পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৩৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে কিছু লোক মুহাদ্দাস ছিল। এমন কেউ আমার উম্মতের মধ্যে যদি থাকে, তবে সে ’উমারই হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الْأُمَمِ مُحَدَّثُونَ فَإِنْ يَكُ فِي أمّتي أحدٌ فإِنَّه عمر» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3689) و مسلم (23 / 2398)، (6204) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لقد كان فيما قبلكم من الامم محدثون فان يك في امتي احد فانه عمر» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3689) و مسلم (23 / 2398)، (6204) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (مُحَدَّثُونَ) ‘আলিমগণ উক্ত শব্দের ব্যাখ্যা নিয়ে ইখতিলাফ করেছেন:
১. অধিকাংশ ‘আলিম বলেন, এমন ব্যক্তি যাকে ইলহাম করা হয়।
২. কেউ কেউ বলেন, এমন ব্যক্তি যে ভালো ও সৎ ধারণা করে থাকে।
৩. আবূ আহমাদ আল আসকারী দৃঢ়তার সাথে বলেন, এমন ব্যক্তি যার অন্তরে উচ্চপদস্থ মালায়িকার (ফেরেশতাদের) হতে কোন কিছু জাগিয়ে দেয়া হয় আর সেটা এমন হয়ে যায় যেন অন্য কেউ বলেছে।
৪. বলা হয়ে থাকে, যে ব্যক্তির কথায় উদ্দেশ্য ছাড়াই সত্য বের হয়ে আসে।
৫. কেউ কেউ বলেন, নুবুওয়্যাত ছাড়া মালাক (ফেরেশতা) যার সাথে কথা বলে।
উক্ত উক্তির সমর্থনে আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে মারফু সূত্রে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে সে কথা বলে থাকে? উত্তরে তিনি বললেন, মালাক তার ভাষায় কথা বলে।
৬. ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর হাদীসে রয়েছে, (محدث) হলো যাকে সঠিক ইলহাম করা হয় আর যেটা সে মুখ দিয়ে প্রকাশ করে থাকে। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৯)
(১) (وَإِنْ يَكُ فِىْ أُمَّتِيْ) উক্ত উক্তিটি সন্দেহ পোষণের উদ্দেশে বর্ণিত হয়নি। কেননা তার উম্মত হলো সকল উম্মতের মাঝে শ্রেষ্ঠ। অতএব যখন অন্যান্য উম্মতের মাঝে মুহাদ্দিসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে তখন তাঁর উম্মতের মাঝে পাওয়া যাওয়া বেশি যুক্তিসঙ্গত।
(২) কেউ কেউ বলেছেন, আলোচ্য অংশটুকু দৃঢ়তা বুঝানোর জন্য বর্ণিত হয়েছে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা হয়, আমার যদি কোন বন্ধু থেকে থাকে তাহলে অমুক আমার বন্ধু। এ বাক্য দ্বারা সে তার বন্ধুগণের সম্পর্ক দূর করতে চেয়েছে, যাতে কোন কোন সন্দেহ নেই। কারণ বানী ইসরাঈলের মাঝে এরূপ লোকের অস্তিত্ব থাকা যুক্তিসঙ্গত ছিল। কেননা যখন তাদের মাঝে কোন নবী থাকতেন না তখন তারা এ সকল লোকের দিকে মুখাপেক্ষি হতেন। কিন্তু এই উম্মত এ সকল লোকের প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। কুরআনের উপস্থিতি ও নতুন নবীর আগমনের সম্ভবনা না থাকায়।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাদ্দাস হলো যাকে পরিপূর্ণ ইলহাম করা হয় এবং সততার ক্ষেত্রে নবী-এর স্তরে পৌঁছে যায়। এর অর্থ হলো, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে কিছু নবী ছিলেন যাদের প্রতি ইলহাম করা হত। যদি আমার উম্মতের মাঝে এরূপ কেউ হয়ে থাকে তাহলে তিনি হলেন উমার (রাঃ)। হাদীসের উদ্দেশ্য হলো ‘উমার (রাঃ) -এর মর্যাদা বর্ণনা করা। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৯, মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৩৯৮)

(فإِنَّه عمر) ইমাম তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুহাদ্দাস হলো যাদের কথা বার্তায় প্রকাশ পায় তিনি হলেন এমন ব্যক্তি যিনি সত্য চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে যার অন্তরে কোন কিছু জাগিয়ে দেয়া হয় মর্যাদা সম্পন্ন মালায়িকার (ফেরেশতাগণের) পক্ষ হতে আর সেটা এমন হয়ে যায় যেমন কোন ব্যক্তি কথা বলে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৩৬-[২] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে (তার কক্ষে) উপস্থিত হওয়ার অনুমতি চাইলেন। তখন কুরায়শ গোত্রের কতক মহিলা (নবীর বিবিগণ) তার কাছে বসে কথাবার্তা বলছিলেন এবং তারা অতি উচ্চৈঃস্বরে তার কাছ থেকে অধিক (খোরপোষ) দাবি করছিলেন। যখন ’উমার ফারূক (রাঃ) অনুমতি চাইলেন, তখন মহিলাগণ উঠে জলদি পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। এরপর ’উমার ফারূক (রাঃ) প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হেসেছিলেন। উমার ফারূক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে সদা খুশি রাখুন। (তবে আপনার হাসার কারণ কি?)
তখন নবী (সা.) বললেন, আমি অবাক হয়েছি ঐ সকল মহিলাদের আচরণে, যারা এতক্ষণ আমার কাছে ছিল এবং তারা যখনই তোমার ধ্বনি শুনতে পেল, দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। তখন ’উমার ফারূক (রাঃ) বললেন, ওহে স্বীয় জানের দুশমনেরা! তোমরা আমাকে ভয় কর, আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ভয় করো না? তাঁরা উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। তুমি যে অধিকতর রুক্ষ ও কঠোরভাষী। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে খত্তাব-এর পুত্র। এদের কথা ছাড়। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! শয়তান তোমাকে যে পথে চলতে দেখতে পায়, সে তোমার রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা অবলম্বন করে। (বুখারী ও মুসলিম)

হুমায়দী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: ইমাম বারকানী (রহিমাহুল্লাহ) বৃদ্ধি করেছেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.)” শব্দের পর “কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে?” বাক্যটিকে বলেছেন।

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ قَالَ: اسْتَأْذن عمر رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدَهُ نِسْوَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ يُكَلِّمْنَهُ وَيَسْتَكْثِرْنَهُ عَالِيَةً أَصْوَاتُهُنَّ فَلَمَّا اسْتَأْذَنَ عُمَرُ قُمْنَ فَبَادَرْنَ الْحِجَابَ فَدَخَلَ عُمَرُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضْحَكُ فَقَالَ: أَضْحَكَ اللَّهُ سِنَّكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَجِبْتُ مِنْ هَؤُلَاءِ اللَّاتِي كُنَّ عِنْدِي فَلَمَّا سَمِعْنَ صَوْتَكَ ابْتَدَرْنَ الْحِجَابَ» قَالَ عُمَرُ: يَا عَدُوَّاتِ أَنْفُسِهِنَّ أَتَهَبْنَنِي وَلَا تَهَبْنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم؟ قُلْنَ: نَعَمْ أَنْتَ أَفَظُّ وَأَغْلَظُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيهٍ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا لَقِيَكَ الشَّيْطَانُ سَالِكًا فَجًّا قَطُّ إِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَقَالَ الْحُمَيْدِيُّ: زَادَ الْبَرْقَانِيُّ بَعْدَ قَوْلِهِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ: مَا أَضْحَكَكَ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3683) و مسلم (22 / 2396)، (6202) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن سعد بن ابي وقاص قال: استاذن عمر رضي الله عنه على رسول الله صلى الله عليه وسلم وعنده نسوة من قريش يكلمنه ويستكثرنه عالية اصواتهن فلما استاذن عمر قمن فبادرن الحجاب فدخل عمر ورسول الله صلى الله عليه وسلم يضحك فقال: اضحك الله سنك يا رسول الله. فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «عجبت من هولاء اللاتي كن عندي فلما سمعن صوتك ابتدرن الحجاب» قال عمر: يا عدوات انفسهن اتهبنني ولا تهبن رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قلن: نعم انت افظ واغلظ. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ايه يا ابن الخطاب والذي نفسي بيده ما لقيك الشيطان سالكا فجا قط الا سلك فجا غير فجك» . متفق عليه. وقال الحميدي: زاد البرقاني بعد قوله: يا رسول الله: ما اضحكك متفق علیہ ، رواہ البخاری (3683) و مسلم (22 / 2396)، (6202) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (وَعِنْدَهُ نِسْوَةٌ) তাঁর নিকট মহিলাদের একটি দল ছিল।
(مِنْ قُرَيْشٍ) ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা হলেন ‘আয়িশাহ্, হাফসাহ, উম্মু সালামাহ্, যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) ও অন্যান্য মহিলাবৃন্দ।
তিনি আরো বলেন, তাঁরা ছিলেন নবী (সা.) -এর স্ত্রী। এটাও সম্ভাব্য যে, তাঁদের সাথে অন্যান্য মহিলারাও ছিলেন।
(يُكَلِّمْنَهُ وَيَسْتَكْثِرْنَهُ) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা নবী (সা.) -এর নিকট আবেদন করছিলেন যে, তাদের ভরণ-পোষণ বাড়িয়ে দেয়া হোক। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৩, শারহুন নাবাবী হা, ২৩৯৬)
(أَصْوَاتُهُنَّ) কাযী ইযায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা হতে পারে নবী (সা.) -এর আওয়াজের উপর আওয়াজ উঁচু করা নিষেধ হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা।
এটাও হতে পারে যে, তাদের একত্রিত হওয়ার কারণে উচ্চশব্দ হচ্ছিল। এটা নয় যে, প্রত্যেকে তার আওয়াজ নবী (সা.)-এর ওপর উঁচু করছিলেন।
আমি বলব: উক্ত কথার দলীল নয়, যে তাদের কথার শব্দ নবীর কথার শব্দের চেয়ে উঁচু ছিল। কেননা আল্লাহ তা'আলার বাণী দ্বারা এ সন্দেহ দূর হয়ে যায়। তিনি বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর সামনে উঁচু গলায় কথা বলো না।” (সূরা আল হুজুরাত ৪৯: ২)।
এখানে উদ্দেশ্য হলো ঐ অবস্থায় তারা তাদের অভ্যাসের তুলনায় নিচু থেকে একটু উঁচু গলায় কথা বলছিল নবী (সা.) -এর সাথে তবে শিষ্টাচার ও ভদ্রতা বজায় রেখে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী হা, ২৩৯৬)
ইবনুত্ তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত ঘটনা ছিল নিষেধাজ্ঞার পূর্বের। কেউ কেউ বলেন, নিষেধাজ্ঞা ছিল পুরুষদের জন্য খাস। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ছিল সাবধানতা। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৩)।
(أَضْحَكَ اللَّهُ سِنَّكَ) উক্ত বাক্য দ্বারা বেশি হাসার জন্য দু'আ করা হয়নি বরং সর্বদা যেন আনন্দে থাকেন এরূপ দু'আ করা হয়েছে, এ বাক্যটির প্রমাণ নেই। তুমি কথা বলো, তাদের উত্তরের প্রতি লক্ষ করো না।
(إِيهٍ يَا ابْنَ الْخَطَّابِ) ভাষাবিদগণ বলেন, যখন (إِيهٍ) শব্দটি যের ও তানভীনসহ হবে তখন অর্থ হবে কোন কথার সূচনা করো না। আর তানভীন ছাড়া অর্থ হবে কথা বলা হতে বিরত হও। যের এবং তানভীনসহ অর্থ হবে তুমি যা বলতে চাও আমাকে বল।
ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তানভীন ছাড়া অর্থ হবে তাদের তিরস্কার করা হতে বিরত হও।
‘আল্লামাহ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মিতব্যয়ী হওয়ার বিষয়টি তাঁর সত্ত্বাগত দাবী তবে তার চেয়ে বেশি হওয়াটাকে প্রশংসা করেছেন। যেন তিনি বুঝাতে চেয়েছেন () শব্দ দ্বারা মিতব্যয়ী থেকে বেশি করা আর এদিকটাকে বড় করে তুলেছেন, যার কারণে এর পরেই বলেছেন ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৬৮৩)
(إِلَّا سَلَكَ فَجًّا غَيْرَ فَجِّكَ) এখানে ‘উমার (রাঃ)-এর মহা মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, কেননা উক্ত বাক্য সাক্ষ্য দেয় যে, তার ওপর শয়তানের কোন ক্ষমতা চলে না। আরো বলা হয় যে, শয়তান হতে রক্ষা করা হয়েছে। কারণ যখন তারা এক রাস্তায় চলে তখন শয়তানের পলায়ন ছাড়া উপায় থাকে না। তবে এ কথা
অস্বীকার করা হয় না যে তার সাধ্য অনুযায়ী সুযোগ পেলে তাকে কুমন্ত্রণা দিবে না। যদি এ কথা বলা হয় যে, তাকে কুমন্ত্রণা দেয়ার সাহস নেই, তাহলে বুঝে নিতে হবে যেহেতু শয়তান একই রাস্তায় চলতে বাধাগ্রস্ত হয় সেহেতু তার সাথে মিলিত হতে পারবে না ও কুমন্ত্রণা দিতে পারবে না, এটা অধিক যুক্তিসঙ্গত। (ফাতহুল বারী হা, ৩৬৮৩)।

ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীস তার বাহ্যিক বিষয়ের উপর ধরা হবে। শয়তান যখন তাকে প্রশস্ত রাস্তায় দেখে তখন সে ‘উমার (রাঃ)-এর ভয়ে পলায়ন করে এবং এই রাস্তা ছেড়ে যায় অধিক কষ্টের কারণে।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শয়তান ও তার ধোঁকা দ্বারা একটি উদাহরণ পেশ করা হয়েছে। আর ‘উমার (রাঃ) শয়তানের পথ ছেড়ে দেন এবং সঠিক পথে চলেন অথবা শয়তান যা আদেশ করে তার বিপরীত চলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৩৭-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (স্বপ্নযোগে অথবা মিরাজের রাতে) আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করলাম, এমন মুহূর্তে হঠাৎ আবূ ত্বলহাহ্-এর স্ত্রী রুমায়সাহ-কে দেখতে পেলাম এবং কারো পায়ে হাঁটার শব্দ শুনতে পেলাম। তখন আমি প্রশ্ন করলাম, এ লোক কে? উত্তরে (ফেরেশতা) বললেন, ইনি বিলাল। এরপর আমি একটি প্রাসাদও অবলোকন করলাম, যার আঙ্গিনায় একজন কিশোরী বসা ছিল। আমি প্রশ্ন করলাম; এই দালানটি কার? তখন (সঙ্গী) মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বললেন, এটা ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব-এর। তখন আমার ইচ্ছা হয়েছিল যে, ভিতরে প্রবেশ করে প্রাসাদটি দেখি, কিন্তু হে ’উমার! ঐ সময় তোমার আত্মমর্যাদার কথা আমার মনে পড়ে গেল (তাই প্রবেশ করলাম না)। তখন ’উমার ফারূক (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি কি আপনার ওপর আত্মমর্যাদাবোধ করব? (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: دخلتُ الجَنَّةَ فإِذا أَنا بالرُميضاء امْرَأَةِ أَبِي طَلْحَةَ وَسَمِعْتُ خَشَفَةً فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالَ: هَذَا بِلَالٌ وَرَأَيْتُ قَصْرًا بِفِنَائِهِ جاريةٌ فَقلت: لمن هَذَا؟ فَقَالُوا: لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَأَرَدْتُ أَنْ أَدْخُلَهُ فَأَنْظُرَ إِليه فذكرتُ غيرتك فَقَالَ عمر: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ أَعَلَيْكَ أغار؟ . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3679) و مسلم (20 / 2394)، (6198) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: دخلت الجنة فاذا انا بالرميضاء امراة ابي طلحة وسمعت خشفة فقلت: من هذا؟ فقال: هذا بلال ورايت قصرا بفناىه جارية فقلت: لمن هذا؟ فقالوا: لعمر بن الخطاب فاردت ان ادخله فانظر اليه فذكرت غيرتك فقال عمر: بابي انت وامي يا رسول الله اعليك اغار؟ . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3679) و مسلم (20 / 2394)، (6198) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (دخلتُ الجَنَّةَ) মি'রাজের রাত্রে অথবা উন্মোচনের জগতে অথবা স্বপ্নে । (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فإِذا أَنا بالرُميضاء امْرَأَةِ أَبِي طَلْحَةَ) হাদীসে উল্লেখিত মহিলা হলেন উম্মু সুলায়ম আর রুমায়সাহ্ হলো তার সিফাত তার নাম হলো সাহলা।
কেউ কেউ বলেন, রুমায়লা। কেউ কেউ বলেন তার বোনের নাম উম্মু হারাম। আবূ দাউদ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উম্মু সুলায়ম-এর দুধ বোনের নাম।
ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে উদ্দেশ্য হলো আবূ তলহাহ-এর অন্য কোন স্ত্রী।

(سَمِعْتُ خَشَفَةً) আবূ উবায়দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (خَشَفَةً) হলো হালকা ও ক্ষীণ শব্দকে বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, প্রকৃতপক্ষে সাপের চলার শব্দকে (خَشَفَةً) বলা হয়। অতএব এখানে হাদীসের অর্থ হলো পায়ে চলার যে অনুভূতি শ্রবণ করা যায়।
ইমাম যাররা (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, একটি আওয়াজ মিরক্বাতের ব্যাখ্যাকার বলেন, জুতার আঘাতের শব্দ প্রকৃতপক্ষে নড়াচড়া করা অর্থে ব্যবহৃত হয়।
(فذكرتُ غيرتك) ইবনু বাত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে বিজ্ঞতা হলো প্রত্যেক ব্যক্তির ঐ গুণ যা তার চরিত্র হতে জানা যায় তা বলা যায়। উমার (রাঃ) কথাটি শুনে কাঁদতে লাগলেন। তিনি বললেন, এ কান্নার কারণ হতে পারে সেটা আনন্দে অথবা বিনয় বা আগ্রহ প্রকাশের জন্য ছিল। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৩৮-[৪] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, (স্বপ্নে) দেখলাম যে, লোকেদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হচ্ছে। তাদের গায়ে জামা ছিল। তাদের কারো জামা বুক অবধি পৌছেছিল। আবার কারো জামা ছিল তার নিম্নে। এরপর আমার সম্মুখে ’উমার ইবনুল খাত্তাবকে উপস্থিত করা হয়। তার দেহে এমন একটি দীর্ঘ জামা ছিল যে, তিনি তা হেঁচড়িয়ে চলছিলেন। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এর ব্যাখ্যা কি করেছেন? তিনি (সা.) বললেন, তা হলো দীন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

وَعَنِ اَبِیْ سَعِیْدٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُ النَّاسَ يُعْرَضُونَ عَلَيَّ وَعَلَيْهِمْ قُمُصٌ مِنْهَا مَا يَبْلُغُ الثُّدِيَّ وَمِنْهَا مَا دُونَ ذَلِكَ وَعُرِضَ عَلَيَّ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ وَعَلَيْهِ قَمِيصٌ يَجُرُّهُ» قَالُوا: فَمَا أَوَّلْتَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «الدِّينَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3691) و مسلم (15 / 2390)، (6189) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابی سعید قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «بينا انا ناىم رايت الناس يعرضون علي وعليهم قمص منها ما يبلغ الثدي ومنها ما دون ذلك وعرض علي عمر بن الخطاب وعليه قميص يجره» قالوا: فما اولت ذلك يا رسول الله؟ قال: «الدين» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3691) و مسلم (15 / 2390)، (6189) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কাপড় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দীনের উপর অটল থাকা আর তা টেনে নিয়ে যাওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তার মৃত্যুর পর মুসলিমদের মাঝে তার সুন্দর সুন্দর প্রভাব ও সুন্নাতগুলো অবশিষ্ট থাকা যাতে করে মৃত্যুর পরও যেন তার অনুসরণ করা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী হা, ২৩৯০)
হাদীসের সারমর্ম হলো: ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফতকালে দীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। তার শাসনকাল দীর্ঘ হবে। তার বিজয়ের প্রভাবটা জীবিত অবস্থায় অবশিষ্ট থাকবে এবং মৃত্যুর পরও। কেননা দীন হলো মানুষকে একত্রিত করে ও রক্ষা করে এবং মতবিরোধ হতে বাঁচিয়ে রাখে, যেমন কাপড় মানুষকে রক্ষা করে ও বেষ্টন করে রাখে।
(وَمِنْهَا مَا دُونَ ذَلِكَ) এখানে কাপড়ের স্তর বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া (دُونَ) শব্দের অর্থে দু'টি সম্ভাবনা রয়েছে, ১. তার চেয়ে ছোট কাপড়, ২. বড় কাপড়।
(يَجُرُّهُ) কাপড় লম্বা হওয়ার দরুন জমিনে হেঁচড়াচ্ছিল।
(قَالُوا) কতিপয় সাহাবী যারা তখন উপস্থিত ছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৩৯-[৫] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন দেখলাম, আমার কাছে একটি দুধের পাত্র আনা হয়েছে। আমি তা এত তুষ্ট হয়ে পান করলাম যে, আমি লক্ষ্য করলাম, তপ্তি যেন আমার নখগুলো হতে বের হচ্ছে। অতঃপর আমি পাত্রের অবশিষ্ট দুধ ’উমার ইবনুল খত্ত্বাবকে দিলাম। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ স্বপ্নের তা’বীর (ব্যাখ্যা) আপনি কি করেছেন? তিনি বললেন, “ইলম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِقَدَحِ لَبَنٍ فَشَرِبْتُ حَتَّى إِنِّي لَأَرَى الرِّيَّ يَخْرُجُ فِي أَظْفَارِي ثُمَّ أَعْطَيْتُ فَضْلِي عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ» قَالُوا: فَمَا أَوَّلْتَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «الْعِلْمَ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3681) و مسلم (16 / 2391)، (6190) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابن عمر قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «بينا انا ناىم اتيت بقدح لبن فشربت حتى اني لارى الري يخرج في اظفاري ثم اعطيت فضلي عمر بن الخطاب» قالوا: فما اولته يا رسول الله؟ قال: «العلم» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (3681) و مسلم (16 / 2391)، (6190) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (لَأَرَى الرِّيَّ) দুধের তরল চিহ্ন দেখতে পেলাম।
قَالَ: «الْعِلْمَ» ইলম দ্বারা উদ্দেশ্য দীনী জ্ঞান।
‘আলিমগণ বলেন, কায়িক ও আত্মার জগতের মাঝে অন্য একটি জগত রয়েছে সেটি হলো সদৃশ জগত। এটি হলো আলোকিত জগত যা কায়িক জগতের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। ঘুম হলো আত্মা সদৃশ জগতে গিয়ে আলোকিত হওয়ার কারণ। স্বপ্ন হলো, শরীর ছাড়া যাতে শুধু আকৃতি থাকে। আর “ইলম সদৃশ জগতে গিয়ে দুধের আকৃতি ধারণ করে, কারণ দুধ হলো শরীরের প্রথম খাদ্য এবং শরীরকে সুস্থ রাখার কারণ। তেমনিভাবে ‘ইলম হলো আত্মার প্রথম খাদ্য এবং আত্মাকে সুস্থ রাখার কারণ।
কেউ কেউ বলেন, আলোকিত জগত চারটি আকৃতি ধারণ করে, ১) পানি, ২) দুধ, ৩) মদ, ৪) মধু। এছাড়াও একটি আয়াত পাওয়া যায় যাতে জান্নাতে চার প্রকার নদীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব যে ব্যক্তি স্বপ্নে পানি পান করবে তাকে ‘ইলমে লাদুনী দেয়া হবে। যে ব্যক্তি দুধ পান করবে তাকে শারী'আতের রহস্যের জ্ঞান দেয়া হবে। যে ব্যক্তি মদ পান করবে তাকে পরিপূর্ণ জ্ঞান দান করা হবে আর যে ব্যক্তি মধু পান করবে তাকে ওয়াহীর পদ্ধতিতে জ্ঞান দেয়া হবে। কতিপয় পণ্ডিত বলেন, চারটি নহর চার খলীফার ব্যাখ্যা। আর দুধ শুধু ‘উমার (রাঃ)-এর খাস, যেমনটি হাদীস হতে পাওয়া যায়। আর “ইলম পরিতপ্ত হওয়ার ব্যাপারে আলিমগণ মতানৈক্য করেছেন:
১) প্রথম দল বলেন, “ইলম দ্বারা পরিতপ্ত হওয়া এর অস্তিত আছে। কেননা “ইলম বৃদ্ধি হয় না যখন তা গ্রহণ করা হয় না যা হলে পরিতৃপ্তি আসে।
২) ইলম দ্বারা পরিতৃপ্ত হওয়ার কোন অস্তিত্ব নেই। দলীল: আল্লাহ বলেন, “বলুন! হে আমার প্রতিপালক আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর।” (সূরা হা- ২০:১১৪)
এখানে “ইলম বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে কিন্তু কোন শেষ সীমা উল্লেখ করা হয়নি। এজন্যই বলা হয় যাতে বৃদ্ধি নেই তাতে কমতি আছে।
আরো বলা হয়ে থাকে, জ্ঞান অন্বেষণকারী সমুদ্রের পানি পানকারীর ন্যায় যত পানি পান বৃদ্ধি পায় তত পিপাসা বেড়ে যায়।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, যদি সকল আরব গোত্রের জ্ঞান এক পাল্লায় রাখা হয় আর ‘উমার (রাঃ) -এর জ্ঞান আরেক পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে ‘উমার (রাঃ)-এর পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। তারা আরো মনে করতেন ‘উমার (রাঃ) একাই নয় গোত্রের জ্ঞান রাখেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
আর দুধকে ‘ইলম দ্বারা ব্যাখ্যা করার কারণ হলো উভয়টিতে প্রচুর পরিমাণ উপকার বিদ্যমান এবং উভয়টি সুস্থ থাকার বড় মাধ্যম। অতএব দুধ হলো শিশুদের খাদ্য ও তাদের সুস্থ থাকার বড় কারণ, এরপর শরীরের জন্য খাদ্য সরবরাহ করে। আর ইলম বা জ্ঞান হলো ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে ঝামেলামুক্ত থাকার বড় হাতিয়ার। (ফাতহুল বারী হা. ৩৬৪১, শারহুন নাবাবী হা. ১৮৫৯)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৪০-[৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, একদিন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, (স্বপ্নে) আমি নিজেকে একটি কূপের পাশে দেখতে পেলাম। কূপটির পাশে একটি বালতিও ছিল। আমি ঐ বালতি দ্বারা যতটা আল্লাহর ইচ্ছা কূপ হতে পানি উঠালাম। তারপর ইবনু আবূ কুহাফাহ্ [আবূ বকর (রাঃ)] ঐ বালতিটা নিলেন এবং এক বালতি বা দুই বালতি পানি টেনে উঠালেন। তাঁর ঐ বালতি টানার মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ তা’আলা তাঁর এ দুর্বলতা ক্ষমা করুন। এরপর বালতিটি বড় হয়ে গেল এবং ইবনুল খত্ত্বাব (উমার) তা নিলেন। আমি কোন শক্তিশালী বাহাদুর লোককেও ’উমারের মতো টেনে তুলতে দেখিনি। এমনকি লোকজন ঐ স্থানকে উটশালা বানাতে উদ্বুদ্ধ হলো।”

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ رَأَيْتُنِي عَلَى قَلِيبٍ عَلَيْهَا دَلْوٌ؟ فَنَزَعْتُ مِنْهَا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أَخَذَهَا ابْنُ أَبِي قُحَافَةَ فَنَزَعَ مِنْهَا ذَنُوبًا أَوْ ذَنُوبَيْنِ وَفِي نَزْعِهِ ضَعْفٌ وَاللَّهُ يَغْفِرُ لَهُ ضَعْفَهُ ثُمَّ اسْتَحَالَتْ غَرْبًا فَأَخَذَهَا ابْنُ الْخَطَّابِ فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِيًّا مِنَ النَّاسِ يَنْزِعُ نَزْعَ عُمَرَ حَتَّى ضرب النَّاس بِعَطَن»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3664) و مسلم (17 / 2392)، (6192) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «بينا انا ناىم رايتني على قليب عليها دلو؟ فنزعت منها ما شاء الله ثم اخذها ابن ابي قحافة فنزع منها ذنوبا او ذنوبين وفي نزعه ضعف والله يغفر له ضعفه ثم استحالت غربا فاخذها ابن الخطاب فلم ار عبقريا من الناس ينزع نزع عمر حتى ضرب الناس بعطن» متفق علیہ ، رواہ البخاری (3664) و مسلم (17 / 2392)، (6192) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (رَأَيْتُنِي عَلَى قَلِيبٍ عَلَيْهَا دَلْوٌ)  قَلِيبٍ বলা হয় এমন কূপ যা সঙ্কুচিত নয়। (دَلْوٌ) বলা হয় বড় বালতিকে। (শারহুন নাবাবী হা. ২৩৯২)
(فَنَزَعَ مِنْهَا ذَنُوبًا)  ذَنُوب এমন বালতি যার মধ্যে পানি থাকে, পরিপূর্ণ হোক বা অপরিপূর্ণ। (আল কামূস)
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীসে কূপ দ্বারা দীনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা হলো উৎপত্তিস্থল এবং তার দ্বারা প্রাণ সঞ্চার হয় ও জীবনোপকরণ পূর্ণতা লাভ করে।
পানি উঠানো দ্বারা এই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, উক্ত বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে শেষ হয়ে আবূ বাকর (রাঃ) পর্যন্ত চলবে। তারপর আবূ বাকর (রাঃ) হতে ‘উমার (রাঃ) পর্যন্ত চলবে। আর আবূ বাকর (রাঃ) -এর এক বালতি অথবা দুই বালতি পানি উঠানো দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তার খিলাফতকাল কম হবে। আর এ বিষয়টি তার হাতে এক অথবা দুই থাকবে, এরপর ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে হস্তান্তরিত হবে। আমরা জানি তার খিলাফতকাল ছিল দুই বছর তিন মাস।
তার দুর্বলতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তার খিলাফতকালে যে ব্যাপক পরিবর্তন, মুরতাদ ও মতানৈক্য দেখা দেয় ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অথবা মানুষদের সাথে তার নমনীয় ব্যবহার ও খিলাফতকাল অল্পের প্রতি ইঙ্গিত।

আর বালতি ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট হস্তান্তরিত হয় সেটা এমন বড় বালতি যা হতে উট পানি পান করে থাকে। এটা দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তাঁর যুগে ইসলামের মহত্ব, আল্লাহর কালিমার বিজয় ও তাঁর ক্ষমতার বিস্তার ঘটবে।
উত্তমভাবে পানি তোলা দ্বারা ইঙ্গিত হলো তিনি দীন ইসলামের বিজয়ের জন্য যে প্রচেষ্টা করেছেন এবং পৃথিবীর প্রাচ্যে ও পশ্চাতে ইসলাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন যেটা ইতোপূর্বে কেউ সক্ষম হননি।
(أَرَ عَبْقَرِيًّ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রচুর শক্তিমত্তা। আরো বলা হয়: (عَبْقَرِيًّ) হলো একটি উপত্যকার নাম। আরবগণ মনে করতেন সে উপত্যকায় জিন বসবাস করে, তাই তারা কোন আশ্চর্যপূর্ণ কোন বিষয় দেখলে সেদিকে সম্বোধন করত।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আবূ বাকর (রাঃ), পানি উত্তোলনে দুর্বল- এটা দ্বারা তার মর্যাদাকে খাটো করা হয়নি। উমার (রাঃ) -এর মর্যাদা আবূ বাকর (রাঃ) -এর উপরে প্রতিষ্ঠা করা উদ্দেশ্য নয়। এখানে শুধু তাদের শাসনকালের ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ)-এর শাসনকালে মানুষ বেশি উপকৃত হবে। তার শাসনকাল দীর্ঘ হওয়ার কারণে ইসলামের বিস্তার ঘটবে, দিকসমূহ বিজয় হওয়া ও অনেক গনীমত ও সম্পদ অর্জন হওয়ার কারণ হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - উমার ফারূক (রাঃ)-এর মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য

৬০৪১-[৭] ইবনু উমার (রাঃ)-এর এক বর্ণনাতে আছে, অতঃপর ইবনুল খত্তাব বালতিটা আবূ বকর এর হাত হতে নিজের হাতে নিলেন। বালতিটি তার হাতে পৌছেই বৃহদাকারে পরিণত হয়ে গেল। আর আমি কোন শক্তিশালী যুবককেও দেখিনি ’উমার-এর মতো পানি তুলতে যে, তাতে সমস্ত লোক পরিতপ্ত হয়ে গেল এবং পানির প্রাচুর্যের কারণে লোকেরা ঐ স্থানকে উটশালা বানিয়ে নিল। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب مَنَاقِب عمر)

وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: «ثُمَّ أَخَذَهَا ابْنُ الْخَطَّابِ مِنْ يَدِ أَبِي بَكْرٍ فَاسْتَحَالَتْ فِي يَدِهِ غَرْبًا فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِيًّا يَفْرِي فَرْيَهُ حَتَّى رَوِيَ النَّاسُ وَضَرَبُوا بعَطَنٍ» . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7019) و مسلم (19 / 2393)، (6196) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وفي رواية ابن عمر قال: «ثم اخذها ابن الخطاب من يد ابي بكر فاستحالت في يده غربا فلم ار عبقريا يفري فريه حتى روي الناس وضربوا بعطن» . متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (7019) و مسلم (19 / 2393)، (6196) ۔ (متفق عليه)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-৩০: মান-মর্যাদা (كتاب المناقب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৭ পর্যন্ত, সর্বমোট ৭ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে