লগইন করুন
৪১ সূরাঃ হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত) | Fussilat | سورة فصلت - আয়াত নং - ১৬ - মাক্কী
তারপর আমি তাদের উপর অশুভ দিনগুলোতে ঝঞ্ঝাবায়ু পাঠালাম যাতে তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক আযাব আস্বাদন করাতে পারি। আর আখিরাতের আযাব তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। আল-বায়ান
অতঃপর আমি অশুভ দিনগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে ঝাঞ্ঝা বায়ু পাঠালাম যাতে তারা দুনিয়ার জীবনে অপমানজনক শাস্তি আস্বাদন করে। আখিরাতের শাস্তি অবশ্যই অধিক লাঞ্ছনাদায়ক আর তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না। তাইসিরুল
অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করার জন্য তাদের বিরূদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্ঝা-বায়ু, অমঙ্গলজনক দিনে। আখিরাতের শাস্তিতো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদের সাহায্য করা হবেনা। মুজিবুর রহমান
So We sent upon them a screaming wind during days of misfortune to make them taste the punishment of disgrace in the worldly life; but the punishment of the Hereafter is more disgracing, and they will not be helped. Sahih International
১৬. তারপর আমরা তাদের উপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু(১) অশুভ দিনগুলোতে; যাতে আমরা তাদের আস্বাদন করাতে পারি। দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।(২) আর আখিরাতের শাস্তি তো তার চেয়ে বেশী লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।
(১) এটা صاعقة এরই ব্যাখ্যা, যা পূর্বের ১৩ নং আয়াতে আদ ও সামুদের صاعقة বলে বর্ণিত হয়েছে। صاعقة শব্দের আসল অর্থ অচেতন ও বেহুশকারী বস্তু। এ কারণেই বজ্রকেও صاعقة বলা হয়। আকস্মিক বিপদ অর্থেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আদি সম্প্রদায়ের উপর চাপানো ঝড়ও একটি صاعقة ছিল। একেই এখানে (رِيحًا صَرْصَرًا) নামে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস বুঝাতে এ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ এর অর্থ মারাত্মক “লু” প্রবাহ; কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস এবং কারো কারো মতে এর অর্থ এমন বাতাস যা প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টি হয়। তবে এ অর্থে সবাই একমত যে, শব্দটি প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। [দেখুন: তবারী]
কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এ আযাব সম্পর্কে যেসব বিস্তারিত বর্ণনা আছে তা হচ্ছে, এ বাতাস উপর্যুপরি সাত দিন এবং আট রাত পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছিলো। এর প্রচণ্ডতায় মানুষ পড়ে গিয়ে এমনভাবে মৃত্যুবরণ করে এবং মরে মরে পড়ে থাকে যেমন খেজুরের ফাঁপা কাণ্ড পড়ে থাকে [আল-হাক্কাহ: ৭]। এ বাতাস যে জিনিসের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে তাকেই জরাজীর্ণ করে ফেলেছে [আয-যারিয়াত: ৪২]। যে সময় এ বাতাস এগিয়ে আসছিলো তখন আদ জাতির লোকেরা এই ভেবে আনন্দে মেতে উঠেছিলো যে মেঘ চারদিক থেকে ঘিরে আসছে। এখন বৃষ্টি হবে এবং তাদের আশা পূর্ণ হবে। কিন্তু তা এমনভাবে আসলো যে গোটা এলাকাই ধ্বংস করে রেখে গেল। [আল-আহকাফ: ২৪, ২৫]
(২) দাহ্হাক বলেন, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখেন। কেবল প্রবল শুষ্ক বাতাস প্রবাহিত হত। অবশেষে আট দিন ও সাত রাত্রি পর্যন্ত উপর্যুপরি তুফান চলতে থাকে। [দেখুন: বাগভী, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) অতঃপর আমি ওদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাবার জন্য কতিপয় অশুভ দিনে[1] ওদের উপরে ঝোড়ো হাওয়া[2] প্রেরণ করেছিলাম। আর পরলোকের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং ওদেরকে সাহায্য করা হবে না।
[1] نَحِسَاتٌ এর অনুবাদ কেউ করেছেন ধারাবাহিক ও লাগাতার। কেননা, এ হাওয়া সাত দিন আট রাত পর্যন্ত লাগাতার চলেছে। আবার কেউ এর অর্থ কঠিন, কেউ ধূলা-বালি মিশ্রিত হাওয়া এবং কেউ অশুভও করেছেন। শেষোক্ত অনুবাদের সারমর্ম হবে, যে দিনগুলোতে তাদের উপর কঠিন তুফান চলেছে, সেগুলো তাদের জন্য বড়ই অকল্যাণকর ও অশুভ প্রমাণিত হয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, দিনগুলোই অশুভ। কারণ কোন সময় বা দিন অশুভ হয় না।
[2] صَرْصَرٌ এর উৎপত্তি হল, صُرَّةٌ থেকে; যার অর্থঃ শব্দ। অর্থাৎ, এমন বাতাস যাতে বিকট শব্দ ছিল। অর্থাৎ, অতি প্রবল ও জোরদার ঝড়, যাতে ভীষণ শব্দও ছিল। কেউ কেউ বলেছেন, এটা صر থেকে গঠিত যার অর্থ, ঠান্ডা। অর্থাৎ, ঠান্ডা, শীতল বা হিমশীতল বাতাস। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, সঠিক এই যে, উক্ত হাওয়ার মধ্যে বর্ণিত সব গুণগুলোই বর্তমান ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান