পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫৩-[১০] ’উরওয়াহ্ ইবনুয যুবায়র (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। আরওয়া বিনতু আওস মারওয়ান ইবনু হাকাম-এর কাছে সা’ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ’আমর ইবনু নুফায়ল-এর বিরুদ্ধে মুকাদ্দামাহ দায়ের করে এবং সে দাবি করে যে, তিনি তার কিছু ভূমি দখল করে নিয়েছেন। সাঈদ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে এ বিষয়ে একটি হাদীস শুনার পরও আমি কি তার জমিনের কিছু অংশ দখল করতে পারি? তখন মারওয়ান বললেন, সে হাদীসটি কি আপনি যা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছেন? সাঈদ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে লোক কারো এক বিঘত পরিমাণ ভূমি অন্যায়ভাবে কেড়ে নেবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সাত তবক অবধি বেড়ি বানিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেবেন। এ কথা শুনে মারওয়ান তাঁকে বললেন, এ হাদীস শুনার পর আমি আর কোন প্রমাণ আপনার কাছ হতে চাব না। অতঃপর সাঈদ (রাঃ) দু’আ করলেন, হে আল্লাহ! এ মহিলাটি যদি তার দাবিতে মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে আপনি তার চোখ অন্ধ করে দেন এবং উক্ত ভূমিতেই তাকে ধ্বংস করুন। বর্ণনাকারী উরওয়া বলেন, মৃত্যুর আগেই সে মহিলাটি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং একদিন সে উক্ত ভূমিতে হাঁটছিল, হঠাৎ সে সেখানে একটি গর্তে পড়ে মৃত্যুবরণ করল। (বুখারী ও মুসলিম)
আর মুসলিমের এক বর্ণনাতে আছে, যা মুহাম্মাদ ইবনু যায়দ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে উক্ত হাদীসের মর্মার্থ বর্ণিত, তিনি উক্ত মহিলাটিকে অন্ধ অবস্থায় দেখেছেন, সে দেয়াল হাতড়িয়ে চলত এবং বলত আমার উপর সাঈদের বদদোয়া লেগেছে। অতঃপর একদিন উক্ত মহিলাটি তার গৃহের সে বিবাদময় ভূমির একটি কূপের কাছ দিয়ে যেতেই তাতে পড়ে গেল এবং তা-ই তার কবর হলো।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب الكرامات)
عَن عُرْوَة بن الزبير أَنَّ سَعِيدُ بْنُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ نُفَيْلٍ خاصمته أروى بنت أويس إِلَى مَرْوَانَ بْنِ الْحَكَمِ وَادَّعَتْ أَنَّهُ أَخَذَ شَيْئًا مِنْ أَرْضِهَا فَقَالَ سَعِيدٌ أَنَا كُنْتُ آخُذُ مِنْ أَرْضِهَا شَيْئًا بَعْدَ الَّذِي سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وماذا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ أَخَذَ شِبْرًا مِنَ الْأَرْضِ ظُلْمًا طُوِّقَهُ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ فَقَالَ لَهُ مَرْوَانُ لَا أَسْأَلُكَ بَيِّنَةً بَعْدَ هَذَا فَقَالَ اللَّهُمَّ إِن كَانَت كَاذِبَة فَعم بَصَرَهَا وَاقْتُلْهَا فِي أَرْضِهَا قَالَ فَمَا مَاتَتْ حَتَّى ذهب بصرها ثمَّ بَينا هِيَ تَمْشِي فِي أَرْضِهَا إِذْ وَقَعَتْ فِي حُفْرَةٍ فَمَاتَتْ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بِمَعْنَاهُ وَأَنَّهُ رَآهَا عَمْيَاءَ تَلْتَمِسُ الْجُدُرَ تَقُولُ: أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعِيدٍ وَأَنَّهَا مَرَّتْ على بئرٍ فِي الدَّار الَّتِي خاصمته فَوَقَعت فِيهَا فَكَانَت قبرها
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3198) و مسلم (139 ، 136 / 1610)، (4132 و 4134) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায় যে জমিনের সাতটি স্তর আছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
(اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ وَّ مِنَ الۡاَرۡضِ مِثۡلَهُنَّ) “আর আল্লাহ হলেন তিনি যিনি সাত আসমান অনুরূপ জমিনকে সৃষ্টি করেছেন”- (সূরাহ আত্ব ত্বলাক্ব ৬৫: ১২)। আর যারা বলেন, সাতটি অঞ্চল তারা ভুল করেন। আর যদি তা অনুরুপ হত তবে তিনি যালিম ব্যক্তির গলায় জমিনের স্তর ব্যতীত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এক বিঘত করে ঝুলিয়ে দিতেন। আর তিনি সাত জমিন থেকে তার গলায় ঝুলিয়ে দিবেন তার কারণ হলো বাকী জমিন গুলো এই জমিনের অনুগামী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
নেককার মানুষের দু'আ যে বিফলে যায় না আলোচ্য হাদীসটি তার জাজ্বল্য প্রমাণ। সা'ঈদ ইবনু (রাঃ)-আশারায়ে মুবাশশিরাহ্ তথা যে দশজন সাহাবী দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তাদের একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন ‘উমার (রাঃ)-এর ভগ্নিপতি। যেহেতু আলোচ্য হাদীসে জনৈক মহিলা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল, তাই আল্লাহ দুনিয়াতেই সা'ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর দু'আ কবুল করে উক্ত মহিলাকে লাঞ্ছিত করেছিলেন। আর এটা সা'ঈদ (রাঃ)-এর একটি বড় কারামাত ছিল। (সম্পাদকীয়)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫৪-[১১] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। একবার ’উমার (রাঃ) একদল সৈন্য অভিযানে প্রেরণ করলেন। আর সারিয়াহ্ (ইবনু যানীম) নামক এক লোককে সে দলের প্রধান নিযুক্ত করলেন। তখন একদিন ’উমার (রাঃ) মসজিদে নাবাবীতে খুৎবা দিচ্ছিলেন। আকস্মাৎ তিনি খুত্ববার মাঝখানে খুব উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠলেন, “হে সারিয়া আল জাবাল!’ এ ঘটনার কয়েকদিন পরে উক্ত সেনাদলের পক্ষ হতে একজন বার্তাবাহক মদীনায় আগমন করে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আমরা শত্রুদের মুখোমুখি হলে (প্রথমে) তারা আমাদেরকে পরাজিত করে। এমন সময় হঠাৎ জনৈক ঘোষণাকারীর ’হে সারিয়া আল জাবাল উচ্চ শব্দ শুনতে পাই, তৎক্ষণাৎ আমরা (নিকটস্থ) পাহাড়টিকে পশ্চাতে রেখে শত্রুর সাথে লড়তে থাকি। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে পরাস্ত করেন। (বায়হাক্বী’র দালায়িলুন নুবুওয়্যাহ্ গ্রন্থে)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب الكرامات)
وَعَن ابْن عمر أَنَّ عُمَرَ بَعَثَ جَيْشًا وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلًا يُدْعَى سَارِيَةَ فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَقِيَنَا عَدُوُّنَا فَهَزَمُونَا فَإِذَا بِصَائِحٍ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ الْجَبَلَ. فَأَسْنَدْنَا ظُهُورَنَا إِلَى الْجَبَلِ فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي دَلَائِل النُّبُوَّة
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی دلائل النبوۃ (6 / 380) * فیہ محمد بن عجلان مدلس و عنعن ولہ طرق عند ابن عساکر (تاریخ دمشق 22 / 18 ، 19) وغیرہ و کلھا ضعیفۃ و مرسلۃ ، لا یصح منھا شیٔ و اخطا من صححہ اوحسنہ !
ব্যাখ্যা: এটা ছিল নাহারাওয়ান্দ যুদ্ধের ঘটনা।
(فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ) একদিন ‘উমার (রাঃ) খুৎবা দিচ্ছিলেন। অর্থাৎ, তিনি মাসজিদে নববীতে খুৎবা দিচ্ছিলেন উপস্থিত জনতার সম্মুখে যেখানে বড় বড় সম্মানিত সাহাবী ও তাবিঈগণ ছিলেন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উসমান (রাঃ), ‘আলী (রাঃ), ঘটনাটি ছিল তার একটা সুস্পষ্ট কারামাত এবং তার খিলাফাত যে সত্য তার একটা সুস্পষ্ট প্রমাণ।
তিনি যুদ্ধক্ষেত্র দেখে সেনাপতিকে ডেকে বললেন, হে সারিয়াহ্! পাহাড়ের দিকটা দেখ। আর তাকে পিছন দিকে রেখে যুদ্ধ কর। তার এ ডাক সকল যোদ্ধা শুনে সতর্ক হয়ে যুদ্ধ করেছিল। ফলে বিজয় পেয়েছিলেন মুসলিমগণ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা
৫৯৫৫-[১২] নুবায়হাহ ইবনু ওয়াহব (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। একদিন কা’ব (রহিমাহুল্লাহ) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর কাছে গেলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে আলোচনা হতে থাকলে কা’ব (রহিমাহুল্লাহ) বললেন, এমন কোন দিন অতিবাহিত হয় না, যেদিন ভোরে সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) আকাশ হতে অবতরণ করেন না। এমনকি তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কবরকে ঘেরাও করে নিজেদের পাখাকে বিছিয়ে দেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি দরূদ পাঠ করতে থাকেন। অবশেষে সন্ধ্যা হলে তাঁরা উর্ধ্বে গমন করেন। আবার সে পরিমাণ মালাক (ফেরেশতা) অবতরণ করেন এবং তাঁরাও ঐরূপ করেন। অবশেষে যখন মদীনাহ ফেটে যাবে, তখন তিনি কবর হতে সত্তর হাজার ফেরেশতার সমারোহে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবেন। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ ( بَاب الكرامات)
وَعَنْ نُبَيْهَةَ بْنِ وَهْبٍ أَنَّ كَعْبًا دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ فَذَكَرُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ كَعْبٌ: مَا مِنْ يَوْمٍ يَطْلُعُ إِلَّا نَزَلَ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنَ الْمَلَائِكَةِ حَتَّى يَحُفُّوا بِقَبْرِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضْرِبُونَ بِأَجْنِحَتِهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا أَمْسَوْا عَرَجُوا وَهَبَطَ مِثْلُهُمْ فَصَنَعُوا مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا انْشَقَّتْ عَنْهُ الْأَرْضُ خَرَجَ فِي سَبْعِينَ أَلْفًا مِنَ الْمَلَائِكَةِ يَزُفُّونَهُ. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الدارمی (1 / 44 ح 95) * فی سماع نبیھۃ بن وھب من کعب نظر ولم یدرک عائشۃ ایضًا فالسند منقطع ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: কা'ব হলেন একজন বড় তাবি'ঈ। লেখক বলেন, তিনি হলেন কা'ব ইবনু মাতি। তাঁর উপনাম হলো আবূ ইসহাক। তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন কা'ব আল আহবার নামে। তিনি নবী (সা.) -এর যুগ পেয়েছিলেন কিন্তু তার সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেননি। তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর যামানায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাদীস বর্ণনা করেন ‘উমার (রাঃ), সুহায়ব (রাঃ) ও ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে। তিনি হিমসে ৩২ হিজরীতে ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালে মারা যান।
মালায়িকার (ফেরেশতাদের) অবতরণের কথা কা'ব (রহিমাহুল্লাহ) হয়তো পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণী হতে জেনেছিলেন, কিংবা পূর্বযুগের বয়োবৃদ্ধ ও আসমানী কিতাবের ‘আলিমদের থেকে শুনে থাকবেন, অথবা কারামাত দ্বারা অবগত হয়েছেন। আর শেষের সম্ভাবনাটাই অধিক বিশুদ্ধ মনে হয়। কেননা এতে তাঁর কারামাত প্রকাশ পায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)