পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
هَلْ أتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ، إذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلاَمَاً قَالَ سَلاَمٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ، فَرَاغَ إِلَى أهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ، فَقَرَّبَهُ إلَيْهِمْ قَالَ ألاَ تَأكُلُونَ
অর্থাৎ, তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে সে বলল, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইব্রাহীম সংগোপনে তার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি (ভুনা) মাংসল বাছুর নিয়ে এল। তা তাদের সামনে রাখল এবং বলল, তোমরা খাচ্ছ না কেন? (সূরা যারিয়াত ২৪-২৭)
তিনি আরো বলেন,
وَجَاءهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ قَالَ يَا قَوْمِ هَؤُلاَءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللهَ وَلاَ تُخْزُونِ في ضَيْفِي أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ
অর্থাৎ, আর তার সম্প্রদায় তার কাছে ছুটে এল এবং তারা পূর্ব হতে কুকর্ম করেই আসছিল; লূত বলল, হে আমার সম্প্রদায়! (তোমাদের ঘরে) আমার এই কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতম। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে আমার মেহমানদের ব্যাপারে লাঞ্ছিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালো মানুষ নেই? (সূরা হুদ ৭৮)
(৩২৯৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ النبيَّ ﷺ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
(৩২৯৯) আবূ শুরাইহ খুযায়ী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন নিজ প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন নিজ মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও পরকালে ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।
عَنْ أَبِى شُرَيْحٍ الْخُزَاعِىِّ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ
পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
(৩৩০০) আবূ শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবনে আমর খুযায়ী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের পারিতোষিকসহ তার সম্মান করে। লোকেরা বলল, ’তার পারিতোষিক কী? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, একদিন ও একরাত (উত্তমভাবে পানাহারের ব্যবস্থা করা)। আর সাধারণতঃ মেহমানের খাতির তিন দিন পর্যন্ত। (অতঃপর স্বেচ্ছায় তার চলে যাওয়া উচিত)। তিনদিনের অতিরিক্ত হবে মেযবানের জন্য সাদকাহ স্বরূপ। (বুখারী ৬০১৯, ৬১৩৫, মুসলিম ৪৬১১-৪৬১২)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, কোন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট এতটা থাকা বৈধ নয়, যাতে সে তাকে গোনাহগার করে ফেলে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ’হে আল্লাহর রসূল! তাকে কিভাবে গোনাহগার করে ফেলে?’ উত্তরে তিনি বললেন, এ ওর কাছে থেকে যায়, অথচ ওর এমন কিছু থাকে না, যার দ্বারা সে মেহমানের খাতির করতে পারে।
وَعَن أَبي شُرَيْح خُوَيْلِدِ بن عَمرٍو الخُزَاعِيِّ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُولُ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ قَالُوا : وَمَا جَائِزَتُهُ ؟ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَوْمُهُ وَلَيْلَتُهُ وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أيَّامٍ فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ متفقٌ عَلَيْهِ
وفي رواية لِمسلمٍ لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أنْ يُقِيمَ عِنْدَ أخِيهِ حَتّٰـى يُؤْثِمَهُ قَالُوا : يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكيْفَ يُؤْثِمُهُ ؟ قَالَ يُقِيمُ عِنْدَهُ وَلاَ شَيْءَ لَهُ يُقْرِيه بِهِ
পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
(৩৩০১) সালমান (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যেন তার মেহমানের জন্য অবশ্যই সাধ্যাতীত কষ্টবরণ না করে।
وَعَنْ سَلْمَانَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ لاَ يَتَكَلَّفَنَّ أَحَدٌ لِضَيْفِهِ مَا لاَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
(৩৩০২) আনাস (রাঃ) বলেন, একদা আমরা উমার বিন খাত্তাব ল-এর নিকটে ছিলাম, তিনি বললেন, ’আমাদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে।’
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا عِنْدَ عُمَرَ فَقَالَ: نُهِينَا عَنْ التَّكَلُّفِ
পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
(৩৩০৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের নিকট প্রবেশ করে এবং সে তাকে নিজ খাবার খাওয়ায়, তখন সে যেন তা খেয়ে নেয় এবং সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন না করে। যদি সে নিজ পানীয় পান করায়, তাহলে সে যেন তা পান করে নেয় এবং সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন না করে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمْ عَلَى أَخِيهِ، فَأَطْعَمَهُ مِنْ طَعَامِهِ فَلْيَأْكُلْ، وَلا يَسْأَلْ عَنْهُ وَإِنْ سَقَاهُ مِنْ شَرَابِهِ فَلْيَشْرَبْ وَلا يَسْأَلْ عَنْهُ
পরিচ্ছেদঃ মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
(৩৩০৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ’আমি বড়ই ক্ষুধার্ত।’ তিনি তাঁর কোন এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালে তিনি বললেন, ’যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! আমার কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই।’ তিনি অন্য এক স্ত্রীর কাছে লোক পাঠালে তিনিও একই কথা বললেন। এইভাবে সকল স্ত্রী এই কথাই বললেন যে, ’সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমার নিকট পানি ছাড়া অন্য কিছুই নেই।’ তখন তিনি বললেন, আজ রাতে লোকটির মেহমানদারী কে করবে? আল্লাহ তার প্রতি রহম করবেন। এক আনসারী ব্যক্তি উঠে বলল, ’হে আল্লাহর রাসূল! আমি (এর মেহমানদারী করব)।’ অতঃপর সে লোকটিকে নিয়ে স্বীয় বাড়ীর দিকে রওনা দিল এবং তার স্ত্রীকে বলল, ’তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ সে বলল, ’না। কেবল বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু খাবার আছে।’
সাহাবী বললেন, ’তাদের (বাচ্চাদের) কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখ।’ (অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, ’বাচ্চাদের ভুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও।) আর যখন মেহমান প্রবেশ করবে, তখন তুমি আলোটা কমিয়ে দেবে। তুমি তাকে দেখাবে যে, আমরাও আহার করছি। তারপর সে যখন খাওয়ার শুরু করবে, তখন তুমি আলোর কাছে গিয়ে সেটাকে একেবারে নিভিয়ে দেবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তাঁরা বসেই রইলেন, আর মেহমান খেতে লাগল। সকাল বেলা তিনি (আনসারী) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বললেন, আজ রাতে মেহমানের সাথে তোমাদের দু’জনের আচরণে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তিনি এই আয়াত নাযিল করেছেন, ’নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা (অন্যদেরকে) নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়। আর যাদেরকে নিজ আত্মার কার্পণ্য হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَبَعَثَ إِلَى نِسَائِهِ فَقُلْنَ مَا مَعَنَا إِلَّا الْمَاءُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ يَضُمُّ أَوْ يُضِيفُ هَذَا فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ الْأَنْصَارِ أَنَا فَانْطَلَقَ بِهِ إِلَى امْرَأَتِهِ فَقَالَ أَكْرِمِي ضَيْفَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَتْ مَا عِنْدَنَا إِلَّا قُوتُ صِبْيَانِي فَقَالَ هَيِّئِي طَعَامَكِ وَأَصْبِحِي سِرَاجَكِ وَنَوِّمِي صِبْيَانَكِ إِذَا أَرَادُوا عَشَاءً فَهَيَّأَتْ طَعَامَهَا وَأَصْبَحَتْ سِرَاجَهَا وَنَوَّمَتْ صِبْيَانَهَا ثُمَّ قَامَتْ كَأَنَّهَا تُصْلِحُ سِرَاجَهَا فَأَطْفَأَتْهُ فَجَعَلَا يُرِيَانِهِ أَنَّهُمَا يَأْكُلَانِ فَبَاتَا طَاوِيَيْنِ فَلَمَّا أَصْبَحَ غَدَا إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَقَالَ ضَحِكَ اللهُ اللَّيْلَةَ أَوْ عَجِبَ مِنْ فَعَالِكُمَا فَأَنْزَلَ اللهُ وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