَا كَانَ ذَاكَ إِذْ كَانَ فِي الثِّيَاب قلَّة فَأَما إِذْ وَسَّعَ اللَّهُ فَالصَّلَاةُ فِي الثَّوْبَيْنِ أَزْكَى. رَوَاهُ أَحْمد
ব্যাখ্যা: এক কাপড়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় সুন্নাহ্, অর্থাৎ- সুন্নাহ দ্বারা অনুমোদিত কিংবা তা অবৈধ নয়, তাতে সালাতের হক আদায় হয়। তবে দুই কাপড়ে সালাত আদায় সর্বোত্তম। এ দু’টোর মধ্যে বিরোধ নেই।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘উদ (রাঃ) বলেন, যখন কাপড় কম থাকে তখন এক কাপড়ে সালাত আদায় মাকরূহ নয়। আর যখন আল্লাহ অধিক কাপড় দ্বারা স্বচ্ছলতা দান করেছেন তখন দুই কাপড়ে অর্থাৎ- ইযার এবং চাদর অথবা জামা এবং ইযার বা পাজামা পরিধান করে সালাত আদায় অধিকতর উপযোগী, শ্রেষ্ঠতর বা সর্বোত্তম সাওয়াবের। তাছাড়া আল্লাহ যাকে স্বচ্ছলতা দান করেছেন, তার পোশাকে স্বচ্ছলতার সাথে বিনয় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মনোভাব থাকা উচিত।