পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৬-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে কোন লোক আমাদের প্রতি যে কোন ধরনের দয়া করেছে, আমরা তার প্রতিদান দিয়েছি, আবূ বকর-এর দয়া ছাড়া। তিনি আমাদের প্রতি যে দয়া করেছেন, আল্লাহ তা’আলাই কিয়ামতের দিন তাঁকে তার প্রতিদান প্রদান করবেন। আর কারো ধন-সম্পদ আমাকে ততখানি উপকৃত করতে পারেনি, যতখানি আবূ বকর -এর মাল আমাকে উপকৃত করেছে। আর আমি যদি (আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্য কাউকে) খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বকর -কেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। জেনে রাখ! তোমাদের সাথি [রাসূল (সা.)] আল্লাহর খলীল (বন্ধু)। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا لِأَحَدٍ عِنْدَنَا يَدٌ إِلَّا وَقَدْ كَافَيْنَاهُ مَا خَلَا أَبَا بَكْرٍ فَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا يَدًا يُكَافِيهِ اللَّهُ بهَا يومَ الْقِيَامَة وَمَا نَفَعَنِي مَالٌ قَطُّ مَا نَفَعَنِي مَالُ أَبِي بَكْرٍ وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلًا أَلَا وَإِنَّ صَاحِبَكُمْ خَلِيلُ اللَّهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
سندہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3661 وقال : حسن غریب) و ابن ماجہ (94) * داود بن یزید ضعیف ولہ طریق آخر عند ابن ماجہ (94) و فیہ الاعمش مدلس و عنعن
ব্যাখ্যা: (أَنْتَ صَاحِبِي فِي الْغَارِ) মক্কায় অবস্থিত “সাওর” নামক গুহার সাথি, কাফিরদের ভূখণ্ড হতে হিজরতের সময় উভয়ে এ গুহায় অবস্থান নিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ সূরাহ্ আত্ তাওবার ৪০নং আয়াতে বলেন, তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয় না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।
এখানে সঙ্গী হওয়ার দু'টি অর্থ হতে পারে:
১) বিশেষ করে গুহায় অবস্থান করার সময় সঙ্গী।
২) আল্লাহর সাক্ষ্য দানের ক্ষেত্রে সঙ্গী। মুফাসিরগণ একমত হয়েছেন যে, আয়াতে সঙ্গী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আবূ বাকর। এ সুহবাত বা সঙ্গী হওয়াকে যে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে, কেননা সে স্পষ্ট দলীল অস্বীকার করল। অর্থাৎ কুরআনী দলীল অস্বীকার করল।
‘উমার (রাঃ) ‘উসমান (রাঃ) ও ‘আলী (রাঃ)-এর সুহবাত অস্বীকার করার কথা ভিন্ন। কেননা তাঁদের ব্যাপারে কুরআনী দলীল নেই।
(على الْحَوْض) এখানে ইঙ্গিত রয়েছে যে, তিনি উভয় জগতে তার [নবী (সা.) -এর] সঙ্গী। যেমন- তিনি এখন কবরের জগতে তাঁর সঙ্গী। যেমন মুসনাদুল ফিরদাওসে বর্ণিত আছে, ১নং খণ্ড, ৪৩৭ পৃষ্ঠা, হা, ১৭৮০। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেন, দুনিয়া ও আখিরাতে আবূ বাকর আমার ভাই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৭-[৯] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমাদের সরদার, আমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং আমাদের সকলের চেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে অধিক প্রিয় ছিলেন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَبُو بَكْرٍ سَيِّدُنَا وَخَيْرُنَا وَأَحَبُّنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ الترمذی (3656 وقال : صحیح غریب) [و اصلہ فی البخاری (3668)] ۔
(إِسْنَاده جيد)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৮-[১০] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেছেন, তুমি আমার (সাওর) গুহার সঙ্গী এবং হাওযে কাওসারে আমার সাথি। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَن ابْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِأَبِي بَكْرٍ: «أَنْتَ صَاحِبِي فِي الْغَارِ وصاحبي على الْحَوْض» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3670 وقال : حسن صحیح غریب) * کثیر النواء : ضعیف و جمیع بن عمیر : ضعیف رافضی ۔
(ضَعِيف)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৯-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে দলে বা সমাবেশে আবূ বকর উপস্থিত থাকবেন, সেখানে তিনি ছাড়া অন্য কারো ইমামতি করা উচিত হবে না। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا يَنْبَغِي لِقَوْمٍ فِيهِمْ أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَؤُمَّهُمْ غَيْرُهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3673) * فیہ عیسی بن میمون : ضعیف ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (لَا يَنْبَغِي لِقَوْمٍ فِيهِمْ أَبُو بَكْرٍ أَنْ يَؤُمَّهُمْ غَيْرُهُ) তাঁর চেয়ে উত্তম লোক দ্বিতীয় আর কেউ নেই আর তাদেরকে নবী (সা.) এরূপ কথা বলেছেন। অতঃপর যখন এটা সাব্যস্ত হয়ে গেল তিনিই সকল সাহাবীর চেয়ে উত্তম। তখন এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল, তিনিই প্রকৃত খিলাফতের হকদার। অতএব ফায়েল তথা উত্তম ইমামের উপস্থিতিতে মাফযুল ইমামকে খলীফাহ বানানো সমিচীন নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(قال:نعم) এমন একটি দল থাকবে যাদেরকে জান্নাতের সকল দরজা হতে ডাকা হবে। তাদের সম্মান ও মহত্ত্বের দরুন এবং অধিক পরিমাণ সালাত, জিহাদ, সিয়াম ও বিভিন্ন প্রকারের ভালো কর্ম থাকার কারণে।
(وَأَرْجُو أَنْتَكُونَ مِنْهُمْ) ‘আলিমগণ বলেছেন: আশা আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ এবং তাঁর নবী (সা.) হতে প্রমাণিত সত্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৬৮২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৩০-[১২] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করার জন্য নির্দেশ করলেন। (সৌভাগ্যবশত) সে সময় আমার কাছে প্রচুর সম্পদ ছিল। তখন আমি (মনে মনে) বললাম, (দানের প্রতিযোগিতায়) যদি আমি কোনদিন আবূ বকর -এর উপর পারি, তবে আজকের দিনেই আবূ বকর -এর উপরই জিতে যাব।
“উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি আমার সমস্ত সম্পদের অর্ধেক নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে উপস্থিত হলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রশ্ন করলেন, পরিবারপরিজনের জন্য কি (পরিমাণ) রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ অর্থাৎ এর অর্ধেক। আর আবূ বকর -এর কাছে যা কিছু ছিল তিনি সম্পূর্ণ নিয়ে উপস্থিত হলেন।
এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবূ বকর! পরিবার-পরিজনের জন্য আপনি কি রেখে এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে রেখে এসেছি। উমার (রাঃ) বলেন, তখন আমি (মনে মনে বললাম, আর আমি কখনো কোন ক্ষেত্রে তার উপর জিততে পারব না। (তিরমিযী ও আবূ দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَن عُمَرَ قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَتَصَدَّقَ وَوَافَقَ ذَلِكَ عِنْدِي مَالًا فَقُلْتُ: الْيَوْمَ أَسْبِقُ أَبَا بَكْرٍ إِنْ سَبَقْتُهُ يَوْمًا. قَالَ: فَجِئْتُ بِنِصْفِ مَالِي. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ؟» فَقُلْتُ: مِثْلَهُ. وَأَتَى أَبُو بَكْرٍ بِكُلِّ مَا عِنْدَهُ. فَقَالَ: «يَا أَبَا بَكْرٍ؟ مَا أَبْقَيْتَ لِأَهْلِكَ؟» . فَقَالَ: أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ. قُلْتُ: لَا أَسْبِقُهُ إِلَى شَيْءٍ أَبَدًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3675 وقال : حسن صحیح) و ابوداؤد (1678) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (إِنْ سَبَقْتُهُ يَوْمًا) হলো শারতিয়্যা যেটা প্রমাণ বহন করে পূর্বের কোন বিষয়ের বদলা গ্রহণ করাকে।
অথবা ইবারতে গোপন আছে, আমি যদি আজ দানে তার অগ্রগামী হতে পারি তাহলে এটা হবে পূর্বেকার বদলা। কেউ কেউ বলেন (إِنْ) হলো নাফিয়া তখন অর্থ হবে ইতোপূর্বে আমি দানে কখনো তার অগ্রগামী হতে পরিনি। (মিরকাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৬৮৪)
(أَبْقَيْتُ لَهُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ) আমি পরিবারের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টি রেখে এসেছি। একটি বর্ণনায় এসেছে যে, নবী (সা.) তাদের উভয়কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের মাঝে ব্যবধান হলো যেমন ব্যবধান রয়েছে তোমাদের সাক্ষ্য দানে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
(لَا أَسْبِقُهُ إِلَى شَيْءٍ) মর্যাদার দিক হতে আমি কখনো তার অগ্রে যেতে পারব না। কেননা যখন তার কাছে অঢেল পরিমাণ সম্পদ ছিল আর আবূ বাকর (রাঃ)-এর কাছে স্বল্প পরিমাণ সম্পদ ছিল তখনই তার অগ্রে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অন্য অবস্থায় তো অধিক যুক্তিসঙ্গত যে তার অগ্রে যেতে পারবেন না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা. ৩৬৮৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৩১-[১৩] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি তাঁকে (লক্ষ্য করে) বললেন, আপনি জাহান্নামের আগুন হতে আল্লাহর ’আতীক (আযাদপ্রাপ্ত)। সেদিন হতে তিনি আতীক উপাধিতে প্রসিদ্ধ হন। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ أَبَا بَكْرٍ دَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَنْت عتيقُ اللَّهِ من النَّار» . فَيَوْمئِذٍ سمي عتيقا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
صحیح ، رواہ الترمذی (3679 وقال : غریب) * اسحاق بن یحیی بن طلحۃ ضعیف و للحدیث شاھد عند ابن الاعرابی فی المعجم (409) و سندہ صحیح فالحدیث صحیح
ব্যাখ্যা: (فَيَوْمئِذٍ سمي عتيقا) ইমাম ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) তালক্বিহ নামক গ্রন্থে আবূ বাকর (রাঃ)-কে ‘আতীক উপাধি দেয়ার ব্যাপারে তিনটি উক্তি উল্লেখ করেছেন,
১) নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জাহান্নাম হতে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দেখতে চায় সে যেন আবূ বাকর (রাঃ) -কে দেখে।
২) মূসা ইবনু তলহাহ বলেন, ‘আতীক নামটি তার মা রেখেছিলেন। ৩) রায়সি ইবনু সা'দ বলেন, তার সুন্দর চেহারার জন্য এ নাম রাখা হয়।
ইবনু কুতায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) তাকে এ উপাধি দেন তার সুন্দর চেহারার জন্য। লেখক বলেন, প্রথম উক্তিটিই গ্রহণযোগ্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩৬৮৮)।
«أَنْت عتيقُ اللَّهِ من النَّار» . فَيَوْمئِذٍ سمي عتيقا. ইমাম রাগিব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: 'আতীক হলো যে ব্যক্তি সময় স্থান অথবা উঁচু স্তরের দিক হতে অগ্রগামী। এ জন্যই পুরাতন ও মূল্যবান কিছুকে ‘আতীক বলা হয় এবং যারা দাসত্ব হতে মুক্ত হয় তাদেরকেও ‘আতীক বলা হয়।
বায়তুল্লাহ বা কা'বাহ ঘরক ‘আতীক বলা হয় তার সম্মানের জন্য অথবা প্রাচীনতম হওয়ার দিক থেকে অথবা উঁচু স্থানে হওয়ার দিক থেকে, কেননা তাকে তুফানে তলিয়ে যাওয়া হতে মুক্ত রাখা হয়েছে এবং অত্যাচারী শাসকের হস্তক্ষেপ হতে রক্ষা করা হয়েছে।
(فَيَوْمئِذٍ سمي عتيقا) ঐ দিন হতে আবূ বাকর -এর উপাধি দেয়া হয় ‘আতীক।
লেখক বলেন, তার নাম হলো ‘আবদুল্লাহ ইবনু উসমান আবূ কুহাফা সপ্তম পূর্বপুরুষ গিয়ে নবীর বংশের সাথে মিলেছে। তিনি ইসলাম গ্রহণকারী সর্বপ্রথম পুরুষ। তিনি শুভ্র ছিলেন, হালকা পাতলা গঠনের, উজ্জ্বল চেহারার ডাবা চক্ষু বিশিষ্ট গালদ্বয় ক্ষীণকায়।
জন্ম: তিনি ফীলের ঘটনার দুই বছর চার মাস পর বা কিছুদিন বাকী থাকতে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।
মৃত্যু: তিনি তের হিজরী জুমাদাল আখেরা মাসের আটদিন অবশিষ্ট থাকতে মঙ্গলবার রাতে মাগরিব ও ‘ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ৬৩ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার স্ত্রী আসমা বিনতু ‘উমায়স-কে গোসলের জন্য ওয়াসিয়্যাত করেন। উমার ইবনুল খত্তাব (রাঃ) তার জানাযার সালাত আদায় করান। তার খিলাফতকাল ছিল দুই বছর চার মাস ১০দিন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৩২-[১৪] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (কিয়ামতের দিন) জমিন বিদীর্ণ হয়ে যারা উত্থিত হবে, তাদের মাঝে আমি হব প্রথম, তারপর আবূ বকর, তারপর ’উমার। অতঃপর আমি বাক্বী কবরস্থানবাসীদের কাছে আসব এবং তাদের সকলকে আমার সাথে একত্রিত করা হবে। এরপর মক্কাবাসীদের আগমনের প্রতীক্ষায় থাকব। পরিশেষে উভয় হারামায়নের তথা মক্কাহ্ ও মদীনার মাঝামাঝি সকলকে আমার সাথে একত্রিত করা হবে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنَا أَوَّلُ مَنْ تَنْشَقُّ عَنْهُ الْأَرْضُ ثُمَّ أَبُو بَكْرٍ ثُمَّ عُمَرُ ثُمَّ آتِي أَهْلَ الْبَقِيعِ فَيُحْشَرُونَ مَعِي ثُمَّ أَنْتَظِرُ أَهْلَ مَكَّةَ حَتَّى أحشرَ بَين الْحَرَمَيْنِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3692 وقال : حسن غریب) * فیہ عاصم بن عمر العمری : ضعیف ۔
(ضَعِيف)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৩৩-[১৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: একদিন জিবরীল আলায়হিস সালাম আমার কাছে আসলেন এবং আমার হাত ধরে আমাকে জান্নাতের ঐ দরজাটি দেখালেন, যেটি দিয়ে আমার উম্মত প্রবেশ করবে। তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, কতই না খুশি হতাম হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি আপনার সাথে থেকে ঐ প্রবেশদ্বারটি দেখতে পারতাম। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, জেনে রাখ, হে আবূ বকর! আমার উম্মতের মাঝে তুমিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَانِي جِبْرِيلُ فَأَخَذَ بِيَدِي فَأَرَانِي بَابَ الْجَنَّةِ الَّذِي يَدْخُلُ مِنْهُ أُمَّتِي» فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَدِدْتُ أَنِّي كُنْتُ مَعَكَ حَتَّى أَنْظُرَ إِلَيْهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّكَ يَا أَبَا بَكْرٍ أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4652) * فیہ ابو خالد مولی آل جعدۃ : مجھول ۔
(ضَعِيفٌ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০৩৪-[১৬] ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তাঁর সামনে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর আলোচনা উঠল। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, আমি অন্তর থেকে এ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি যে, হায়! আমার গোটা জীবনের ’আমলসমূহের যদি আবূ বকর-এর জীবনের দিনসমূহের এক দিনের ’আমলের সমান হত এবং তাঁর জীবনের রাত্ৰসমূহের মধ্য হতে এক রাত্রির ’আমলের সমান হত। তার ঐ রাত্র হলো সে রাত্র, যে রাত্রিতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সঙ্গে গারে সাওরের দিকে যাত্রা করেন। তারা উভয়ে যখন ঐ গুহার নিকটে পৌছলেন, তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহর শপথ! আপনি এখন গুহার ভিতরে প্রবেশ করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি আপনার আগে তার ভিতরে প্রবেশ করি, আক্রমণকারী কোন শত্রু বা কীটপতঙ্গের আক্রমণ হলে তা আপনার পরিবর্তে আমার উপর দিয়েই যাক। এই বলে তিনি গুহার ভিতরে ঢুকে পড়লেন এবং তার ভিতরাংশকে ঝাড়পোছ করে পরিষ্কার করে নিলেন।
অতঃপর তার এক পার্শ্বে কয়েকটি ছিদ্র দেখতে পেলেন, তখন তিনি নিজের ইজার ছিড়ে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিলেন; কিন্তু তন্মধ্যে দুটি ছিদ্র অবশিষ্ট থেকে গেল। ঐ ছিদ্র দু’টির মুখে তিনি নিজের পা দুটি রেখে বন্ধ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে তিনি বললেন, প্রবেশ করুন। অতঃপর রাসূল (সা.) তার ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর উরুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় ঐ ছিদ্র হতে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর পা (সাপ বা বিচ্ছু কর্তৃক) দংশিত হলো। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ঘুম ভেঙ্গে যাবে এ আশঙ্কায় তিনি এতটুকুও নড়াচড়া করলেন না। তবে তাঁর চোখের পানি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেহারাতে পড়ল। তখন তিনি বললেন, হে আবূ বকর! তোমার কি হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর কুরবান হোক। আমি দংশিত হয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর ক্ষতস্থানে স্বীয় থুথু লাগিয়ে দিলেন। ফলে তিনি যে বিষ-যন্ত্রণায় ভুগছিলেন, তা দূর হয়ে গেল। এরপর উক্ত বিষক্রিয়া তাঁর উপর আবার দেখা দিল এবং এটাই তার মৃত্যুর কারণ হলো। আর তাঁর সে দিনটি হলো- যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মৃত্যুর পর ’আরববাসীরা মুরতাদ হয়ে গেল এবং তারা বলল, আমরা যাকাত প্রদান করব না। তখন তিনি বলেছিলেন, যদি তারা একটি রশি প্রদানেও অস্বীকার করে, আমি নিশ্চয় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।
তখন আমি বলেছিলাম, হে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খলীফাহ্! মানুষের সাথে হৃদ্যতা প্রদর্শন করুন এবং তাদের সাথে কোমল আচরণ করুন। উত্তরে তিনি আমাকে বলেছিলেন, অন্ধকার যুগে তুমি তো ছিলে বড়ই বাহাদুর, এখন ইসলামের পর কি তুমি কাপুরুষ হয়ে পড়লে? জেনে রাখ, নিশ্চয় ওয়াহী আসার ধারা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে এবং দীন পূর্ণ হয়ে গেছে। দীন হ্রাস পাবে আর আমি জীবিত? (তা কখনো হতে পারে না)। (রযীন)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
عَن عمر ذُكِرَ عِنْدَهُ أَبُو بَكْرٍ فَبَكَى وَقَالَ: وَدِدْتُ أَنَّ عَمَلِي كُلَّهُ مِثْلُ عَمَلِهِ يَوْمًا وَاحِدًا مِنْ أَيَّامِهِ وَلَيْلَةً وَاحِدَةً مِنْ لَيَالِيهِ أَمَّا لَيْلَتُهُ فَلَيْلَةٌ سَارَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْغَار فَلَمَّا انتهينا إِلَيْهِ قَالَ: وَاللَّهِ لَا تَدْخُلُهُ حَتَّى أَدْخُلَ قَبْلَكَ فَإِنْ كَانَ فِيهِ شَيْءٌ أَصَابَنِي دُونَكَ فَدَخَلَ فَكَسَحَهُ وَوَجَدَ فِي جَانِبِهِ ثُقْبًا فَشَقَّ إزَاره وسدها بِهِ وَبَقِي مِنْهَا اثْنَان فألقمها رِجْلَيْهِ ثُمَّ قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ادْخُلْ فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوُضِعَ رَأسه فِي حجره وَنَامَ فَلُدِغَ أَبُو بَكْرٍ فِي رِجْلِهِ مِنَ الْجُحر وَلم يَتَحَرَّك مَخَافَة أَن ينتبه رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَقَطَتْ دُمُوعُهُ عَلَى وَجْهُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا لَكَ يَا أَبَا بَكْرٍ؟» قَالَ: لُدِغْتُ فِدَاكَ أَبِي وَأُمِّي فَتَفِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَهَبَ مَا يَجِدُهُ ثُمَّ انْتَقَضَ عَلَيْهِ وَكَانَ سَبَبَ مَوْتِهِ وَأَمَّا يَوْمُهُ فَلَمَّا قُبِضَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ارْتَدَّتِ الْعَرَبُ وَقَالُوا: لَا نُؤَدِّي زَكَاةً. فَقَالَ: لَوْ مَنَعُونِي عِقَالًا لَجَاهَدْتُهُمْ عَلَيْهِ. فَقُلْتُ: يَا خَلِيفَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَأَلَّفِ النَّاسَ وَارْفُقْ بِهِمْ. فَقَالَ لِي: أَجَبَّارٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَخَوَّارٌ فِي الْإِسْلَامِ؟ إِنَّهُ قَدِ انْقَطَعَ الْوَحْيُ وَتَمَّ الدِّينُ أَيَنْقُصُ وَأَنا حَيّ؟ . رَوَاهُ رزين
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ رزین (لم اجدہ) [و البیھقی فی دلائل النبوۃ (2 / 477)] * فیہ فرات بن السائب عن میمون بن مھران ، و الفرات ھذا ضعیف جدًا متروک ۔
(ضَعِيف)