পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৩-[১০] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় প্রবেশকালে নিজের হাতের আংটি খুলে রাখতেন। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও তিরমিযী।[1] ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, হাদীসটি ’মুনকার’; অধিকন্তু তিনি ’খুলে রাখতেন’ এর পরিবর্তে ’রেখে দিতেন’ বলেছেন।

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ نَزَعَ خَاتَمَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
وَقَالَ أَبُو دَاوُدَ: هَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ. وَفِي رِوَايَتِهِ وَضَعَ بَدَلَ نزع

عن انس قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا دخل الخلاء نزع خاتمه. رواه ابو داود والنساىي والترمذي وقال: هذا حديث حسن صحيح غريب وقال ابو داود: هذا حديث منكر. وفي روايته وضع بدل نزع

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতীয়মান হয়-

* প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময় আল্লাহর যিকর সম্বলিত সকল বস্ত্তকে দূরে রাখতে হবে। আর কুরআনের অবস্থান তো সবার উপরে। এমনকি বলা হয়েছে বিনা প্রয়োজনে পায়খানায় মুসাহাফ প্রবেশ করানোও হারাম।

* ‘আল্লামা আমীর আল ইয়ামানী বলেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে ‘‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’’ অঙ্কিত তাঁর আংটি খুলে রাখতেন যার কারণটিও সর্বজনবিদিত আর তা হলো আল্লাহর যিকর সম্বলিত সকল বস্ত্তকে অপবিত্র স্থান থেকে দূরে রাখা, শুধু আংটিই নয়।

* ‘আল্লামা ত্বীবী (রাহঃ) বলেনঃ আল্লাহ, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কুরআনের নাম সম্বলিত কোন বস্তু টয়লেট পেপার হিসেবে ব্যবহার করা হারাম।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৪-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানায় যেতে ইচ্ছা করতেন, তখন এত দূরে চলে যেতেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ الْبَرَازَ انْطَلَقَ حَتَّى لَا يرَاهُ أحد. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن جابر قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا اراد البراز انطلق حتى لا يراه احد. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে সে সকল মাস্আলাহ্ সাব্যস্ত হয়, তা হলোঃ প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময় জনসম্মুখ থেকে অনেক দূরে যাওয়াই শারী‘আতসম্মত তা জমিনের এমন স্থান হবে যেখান দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে না। এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলোঃ

* প্রাচীর বেষ্টনির মাধ্যমে মানব চক্ষুকে আড়াল করা বা কাপড় জাতীয় কোন আবরণের মাধ্যমে আড়াল করা বা খাল, গর্তের অভ্যন্তরে যাওয়ার মাধ্যমে আড়াল করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৫-[১২] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। তিনি প্রস্রাব করার ইচ্ছা করলে একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে নরম জায়গায় প্রস্রাব করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব করতে ইচ্ছা করলে এরূপ নরম স্থান খোঁজ করবে (যাতে শরীরে প্রস্রাবের ছিটা না আসে)। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَأَرَادَ أَنْ يَبُولَ فَأَتَى دَمِثًا فِي أَصْلِ جِدَارٍ فَبَال ثُمَّ قَالَ: «إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يَبُولَ فليرتد لبوله» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن ابي موسى قال: كنت مع النبي صلى الله عليه وسلم ذات يوم فاراد ان يبول فاتى دمثا في اصل جدار فبال ثم قال: «اذا اراد احدكم ان يبول فليرتد لبوله» . رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রস্রাবকারীর জন্য অনুপযুক্ত শক্তভূমি পরিত্যাগ করে নরমভূমিতে গমন করা উচিত যাতে প্রস্রাবের সময় তার ছিটা এসে অপবিত্র না হয়। دَمِسٌ (দামিস) সে নরমভূমি যা প্রস্রাব চুষে নেয় ফলে পেশাবকারীর উপর ছিটা আসে না।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৬-[১৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব-পায়খানার সময় নির্দিষ্ট স্থানের কাছাকাছি যাওয়ার পরই কাপড় উঠাতেন (অর্থাৎ- বসার সময়ে উঠাতেন, তার পূর্বে নয়)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَرَادَ الْحَاجَةَ لَمْ يَرْفَعْ ثَوْبَهُ حَتَّى يَدْنُوَ مِنَ الأَرْض. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد والدارمي

وعن انس رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا اراد الحاجة لم يرفع ثوبه حتى يدنو من الارض. رواه الترمذي وابو داود والدارمي

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পেশাব বা পায়খানা করার জন্য বসার ইচ্ছা করতেন তখন লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনার্থে জমিনের নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত স্বীয় কাপড় উপরে উত্তোলন করতেন না। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এটি পেশাব-পায়খানার একটি অন্যতম শিষ্টাচার যা প্রাচীরবিশিষ্ট টয়লেট এবং খোলা ময়দানের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। কারণ পরিধেয় কাপড় উপরে তুললে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, যা প্রয়োজন ছাড়া বৈধ নয়। আর জমিনের নিকটবর্তী না হয়ে কাপড় উপরে তোলার প্রয়োজনও নেই।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৭-[১৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (তা’লীম ও নাসীহাতের ব্যাপারে) আমি তোমাদের জন্য পিতা-পুত্রের ন্যায়। আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে থাকি (তোমাদের দীন, এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার শিষ্টাচারও)। যখন তোমরা পায়খানায় যাবে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে মুখ করে বসবে না, পিঠ দিয়েও বসবে না। পায়খানা করার পর তিনটি ঢিলা দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পাক-পবিত্র হবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে (পাক-পবিত্র হতে) নিষেধ করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ডান হাতে শৌচ করতেও নিষেধ করেছেন। (ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ أُعَلِّمُكُمْ إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَأَمَرَ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ وَنَهَى عَنِ الرَّوْثِ وَالرِّمَّةِ وَنَهَى أَنْ يَسْتَطِيبَ الرَّجُلُ بِيَمِينِهِ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: انما انا لكم مثل الوالد لولده اعلمكم اذا اتيتم الغاىط فلا تستقبلوا القبلة ولا تستدبروها وامر بثلاثة احجار ونهى عن الروث والرمة ونهى ان يستطيب الرجل بيمينه. رواه ابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: قوله (أُعَلِّمُكُمْ) (আমি তোমাদের পিতার মতো শিক্ষা দিই) যেমন পিতা পুত্রকে তার প্রয়োজনীয় সকল কিছুই শিক্ষা দেয় এবং তাতে কারও পরওয়া করে না। হাদীসের প্রথমাংশটুকু সাহাবীগণের নিকট পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার বর্ণনার একটি ভূমিকাস্বরূপ। কারণ মানুষ প্রায়শ এ বিষয়গুলো উল্লেখ করতে লজ্জাবোধ করে। বিশেষত সম্মানিত ব্যক্তিদের বৈঠকে। (তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ভূমিকা দিয়ে আরম্ভ করেছেন)। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় সন্তানদের পিতা-মাতার আনুগত্য করা আবশ্যক আর পিতাদের দায়িত্ব সন্তানদের শিষ্টাচার এবং দীনী বিষয়গুলো ভালোভাবে শিক্ষা দেয়া যা তাদের জন্য অতীব প্রয়োজন।

قوله (أمر بثلاثة أهجار) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইসতিনজার ক্ষেত্রে তিনটি ঢিলা ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা ইসতিনজার ক্ষেত্রে বিজোড় ঢিলা ব্যবহার এবং পূর্ণ পরিষ্কার উভয়টিই শারী‘আতের কাম্য যা তিনটি ঢিলা ব্যবহারের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।

الرمة (রিমমাহ্) অর্থ জরাজীর্ণ হাড়। সম্ভবত এখানে সকল হাড়ই উদ্দেশ্য। তবে এটাও বলা যেতে পারে যে, অনুপকারী জরাজীর্ণ হাড় নোংরা করতে নিষিদ্ধ হলে অন্যগুলো আরও নিষেধ হওয়ার উপযোগী। ইমাম বাগাবী شرح السنة গ্রন্থে বলেছেনঃ পশুর মল এবং হাড়ের সাথে নিষেধাজ্ঞাটা সুনির্দিষ্টকরণে বুঝা যায় যে, পরিষ্কারকরণের ক্ষেত্রে পাথর এবং পাথরের মতই অন্যকিছু দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করা বৈধ। আর তা নাজাসাত অপসারণকারী মাটি, কাঠ, কাগজের টুকরাসহ সকল পাক জড়বস্ত্ত।

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সকলে একই পর্যায়ভুক্ত। ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা)কে ‘ইস্তিত্বব’ বলা হয়েছে কারণ তাতে অপবিত্রতা অপসারিত হয়ে পবিত্রতা অর্জিত হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৮-[১৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডান হাত ছিল তাঁর পবিত্রতা অর্জন ও খাবারের জন্য। আর বাম হাত ছিল প্রস্রাব-পায়খানা ও অপর অপছন্দনীয় কাজের জন্য। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن عَائِشَة قَالَتْ: كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيُمْنَى لِطَهُورِهِ وَطَعَامِهِ وَكَانَتْ يَدُهُ الْيُسْرَى لِخَلَائِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عاىشة قالت: كانت يد رسول الله صلى الله عليه وسلم اليمنى لطهوره وطعامه وكانت يده اليسرى لخلاىه وما كان من اذى. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: قوله (لِطُهُورِه) ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহার করতেন’’, অর্থাৎ- উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার ক্ষেত্রে যে সকল অঙ্গ ধৌতকরণে ডান হাতের সাথে বাম হাত মিলানোর বিষয় পাওয়া যায় তাতে শুধু ডান হাত ব্যবহার করতেন। আর মুখমণ্ডল ধৌত করা এবং মাথা ও কান মাসাহ করার মতো যে সকল অঙ্গের ক্ষেত্রে ডান হাতের সাথে বাম হাত একত্র করতে হয় যেখানে উভয় হাতই ব্যবহার করতন। এ ছাড়াও খাওয়া, পান করা, কাউকে কোন কিছু দেয়া, কাপড় পরিধান করা, মিসওয়াক করা, জুতা পরিধান করা, সিঁথি করা, মুসাফাহ করা, চোখে সুরমা ব্যবহার করাসহ যাবতীয় সম্মানজনক কাজ ডান হাত দ্বারা সম্পাদন করতেন। অপরপক্ষে ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করা, নাকের ময়লা পরিষ্কার করা, রক্ত পরিষ্কার করা, কাপড় খুলে ফেলা, নাকের পানি ঝাড়াসহ যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ বাম হাত দ্বারা সম্পাদন করতেন। (অতএব ডান হাত যাবতীয় ভালো কাজে ব্যবহৃত হবে) যেহেতু এর মর্যাদা রয়েছে। আর বাম হাত যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজে ব্যবহৃত হবে)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৪৯-[১৬] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যায়, সে যেন তিনটি ঢিলা সাথে করে নিয়ে যায়। এ ঢিলাগুলো দিয়ে সে পাক-পবিত্রতা অর্জন করবে এবং এটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]

وَعَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا ذَهَبَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْغَائِطِ فَلْيَذْهَبْ مَعَهُ بِثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ يَسْتَطِيبُ بِهِنَّ فَإِنَّهَا تُجْزِئُ عَنْهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَالدَّارِمِيُّ

وعنها قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا ذهب احدكم الى الغاىط فليذهب معه بثلاثة احجار يستطيب بهن فانها تجزى عنه» . رواه احمد وابو داود والنساىي والدارمي

ব্যাখ্যা: এ হাদীস হতে গৃহীত মাস্আলাসমূহ হলোঃ

* ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে পাথর বা ঢিলা ব্যবহারই যথেষ্ট যা পানির সমতুল্য। জীবাণুসহ মূল অপবিত্রতা দূরীভূত হওয়ার পরে যদি নাজাসাতের কোন দাগ অবশিষ্ট থাকে।

* পাথর বা ঢিলা ব্যবহারের পর পানি ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা নেই।

* তিনটি পাথর বা ঢিলা ব্যবহার করা আবশ্যক। কারণإجزء ক্রিয়াটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবশ্যকতা বুঝায়।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫০-[১৭] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করো না। কেননা এসব তোমাদের ভাই জিনদের খোরাক। (তিরমিযী)[1] তবে ইমাম নাসায়ী ’জিনদের খোরাক’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি।

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَسْتَنْجُوا بِالرَّوْثِ وَلَا بِالْعِظَامِ فَإِنَّهَا زَادُ إِخْوَانِكُمْ مِنَ الْجِنِّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ: «إخْوَانكُمْ من الْجِنّ»

وعن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تستنجوا بالروث ولا بالعظام فانها زاد اخوانكم من الجن» . رواه الترمذي والنساىي الا انه لم يذكر: «اخوانكم من الجن»

ব্যাখ্যা: আহমাদ ও মুসলিম-এর বর্ণনায় এ হাদীসের প্রেক্ষাপট এভাবে এসেছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিনদের নিকট এসে তাদেরকে কুরআন পড়ালেন। পরে জিনেরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আবেদন করলে তিনি তাদের বললেন আল্লাহর নামে যাবাহকৃত প্রতিটি প্রাণীর হাড় তোমরা পরিপূর্ণ মাংসসহ পাবে। (এটিই তোমাদের যাদ বা খাবার) আর পশুর মলগুলো তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুর খাবার হিসেবে পাবে। এজন্যেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা ঐ দু’টি বস্ত্তর দ্বারা শৌচকার্য করো না, কারণ তা জিনদের খাবার।

قوله (زَادَ إِخْوَانِكُمْ مِنْ الْجِنِّ) (অর্থাৎ- তোমাদের ভাই জিন্দের খাবার) ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের এ অংশ থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, জিনরাও মুসলিম যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মুসলিমদের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটিও জানা যায় যে, তারা আহার করে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫১-[১৮] রুওয়াইফি’ ইবনু সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে রুওয়াইফি’! হয়তো তুমি আমার পরে দীর্ঘ জীবন লাভ করবে, তুমি তখন মানুষকে এ সংবাদ দিবে যে, যে ব্যক্তি নিজের দাড়ি জট পাকাবে অথবা ধনুকের রশি গলায় কবচ হিসেবে বাঁধবে অথবা পশুর গোবর বা হাড় দিয়ে শৌচকর্ম করবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেন না। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَن رويفع بن ثَابت قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رُوَيْفِعُ لَعَلَّ الْحَيَاةَ سَتَطُولُ بِكَ بَعْدِي فَأَخْبِرِ النَّاسَ أَنَّ مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوِ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ دَابَّة أَو عظم فَإِن مُحَمَّدًا بَرِيء مِنْهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن رويفع بن ثابت قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: يا رويفع لعل الحياة ستطول بك بعدي فاخبر الناس ان من عقد لحيته او تقلد وترا او استنجى برجيع دابة او عظم فان محمدا بريء منه. رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: قوله (لَعَلَّ الْحَيَاةَ سَتَطُولُ بِكَ بَعْدِىْ فَأَخْبِرِ النَّاسَ) অর্থাৎ- আমার মৃত্যুর পরে সম্ভবত তুমি দীর্ঘজীবী হবে এমনকি তুমি মানুষকে প্রকাশ্যভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ড- জড়িয়ে পড়তে দেখবে। অতএব যখন তুমি তা অবলোকন করবে তখন তাদেরকে এই নির্দেশাবলী অবহিত করবে।

