লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৮-[৩] ’উকবাহ্ ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) উহুদ যুদ্ধে নিহত শহীদদের ওপর আট বছর পর (জানাযার) সালাত আদায় করলেন। সেদিনের সালাতে মনে হলো তিনি (সা.) যেন জীবিত এবং মৃতদেরকে বিদায় করছেন। অতঃপর তিনি মিম্বারে আরোহণ করে বললেন, আমি তোমাদের সম্মুখে অগ্রবর্তী লোক এবং আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী এবং তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাতের স্থান হলো হাওযে কাওসার। আমি এখন আমার এ স্থানে দাঁড়িয়েও হাওযে কাওসার দেখতে পাচ্ছি। আর পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ অবশ্যই আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি তোমাদের ওপর এই আশঙ্কা করি না যে, আমার পরে তোমরা সকলে শিরকে লিপ্ত হয়ে যাবে; বরং আমি দুনিয়ার বিষয়ে তোমাদের প্রতি আশঙ্কা করি যে, তোমরা তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। কোন কোন বর্ণনাকারী এর সাথে এ বাক্যগুলোও বৃদ্ধি করেছেন, অতঃপর তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে এবং এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে, যেভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ: صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى قَتْلَى أحد بعد ثَمَانِي سِنِينَ كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ ثُمَّ طَلَعَ الْمِنْبَرَ فَقَالَ: «إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ وَإِنِّي لَأَنْظُرُ إِلَيْهِ من مَقَامِي هَذَا وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ وَإِنِّي لَسْتُ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بعدِي وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا» . وَزَادَ بَعْضُهُمْ:: «فَتَقْتَتِلُوا فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ من كَانَ قبلكُمْ» . مُتَّفق عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (4042) و مسلم (30 / 2296 و الزیادۃ لہ 31 / 2296)، (5976) ۔ (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উহুদের যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) তাদের জানাযার সালাত আদায় করান আট বছর পরে। অর্থাৎ তাদের দাফন করার আট বছর পরে। কথিত আছে যে, নবী (সা.) তাদের জানাযার সালাত আদায় করেন। এটা নবী (সা.) -এর ও উহুদের শহীদদের বৈশিষ্ট্য ছিল। ইমাম শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে জানাযার সালাত বলতে দু'আ উদ্দেশ্য।
(كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ) “তার এ সালাত যেন জীবিত ও মৃতদের জন্য বিদায়ী সালাত।”
মুহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ নবী (সা.) তাদের জন্য ইস্তিগফার করেন, আর তাদের জন্য তার ইস্তিগফার করা হলো তাঁর মৃত্যুর সময় কাছে আসা।
(إِنِّي بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فَرَطٌ) “আমি তোমাদের সম্মুখে (হাশরের মাঠের দিকে) অগ্রগামী ব্যক্তি।”
ঐ ব্যক্তিকে ‘আরবীতে ফারাত্ব বলা হয়, যে কাফেলাকে পিছনে ফেলে রেখে নিজে সবার আগে পৌছে যায়, যাতে সেখানে কাফেলার জন্য পূর্ব হতেই থাকা, খাওয়া ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থা করতে পারে। অতএব নবী (সা.) -এর এ ঘোষণার মাধ্যমে যেন তার ইচ্ছা ছিল তিনি তাদের জন্য সুপারিশকারী হবেন, কারণ তিনি তাদের আগে যাচ্ছেন। আর সুপারিশকারী ব্যক্তি সুপারিশপ্রাপ্তের অগ্রগামী হয়।
ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর আশ শামায়িলে বর্ণনা করেছেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূল (সা.) -কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি দুটি সন্তানকে আগে প্রেরণ করবে সে ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তখন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি আপনার উম্মতের কোন ব্যক্তি একটিকে আগে প্রেরণ করে তবে? যদি কোন কেউ একটি প্রেরণ করে তবুও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তখন মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি কোন অগ্রগামীই না থাকে তবে? তখন নবী (সা.) বলেন, তখন আমিই আমার উম্মতের জন্য অগ্রগামী হয়ে যাব। তারা আমার মতো আর কোন সাওয়াবপ্রাপ্ত হবে না।
(وَأَنَا عَلَيْكُمْ شَهِيدٌ) “আর আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষী।” অর্থাৎ আমি তোমাদের ছেড়ে যদিও যাচ্ছি; কিন্তু তোমাদের অবস্থা ও ব্যাপার হতে সম্পর্কহীন ও অবগত থাকব না, কেননা তোমাদের ‘আমল ও অবস্থাদি সেখানে আমার সামনে পেশ করা হবে। অথবা আমি তোমাদের সাক্ষী। আমি সেখানে তোমাদের আনুগত্য এবং তোমাদের ইসলাম গ্রহণের সাক্ষ্য দিব। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(وَإِنَّ مَوْعِدَكُمُ الْحَوْضُ) “তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাতের স্থান হবে হাওযে কাওসার।”
অর্থাৎ আখিরাতের হাওযে কাওসারে যেখানে পৌছে ভালো ও মন্দ এবং মু'মিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্য সূচিত হবে। তদ্রুপ তোমাদেরকে হাশরের ময়দানে যে বিশেষ শাফা'আতের ওয়াদা আমি করেছি তা হবে হাওযে কাওসারে। সেখানে শুধুমাত্র মুমিন বান্দাদের আমার সুপারিশের মাধ্যমে হাওযে কাওসার হতে পরিতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে।
(وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الْأَرْضِ) “আর অবশ্যই আমাকে পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের চাবিসমূহ প্রদান করা হয়েছে।” অর্থাৎ আমার পরে আমার উম্মতের মুজাহিদদের হাতে যে সকল বড় বড় এলাকা ও শহর বিজয় হবে এবং সেখানকার লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করবে, সে সকল এলাকার ধনভাণ্ডার আমার উম্মতের আয়ত্বে এসে যাবে।
(وَلَكِنِّي أخْشَى عَلَيْكُم الدُّنْيَا أَن تنافسوها فِيهَا) “তবে আমি তোমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করি তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।” এর দ্বারা রাসূল (সা.) এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, আমার পরেও তোমরা ইনশা-আল্ল-হ ঈমান ও দীনের উপর স্থির থাকবে। তবে তোমরা দুনিয়ার মূল্যবান জিনিসের প্রতি সম্পূর্ণরূপেই ঝুকে পড়বে। তোমাদের কর্তব্য ছিল তার প্রতি সম্পূর্ণরূপে না ঝুকা। কারণ অস্থায়ী নি'আমাতকে নিয়ে কখনো প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত নয়। বরং প্রতিযোগিতা হওয়া চাই স্থায়ী জিনিসকে নিয়ে। যেমন- মহান আল্লাহ বলেছেন, (وَ فِیۡ ذٰلِکَ فَلۡیَتَنَافَسِ الۡمُتَنَافِسُوۡنَ) “আর নি'আমাতের প্রত্যাশীদের অর্থাৎ ঈমানদারদের জন্য উচিত যে, তারা তারই (আখিরাতের) নি'আমাতের প্রত্যাশী ও আগ্রহী হবে।” (সূরা আল মুত্বাফফিফীন ৮৩: ২৬)
(فَتَهْلِكُوا كَمَا هَلَكَ من كَانَ قبلكُمْ) “তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে, যেরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে আগের লোকেরা।” অর্থাৎ সম্পদ নিয়ে তাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এতে রাসূল (সা.) -এর মু'জিযাহ্ আছে। কারণ তিনি এটা সংবাদ দিয়েছিলেন যে, তার উম্মাত পৃথিবীর ধনভাণ্ডারের মালিক হবে, আর তা হয়েছে। আর তারা কখনো মুরতাদ হয়ে যাবে না। আর আল্লাহ তাদেরকে মুরতাদ হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। আর তারা দুনিয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী হবে ও প্রতিযোগিতা করবে। বাস্তবেও তাই ঘটেছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মাযাহিরে হাক্ শারহে মিশকাত ৭ম খণ্ড, ১৯৬-১৯৭ পৃষ্ঠা)।