পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৮৪-[৪৫] মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মেষপালের ক্ষেত্রে নেকড়ে বাঘের ন্যায় শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘ। পালের যে মেষটি দল হতে আলাদা হয়ে যায় অথবা যেটি খাবারের সন্ধানে দূরে সরে পড়ে অথবা যেটি অলসতাবশত এক কিনারায় পড়ে থাকে, নেকড়ে সেটিকে শিকার করে নিয়ে যায়। সুতরাং সাবধান! তোমরা কক্ষনও (দল ছেড়ে) গিরিপথে চলে যাবে না, আর জামা’আতবদ্ধ হয়ে (মুসলিম) জনগণের সাথে থাকবে। (আহমাদ)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الشَّيْطَانَ ذِئْبُ الْإِنْسَانِ كَذِئْبِ الْغَنَمِ يَأْخُذُ الشَّاذَّةَ وَالْقَاصِيَةَ وَالنَّاحِيَةَ وَإِيَاكُمْ وَالشِّعَابَ وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَالْعَامَّةِ» . رَوَاهُ أَحْمد

عن معاذ بن جبل قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الشيطان ذىب الانسان كذىب الغنم ياخذ الشاذة والقاصية والناحية واياكم والشعاب وعليكم بالجماعة والعامة» . رواه احمد

ব্যাখ্যা: শায়ত্বন (শয়তান) মানুষের জন্য নেকড়ে স্বরূপ। জামা‘আত পরিত্যাগ করা, বড় দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং তাদের সঙ্গ ছেড়ে দেয়া, শায়ত্বনের (শয়তানের) আধিপত্য বিস্তার এবং পথভ্রষ্ট করার সহায়ক। একাকি অবস্থানকারী, দল বিচ্ছিন্ন এবং একপ্রান্তে পড়ে থাকা বকরীকে নেকড়ে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাই হাদীসের শেষে জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপন করা এবং মুসলিমদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৮৫-[৪৬] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জামা’আত (দল) হতে এক বিঘত পরিমাণও দূরে সরে গেছে, সে ইসলামের রশি (বন্ধন) তার গলা হতে খুলে ফেলেছে। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شبْرًا فقد خلع رقة الْإِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ

وعن ابي ذر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من فارق الجماعة شبرا فقد خلع رقة الاسلام من عنقه» . رواه احمد وابو داود

ব্যাখ্যা: এখানে জামা‘আত দ্বারা উদ্দেশ্য সাহাবী, তাবি‘ঈন, তাবি তাবি‘ঈন, সালফে সলিহীন এবং ধারাবাহিকতা বা নীতিভিত্তিক মুসলিমদের জামা‘আত। অর্থাৎ- যে ব্যক্তি সুন্নাতকে বর্জন ও বিদ্‘আতকে ধারণ করে এবং আনুগত্য থেকে বের হয়ে গিয়ে জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সে যেন ইসলামের বন্ধনকে নিজ গলা থেকে খুলে দিল।

‘আল্লামা খাত্ত্বাবী বলেছেনঃ যে কোন জামা‘আতের ইমামের বা নেতার আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাবে অথবা ঐকমত্যের কোন বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, যে তখন পথভ্রষ্ট এবং ধ্বংস হয়ে যাবে।

হাদীসটি ইমাম নাসায়ী এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল এবং জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন পয়ে পড়ল, সে যেন জাহিলী যুগের মৃত্যুবরণ করল।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৮৬-[৪৭] মালিক ইবনু আনাস (রাঃ) (রহঃ) হতে মুরসালরূপে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের হাদীস। [ইমাম মালিক মুয়াত্ত্বায় বর্ণনা করেছেন।][1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَن مَالك بن أنس مُرْسَلًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ رَسُولِهِ «. رَوَاهُ فِي الْمُوَطَّأ»

وعن مالك بن انس مرسلا قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تركت فيكم امرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما: كتاب الله وسنة رسوله «. رواه في الموطا»

ব্যাখ্যা: কুরআন ও সুন্নাহ হলো সব কিছুর মূল, যা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। এ দু’টোকে ধারণ করা ব্যতীত হিদায়াত এবং নাজাত পাওয়া যাবে না। হক এবং বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য এ দু’টো হলো সুস্পষ্ট জ্ঞান এবং অকাট্য দলীল। সুতারাং এ দু’টো মূলনীতির দিকে প্রত্যাবর্তন করা অপরিহার্য। ইমাম হাকিম হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মাঝে দু’টো জিনিস রেখে গেলাম। এ দু’টোকে ধারণ করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টো হলো আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।

ইমাম বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন এভাবে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) ভাষণে বলেছেনঃ হে মানব সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তা’ আঁকড়িয়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নাবীর সুন্নাত।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৮৭-[৪৮] গুযায়ফ ইবনু আল হারিস আস্ সুমালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখনই কোন জাতি একটি বিদ্’আত সৃষ্টি করেছে, তখনই সমপরিমাণ সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নাতের উপর ’আমল করা (সুন্নাত যত ক্ষুদ্রই হোক), একটি বিদ্’আত সৃষ্টি করা অপেক্ষা উত্তম। (আহমাদ)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَن غُضَيْف بن الْحَارِث الثمالِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا أَحْدَثَ قَوْمٌ بِدْعَةً إِلَّا رُفِعَ مِثْلُهَا مِنَ السُّنَّةِ فَتَمَسُّكٌ بِسُنَّةٍ خَيْرٌ مِنْ إِحْدَاث بِدعَة)
رَوَاهُ أَحْمد

وعن غضيف بن الحارث الثمالي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (ما احدث قوم بدعة الا رفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من احداث بدعة) رواه احمد

ব্যাখ্যা: হাদীসে একটা জিনিসের গুরুত্ব আরোপের জন্য আরেকটি বিপরীত জিনিস দ্বারা দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে। কারণ দু’টো জিনিসের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক বিদ্যামান যে, যখন একটার কথা উল্লেখ করা হয় অথবা একটাকে উঠিয়ে নেয়া হয় তখন অন্যটার কথা এমনিতেই চলে আসে। বিদ্‘আত সৃষ্টির দ্বারা সুন্নাহ উঠে যায় এবং বিদ্‘আত সুন্নাহর পরিপন্থী। অতএব সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা করলেই বিদ্‘আত দূরীভূত হবে।

পাপ এবং বিদ্‘আত মানে সুন্নাত পরিপন্থী বিষয়। আর এটা বোধগম্য যে, পাপের কোন বিষয়ের চেয়ে নেকীর বিষয় অনেক উত্তম। সুন্নাতকে ধারণ করায় অনেক কল্যাণ রয়েছে। অন্যদিকে বিদ্‘আতে কল্যাণকর বলতে কিছুই নেই।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৮৮-[৪৯] হাসসান (ইবনু ’আতিয়্যাহ্) (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন জাতি যখন দীনের মধ্যে কোন বিদ্’আত সৃষ্টি করে, তখনই আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে সে পরিমাণ সুন্নাত উঠিয়ে নেন। ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) পর্যন্ত এ সুন্নাত আর তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (দারিমী)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَنْ حَسَّانَ قَالَ: «مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِي دِينِهِمْ إِلَّا نَزَعَ اللَّهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا ثُمَّ لَا يُعِيدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَة.» رَوَاهُ الدَّارمِيّ