قوله (مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَه)  অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি তার দাড়িতে গিঁট দেয়’’ এর অর্থ বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে করেছেন। কেউ বলেনঃ এর অর্থ চিকিৎসার মাধ্যমে দাড়ি কোঁকড়ানো করা। কেউ বলেনঃ যুদ্ধের ময়দানে অহমিকা প্রদর্শনার্থে দাড়ি কোঁকড়ানো। কেউ বলেনঃ যুদ্ধের ময়দানে অহমিকা প্রদর্শনার্থে দাড়ি বাঁকিয়ে রাখতো, ফলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তা ছেড়ে রাখার নির্দেশ দিলেন। আবার কেউ বললেনঃ অনারবদের মত দাড়ি পেচিয়ে গুটিয়ে রাখা (যেমনটি আমাদের দেশের ভন্ড পীর ও লালন ফকীররা করে থাকে)।

قوله (أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا)  অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি গলায় সুতা বা তন্তু ঝুলায়’’। কেউ কেউ বলেনঃ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিপদ আপদ ও খারাপ দৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পাবার উদ্দেশে তারা নিজেদের, নিজ সন্তানদের এবং ঘোড়ার গলায় সুতা দিয়ে বেঁধে যেসব তা‘বীয-কবচ ঝুলিয়ে রাখতো তা। আবার কেউ বলেনঃ বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে গলায় ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা নিষেধ।

(যারা এ কাজগুলো করবে তাদের থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত)।

এটি কঠোর ধমকের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫২-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যায় লাগায়। যে এভাবে করলো সে ভালো করলো, আর যে এভাবে করলো না সে গর্হিত কাজ করলো না। আর যে ব্যক্তি (প্রস্রাব-পায়খানা করার পর) ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ঢিলা ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি এভাবে করলো সে ভালো করলো, আর যে ব্যক্তি করলো না সে গর্হিত কাজ করলো না। যে ব্যক্তি খাবার খেলো এবং (খাবারের পর) খিলাল দ্বারা দাঁত হতে কিছু বের করলো, সে যেন তা মুখ থেকে ফেলে দেয়। আর যা জিহবা দিয়ে বের করে নেয় তা যেন গিলে ফেলে। যে এভাবে করলো সে উত্তম কাজ করলো, আর যে এরূপ করলো না সে গর্হিত কাজ করলো না। যে লোক পায়খানায় যায় সে যেন পর্দা করে। পর্দা করার জন্য যদি সে বালুর স্তূপ ছাড়া কিছু না পায় তাহলে স্তূপের দিকে যেন পিঠ দিয়ে বসে (কাপড় দিয়ে সামনের দিক ঢেকে রাখে)। কারণ শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের বসার স্থান নিয়ে খেলা করে। যে এরূপ করলো ভালো করলো, আর না করলে মন্দ কিছু করলো না। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حرج وَمن أكل فَمَا تخَلّل فليلفظ وَمَا لَاكَ بِلِسَانِهِ فَلْيَبْتَلِعْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنْ أَتَى الْغَائِط فليستتر وَمن لَمْ يَجِدْ إِلَّا أَنْ يَجْمَعَ كَثِيبًا مِنْ رَمْلٍ فَلْيَسْتَدْبِرْهُ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَلْعَبُ بِمَقَاعِدِ بَنِي آدَمَ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من اكتحل فليوتر من فعل فقد احسن ومن لا فلا حرج ومن استجمر فليوتر من فعل فقد احسن ومن لا فلا حرج ومن اكل فما تخلل فليلفظ وما لاك بلسانه فليبتلع من فعل فقد احسن ومن لا فلا حرج ومن اتى الغاىط فليستتر ومن لم يجد الا ان يجمع كثيبا من رمل فليستدبره فان الشيطان يلعب بمقاعد بني ادم من فعل فقد احسن ومن لا فلا حرج» . رواه ابو داود وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: قوله (مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ) ‘‘যে ব্যক্তি সুরমা ব্যবহার করতে চায় সে যেন বিজোড় সংখ্যকবার করে’’, অর্থাৎ- সে যেন উভয় চক্ষুতে ধারাবাহিকভাবে তিনবার ব্যবহার করে। কারো কারো মতে ডান চক্ষুতে তিনবার এবং বাম চক্ষুতে দু’বার যাতে উভয় চক্ষুর সমষ্টি বিজোড় হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমল ছিল তিনবার করে ব্যবহার করা। যেমনটি শামায়িলে তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাত্রে উভয় চক্ষুতে তিনবার করে সুরমা ব্যবহার করতেন। যে ব্যক্তি এরূপ করবে তথা তিনবার করে ব্যবহার করবে সে ভালো কাজ করবে যার বিনিময় পাবে। কেননা তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত।

قوله (مَنْ لَا فَلَا حَرَجَ) অর্থাৎ- কেউ যদি এরূপ করতে না পারে তবে কোন সমস্যা বা পাপ হবে না। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এটিই প্রমাণ করে যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল নির্দেশই আবশ্যকতা বুঝায় না। নইলে لَا حَرَجَ (কোন গুনাহ হবে না) বলে আদেশের আবশ্যকতা রহিতকরণে করা হতো না।

قوله (وَمَنْ أَكَلَ فَمَا تَخَلَّلَ فَلْيَلْفِظْ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি খায় অতঃপর কাঠি বা অন্য কিছু দ্বারা দাঁতের অভ্যন্তর থেকে যেসব খাদ্যকণা বের করে সে যেন তা না খেয়ে মুখ থেকে বের করে ফেলে।

قوله (وَمَا لَاكَ بِلِسَانِه فَلْيَبْتَلِعْ) অর্থাৎ- যা সে চর্বন করে তা গলধঃকরণ করবে, আবার কেউ কেউ বলেনঃ এর অর্থ হলো আহারকারীর উচিত কঠিন কোন কিছু দ্বারা দাঁতের অভ্যন্তরে থেকে বস্ত্ত বের করা না খেয়ে ফেলে দেয়া। কারণ তাতে ময়লা রয়েছে। আর জিহবা দ্বারা বের করা বস্ত্ত গলধঃকরণ করা। কেননা সে তা খারাপ মনে করে না।

(وَمَا لَاكَ) দ্বারা এ উদ্দেশ হতে পারে দাঁতের মাড়ি এবং তালুতে লেগে থাকা অবশিষ্ট খাবার যা সে জিহবার মাধ্যমে বের করে, তা ভক্ষণ করবে। আর দাঁতের মাঝের খাবার সে না আহার করে ফেলে দিবে চাই তা কঠিন কোন কিছু দ্বারা বের করুক বা জিহবার দ্বারা বের করুক। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পরিবর্তন সাধিত হয়।

قوله (فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَلْعَبُ بِمَقَاعِدِ بَنِي ادَمَ) ‘‘নিশ্চয় শায়ত্বন (শয়তান) আদম সন্তানের পিছন নিয়ে খেলা করে’’, অর্থাৎ- টয়লেট বা পায়খানা করার স্থানে শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের অনিষ্ট করার মতলব করে। সে সেখানে উপস্থিত হতে অনিষ্ট ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। কারণ সেখানে আল্লাহর যিকর বর্জন করা হয়।

এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসম্ভব পায়খানা-পেশাবের সময় নিজেদের আড়াল করার আদেশ প্রদান করেছেন পিছনে বালির ঢিবি তৈরি করে হলেও পাশাপাশি লোকচক্ষুর সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। সাথে সাথে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রস্রাব যাতে শরীর কাপড়ে ছিটে না লাগে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৩-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় প্রস্রাব না করে, এরপর আবার সেখানে গোসল করে অথবা উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে। কারণ মানুষের অধিকাংশ ওয়াস্ওয়াসা এসব থেকেই উৎপন্ন হয়। (আবূ দাঊদ)[1] কিন্তু শেষের দু’জন (তিরমিযী ও নাসায়ী), ’’এরপর সেখানে গোসল করে ও উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে’’ উল্লেখ করেননি।

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي مُسْتَحَمِّهِ ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ أَوْ يَتَوَضَّأُ فِيهِ فَإِنَّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ إِلَّا أَنَّهُمَا لم يذكرَا: «ثمَّ يغْتَسل فِيهِ أويتوضأ فِيهِ»

وعن عبد الله بن مغفل قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يبولن احدكم في مستحمه ثم يغتسل فيه او يتوضا فيه فان عامة الوسواس منه» . رواه ابو داود والترمذي والنساىي الا انهما لم يذكرا: «ثم يغتسل فيه اويتوضا فيه»

ব্যাখ্যা: قوله (لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي مُسْتَحَمِّه) ‘‘তোমাদের কেউ যেন তার গোসলখানায় প্রস্রাব না করে’’ এ কথায় নিষেধের ক্ষেত্র নির্ধারণে মতবিরোধ হয়েছে। কারো কারো মতে নিষেধটি নালার ন্যায় নরমভূমিতে অবস্থিত গোসলখানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে কোন ছিদ্র নেই। কারণ নরমভূমিতে পেশাব তার স্বস্থলে অটল থাকে। অপরপক্ষে শক্ত ভূমিতে তা এক স্থানে না থেকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে যখন তাতে পানি পড়ে তখন প্রস্রাবের প্রভাবটা দূরীভূত হয়। কিন্তু নরমভূমিতে পেশাব একস্থানে জমে শুকিয়ে যাবার ফলে তার প্রভাবটা যায় না। অপর দলের অবস্থান এর সম্পূর্ণ বিপরীতে তাদের মতে নিষেধটি শক্তভূমিতে অবস্থিত গোসলখানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ শক্তভূমিতে প্রস্রাব করলে তার ফোঁটা ফিরে এসে শরীর অপবিত্র হওয়ার আশংকা রয়েছে যা নরম ভূমির ক্ষেত্রে নেই।

قوله (ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ) ‘‘অতঃপর সে তার গোসল সম্পাদন করবে’’ এর দ্বারা তিনি উদ্দেশ নিয়েছেন যতক্ষণ তারা তাতে গোসল করার পরিকল্পনা রাখবে ততদিন নিষেধ কিন্তু যদি তাতে গোসল করে পরিত্যক্তাবস্থায় রেখে দেয় বা কেবল গোসল আরম্ভ করেছে এখনো প্রস্রাব করেনি তাহলে সে গোসলখানায় প্রস্রাব করা নিষিদ্ধ নয়।

 قوله (فَإِنَّ عَامَّةَ الْوَسْوَاسِ مِنْهُ) ‘‘কারণ অধিকাংশ সংশয় এ থেকেই সৃষ্টি হয়’’, অর্থাৎ- গোসলখানা বা উযূখানায় প্রস্রাব করে সেখানে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) বা গোসল করা থেকেই অধিকাংশ সংশয়ের উদ্ভব ঘটে। কারণ সে স্থানটি অপবিত্র হওয়ার ফলে তার মনে এ সংশয়ের সৃষ্টি হয় যে, তার শরীরে প্রস্রাবের কোন ছিটা লাগলো।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৪-[২১] ’আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গর্তে প্রস্রাব না করে। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَن عبد الله بن سرجس قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِي جُحْرٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن عبد الله بن سرجس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يبولن احدكم في جحر» . رواه ابو داود والنساىي

হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৫-[২২] মু’আয (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিনটি অভিশপ্ত হওয়ার যোগ্য কাজ- (১) পানির ঘাটে, (২) চলাচলের পথে ও (৩) কোন কিছুর ছায়ায় পায়খানা করা- এমন করা হতে বেঁচে থাকবে। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]

وَعَنْ مُعَاذٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اتَّقُوا الْمَلَاعِنَ الثَّلَاثَةَ: الْبَرَازَ فِي الْمَوَارِدِ وَقَارِعَةِ الطَّرِيقِ وَالظِّلِّ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن معاذ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اتقوا الملاعن الثلاثة: البراز في الموارد وقارعة الطريق والظل . رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: (الْمَلَاعِنَ) ‘‘অভিশপ্ত হওয়ার যোগ্য কাজ অথবা অভিশপ্ত হওয়ার স্থান।’’ অর্থাৎ- যে কাজ করলে লোকজন অভিশাপ করে এমন কাজ।

(الْبَرَازَ فِي الْمَوَارِدِ) ‘‘পানির ঘাটে পায়খানা করা।’’ নালা বা নদীর এমন স্থানকে مَوَارِد বলা হয় যেখানে লোকজন উযূ-গোসল ও পানি পান করার জন্য আগমন করে। এমন স্থানে কোন ব্যক্তি পায়খানা করলে লোকজন তাকে গালি দিবে, অভিশাপ দিবে। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন স্থানে পায়খানা করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ চলাচলের রাস্তা এবং গাছের ছায়া যাতে মানুষ বিশ্রাম গ্রহণ করে থাকে। যে ছায়াতে মানুষ বিশ্রাম করে না তাতে পায়খানা করা কোন দূষণীয় কাজ নয়।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৬-[২৩] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি এক সঙ্গে যেন পায়খানায় এমনভাবে না বসে যে, দু’জনেই দু’জনার লজ্জাস্থান দেখতে পায় এবং পরস্পরের সাথে কথা বলে। কেননা মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজে খুবই রাগান্বিত হন। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَخْرُجِ الرَّجُلَانِ يَضْرِبَانِ الْغَائِطَ كَاشِفَيْنِ عَنْ عَوْرَتِهِمَا يَتَحَدَّثَانِ فَإِنَّ اللَّهَ يَمْقُتُ عَلَى ذَلِكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ

وعن ابي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا يخرج الرجلان يضربان الغاىط كاشفين عن عورتهما يتحدثان فان الله يمقت على ذلك» . رواه احمد وابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: قوله (فَإِنَّ اللهَ يَمْقُتُ عَلى ذلِكَ) অর্থাৎ- অন্যের উপস্থিতিতে লজ্জাস্থান খোলা এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময় কথায় বলা আল্লাহ তা‘আলা ক্রোধান্বিত হন। এ হাদীস থেকে কয়েকটি মাস্আলাহ্ সাব্যস্ত হয় যথাঃ

* লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা আবশ্যক।

* পায়খানা করার সময় কথা বলা হারাম।

* কেউ কেউ এ অবস্থায় কথা বলাটা মাকরূহ বলেছেন। কিন্তু তা সঠিক নয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৭-[২৪] যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এসব পায়খানার স্থান হচ্ছে (জিন্ ও শায়ত্বনের (শয়তানের)) উপস্থিতির স্থান। সুতরাং তোমাদের যারা পায়খানায় যাবে তারা যেন এ দু’আ পড়েঃ ’’আ’ঊযু বিল্লা-হি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস’’- (অর্থাৎ- আমি নাপাক নর-নারী শায়ত্বন (শয়তান) থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই)। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ্)[1]

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ هَذِهِ الْحُشُوشَ مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبْثِ والخبائث . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن زيد بن ارقم قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ان هذه الحشوش محتضرة فاذا اتى احدكم الخلاء فليقل: اعوذ بالله من الخبث والخباىث . رواه ابو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: الْحُشُوْشَ (আল হুশূশ্) এর আসল অর্থ ঘন গাছে আচ্ছাদিত খেজুর বাগন। গৃহে পায়খানা নির্মাণের পূর্বে তারা সেখানে গিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণ করতো। পরবর্তীতে এটি টয়লেট অর্থে ব্যবহৃত হয়। পায়খানা-প্রস্রাবের স্থানসমূহে জিন্ ও শায়ত্বনরা উপস্থিত হয়ে আদম সন্তানের ক্ষতিসাধন করতে। কারণ ঐ সকল স্থানে আল্লাহর স্মরণ পরিত্যাগ করে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করা হয়। ফলে অন্যস্থানের চেয়ে সে সকল স্থানে বেশি ক্ষতি সাধন সম্ভব হয়। এজন্যেই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্থানে জিন্ শায়ত্বন (শয়তান) হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৮-[২৫] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে তখন জিন শয়তানের চোখ আর বনী আদমের লজ্জাস্থানের মধ্যে পর্দা হলো ’’বিসমিল্লা-হ’’ বলা। (তিরমিযী;[1] ইমাম তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটি গরীব, এর সনদ দুর্বল)

وَعَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي آدَمَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمُ الْخَلَاءَ أَنْ يَقُولَ بِسْمِ اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَإِسْنَاده لَيْسَ بِقَوي

وعن علي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ستر ما بين اعين الجن وعورات بني ادم اذا دخل احدهم الخلاء ان يقول بسم الله» . رواه الترمذي وقال: هذا حديث غريب واسناده ليس بقوي

ব্যাখ্যা: قوله (إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمْ الْخَلَاءَ) অর্থাৎ- আদম সন্তান পায়খানায় প্রবেশ করার সময় এই দু‘আ পড়বে। অতএব যখন কেউ বস্ত্র খুলে রাখা বা গোসলের সময় লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করার ইচ্ছা করবে, তার উচিত বিসমিল্লা-হ বলা। (এটি শুধুমাত্র টয়লেটে প্রবেশের সময় নয়) আনাস (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীস বিসমিল্লা-হ বলার হুকুমটি ‘আম্ (ব্যাপক) হওয়ার ব্যাপারে আমাদের মতকে সমর্থন করে। যেখানে বলা হয়েছে ‘‘যখন আদম সন্তান বস্ত্র খুলে রাখে তখন তাদের লজ্জাস্থান এবং জিনের মাঝে পর্দা হলো তা খুলবার মুহূর্তে বিসমিল্লা-হ বলা।’’ কারণ আদম সন্তানের ওপর আল্লাহর নাম একটি স্টিকারের ন্যায় যা জিনেরা খুলতে বা উঠাতে সক্ষম হয় না।

দুই হাদীসের দ্বন্দ্ব নিরসনে ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে টয়লেটে প্রবেশের দু‘আ بِسْمِ اللهِ এসেছে, অপরদিকে পূর্বে বর্ণিত আনাস (রাঃ) এবং যায়দ বিন আরক্বাম (রাঃ)-এর হাদীসে এসেছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে ক্ষতি সাধনকারী জিন্ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। দৃশ্যত উভয় হাদীসের মাঝে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হলেও মূলত বৈপরীত্য নেই। কারণ একটি আল্লাহর নাম এবং অপরটি অনিষ্ট সাধনকারী জিন্ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা। অতএব উভয়টি আলাদা কোন জিনিস নয়।

অধিকন্তু ‘উমার (রাঃ)-এর সূত্রে আনাস (রাঃ) হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে দু’টি দু‘আই একত্রে এসেছে যে হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (إذا دخلتم الخلاء فقولوا بسم الله إعوذ بالله من الخبث والخبائث) ‘‘যখন তোমরা টয়লেটে প্রবেশের মনস্থ করবে তখন এ দু‘আটি পাঠ করবেঃ আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি এবং তাঁর নিকট অনিষ্টকারী জিন্ হতে আশ্রয় চাচ্ছি’’। অতএব, দু‘আ দু’টি পাঠ করা উত্তম। তবে একটি বললেও যথেষ্ট হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৫৯-[২৬] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পায়খানা হতে বের হতেন তখন বলতেনঃ ’’গুফরা-নাকা’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ قَالَ «غفرانك» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه والدارمي

وعن عاىشة قالت: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا خرج من الخلاء قال «غفرانك» . رواه الترمذي وابن ماجه والدارمي

ব্যাখ্যা: قوله (إِذَا خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ) অর্থাৎ- যখন তিনি টয়লেট থেকে বের হতেন। খুরুজ দ্বারা কোন স্থান থেকে বের হওয়া বুঝালেও বিধানটি ব্যাপক যা ফাঁকা ময়দানসহ সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। غفرانك অর্থ আমি তোমার মর্যাদার সাথে উপযুক্ত বা তোমার অনুগ্রহ থেকে সৃষ্ট ক্ষমা চাচ্ছি। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতেন সে বিষয়ে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব-পায়খানার অবস্থা ব্যতীত সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার স্মরণে মগ্ন থাকতেন । ফলে এ অবস্থায় আল্লাহর যিকর পরিত্যাগ করাকে ত্রুটি বা পাপ গণ্য করে আল্লাহর নিকট থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি পায়খানা করার ক্ষমতা দানের মাধ্যমে যে করুণা করেছেন তার কৃতজ্ঞতা আদায়ে ত্রুটি হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। কেননা পেটের ভিতর মল জমা থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বা রোগগ্রস্ত হয়। তাই তা বের হওয়া শরীরের পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য একটি অপরিহার্য নি‘আমাত। আর এটিই অধিক সঠিকতর কারণ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৬০-[২৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলে আমি তাঁর পেছনে পেছনে কখনো ’তাওর’-এ করে আবার কখনো ’রক্ওয়াহ্’-এ করে পানি নিয়ে যেতাম। এ পানি দ্বারা তিনি শৌচকর্ম সম্পাদন করতেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাটিতে স্বীয় হাত ঘষতেন। অতঃপর আমি আর এক পাত্রে পানি আনতাম। এ পানি দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন। (আবূ দাঊদ; দারিমী ও নাসায়ী একই অর্থে বর্ণনা করেছেন)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَتَى الْخَلَاءَ أَتَيْتُهُ بِمَاءٍ فِي تَوْرٍ أَوْ رَكْوَةٍ فَاسْتَنْجَى ثُمَّ مَسَحَ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ ثُمَّ أَتَيْتُهُ بِإِنَاءٍ آخَرَ فَتَوَضَّأَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وروى الدَّارمِيّ وَالنَّسَائِيّ مَعْنَاهُ

وعن ابي هريرة رضي الله عنه قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا اتى الخلاء اتيته بماء في تور او ركوة فاستنجى ثم مسح يده على الارض ثم اتيته باناء اخر فتوضا. رواه ابو داود وروى الدارمي والنساىي معناه

ব্যাখ্যা: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করার পর হাত মাসাহ করতেন তা পরিষ্কার করণার্থে এবং উম্মাতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। আর আনাস (রাঃ) দ্বিতীয় পাত্রে পানি নিয়ে আসলেন, কারণ আগের পাত্রের পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল অথবা অতি অল্প পানি ছিল যা উযূর জন্য যথেষ্ট নয়। এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ ইসতিনজার জন্য আলাদা পাত্র নেয়াকে মানদূব (উত্তম) বলেছেন।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৬১-[২৮] হাকাম ইবনু সুফ্ইয়ান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্রাব করার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন এবং নিজের লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَن الحكم بن سُفْيَان قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَالَ تَوَضَّأَ وَنَضَحَ فَرْجَهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن الحكم بن سفيان قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم اذا بال توضا ونضح فرجه. رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: (إِِذَا بَالَ تَوَضَّأَ) ‘‘প্রস্রাব করার পর উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করতেন।’’ হয়ত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করার জন্য উযূ করতেন অথবা পবিত্র অবস্থায় থাকার উদ্দেশে উযূ করতেন।

(وَنَضَحَ فَرْجَهٗ) ‘‘এবং স্বীয় লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে দিতেন।’’ অর্থাৎ- পরিধেয় বস্ত্রের লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটিয়ে দিতেন।’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিধেয় বস্ত্রের লজ্জাস্থানের নিকটবর্তী অংশে হালকা পানির ছিটা দিতেন। যাতে শায়ত্বনের (শয়তানের) এ ওয়াস্ওয়াসা দূর হয়ে যায় যে, কাপড়ে কি প্রস্রাবের ছিটা লেগে গেল কি-না, আর এ দ্বারা উম্মাতকে শিক্ষা দেয়াও উদ্দেশ্য।

শিক্ষা: উযূ শেষে লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া উচিত যাতে শায়ত্বনের (শয়তানের) ওয়াস্ওয়াসা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification

পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব

৩৬২-[২৯] উমায়মাহ্ বিনতু রুক্বায়ক্বাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাটের নিচে একটি কাঠের গামলা ছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাতে এতে প্রস্রাব করতেন। (আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]

وَعَن أُمَيْمَة بنت رقيقَة قَالَتْ: كَانَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدَحٌ مِنْ عَيْدَانٍ تَحْتَ سَرِيرِهِ يَبُولُ فِيهِ بِاللَّيْلِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ

وعن اميمة بنت رقيقة قالت: كان للنبي صلى الله عليه وسلم قدح من عيدان تحت سريره يبول فيه بالليل. رواه ابو داود والنساىي

ব্যাখ্যা: দুই হাদীসের দ্বন্দ্ব নিরসনঃ এ হাদীসে বলা হচ্ছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে পেশাব করার জন্য খাটের নিচে একটি পাত্র রাখতেন। অপরদিকে ত্ববারানীর ‘আওসাত’ ‘‘গ্রন্থে ‘আবদুল্লাহ বিন ইয়াযীদ (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এসেছে’’ ঘরের মধ্যে কোন পাত্রে প্রস্রাব জমা রাখা যাবে না। কেননা প্রস্রাব জমা রাখা ঘরে মালাকগণ প্রবেশ করে না। উভয়ের দ্বন্দ্ব নিরসনকল্পে বলা হয় হাদীসে জমা রাখা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দীর্ঘ সময় ধরে আবদ্ধ। আর পাত্রে যা রাখা হয় তা সাধারণত দীর্ঘ সময় আবদ্ধ থাকে না। ‘আল্লামা মুগলত্বয়ী বলেছেনঃ ঘরে প্রস্রাব জমা রাখা দ্বারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়ত বা অধিক অপবিত্রতার উদ্দেশ্য নিয়েছেন। পাত্রে জমা রাখা এর বিপরীত কারণ এর মাধ্যমে অপর স্থান অপবিত্র হয় না।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩: পাক-পবিত্রতা (كتاب الطهارة) 3. Purification
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ২২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »