পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৬-[১] বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর সাহাবীদের মাঝে সর্বপ্রথম যারা হিজরত করে মদীনায় আমাদের কাছে এসেছিলেন, তাঁরা হলেন মুসআব ইবনু উমায়র এবং (আবদুল্লাহ) ইবনু উম্ম মাকতুম (রাঃ)। তাঁরা দুজন এসেই আমাদেরকে কুরআন মাজীদ শিক্ষা দিতে আরম্ভ করলেন। এরপর আসলেন ’আম্মার, বিলাল ও সাদ (রাঃ)। তারপর আসলেন ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) যিনি নবী (সা.) -এর বিশজন সাহাবীগণের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর (সর্বশেষ) আসলেন নবী (সা.)।
নবী (সা.) -এর আগমনে আমি মদীনাবাসীকে এত বেশি খুশি হতে দেখেছি যে, অন্য কোন জিনিসে তাদেরকে ততটা আনন্দিত হতে আর কখনো দেখিনি। এমনকি আমি দেখেছি, মদীনার ছোট ছোট মেয়ে এবং ছেলেরা পর্যন্ত খুশিতে বলতে লাগল, ইনিই তা সেই আল্লাহর রাসূল (সা.), যিনি আমাদের মাঝে আগমন করেছেন। বারা (রাঃ) বলেন, তিনি আসার আগেই আমি “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা-” (সূরাহ আ’লা-) ও অনুরূপ আরো কতিপয় ছোট ছোট সূরাহ্ শিখে ফেলেছিলাম। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
عَن الْبَراء قَالَ: أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ فَجَعَلَا يُقْرِآنِنَا الْقُرْآنَ ثُمَّ جَاءَ عَمَّارٌ وَبِلَالٌ وَسَعْدٌ ثُمَّ جَاءَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فِي عِشْرِينَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَرِحُوا بِشَيْءٍ فَرَحَهُمْ بِهِ حَتَّى رَأَيْتُ الْوَلَائِدَ وَالصِّبْيَانَ يَقُولُونَ: هَذَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ جَاءَ فَمَا جَاءَ حَتَّى قرأتُ: [سبِّح اسْم ربِّك الْأَعْلَى] فِي سُوَرٍ مِثْلِهَا مِنَ الْمُفَصَّلِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (4941) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি প্রমাণ করে যে, সূরাহ আ'লা মক্কায়,নাযিল হয়েছে। কোন কোন ‘আলিম প্রশ্ন তোলেন যে, উক্ত সূরার দু'টি আয়াত قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی ﴿ۙ۱۴﴾ وَ ذَکَرَ اسۡمَ رَبِّهٖ فَصَلّٰی ﴿ؕ۱۵﴾
যেহেতু সদাকায়ে ফিত্বরের ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে, আর সদাকাতুল ফিত্বর ও ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসাবে গণ্য করা হয় ২য় হিজরীতে। তাই সূরাহ আ'লাকে মাক্কী সূরাহ্ বলাতে প্রশ্ন হতে পারে। অবশ্য যদি এটা বলা হয় যে, আলোচ্য দুটি আয়াত ছাড়া অবশিষ্ট পূর্ণ সূরাহ্ মক্কায় নাযিল হয়েছে তাহলে উল্লেখিত প্রশ্ন উঠবে না। কিন্তু বাস্তব কথা হলো, এখানে আলোচ্য প্রশ্ন বা তার সম্ভাবনা কোনটিই সঠিক নয়। কেননা বিশুদ্ধ বর্ণনা অনুসারে এ সূরাহ্ তার সকল আয়াত সহকারে মক্কায় নাযিল হয়েছে। অতঃপর মদীনায় এসে যখন সদাকাতুল ফিত্বর ও ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসেবে গণ্য করা হলো তখন রাসূল (সা.) আলোচ্য দুটি আয়াতের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন যে, এ দু’টি আয়াতের মূল বিষয়বস্তু মূলত সদাকায়ে ফিত্বর ও ঈদের সালাতের গুরুত্ব ও ফযীলত বর্ণনার সাথে সম্পৃক্ত। এভাবেও বলা যায় যে, আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে শুধুমাত্র আর্থিক ও শারীরিক ‘ইবাদত তথা সদাকাহ্, যাকাত ও সালাতের নির্দেশ ও উৎসাহ রয়েছে, যাতে মূল উদ্দেশ্যের বিবরণ নেই। এ মূল উদ্দেশ্যকে পরবর্তীতে হাদীসের মাধ্যমে ঐ সময় বর্ণনা করা হয়েছে যখন সদাকাতুল ফিত্বর ও ঈদের সালাত ওয়াজিব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৯৩-১৯৪ পৃষ্ঠা)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৭-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) (তার অন্তিমকালে) মিম্বারের উপর বসে বললেন, আল্লাহ তা’আলা তার কোন বান্দাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আল্লাহ কাছে রক্ষিত নি’আমাত, এ দুটির মধ্যে ইখতিয়ার দিয়েছেন। তখন ঐ বান্দা আল্লাহর নিকট (রক্ষিত) নি’আমাতকে পছন্দ করেছেন। (রাবী বলেন,) এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমাদের পিতা ও মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। রাবী বলেন, আমরা অবাক হলাম এবং লোকেরা বলতে লাগল, এই বৃদ্ধের প্রতি দৃষ্টি দাও, রাসূলুল্লাহ (সা.) তো কোন একজন বান্দা সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস অথবা আল্লাহর কাছে রক্ষিত নি’আমাত- এ দুটি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়েছেন আর এ লোক বলছেন, আমরা আমাদের পিতামাতাকে আপনার ওপর কুরবান করছি। (রাবী বলেন,) আর পরে আমরা বুঝতে পারলাম, সে ইচ্ছা স্বাধীনতা বান্দা ছিলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) আর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন আমাদের সকলের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ» . فَبَكَى أَبُو بَكْرٍ قَالَ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتنَا فعجبنا لَهُ فَقَالَ النَّاس: نظرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ يُخْبِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ وَهُوَ يَقُولُ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْمُخَير وَكَانَ أَبُو بكر هُوَ أعلمنَا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3904) و مسلم (2 / 2382)، (6170) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত ঘটনাটি ঘটেছিল নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পূর্বে। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, এ ঘটনা ছিল নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পাঁচ রাত পূর্বের।
তিনি ছিলেন আল্লাহর এক মহান বান্দা যাকে তিনি মৃত্যুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তাঁর সুদীর্ঘ হায়াত ও দুনিয়ায় বেঁচে থেকে তার আরাম-আয়েশ ভোগ করার জন্য যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন। অতএব তিনি এ দুনিয়ার অস্থায়ী সুখ-শান্তির উপর প্রাধান্য দেন সে সব নি'আমাকে যা আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন তাঁর প্রিয় বান্দার জন্য। আর যে নি'আমাত চিরস্থায়ী। নবী (সা.) -এর মুখে এ বর্ণনা শুনে আবূ বাকর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, কারণ তিনি তার পরিপূর্ণ বুঝ ও জ্ঞানের কারণে নবী (সা.) -এর বিচ্ছেদের ব্যাপারে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কারণ তাঁর অসুস্থতা তখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তিনি অসুস্থতা দেখে অনুমান করতে পেরেছিলেন অথবা তিনি দুনিয়ার চাকচিক্যের উপর আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছেন- এ কথা দ্বারা তিনি অনুমান করেছেন যে, তিনি নবী (সা.)-ই হবেন। কারণ এটি কেবল একজন আল্লাহর ওয়ালীই পারেন। আর নবী (সা.) তো হলেন নবীগণের নেতা। তাই তিনি দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এ ভোগ-বিলাসের উপর আখিরাতের স্থায়ী সুখ-শান্তিকে বাছাই করে নিয়েছেন। নবী (সা.) -এর ইশারা দ্বারাই আবূ বাকর (রাঃ) বুঝতে পারলেন যে, নবী (সা.) শুধু এ দুনিয়ার উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৮-[৩] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) উহুদ যুদ্ধে নিহত শহীদদের ওপর আট বছর পর (জানাযার) সালাত আদায় করলেন। সেদিনের সালাতে মনে হলো তিনি (সা.) যেন জীবিত এবং মৃতদেরকে বিদায় করছেন। অতঃপর তিনি মিম্বারে আরোহণ করে বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখে অগ্রবর্তী লোক এবং আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী এবং তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাতের স্থান হলো হাওযে কাওসার। আমি এখন আমার এ স্থানে দাঁড়িয়েও হাওযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। আর পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ অবশ্যই আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি তোমাদের ওপর এই আশঙ্কা করি না যে, আমার পরে তোমরা সকলে শিরকে লিপ্ত হয়ে যাবে; বরং আমি দুনিয়ার বিষয়ে তোমাদের প্রতি আশঙ্কা করি যে, তোমরা তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। কোন কোন বর্ণনাকারী এর সাথে এ বাক্যগুলোও বৃদ্ধি করেছেন, অতঃপর তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে এবং এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে, যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَتْلَى أحد بعد ثَمَانِي سِنِينَ كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ ثُمَّ طَلَعَ الْمِنْبَرَ فَقَالَ: «إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ من مَقَامِي هَذَا وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ وَإِنِّي لَسْتُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بعدِي وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا» . وَزَادَ بَعْضُهُمْ:: «فَتَقْتَتِلُوا فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ من كَانَ قبلكُمْ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4042) و مسلم (30 / 2296 و الزیادۃ لہ 31 / 2296)، (5976) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উহুদের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদের জানাযার সালাত আদায় করান আট বছর পরে। অর্থাৎ তাদের দাফন করার আট বছর পরে। কথিত আছে যে, নবী (সা.) তাদের জানাযার সালাত আদায় করেন। এটা নবী (সা.) -এর ও উহুদের শহীদদের বৈশিষ্ট্য ছিল। ইমাম শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে জানাযার সালাত বলতে দু'আ উদ্দেশ্য।
(كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ) “তার এ সালাত যেন জীবিত ও মৃতদের জন্য বিদায়ী সালাত।”
মুহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ নবী (সা.) তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন, আর তাদের জন্য তার ইস্তিগফার করা হলো তাঁর মৃত্যুর সময় কাছে আসা।
(إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ) “আমি তোমাদের সম্মুখে (হাশরের মাঠের দিকে) অগ্রগামী ব্যক্তি।”
ঐ ব্যক্তিকে ‘আরবীতে ফারাত্ব বলা হয়, যে কাফেলাকে পিছনে ফেলে রেখে নিজে সবার আগে পৌছে যায়, যাতে সেখানে কাফেলার জন্য পূর্ব হতেই থাকা, খাওয়া ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থা করতে পারে। অতএব নবী (সা.) -এর এ ঘোষণার মাধ্যমে যেন তার ইচ্ছা ছিল তিনি তাদের জন্য সুপারিশকারী হবেন, কারণ তিনি তাদের আগে যাচ্ছেন। আর সুপারিশকারী ব্যক্তি সুপারিশপ্রাপ্তের অগ্রগামী হয়।
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর আশ শামায়িলে বর্ণনা করেছেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূল (সা.) -কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি দুটি সন্তানকে আগে প্রেরণ করবে সে ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তখন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি আপনার উম্মতের কোন ব্যক্তি একটিকে আগে প্রেরণ করে তবে? যদি কোন কেউ একটি প্রেরণ করে তবুও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তখন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি কোন অগ্রগামীই না থাকে তবে? তখন নবী (সা.) বলেন, তখন আমিই আমার উম্মতের জন্য অগ্রগামী হয়ে যাব। তারা আমার মতো আর কোন সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে না।
(وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ) “আর আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।” অর্থাৎ আমি তোমাদের ছেড়ে যদিও যাচ্ছি; কিন্তু তোমাদের অবস্থা ও ব্যাপার হতে সম্পর্কহীন ও অবগত থাকব না, কেননা তোমাদের ‘আমল ও অবস্থাদি সেখানে আমার সামনে পেশ করা হবে। অথবা আমি তোমাদের সাক্ষী। আমি সেখানে তোমাদের আনুগত্য এবং তোমাদের ইসলাম গ্রহণের সাক্ষ্য দিব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ) “তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাতের স্থান হবে হাওযে কাওসার।”
অর্থাৎ আখিরাতের হাওযে কাওসারে যেখানে পৌছে ভালো ও মন্দ এবং মু'মিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য সূচিত হবে। তদ্রুপ তোমাদেরকে হাশরের ময়দানে যে বিশেষ শাফা'আতের ওয়াদা আমি করেছি তা হবে হাওযে কাওসারে। সেখানে শুধুমাত্র মুমিন বান্দাদের আমার সুপারিশের মাধ্যমে হাওযে কাওসার হতে পরিতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।
(وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ) “আর অবশ্যই আমাকে পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ প্রদান করা হয়েছে।” অর্থাৎ আমার পরে আমার উম্মতের মুজাহিদদের হাতে যে সকল বড় বড় এলাকা ও শহর বিজয় হবে এবং সেখানকার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করবে, সে সকল এলাকার ধনভাণ্ডার আমার উম্মতের আয়ত্বে এসে যাবে।
(وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا) “তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করি তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।” এর দ্বারা রাসূল (সা.) এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, আমার পরেও তোমরা ইনশা-আল্ল-হ ঈমান ও দীনের উপর স্থির থাকবে। তবে তোমরা দুনিয়ার মূল্যবান জিনিসের প্রতি সম্পূর্ণরূপেই ঝুকে পড়বে। তোমাদের কর্তব্য ছিল তার প্রতি সম্পূর্ণরূপে না ঝুকা। কারণ অস্থায়ী নি'আমাতকে নিয়ে কখনো প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত নয়। বরং প্রতিযোগিতা হওয়া চাই স্থায়ী জিনিসকে নিয়ে। যেমন- মহান আল্লাহ বলেছেন, (وَ فِیۡ ذٰلِکَ فَلۡیَتَنَافَسِ الۡمُتَنَافِسُوۡنَ) “আর নি'আমাতের প্রত্যাশীদের অর্থাৎ ঈমানদারদের জন্য উচিত যে, তারা তারই (আখিরাতের) নি'আমাতের প্রত্যাশী ও আগ্রহী হবে।” (সূরা আল মুত্বাফফিফীন ৮৩: ২৬)
(فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ من كَانَ قبلكُمْ) “তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে, যেরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে আগের লোকেরা।” অর্থাৎ সম্পদ নিয়ে তাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে রাসূল (সা.) -এর মু'জিযাহ্ আছে। কারণ তিনি এটা সংবাদ দিয়েছিলেন যে, তার উম্মাত পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের মালিক হবে, আর তা হয়েছে। আর তারা কখনো মুরতাদ হয়ে যাবে না। আর আল্লাহ তাদেরকে মুরতাদ হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। আর তারা দুনিয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী হবে ও প্রতিযোগিতা করবে। বাস্তবেও তাই ঘটেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক্ শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৯৬-১৯৭ পৃষ্ঠা)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৯-[৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ওপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো এই যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে, আমার পালার দিন এবং আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে হেলান দেয়া অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন। আর তাঁর ইন্তিকালের আগ মুহূর্তে আল্লাহ তা’আলা আমার মুখের লালার সাথে তাঁর মুখের লালাও মিশিয়ে দিয়েছেন। আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর মিসওয়াক হাতে আমার কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন আমার সাথে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তখন আমি দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ মিসওয়াকটির দিকে তাকাচ্ছেন। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি মিসওয়াক করতে চাচ্ছেন। অতএব আমি বললাম, আমি কি মিসওয়াকটি আপনার জন্য নেব? তিনি (সা.) মাথা নেড়ে হা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব আমি মিসওয়াকটি তার কাছ হতে নিয়ে তাঁকে দিলাম। তা তার জন্য কষ্টকর হলো। তখন বললাম, আমি কি তাকে আপনার জন্য নরম করে দেব? তিনি (সা.) মাথা হেলিয়ে হ্যা-বোধক ইঙ্গিত করলেন। অতএব তখন আমি তাকে নরম করে দিলাম। অতঃপর তিনি (সা.) তা ব্যবহার করলেন। আর তাঁর সামনে একটি পাত্রে পানি রাখা ছিল। তাতে তিনি (সা.) উভয় হাত ঢুকিয়ে হাত দুটি দ্বারা আপন চেহারা মাসেহ করতে লাগলেন। এ সময় তিনি (সা.) বলছিলেন- লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, অবশ্য মৃত্যুর যন্ত্রণা ভীষণ। অতঃপর তিনি হাত উঠিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকলেন- ’ফি রফীকিল আলা-’ অর্থাৎ- উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে (আমাকে মিলিত কর), এ কথা বলতে বলতে তিনি ইন্তিকাল করেন এবং তাঁর হাত নিচে নেমে আসে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: إِنَّ مِنْ نِعَمِ اللَّهِ عَلِيٍّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُوِفِّيَ فِي بَيْتِي وَفِي يَوْمِي وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي وَإِنَّ اللَّهَ جَمَعَ بَيْنَ رِيقِي وَرِيقِهِ عِنْدَ مَوْتِهِ دَخَلَ عَلَيَّ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ وَبِيَدِهِ سِوَاكٌ وَأَنَا مُسْنِدَةُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَأَيْتُهُ يَنْظُرُ إِلَيْهِ وَعَرَفْتُ أَنَّهُ يُحِبُّ السِّوَاكَ فَقُلْتُ: آخُذُهُ لَكَ؟ فَأَشَارَ بِرَأْسِهِ أَنْ نَعَمْ فَتَنَاوَلْتُهُ فَاشْتَدَّ عَلَيْهِ وَقُلْتُ: أُلَيِّنُهُ لَكَ؟ فَأَشَارَ بِرَأْسِهِ أَنْ نَعَمْ فَلَيَّنْتُهُ فَأَمَرَّهُ وَبَيْنَ يَدَيْهِ رَكْوَةٌ فِيهَا مَاءٌ فَجَعَلَ يُدْخِلُ يَدَيْهِ فِي الْمَاءِ فَيَمْسَحُ بِهِمَا وَجْهَهُ وَيَقُولُ: «لَا إِلَهَ إِلَّا الله إِنَّ للموتِ سَكَراتٍ» . ثمَّ نصب يَده فَجَعَلَ يَقُولُ: «فِي الرَّفِيقِ الْأَعْلَى» . حَتَّى قُبِضَ ومالت يَده. رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (4449) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (وَفِي يَوْمِي) আমার দিনে'। অর্থাৎ আমার পালার দিনে যাতে করে আমি তার খিদমাত করে সম্মানিত হতে পারি। “জামিউল উসূল” গ্রন্থে এসেছে, যেদিন রাসূল (সা.) -এর মৃত্যু রোগের সূচনা মাথা ব্যথার মাধ্যমে হয়, সেদিন তিনি মা আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। অতঃপর যেদিন মাথাব্যথা ও অসুস্থতা বেড়ে গেল সেদিন তিনি মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। সে সময় রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীগণের নিকট অসুস্থতার দিনগুলো মা আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে অবস্থানের জন্য সম্মতি ও আগ্রহ প্রকাশ করলে তারা সকলে তাকে অনুমতি প্রদান করেন। মৃত্যুরোগের তীব্রতা ১২ দিন ছিল। আর নবী (সা.) -এর মৃত্যু রবীউল আওয়াল মাসের সোমবার দিন চাশতের সময় হয়েছে। তারিখের ব্যাপারে কেউ কেউ ২ রবীউল আওয়াল বর্ণনা করেছেন। আবার বলা হয়েছে, তিনি ১২ রবীউল আওয়াল মৃত্যু বরণ করেছেন এবং অধিকাংশ বর্ণনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয়। (মিরক্কাতুল মাফাতীহ)
(وَبَيْنَ سَحْرِي وَنَحْرِي) “আমার বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে।” অর্থাৎ যখন রাসূল (সা.) -এর পবিত্র আত্মা তাঁর পবিত্র দেহ থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন তিনি মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বুক ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে মাথা রেখে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, সাহার হলো পেটের উপরিভাগে কণ্ঠনালির সাথে সংযুক্ত স্থানকে। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নাহার হলো বুকের উপরিভাগে হার ঝুলানোর স্থান। ইবনু হাজার বলেন, আস সাও হলো বক্ষ। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, আমার বক্ষ ও গলার মধ্যবর্তী স্থানে অর্থাৎ নবী (সা.) এই মৃত্যুবরণ করার সময় তার মাথা আমার বক্ষ ও গলার মাঝে ছিল। হাকিম ও ইবনু সা'দ-এর বর্ণনা যে, সে সময় রাসূল (সা.) -এর মাথা ‘আলী (রাঃ)-এর কোলে ছিল উক্ত বর্ণনার বিরোধী নয়। কেননা প্রথমত তারা দুজন যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে উক্ত রিওয়ায়াতকে বর্ণনা করেছেন তন্মধ্যে হতে কোন পদ্ধতিই এমন নয় যে, তা কোন ত্রুটি হতে মুক্ত। এ মত পোষণ করেন হাফিয ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। দ্বিতীয়ত যদি উক্ত পদ্ধতিকে সঠিক মেনে নেয়াও হয় তাহলে তার এ ব্যাখ্যা করা হবে যে, রাসূল (সা.) -এর মাথা ‘আলী (রাঃ)-এর কোলে তার মৃত্যুর পূর্বে ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(إِنَّ للموتِ سَكَراتٍ) “নিশ্চয় মৃত্যুর কষ্ট ভীষণ।” অর্থাৎ মৃত্যুর যন্ত্রণা খুবই কষ্টের যে কোন মানুষের জন্য। তা নবী রাসূলদের জন্যও কষ্টের। অতএব তোমরা সেই ভীষণ কষ্টের মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর। আর আল্লাহর কাছে সহজ মৃত্যু কামনা কর। শামায়িলে তিরমিযীতে মা আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, মৃত্যুর সময় আমি রাসূল (সা.)-কে দেখলাম যে, তিনি ব্যস্ত আছেন তার পাশে রাখা পানির পাত্র থেকে দু’হাতে পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মাসেহ করছেন আর বলছেন, হে আল্লাহ! আমাকে খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করুন। অথবা তিনি বলেন, মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে। আর তার এ কষ্টের কারণে তার মর্যাদা আরো বেশি করা হয়। তিনি তার হাতকে উঁচু করে দু'আ করার মতো করে অথবা ইশারা করার মতো করে আকাশের দিকে তুলে ছিলেন। আর বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমাকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে মিলিত করুন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
(وَ حَسُنَ اُولٰٓئِکَ رَفِیۡقًا) “আর তারা বন্ধু হিসেবে কতই না উত্তম”- (সূরা আন্ নিসা ৪: ৬৯)। বন্ধু হলো পথের সাথি। বলা হয় যে, আমার জন্য উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান নির্ধারণ করে দিন। আর সে স্থান বলতে তার জন্য নির্ধারিত মাকামে মাহমূদ উদ্দেশ্য। যার অর্থ আমাকে প্রতিষ্ঠিত থেকে যেখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিন। জাওহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আর রফীকিল আ'লা হলো, 'আল জান্নাত'। এ কথা বলেছেন ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ)। আর তা উচ্চ স্থান হওয়া থেকে খালি নয়। বলা হয়ে থাকে যে, আর রফীকিল আ'লা বলতে বুঝানো হয়েছে, আল্লাহর নামসমূহকে। কারণ তার মধ্যে নম্রতা ও দয়া আছে। এখানে (فعيل) শব্দটি (فاعل) অর্থে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়াশীল। আর এখানে (في) শব্দটি যোগ করেছেন। অধিক নিকটবর্তী হওয়ার জন্য। এখানে তার রবের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও রবের একাত্মতার ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬০-[৫] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক নবীকেই তার মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দুনিয়া ও পরকালের মাঝে কোন একটি গ্রহণ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) - যখন তাঁর অন্তিম রোগে আক্রান্ত হলেন, তখন তিনি কঠিন শ্বাসরুদ্ধ অবস্থার মুখোমুখী হন। সে সময় আমি তাকে কুরআনের এ আয়াত পড়তে শুনলাম, অর্থাৎ সে সমস্ত লোকেদের সাথে যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন, যথা- নবী, সিদ্দীক, শুহাদা ও সালিহীনগণ।’ তাতে আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁকে সেই ইচ্ছা স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «مامن نَبِيٍّ يَمْرَضُ إِلَّا خُيِّرَ بَيْنَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ» . وَكَانَ فِي شَكْوَاهُ الَّذِي قُبِضَ أَخَذَتْهُ بُحَّةٌ شَدِيدَةٌ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ من الصديقين والنبيين وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ. فَعَلِمْتُ أَنَّهُ خُيِّرَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4586) و مسلم (86 / 2444)، (6295) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (إِلَّا خُيِّرَ بَيْنَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ) “দুনিয়া ও আখিরাতের কোন একটিকে গ্রহণ করার ইখতিয়ার দেয়া হয়।” অর্থাৎ তাকে দুনিয়াতে আরো কিছুকাল বেঁচে থাকার সুযোগ গ্রহণ করার। অথবা আখিরাতের জীবনের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সকল নবীই আল্লাহর কাছে যাওয়ার সুযোগকে পছন্দ করেছেন। কারণ এটা উত্তম ও চিরস্থায়ী। কাজেই সকল নবী-রাসূলগণই এটাই পছন্দ করেছেন।
(الَّذِي قُبِضَ أَخَذَتْهُ بُحَّةٌ شَدِيدَةٌ) “রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন তার অন্তিম রোগে আক্রান্ত হলেন, তখন তিনি কঠিন শাসরুদ্ধ অবস্থার সম্মুখীন হন।” অর্থাৎ তাঁর কণ্ঠস্বরও মোটা হয়ে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা এমন রোগ যা কণ্ঠনালীতে হয়, আর স্বর পরিবর্তিত হয়ে মোটা হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, এখানে এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কাশি। কামূসে আছে, কাশি হলো এমন ঝাকি যা ফুসফুস ও তার আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কষ্ট দেয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬১-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর রোগ যখন বৃদ্ধি পেল এবং তিনি বেহুঁশ হতে লাগলেন, তখন ফাতিমাহ (রাঃ) বললেন, আহা! কত কষ্ট পাচ্ছেন আমার আব্বাজান। এ কথা শুনে তিনি (সা.) বললেন, আজকের পর তোমার আব্বাজানের ওপর আর কোন কষ্ট নেই। অতঃপর যখন তিনি (সা.) মৃত্যুবরণ করলেন, তখন ফাতিমা (রাঃ) বলতে লাগলেন, ’ওগো আমার আব্বাজান! রব আপনাকে আহ্বান করেছেন এবং তাতে সাড়া দিয়ে আপনিও তাঁর সান্নিধ্যে চলে গেলেন। ওগো আমার আব্বাজান! জান্নাতুল ফিরদাওস আপনার স্থান। হায় আমার আব্বাজান! আপনার তিরোধানের খবর আমি জিবরীলকে শুনাচ্ছি।’ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে যখন দাফন করা হলো, তখন ফাতিমা (রাঃ) বললেন, হে আনাস! তোমাদের অন্তর এটা কিভাবে সহ্য করল যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওপর তোমরা মাটি ঢাললে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَن أنس قَالَ: لما ثقل النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ يَتَغَشَّاهُ الْكَرْبُ. فَقَالَتْ فَاطِمَةُ: وَاكَرْبَ آبَاهْ فَقَالَ لَهَا: «لَيْسَ عَلَى أَبِيكِ كَرْبٌ بَعْدَ الْيَوْمِ» . فَلَمَّا مَاتَ قَالَتْ: يَا أَبَتَاهُ أَجَابَ رَبًّا دَعَاهُ يَا أَبَتَاهُ مَنْ جَنَّةُ الْفِرْدَوْسِ مَأْوَاهُ يَا أَبَتَاهُ إِلَى جِبْرِيلَ نَنْعَاهُ. فَلَمَّا دُفِنَ قَالَتْ فَاطِمَةُ: يَا أَنَسُ أَطَابَتْ أَنْفُسُكُمْ أَنْ تَحْثُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التُّرَابَ؟ رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (4462) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَيْسَ عَلَى أَبِيكِ كَرْبٌ بَعْدَ الْيَوْمِ) “তোমার আব্বাজানের ওপর আজকের পর আর কোন কষ্ট নেই।” অর্থাৎ কষ্ট ছিল কঠিন ব্যথা ও খুব যন্ত্রণার কারণে। আর আজকের দিনের পর থেকে তা থাকবে না। কারণ কষ্ট ব্যথা মানুষের শরীরের সাথে সম্পর্কিত। আর আজকের পর থেকে সব গঠনগত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। আর মৃত্যুর পর রূহের কোন সমস্যা বা দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। তিরমিযী বৃদ্ধি করেছেন, তোমার পিতার কাছে এমন জিনিস পৌছেছে যার থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কোন কেউ পালাতে পারে না।
আলোচ্য হাদীসটি থেকে বুঝা যায় যে, নবী (সা.) হায়াতুন্ নবী নন। বরং তাকে সাহাবীরা কবর দিয়েছিলেন এমতাবস্থায় যে, তিনি মৃত। তার দুনিয়ার জীবন শেষ হয়েছিল। তাইতো ফাতিমাহ্ (রাঃ) বলেন, হে আনাস! তোমরা কিভাবে আমার পিতার বুকের উপর মাটি চাপাতে পেরেছ! (সম্পাদকীয়)