পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৮১-[১০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে সে যেন তার সামনে কিছু গেড়ে দেয়। কিছু যদি না পায় তাহলে তার লাঠিটা যেন দাঁড় করিয়ে দেয়। যদি তার সাথে লাঠিও না থাকে, তাহলে যেন সামনে একটা রেখা টেনে দেয়। এরপর তার সামনে দিয়ে কিছু যাতায়াত করলে তার কোন ক্ষতি হবে না। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ شَيْئًا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيَنْصِبْ عَصَاهُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ مَعَهُ عَصَى فَلْيَخْطُطْ خَطًّا ثُمَّ لَا يَضُرُّهُ مَا مَرَّ أَمَامه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: যে ব্যক্তি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের ইচ্ছা পোষণ করবে সে সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করবে। তবে সুতরার জন্যে নির্দিষ্ট প্রকার, ধরণ হওয়া জরুরী নয়। বরং সালাত আদায়কারীর সম্মুখে যে দণ্ড দাঁড় করিয়ে রাখা হয় সেটাই সুতরাহ্ (সুতরা)। একাকি হোক বা জামা‘আতের সাথে সর্বাবস্থায় সুতরাহ্ (সুতরা) আবশ্যক। জামা‘আতের সাথে সালাত হলে শুধু ইমামের সামনে সুতরাহ্ (সুতরা) থাকলে যথেষ্ট হবে। তাতে প্রত্যেক মুসল্লীর সামনে সুতরাহ্ (সুতরা) থাকা আবশ্যক নেই। কেননা সুতরাহ্ (সুতরা) পরিহার করা মাকরূহে তানযীহ। যদি এমন হয় যে, কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে রেখা টেনে সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করার ব্যাপারে ইমামদের মতান্তর রয়েছে: ইমাম শাফি‘ঈর পূর্বের মত ও ইমাম আহমাদের মতানুসারে এবং পরবর্তীকালে হানাফী ইমামদের মতানুসারে সুতরাহ্ (সুতরা) হিসেবে রেখা টেনে দেয়া যথেষ্ট। তবে রেখা টানার ধরণ নিয়ে মতপার্থক্য আছে।
* ইমাম আহমাদ বলেনঃ নতুন চাঁদের ন্যায় তীরের মতো সোজা।
* কেউ কেউ বলেনঃ কিবলার দিকের লম্বা করে লাইন টেনে দেবে একেবারে সোজা করে।
* আবার কারো মতে ডানে-বামে আড়াআড়িভাবে লাইন টানতে হবে।
তবে এ তিনটি অভিমতের মধ্যে প্রথমটি উত্তম। ইমাম শাফি‘ঈর পরবর্তী মত, ইমাম মালিক ও হানাফী মাশায়েখদের মতে রেখা টানার কোন লাভজনক গুরুত্ব নেই। একদিকে তারা এ হাদীসকে য‘ঈফ মনে করেন, অপরদিকে অন্য হাদীসের সাথে বিরোধও দেখছেন। ইমাম হুমাস বলেন, রেখা টানা এজন্যে জায়িয আছে যে, এ সম্পর্কে হাদীস উল্লেখ আছে। সুতরাং হাদীসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এর উপর ‘আমল করা উচিত, যদিও এ রেখাটায় অতিক্রমকারীকে নিবৃত করার জন্যে যথেষ্ট নয় তবুও মনের সান্তবনার জন্যে এবং নিজের খেয়ালকে সংযত করার জন্যে এটা অবশ্যই উপকারী। উল্লেখ্য যে, সালাত আদায়কারী তার সম্মুখে একটি ছড়ি বা লাঠি পুঁতে দেয়া মুস্তাহাব, সালাত আদায়কারীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করলে গমনকারীর মারাত্মক গুনাহ হবে, তবে কা‘বাহ্ শরীফে সব সময় মানুষের ভিড় জমে থাকে, তাই হেরেম শরীফে সালাত আদায়ের সময় সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করলে গুনাহ হবে না। অবশ্য ভিড় না থাকলে অতিক্রম করা জায়িয হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৮২-[১১] সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সুতরাহ্ (সুতরা) দাঁড় করিয়ে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলে সে যেন সুতরার কাছাকাছি দাঁড়ায়। তাহলে শায়ত্বন (শয়তান) তার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নষ্ট করতে পারবে না। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَن سهل بن أبي حثْمَة قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى سُتْرَةٍ فَلْيَدْنُ مِنْهَا لَا يَقْطَعِ الشَّيْطَانُ عَلَيْهِ صَلَاتَهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে যখন সুতরাহ্ (সুতরা) রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন একেবারে সোজাসোজি নাক বরাবর রাখতেন না। তিনি ডানে বা বামে রাখতেন। তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা কেউ সুতরার অন্তরালের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করবে তখন সুতরার কাছাকাছি দাঁড়াবে। ‘আল্লামা বাগাবী (রাঃ) বলেনঃ আহলে ‘ইলমদের নিকট সালাত আদায়কারী ও সুতরার মাঝে সাজদার স্থান পরিমাণ দূরত্ব রাখা মুস্তাহাব।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সম্মুখে সুতরাহ্ (সুতরা) রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন তা একেবারে সোজাসুজি নাক বরাবর রাখতেন না। মূর্তি পূজার সাথে সাদৃশ্য হতে বাঁচার জন্যে তিনি এরূপ করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৮৩-[১২] মিক্বদাদ ইবনু আসওয়াদ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনও কোন কাঠ, স্তম্ভ অথবা কোন গাছকে (সোজাসুজি) সামনে রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতে দেখিনি। যখনই দেখেছি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এগুলোকে নিজের ডান ভ্রূ অথবা বাম ভ্রূর সোজাসুজি রেখেছেন। নাক বরাবর সোজা রাখেননি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ الْمِقْدَادِ بْنِ الْأَسْوَدِ قَالَ: مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي إِلَى عُودٍ وَلَا عَمُودٍ وَلَا شَجَرَةٍ إِلَّا جَعَلَهُ عَلَى حَاجِبِهِ الْأَيْمَنِ أَوِ الْأَيْسَرِ وَلَا يصمد لَهُ صمدا. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: মহানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সম্মুখে সুতরাহ্ (সুতরা) রেখে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন তখন তা একেবারে সোজাসুজি নাক বরাবর রাখতেন না। এ হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, ডানে বা বামে সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা মুস্তাহাব। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেনঃ নাসায়ীর এক রিওয়ায়াত রয়েছে যে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন দেয়াল, পিলার অথবা অন্য কোন কিছুকে অন্তরায় করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে তখন সে যেন তা সামনে না রেখে বরং বামদিকে রাখে।’’
বাম পাশে সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা ডান পাশে স্থাপন করার চেয়ে উত্তম এবং বাম দিকে ফিরিয়ে দেবে যাতে ঐ শায়ত্বনের (শয়তানের) অন্তরায় হয়ে যায় যে শায়ত্বন (শয়তান) বামে অবস্থিত থাকে। মূর্তি পূজার সাথে সাদৃশ্য হতে বাঁচার জন্যে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরূপ করতেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৮৪-[১৩] ফাযল ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে তাশরীফ আনলেন। আর আমরা তখন বনে অবস্থান করছিলাম। তাঁর সাথে ছিলেন আমার পিতা ’আব্বাস (রাঃ)নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ময়দানে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন, সামনে কোন আড়াল ছিল না। সে সময় আমাদের একটা গাধী ও একটি কুকুর তাঁর সামনে খেলাধূলা করছিল। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদিকে কোন দৃষ্টিই দিলেন না। (আবূ দাঊদ; নাসায়ীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন)[1]
وَعَنِ الْفَضْلِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: أَتَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِي بَادِيَةٍ لَنَا وَمَعَهُ عَبَّاسٌ فَصَلَّى فِي صَحْرَاءَ لَيْسَ بَيْنَ يَدَيْهِ سُتْرَةٌ وَحِمَارَةٌ لَنَا وَكَلْبَةٌ تعبثان بَين يَدَيْهِ فَمَا بالى ذَلِك. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وللنسائي نَحوه
ব্যাখ্যা: এ হাদীস প্রমাণ করছে যে, সামনে সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা ওয়াজিব নয়। বরং সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা মুস্তাহাব। সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করার ব্যাপারে তিন প্রকার বক্তব্য রয়েছে-
[১] সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা ওয়াজিব।
[২] ইমাম শাফি‘ঈ ও ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেন, সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা মুস্তাহাব।
[৩] ইমাম মালিক (রহঃ) বলেন, সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করা না করা কোনটাই ওয়াজিব নয়। পরিত্যাগ করলে কোন অপরাধ হবে না।
এ ব্যাপারে দু’ ধরনের বক্তব্য এসেছে যেখানে লোকজন চলাচল থেকে নিরাপদ সেখানে সুতরাহ্ (সুতরা) স্থাপন করার কোন নিয়ম নেই। আর যদি লোকজন চলাচলের সম্ভাবনা থাকে সেখানে আমাদের ‘উলামাগণ সুতরাহ্ (সুতরা) রাখার গুরুত্ব দিয়েছে।
গাধা ও কুকুরের খেলা এবং সামনে দিয়ে যাতায়াত করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। স্থানটি ছিল জঙ্গল। ফলে সে স্থান দিয়ে মানুষ বা অন্য কিছুর আসা-যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না বিধায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করে থাকতে পারেন। তাছাড়া এ কাজ তাঁর জন্য খাস হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন।
পরিচ্ছেদঃ ৯. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সালাতে সুতরাহ্ (সুতরা)
৭৮৫-[১৪] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন কিছুই সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) নষ্ট করতে পারে না। এরপরও সালাতের সম্মুখ দিয়ে কিছু যাতায়াত করলে সাধ্য অনুযায়ী তাকে বাধা দিবে। নিশ্চয়ই তা শায়ত্বন (শয়তান)। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَقْطَعُ الصَّلَاةَ شَيْء وادرؤوا مَا اسْتَطَعْتُمْ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: সুতরাহ্ (সুতরা) ছাড়া সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়কারীর সামনে থেকে কোন জিনিস অতিক্রম করলে সালাতকে ফাসিদ করতে পারে না। এটাই তার স্পষ্ট প্রমাণ। ‘‘কোন কিছুই সালাত নষ্ট করতে পারে না’’- এর মর্ম এমন হতে পারে যে, সালাতের কোন রুকন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তবে সালাতে একাগ্রতা বিনষ্টের রক্ষাকবচ হিসেবে সুতরাহ্ (সুতরা) ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে।