পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬১-[২২] রবী’আহ্ আল জুরাশী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে স্বপ্নে কতক মালাক দেখানো হলো এবং মালাক তাঁকে বললেন, আপনার চোখ ঘুমিয়ে থাকুক, কান শুনতে থাকুক এবং অন্তর বুঝতে থাকুক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার চোখ দু’টি ঘুমালো, আমার কান দু’টি শুনলো এবং আমার অন্তর বুঝলো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তখন আমাকে (অর্থাৎ- দৃষ্টান্ত স্বরূপ) বলা হলো, যেন একজন মহৎ ব্যক্তি একটি ঘর তৈরি করলেন এবং এতে দা’ওয়াতের ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর (লোকেদের আহবানের জন্য) একজন আহবানকারীকে পাঠালেন। অতঃপর যে ব্যক্তি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিল, সে ঘরে প্রবেশ করতে পারলো এবং খেতেও পারলো। আর গৃহস্বামীও তার প্রতি সন্তুষ্ট হলেন। অপরদিকে যে ব্যক্তি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিলো না, সে ঘরেও ঢুকলো না, খেতেও পারলো না এবং গৃহস্বামীও তার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন। অতঃপর মালায়িকাহ্ (এর ব্যাখ্যারূপে) বললেন, এ দৃষ্টান্তের গৃহস্বামী হলেন আল্লাহ, আহবানকারী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঘর হলো ইসলাম এবং খাবারের স্থান হলো জান্নাত। (দারিমী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
عَن ربيعَة الجرشِي يَقُول أُتِي النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقِيلَ لَهُ لِتَنَمْ عَيْنُكَ وَلِتَسْمَعْ أُذُنُكَ وَلِيَعْقِلْ قَلْبُكَ قَالَ فَنَامَتْ عَيْنَايَ وَسَمِعَتْ أُذُنَايَ وَعَقَلَ قَلْبِي قَالَ فَقِيلَ لِي سيد بنى دَارا فَصنعَ مَأْدُبَةً وَأَرْسَلَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَرَضِيَ عَنْهُ السَّيِّدُ وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلم يطعم مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَسَخِطَ عَلَيْهِ السَّيِّدُ قَالَ فَاللَّهُ السَّيِّدُ وَمُحَمَّدٌ الدَّاعِي وَالدَّارُ الْإِسْلَامُ وَالْمَأْدُبَةُ الْجَنَّةُ. رَوَاهُ الدَّارمِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে ইসলামকে ঘরের সঙ্গে তুলনা করা এবং জান্নাতকে যিয়াফত হিসেবে আখ্যা দেয়ার কারণ এই যে, জান্নাতে যাওয়ার উপকরণ হলো ইসলাম এবং জান্নাতের দিকে আহবান করা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হয় না যতক্ষণ না ইসলামের দিকে আহবান করা হয়। আর জান্নাতের নি‘আমাতরাজি যখন উদ্দেশ্য, তাই জান্নাতকে সরাসরি যিয়াফত বা খাদ্য বলা হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬২-[২৩] আবূ রাফি’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের কাউকেও যেন এরূপ অবস্থায় না দেখি যে, সে তার গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। আর তার নিকট আমার নির্দেশাবলীর কোন একটি পৌঁছবে, যাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করেছি অথবা কোন বিষয় নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানি না, যা কিছু আমি আল্লাহর কিতাবে পাবো তার অনুসরণ করবো। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী’র ’’দালায়িলুন্ নুবুওয়্যাহ্’’ গ্রন্থে)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن أبي رَافع وَغَيره رَفعه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ أَمر مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لَا أَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة. وَقَالَ التِّرْمِذِيّ حسن صَحِيح
ব্যাখ্যা: হাদীসও যে শারী‘আতের অকাট্য দলীল এটা তার প্রমাণ। সুতরাং হাদীস থেকে বিমুখ ব্যক্তি অবশ্যই কুরআনকেও অমান্যকারী হবে। হাদীসটি নুবূওয়্যাতের দলীল এবং অন্যতম নিদর্শন। এই হাদীসে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যে ঘটেও গেছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের লোকেদের নিকট যা মোটেও অস্পষ্ট নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৩-[২৪] মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে তার অনুরূপ জিনিসও। জেনে রেখ, শীঘ্রই এমন এক সময় এসে যাবে, যখন কোন উদরভর্তি বড় লোক তার গদিতে বসে বলবে, তোমরা কেবল এ কুরআনকেই গ্রহণ করবে। এতে যা হালাল পাবে তাকেই হালাল জানবে এবং যা এতে হারাম পাবে তাকেই হারাম মনে করবে। অথচ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম বলেছেন, তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারই অনুরূপ। তাই জেনে রেখ! গৃহপালিত গাধা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং শিকারী দাঁতওয়ালা কোন হিংস্র পশুও হালাল নয়। এমতাবস্থায় মুসলিম রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকের কোন হারানো বস্ত্তও তোমাদের জন্য হালাল নয়, তবে সে যদি সেটির মুখাপেক্ষী না হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। যখন কোন লোক কোন সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে, তাদের উচিত ঐ লোকের মেহমানদারি করা। যদি তারা তার মেহমানদারি না করে তবে সে জোরপূর্বক তাদের নিকট থেকে তার মেহমানদারির সম-পরিমাণ জিনিস আদায় করার অধিকার রাখবে (অথচ কুরআনে এ সকল বিষয়ের উল্লেখ নেই)। (আবূ দাঊদ ও দারিমী; তবে ইবনু মাজাহ ’’কামা- হাররামাল্ল-হু’’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن الْمِقْدَام بن معدي كرب عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنه قَالَ: «أَلا إِنِّي أُوتيت الْكتاب وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانٌ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ الله كَمَا حَرَّمَ اللَّهُ أَلَا لَا يَحِلُّ لَكُمُ لحم الْحِمَارُ الْأَهْلِيُّ وَلَا كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبع وَلَا لُقَطَةُ مُعَاهَدٍ إِلَّا أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يُقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَى الدَّارِمِيُّ نَحْوَهُ وَكَذَا ابْنُ مَاجَهْ إِلَى قَوْلِهِ: «كَمَا حَرَّمَ الله»
ব্যাখ্যা: ইমাম বায়হাক্বী বলেছেন, হাদীসটিতে দু’টো দিক রয়েছে। প্রথমত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওয়াহী দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয়ত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ওয়াহীর মাধ্যমে কিতাব দেয়া হয়েছে, যা তিলাওয়াত করা হয়। অনুরূপভাবে এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ- কিতাবে যা আছে তা বর্ণনা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
‘আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেনঃ এ হাদীস দ্বারা খারিজী সম্প্রদায়কে সতর্ক করা হয়েছে যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঐ সকল সুন্নাতের বিরোধিতা করে যেগুলোর উল্লেখ কুরআনে নেই। তারা শুধুমাত্র কুরআনের ব্যহ্যিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে আর যেগুলো কিতাবের ব্যাখ্যা সম্বলিত সুন্নাত সেগুলোকে বর্জন করে, ফলে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
হাদীসের শেষাংশের ব্যাখ্যা হলো, কোন ব্যক্তি যদি কোন মেহমানের হক যথারীতি আদায় না করে, তাহলে মেজবানের নিকট থেকে প্রয়োজন অনুপাতে কোন কিছু গ্রহণ করা মেহমানের জন্য বৈধ।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৪-[২৫] ’ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাহ্ (খুতবা) দিতে উঠে বললেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি নিজের গদিতে ঠেস দিয়ে বসে এ কথা মনে করে যে, আল্লাহ তা’আলা যা কিছু এ কুরআনে হারাম করেছেন তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? জেনে রেখ, আল্লাহর কসম! নিঃসন্দেহে আমি নির্দেশ করেছি, আমি উপদেশ দিয়েছি এবং অনেক বিষয় নিষেধও করেছি, আর এর পরিমাণ কুরআনের হুকুমের সমান, বরং এর চেয়ে অধিক হবে। তোমরা মনে রাখবে যে, অনুমতি ব্যতীত আহলি কিতাব যিম্মীদের বাসগৃহে প্রবেশ করা, তাদের নারীদের প্রহার করা এবং তাদের ফসল বা শস্য খাওয়াকেও আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য হালাল করেননি, যদি তারা তাদের ওপর ধার্যকৃত কর আদায় করে দেয় (এসব বিষয় কুরআনে নেই, আমার দ্বারাই আল্লাহ এসব হারাম করেছেন)। (আবূ দাঊদ; কিন্তু তার হাদীসের সানাদে একজন রাবী আশ্’আস্ ইবনু শু’বাহ্ আল মিস্সীসী রয়েছেন, যার ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ সমালোচনা করেছেন)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن الْعِرْبَاض بن سَارِيَة قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أيحسب أحدكُم متكأ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَظُنُّ أَنَّ اللَّهَ لَمْ يُحَرِّمْ شَيْئًا إِلَّا مَا فِي هَذَا الْقُرْآنِ أَلَا وَإِنِّي وَاللَّهِ قَدْ أَمَرْتُ وَوَعَظْتُ وَنَهَيْتُ عَنَ أَشْيَاءَ إِنَّهَا لَمِثْلُ الْقُرْآنِ أَوْ أَكْثَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يُحِلَّ لَكُمْ أَنْ تَدْخُلُوا بُيُوتَ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا بِإِذْنٍ وَلَا ضَرْبَ نِسَائِهِمْ وَلَا أَكْلَ ثِمَارِهِمْ إِذَا أَعْطَوْكُمُ الَّذِي عَلَيْهِمْ» رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَفِي إِسْنَادِهِ: أَشْعَثُ بْنُ شُعْبَة المصِّيصِي قد تكلم فِيهِ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের সার কথা এই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলা সকল হারাম বস্তুকে কুরআনের ভিতর সীমাবদ্ধ করে দেননি। বরং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক কিছু হারাম করেছেন। তবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হারাম করার বিষয়টি কুরআন থেকেই সংগৃহীত। তাই ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেনঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে সকল ফায়সালা বরং তা কুরআন থেকে সংগৃহীত।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৫-[২৬] উক্ত রাবী [’ইরবায ইবনু সারিয়াহ্] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে গেলেন। আমাদের উদ্দেশে এমন মর্মস্পর্শী নাসীহাত করলেন যাতে আমাদের চোখ গড়িয়ে পানি বইতে লাগল। অন্তরে ভয় সৃষ্টি হলো মনে হচ্ছিল বুঝি উপদেশ দানকারীর যেন জীবনের এটাই শেষ উপদেশ। এক ব্যক্তি আবেদন করলো, হে আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে আরো কিছু উপদেশ দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করার, (ইমাম বা নেতার) আদেশ শোনার ও (তাঁর) অনুগত থাকতে উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে হাবশী (কৃষ্ণাঙ্গ) গোলাম হয়। আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে সে অনেক মতভেদ দেখবে। এমতাবস্থায় তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দীনের ভেতরে নতুন নতুন কথার (বিদ্’আত) উদ্ভব ঘটানো হতে বেঁচে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নতুন কথাই [বা কাজ শারী’আতে আবিষ্কার করা যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবীগণ করেননি তা] বিদ্’আত এবং প্রত্যেকটা বিদ্’আতই ভ্রষ্টতা। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ) কিন্তু এ বর্ণনায় তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায়ের কথা উল্লেখ করেননি।[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْهُ: قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا قَالَ: «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ كَانَ عبدا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ من يَعش مِنْكُم يرى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ إِلَّا أَنَّهُمَا لَمْ يَذْكُرَا الصَّلَاةَ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি বিষয়ের নির্দেশ নিয়েছেন। তাক্বওয়া অর্জনের নির্দেশ, আর তা এই যে, আল্লাহ কর্তৃক সকল নির্দেশের বাস্তবায়ন এবং সকল নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
অতঃপর নির্দেশ করেছেন, আমীর বা নেতার কথা শুনা এবং আর অনুগত্য করা, যতক্ষণ না সে কোন নাফরমানীর নির্দেশ দিবে। কেননা, আল্লাহর নাফরমানী হবে এমন বিষয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য নেই। এ বিষয়ে হাকিম-এর বর্ণনায় রয়েছেঃ যদি হাবশী গোলামকেও তোমাদের আমীর করে দেয়া হয়, তারও আনুগত্য করবে।
এরপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার পরে যখন তোমরা মতবিরোধ দেখবে, তখন আমার ও খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরবে। কারণ এই যে, খুলাফায়ি রাশিদার তরীকা খোদ রসূলেরই তরীকা, তারা সার্বিক অবস্থায় এবং সকল বিষয়ে রসূলের তরীকা অনুযায়ী আ‘মাল করতেন।
মাসাবীহ গ্রন্থের শারাহতে ‘আল্লামা তুরবিশতী বলেছেন, খুলাফায়ি রাশিদাহ্ দ্বারা উদ্দেশ হচ্ছে, প্রথম চার খলীফাহ্। কারণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খিলাফাতের সময়কাল হবে ত্রিশ বছর। আর ত্রিশ বছর শেষ হয় ‘আলী (রাঃ)-এর খিলাফাতের মাধ্যমে। অবশ্য এর দ্বারা অন্যদের খিলাফাতের নিষেধাজ্ঞা বুঝায় না।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৬-[২৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশে) একটি (সরল) রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা আল্লাহর পথ। এরপর তিনি এ রেখার ডানে ও বামে আরো কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এগুলোও পথ। এসব প্রত্যেক পথের উপর শায়ত্বন (শয়তান) দাঁড়িয়ে থাকে। এরা (মানুষকে) তাদের পথের দিকে আহবান করে। অতঃপর তিনি তাঁর কথার প্রমাণ স্বরূপ কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেনঃ ’’নিশ্চয়ই এটাই আমার সহজ সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথের অনুসরণ করে চলো .....’’ (সূরাহ্ আল আন্’আম ৬: ১৬৩) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (আহমাদ, নাসায়ী ও দারিমী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا ثُمَّ قَالَ: «هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ وَقَالَ هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ» ثمَّ قَرَأَ (إِن هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبعُوهُ)
الْآيَة. رَوَاهُ أَحْمد وَالنَّسَائِيّ والدارمي
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্য এই যে, সঠিক পথ ভ্রান্ত-পথের সঙ্গে একত্রিত হওয়া অসম্ভব এবং সঠিক পথের পথিক ও সিরাতে মুসতাক্বীমের উপর অবিচল ব্যক্তিরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল। আর সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত ব্যক্তিরা মুক্তিপ্রাপ্ত নয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৭-[২৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার মনের প্রবৃত্তি আমার আনীত দীন ও শারী’আতের অধীন না হবে- (শারহুস্ সুন্নাহ্)। ইমাম নাবাবী তার ’’আরবা’ঈন’’ গ্রন্থে বলেছেন, এটা একটা সহীহ হাদীস। আমরা কিতাবুল হুজ্জাত-এ হাদীসটি সহীহ সানাদসহ বর্ণনা করেছি।[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ» رَوَاهُ فِي شَرْحِ السُّنَّةَ وَقَالَ النَّوَوِيُّ فِي أَرْبَعِينِهِ: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ رَوَيْنَاهُ فِي كتاب الْحجَّة بِإِسْنَاد صَحِيح
ব্যাখ্যা: হাদীসটির ব্যাখ্যা এরূপ হতে পারে যে, একজন ব্যক্তি আমার নিয়ে আসা দীন ও শারী‘আতের পূর্ণ অনুসারী যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ সে ঈমানদার হতে পারবে না। অর্থাৎ- মুনাফিক্বদের মতো বাধ্য হয়ে বা তলোয়ারের ভয়ে ঈমান আনলে হবে না। অথবা কোন ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মু‘মিন হবে না যতক্ষণ না আমার নিয়ে আসা বিষয়াদির অনুসারী হবে। অর্থাৎ- শারী‘আতের বিষয়কে প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য দিতে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৮-[২৯] বিলাল ইবনু হারিস আল মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কোন একটি সুন্নাতকে যিন্দা করেছে, যে সুন্নাত আমার পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, তার এত সাওয়াব হবে যত সাওয়াব এ সুন্নাত ’আমলকারীদের হবে, কিন্তু সুন্নাতের উপর ’আমলকারীদের সাওয়াবে কোন অংশ হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর নতুন (বিদ্’আত) পথ সৃষ্টি করবে, যাতে আল্লাহ ও তাঁর রসূল রাযী-খুশী নন, তার জন্য সে সকল লোকের গুনাহ চাপিয়ে দেয়া হবে, যারা তার সাথে ’আমল করবে, অথচ তাদের গুনাহের কোন অংশ হ্রাস করবে না। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ بِلَالِ بْنِ الْحَارِثِ الْمُزَنِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من أَحْيَا سُنَّةً مِنْ سُنَّتِي قَدْ أُمِيتَتْ بَعْدِي فَإِنَّ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلَ أُجُورِ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنِ ابْتَدَعَ بِدْعَةً ضَلَالَةً لَا يَرْضَاهَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ عَمِلَ بِهَا لَا يَنْقُصُ من أوزارهم شَيْئا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে সুন্নাহ্ বলা হয়েছে ঐ সকল দীনী বিধানাবলীকে যেগুলো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তন করেছেন। ঐগুলোর মধ্যে কিছু ফরয হিসেবে আছে যেমনঃ যাকাতুল ফিতর। আর কিছু আছে যা ফরয নয়। যেমনঃ দু‘ ঈদের সালাত (সালাত/নামায/নামাজ)। এখানে সুন্নাহকে জীবিত করার অর্থ হচ্ছেঃ ঐগুলোর উপর ‘আমল করা এবং মানুষকে ‘আমলের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেগুলোর ‘আমল ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৬৯-[৩০] এ বর্ণনাটিকে ইবনু মাজাহ (রহঃ) কাসীর ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) থেকে, তিনি তার পিতা হতে এবং তিনি তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন।
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ عَنْ كَثِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭০-[৩১] ’আমর ইবনু ’আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে দীন (ইসলাম) হিজাযের (সউদী ’আরবের) দিকে এমনভাবে ফিরে আসবে যেভাবে সাপ (পরিশেষে) তার গর্তের দিকে ফিরে আসে এবং দীন হিজাযেই আশ্রয় নিবে যেভাবে পার্বত্য মেষ পর্বত-শিখরে আশ্রয় নিয়ে থাকে। দীন নিঃসঙ্গ প্রবাসীর (গরীবীর) ন্যায় যাত্রা শুরু করেছে, আবার তা ফিরে আসবে যেভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। অতএব অপরিচিতের জন্য সুসংবাদ রয়েছে, তারা ঐসব লোক যারা আমার পর লোকেদের দ্বারা নষ্ট করা সুন্নাতকে পুনঃ জারী করে। (তিরমিযী)[1]
১ম অংশ তথা إِنَّ الدِّينَ ..... إِلَى جُحْرِهَا বুখারী মুসলিমে রয়েছে।
৩য় অংশ তথা إِنَّ الدِّيْنَ بَدَأَ ..... فَطُوْبىْ لِلْغُرَبَاءِ মুসলিমে রয়েছে। আর وَهُمُ الَّذِيْنَ ..... অংশটুকু ইমাম খাত্ত্বাবী ও আহমাদ (রহঃ) এক স্থানে দুর্বল সানাদে বর্ণনা করলেও মুসনাদে আহমাদ-এর অন্যান্য স্থানে তা সহীহ সানাদে প্রমাণিত রয়েছে।
কিন্তু ২য় অংশ তথা وَلَيَعْقِلَنَّ الدِّيْنُ مِنَ الْحِجَازِ সম্পর্কে শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেনঃ আমি এ অংশটুকুর কোন শাহিদ বর্ণনা পাইনি।
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ عَوْفٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الدِّينَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْحِجَازِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا وَلَيَعْقِلَنَّ الدِّينُ مِنَ الْحِجَازِ مِعْقَلَ الْأُرْوِيَّةِ مِنْ رَأْسِ الْجَبَلِ إِنَّ الدِّينَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ وَهُمُ الَّذِينَ يُصْلِحُونَ مَا أَفْسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدِي من سنتي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা : ইতিপূর্বে ১৬০ নং হাদীসে বলা হয়েছে ইসলাম সবশেষে মদীনায় গিয়ে আশ্রয় নিবে। আর এখানে বলা হলো যে, হিজাযে আশ্রয় নিবে। এ দু‘টোর সমন্বয় হচ্ছে প্রথম হিজাযে, অতঃপর মদীনায় আশ্রয় গ্রহণ করবে।
এখানে হাদীসের ভাবার্থ এই যে, শেষ যামানায় যখন ফিতনাহ্ ফাসাদ প্রকাশ পাবে এবং কুফরী ও যুলম-অত্যাচার মুসলিম দেশগুলোতে প্রাধান্য বিস্তার করবে তখন দীন হিজাযে গিয়ে আশ্রয় নিবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭১-[৩২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতের ওপর এমন একটি সময় আসবে যেমন বনী ইসরাঈলের ওপর এসেছিল। যেমন এক পায়ের জুতা অপর পায়ের জুতার ঠিক সমান হয়। এমনকি বনী ইসরাঈলের মধ্যে যদি কেউ তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে কুকর্ম করে থাকে, তাহলে আমার উম্মাতের মধ্যেও এমন লোক হবে যারা অনুরূপ কাজ করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরক্বায় (দলে) বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার উম্মাত বিভক্ত হবে ৭৩ ফিরক্বায়। এদের মধ্যে একটি ব্যতীত সব দলই জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতী দল কারা? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যার ওপর আমি ও আমার সাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত আছি, যারা তার উপর থাকবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنَّ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلَانِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمن هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وأصحابي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে যে বিভক্তির কথা বলা হয়েছে তা সাধারণ বিভক্তি নয় বরং এখানে বলা হয়েছে ঐ বিভক্তির কথা যা দ্বারা বিভিন্ন দলে, গ্রুপে, ফিরকায় এবং জামা‘আতে বিভক্ত হয়ে এক অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পারস্পরিক সম্পর্ক ভালোবাসা এবং সহযোগিতার উপর নেই, বরং এর বিপরীতে একজন থেকে অন্যজন বিচ্ছিন্ন সম্পর্কহীন ও হিংসা বিদ্বেষের উপর রয়েছে এবং একে অপরকে পথভ্রষ্ট, কাফির ও ফাসিক্ব বলে আখ্যা দিচ্ছে। আর এ অবস্থায় উপনীত হওয়ার কারণ হচ্ছে শারী‘আতের বিষয় নিয়ে মতবিরোধ ও পারস্পরিক বিদ্বেষ পোষণ করা এবং নাবীর সুন্নাত থেকে বের হয়ে যাওয়া।
ই‘তিসাম নামক গ্রন্থে ‘আল্লামা শাত্বিবী বলেছেনঃ হাদীসে বর্ণিত ফিরকাহ্ দ্বারা কেবলমাত্র ‘আক্বীদার মূলনীতিগত ব্যাপারে যারা ফিরকার সৃষ্টি করেছে, যেমনঃ জাবারিয়াহ্, ক্বদারিয়্যাহ্, মুরজিয়াহ্ ও অন্য আরো যাদের কথা বলা হয়েছে শুধু তারাই নয়। বরং কুরআন ও হাদীস প্রমাণ করছে সার্বিক বিষয়ে এবং সাধারণভাবে বিভক্তির উপর যেমন- আল্লাহর বাণীঃ
إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ
‘‘যারা নিজেদের (পূর্ণ পরিণত) দীনকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে নিয়েছে আর (আপন আপন অংশ নিয়ে) দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে তাদের কোন কাজের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ঃ ১৫৯)
