৪১ : ২০ حَتّٰۤی اِذَا مَا جَآءُوۡهَا شَهِدَ عَلَیۡهِمۡ سَمۡعُهُمۡ وَ اَبۡصَارُهُمۡ وَ جُلُوۡدُهُمۡ بِمَا كَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۰﴾

অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে। আল-বায়ান

শেষ পর্যন্ত যখন তারা জাহান্নামের নিকটে পৌঁছবে, তখন তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের কান, তাদের চোখ আর তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। তাইসিরুল

পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। মুজিবুর রহমান

Until, when they reach it, their hearing and their eyes and their skins will testify against them of what they used to do. Sahih International

২০. পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌছবে, তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে।(১)

(১) হাদীসে এসেছে, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। অকস্মাৎ তিনি হেসে উঠলেন, অতঃপর বললেন, তোমরা জান, আমি কি কারণে হেসেছি? আমরা আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই জানেন। তিনি বললেন, আমি সে কথা স্মরণ করে হেসেছি, যা হাশরে হিসাবের জায়গায় বান্দা তার পালনকর্তাকে বলবে। সে বলবে হে রব, আপনি কি আমাকে যুলুম থেকে আশ্রয় দেননি? আল্লাহ বলবেন, অবশ্যই দিয়েছি। তখন বন্দা বলবে, তাহলে আমি আমার হিসাব নিকাশের ব্যাপারে অন্য কারও সাক্ষ্যে সন্তুষ্ট নই। আমার অস্তিত্বের মধ্য থেকেই কোন সাক্ষী না দাড়ালে আমি সন্তুষ্ট হব না। আল্লাহ তা’আলা বলবেন (كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا) অর্থাৎ ভাল কথা, তুমি নিজেই তোমার হিসাব করে নাও। এরপর তার মুখে মোহর এটে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বলবে, অর্থাৎ তোমরা ধ্বংস হও, আমি তো দুনিয়াতে যা কিছু করেছি, তোমাদেরই সুখের জন্য করেছি। এখন তোমরাই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে শুরু করলে। [মুসলিম: ২৯৩৯] অন্য বর্ণনায় এসেছে, এ ব্যক্তির মুখে মোহর এটে দেয়া হবে এবং উরুকে বলা হবে, তুমি কথা বল এবং তার ক্রিয়াকর্ম বর্ণনা কর। তখন মানুষের উরু, মাংস, অস্থি সকলেই তার কর্মের সাক্ষ্য দেবে। [মুসলিম: ২৯৬৮]

যেসব আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, আখিরাত শুধু একটি আতিক জগত হবে না, বরং মানুষকে সেখানে দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে পুনরায় ঠিক তেমনি জীবিত করা হবে যেমনটি বর্তমানে তারা এই পৃথিবীতে জীবিত আছে-এ আয়াতটি তারই একটি। শুধু তাই নয়, যে দেহ নিয়ে তারা এই পৃথিবীতে আছে ঠিক সেই দেহই তাদের দেয়া হবে। যেসব উপাদান, অঙ্গ-প্রতঙ্গ এবং অণু-পরমাণুর সমন্বয়ে এই পৃথিবীতে তাদের দেহ গঠিত কিয়ামতের দিন সেগুলোই একত্রিত করে দেয়া হবে এবং যে দেহে অবস্থান করে সে পৃথিবীতে কাজ করেছিলো পূর্বের সেই দেহ দিয়েই তাকে উঠানো হবে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত দেহ নিয়ে সে পূর্বের জীবনে কোন অপরাধ করেছিলো সেই সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যেই যদি সে অবস্থান করে কেবল তখনি সে সেখানে সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হবে। কুরআন মজীদের নিম্ন বর্ণিত আয়াতগুলোও এ বিষয়ের অকাট্য প্রমাণ। সূরা আল-ইসরা: ৪৯–৫১, ৯৮; সূরা আল-মুমিনুন: ৩৫–৩৮, ৮২–৮৩; সূরা আস সাজদাহ: ১০; সূরা ইয়াসীন: ৬৫–৭৯; সূরা আস-সাফফাতঃ ১৬–১৮; সূরা আল-ওয়াকি'আ: ৪৭৫০ এবং সূরা আন-নাযি আত: ১০–১৪।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) পরিশেষে যখন ওরা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে, তখন ওদের কান, চোখ ও দেহের চামড়া ওদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে। [1]

[1] অর্থাৎ, যখন তারা শিরক করার কথা অস্বীকার করবে, তখন আল্লাহ তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন এবং তাদের (দেহের) অঙ্গগুলো সাক্ষ্য দেবে যে, তারা এই কাজ করত। إِذَا مَا جَاءُوهَا তে ما অতিরিক্ত (যার কোন অর্থ হবে না) তাকীদ স্বরূপ এসেছে। মানুষের রয়েছে পাঁচটি ইন্দ্রিয়। এখানে দু’টি উল্লেখ করা হয়েছে। তৃতীয়টি হল ত্বক বা চামড়া যা স্পর্শের যন্ত্র। এইভাবে ইন্দ্রিয়গুলো তিন প্রকারের হয়। বাকী আরো দু’টি ইন্দ্রিয় এই জন্য উল্লেখ করা হয়নি যে, স্বাদ গ্রহণ স্পর্শের অন্তর্ভুক্ত। কেননা, স্বাদ গ্রহণ করা ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জিনিসকে জিহ্বার ত্বকের উপর রাখা হবে। অনুরূপ ঘ্রাণ নেওয়াও ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জিনিস নাসিকার ত্বকে স্পর্শ হবে। এইভাবে جُلود শব্দের মধ্যে তিনটি ইন্দ্রিয় চলে আসে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান