بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৪১/ হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত) | Fussilat | سورة فصلت আয়াতঃ ৫৪ মাক্কী
৪১:১১ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ وَ هِیَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَ لِلۡاَرۡضِ ائۡتِیَا طَوۡعًا اَوۡ كَرۡهًا ؕ قَالَتَاۤ اَتَیۡنَا طَآئِعِیۡنَ ﴿۱۱﴾
ثم استوی الی السمآء و هی دخان فقال لها و للارض ائتیا طوعا او كرها قالتا اتینا طآئعین ﴿۱۱﴾

তারপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তা ছিল ধোঁয়া। তারপর তিনি আসমান ও যমীনকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আস’। তারা উভয়ে বলল, ‘আমরা অনুগত হয়ে আসলাম’। আল-বায়ান

তারপর নজর দিয়েছেন আকাশের দিকে যখন তা ছিল ধোঁয়া (’র মত)। তখন তিনি আকাশ আর পৃথিবীকে বললেন- আমার অনুগত হও, ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। উভয়ে বলল- আমরা স্বেচ্ছায় অনুগত হলাম। তাইসিরুল

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অতঃপর তিনি ওটাকে এবং পৃথিবীকে বললেনঃ তোমরা উভয়ে এসো স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বললঃ আমরা এলাম অনুগত হয়ে। মুজিবুর রহমান

Then He directed Himself to the heaven while it was smoke and said to it and to the earth, "Come [into being], willingly or by compulsion." They said, "We have come willingly." Sahih International

১১. তারপর তিনি আসমানের প্রতি ইচ্ছে করলেন, যা (পূর্বে) ছিল ধোঁয়া। অতঃপর তিনি ওটাকে (আসমান) ও যমীনকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রপুঞ্জবিশেষ। অতঃপর তিনি ওকে (আকাশকে) ও পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এস।’[1] ওরা বলল, ‘আমরা তো অনুগত হয়ে আসলাম।’

[1] এই আসা কিভাবে ছিল? আসার ধরন বর্ণনা করা যেতে পারে না। উভয়ে আল্লাহর কাছে ঐভাবেই এসেছে, যেভাবে তিনি চেয়েছেন। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, আমার নির্দেশের আনুগত্য কর। তারা (আকাশ ও পৃথিবী) বলল, আমরা (তোমার) আনুগত্যের জন্য উপস্থিত আছি। সুতরাং আল্লাহ আকাশকে নির্দেশ দিলেন যে, সূর্য, চাঁদ এবং তারকারাজি বের কর এবং পৃথিবীকে বললেন যে, নদ-নদী প্রবাহিত এবং ফল-মূল উৎপন্ন কর। (ইবনে কাসীর) অথবা অর্থ হল, তোমরা উভয়েই অস্তিত্বে চলে এস।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১২ فَقَضٰهُنَّ سَبۡعَ سَمٰوَاتٍ فِیۡ یَوۡمَیۡنِ وَ اَوۡحٰی فِیۡ كُلِّ سَمَآءٍ اَمۡرَهَا ؕ وَ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ ٭ۖ وَ حِفۡظًا ؕ ذٰلِكَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ ﴿۱۲﴾
فقضهن سبع سموات فی یومین و اوحی فی كل سمآء امرها و زینا السمآء الدنیا بمصابیح ٭ و حفظا ذلك تقدیر العزیز العلیم ﴿۱۲﴾

তারপর তিনি দু’দিনে আসমানসমূহকে সাত আসমানে পরিণত করলেন। আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। আর আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালার দ্বারা সুসজ্জিত করেছি আর সুরক্ষিত করেছি। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নির্ধারণ। আল-বায়ান

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে সাত আকাশে বিন্যস্ত করলেন দু’দিনে আর প্রত্যেক আকাশকে তার বিধি-ব্যবস্থা ওয়াহীর মাধ্যমে প্রদান করলেন। আমি আলোকমালার সাহায্যে দুনিয়ার আকাশের শোভাবর্ধন করলাম আর সুরক্ষার (ও ব্যবস্থা করলাম)। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর সুনির্ধারিত (ব্যবস্থাপনা)। তাইসিরুল

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুই দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে উহার বিধান ব্যক্ত করলেন এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। মুজিবুর রহমান

And He completed them as seven heavens within two days and inspired in each heaven its command. And We adorned the nearest heaven with lamps and as protection. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing. Sahih International

১২. অত:পর তিনি সেগুলোকে সাত আসমানে পরিণত করলেন দু’দিনে এবং প্রত্যেক আসমানে তার নির্দেশ ওহী করে পাঠালেন এবং আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করলাম প্ৰদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের ব্যবস্থাপনা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশের নিকট তার কর্তব্য ব্যক্ত করলেন।[1] আর আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং তাকে করলাম সুরক্ষিত।[2] এ সব পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।

[1] অর্থাৎ, স্বয়ং আকাশমন্ডলীকে অথবা সেখানে বসবাসকারী ফিরিশতামন্ডলীকে বিশেষ বিশেষ কাজের এবং যিকর-আযকারের দায়িত্বে লাগিয়ে দিলেন।

[2] অর্থাৎ, শয়তান থেকে সুরক্ষিত। যেমন, অন্যত্র এ কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তারকারাজি সৃষ্টির তৃতীয় আর একটি উদ্দেশ্য অন্যত্র اهتِدَاءٌ (পথ পাওয়া বা দিক নির্ণয় করা)ও বলা হয়েছে। (সূরা নাহল ১৬)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৩ فَاِنۡ اَعۡرَضُوۡا فَقُلۡ اَنۡذَرۡتُكُمۡ صٰعِقَۃً مِّثۡلَ صٰعِقَۃِ عَادٍ وَّ ثَمُوۡدَ ﴿ؕ۱۳﴾
فان اعرضوا فقل انذرتكم صعقۃ مثل صعقۃ عاد و ثمود ﴿۱۳﴾

তবুও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তুমি বলে দাও, ‘আদ ও সামূদের ধ্বংসের মতই এক মহাধ্বংস সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি’। আল-বায়ান

এরপরও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বল- আমি তোমাদেরকে অকস্মাৎ শাস্তির ভয় দেখাচ্ছি- ‘আদ ও সামূদের (উপর নেমে আসা) অকস্মাৎ-শাস্তির মত। তাইসিরুল

তবুও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলঃ আমিতো তোমাদেরকে সতর্ক করছি এক ধ্বংসকর শাস্তির; আদ ও সামূদ জাতির অনুরূপ। মুজিবুর রহমান

But if they turn away, then say, "I have warned you of a thunderbolt like the thunderbolt [that struck] 'Aad and Thamud. Sahih International

১৩. অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলুন, আমি তো তোমাদেরকে সতর্ক করছি এক ধ্বংসকর শাস্তি সম্পর্কে, আদ ও সামূদের শাস্তির অনুরূপ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) এর পরেও যদি ওরা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (ওদেরকে) বল, আমি তো তোমাদেরকে এক ধ্বংসকর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করেছি; যেরূপ শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিল আ’দ ও সামূদ;

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৪ اِذۡ جَآءَتۡهُمُ الرُّسُلُ مِنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّا اللّٰهَ ؕ قَالُوۡا لَوۡ شَآءَ رَبُّنَا لَاَنۡزَلَ مَلٰٓئِكَۃً فَاِنَّا بِمَاۤ اُرۡسِلۡتُمۡ بِهٖ كٰفِرُوۡنَ ﴿۱۴﴾
اذ جآءتهم الرسل من بین ایدیهم و من خلفهم الا تعبدوا الا الله قالوا لو شآء ربنا لانزل ملٓئكۃ فانا بما ارسلتم بهٖ كفرون ﴿۱۴﴾

যখন তাদের অগ্র ও পশ্চাৎ থেকে রাসূলগণ তাদের কাছে এসে বলেছিল যে, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না’। তারা বলেছিল, ‘যদি আমাদের রব ইচ্ছা করতেন তাহলে অবশ্যই ফেরেশতা নাযিল করতেন। অতএব, তোমাদেরকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে নিশ্চয় আমরা তা প্রত্যাখ্যান করলাম। আল-বায়ান

তাদের কাছে যখন তাদের অগ্রে ও পশ্চাতে (একের পর এক) রসূলগণ এসেছিল (আর বলেছিল)- তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ‘ইবাদাত করো না। (জবাবে) তারা বলেছিল- আমাদের প্রতিপালক ইচ্ছে করলে তো অবশ্যই ফেরেশতা নাযিল করতেন। কাজেই তোমাদেরকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে আমরা তা অমান্য করছি। তাইসিরুল

যখন তাদের নিকট রাসূলগণ এসেছিল তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে এবং বলেছিলঃ তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদাত করনা তখন তারা বলেছিলঃ আমাদের রবের এই রূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই মালাক/ফেরেশতা প্রেরণ করতেন। অতএব তোমরা যাসহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। মুজিবুর রহমান

[That occurred] when the messengers had come to them before them and after them, [saying], "Worship not except Allah." They said, "If our Lord had willed, He would have sent down the angels, so indeed we, in that with which you have been sent, are disbelievers." Sahih International

১৪. যখন তাদের কাছে তাদের সামনে ও পিছন থেকে রাসূলগণ এসে বলেছিলেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। তারা বলেছিল, যদি আমাদের রব ইচ্ছে করতেন তবে তিনি অবশ্যই ফেরেশতা নাযিল করতেন। অতএব তোমরা যা সহ প্রেরিত হয়েছ, নিশ্চয় আমরা তার সাথে কুফরী করলাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) যখন ওদের নিকট ওদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিক হতে রসূলগণ এসেছিল (এবং তারা বলেছিল), ‘তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও উপাসনা করো না।’ তখন ওরা বলেছিল, ‘আমাদের প্রতিপালকের এরূপ ইচ্ছা হলে তিনি অবশ্যই ফিরিশতা প্রেরণ করতেন। অতএব তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করলাম।’ [1]

[1] অর্থাৎ, যেহেতু তুমি আমাদের মতনই মানুষ, তাই আমরা তোমাকে নবী মানতে পারি না। আল্লাহর নবী প্রেরণ করার প্রয়োজন হলে ফিরিশতা প্রেরণ করতেন; মানুষ নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৫ فَاَمَّا عَادٌ فَاسۡتَكۡبَرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ قَالُوۡا مَنۡ اَشَدُّ مِنَّا قُوَّۃً ؕ اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّ اللّٰهَ الَّذِیۡ خَلَقَهُمۡ هُوَ اَشَدُّ مِنۡهُمۡ قُوَّۃً ؕ وَ كَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَجۡحَدُوۡنَ ﴿۱۵﴾
فاما عاد فاستكبروا فی الارض بغیر الحق و قالوا من اشد منا قوۃ او لم یروا ان الله الذی خلقهم هو اشد منهم قوۃ و كانوا بایتنا یجحدون ﴿۱۵﴾

আর ‘আদ সম্প্রদায়, তারা যমীনে অযথা অহঙ্কার করত এবং বলত, ‘আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে’? তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করত। আল-বায়ান

আর ‘আদ-এর অবস্থা ছিল এই যে, দুনিয়াতে তারা না-হক অহংকার করেছিল, আর বলেছিল- আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী আর কে আছে? তারা কি চিন্তা করে দেখেনি যে, আল্লাহ- যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন- শক্তিতে তাদের চেয়ে প্রবল? কিন্তু তারা আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করতেই থাকল। তাইসিরুল

আর ‘আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, তারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলতঃ আমাদের অপেক্ষা শক্তিশালী কে আছে? তারা কি তাহলে লক্ষ্য করেনি, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অপেক্ষা শক্তিশালী? অথচ তারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত। মুজিবুর রহমান

As for 'Aad, they were arrogant upon the earth without right and said, "Who is greater than us in strength?" Did they not consider that Allah who created them was greater than them in strength? But they were rejecting Our signs. Sahih International

১৫. অতঃপর আদ সম্প্রদায়, তারা যমীনে অযথা অহংকার করেছিল এবং বলেছিল, আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে? তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা আমাদের নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) আ’দ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, ওরা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করত এবং বলত, ‘আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী কে আছে?’[1] ওরা কি তবে লক্ষ্য করেনি যে, আল্লাহ যিনি ওদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি ওদের অপেক্ষাও অধিক শক্তিশালী?[2] আর ওরা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করত। [3]

[1] এই উক্তি থেকে তাদের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, তারা আল্লাহর আযাব রোধ করার ক্ষমতা রাখে। কেননা, তারা অতি দীর্ঘকায় এবং প্রচন্ড শক্তিশালী ছিল। আর এ কথা তারা তখন বলেছিল, যখন হূদ (আঃ) তাদেরকে ভয় দেখিয়েছিলেন এবং আল্লাহর আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।

[2] অর্থাৎ, তারা কি সেই আল্লাহর চেয়েও অধিক শক্তিশালী, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে শক্তি ও সামর্থ্য দানে ধন্য করেছেন। তাদেরকে সৃষ্টি করার পর তাঁর নিজস্ব শক্তি ও সামর্থ্য শেষ হয়ে গেছে নাকি? এখানে জিজ্ঞাসা অস্বীকৃতিসূচক এবং ধমকের জন্য।

[3] অর্থাৎ, সেই মু’জিযাগুলোকে যা আমি নবীদেরকে দান করেছিলাম অথবা সেই দলীলগুলোকে, যা আমি নবীদের সাথে অবতীর্ণ করেছিলাম কিংবা অসংখ্য সেই সৃষ্টিগত নিদর্শনাবলীকে, যা বিশ্বজাহানে ছড়িয়ে আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৬ فَاَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمۡ رِیۡحًا صَرۡصَرًا فِیۡۤ اَیَّامٍ نَّحِسَاتٍ لِّنُذِیۡقَهُمۡ عَذَابَ الۡخِزۡیِ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ؕ وَ لَعَذَابُ الۡاٰخِرَۃِ اَخۡزٰی وَ هُمۡ لَا یُنۡصَرُوۡنَ ﴿۱۶﴾
فارسلنا علیهم ریحا صرصرا فی ایام نحسات لنذیقهم عذاب الخزی فی الحیوۃ الدنیا و لعذاب الاخرۃ اخزی و هم لا ینصرون ﴿۱۶﴾

তারপর আমি তাদের উপর অশুভ দিনগুলোতে ঝঞ্ঝাবায়ু পাঠালাম যাতে তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক আযাব আস্বাদন করাতে পারি। আর আখিরাতের আযাব তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। আল-বায়ান

অতঃপর আমি অশুভ দিনগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে ঝাঞ্ঝা বায়ু পাঠালাম যাতে তারা দুনিয়ার জীবনে অপমানজনক শাস্তি আস্বাদন করে। আখিরাতের শাস্তি অবশ্যই অধিক লাঞ্ছনাদায়ক আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। তাইসিরুল

অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করার জন্য তাদের বিরূদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝা-বায়ু, অমঙ্গলজনক দিনে। আখিরাতের শাস্তিতো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদের সাহায্য করা হবেনা। মুজিবুর রহমান

So We sent upon them a screaming wind during days of misfortune to make them taste the punishment of disgrace in the worldly life; but the punishment of the Hereafter is more disgracing, and they will not be helped. Sahih International

১৬. তারপর আমরা তাদের উপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু(১) অশুভ দিনগুলোতে; যাতে আমরা তাদের আস্বাদন করাতে পারি। দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।(২) আর আখিরাতের শাস্তি তো তার চেয়ে বেশী লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

(১) এটা صاعقة এরই ব্যাখ্যা, যা পূর্বের ১৩ নং আয়াতে আদ ও সামুদের صاعقة বলে বর্ণিত হয়েছে। صاعقة শব্দের আসল অর্থ অচেতন ও বেহুশকারী বস্তু। এ কারণেই বজ্রকেও صاعقة বলা হয়। আকস্মিক বিপদ অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আদি সম্প্রদায়ের উপর চাপানো ঝড়ও একটি صاعقة ছিল। একেই এখানে (رِيحًا صَرْصَرًا) নামে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস বুঝাতে এ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ এর অর্থ মারাত্মক “লু” প্রবাহ; কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস এবং কারো কারো মতে এর অর্থ এমন বাতাস যা প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টি হয়। তবে এ অর্থে সবাই একমত যে, শব্দটি প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। [দেখুন: তবারী]

কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এ আযাব সম্পর্কে যেসব বিস্তারিত বর্ণনা আছে তা হচ্ছে, এ বাতাস উপর্যুপরি সাত দিন এবং আট রাত পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছিলো। এর প্রচণ্ডতায় মানুষ পড়ে গিয়ে এমনভাবে মৃত্যুবরণ করে এবং মরে মরে পড়ে থাকে যেমন খেজুরের ফাঁপা কাণ্ড পড়ে থাকে [আল-হাক্‌কাহ: ৭]। এ বাতাস যে জিনিসের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে তাকেই জরাজীর্ণ করে ফেলেছে [আয-যারিয়াত: ৪২]। যে সময় এ বাতাস এগিয়ে আসছিলো তখন আদ জাতির লোকেরা এই ভেবে আনন্দে মেতে উঠেছিলো যে মেঘ চারদিক থেকে ঘিরে আসছে। এখন বৃষ্টি হবে এবং তাদের আশা পূর্ণ হবে। কিন্তু তা এমনভাবে আসলো যে গোটা এলাকাই ধ্বংস করে রেখে গেল। [আল-আহকাফ: ২৪, ২৫]

(২) দাহ্‌হাক বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখেন। কেবল প্রবল শুষ্ক বাতাস প্রবাহিত হত। অবশেষে আট দিন ও সাত রাত্রি পর্যন্ত উপর্যুপরি তুফান চলতে থাকে। [দেখুন: বাগভী, ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) অতঃপর আমি ওদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবার জন্য কতিপয় অশুভ দিনে[1] ওদের উপরে ঝোড়ো হাওয়া[2] প্রেরণ করেছিলাম। আর পরলোকের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং ওদেরকে সাহায্য করা হবে না।

[1] نَحِسَاتٌ এর অনুবাদ কেউ করেছেন ধারাবাহিক ও লাগাতার। কেননা, এ হাওয়া সাত দিন আট রাত পর্যন্ত লাগাতার চলেছে। আবার কেউ এর অর্থ কঠিন, কেউ ধূলা-বালি মিশ্রিত হাওয়া এবং কেউ অশুভও করেছেন। শেষোক্ত অনুবাদের সারমর্ম হবে, যে দিনগুলোতে তাদের উপর কঠিন তুফান চলেছে, সেগুলো তাদের জন্য বড়ই অকল্যাণকর ও অশুভ প্রমাণিত হয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, দিনগুলোই অশুভ। কারণ কোন সময় বা দিন অশুভ হয় না।

[2] صَرْصَرٌ এর উৎপত্তি হল, صُرَّةٌ থেকে; যার অর্থঃ শব্দ। অর্থাৎ, এমন বাতাস যাতে বিকট শব্দ ছিল। অর্থাৎ, অতি প্রবল ও জোরদার ঝড়, যাতে ভীষণ শব্দও ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, এটা صر থেকে গঠিত যার অর্থ, ঠান্ডা। অর্থাৎ, ঠান্ডা, শীতল বা হিমশীতল বাতাস। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, সঠিক এই যে, উক্ত হাওয়ার মধ্যে বর্ণিত সব গুণগুলোই বর্তমান ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৭ وَ اَمَّا ثَمُوۡدُ فَهَدَیۡنٰهُمۡ فَاسۡتَحَبُّوا الۡعَمٰی عَلَی الۡهُدٰی فَاَخَذَتۡهُمۡ صٰعِقَۃُ الۡعَذَابِ الۡهُوۡنِ بِمَا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ ﴿ۚ۱۷﴾
و اما ثمود فهدینهم فاستحبوا العمی علی الهدی فاخذتهم صعقۃ العذاب الهون بما كانوا یكسبون ﴿۱۷﴾

আর সামূদ সম্প্রদায়, আমি তাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা সঠিক পথে চলার পরিবর্তে অন্ধ পথে চলাই পছন্দ করেছিল। ফলে তাদের অর্জনের কারণেই লাঞ্ছনাদায়ক আযাবের বজ্রাঘাত তাদেরকে পাকড়াও করল। আল-বায়ান

আর সামূদের অবস্থা এই যে, আমি তাদেরকে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সঠিক পথে চলার পরিবর্তে অন্ধ হয়ে থাকাকেই পছন্দ করে ছিল। তখন তাদের কৃতকর্মের কারণে অপমানজনক শাস্তির বজ্রাঘাত তাদেরকে পাকড়াও করল। তাইসিরুল

আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, আমি তাদেরকে পথ নির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎ পথের পরিবর্তে ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করেছিল। অতঃপর তাদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আঘাত হানলো তাদের কৃতকর্মের পরিণাম স্বরূপ। মুজিবুর রহমান

And as for Thamud, We guided them, but they preferred blindness over guidance, so the thunderbolt of humiliating punishment seized them for what they used to earn. Sahih International

১৭. আর সামূদ সম্প্রদায়, আমরা তাদেরকে পথনির্দেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধপথে চলা পছন্দ করেছিল। ফলে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির বজ্রাঘাত তাদের পাকড়াও করল; তারা যা অর্জন করেছিল তার জন্য।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) আর সামূদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার তো এই যে, আমি ওদেরকে পথনির্দেশ করেছিলাম;[1] কিন্তু ওরা সৎপথের পরিবর্তে ভ্রান্তপথ অবলম্বন করেছিল।[2] অতঃপর ওদের কৃতকর্মের পরিণামস্বরূপ ওদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আঘাত হানল। [3]

[1] অর্থাৎ, তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছিলাম, তার প্রমাণাদি তাদের সামনে স্পষ্ট করেছিলাম এবং তাদের নবী সালেহ-এর মাধ্যমে তাদের উপর হুজ্জত কায়েম করেছিলাম।

[2] অর্থাৎ, তারা বিরোধিতা করে ও মিথ্যা ভাবে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা সেই উটনীকেও যবাই করে দেয়, যাকে মু’জিযা স্বরূপ তাদের দাবী অনুযায়ী পাহাড় থেকে বের করা হয়েছিল এবং তা ছিল নবীর সত্যতার দলীল।

[3] صَاعِقَةٌ বলা হয় কঠিন আযাবকে। এই কঠিন আযাব তাদের উপর বিকট শব্দ এবং ভূমিকম্প আকারে আসে। যাতে তাদেরকে লাঞ্ছনা ও অপমান সহ ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৮ وَ نَجَّیۡنَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ كَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸﴾
و نجینا الذین امنوا و كانوا یتقون ﴿۱۸﴾

আর আমি তাদেরকে রক্ষা করলাম যারা ঈমান এনেছিল এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। আল-বায়ান

আর আমি তাদেরকে বাঁচিয়ে দিলাম যারা ঈমান এনেছিল আর (আল্লাহকে) ভয় করে চলত। তাইসিরুল

আমি উদ্ধার করলাম তাদেরকে যারা ঈমান এনেছিল এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করত। মুজিবুর রহমান

And We saved those who believed and used to fear Allah. Sahih International

১৮. আর আমরা রক্ষা করলাম তাদেরকে, যারা ঈমান এনেছিল এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আর যারা বিশ্বাসী ও সাবধানী ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:১৯ وَ یَوۡمَ یُحۡشَرُ اَعۡدَآءُ اللّٰهِ اِلَی النَّارِ فَهُمۡ یُوۡزَعُوۡنَ ﴿۱۹﴾
و یوم یحشر اعدآء الله الی النار فهم یوزعون ﴿۱۹﴾

আর যেদিন আল্লাহর দুশমনদেরকে আগুনের দিকে সমবেত করা হবে তখন তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হবে। আল-বায়ান

যে দিন আল্লাহর দুশমনদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে, তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হবে। তাইসিরুল

যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নাম অভিমুখে সমবেত করা হবে সেদিন তাদেরকে বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। মুজিবুর রহমান

And [mention, O Muhammad], the Day when the enemies of Allah will be gathered to the Fire while they are [driven] assembled in rows, Sahih International

১৯. আর যেদিন আল্লাহ্‌র শত্রুদেরকে আগুনের দিকে সমবেত করা হবে, সেদিন তাদেরকে বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) (স্মরণ কর,) যেদিন[1] আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য সমবেত করা হবে এবং ওদেরকে বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হবে, [2]

[1] এখানে اذْكُر ঊহ্য আছে। অর্থাৎ, (সেই দিনকে স্মরণ কর,) যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের ফিরিশতারা একত্রিত করবেন। অর্থাৎ, প্রথম থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকল শত্রুরা একত্রিত হবে।

[2] يُوزَعون অর্থাৎ, তাদেরকে থামিয়ে থামিয়ে প্রথম থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সকলকে একত্রিত করা হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই শব্দের আরো ব্যাখ্যা জানার জন্য দ্রষ্টব্য সূরা নামলের ১৭নং আয়াতের টীকা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১:২০ حَتّٰۤی اِذَا مَا جَآءُوۡهَا شَهِدَ عَلَیۡهِمۡ سَمۡعُهُمۡ وَ اَبۡصَارُهُمۡ وَ جُلُوۡدُهُمۡ بِمَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۰﴾
حتی اذا ما جآءوها شهد علیهم سمعهم و ابصارهم و جلودهم بما كانوا یعملون ﴿۲۰﴾

অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। আল-বায়ান

শেষ পর্যন্ত যখন তারা জাহান্নামের নিকটে পৌঁছবে, তখন তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের কান, তাদের চোখ আর তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তাইসিরুল

পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। মুজিবুর রহমান

Until, when they reach it, their hearing and their eyes and their skins will testify against them of what they used to do. Sahih International

২০. পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌছবে, তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে।(১)

(১) হাদীসে এসেছে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। অকস্মাৎ তিনি হেসে উঠলেন, অতঃপর বললেন, তোমরা জান, আমি কি কারণে হেসেছি? আমরা আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই জানেন। তিনি বললেন, আমি সে কথা স্মরণ করে হেসেছি, যা হাশরে হিসাবের জায়গায় বান্দা তার পালনকর্তাকে বলবে। সে বলবে হে রব, আপনি কি আমাকে যুলুম থেকে আশ্রয় দেননি? আল্লাহ বলবেন, অবশ্যই দিয়েছি। তখন বন্দা বলবে, তাহলে আমি আমার হিসাব নিকাশের ব্যাপারে অন্য কারও সাক্ষ্যে সন্তুষ্ট নই। আমার অস্তিত্বের মধ্য থেকেই কোন সাক্ষী না দাড়ালে আমি সন্তুষ্ট হব না। আল্লাহ তা’আলা বলবেন (كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا) অর্থাৎ ভাল কথা, তুমি নিজেই তোমার হিসাব করে নাও। এরপর তার মুখে মোহর এটে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলবে, অর্থাৎ তোমরা ধ্বংস হও, আমি তো দুনিয়াতে যা কিছু করেছি, তোমাদেরই সুখের জন্য করেছি। এখন তোমরাই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে শুরু করলে। [মুসলিম: ২৯৩৯] অন্য বর্ণনায় এসেছে, এ ব্যক্তির মুখে মোহর এটে দেয়া হবে এবং উরুকে বলা হবে, তুমি কথা বল এবং তার ক্রিয়াকর্ম বর্ণনা কর। তখন মানুষের উরু, মাংস, অস্থি সকলেই তার কর্মের সাক্ষ্য দেবে। [মুসলিম: ২৯৬৮]

যেসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আখিরাত শুধু একটি আতিক জগত হবে না, বরং মানুষকে সেখানে দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে পুনরায় ঠিক তেমনি জীবিত করা হবে যেমনটি বর্তমানে তারা এই পৃথিবীতে জীবিত আছে-এ আয়াতটি তারই একটি। শুধু তাই নয়, যে দেহ নিয়ে তারা এই পৃথিবীতে আছে ঠিক সেই দেহই তাদের দেয়া হবে। যেসব উপাদান, অঙ্গ-প্রতঙ্গ এবং অণু-পরমাণুর সমন্বয়ে এই পৃথিবীতে তাদের দেহ গঠিত কিয়ামতের দিন সেগুলোই একত্রিত করে দেয়া হবে এবং যে দেহে অবস্থান করে সে পৃথিবীতে কাজ করেছিলো পূর্বের সেই দেহ দিয়েই তাকে উঠানো হবে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত দেহ নিয়ে সে পূর্বের জীবনে কোন অপরাধ করেছিলো সেই সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যেই যদি সে অবস্থান করে কেবল তখনি সে সেখানে সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হবে। কুরআন মজীদের নিম্ন বর্ণিত আয়াতগুলোও এ বিষয়ের অকাট্য প্রমাণ। সূরা আল-ইসরা: ৪৯–৫১, ৯৮; সূরা আল-মুমিনুন: ৩৫–৩৮, ৮২–৮৩; সূরা আস সাজদাহ: ১০; সূরা ইয়াসীন: ৬৫–৭৯; সূরা আস-সাফফাতঃ ১৬–১৮; সূরা আল-ওয়াকি'আ: ৪৭৫০ এবং সূরা আন-নাযি আত: ১০–১৪।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) পরিশেষে যখন ওরা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে, তখন ওদের কান, চোখ ও দেহের চামড়া ওদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে। [1]

[1] অর্থাৎ, যখন তারা শিরক করার কথা অস্বীকার করবে, তখন আল্লাহ তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন এবং তাদের (দেহের) অঙ্গগুলো সাক্ষ্য দেবে যে, তারা এই কাজ করত। إِذَا مَا جَاءُوهَا তে ما অতিরিক্ত (যার কোন অর্থ হবে না) তাকীদ স্বরূপ এসেছে। মানুষের রয়েছে পাঁচটি ইন্দ্রিয়। এখানে দু’টি উল্লেখ করা হয়েছে। তৃতীয়টি হল ত্বক বা চামড়া যা স্পর্শের যন্ত্র। এইভাবে ইন্দ্রিয়গুলো তিন প্রকারের হয়। বাকী আরো দু’টি ইন্দ্রিয় এই জন্য উল্লেখ করা হয়নি যে, স্বাদ গ্রহণ স্পর্শের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, স্বাদ গ্রহণ করা ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জিনিসকে জিহ্বার ত্বকের উপর রাখা হবে। অনুরূপ ঘ্রাণ নেওয়াও ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জিনিস নাসিকার ত্বকে স্পর্শ হবে। এইভাবে جُلود শব্দের মধ্যে তিনটি ইন্দ্রিয় চলে আসে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »