লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - পায়খানা-প্রস্রাবের আদব
৩৫২-[১৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যায় লাগায়। যে এভাবে করলো সে ভালো করলো, আর যে এভাবে করলো না সে গর্হিত কাজ করলো না। আর যে ব্যক্তি (প্রস্রাব-পায়খানা করার পর) ঢিলা ব্যবহার করে সে যেন বেজোড় ঢিলা ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি এভাবে করলো সে ভালো করলো, আর যে ব্যক্তি করলো না সে গর্হিত কাজ করলো না। যে ব্যক্তি খাবার খেলো এবং (খাবারের পর) খিলাল দ্বারা দাঁত হতে কিছু বের করলো, সে যেন তা মুখ থেকে ফেলে দেয়। আর যা জিহবা দিয়ে বের করে নেয় তা যেন গিলে ফেলে। যে এভাবে করলো সে উত্তম কাজ করলো, আর যে এরূপ করলো না সে গর্হিত কাজ করলো না। যে লোক পায়খানায় যায় সে যেন পর্দা করে। পর্দা করার জন্য যদি সে বালুর স্তূপ ছাড়া কিছু না পায় তাহলে স্তূপের দিকে যেন পিঠ দিয়ে বসে (কাপড় দিয়ে সামনের দিক ঢেকে রাখে)। কারণ শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের বসার স্থান নিয়ে খেলা করে। যে এরূপ করলো ভালো করলো, আর না করলে মন্দ কিছু করলো না। (আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্ ও দারিমী)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حرج وَمن أكل فَمَا تخَلّل فليلفظ وَمَا لَاكَ بِلِسَانِهِ فَلْيَبْتَلِعْ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ وَمَنْ أَتَى الْغَائِط فليستتر وَمن لَمْ يَجِدْ إِلَّا أَنْ يَجْمَعَ كَثِيبًا مِنْ رَمْلٍ فَلْيَسْتَدْبِرْهُ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَلْعَبُ بِمَقَاعِدِ بَنِي آدَمَ مَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَحْسَنَ وَمَنْ لَا فَلَا حَرَجَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ والدارمي
ব্যাখ্যা: قوله (مَنِ اكْتَحَلَ فَلْيُوتِرْ) ‘‘যে ব্যক্তি সুরমা ব্যবহার করতে চায় সে যেন বিজোড় সংখ্যকবার করে’’, অর্থাৎ- সে যেন উভয় চক্ষুতে ধারাবাহিকভাবে তিনবার ব্যবহার করে। কারো কারো মতে ডান চক্ষুতে তিনবার এবং বাম চক্ষুতে দু’বার যাতে উভয় চক্ষুর সমষ্টি বিজোড় হয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘আমল ছিল তিনবার করে ব্যবহার করা। যেমনটি শামায়িলে তিরমিযীতে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাত্রে উভয় চক্ষুতে তিনবার করে সুরমা ব্যবহার করতেন। যে ব্যক্তি এরূপ করবে তথা তিনবার করে ব্যবহার করবে সে ভালো কাজ করবে যার বিনিময় পাবে। কেননা তা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত।
قوله (مَنْ لَا فَلَا حَرَجَ) অর্থাৎ- কেউ যদি এরূপ করতে না পারে তবে কোন সমস্যা বা পাপ হবে না। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এটিই প্রমাণ করে যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল নির্দেশই আবশ্যকতা বুঝায় না। নইলে لَا حَرَجَ (কোন গুনাহ হবে না) বলে আদেশের আবশ্যকতা রহিতকরণে করা হতো না।
قوله (وَمَنْ أَكَلَ فَمَا تَخَلَّلَ فَلْيَلْفِظْ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি খায় অতঃপর কাঠি বা অন্য কিছু দ্বারা দাঁতের অভ্যন্তর থেকে যেসব খাদ্যকণা বের করে সে যেন তা না খেয়ে মুখ থেকে বের করে ফেলে।
قوله (وَمَا لَاكَ بِلِسَانِه فَلْيَبْتَلِعْ) অর্থাৎ- যা সে চর্বন করে তা গলধঃকরণ করবে, আবার কেউ কেউ বলেনঃ এর অর্থ হলো আহারকারীর উচিত কঠিন কোন কিছু দ্বারা দাঁতের অভ্যন্তরে থেকে বস্ত্ত বের করা না খেয়ে ফেলে দেয়া। কারণ তাতে ময়লা রয়েছে। আর জিহবা দ্বারা বের করা বস্ত্ত গলধঃকরণ করা। কেননা সে তা খারাপ মনে করে না।
(وَمَا لَاكَ) দ্বারা এ উদ্দেশ হতে পারে দাঁতের মাড়ি এবং তালুতে লেগে থাকা অবশিষ্ট খাবার যা সে জিহবার মাধ্যমে বের করে, তা ভক্ষণ করবে। আর দাঁতের মাঝের খাবার সে না আহার করে ফেলে দিবে চাই তা কঠিন কোন কিছু দ্বারা বের করুক বা জিহবার দ্বারা বের করুক। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পরিবর্তন সাধিত হয়।
قوله (فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَلْعَبُ بِمَقَاعِدِ بَنِي ادَمَ) ‘‘নিশ্চয় শায়ত্বন (শয়তান) আদম সন্তানের পিছন নিয়ে খেলা করে’’, অর্থাৎ- টয়লেট বা পায়খানা করার স্থানে শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের অনিষ্ট করার মতলব করে। সে সেখানে উপস্থিত হতে অনিষ্ট ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। কারণ সেখানে আল্লাহর যিকর বর্জন করা হয়।
এজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসম্ভব পায়খানা-পেশাবের সময় নিজেদের আড়াল করার আদেশ প্রদান করেছেন পিছনে বালির ঢিবি তৈরি করে হলেও পাশাপাশি লোকচক্ষুর সম্মুখীন হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। সাথে সাথে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রস্রাব যাতে শরীর কাপড়ে ছিটে না লাগে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে বলেছেন।