وعن حسان قال: «ما ابتدع قوم بدعة في دينهم الا نزع الله من سنتهم مثلها ثم لا يعيدها اليهم الى يوم القيامة.» رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: বিদ্‘আত সৃষ্টি করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা সুন্নাতকে উঠিয়ে নেন। তার কারণ এই যে, যখন সুন্নাত তার স্থলে অবিচল ছিল। অতঃপর একে যেখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হলে তা’ যথাস্থানে ফিরিয়ে দেয়া আর সম্ভব হয় না। এর দৃষ্টান্ত হলো ঐ বৃক্ষের ন্যায় যার শিকড়গুলো মাটির নীচে চলে গিয়েছিল, অতঃপর গাছটিকে শিকড়সহ উপড়িয়ে ফেলা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৮৯-[৫০] ইব্রাহীম ইবনু মায়সারাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন বিদ্’আতীকে সম্মান দেখালো, সে নিশ্চয়ই ইসলামের ধ্বংস সাধনে সাহায্য করল। (বায়হাক্বী তাঁর শু’আবুল ঈমান-এ মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَن إِبْرَاهِيم بن ميسرَة قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ وَقَّرَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ فَقَدْ أَعَانَ عَلَى هَدْمِ الْإِسْلَامِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الايمان مُرْسلا

وعن ابراهيم بن ميسرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من وقر صاحب بدعة فقد اعان على هدم الاسلام» . رواه البيهقي في شعب الايمان مرسلا

ব্যাখ্যা: কোন বিদ্‘আতীকে সম্মান করা ইসলাম ধ্বংস করার শামিল। কারণ একজন বিদ্‘আতী সুন্নাতের বিরোধ, আর কোন বিরোধীকে সাহায্য করা ঐ বস্তুকে ধ্বংস করার ব্যাপারে সহযোগিতা করারই নামান্তর। অতএব, যখন কোন ব্যক্তি বিদ্‘আতীকে সম্মান করবে সে তখন সুন্নাতকে অবমূল্যায়ন করবে। আর সুন্নাতকে অবমূল্যায়ন করলে তা হবে মূলত ইসলামের অবমূল্যায়ন তথা ইসলামের বুনিয়াদকে ধ্বংস করা। বিদ্‘আতীকে সম্মানকারীর অবস্থা যদি এই হয় তাহলে বিদ্‘আতীর অবস্থা কি হতো?


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯০-[৫১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা লাভ করলো, অতঃপর এ কিতাবের মধ্যে যা আছে তা অনুসরণ করলো, আল্লাহ তা’আলা এ ব্যক্তিকে পৃথিবীতে পথভ্রষ্টতা হতে বাঁচিয়ে রাখবেন এবং ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) দিবসে তাকে নিকৃষ্ট হিসাবের কষ্ট হতে রক্ষা করবেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে- তিনি বলেছেন, যে আল্লাহ তা’আলার কিতাবের অনুসরণ করবে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং আখিরাতেও হতভাগ্য হবে না। অতঃপর এ কথার প্রমাণ স্বরূপ তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ (فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقى) অর্থাৎ- ’’যে ব্যক্তি আমার হিদায়াত গ্রহণ করলো, সে (দুনিয়াতে) পথভ্রষ্ট হবে না এবং (পরকালেও) ভাগ্যাহত হবে না’’- (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০: ১২৩)। (রযীন)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَن ابْن عَبَّاس قَالَ: من تعلم كتاب الله ثمَّ ابتع مَا فِيهِ هَدَاهُ اللَّهُ مِنَ الضَّلَالَةِ فِي الدُّنْيَا وَوَقَاهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ سُوءَ الْحِسَابِ
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: مَنِ اقْتَدَى بِكِتَابِ اللَّهِ لَا يَضِلُّ فِي الدُّنْيَا وَلَا يَشْقَى فِي الْآخِرَةِ ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ: (فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يضل وَلَا يشقى)
رَوَاهُ رزين

وعن ابن عباس قال: من تعلم كتاب الله ثم ابتع ما فيه هداه الله من الضلالة في الدنيا ووقاه يوم القيامة سوء الحساب وفي رواية قال: من اقتدى بكتاب الله لا يضل في الدنيا ولا يشقى في الاخرة ثم تلا هذه الاية: (فمن اتبع هداي فلا يضل ولا يشقى) رواه رزين

ব্যাখ্যা: হাদীসের ব্যাখ্যায় ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব শিক্ষা করতো তা মেনে চলবে সে সফলকাম থাকবে। সে দুনিয়াতে যেমন গোমরাহী থেকে মুক্ত অনুরূপভাবে আখিরাতেও শাস্তি থেকে নিরাপদে থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাত জানার পর উভয়ের উপর ‘আমল করবে তার জন্য এটাই উভয় জগতে সফলতার কারণ হবে।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সকল বিষয়ে ও সার্বিক অবস্থায় আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করে চলবে সে দুনিয়াতে কোন দিনই গোমরাহীতে নিপতিত হবে না। পরকালে তাকে কোন শাস্তিও দেয়া হবে না। অতঃপর এ আয়াতে কারীমা তিলাওয়াত করেনঃ

 فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْق

অর্থাৎ- ‘‘যে আমার পথের অনুসরণ করবে যে বিপদগামী হবে না ও দুঃখ কষ্ট পাবে না।’’ (সূরাহ্ ত্ব-হা- ২০ঃ ১২৩)


হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯১-[৫২] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তা হলো একটি সরল সঠিক পথ আছে, এর দু’দিকে দু’টি দেয়াল। এসব দেয়ালে খোলা দরজা রয়েছে এবং সে সব দরজায় পর্দা ঝুলানো রয়েছে। আর রাস্তার মাথায় একজন আহবায়ক, যে (লোকেদেরকে) আহবান করছে, এসো সোজা রাস্তা দিয়ে চলে যাও। ভুল ও বাঁকা পথে যাবে না। আর এ আহবানকারীর একটু আগে আছেন আর একজন আহবানকারী। যখনই কোন বান্দা সে দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খুলতে চায়, তখনই সে তাকে ডেকে বলেন, সর্বনাশ! এ দরজা খুলো না। যদি তুমি এটা খুলো তাহলে ভিতরে ঢুকে যাবে (প্রবেশ করলেই পথভ্রষ্ট হবে)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ব্যাখ্যা করলেনঃ সঠিক সরল পথের অর্থ হচ্ছে ’ইসলাম’ (সে পথ জান্নাতে চলে যায়)। আর খোলা দরজার অর্থ হলো ওই সব জিনিস আল্লাহ তা’আলা যা হারাম করেছেন এবং দরজার মধ্যে ঝুলানো পর্দার অর্থ হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমাসমূহ। রাস্তার মাথায় আহবায়ক হচ্ছে কুরআন। আর তার সামনের আহবায়ক হচ্ছে নাসীহাতকারী মালাক, যা প্রত্যেক মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর তরফ থেকে বিদ্যমান। (সহীহুল জামি’ ও আহমাদ)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا وَعَنْ جَنَبَتَيِ الصِّرَاطِ سُورَانِ فِيهِمَا أَبْوَابٌ مُفَتَّحَةٌ وَعَلَى الْأَبْوَابِ سُتُورٌ مُرَخَاةٌ وَعِنْدَ رَأْسِ الصِّرَاطِ دَاعٍ يَقُولُ: اسْتَقِيمُوا عَلَى الصِّرَاطِ وَلَا تَعْوَجُّوا وَفَوْقَ ذَلِكَ دَاعٍ يَدْعُو كُلَّمَا هَمَّ عَبْدٌ أَنْ يَفْتَحَ شَيْئًا مِنْ تِلْكَ الْأَبْوَابِ قَالَ: وَيْحَكَ لَا تَفْتَحْهُ فَإِنَّكَ إِنْ تَفْتَحْهُ تَلِجْهُ . ثُمَّ فَسَّرَهُ فَأَخْبَرَ: أَنَّ الصِّرَاطَ هُوَ الْإِسْلَامُ وَأَنَّ الْأَبْوَابَ الْمُفَتَّحَةَ مَحَارِمُ اللَّهِ وَأَنَّ السُّتُورَ الْمُرَخَاةَ حُدُودُ اللَّهِ وَأَنَّ الدَّاعِيَ عَلَى رَأْسِ الصِّرَاطِ هُوَ الْقُرْآنُ وَأَنَّ الدَّاعِيَ مِنْ فَوْقِهِ وَاعِظُ اللَّهِ فِي قَلْبِ كُلِّ مُؤمن)
رَوَاهُ رزين وَأحمد

وعن ابن مسعود ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ضرب الله مثلا صراطا مستقيما وعن جنبتي الصراط سوران فيهما ابواب مفتحة وعلى الابواب ستور مرخاة وعند راس الصراط داع يقول: استقيموا على الصراط ولا تعوجوا وفوق ذلك داع يدعو كلما هم عبد ان يفتح شيىا من تلك الابواب قال: ويحك لا تفتحه فانك ان تفتحه تلجه . ثم فسره فاخبر: ان الصراط هو الاسلام وان الابواب المفتحة محارم الله وان الستور المرخاة حدود الله وان الداعي على راس الصراط هو القران وان الداعي من فوقه واعظ الله في قلب كل مومن) رواه رزين واحمد

ব্যাখ্যা: হাদীসে যে দরজার কথা বলা হয়েছে তা খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ- দরজার পর্দা উঠাতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এই যে, পর্দা উঠালেই সে ভিতরে প্রবেশ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবে না। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাখ্যায় বললেনঃ সিরাতে মুস্তাক্বীম হলো ইসলাম। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যেকেরই ইসলামের উপর বহাল থাকা এবং ইসলামের সঠিক বিধানাবলী বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ কর্তৃক হারাম করা বস্তুসমূহ দিয়ে বুঝানো হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার এবং ‘আযাবে ও অপমানজনক স্থানে প্রবেশ করা। এসবের ব্যবস্থাপনা হচ্ছে ঐ হারাম বস্তুসমূহ। আর পর্দা হলো মানুষও হারাম কাজের প্রতিবন্ধকতা। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ অর্থাৎ- ‘‘এ হচ্ছে আল্লাহর সীমারেখা, তোমরা তা অতিক্রম করো না।’’ (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ঃ ২২৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯২-[৫৩] ইমাম বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমানে এ হাদীসটিকে নাও্ওয়াস ইবনু সাম্’আন (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযীও একই সাহাবী থেকে এটি বর্ণনা করেছেন, তবে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্তাকারে।

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ وَكَذَا التِّرْمِذِيُّ عَنْهُ إِلَّا أَنَّهُ ذَكَرَ أخصر مِنْهُ

والبيهقي في شعب الايمان عن النواس بن سمعان وكذا الترمذي عنه الا انه ذكر اخصر منه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯৩-[৫৪] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কারো কোন ত্বরীক্বাহ্ (তরিকা) অনুসরণ করতে চায়, সে যেন তাদের পথ অনুসরণ করে যারা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। কারণ জীবিত মানুষ (দীনের ব্যাপারে) ফিতনাহ্ হতে মুক্ত নয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ, যারা এ উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ। পরিচ্ছন্ন অন্তঃকরণ হিসেবে ও পরিপূর্ণ জ্ঞানের দিক দিয়ে এবং দূরে ছিলেন কৃত্রিমতার দিক থেকে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তাঁর প্রিয় রসূলের সাথী ও দীন ক্বায়িমের জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের ফাযীলাত ও মর্যাদা বুঝে নাও। তাদের পদাংক অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য তাদের আখলাক্ব ও জীবন পদ্ধতি মজবুত করে আঁকড়ে ধরো। কারণ তাঁরাই (আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত) সহজ-সরল পথের পথিক ছিলেন। (রযীন)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: مَنْ كَانَ مُسْتَنًّا فليسن بِمَنْ قَدْ مَاتَ فَإِنَّ الْحَيَّ لَا تُؤْمَنُ عَلَيْهِ الْفِتْنَةُ. أُولَئِكَ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانُوا أَفْضَلَ هَذِهِ الْأُمَّةِ أَبَرَّهَا قُلُوبًا وَأَعْمَقَهَا عِلْمًا وَأَقَلَّهَا تَكَلُّفًا اخْتَارَهُمُ اللَّهُ لِصُحْبَةِ نَبِيِّهِ وَلِإِقَامَةِ دِينِهِ فَاعْرِفُوا لَهُمْ فَضْلَهُمْ وَاتَّبِعُوهُمْ عَلَى آثَارِهِمْ وَتَمَسَّكُوا بِمَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ أَخْلَاقِهِمْ وَسِيَرِهِمْ فَإِنَّهُمْ كَانُوا عَلَى الْهَدْيِ الْمُسْتَقِيمِ. رَوَاهُ رزين

وعن ابن مسعود قال: من كان مستنا فليسن بمن قد مات فان الحي لا تومن عليه الفتنة. اولىك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه الامة ابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا اختارهم الله لصحبة نبيه ولاقامة دينه فاعرفوا لهم فضلهم واتبعوهم على اثارهم وتمسكوا بما استطعتم من اخلاقهم وسيرهم فانهم كانوا على الهدي المستقيم. رواه رزين

ব্যাখ্যা: ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর উক্তি কেউ যদি কারো তরীকাহ্ (তরিকা) অনুসরণ করতে চায় তাহলে যেন ওদের তরীকার অনুসরণ করে যারা ইসলামের কথা, জ্ঞান ও ‘আমলের উপর মৃত্যুবরণ করেছেন।

এখানে কুরআন-সুন্নাহ হতে সঠিক পথ খুঁজে বের করার প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। এতে যদি কেউ সক্ষম না হয় তাহলে সে যেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের অনুসরণ করে। কেননা, তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা, কর্ম, অবস্থা, সমর্থনমূলক সকল বিষয় অনুসরণ করেছেন। তাই ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) সাহাবীগণের যুগের পরবর্তী লোকেদেরকে ওয়াসিয়্যাত করে বলেছেন সাহাবীগণের মতাদর্শ গ্রহণ করতে এবং তাঁদের পথে চলতে।


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯৪-[৫৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাওরাত কিতাবের একটি পান্ডুলিপি এনে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা হলো তাওরাতের একটি পান্ডুলিপি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ থাকলেন। এরপর ’উমার (রাঃ) তাওরাত পড়তে আরম্ভ করলেন। (এদিকে রাগে) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হতে লাগল। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ’উমার! তোমার সর্বনাশ হোক। তুমি কি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিবর্ণ চেহারা মুবারক দেখছো না? ’উমার (রাঃ) রসূলের চেহারার দিকে তাকালেন এবং (চেহারায় ক্রোধান্বিত ভাব লক্ষ্য করে) বললেন, আমি আল্লাহর গযব ও তাঁর রসূলের ক্রোধ হতে পানাহ চাচ্ছি। আমি ’রব’ হিসেবে আল্লাহ তা’আলার ওপর, দীন হিসেবে ইসলামের ওপর এবং নবী হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সন্তুষ্ট আছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি (তাওরাতের নবী স্বয়ং) মূসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে থাকতেন আর তোমরা তাঁর অনুসরণ করতে আর আমাকে ত্যাগ করতে, তাহলে তোমরা সঠিক সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে। মূসা (আঃ) যদি এখন জীবিত থাকতেন এবং আমার নুবূওয়্যাতের যুগ পেতেন, তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন। (দারিমী)[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

عَن جَابِرٍ: (أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِنُسْخَةٍ مِنَ التَّوْرَاةِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذِهِ نُسْخَةٌ مِنَ التَّوْرَاةِ فَسَكَتَ فَجَعَلَ يقْرَأ وَوجه رَسُول الله يَتَغَيَّرُ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ ثَكِلَتْكَ الثَّوَاكِلُ مَا تَرَى مَا بِوَجْهِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ عُمَرُ إِلَى وَجْهِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَعُوذُ بِاللَّه من غضب الله وَغَضب رَسُوله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ بَدَا لَكُمْ مُوسَى فَاتَّبَعْتُمُوهُ وَتَرَكْتُمُونِي لَضَلَلْتُمْ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ وَلَوْ كَانَ حَيًّا وَأَدْرَكَ نُبُوَّتِي لَاتَّبَعَنِي)
رَوَاهُ الدَّارمِيّ

عن جابر: (ان عمر بن الخطاب رضي الله عنهما اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التوراة فقال يا رسول الله هذه نسخة من التوراة فسكت فجعل يقرا ووجه رسول الله يتغير فقال ابو بكر ثكلتك الثواكل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر عمر الى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله صلى الله عليه وسلم رضينا بالله ربا وبالاسلام دينا وبمحمد نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: والذي نفس محمد بيده لو بدا لكم موسى فاتبعتموه وتركتموني لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وادرك نبوتي لاتبعني) رواه الدارمي

ব্যাখ্যা: মূসা (আঃ)-এর শারী‘আত এবং তাঁর উম্মাতের সংবাদ সম্পর্কে জানার জন্য ‘উমার (রাঃ) তাওরাত পাঠ করতে আরম্ভ করেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকার কারণে তিনি মনে করেছিলেন যে, এতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মতি রয়েছে। অতঃপর যখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে অসম্মতির ভাব বুঝতে পারলেন তখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর প্রতি কৃত ত্রুটি থেকে পানাহ চাইলেন।

মূলত পানাহ চাইতে হয় আল্লাহর ক্রোধ থেকে কিন্তু এখানে ‘উমার (রাঃ) রসূলের ক্রোধ থেকেও পানাহ চাইলেন এজন্য যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগাম্বিত হওয়ার কারণে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হতেন।

হাদীসে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করে অন্যদিকে ধাবিত হতে কঠিনভাবে নিষেধ করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯৫-[৫৬] উক্ত রাবী (জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কথা আল্লাহর কথাকে রহিত করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহর কথা আমার কথাকে রহিত করে। এছাড়া কুরআনের একাংশ অপরাংশকে রহিত করে।[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَلَامِي لَا يَنْسَخُ كَلَامَ اللَّهِ وَكَلَامُ اللَّهِ يَنْسَخُ كَلَامِي وَكَلَامُ اللَّهِ يَنْسَخُ بعضه بَعْضًا»

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كلامي لا ينسخ كلام الله وكلام الله ينسخ كلامي وكلام الله ينسخ بعضه بعضا»

ব্যাখ্যা: শারী‘আতের পরিভাষায় ‘নাসখ’ বা মানসূখ’’ বলা হয় পূর্ববর্তী কোন বিধানকে পরবর্তী বিধান কর্তৃক রহিত করাকে। এর পাঁচটি অবস্থা রয়েছেঃ

কুরআনকে কুরআন দ্বারা রহিত করা।

মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা মুতাওয়াতির হাদীসকে এবং খবরে ওয়াহিদ দ্বারা খবরে ওয়াহিদকে রহিত করা।

এই দুই প্রকারের রহিত করার ব্যাপারে কোন মতবিরোধ নেই।

কুরআনের দ্বারা হাদীসের বিধানকে রহিত করা। যেমনঃ বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে সালাত আদা করার বিধান যখন ছিল।

এই প্রকারের রহিত করা অধিক সংখ্যক ইমাম ও ‘আলিমের মতে জায়িয।

মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা কুরআনী বিধানকে রহিত করা।

এ ধরনের রহিত করার ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই জায়িযের পক্ষে গিয়েছেন। আবার অনেকেই এর বিরুদ্ধে গিয়েছেন তবে যেহেতু ‘আমল রহিতকারী, স্বয়ং আল্লাহ তিনি শুধুমাত্র রসূলের যবানীতে করিয়েছেন, তাই বেশী সংখ্যক লোক জায়িযের পক্ষেই রয়েছেন।

রহিত করণের পাঁচ নম্বর অবস্থান হচ্ছে, কুরআনকে মুতাওয়াতির হাদীসকের খবরে ওয়াহিদ দ্বারা রহিত করা। এ ব্যাপারেও মতবিরোধ রয়েছে এবং অধিক সংখ্যকদের মতে জায়িয নয়।


হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯৬-[৫৭] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার কোন হাদীস অপর হাদীসকে রহিত করে, যেমন কুরআনের কোন অংশকে অপর অংশ রহিত করে।[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَحَادِيثَنَا يَنْسَخُ بَعْضهَا بَعْضًا كنسخ الْقُرْآن»

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان احاديثنا ينسخ بعضها بعضا كنسخ القران»

হাদিসের মানঃ জাল (Fake)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith

পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৯৭-[৫৭] আবূ সা’লাবাহ্ আল খুশানী (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কিছু জিনিসকে ফরয হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন, সেগুলো ছেড়ে দিবে না। তিনি কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন সে (হারাম) কাজগুলো করবে না। আর কতকগুলো (জিনিসের) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলোর সীমালঙ্ঘন করবে না। আর কিছু বিষয়ে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই নীরব রয়েছেন, সে সকল বিষয়ে বিতর্ক-বাহাসে লিপ্ত হবে না। উপরের তিনটি হাদীসই দারাকুত্বনী বর্ণনা করেছেন।[1]

باب الاعتصام بالكتاب والسنة - الفصل الثالث

وَعَن أبي ثَعْلَبَة الْخُشَنِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيِّعُوهَا وَحَرَّمَ حُرُمَاتٍ فَلَا تَنْتَهِكُوهَا وَحَدَّ حُدُودًا فَلَا تَعْتَدُوهَا وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ مِنْ غَيْرِ نِسْيَانٍ فَلَا تَبْحَثُوا عَنْهَا» . رَوَى الْأَحَادِيثَ الثَّلَاثَةَ الدَّارَقُطْنِيُّ

وعن ابي ثعلبة الخشني قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ان الله فرض فراىض فلا تضيعوها وحرم حرمات فلا تنتهكوها وحد حدودا فلا تعتدوها وسكت عن اشياء من غير نسيان فلا تبحثوا عنها» . روى الاحاديث الثلاثة الدارقطني

ব্যাখ্যা: আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন কিছু বিধানকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। সেগুলোকে পালন না করে অথবা সেগুলোর শর্ত এবং রুকনকে বর্জনের মাধ্যমে তার আবশ্যকীয়তা নষ্ট করো না। অনুরূপ যে সকল পাপের কাজ হারাম করে দিয়েছেন সেগুলোর নিকটেও যাবে না। হালাল ও হারামের মাঝে যে সীমারেখা করে দিয়েছেন তা অতিক্রম করবে না। এখানে সীমা অতিক্রমের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত না থেকে তা করা।

কিছু বিষয়ে হালাল, হারাম এবং ওয়াজিব ইত্যাদির কোন হুকুম লাগাননি। সেগুলোর কোন বিধান খুঁজতে যাবে না। কারণ তা করলে অন্যান্য হালাল ও হারামের সদৃশ মনে করে বিবেকের নিকট যা হালাল ছিল না তা হালাল অথবা যা হারাম ছিল না তা হারাম বলে বিবেচিত হতে পারে। তাই ঐ সকল বিষয়ে কোন প্রকার গবেষণা করা এবং প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১: ঈমান (বিশ্বাস) (كتاب الإيمان) 1. Faith
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে