পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
اَلْأَدَبُ (আদাব) বা শিষ্টাচার হলো প্রত্যেক জিনিসের সীমার প্রতি লক্ষ্য রাখা। কারো কারো মতে আদাব হলো প্রশংসনীয় কথা বা কাজের প্রয়োগ। অভিধানবেত্তাগণ ’আদাব’ শব্দটি ব্যবহার করেন কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তর ক্ষেত্রে যা উপযোগী সেক্ষেত্রে। যেমন বলা হয়أَدَابُ الدَّرْسِ পাঠের আদব বা শিষ্টাচারأَدَابُ القَّاضِيْ বিচারকের শিষ্টাচার। আর اَلْخَلَاءُ (খলা-) বলা হয় প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের স্থানকে। যেহেতু মানুষ সেখানে নির্জন থাকে তাই তাকে اَلْخَلَاءُ নির্জনস্থান বলা হয়েছে।
৩৩৪-[১] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যখন পায়খানায় যাবে তখন ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)কে সামনে বা পেছনে রেখে বসবে না, বরং পূর্বদিকে ফিরে বসবে অথবা পশ্চিম দিকে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
শায়খ ইমাম মুহয়্যিইউস্ সুন্নাহ্ বলেছেন, এটা উন্মুক্ত প্রান্তরের হুকুম। দালান-কোঠা বা ঘরের মধ্যকার পায়খানায় অথবা ঘরের মতো করে নির্মিত পায়খানায় এরূপ করা দোষের নয়।
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا»
قَالَ الشَّيْخ الإِمَام محيي السّنة C: هَذَا الْحَدِيثُ فِي الصَّحْرَاءِ وَأَمَّا فِي الْبُنْيَانِ فَلَا بَأْس لما رُوِيَ:
ব্যাখ্যা: قوله : (وَلكِنْ شَرِّقُوْا أَوْ غَرِّبُوْا) অর্থাৎ- তোমরা পূর্ব পশ্চিম দিকে মুখ করে পেশাব-পায়খানা কর। এ আদেশটি মূলত মদীনাবাসী এবং যাদের ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) মদীনাবাসীদের ক্বিবলার দিকে তাদের জন্য প্রযোজ্য।
এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, দিকাভিমুখী হলে ক্বিবলাহ্ (কিবলাহ/কিবলা) সামনে বা পেছনে হয় না সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন (তথা পেশাব-পায়খানা) পূরণ করা যা দেশভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। (অর্থাৎ- প্রত্যেক দেশের অধিবাসীরা সেদিকে মুখ করে স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণ করবে যে দিকাভিমুখী হবে (ক্বিবলাহ্ সামনে বা পেছনে হবে না)। হাদীসটি বাহ্যিকভাবে খোলা ময়দান ও প্রাচীর বেষ্টিত টয়লেটের মাঝে কোন পার্থক্যকরণ ছাড়াই স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের সময় ক্বিবলাকে সামনে বা পিছনে করতে নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৩৫-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার কোন কাজে (আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসার ঘরের ছাদে উঠেছিলাম। তখন আমি দেখলাম, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নীচে এক ঘেরাও করা জায়গায়) ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হকে (কিবলাকে) পেছনে রেখে (উত্তরে) সিরিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে পায়খানা করছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
عَن عبد الله بن عمر قَالَ: ارْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ لِبَعْضِ حَاجَتِي فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يقْضِي حَاجته مستدبر الْقبْلَة مُسْتَقْبل الشَّام
ব্যাখ্যা: ইমাম বাগাবী (রহঃ)-এর কর্ম থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, তিনি বলতে চেয়েছেন নিষেধের হাদীসটি প্রথমত ‘আমভাবে বর্ণিত হলেও ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা তার ব্যাপকতা নির্দিষ্ট হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৩৬-[৩] সালমান (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)র দিকে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করতে, ডান হাতে ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করতে, তিনটির কম ঢিলা দিয়ে ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করতে এবং শুকনা গোবর ও হাড় দিয়ে ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَن سلمَان قَالَ: نَهَانَا يَعْنِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةَ لِغَائِطٍ أَوْ بَوْل أَو أَن نستنتجي بِالْيَمِينِ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِأَقَلَّ مِنْ ثَلَاثَةِ أَحْجَارٍ أَوْ أَنْ نَسْتَنْجِيَ بِرَجِيعٍ أَوْ بِعَظْمٍ. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: এ হাদীস হতে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হয়। যথা ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করা হারাম। কারণ এখানে নিষেধের ক্ষেত্রে ভিন্নার্থে প্রবাহিতকারী কোন কারণ না থাকায় হারাম অর্থটি মূল। অতএব, ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা করা মাকরূহ বলে হুকুম দেয়ার কোন অবকাশ নেই। এটি ডান হাতের মর্যাদা এবং তাকে পংকিলতা থেকে রক্ষার বিষয়ে অবহিতকরণ।
* ইসতিনজার ক্ষেত্রে তিনটির কম টিলা ব্যবহার বৈধ নয় যদিও তিনটির কম ব্যবহারে পবিত্রতা অর্জিত হয়।
* পশুর বিষ্ঠা এবং হাড় দ্বারা ইসতিনজা করা বৈধ নয়। প্রথমটির (পশুর বিষ্ঠা) দ্বারা বৈধ না হওয়ার কারণ হলোঃ প্রথমত তা জিন্ জাতির চতুষ্পদ জন্তুর শুকনা খাবার। দ্বিতীয়ত তা অপবিত্র হওয়ায় অন্য কোন বস্ত্তকে পবিত্র করতে পারে না।
হাড় দ্বারা বৈধ না হওয়ার কারণ হলোঃ
প্রথমত তা জিনদের খাদ্য। অর্থাৎ- তারা তা খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লা-হ’ বললে তা গোশ্ত (গোশত/গোস্ত/গোসত)পূর্ণ অবস্থায় পায় যেমনটি আগে ছিল।
দ্বিতীয়ত তা চটচটে থাকে ফলে তা অপবিত্র।
তৃতীয়ত তা প্রায়শ তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত থাকে।
চতুর্থতঃ তা কষ্টকর যা ব্যবহারে ব্যবহারকারী কষ্ট পায়।
দুই হাদীসে দ্বন্দ্ব নিরসন
এ হাদীসে সর্বনিম্ন তিনটি ঢিলা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অথচ ২য় অনুচ্ছেদে আগত আবূ দাঊদসহ অন্যান্য গ্রন্থে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ (مَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَّا فَلَا حَرَجَ) অর্থাৎ- ‘যে ঢিলা ব্যবহার করবে সে যে বিজোড় করে। যে তা করলো সে ভালো করলো তবে বিজোড় না হলেও সমস্যা নেই’। এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে তিনটির কমেও বৈধ। এর দ্বন্দ্ব কয়েকভাবে নিরসন করা যায়। যথাঃ
প্রথমত সালমান (রাঃ)-এর হাদীসটি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর হাদীসের চেয়ে অধিক সহীহ। অতএব, তা অগ্রাধিকারযোগ্য।
দ্বিতীয়ত উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধনকরণ। যেমনটি হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেনঃ ইমাম শাফি‘ঈ আহমাদ ও আহলে হাদীসগণ সালমান (রাঃ)-এর হাদীসের দ্বারা ঢিলা তিনটির কম না হওয়ার শর্তারোপ করেছেন যদিও তার কমে পবিত্রতা অর্জিত হয়। কিন্তু তিনটিতে পবিত্রতা অর্জিত না হলে তার বেশি নিতে পারবে যতক্ষণ না পবিত্রতা অর্জিত হয়। তখন (বেশি নেয়ার সময়) বিজোড় ঢিলা ব্যবহার মুসতাহাব - যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (مَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوْتِرْ) ‘ঢিলা ব্যবহার করলে বিজোড় করবে’ তবে তা ওয়াজিব নয়। যেমনটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (وَمَنْ لَّا فَلَا حَرَجَ) (বিজোড় না হলে সমস্যা নেই)। অতএব তিনটির কম ঢিলা ব্যবহার বৈধ নয় তবে তিনটির বেশি হলে বিজোড় ব্যবহার মুসতাহাব)।
الاستنجاء (ইসতিনজা) অর্থ মানুষ বা পশুর বিষ্ঠা, শুকনো মল।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৩৭-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় গেলে বলতেনঃ ’’আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খবা-য়িস’’- [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট নর ও নারী শয়তানদের (ক্ষতি সাধন) থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।] (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ يَقُولُ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخبث والخبائث»
ব্যাখ্যা: (إِذَا دَخَلَ الْخَلَاءَ) ‘‘যখন কেউ পায়খানায় প্রবেশ করবে’’, অর্থাৎ- প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের স্থানে প্রবেশের মনস্থ করবে তখন সে যেন এ দু‘আটি পাঠ করে। তবে এটি (দু‘আ পাঠ) প্রাচীর বিশিষ্ট টয়লেটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়, বরং এর হুকুমটি এমনকি কেউ যদি গৃহের কোণে পাত্রে পেশাব করে তখনও পেশাব আরম্ভ করার পূর্বে দু‘আ পাঠ করতে হবে। অতএব প্রাচীরবিশিষ্ট টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে দু‘আ পাঠ করতে হবে। অতএব প্রাচীরবিশিষ্ট টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে আর এ ছাড়া অন্য স্থানে প্রয়োজন পূরণের শুরুতে তথা কাপড় উপরে তোলার সময় দু‘আ বলবে। কেউ ভুলে গেলে মনে মনে পড়ে নেবে, উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই।
قوله (اَللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ) ‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অনিষ্ট সাধনকারী পুরুষ মহিলা জিন্ শায়ত্বন (শয়তান) হতে আশ্রয় চাচ্ছি।’’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসত্ব প্রকাশার্থে দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতেন এবং উম্মাতকে শিক্ষাদানের উদ্দেশে তা উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করতেন। خُبُثِ (খুবুস) অর্থ অনিষ্ট সাধনকারী পুরুষ জিন্-শায়ত্বন (শয়তান) আর خَبَائِثْ (খবা-য়িস) অর্থ মহিলা।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৩৮-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, কিন্তু কোন বিরাট গুনাহের জন্য শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন প্রস্রাব করার সময় আড়াল করতো না। সহীহ মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, প্রস্রাব করার পর উত্তমভাবে পাক-পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অপরজন একজনের কথা অন্যজনের কানে লাগাতো (চোগলখোরী করতো)। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খেজুরের একটি তাজা ডাল ভেঙ্গে তা দুই ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরে তার একটি অংশ গেড়ে দিলেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি এরূপ করলেন কেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে পর্যন্ত ডাল দু’টি শুকিয়ে না যাবে, হয়তো তাদের শাস্তি হ্রাস করা হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَبْرَيْنِ فَقَالَ إِنَّهُمَا لَيُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ أَمَّا أَحدهمَا فَكَانَ لَا يَسْتَتِرُ مِنَ الْبَوْلِ - وَفِي رِوَايَةٍ لمُسلم: لَا يستنزه مِنَ الْبَوْلِ - وَأَمَّا الْآخَرُ فَكَانَ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ثمَّ أَخذ جَرِيدَة رطبَة فَشَقهَا نِصْفَيْنِ ثُمَّ غَرَزَ فِي كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً قَالُوا يَا رَسُول الله لم صنعت هَذَا قَالَ لَعَلَّه يُخَفف عَنْهُمَا مَا لم ييبسا
ব্যাখ্যা: قوله (مَرَّ النَّبِيُّ ﷺ بِقَبْرَيْنِ) ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।’’ ইবনু মাজাহর বর্ণনায় রয়েছে কবর দু’টি নতুন ছিল। ইবনু হাজার বলেনঃ হাদীসের সমস্ত সানাদ থেকে স্পষ্ট যে, কবর দু’টি মুসলিম ব্যক্তির ছিল।
قوله (وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ) ‘‘তারা বড় কোন পাপের কারণে শাস্তি পাচ্ছিল না’’, অর্থাৎ- তাদের অপরাধ দু’টি এতটাই হালকা ছিল যে, চাইলেই তারা তা থেকে বাঁচতে পারতো। তবে এর অর্থ এটি নয় যে, তাদের গুনাহ দু’টি গুরুতর বা কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ ছিল না, কিংবা এ অপরাধে তাদের শাস্তি হতো না। কারণ পেশাব ধেকে না বাঁচলে শরীর অপবিত্র থাকে ফলে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বিনষ্ট হয়ে যায়। আর একজনের ত্রুটি অপরকে বলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এমনকি তা হানাহানিতে রূপ নেয়। অতএব এ দৃষ্টিকোণ থেকে এ দু’টি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে (وَإِنَّه لَكَبِيْرٍ) এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটি কাবীরাহ্ (কবিরা) গুনাহ। আর (وَمَا يُعَذِّبَانِ فِىْ كَبِيْرٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য তা থেকে বেঁচে থাকা সহজ ছিল কঠিন ছিল না।
‘আযাব হালকা হওয়ার কারণ সম্পর্কে বেশ কিছু অভিমত ব্যক্ত হয়েছে। যথাঃ
কেউ কেউ বলেনঃ ডাল শুকনো হওয়া শাস্তি লাঘব হওয়ার বিষয়টি নির্দিষ্টকরণের কারণ হলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শাস্তি লাঘবের সুপারিশ করেছিলেন। খেজুর ডালের সজীবতা থাকা পর্যন্ত তাদের শাস্তি লাঘব করার মাধ্যমে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে। ডালের সজীবতা অবশিষ্ট থাকা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুপারিশের দ্বারা শাস্তি লাঘব করা একটি নিদর্শন। আর এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে মুসলিমের শেষে জাবির বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তবে এর অর্থ এটি নয় যে, খেজুর ডালের আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য রয়েছে কিংবা তাজা ডালের কোন বিশেষত্ব রয়েছে যার ফলে তাদের শাস্তি লাঘব হয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতের বারাকাতে শাস্তি লাঘব করা হয়েছিল। এ দৃষ্টিকোণ থেকে হাদীসটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনা সর্বদা প্রযোজ্য কোন নির্দেশনা বা ইঙ্গিত নয়।
* কেউ কেউ বলেনঃ এর হুকুমটি ব্যাপক যা ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত সবার জন্য প্রযোজ্য। এর প্রমাণ সাহাবী বুরায়দাহ্ বিন হুসায়ন-এর মৃত্যুর পরে তার কবরে দু’টি খেজুর ডাল গেড়ে দেয়ার ওয়াসিয়্যাত করেছিলেন। সাহাবী আবূ বারযা আল আসলামী (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে।
* ভাষ্যকার বলেনঃ আমার মতে এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যাচার করে কবরের উপর সুগন্ধি গুল্ম স্থাপন, বৃক্ষ রোপণ, এক প্রকার সুগন্ধি কাঠ দ্বারা কবরকে সুবাসিতকরণ, কবরস্থানে প্রদীপ জ্বালানোসহ আরও যে সমস্ত কর্মকান্ড ঘটে তা সবগুলোই সুস্পষ্ট বিদ্‘আত বা ভ্রষ্টতা।
* এ হাদীস থেকে আরও প্রমাণিত হয় যে, মানুষের পেশাব অপবিত্র যা হতে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর এ বিষয়ে সকলেই একমত। পেশাবের বিষয়টি খুবই গুরুতর যা কবরে শাস্তি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ যেমনটি চোগলখোরী করাও কবরে শাস্তি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৩৯-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা দু’টি অভিসম্পাত থেকে বেঁচে থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সে দু’টি অভিসম্পাত কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি মানুষের চলাচলের পথে অথবা তাদের কোন কিছুর ছায়ার স্থানে পায়খানা করে। (মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ. قَالُوا: وَمَا اللَّاعِنَانِ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ . قَالَ: «الَّذِي يَتَخَلَّى فِي طَرِيقِ النَّاس أَو فِي ظلهم» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: قوله (اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ) ‘‘তোমরা অভিশাপকারী দু’টি বিষয় থেকে বেঁচে থাকো’’, অর্থাৎ- এমন দু’টি বিষয় থেকে বেঁচে থাকো যা অভিশাপ বয়ে আনে, মানুষকে যে বিষয়ে প্ররোচিত করে এবং তার দিকে আহবান করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে দু’টি কাজ অভিশাপের কারণ হওয়ার ফলে যেন তা নিজেই অভিশাপকারী। মুসলিম-এর বর্ণনায় রয়েছে (اتَّقُوا اللَّاعِنَيْنِ) ‘‘তোমরা অভিশাপকারীদের থেকে বেঁচে থাকো’’। অর্থাৎ- তোমরা অভিশাপপ্রাপ্তদের কর্ম থেকে বেঁচে থাকো। এখানে ইস্মে ফায়েলটি ইস্মে মাফউল অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একটি হলো জন-চলাচলের রাস্তায় পেশাব-পায়খানা করা আর অপরটি ছায়াযুক্ত স্থান যেখানে বসে মানুষ বিশ্রাম করে বা সফরের সময় যাত্রা বিরতি দিয়ে বাহন বসায় এবং নিজেরা বিশ্রাম নেয় সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করা। অতএব হাদীসটি প্রমাণ করে জনতার রাস্তায় এবং তাদের ছায়াযুক্ত বিশ্রামের স্থানে পেশাব-পায়খানা করা হারাম। কারণ এর ফলে মুসলিমরা তার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে অপবিত্র এবং দুর্গন্ধের জন্য কষ্ট পায়।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৪০-[৭] আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ পানি পান করার সময় যেন পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে, শৌচাগারে গেলে ডান হাতে নিজের পুরুষাঙ্গকে না ধরে এবং নিজের ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا شرب أحدكُم فَلَا ينتنفس فِي الْإِنَاءِ وَإِذَا أَتَى الْخَلَاءَ فَلَا يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِينِهِ وَلَا يَتَمَسَّحْ بِيَمِينِهِ»
ব্যাখ্যা: قوله (فَلَا يَتَنَفَّسْ فِي الْإِنَاءِ) ‘‘সে যেন পাত্রে শ্বাস না নেয়’’। অর্থাৎ- পাত্রের অভ্যন্তরে শ্বাস নিবে না। কারণ শ্বাস প্রশ্বাসের উষ্ণতার ফলে তৃষ্ণা নিবারণকারী পানির উপশমন ক্ষমতা কমে যায়। অথবা তাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে জীবাণু পতিত হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। বরং পাত্র থেকে মুখ তুলে বাইরে শ্বাস নিয়ে পুনরায় পানি পান করবে।
وقوله (فَلَا يَمَسَّ ذَكَرَه بِيَمِينِه) ‘‘সে যেন প্রয়োজন পূরণের সময় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে’’। অন্য বর্ণনায় রয়েছে إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَمَسُّ ذَكَرَه بِيَمِيْنِه (অর্থাৎ- যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে সে যেন ডান হাত দিয়ে স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে)। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে لَا يَمَسُّ أَحَدُكُمْ ذَكَرَه بِيَمِيْنِه وَهُوَ يَبُوْلُ অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের কেউ যেন পেশাবরত অবস্থায় ডান হাত দ্বারা স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ না করে’’। উপরোক্ত সবগুলো বর্ণনা প্রমাণ করে যে পুরুষাঙ্গ স্পর্শের নিষেধাজ্ঞাটা পেশাবরত অবস্থার সাথে শর্তযুক্ত। এছাড়া অন্য অবস্থায় তা বৈধ। সর্বাবস্থায় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা নিষেধ সম্পর্কিত যে সকল বর্ণনা এসেছে এগুলোর উৎসস্থল একই।
আবার কেউ কেউ বলেনঃ সর্বাবস্থায় এ বিষয়টি নিষিদ্ধ হওয়াটাই যথাযথ হওয়া সত্ত্বেও নিষেধ করেছেন। কেননা প্রস্রাবরত অবস্থায় তা স্পর্শ করার প্রয়োজন। আর ত্বলক্ব বিন ‘আলী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিও ১ম উক্তিকে সমর্থন করে যেখানে ‘‘তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লজ্জাস্থান স্পর্শ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন যে, তাতো তোমার শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র।’’ ত্বলক্ব (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি সর্বাবস্থায় তা স্পর্শ করা বৈধতা প্রমাণ করে। তবে আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)-এর সহীহ হাদীসটির মাধ্যমে প্রস্রাবরত অবস্থাটি বৈধতা থেকে বের হয়ে গেল এবং অন্য অবস্থায় তা বৈধতার উপর অবশিষ্ট রইল। ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) নিষেধের কারণ ডান হাতের মর্যাদা রক্ষা। হাদীসটি উল্লিখিত তিনটি বিষয় যথা পানি পানের সময় পাত্রে শ্বাস ফেলা, প্রস্রাব করাকালে ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ এবং ডান হাত দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ। কেননা নাহীর (নিষেধাজ্ঞার) মূল অর্থ হলো হারাম করা যদি অন্য কোন অর্থে গ্রহণের কারণ না থাকে। এখানে সে ধরনের কোন কারণ নেই। তবে জমহূরের মতে এখানে নাহী দ্বারা উদ্দেশ্য নাহীয়ে তানযীহি (অপছন্দনীয়)।
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৪১-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করার সময় যেন ভালো করে নাক ঝেড়ে নেয় এবং ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করার সময় বেজোড় সংখ্যায় ঢিলা (তিন, পাঁচ ও সাত) ব্যবহার করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: (قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ تَوَضَّأَ فَلْيَسْتَنْثِرْ وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فليوتر
ব্যাখ্যা: (اَلاٍسْتِنْثَارْ) ‘‘আল ইসতিনসা-র’’ হলো নাকে পানি দিয়ে ঝাড়া, তবে এ হাদীসে (اَلاِسْتِنْشَاقْ) ‘‘আল ইসতিনশা-ক্ব’’ উল্লেখ হয়নি। কেননা ‘‘আল ইসতিনসা-র’’ উল্লেখ করার মাধ্যমে ‘‘আল ইসতিনশা-ক্ব’’ বুঝানো হয়েছে। (وَمَنْ اسْتَجْمَرَ) ‘‘পাথরের মাধ্যমে ঢিলা নেয়া’’। এখানে একটা ঢিলা ব্যবহার করা অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু এই মুতলাক (সাধারণ) বিধানটি অন্য একাধিক শর্তযুক্ত বিধানের উপর বহন করে। শর্তযুক্ত বিধান হলো তিনটি, পাঁচটি ও সাতটি বা এর চেয়েও বেশী। আবশ্যক হলো তিনটি। আর তিনের অধিক ঢিলা ব্যবহার করা মুসতাহাব। কেননা রসূলূল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি তিনের অধিক ঢিলা ব্যবহার করবে না, তার কোন ক্ষতি নেই।’’ (মুত্তাফাকুন ‘আলায়হি)
পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৪২-[৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানায় যেতেন। আমি এবং অন্য এক বালক পানির পাত্র ও বর্শাধারী একটি লাঠি নিয়ে যেতাম। সে পানি দিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শৌচ কার্য সমাধা করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ اَدَابِ الْخَلَاءِ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ الْخَلَاءَ فَأَحْمِلُ أَنَا وَغُلَامٌ إِدَاوَةً مِنْ مَاءٍ وَعَنَزَةً يستنجي بِالْمَاءِ
ব্যাখ্যা: قوله (يَدْخُلُ الْخَلَاءَ) ‘‘তিনি খানায় প্রবেশ করতেন’’ এখানে খানা দ্বারা উদ্দেশ্য ফাঁকা ময়দান যা (عَنَزَةً) এ শব্দ দ্বারা প্রতীয়মান হয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করে ‘আনাযাকে সুতরাহ্ (সুতরা) করে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন, এর উপর কাপড় রেখে পর্দা করতেন, তাঁর পার্শ্বে এটি প্রোথিত করতেন এবং এর পাশ দিয়ে অতিক্রমে মনস্থকারীর নিষেধাজ্ঞা বা সতর্কবাণী স্বরূপ। এর দ্বারা শক্তভূমি খনন করতেন যাতে প্রস্রাবের সময় তা নিজের দিকে ছিটকে না আসে, এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজন পূরণের সময়ও তিনি এটি ব্যবহার করতেন।
(غُلَامٌ) গোলাম উঠতি বয়সী তরুণকে বলা হয়। কেউ কেউ বলেন সাত বছর বয়স পর্যন্ত গোলাম বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, দাড়ি দেখা দেওয়ার আগ পর্যন্ত গোলাম বলা হয়। তবে অন্যদেরও রূপকভাবে গোলাম বলা হয়। এখানে ‘গোলাম’ দ্বারা কে তা নিয়ে বিভিন্ন উক্তি এসেছে। যেমন কেউ কেউ বলেছেন অন্য একজন গোলাম দ্বারা আনাস (রাঃ) ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-কে বুঝিয়েছেন। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জুতার ফিতা বহন করতেন। আবার অন্যরা বলেছেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি। কেউ কেউ বলেছেনঃ জাবির (রাঃ) বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)। এ হাদীসটি ছোট ছেলেকে খাদেম হিসেবে গ্রহণের বৈধতার দলীল।
قوله (يَسْتَنْجِىْ بِالْمَاءِ) (তিনি পানি দ্বারা শৌচকার্য করতেন) মুল্লা ‘আলী ক্বারীর ভাষ্যমতে আনাস (রাঃ) এবং অন্য সাহাবী (রাঃ)-এর বর্ণনা হতে পাওয়া যায় যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা)য় শুধু পানি ব্যবহার করতেন আবার কখনো শুধু পাথর ব্যবহার করতেন। তবে অধিকাংশ সময় তিনি দু’টোই ব্যবহার করতেন। অতএব, এর মাধ্যমে মালিকীদের রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি দ্বারা ইসতিনজা (ইস্তিঞ্জা/ইস্তেঞ্জা/ইসতেনজা) করেননি মর্মে যে দাবী রয়েছে তা প্রত্যাখ্যাত হলো।
إِدَاوَةً (ইদা-ওয়াহ্) হলো পানি রাখার জন্য চামড়ার তৈরি ছোট পাত্র।
عَنَزَةً (‘আনাযাহ্) হলো লাঠির চেয়ে লম্বা বর্শার চেয়ে খাটো দুই দাঁতবিশিষ্ট একটি বল্লম জাতীয় বস্ত্ত।