পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
আবূ বকর ইবনু ’আরাবী আল মালিকী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ তা’আলার যেমন গুণবাচক এক হাজার নাম রয়েছে অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এরও গুণবাচক নাম রয়েছে। এর ভিতর থেকে ষাটের কিছু বেশি নাম তিনি উল্লেখ করেছেন।
আবূ হুসায়ন ইবনু ফারিস (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, আমাদের নবী (সা.) -এর ২২টি গুণবাচক নাম রয়েছে যা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
’আল্লামাহ্ সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ)-এর (الْبَهْجَةُ السَّوِيَّةُ فِي الْأَسْمَاءِ النَّبَوِيَّةِ) গ্রন্থে তিনি ৫০০-এর কিছু বেশি গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে সংক্ষেপে নিরানব্বইটি নাম উল্লেখ করেছেন।
হাদীসে যেগুলো বর্ণিত হয়েছে সেগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো। যেমন: (الشَّافِيَةُ وَالْوَافِيَةُ وَالْكَافِيَةُ) অর্থাৎ- আরোগ্য দানকারী, পরিপূর্ণভাবে দানকারী ও যিনি সকল ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
৫৭৭৬-[১] জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি, আমার অনেকগুলো নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি মাহী। আল্লাহ তা’আলা আমার দ্বারা কুফকে নিশ্চিহ্ন করবেন। আমি ’আল হাশির’, (কিয়ামতের দিন) মানব জাতিকে আমার পেছনে একত্রিত করা হবে। আর আমি হলাম আল ’আকিব এবং ’আকিব ঐ লোক, যার পরে আর কোন নবী নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعَمٍ قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إنَّ لي أَسْمَاءً: أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا أَحْمَدُ وَأَنَا الْمَاحِي الَّذِي يَمْحُو اللَّهُ بِي الْكُفْرَ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِي يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى قَدَمِي وَأَنَا الْعَاقِبُ . وَالْعَاقِب: الَّذِي لَيْسَ بعده شَيْء. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3532) و مسلم (124 / 2354)، (6105) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (إنَّ لي أَسْمَاءً) রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বিভিন্ন নামে-গুণে ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দ্বারা সম্বোধন করা হয়েছে। তার অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। এগুলোর ভিতরে মুহাম্মাদ নামটি অনেক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কেননা তাঁর চারিত্রিক গুণের সকলেই প্রশংসা করেছেন।
(وَأَنَا الْمَاحِي الَّذِي يَمْحُو اللَّهُ بِي الْكُفْرَ) আর আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন, কুফরী অন্ধকারাচ্ছন্নতা দূর করার জন্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) পৃথিবীতে সুস্পষ্ট আলো (কুরআন, সুন্নাহ) নিয়ে আগমন করেছেন, এমনিভাবে কুফরীশক্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: সম্ভাবনা রয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দলীলের মাধ্যমে বিজয় লাভ করা, প্রধান্য পাওয়া অন্যান্য ধর্মের উপর।
এ মর্মে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন: (لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّهٖ) “তিনি সব দীনের উপর একে বিজয়ী করেন।” (সূরাহ আত্ তাওবাহ্ ৯: ৩৩)।
(أَنَا الْعَاقِبُ وَالْعَاقِبُ الَّذِىْ لَيْسَ بَعْدَهُ نَبِىٌّ) শারহে মুসলিমে ইবনুল আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যে তার পূর্ববর্তী লোকেদের প্রতিনিধি করবেন তাকে (الْعَاقِبُ) বলা হয়। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা, ২৩৫৪/১২৪; মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৭৭-[২] আবূ মূসা আল আশ’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে তাঁর স্বীয় নামসমূহ বর্ণনা করতেন। তখন তিনি (সা.) বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ, আহমাদ, মুকফফী (সকলের পশ্চাতে আগমনকারী), হাশির (সমবেতকারী) এবং আমি নবীয়ে তাওবাহ্ ও নবীয়ে রহমত অর্থাৎ তাওবাহ ও রহমতের নবী। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَن أبي مُوسَى الْأَشْعَرِيّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَمِّي لَنَا نَفْسَهُ أَسْمَاءً فَقَالَ: «أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَحْمَدُ وَالْمُقَفِّي وَالْحَاشِرُ وَنَبِيُّ التَّوْبَةِ وَنَبِيُّ الرَّحْمَة» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (126 / 2355)، (6108) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নামসমূহের মাঝে একটি নাম বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি (সা.) সকল রাসূলদের পিছনে আগমনকারী। তারপরে আর কোন নবী পৃথিবীতে আগমন করবেন না।
বলা হয়: রাসূলুল্লাহ (সা.) তার পূর্ববর্তী নবী রাসূলদের পথের অনুসারী। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, “আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন।" (সূরা আল আ'আম ৬: ৯০)।
(وَالْحَاشِرُ وَنَبِيُّ التَّوْبَةِ) অর্থাৎ হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষদেরকে, সমবেতকারী ও অত্যধিক তাওবাকারী। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ তা'আলার নিকট অধিক পরিমাণে তাওবাহ্ করতেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন যে, আমি দৈনিক সত্তর হতে একশত বার তাওবাহ্ করে থাকি। অতএব আমাদেরকে বেশি বেশি তাওবাহ্ করতে হবে।
(وَنَبِيُّ الرَّحْمَة) রাসূলুল্লাহ (সা.) মানব, জিন, জীবজন্তু, জড় পদার্থসমূহ সকলের জন্য রহমতস্বরূপ ছিলেন।
এ মর্মে মহান আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা দেন, “আমি তো তোমাকে বিশ্বগতের প্রতি রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (সূরা আল আম্বিয়া- ২১ : ১০৭)। রাসূলুল্লাহ (সা.) হাদীসে বলেছেন, (إِنَّمَا أَنَا رَحْمَةٌ مُهْدَاةٌ) আল্লাহ তা'আলা আমাকে রহমত ও হিদায়াতকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন। (মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৭৮-[৩] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) - (সাহাবীদেরকে) বললেন, এতেও কি তোমরা আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ না যে, আল্লাহ তা’আলা কিভাবে কুরায়শদের গালমন্দ ও অভিসম্পাতকে আমার ওপর হতে সরিয়ে দিয়েছেন? তারা ’মুযাম্মাম’ (নিন্দিত) নামে গালাগালি করে এবং ’মুযাম্মাম’-কে অভিসম্পাত দেয়। অথচ আমি মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত) মুযাম্মাম নই। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا تَعْجَبُونَ كَيْفَ يَصْرِفُ اللَّهُ عَنِّي شَتْمَ قُرَيْشٍ وَلَعْنَهُمْ؟ يَشْتُمُونَ مُذَمَّمًا وَيَلْعَنُونَ مُذَمَّمًا وَأَنَا مُحَمَّدٌ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (3533) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: মক্কার কাফির মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে (مُذَمَّمًا) “মুযাম্মাম” বলত এবং গালমন্দ করত। যার অর্থ হলো নিন্দিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চারিত্রিক গুণাবলির ভিতরে নিন্দনীয় কোন গুণাবলি ছিল না। কুরায়শদের গালমন্দ তার ওপর পতিত হয়নি। আবূ লাহাব-এর স্ত্রী উম্মু জামিলা আরো বিনতু হারব তাঁর গালমন্দ করে কবিতা আবৃত্তি করেন।
(مُذَمَّمًا قَلَيْنَا...وَدِينَهُ أَبَيْنَاوَأَمْرَهُ عَصَيْنَا) আমরা তার গালমন্দ করতাম, তার দীনকে অস্বীকার করতাম এবং তাঁর আদেশকে অমান্য করতাম।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৭৯-[৪] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার এবং দাড়ির আগায় সামান্য কিছু শুভ্রতা দেখা দিয়েছিল। যখন তিনি তাতে তেল লাগাতেন তখন তা প্রকাশ পেত। আর যখন কেশরাজি বিক্ষিপ্ত হত, তখন তা প্রকাশ পেত। তাঁর দাড়ি ছিল খুব বেশি। তখন এক লোক বলল, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মুখমণ্ডল ছিল তলোয়ারের মতো। তিনি বললেন, না; বরং তা ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মতো এবং তাঁর চেহারা ছিল গোলগাল। আর আমি তাঁর কাঁধের কাছে কবুতরের ডিমের মতো মোহরে নুবুওয়্যাতও দেখতে পেয়েছি, তার রং ছিল তার গায়ের রংয়ের সাদৃশ্য।
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ شَمِطَ مُقَدَّمُ رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ وَكَانَ إِذَا ادَّهَنَ لَمْ يَتَبَيَّنْ وَإِذَا شَعِثَ رَأْسُهُ تَبَيَّنَ وَكَانَ كَثِيرَ شَعْرِ اللِّحْيَةِ فَقَالَ رَجُلٌ: وَجْهُهُ مِثْلُ السَّيْفِ؟ قَالَ: لَا بَلْ كَانَ مِثْلَ الشَّمْسِ وَالْقَمَرِ وَكَانَ مُسْتَدِيرًا وَرَأَيْتُ الْخَاتَمَ عِنْدَ كَتِفِهِ مِثْلَ بَيْضَة الْحَمَامَة يشبه جسده . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (109 / 2344)، (6084) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার অগ্রভাগের কিছু চুল সাদা ছিল। যখন সেগুলোকে চিরুনি করত, কালো চুলের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে তা বুঝা যেত না।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন চুলে তেল লাগাতেন মাথার চুলগুলো সুন্দরভাবে চিরুনি করতেন সাদা চুল কম হওয়ার কারণে তা বুঝা যেত না। আর যখন চুলগুলো এলোমেলো হত তখন বুঝা যেত যে, কিছু সাদা চুল আছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কয়েকটি চুল সাদা ছিল। তাঁর বর্ণনা সম্পর্কে সুনান ইবনু মাজাহ’য় বর্ণিত আছে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) -এর দাড়ির সম্মুখভাগে মাত্র সতের বা বিশটি সাদা চুল দেখেছেন। (ইবনু মাজাহ হা, ৩৬২৯) । ইবনু উমার এক বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বার্ধক্য বলতে ছিল বিশটা সাদা চুল ছিল।
(ইবনু মাজাহ হা, ৩৬৩০) তলোয়ারের মতো উজ্জ্বল লম্বা হওয়ার ধারণা হতে পারে। তাই জাবির এই লোকটির কথা পাল্টিয়ে বললেন, তা উজ্জ্বল ছিল, তবে চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় গোলগাল ছিল। অবশ্য লম্বাও ছিল, খাটো ছিল না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮০-[৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু সারজাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি নবী (সা.) -কে দেখেছি এবং আমি তার সাথে রুটি ও মাংস খেয়েছি অথবা বললেন, আমি ’সারীদ’ খেয়েছি। অতঃপর আমি তার পিছনে গিয়ে ঘোরাফেরা করতে লাগলাম। তখন তাঁর উভয় কাঁধের মাঝামাঝি বাম কাঁধের উপরিভাগে মুষ্টির মতো (গোলাকার) মোহরে নুবুওয়্যাত দেখলাম। তার উপরে মাস-এর মতো অনেকগুলো তিল ছিল। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَن عبدِ الله بن سرجسٍ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا - أَوْ قَالَ: ثَرِيدًا - ثُمَّ دُرْتُ خَلْفَهُ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتَمِ النُّبُوَّةِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ عِنْدَ نَاغِضِ كَتِفِهِ الْيُسْرَى جُمْعًا عَلَيْهِ خيلال كأمثال الثآليل. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (112 / 2346)، (6088) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (أَكَلْتُ مَعَهُ خُبْزًا وَلَحْمًا) হাদীস বর্ণনাকারী রাবীর নিকট সন্দেহ হয়েছে যে, তিনি (ثرِيد) খাবার খেয়েছেন, না (حَيْسِ) খাবার খেয়েছেন।
(ثرِيد) বলা হয় ঝোলে ভিজানো টুকরা টুকরা রুটি, রুটি ও গোশতের মণ্ডবিশেষ।
(حَيْسِ) বলা হয় এক প্রকার মিলানো খাদ্য, যা খেজুর ঘি ছাতু দিয়ে তৈরি করা খাবার।
(শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা. ২৩৪৬/১১২, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮১-[৬] উম্মু খালিদ বিনতু খালিদ ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী (সা.) -এর নিকট কিছু কাপড় আনা হলো। এর মধ্যে কালো রঙের একখানা ছোট পশমি চাদরও ছিল। তখন তিনি (সা.) বললেন, উম্মু খালিদ-কে আমার কাছে নিয়ে আসো। অতএব তাকে বহন করে নিয়ে আসা হলো। নবী (সা.) চাদরখানা নিজের হাতে নিলেন এবং তাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন, এটা পুরাতন ও নিকৃষ্ট হওয়া পর্যন্ত পরিধান কর, অতঃপর তা পুরাতন ও নিকৃষ্ট হওয়া অবধি পরিধান কর। আর তাতে সবুজ কিংবা হলুদ রংয়ের নকশি করা ছিল। অতঃপর তিনি বললেন, হে উম্মু খালিদ! এটা (কতই না) সুন্দর। হাবশী। ভাষায় ’সানাহ’ শব্দ সুন্দরের জন্য ব্যবহার হয়। উম্মু খালিদ এবং বলেন, এরপর আমি রাসূল (সা.) -এর মোহরে নুবুওয়্যাত স্পর্শ করে খেলতে লাগলাম। আমার পিতা তখন আমাকে ধমক দিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) (আমার পিতাকে) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। অর্থাৎ তাকে এমন করতে দাও। (বুখারী)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ أُمِّ خَالِدٍ بِنْتِ خَالِدِ بْنِ سَعِيدٍ قَالَتْ: أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثِيَابٍ فِيهَا خَمِيصَةٌ سَوْدَاءُ صَغِيرَةٌ فَقَالَ: «ائْتُونِي بِأُمِّ خَالِدٍ» فَأُتِيَ بِهَا تُحْمَلُ فَأَخَذَ الْخَمِيصَةَ بِيَدِهِ فَأَلْبَسَهَا. قَالَ: «أَبْلِي وَأَخْلِقِي ثُمَّ أَبْلِي وَأَخْلِقِي» وَكَانَ فِيهَا عَلَمٌ أَخْضَرُ أَوْ أَصْفَرُ. فَقَالَ: «يَا أُمَّ خَالِدٍ هَذَا سِنَاهْ» وَهِيَ بالحبشيَّةِ حسنَة. قَالَت: فذهبتُ أَلعبُ بخاتمِ النبوَّةِ فز برني أُبَيٍّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دعها» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (3071) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: উম্মু খালিদ (রাঃ) -এর পরিচয়: বলা হয় উম্মু খালিদ বিনতু খালিদ ইসলাম গ্রহণ করেছেন, আবূ বাকর (রাঃ) -এর পরে। ইসলাম গ্রহণ করার পর্যায়ে তিনি তৃতীয় বা চতুর্থতম ব্যক্তি, উম্মু খালিদ তাঁর উপাধি। এই নামে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন, তিনি হাবশায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকে ছোট অবস্থায় মদীনায় আসেন। তাকে জুবায়র ইবনু 'আওয়াম (রাঃ) বিবাহ করেন। (أَلعبُ بخاتمِ النبوَّةِ) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট কিছু চাদর নিয়ে আসা হলো। রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মু খালিদ-কে তার কাছে নিয়ে আসতে বললেন, তাকে একখানা চাদর প্রদান করে তার জন্য দু'আ করলেন।
বলা হয়: রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দীর্ঘ আয়ুর জন্য দু'আ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে চাদর নিয়ে যাওয়ার সময় উম্মু খালিদ নবী (সা.) -এর কাঁধে মোহরে নুবুওয়্যাত স্পর্শ করে খেলতে ছিলেন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় নবী (সা.) -এর কাঁধে নুবুওয়্যাতের মোহর ছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮২-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) অতিরিক্ত লম্বাও ছিলেন না এবং খাটোও ছিলেন না, তিনি ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার শ্যাম বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর মাথার চুল খুব বেশি কোঁকড়ানো ছিল না এবং সোজাও ছিল না। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে চল্লিশ বছর বয়সে নুবুওয়্যাত দান করেছেন। অতঃপর তিনি (সা.) মক্কায় দশ বছর এবং মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেন। আর আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ষাট বছর বয়সে মৃত্যু দান করেন। অথচ তখন তাঁর মাথার চুল ও দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা হয়নি।
অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) নবী (সা.) -এর আকৃতির বর্ণনায় বলেছেন, তিনি লোকেদের মাঝে মধ্যম ছিলেন। লম্বাও ছিলেন না এবং খাটোও ছিলেন না। তাঁর দেহের রং ছিল উজ্জ্বল। বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথার চুল উভয় কানের মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত পৌঁছত।
অপর এক বর্ণনায় আছে, কেশরাজি উভয় কানের এবং কাঁধের মাঝামাঝিতে ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারীর অপর এক বর্ণনাতে আছে- আনাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর মাথা ছিল বড় এবং উভয় পায়ের পাতা ছিল মাংসে পরিপূর্ণ। আমি তার পূর্বে এবং পরে অনুরূপ আকৃতির আর কাউকেও দেখিনি। আর তাঁর উভয় হাতের তালু ছিল বিস্তীর্ণ। অন্য এক বর্ণনাতে আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সা.) - এর উভয় পা এবং উভয় হাত ছিল মাংসে পরিপূর্ণ।
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْسَ بِالطَّوِيلِ الْبَائِنِ وَلَا بِالْقَصِيرِ وَلَيْسَ بِالْأَبْيَضِ الْأَمْهَقِ وَلَا بِالْآدَمِ وَلَيْسَ بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ وَلَا بِالسَّبْطِ بَعَثَهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً فَأَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِينَ وبالمدينة عشر سِنِين وتوفَّاه الله على رَأس سِتِّينَ سَنَةً وَلَيْسَ فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ عِشْرُونَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ وَفِي رِوَايَةٍ يَصِفُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: كَانَ رَبْعَةً مِنَ الْقَوْمِ لَيْسَ بِالطَّوِيلِ وَلَا بِالْقَصِيرِ أَزْهَرَ اللَّوْنِ. وَقَالَ: كَانَ شَعْرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ: بَيْنَ أُذُنَيْهِ وَعَاتِقِهِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ قَالَ: كَانَ ضَخْمَ الرَّأْسِ وَالْقَدَمَيْنِ لَمْ أَرَ بَعْدَهُ وَلَا قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَكَانَ سَبْطَ الكفَّينِ. وَفِي أُخْرَى لَهُ قَالَ: كَانَ شئن الْقَدَمَيْنِ وَالْكَفَّيْنِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3548 ۔ 5900) و مسلم (113 / 2347)، (6089) الروایۃ الثانیۃ 1 ، رواھا البخاری (3547) و الثانیۃ ب ، رواھا مسلم (96 / 2338)، (6067) و الثالثۃ ، رواھا البخاری (5905) و مسلم (94 / 2338)، (6069) و الرابعۃ ، رواھا البخاری (5910) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সকল মানুষের জন্যই অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। মানবীয় চরিত্রের সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতার সামঞ্জস্যের ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন।
বারা' ইবনু ‘আযিব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মধ্যমাকৃতির একজন মানুষ হালকা লম্বা, তার ছিল চওড়া কাঁধ, কানের লতি পর্যন্ত ঘন চুল, যখন তিনি লাল ডোরাকাটা জামা পরিধান করতেন, আমরা তখন তাঁর থেকে অন্যকিছুকে অধিক সুন্দর মনে করতাম না।
(بَعَثَهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً) প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে নুবুওয়্যাতের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে চল্লিশ বছর পূর্ণ হলে। তার আগে তাকে নুবুওয়্যাতের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
(جَامِعِ الْأُصُولِ) গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, “উলামাগণ বর্ণনা করেছেন নবী (সা.) ৪৩ বছর বয়সে নুবুওয়্যাতের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় যে, নবী (সা.) মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেছেন। আর মদীনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন।
বিশুদ্ধ রিওয়ায়াত অনুযায়ী জানা যায় যে, নবী (সা.) নুবুওয়্যাত পাওয়ার পর হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত মক্কায় তেরো বছর অবস্থান করেছেন। আর অত্র হাদীসে দশ বছরের কথা রয়েছে। সম্ভবত হাদীস বর্ণনাকারী দশকের পরে ভাংতি বছরগুলো বাদ দিয়ে বলেছেন।
আর এটা সকলেরই জানা আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ইন্তিকালের সময় বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। আর অত্র হাদীসে উল্লেখ আছে ষাট বছর।
আবার কেউ কেউ বলেছেন, তার বয়স হয়েছিল পয়ষট্টি বছর। এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্ম ও ইন্তিকালের বছর দু'টি স্বতন্ত্রভাবে দুই বছর ধরে পঁয়ষট্টি বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৩-[৮] বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মধ্যম গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান বেশ প্রশস্ত ছিল। তার মাথার চুল তাঁর দুই কানের লতি অবধি পৌছত। আমি তাঁকে লাল (ডোরাকাটা) পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আমি তার চেয়ে অধিক সুশ্রী আর কাউকেও কখনো দেখিনি। (বুখারী ও মুসলিম)।
আর মুসলিম-এর বর্ণনায় আছে, বারা’ (রাঃ) বলেছেন, বাবরি চুলবিশিষ্ট লাল (ডোরাকাটা) পোশাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা সুন্দর আর কাউকে আমি দেখতে পাইনি। তাঁর মাথার চুল কাঁধ স্পর্শ করত এবং তার দুই কাঁধের মাঝামাঝি স্থানটা ছিল বেশ প্রশস্ত। তিনি লম্বাও ছিলেন না আবার খাটোও ছিলেন না।
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنِ الْبَرَّاءِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرْبُوعًا بَعِيدَ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ لَهُ شَعْرٌ بَلَغَ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ رَأَيْتُهُ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ لَمْ أَرَ شَيْئًا قَطُّ أَحْسَنَ مِنْهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ قَالَ: مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَعْرُهُ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ بَعِيدٌ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ لَيْسَ بِالطَّوِيلِ وَلَا بِالْقَصِيرِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3551) و مسلم (92 ، 91 / 2337 و الروایۃ الثانیۃ لہ)، (6064 و 6065) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (لَهُ شَعْرٌ بَلَغَ شَحْمَةَ أُذُنَيْهِ) বিভিন্ন হাদীসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, মাথার চুলে তিনটি অবস্থা বিদ্যমান আছে। সেগুলো হলো (وَفْرَةلِمَّةٍ جُمَّة)।
(وَفْرَة) (ওয়াফরাহ্) বলা হয়: মানুষের মাথার চুল যখন কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
(لِمَّةٍ) (লিস্মাহ্) বলা হয়, মানুষের মাথার চুল যখন ঘাড়ের মাঝামাঝি পৌছে যায়।
(جُمَّة) (জুম্মাহ্) বলা হয়: মানুষের মাথার চুল যখন কাঁধ পর্যন্ত পৌছিয়ে যায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সময়, অবস্থাভেদে মাথার চুল কখনো বড় রাখতেন। আবার কখনো ছোট রাখতেন। আবার কখনো ঘাড়ের মাঝামাঝি রাখতেন। অতএব এ তিনটি পদ্ধতির যে কোন একটির অনুসরণ করলেই রসূলের সুন্নাতের অনুসরণ করা হবে।
(رَأَيْتُهُ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ) ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জামায় লাল রেখার দাগ টানা ছিল।
ইবনু হুমাম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জামা ছিল ইয়ামান থেকে নিয়ে আসা দু'টি কাপড়, তাতে আছে লাল ও সবুজ রং-এর রেখা। তা শুধু লাল রংয়ের নয়।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, দাগটানা বিশিষ্ট জামা।
মিরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাদের কোন দলীল নেই। যারা বলে লাল রংয়ের জামা পরিধান করা জায়িয। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা. ২৩৩৭/৯১, মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৪-[৯] সিমাক ইবনু হারব (রহিমাহুল্লাহ) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) “যলীউল ফাম, আশকালুল ’আয়নায়ন ও মানহুশ আল ’আক্বিবায়ন” বিশিষ্ট ছিলেন। পরে সিমাক-কে এ শব্দগুলোর অর্থ কি প্রশ্ন করা হলে তিনি (যথাক্রমে) বললেন, প্রশস্ত মুখ, চক্ষুর পুতলি ঘোর কালো ও বড় এবং পায়ের গোড়ালিতে অল্প মাংস। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَلِيعَ الْفَمِ أَشْكَلَ الْعَيْنَيْنِ مَنْهُوشَ الْعَقِبَيْنِ قِيلَ لَسِمَاكٍ: مَا ضَلِيعُ الْفَمِ؟ قَالَ: عَظِيمُ الْفَمِ. قِيلَ: مَا أَشْكَلُ الْعَيْنَيْنِ؟ قَالَ: طَوِيلُ شَقِّ الْعَيْنِ. قِيلَ: مَا مَنْهُوشُ الْعَقِبَيْنِ؟ قَالَ: قليلُ لحم الْعقب. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (97 / 2339)، (6070) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর চেহারা মুবারক ছিল প্রশস্ত মুখবিশিষ্ট। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এ ধরনের চেহারা সুন্দর দেখা যায় যা আরবদের নিকট পছন্দনীয় ছোট চেহারা নিন্দনীয়। আর নবী (সা.) -এর চেহারা সার্বিকভাবে সুন্দর ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৫-[১০] আবূত্ব তুফায়ল (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে দেখেছি। তিনি গৌর বর্ণের লাবণ্যময় এবং তিনি মধ্যম গড়নের ছিলেন (অর্থাৎ প্রত্যেকটির মধ্যে পরস্পর সামঞ্জস্য ছিল)। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ أَبْيَضَ مَلِيحًا مقصدا . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (99 / 2340)، (6072) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: আবূত্ব তুফায়ল, ‘আমির ইবনু ওয়াসীলাহ্ উপনামেই বেশি প্রসিদ্ধ ছিল। নবী (সা.) -কে জীবিত অবস্থায় আট বছর পেয়েছিলেন। তিনি ১০২ হিজরীতে মক্কায় ইন্তিকাল করেন। তিনি সর্বশেষ ইন্তিকাল করেছেন সাহাবীগণের মধ্যে হতে।
(كَانَ أَبْيَضَ مَلِيحًا) রাসূলুল্লাহ (সা.) বেশি লম্বাও ছিল না এবং খাটো ছিল না। আবার অধিক মোটাও ছিল না। তিনি ছিলেন সুন্দর সুপুরুষ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৬-[১১] সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আনাস (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খিযাব লাগানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বললেন, তার চুল এমন সাদা হয়নি যে, তাতে খিযাব লাগাতে হবে। যদি আমি তার সাদা দাড়িগুলো গুণে দেখতে চাইতাম তবে সহজে গুণতে পারতাম।
অপর এক বর্ণনাতে আছে, আমি তার মাথার সাদা চুলগুলো গুণে দেখতে চাইলে সহজে গুণতে পারতাম। (বুখারী ও মুসলিম)
আর মুসলিম-এর এক বর্ণনাতে আছে, আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সা.) নিচের ঠোট ও চিবুকের ও কানের মধ্যবর্তী পশমে শুভ্রতা ছিল এবং মাথার মাঝেও কয়েকটি চুল সাদা হয়েছিল।
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ ثَابِتٍ قَالَ: سُئِلَ أَنَسٌ عَنْ خِضَابِ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: إِنَّهُ لَمْ يَبْلُغْ مَا يُخْضَبُ لَوْ شِئْتُ أَنْ أَعُدَّ شَمَطَاتِهِ فِي لِحْيَتِهِ - وَفِي رِوَايَةٍ: لَوْ شِئْتُ أَنْ أَعُدَّ شَمَطَاتٍ كُنَّ فِي رَأسه - فعلت. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (5895) و مسلم (104 ، 103 / 2341)، (6076 و 6077) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: মাথার চুল ও দাড়ি কতটুকু পরিমাণ সাদা হলে খিযাব লাগাবে- এ সম্পর্কে কয়েকটি রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, সাদা চুলের পরিমাণ যদি কম হয়। যাতে শুভ্রতা বুঝা যায় না। তাতে খিযাব লাগানোর প্রয়োজন নেই।
(فَقَالَ: إِنَّهُ لَمْ يَبْلُغْ مَا يُخْضَبُ) তার চুল এমন সাদা হয়নি যে, তাতে খিযাব লাগাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ইন্তিকাল করেছেন তখন তার বয়স এমন ছিল না যে, তার মাঝে বার্ধক্যের চিহ্ন প্রকাশ পেয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সামান্য কয়েকটি চুল সাদা হয়েছিল। যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে বোঝাই যেত না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৭-[১২] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) গৌরবর্ণের ছিলেন। তাঁর ঘর্ম ছিল মুক্তার মতো। হাঁটার সময় তিনি (সা.) সম্মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন এবং আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর হাতের তালুর তুলনায় অধিকতর নরম কোন রেশম কিংবা কোন গরদ স্পর্শ করিনি। আর নবী (সা.) -এর শরীরের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ কস্তুরী কিংবা মিশকে আম্বার আমি কখনো শুকিনি। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَزْهَرَ اللَّوْنِ كَانَ عَرَقُهُ اللُّؤْلُؤُ إِذَا مَشَى تَكَفَّأَ وَمَا مَسَسْتُ دِيبَاجَةً وَلَا حَرِيرًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا شمَمتُ مسكاً وَلَا عَنْبَرَةً أَطْيَبَ مِنْ رَائِحَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3561) و مسلم (82 / 2330)، (6054) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) - মানুষের হাঁটার সময় মাথা উঁচু করে বুক টান করে অহংকারীদের মতো করে হাঁটতে নিষেধ করেছেন। ডানে বা বাম দিকে ঝুঁকে হাঁটতে নিষেধ করেছেন।
আযহারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, অহংকারীর মতো বীর বাহাদুরের গুণ প্রকাশ করে হাঁটা এটা ভুল পন্থা। হাঁটতে হবে বিনয়ী হয়ে। এ প্রসঙ্গে ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন পথ চলতেন তখন সামনের দিকে এমনভাবে ঝুঁকে হাঁটতেন, মনে হত তিনি যেন কোন উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন। (শামায়িলে তিরমিযী হা. ৯৫, মুসনাদে আহমাদ হা. ৭৪৬)।
(أَطْيَبَ مِنْ رَائِحَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) আনাস (রাযি) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) ছিলেন সবচাইতে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মানুষ। আমি রেশম এবং পশম মিশিয়ে বানানো কাপড়ও নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখেছি, আর খাটি রেশমি কাপড়ও ছুঁয়েছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাতের চেয়ে অধিক নরম ও মসৃণ কোন কিছু স্পর্শ করিনি। আমি মৃগনাভির গন্ধ এবং আতরের গন্ধও গ্রহণ করেছি কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শরীরের ঘামের চেয়ে অধিক সুগন্ধ কোন কিছুতেই পাইনি। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা. ২৩৩০/৮২, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৮-[১৩] উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) প্রায়শ দ্বিপ্রহরে তাদের সাথে সেখানে বিশ্রাম করতে আসতেন। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তার জন্য একখানা চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং রাসূল (সা.) তাতেই বিশ্রাম করতেন। নবী (সা.) -এর শরীর থেকে অত্যধিক ঘর্ম বের হত। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তাঁর ঘর্মগুলো একত্রিত করে আতর বা সুগন্ধির মধ্যে মিলিয়ে রাখতেন। তখন নবী (সা.) প্রশ্ন করলেন, হে উম্মু সুলায়ম! তুমি এটা কি করছ? তিনি বললেন, এটা আপনার শরীরের ঘাম। আমরা এটাকে আমাদের সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করব। মূলত এটা সর্বোত্তম সুগন্ধি। অপর এক বর্ণনায় আছে- উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য (ব্যবহারের মাধ্যমে) বরকতের আশা করি। তখন রাসূল (সা.) বললেন, তুমি ঠিকই করেছ। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟» قَالَتْ: عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا قَالَ: «أصبت» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6281) و مسلم (85 ۔ 83 / 2331)، (6055 و 6056) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর পরিচিতি: উম্মু সুলায়ম ছিলেন আনাস (রাঃ)-এর মাতা। তার পিতার নাম ছিল মালিক ইবনু নাযর।
(أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا) নবী (সা.) দ্বিপ্রহরে কায়লুলা, অর্থাৎ ঘুমানো ব্যতীত বিশ্রাম নেয়ার জন্য প্রায়ই আসতেন। কেননা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ছিলেন তার খাদিম আনাস (রাঃ)-এর মা।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, উম্মু হারাম, উম্মু সুলায়ম ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর খালা। হয়তো বা দুধপান করার জন্য অথবা বংশীয়তার জন্য। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর জন্য তার কাছে যাওয়া হালাল ছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু তাদের কাছে প্রবেশ ব্যতীত অন্য কোন মহিলার নিকট যেতেন না।
বলা হয়: রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর নিকট বিশ্রাম নিতেন, কেননা তিনি দুধপান করার কারণে মাহরাম ছিলেন। পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে নবী (সা.) তার নিকট প্রবেশ করেছেন। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খণ্ড, হা, ২৩৩১/৮৩, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - নবী (সা.) -এর নামসমূহ ও গুণাবলি
৫৭৮৯-[১৪] জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে প্রথম সালাত (অর্থাৎ যুহরের সালাত) আদায় করলাম। অতঃপর তিনি (সা.) ঘরে যাওয়ার জন্য মসজিদ হতে বের হলে এবং আমিও তার সাথে বের হয়ে তার সম্মুখে এসে উপস্থিত হলো। তখন তিনি (সা.) এক একটি করে প্রতিটি শিশুর গালে হাত বুলিয়ে দিলেন। সবশেষে আমার উভয় গালেও হাত ফিরালেন, তখন আমি তাঁর হাতের শীতলতা ও সুগন্ধি অনুভব করলাম। তা (তাঁর হাতখানা) এমন সুগন্ধময় ছিল যে, যেন তাকে কোন আতরের কৌটা হতে বের করে এনেছেন। (মুসলিম)
এ প্রসঙ্গে জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীস (سَمُّوا بِاسْمِي) অন্য বর্ণনায় ’নামসমূহের অধ্যায়ে এবং সায়িব ইবনু ইয়াযীদ-এর বর্ণিত হাদীস (نَظَرْتُ إِلَى خاتمِ النبوَّةِ) অন্য বর্ণনায় পানির বিধানের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে।
الفصل الاول ( بَابِ أَسْمَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاته)
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الْأُولَى ثُمَّ خَرَجَ إِلَى أَهْلِهِ وَخَرَجْتُ مَعَهُ فَاسْتَقْبَلَهُ وِلْدَانٌ فَجَعَلَ يَمْسَحُ خَدَّيْ أَحَدِهِمْ وَاحِدًا وَاحِدًا وَأَمَّا أَنَا فَمَسَحَ خَدِّي فَوَجَدْتُ لِيَدِهِ بردا وريحاً كَأَنَّمَا أَخْرَجَهَا مِنْ جُؤْنَةِ عَطَّارٍ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَذَكَرَ حَدِيثَ جَابِرٍ: «سَمُّوا بِاسْمِي» فِي «بَابِ الْأَسَامِي» وَحَدِيثُ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ: نَظَرْتُ إِلَى خاتمِ النبوَّةِ فِي «بَاب أَحْكَام الْمِيَاه»
رواہ مسلم (80 / 2329)، (6052) 0 حدیث ’’ سموا باسمی ‘‘ تقدم (4750) و حدیث ’’ نظرت الی خاتم النبوۃ ‘‘ تقدم (476) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে (صَلَاةَ الْأُولَى) দ্বারা উদ্দেশ্য সম্পর্কে দু'টি অভিমত পাওয়া যায়। (এক) এর দ্বারা উদ্দেশ্য ফজরের সালাত। (দুই) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য যুহরের সালাত।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: অত্র হাদীসের মাঝে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ঘাম ছিল সুগন্ধিযুক্ত। আল্লাহ তা'আলা তাকে ঘামের দ্বারাও সম্মানিত করেছেন। নবী (সা.) সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং না করা উভয় অবস্থায় তাঁর ঘাম ছিল সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হত। মালায়িকার (ফেরেশতাদের) সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাদের থেকে ওয়াহী সংগ্রহ করতেন এবং মুসলিমদের মাজলিসে বসার সময়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)