পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০১৯-[১] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: লোকেদের মধ্যে নিজস্ব সম্পদ ও সাহচর্য দ্বারা আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন আবূ বকর (রাঃ) আর বুখারীতে (أَبُو بَكْرٍ) -এর স্থলে (أَبَا بَكْ) রয়েছে। যদি আমি কাউকে বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বকর-কেই বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, কিন্তু তাঁর সাথে ইসলামী ভ্রাতত্ব ও (দীনী) মুহাব্বাত রয়েছে। (অতঃপর তিনি ঘোষণা দিলেন,) মসজিদে আবূ বকর-এর দরজা ব্যতীত আর কোন দরজা যেন অবশিষ্ট না থাকে। অপর এক রিওয়ায়াতে আছে- [নবী (সা.) বলেছেন] যদি আমি আমার রব্ ব্যতীত আর কাউকে বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকর-কেই আমি বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِي صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبُو بَكْرٍ - وَعِنْدَ الْبُخَارِيِّ أَبَا بَكْرٍ - وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلًا وَلَكِنْ أُخُوَّةُ الْإِسْلَامِ وَمَوَدَّتُهُ لَا تُبْقَيَنَّ فِي الْمَسْجِدِ خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةَ أَبِي بَكْرٍ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا غَيْرَ رَبِّي لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلًا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3904 و الروایۃ الثانیۃ : 3654) و مسلم (2 / 2382)، (6170) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا) এ প্রসঙ্গে কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, খলীল বলা হয় সেই প্রিয় ব্যক্তিকে যার উপর বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনের তাগিদে নির্ভরশীল হতে হয়। এখানে (خَلِيلًا) শব্দের উৎস বা মূল হলো (الخلة) যার অর্থ হলো হাজত বা প্রয়োজন। অতএব এর ভাবার্থ হলো এই, যদি আমি সৃষ্টজীবের মধ্য হতে কাউকে বিশেষ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে বিভিন্ন প্রয়োজনে তার কাছে যেতাম এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে তার উপর নির্ভরশীল হতাম।
(لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلً) তাহলে আমি আবূ বাকরকেই বিশেষ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম। যেহেতু সার্বিক অবস্থায় এবং সকল কাজে আল্লাহর উপরই নির্ভরশীল হতে হয় এবং তার দিকেই ফিরে যেতে হয় তাই সৃষ্টিজীবের কাউকে আমি খলীল হিসেবে গ্রহণ করিনি।
উল্লেখ্য যে, ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে খলীলুল্লাহ বলা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর খলীল বা বন্ধু। এখানে (خَلِيلًا) শব্দটি (الخصلة) বা চরিত্র অর্থে এসেছে। কারণ ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কে বিশেষভাবে উত্তম চরিত্র দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
ইবরাহীম আলায়হিস সালাম আল্লাহর খলীল হওয়ার ব্যাপারে আরো কিছু মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, এর কারণ হলো তিনি আল্লাহর জন্যই মানুষকে ভালোবাসতেন এবং তার জন্যই মানুষের সাথে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। আবার কেউ বলেছেন, তাঁকে উত্তম চরিত্র আর উন্নত গুণাবলি দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। অতএব ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর ওপর আল্লাহর বন্ধুত্বের অর্থ হলো আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন এবং পরবর্তী সকল জাতির জন্য ইমাম বা পথপ্রদর্শক বানিয়েছেন।
ইবনু ফুরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, (الخلة) বা খলীলের অর্থ হলো, আড়াল বা অদৃশ্যতার সাথে থেকেও আল্লাহর জন্য স্বচ্ছ ভালোবাসা প্রদর্শন করা। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা. ৬০১৯)
(خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةَ أَبِي بَكْ) শব্দের অর্থ হলো ঘরের ভেতর আলো প্রবেশের জন্য দেয়ালের উপরে ছাদ বরাবর ছোট জানালা বিশেষ। যাকে আমরা ভেন্টিলেটর বলি। কেউ কেউ বলেছেন, একঘর থেকে অন্য ঘরে বা একরুম থেকে অন্যরুমে চলাচলের জন্য ছোট দরজা।
‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তাঁর সর্বশেষ খুত্ববায় আবূ বাকর (রাঃ) সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন। অতএব এখান থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আবূ বাকর (রাঃ)-ই হবেন রসূলের পরে মুসলিমদের খলীফাহ্। কোন কোন মুহাদ্দিস (خَوْخَةٌ) এর উদ্দেশ্য ধরেছেন আবূ বাকর (রাঃ)-এর কন্যা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে। কারণ রাসূল (সা.) তাঁর সকল স্ত্রীর ঘরের দরজা বন্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন শুধু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে আদেশ করেননি।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা, ৬০১৯)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২০-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: যদি আমি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বকর-কেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার (দীনী) ভাই ও সাথি। অবশ্য আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সাথিকে খলীফারূপে গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ خَلِيلًا وَلَكِنَّهُ أَخِي وَصَاحِبِي وَقَدِ اتَّخَذَ اللَّهُ صَاحِبَكُمْ خَلِيلًا» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (3 / 2383)، (6172) ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২১-[৩] ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর রোগশয্যায় আমাকে বললেন, তোমার পিতা আবূ বকর এবং তোমার ভাইকে আমার কাছে ডেকে আন, আমি তাদেরকে বিশেষ একটি লেখা লিখে দেব। কেননা আমার ভয় হচ্ছে যে, আমিই হকদার, অথচ সে তার হকদার নয়। আল্লাহ তা’আলা এবং ঈমানদার লোকেরা আবূ বকর ছাড়া কাউকে খলীফাহ্ হিসেবে মেনে নেবেন না। [মুসলিম তার হুমায়দী-এর কিতাবে (أَنا أولى) “আমি অধিক যোগ্য”-এর পরিবর্তে (أَنا وَلَا) “আমি যোগ্যতম” বর্ণিত হয়েছে৷]
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَرَضِهِ: ادْعِي لِي أَبَا بَكْرٍ أَبَاكِ وَأَخَاكِ حَتَّى أَكْتُبَ كِتَابًا فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَتَمَنَّى مُتَمَنٍّ وَيَقُولَ قَائِلٌ: أَنَا وَلَا وَيَأْبَى اللَّهُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَّا أَبَا بَكْرٍ «. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي» كِتَابِ الْحميدِي : «أَنا أولى» بدل «أَنا وَلَا»
رواہ مسلم (11 / 2387)، (6181) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (حَتَّى أَكْتُبَ كِتَابًا) রাসূলুল্লাহ (সা.) আয়িশাহ (রাঃ) -কে আদেশ করলেন, আবূ বাকর এবং তার ভাই আবদুর রহমান-কে ডেকে আনার জন্য। ঐ সময় রাসূল (সা.) অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। হয়তোবা তিনি খুব শীঘ্রই ইন্তিকাল করবেন এমন সংবাদ আল্লাহর পক্ষ হতে পেয়েছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যুর পরবর্তী খলীফার দায়িত্ব আবূ বাকর (রাঃ)-কে দেয়ার জন্য মনস্থির করলেন। এজন্য লিখিত আকারে রসূলের পক্ষ হতে খলীফার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আবূ বাকর (রাঃ) এবং তাঁর পুত্র আবদুর রহমানকে ডাকলেন।
লিখিত আকারে দায়িত্ব অর্পণের হিকমত ছিল এই যে, কোন লোক যেন এ কথা বলতে না পারে আমিই খিলাফতের অধিক হকদার এবং যোগ্য। অথবা আমি আবূ বাকর -এর কথা বিশ্বাস করি না এবং তাকে মানিও না।
তাই খিলাফতের ব্যাপারে মুনাফিক এবং রাফিযীদের মতানৈক্য চিরতরে বাতিল করার জন্য রাসূল (সা.) এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
মুসলিমের শারহতে আরো বলা হয়েছে যে, 'আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর ভাই আবদুর রহমান-কে ডাকা হয়েছিল খলীফার নিয়োগপত্র লেখার জন্য।
এ হাদীস থেকে আমরা কতগুলো বিষয় স্পষ্ট হতে পারি যেগুলো ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে যেমন,
১. উক্ত হাদীসে আবূ বাকর (রাঃ)-এর মর্যাদা ও সম্মানের প্রকাশ্য দলীল রয়েছে।
২. এ হাদীসে রসূলের মৃত্যুর পর যে সকল মতানৈক্য এবং বিশৃঙ্খলা ঘটবে তারও ইঙ্গিত রয়েছে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন্ নাবাবী ১৫শ হা, ২৩৮৭)
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফত সম্পর্কে বলেছেন, উক্ত হাদীসটি আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের জন্য প্রমাণ বহন করে যে, আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফত সরাসরি রাসূল (সা.) এর পক্ষ হতে স্পষ্ট কোন নস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। বরং আবূ বাকর (রাঃ)-এর মর্যাদা ও অগ্রগামিতার কারণে তাঁর কাছে খিলাফতের বায়'আতের জন্য সকল সাহাবী ঐকমত্য পোষণ করেন।
এখানে যদি কোন স্পষ্ট দলীল বা সে থাকত তাহলে খিলাফতের দায়িত্ব নিয়ে আনসারদের ও অন্যদের মাঝে দ্বন্দ্ব হত না।
পক্ষান্তরে ‘আলী (রাঃ) সম্পর্কে শী'আদের যে নস রয়েছে তা সকল মুসলিমের ঐকমত্যে বাতিল এবং প্রত্যাখ্যাত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২২-[৪] জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক মহিলা নবী (সা.) এর কাছে আসলো এবং তার সাথে কোন বিষয়ে কথাবার্তা বলল। তিনি (সা.) তাকে আবার আসতে বললেন। তখন মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আচ্ছা বলুন তো, আমি আবার এসে যদি আপনাকে না পাই তখন কি করব? মহিলাটি যেন তাঁর [নবী (সা.) -এর] ইন্তিকালের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। উত্তরে তিনি বললেন, তুমি যদি আমাকে না পাও তবে আবূ বকর -এর কাছ এসো। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ: أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةٌ فَكَلَّمَتْهُ فِي شَيْءٍ فَأَمَرَهَا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْهِ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ جِئْتُ وَلَمْ أَجِدْكَ؟ كَأَنَّهَا تُرِيدُ الْمَوْتَ. قَالَ: «فَإِنْ لَمْ تَجِدِينِي فَأْتِي أَبَا بَكْرٍ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3659) و مسلم (10 / 2386)، (6179) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (فَإِنْ لَمْ تَجِدِينِي فَأْتِي أَبَا بَكْ) ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখিত হাদীসাংশের ব্যাপারে বলেন, এখানে আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফত লাভের ব্যাপারে কোন নস বা প্রমাণ নেই। বরং গায়িবের ব্যাপারে আল্লাহ তাকে যা জানিয়েছেন সেটাই সংবাদ দিয়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৩-[৫] ’আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) তাঁকে যাতুস সালাসিল-এর সৈন্যবাহিনীর ওপর নেতা নিযুক্ত করে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে নবী (সা.) -এর কাছ এসে প্রশ্ন করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি (সা.) বললেন, আয়িশা। আমি বললাম পুরুষদের মধ্য থেকে? তিনি বললেন তাঁর পিতা [আবূ বকর (রাঃ)]। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি (সা.) বললেন, ’উমার। অতঃপর আমি এভাবে প্রশ্ন করতে থাকলে তিনি (সা.) আরো কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করলেন। এরপর আমি চুপ হয়ে গেলাম এ আশঙ্কায় যে, সম্ভবত আমার নাম সকলের শেষে পড়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَهُ عَلَى جَيْشِ ذَاتِ السَّلَاسِلِ قَالَ: فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ: أَيُّ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيْكَ؟ قَالَ: «عَائِشَةُ» . قُلْتُ: مِنِ الرِّجَالِ؟ قَالَ: «أَبُوهَا» . قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «عُمَرُ» . فَعَدَّ رِجَالًا فَسَكَتُّ مَخَافَةَ أَنْ يَجْعَلَنِي فِي آخِرهم. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4358) و مسلم (8 / 2384)، (6177) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৪-[৬] মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে প্রশ্ন করলাম, নবী (সা.) -এর পর কোন্ লোকটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাঃ)। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কোন্ লোক? তিনি বললেন, ’উমার (রাঃ)। আমার আশঙ্কা হলো এবার তিনি উসমান (রাঃ)-এর কথা বলবেন। তাই আমি বললাম, অতঃপর তো আপনিই (উত্তম)। তিনি বললেন, আমি তো অন্যান্য মুসলিমদের মধ্যে একজন সাধারণ লোক। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَنَفِيَّةِ قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي: أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: أَبُو بَكْرٍ. قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: عُمَرُ. وَخَشِيتُ أَنْ يَقُولَ: عُثْمَانُ. قُلْتُ: ثُمَّ أَنْتَ قَالَ: «مَا أَنَا إِلَّا رجلٌ من الْمُسلمين» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3671) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مُحَمَّدِ بْنِ الْحَنَفِيَّةِ) মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফী তিনি ‘আলী (রাঃ)-এর ছেলে। তিনি ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর ঔরসজাত নন তবে অন্য স্ত্রী বা দাসীর গর্ভে জন্মলাভ করেন।
قَالَ: «مَا أَنَا إِلَّا رجلٌ من الْمُسلمين» বর্ণিত হাদীসটি আবূ বাকর (রাঃ)-এর মর্যাদা সম্পর্কিত একটি হাদীস। উক্ত হাদীসটিতে রাসূল (সা.) -এর মৃত্যুর পর অথবা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর পর উত্তম ব্যক্তি হিসেবে রাসূল (সা.) যেভাবে বিভিন্ন সময় ইঙ্গিত বা সরাসরি ঘোষণা দিয়েছেন অনুরূপভাবে সাহাবীরাও আবূ বাকর (রাঃ)-কে রসূলের পর সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে মান্য এবং গণ্য করতেন।
বর্ণিত হাদীসে সাহাবায়ে কিরামের বিনয়াবনতার চিত্র ফুটে উঠেছে। তারা একে অপরের প্রতি যথেষ্ট সম্মান এবং বিনয় প্রকাশ করতেন। অহংকার বা লোভ তাদের ভেতরে ছিল না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী হা. ৩৬৭১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
৬০২৫-[৭] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর যামানায় আমরা কাউকেও আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) -এর সমতুল্য মনে করতাম না। তারপর ’উমার (রাঃ)-কে এবং তারপর ’উসমান (রাঃ)-কে মর্যাদা দিতাম। অতঃপর নবী (সা.) -এর অন্যান্য সাহাবীদের সম্মান সম্পর্কিত আলোচনা পরিহার করতাম। তাদের মাঝে একের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিতাম না। (বুখারী)
আর আবূ দাউদ-এর এক বর্ণনাতে আছে, ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন: নবী (সা.) -এর জীবদ্দশায় আমরা বলতাম, নবী (সা.) -এর উম্মতের মধ্যে তাঁর পরে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান লোক হলেন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) তারপর ’উমার, তারপর ’উসমান।
الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب أبي بكر)
وَعَن ابْن عمرٍ قَالَ: كُنَّا فِي زَمَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا نَعْدِلُ بِأَبِي بَكْرٍ أَحَدًا ثُمَّ عُمَرَ ثُمَّ عُثْمَانَ ثُمَّ نَتْرُكُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا نُفَاضِلُ بَيْنَهُمْ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لِأَبِي دَاوُدَ قَالَ: كُنَّا نَقُولُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيٌّ: أَفْضَلُ أُمَّةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَهُ أَبُو بَكْرٍ ثُمَّ عمر ثمَّ عُثْمَان رَضِي الله عَنْهُم
رواہ البخاری (3697) و ابوداؤد (4628) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (ثُمَّ نَتْرُكُ أَصْحَابَ) ইমাম খত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, হাদীসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ‘আলী (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেননি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এখানে ইবনু উমার (রাঃ) বয়সের দিকে থেকে ঐসব প্রবীণ এবং মান্যবর সিনিয়র সাহাবীদের নামের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যাদের নিয়ে রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতেন। তাছাড়া ‘আলী (রাঃ) নবী (সা.) -এর যুগে বয়সে ছোট ছিলেন। তিনি খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন: ইবনু উমার (রাঃ)-এর দ্বারা তাঁকে অবজ্ঞা করতে চাননি এবং উসমান (রাঃ)-এর পরে-ই যে তার মর্যাদা এতেও তিনি কোন তারতম্য করেননি। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৯৭, মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা. ৬০২৫)
এখানে সুস্পষ্ট যে, ইবনু উমার (রাঃ) এই নাফী দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নিয়েছেন যে, তারা মর্যাদার ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করতেন। অতএব তাদের কাছে তিনজনের মর্যাদা বেশি স্পষ্ট হত, তাই তারা এই তিনজনের মর্যাদা দঢ়তার সাথে বলতেন কিন্তু তখন তারা অন্য কোন দলীলের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতেন না। ইমাম বাযযার “উমার (রাঃ), একটি বর্ণনা উক্ত কথাকে আরো শক্তিশারী করে ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করতাম মদীনাবাসীর সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)।
(كنانترك) ইমাম কারমানী বলেন, এমনটি হতে পারে যে, ইবনু উমার (রাঃ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন। উক্ত ঘটনা নবী (সা.) -এর যুগে কিছু সময়ের জন্য ছিল পরবর্তীতে যখন সব কিছু স্পষ্ট হয়ে গেল তখন আর এমনটি ঘটেনি। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৯৭)
(أَفْضَلُ أُمَّةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) অর্থাৎ যারা হলেন নবীগণের পর উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি অথবা নবী (সা.) জীবিত থাকা অবস্থায় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)