৩৯৬১

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৬১-[২] সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নাজদ এলাকায়) এক সফরে ছিলেন। তখন মুশরিকদের একজন গুপ্তচর (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে) এসে সাহাবীগণের সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলে সরে পড়ল। এতদশ্রবণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটিকে খুঁজে বের করে হত্যা কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে (গুপ্তচরকে) হত্যা করলাম এবং তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সঙ্গে থাকা মাল আমাকে দান করলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ

وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ أَتَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَيْنٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ وَهُوَ فِي سَفَرٍ فَجَلَسَ عِنْدَ أَصْحَابِهِ يَتَحَدَّثُ ثُمَّ انْفَتَلَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اطْلُبُوهُ وَاقْتُلُوهُ» . فَقَتَلْتُهُ فنفَّلَني سلبَه

ব্যাখ্যা: কাযী বলেনঃ عَيْنٌ (চোখ) বলতে এখানে গুপ্তচর উদ্দেশ্য। একে এ নামে নামকরণ করার কারণ হলো গুপ্তচরের কাজ চোখের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, অথবা দর্শনের প্রতি তার অধিক গুরুত্ব দেয়ার কারণে, দর্শনে তার নিবিষ্ট হওয়ার কারণে যেন তার সমস্ত শরীর চোখে পরিণত হয়েছে।

(سَلَبَه) অর্থাৎ তার উপর যে কাপড়, অস্ত্র আছে তা উদ্দেশ্য। এ নামে একে নামকরণ করার কারণ হলো, তা ব্যক্তি থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। ইবনুল হুমাম বলেনঃ এভাবে তার বাহন, তার উপর গদি, যন্ত্র স্বরূপ যা আছে, তার সাথে প্রাণীর উপর আরও যা সম্পদ আছে এবং তার অনুরূপ স্বর্ণ, রৌপ্য থেকে আরও যা আছে।

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ (فَنَفَّلَنِىْ) অর্থাৎ- তিনি আমাকে অতিরিক্ত দান করলেন, নফল বা অতিরিক্ত বলতে ঐ দান গনীমাতের যে সম্পদের মাধ্যমে তাকে বিশেষিত করা হয় এবং তার নির্দিষ্ট অংশের উপর বেশি দেয়া হয়। শারহুস্ সুন্নাতে আছে- অত্র হাদীসে এ প্রমাণ রয়েছে যে, নিরাপত্তা ছাড়া বিধর্মী রাষ্ট্র থেকে যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করবে তাকে হত্যা করা বৈধ। আর মুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রয়প্রাপ্ত কাফিরদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি কাফিরদের পক্ষে গুপ্তচর বৃদ্ধি করবে, তার তরফ থেকে এ ধরনের আচরণ অঙ্গীকার ভঙ্গের শামিল, তাই তাকে হত্যা করতে হবে। আর এ ধরনের কাজ কোনো মুসলিম ব্যক্তি করলে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না বরং তাকে ধমক দিতে হবে, অতঃপর যদি অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতার দাবী করে এবং এ ধরনের কাজ পূর্বে তাদের থেকে সংঘটিত না হয়ে থাকে, তাহলে এ ধরনের ব্যক্তি থেকে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। এটা ইমাম শাফি‘ঈ-এর উক্তি।

অত্র হাদীসে আরও প্রমাণ আছে যে, নিহত ব্যক্তির সঙ্গের সম্পত্তি হত্যাকারীর প্রাপ্য। ইবনুল হুমাম বলেনঃ নফল দান বলতে ইমাম কর্তৃক যোদ্ধাকে তার অংশের অধিক দান করা, অতিরিক্ত দানের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রতি উৎসাহিত করা ইমামের জন্য মুস্তাহাব। সুতরাং ইমাম বলবে, ‘‘যে ব্যক্তি কাফির যোদ্ধাকে হত্যা করবে তার সঙ্গের সামগ্রী হত্যাকারীর জন্য।’’ অথবা সৈন্যবাহিনীকে বলবে, আমি গনীমাতের সম্পদ তোমাদের জন্য এক-পঞ্চমাংশত পৃথক করার পর অবশিষ্ট সম্পদের অর্ধেক অথবা এক-চতুর্থাংশ তোমাদের জন্য নির্ধারণ করলাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

মুসলিমে ‘ইকরামার বর্ণনাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘অতঃপর সে লোকটি’’ উটটি বেঁধে লোকেদের সাথে খাদ্য খেতে এগিয়ে গেল এবং তাকাতাকি করতে থাকল। আর দুপুরে আমাদের মাঝে দুর্বলতা ছিল তা অবলোকন করে হঠাৎ লোকটি দ্রুতবেগে চলে যেতে থাকল।’’

নববী বলেনঃ অত্র হাদীসে কাফিরশত্রু গুপ্তচরকে হত্যা করার বৈধতা রয়েছে। আর এতে সকলে একমত।

কুরতুবী বলেনঃ অত্র হাদীসে সৈন্যবাহিনী গনীমাতের সম্পদ যা লাভ করেছে তার সমস্তই তাদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা ইমাম তা দান করার অধিকার রাখেন, এ প্রমাণ আছে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০৫১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