৩৯৬২

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৬২-[৩] উক্ত রাবী [সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ’হাওয়াযিন’ গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। (যুদ্ধরত অবস্থায়) একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে দুপুরে খাবার খাচ্ছিলাম, তখন একজন (অপরিচিত) লোক একটি লালবর্ণের উটে সওয়ার হয়ে সেখানে আসলো এবং উটটি এক জায়গায় বসিয়ে এদিক-সেদিক দেখতে লাগল। আমাদের মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা ছিল এবং আমাদের সওয়ারীও ছিল কম, তাই কেউ ছিল পদাতিক। অতঃপর লোকটি সন্তর্পণে স্বীয় উটের কাছে এসে দ্রুতগতিতে উটটি হাঁকাতে লাগল।

বর্ণনাকারী [সালামাহ্(রাঃ)] বলেন, তার এরূপ অবস্থা দেখে আমিও তৎক্ষণাৎ তার পিছু ছুটলাম। অবশেষে তার উটের লাগাম ধরে ফেললাম এবং তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলাম। অতঃপর আমি তার উটসহ যা কিছু মাল ছিল সমস্ত কিছু নিয়ে এলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য লোকজন আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটিকে কে হত্যা করেছে? তখন লোকেরা বলল, আক্ওয়া’-এর পুত্র (সালামাহ্)। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঐ নিহত লোকটির সমস্ত মাল-সামান সেই পাবে। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ

وَعَنْهُ قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَوَازِنَ فَبَيْنَا نَحْنُ نَتَضَحَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ أَحْمَرَ فَأَنَاخَهُ وَجَعَلَ يَنْظُرُ وَفِينَا ضَعْفَةٌ وَرِقَّةٌ مِنَ الظَّهْرِ وَبَعْضُنَا مُشَاةٌ إِذْ خَرَجَ يَشْتَدُّ فَأَتَى جَمَلَهُ فَأَثَارَهُ فَاشْتَدَّ بِهِ الْجَمَلُ فَخَرَجْتُ أَشْتَدُّ حَتَّى أَخَذْتُ بِخِطَامِ الْجَمَلِ فَأَنَخْتُهُ ثُمَّ اخْتَرَطْتُ سَيْفِي فَضَرَبْتُ رَأْسَ الرَّجُلِ ثُمَّ جِئْتُ بِالْجَمَلِ أَقُودُهُ وَعَلَيْهِ رَحْلُهُ وَسِلَاحُهُ فَاسْتَقْبَلَنِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ فَقَالَ: «مَنْ قَتَلَ الرَّجُلَ؟» قَالُوا: ابْنُ الْأَكْوَعِ فَقَالَ: «لَهُ سَلَبُهُ أَجْمَعُ»

وعنه قال: غزونا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم هوازن فبينا نحن نتضحى مع رسول الله صلى الله عليه وسلم اذ جاء رجل على جمل احمر فاناخه وجعل ينظر وفينا ضعفة ورقة من الظهر وبعضنا مشاة اذ خرج يشتد فاتى جمله فاثاره فاشتد به الجمل فخرجت اشتد حتى اخذت بخطام الجمل فانخته ثم اخترطت سيفي فضربت راس الرجل ثم جىت بالجمل اقوده وعليه رحله وسلاحه فاستقبلني رسول الله صلى الله عليه وسلم والناس فقال: «من قتل الرجل؟» قالوا: ابن الاكوع فقال: «له سلبه اجمع»

ব্যাখ্যা: (هَوَازِنُ) তীর নিক্ষেপে প্রসিদ্ধ এমন একটি গোত্র যাদের তীর সাধারণত লক্ষ্যভ্রষ্ট হতো না। তারা হুনায়নে ছিল, আর তা ত্বায়িফের নিকটে ‘আরাফার পেছনে একটি উপত্যকা।

একমতে বলা হয়েছে, তার মাঝে এবং মক্কার মাঝে তিন মাইল দূরত্ব ছিল। অত্র এলাকার দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভ্রমণ ছিল শাও্ওয়ালের ছয় রাত্রি অতিবাহিত হওয়ার পর রোজ শনিবার। তখন তিনি মক্কা বিজয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

(فَبَيْنَا نَحْنُ نَتَضَحّٰى) ‘‘যখন আমরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম।’’ نَتَضَحّٰى শব্দটি الضَّحَاءِ থেকে গৃহীত যার অর্থ দিনের প্রথম প্রহরের পরবর্তী সময়। নিহায়াহ্ গ্রন্থকার বলেনঃ এ ক্ষেত্রে মূল হলো ‘আরবরা ভ্রমণ থেকে প্রস্থানের ক্ষেত্রে যখন তারা পথ চলত তখন তারা এমন ভূখণ্ডের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করত যেখানে ঘাস থাকত তখন তাদের কেউ বলত, তোমরা উটের প্রতি দয়া কর। যাতে এ চারণভূমি থেকে খেতে পারে, অতএব «التَّضْحِيَةُ» শব্দটি অনুগ্রহ প্রদর্শনের অর্থে করা হয়েছে, উদ্দেশ্য যাতে উট পরিতৃপ্ত অবস্থায় বাড়ী ফিরতে পারে। এরপর এ শব্দটির প্রয়োগ বিসত্মৃতি লাভ করে। এমনকি বলা হলো, অর্থাৎ যে ব্যক্তি উটকে বাড়ী নিয়ে আসার সময় তথা الضُّحٰى -এর সময় খেত তার ক্ষেত্রে هُوَ يَتَضَحّٰى উক্তি প্রয়োগ হতে থাকল, অর্থাৎ যে এ সময় খায়। একমতে বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো «نُصَلِّي الضُّحٰى» অর্থাৎ- আমরা যুহার সালাত আদায় করছিলাম। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(فَاسْتَقْبَلَنِىْ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ وَالنَّاسُ) উল্লেখিত হাদীসাংশে সৈন্য বাহিনীকে অভ্যর্থনা জানানো এবং যে ব্যক্তি ভালো কাজ করবে তার গুণকীর্তন করার প্রমাণ আছে। মুসলিমদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়নি এবং তাদের থেকে নিরাপত্তাও লাভ করেনি এমন কাফির গুপ্তচরকে হত্যা করা বৈধ। আর এটা সকল মুসলিমদের ঐকমত্যে।

নাসায়ী-এর বর্ণনাতে আছে, ‘‘নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ লোকটিকে অনুসন্ধান করা ও হত্যা করার ব্যাপারে তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।’’ আর চুক্তিতে আবদ্ধ ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফির গুপ্তচরের ব্যাপারে মালিক ও আওযা‘ঈ বলেন, এ ব্যক্তি চুক্তি ভঙ্গকারীতে পরিণত হবে, অতঃপর মুসলিম চাইলে তাকে দাসে পরিণত করবে অথবা তাকে হত্যা করাও বৈধ হবে।

জুমহূর বিদ্বানগণ বলেন, এর মাধ্যমে তার অঙ্গীকার ভঙ্গ হবে না। আর মুসলিম গুপ্তচরের ব্যাপারে শাফি‘ঈ, আওযা‘ঈ, আবূ হানীফাহ্, কতিপয় মালিকী মতাবলম্বী এবং জুমহূর বিদ্বানগণ বলেনঃ ইমাম প্রহার করা, আটক করা এবং অনুরূপ যা কিছু মনে করেন তার মাধ্যমে তাকে ধমক দিবেন, তবে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না। (শারহে মুসলিম ১২শ খন্ড, হাঃ ১৭৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد)