পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা
৩৯৬০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা সে সকল লোকেদেরকে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন, যাদের শিকল পরিহিত অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, শিকল পরিহিত অবস্থায় জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। (বুখারী)[1]
بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «عَجِبَ اللَّهُ مِنْ قَوْمٍ يُدْخَلُونَ الْجَنَّةَ فِي السَّلَاسِلِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «يُقَادُونَ إِلى الجنَّةِ بالسلاسل» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (يُدْخَلُوْنَ الْجَنَّةَ فِى السَّلَاسِلِ) অর্থাৎ- তাদেরকে বন্দী অবস্থায় বলপূর্বক, অনিচ্ছায় শিকল এবং রশিতে করে পাকড়াও করা হবে। অতঃপর তারা ইসলামী ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহ তাদেরকে ঈমান দান করবেন, ফলে তারা এর বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর ব্যক্তি হিসেবে ইসলামের সান্নিধ্যে আসার কারণে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
একমতে বলা হয়েছে, (السَّلَاسِلِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যা তারা প্রত্যাখ্যান করে, অর্থাৎ নিজেদের হত্যাকরণ, স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দীকরণ, বাড়ী-ঘর ধ্বংসকরণ এবং ঐ সকল বিষয় যা ব্যক্তিকে ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করে, যা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। আর (السَّلَاسِلِ) দ্বারা সত্যকে আকর্ষণ করাও উদ্দেশ্য হতে পারে, বিশেষ করে যার দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতের দিকে টানবেন, প্রকৃতির গর্তে অবতরণ করা থেকে সুউচ্চ মর্যাদার মাধ্যমে জান্নাতুল মা‘ওয়ার দিকে আরোহণ করতে। আমি (গ্রন্থকার) বলব, এভাবে (السَّلَاسِلِ)-এর অর্থের মাঝে আছে অন্তরের অপছন্দনীয়তা, অর্থাৎ দারিদ্র্যতা, অসুস্থতা, উদাসীনতা, সকল শরীরিক বিপদসমূহ, আত্মিক সুখের অনুপস্থিতি। কেননা এটা আত্মিক উন্নত অবস্থার দিকে এবং পরকালীন উচ্চস্থানের দিকে টানে, আর এ দিকেরই অন্তর্ভুক্ত হলো সন্তানাদির লেখা-পড়াকে অপছন্দ করা।
জামিউস্ সগীরে আছে, আমাদের প্রভু এমন সম্প্রদায়ের কারণে আশ্চর্যান্বিত হন যাদেরকে শিকলসমূহে করে জান্নাতের দিকে হাকিয়ে নেয়া হবে। ত্ববারানী-এর বর্ণনাতে আবূ উমামাহ্ ও আবূ নু‘আয়ম থেকে বর্ণিত, তারা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘‘আমি এমন সম্প্রদায়ের কারণে আশ্চর্যান্বিত হই যাদেরকে শিকলে করে জান্নাতের দিকে হাকিয়ে নেয়া হয়, অথচ তারা তা অপছন্দ করে।’’ (মিরকাতুল মাফাতীহ)
ইবনুল জাওযী বলেনঃ এর অর্থ হলো তাদেরকে বন্দী করা হবে, বেঁধে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর তারা যখন ইসলামের বিশুদ্ধতা জানতে পারবে তখন স্বেচ্ছায় তারা ইসলামে প্রবেশ করবে, অতঃপর জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুতরাং এক্ষেত্রে বন্দী ও কয়েদী হওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করাই প্রথম কারণ, বাধ্য করার ব্যাপারে যেন ধারাবাহিকতা প্রয়োগ করা হয়েছে, যা জান্নাতে প্রবেশের কারণ। এখানে উদ্ভূত বিষয়কে তার কারণের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
ত্বীবী বলেনঃ ‘শিকল দ্বারা’ এখানে ঐ আকর্ষণ উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রাখছে, যাকে হিদয়াতের প্রতি আল্লাহ আকর্ষণ করবেন, যিনি তাঁর বান্দাদেরকে মুক্তি দিতে পথভ্রষ্টতা থেকে হিদায়াতের দিকে, প্রবৃত্তির গর্তে অবতরণ করা থেকে মর্যাদাসমূহে আরোহণ করার দিকে টেনে আনবেন। তবে আ-লি ‘ইমরান-এর তাফসীরে হাদীসটি ঐ দিকে নির্দেশনা করছে যে, গলায় শিকল পরানো বিষয়টি তার বাস্তবতার উপর প্রমাণ বহন করছে।
আর ইব্রাহীম হারবী এ শব্দটির প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন, অর্থাৎ তাদেরকে জোর করে ইসলামের দিকে পরিচালনা করা হবে, আর এটা তাদের জান্নাতে প্রবেশের কারণ হবে। সেখানে কোনো শিকল থাকবে এমন নয়। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০১০)