এ আয়াতে দীনে বিভক্তির কথা বলা হয়েছে। আর দীন শব্দটি ‘আক্বীদাহ্ ও ‘আক্বীদাগত বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের কথা ও কর্মের অন্তর্ভুক্ত।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭২-[৩৩] আহমাদ ও আবূ দাঊদে মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)হতে (কিছু পার্থক্যের সাথে) বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামে যাবে। আর একটি দল জান্নাতে যাবে। আর সে দলটি হচ্ছে জামা’আত। আর আমার উম্মাতের মধ্যে কয়েকটি দলের উদ্ভব হবে যাদের শরীরে এমন কুপ্রবৃত্তি (বিদ্’আত) ছড়াবে যেমনভাবে জলাতংক রোগ রোগীর সমগ্র শরীরে সঞ্চারণ করে। তার কোন শিরা-উপশিরা বাকি থাকে না, যাতে তা সঞ্চার করে না।[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَفِي رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَأَبِي دَاوُدَ عَنْ مُعَاوِيَةَ: «ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ فِي أُمَّتِي أَقْوَامٌ تَتَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الْأَهْوَاءُ كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لَا يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلَا مَفْصِلٌ إِلَّا دخله»
ব্যাখ্যা: হাদীসে প্রবৃত্তি তথা বিদ্‘আতকে জলাতংক রোগের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, অর্থাৎ- জলাতংক রোগ প্রথমত কুকুরের হয়ে থাকে। অতঃপর সেই কুকুর যাকেই কামড় দেয় তাকেই ঐ রোগে আক্রান্ত করে এবং রোগীর শিরা উপশিরায় তা প্রবেশে মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসে। অনুরূপ প্রবৃত্তির অনুসারী যখন বিদ্‘আতী কার্যক্রম শুরু করে এবং তা অন্যের নিকট পেশ করে তখন সেই ব্যক্তিও তার এই ছোবলে পড়ে বিদ্‘আতী হয়ে যায়, যার পরিণাম হলো জাহান্নাম।
তাই হাদীসে সতর্কবাণী করা হয়েছে বিদ্‘আতীদের সংস্পর্শে না যাওয়ার জন্য।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৩-[৩৪] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আমার গোটা উম্মাতকে; অপর বর্ণনাতে তিনি বলেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদীকে কখনও পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত করবেন না। আল্লাহ তা’আলার হাত (রহমত ও সাহায্য) জামা’আতের উপর রয়েছে। যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (অবশেষে) জাহান্নামে যাবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ لَا يَجْمَعُ أُمَّتِي أَوْ قَالَ: أُمَّةَ مُحَمَّدٍ عَلَى ضَلَالَةٍ وَيَدُ اللَّهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ وَمَنْ شَذَّ شَذَّ فِي النَّار . . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: আমার উম্মাত কুফর ছাড়া অন্য কোন ভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। অথবা ইজতিহাদী কোন ভুলের উপর অথবা কুফর এবং গুনাহের কাজের উপর একমত হবে না।
হাদীসে বলা হয়েছে জামা‘আতবদ্ধদের ওপরে রয়েছে আল্লাহর হাত। অর্থাৎ- জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনকারীদের ওপর আল্লাহর রহমাত এবং সাহায্য রয়েছে। তারা ভয়-ভীতি ও শংকামুক্ত। তারা ফিরকা বা উপদল হবে না। অন্যদিকে যে জামা‘আত থেকে বিচ্যুত হবে সেই হবে জাহান্নামী।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৪-[৩৫] উক্ত রাবী [ইবনু ’উমার (রাঃ)] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বৃহত্তম দলের অনুসরণ কর। কেননা, যে ব্যক্তি দল থেকে আলাদা হয়ে গেছে, সে বিচ্ছিন্ন হয়ে (পরিশেষে) জাহান্নামে যাবে। (ইবনু মাজাহ হাদীসটি আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اتَّبِعُوا السَّوَادَ الْأَعْظَمَ فَإِنَّهُ مَنْ شَذَّ شَذَّ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ من حَدِيث أنس
ব্যাখ্যা: হাদীসে বলা হয়েছে যে, তোমরা সাওয়াতে ‘আযম-এর অনুসরণ করবে। অর্থাৎ- ইমাম বা বাদশার অনুসারী এবং সার্বিক নীতিমালার অনুসারী হিসেবে যে দল বড় তাদের অনুসরণ করবে। অথবা, যারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের পথে আছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত, হাক্বের উপর বিদ্যমান এবং আল্লাহর নিকট সম্মানিত দল। তোমরা তাদের অনুসরণ করবে।
‘আযহার’ নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘উলামাদের মধ্যে যে দলটি বড় তাদের অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্যশীল বড় দল থেকে বিচ্যুত হয়ে নেতার আনুগত্যহীন হয়ে গেছে অথবা মুক্তিপ্রাপ্ত সঠিক জামা‘আত থেকে বের হয়ে গেছে সে জাহান্নামী।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৫-[৩৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ হে বৎস! তুমি যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার অন্তরে কারো প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে কাটাতে পারো তাহলে তাই কর। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَن أنس قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا بُنَيَّ إِنْ قَدَرْتَ أَنْ تصبح وتمسي لَيْسَ فِي قَلْبِكَ غِشٌّ لِأَحَدٍ فَافْعَلْ» ثُمَّ قَالَ: «يَا بني وَذَلِكَ من سنتي وَمن أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجنَّة» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: সকাল-সন্ধ্যার দ্বারা দিন রাতের সব সময়কেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- তুমি সদা-সর্বদা মানুষের সঙ্গে হিংসা-বিদ্বেষ এবং প্রতারণামূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটাই হচ্ছে আমার সুন্নাত আর যে কেউ আমার সুন্নাতের উপর ‘আমল করে তা জারি রাখবে সে যেন আমাকে ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে আমার সঙ্গে জান্নাতী হবে। কেননা, যে যাকে ভালো বাসবে তার হাশর-নশর তারই সঙ্গে হবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৬-[৩৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের বিপর্যয়ের সময় আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য একশত শাহীদের সাওয়াব রয়েছে। (বায়হাক্বী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَمَسَّكَ بِسُنَّتِي عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِي فَلَهُ أجر مائَة شَهِيد»
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত শব্দ ‘‘ফাসাদে উম্মাতী’’- অর্থ হলো বিদ্‘আত, ভ্রষ্টতা এবং পাপাচারীর কাজ যখন বৃদ্ধি পাবে, তখন আমার সুন্নাতকে যে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য একশত উটের সাওয়াব রয়েছে। যেমন দীনকে জীবিত রাখার জন্য কাফিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, বিশেষ করে বিদ্‘আত ও ভ্রষ্টতার কাজ যখন ‘উলামার মাঝে প্রকাশ পাবে তখন তাদের প্রতিরোধ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য কাফিরদের বিরুদ্ধাচরণ করার চেয়ে এ ধরনের ‘আলিমদের প্রতিবাদ করলে সাওয়াব দ্বিগুণ হয়ে থাকে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৭-[৩৮] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইয়াহূদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় কথাবার্তা শুনে থাকি। এসব আমাদের কাছে অনেক ভালো মনে হয়। এসব কথার কিছু কি লিখে রাখার জন্য আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ইয়াহুদী ও নাসারাগণ যেভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তোমরাও কি (তোমাদের দীনের ব্যাপারে) এভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)-ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর পক্ষেও অন্য কোন উপায় ছিল না। (আহমাদ ও বায়হাক্বী-এর শু’আবুল ঈমান-এ বর্ণনা করেছেন)[1]
اَلتَّحَوُّكُ (আত্ তাহাব্বুক) হলো না দেখেই কোন বিষয়ে জড়িয়ে পড়া। হাসান বসরী বলেনঃ হতবুদ্ধি, দিশেহারা, অসহায় হওয়া ইত্যাদি।
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ فَقَالَ إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تُعْجِبُنَا أَفْتَرَى أَنْ نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ فَقَالَ: «أَمُتَهَوِّكُونَ أَنْتُمْ كَمَا تَهَوَّكَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى؟ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً وَلَوْ كَانَ مُوسَى حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلَّا اتِّبَاعِي» . رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَيْهَقِيّ فِي كتاب شعب الايمان
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতকে ইয়াহূদী এবং নাসারাদের মতো দীনের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হতে নিষেধ করেছেন। কারণ তারা আল্লাহর কিতাবকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করে প্রবৃত্তি এবং তাদের ধর্মযাজক ও পুরোহিতদের অনুসরণ করেছে। আর আল্লাহর কিতাবের মাঝে পরিবর্তন করে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে আমি অত্যন্ত সুস্পষ্ট যা পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত, অর্থাৎ- উন্নত ও উত্তম। মূসা (আঃ)-ও যদি জীবিত থাকতেন তাহলে এরই অনুসরণ করতেন। সুতরাং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নুবূওয়্যাত জারি হবার পর মূসা (আঃ)-এর কওমের নিকট থেকে সফলতা লাভের কোন সুযোগই নেই।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৮-[৩৯] আবূ সা’ঈদ আল্ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল (রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) খাবে, সুন্নাতের উপর ’আমল করবে এবং যার অনিষ্ট থেকে মানুষ নিরাপদ থাকবে, সে জান্নাতে যাবে। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! এ ধরনের লোক তো আজকাল অগণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, (ইন-শা-আল্লাহ) আমার পরবর্তী যুগেও এ ধরনের লোক থাকবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَكَلَ طَيِّبًا وَعَمِلَ فِي سُنَّةٍ وَأَمِنَ النَّاسُ بَوَائِقَهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِن هَذَا الْيَوْم لكثيرفي النَّاسِ قَالَ: «وَسَيَكُونُ فِي قُرُونٍ بَعْدِي» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা : হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি হালাল ভক্ষণ করবে এবং বিশুদ্ধভাবে সকল ‘আমল করবে। আল্লাহ নির্দেশ করেছেনঃ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا অর্থাৎ- ‘‘তোমরা হালাল খাও এবং নেক আ‘মাল কর’’- (সূরাহ্ আল মু’মিনূন ২৩ঃ ৫১)। আর তার অন্যায়, অবিচার, প্রতারণা ও কষ্ট থেকে অন্যরা যদি নিরাপদে থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এখানে জান্নাতে প্রবেশের অর্থ হচ্ছে কোন প্রকার শাস্তি ভোগ ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ। অতঃপর যখন বলা হলো যে, ঐ ধরনের আ‘মাল বর্তমানে অনেকের মধ্যেই আছে। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরেও সেটা থাকবে। অর্থাৎ- আমার উম্মাত থেকে কোন সময়েই কল্যাণকর বিষয় বন্ধ হবে না।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৭৯-[৪০] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা এমন যুগে আছ, যে যুগে তোমাদের কেউ তার উপর নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশও ছেড়ে দিলে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর এমন এক যুগ আসবে, যখন কেউ যদি তার প্রতি নির্দেশিত বিষয়ের এক-দশমাংশের উপরও ’আমল করে সে পরিত্রাণ পাবে। (তিরমিযী)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُم فِي زمَان تَرَكَ مِنْكُمْ عُشْرَ مَا أُمِرَ بِهِ هَلَكَ ثُمَّ يَأْتِي زَمَانٌ مَنْ عَمِلَ مِنْهُمْ بِعُشْرِ مَا أَمر بِهِ نجا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে বর্ণিত সে যামানা হলো ইসলামের স্বর্ণযুগ, যে যুগে মুসলিমদের সার্বিক নিরাপত্তা ছিল। নির্দেশিত বিষয় বলতে সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ এখানে ফরয বা আবশ্যকীয় বিষয়াদি কম-বেশী করে করার কোন দিক নেই। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ তোমরা এই যুগে নির্দেশিত বিষয় থেকে এক-দশমাংশ তরক করলেও ধ্বংস হবে। কারণ, সে যুগটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিদ্যমানতায় ও ইসলামের সবচেয়ে সম্মানজনক। সুতরাং সে যুগে নির্দেশিত বিষয় তরক করা অপরাধমূলক, যা গ্রহণযোগ্য ছিল না।
আর শেষ যামানায় এক-দশমাংশ পালন করলেই নাজাত পাবে। কারণ হলোঃ সেই যামানায় যুলম-অত্যাচার ফিৎনা-ফাসাদ বেড়ে যাবে, অন্যদিকে হক ও হাক্বের সাহায্যকারী হ্রাস পাবে। উপরন্তু উপযুক্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে মুসলিম সমাজ সঠিক দিক-নির্দেশনা হতে বঞ্চিত থাকবে।
পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
১৮০-[৪১] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হিদায়াত প্রাপ্তির এবং হিদায়াতের উপর ক্বায়িম থাকার পর কোন জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয় না, কিন্তু যখন তারা ধর্মীয় বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করলেন (অর্থঃ) ’’তারা বাক-বিতণ্ডা করার উদ্দেশ্য ছাড়া আপনার নিকট তা উত্থাপন করে না। প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে বাক-বিতণ্ডাকারী লোক’’- (সূরাহ্ আয্ যুখরুফ ৪৩: ৫৮)। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্)[1]
باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثاني
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلَّا أُوتُوا الْجَدَلَ» . ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الْآيَةَ: (مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جدلا بل هم قوم خصمون)
رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যা: কোন জাতি সঠিক পথপ্রাপ্তির পর সাধারণত গোমরাহ হয় না, মাত্র একটি কারণ ছাড়া, তা হলো বাতিল বা নাহক কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া। কারণ তারা বিবদমান বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে সোপর্দ না করে একে অপরকে কষ্ট দেয়া এবং পরাস্ত করার জন্যই উঠে পড়ে লাগে এবং তখনই সুপথ হারিয়ে ফেলে।