পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২৫-[২৮] আবু রযীন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সৃষ্টিকুল সৃষ্টির আগে আমাদের প্রভু কোথায় ছিলেন? তিনি (সা.) বললেন, ’আমা-এর মধ্যে ছিলেন। তার নীচেও শূন্য ছিল এবং উপরেও শূন্য ছিল। আর তিনি তাঁর ’আরশকে পানির উপরেই সৃষ্টি করেছেন। (তিরমিযী)
তিনি [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ)] বলেন, ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকরীদের অন্যতম ইয়াযীদ ইবনু হারূন বলেছেন, ’আমা- অর্থ যার সাথে অন্য কোন বস্তু নেই।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَالْبَعْض يُحسنهُ) عَن أبي رزين قَالَ: قلت: يَا رَسُول الله أَيْن رَبُّنَا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ خَلْقَهُ؟ قَالَ: «كَانَ فِي عَمَاءٍ مَا تَحْتَهُ هَوَاءٌ وَمَا فَوْقَهُ هَوَاءٌ وَخَلَقَ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: قَالَ يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ: الْعَمَاءُ: أَيْ لَيْسَ مَعَه شَيْء
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (3109) * وکیع بن عدس : حسن الحدیث وثقہ الجمھور ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (كَانَ فِي عَمَاءٍ) শব্দের অর্থ মেঘ। এই হিসেবে হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী আল্লাহ তা'আলা মাখলুক সৃষ্টির আগে মেঘে ছিলেন। তবে ‘উলামারা বলেন, এখানে (في) অর্থ (على) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা মেঘের উপর ছিলেন। যেমন আল্লাহ তা'আলার বাণী- (ءَاَمِنۡتُمۡ مَّنۡ فِی السَّمَآءِ) “যিনি আসমানে রয়েছেন”- (সূরাহ্ আল মুলক ৬৭ : ১৬)। অর্থাৎ যিনি আসমানের উপর রয়েছেন।
‘আল্লামাহ্ মুবারকপূরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কোন কোন বর্ণনায় (عماء) এর স্থলে (عمى) শব্দ রয়েছে। যার অর্থ: শূন্যতা। এই বিবরণ শুদ্ধ হলে বর্ণিত হাদীসের অর্থ এবং বুখারীর ঐ হাদীসের অর্থ একই, যে হাদীসে বলা হয়েছে- (كان اللَّه ولم يكن شيء غيره وكان عرشه على الماء) “আল্লাহ ছিলেন, তিনি ছাড়া অন্য কিছু ছিল না, তার আরশ পানির উপর ছিল।” আর (عماء) বর্ণনা শুদ্ধ হলে কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বরং আমরা হাদীসকে বিশ্বাস করি এবং এর অবস্থা বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করি না। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৮/৪২০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২৬-[২৯] ’আব্বাস ইবনু ’আবদুল মুত্ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি একদল লোকসহ মুহাসসাব উপত্যকায় বসেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) -ও তাদের মাঝে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় একখণ্ড মেঘ তাদের ওপর দিয়ে অতিক্রম করল। লোকেরা তার দিকে তাকাল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা এটাকে কি নামে আখ্যায়িত কর? তারা বলল, ’সাহাবা। তিনি (সা.) বললেন, এবং ’মুযন’ও বল? লোকেরা বলল, ’মুন’ও বলা হয়।
তিনি বললেন, তাকে ’আনান’ও বল? লোকেরা বলল, ’আনান’ও বলা হয়। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, তোমরা কি জান, আকাশ ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্ব কত? লোকেরা বলল, আমরা জানি না। তিনি (সা.) বললেন, উভয়টির মাঝখানে একাত্তর, বাহাত্তর অথবা তেহাত্তর বছরের দূরত্ব। আর সেই আকাশ হতে তার পরের আকাশের দূরত্বও অনুরূপ। এভাবে তিনি সাত আকাশ পর্যন্ত গণনা করলেন। তারপর বললেন, সপ্তম আসমানের উপর রয়েছে একটি সমুদ্র। তার উপর ও নিচের পানির স্তরের মধ্যবর্তী দূরত্ব যেমন দূরত্ব দুই আকাশের মাঝখানে রয়েছে। অতঃপর সে সমুদ্রের উপরে আছে আটটি বিশেষ আকারের পাঠা (অনুরূপ আকৃতির ফেরেশতা) এবং তাদের পায়ের খুর ও কোমরের মাঝখানে দূরত্ব হলো দুই আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্বের মতো। অতঃপর তাদের পিঠের উপর রয়েছে ’আরশ। তার নীচ ও উপরের মধ্যবর্তী দূরত্ব হলো দুই আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্বের মতো। অতঃপর তার উপরেই রয়েছেন আল্লাহ তা’আলা। (তিরমিযী ও আবু দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَن العبَّاس بن عبد الْمطلب زعم أَنَّهُ كَانَ جَالِسًا فِي الْبَطْحَاءِ فِي عِصَابَةٍ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ فِيهِمْ فَمَرَّتْ سَحَابَةٌ فَنَظَرُوا إِلَيْهَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا تُسَمُّونَ هَذِهِ؟» . قَالُوا: السَّحَابَ. قَالَ: «وَالْمُزْنَ؟» قَالُوا: وَالْمُزْنَ. قَالَ: «وَالْعَنَانَ؟» قَالُوا: وَالْعَنَانَ. قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا بعد مابين السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ؟ » قَالُوا: لَا نَدْرِي. قَالَ: «إِنَّ بُعْدَ مَا بَيْنَهُمَا إِمَّا وَاحِدَةٌ وَإِمَّا اثْنَتَانِ أَوْ ثَلَاثٌ وَسَبْعُونَ سَنَةً وَالسَّمَاءُ الَّتِي فَوْقَهَا كَذَلِكَ» حَتَّى عَدَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ. ثُمَّ «فَوْقَ السَّمَاء السَّابِعَة بَحر بَين أَعْلَاهُ وأسفله مَا بَيْنَ سَمَاءٍ إِلَى سَمَاءٍ ثُمَّ فَوْقَ ذَلِكَ ثَمَانِيَة أَو عَال بَيْنَ أَظْلَافِهِنَّ وَوُرُكِهِنَّ مِثْلُ مَا بَيْنَ سَمَاءٍ إِلَى سَمَاءٍ ثُمَّ عَلَى ظُهُورِهِنَّ الْعَرْشُ بَيْنَ أَسْفَلِهِ وَأَعْلَاهُ مَا بَيْنَ سَمَاءٍ إِلَى سَمَاءٍ ثُمَّ اللَّهُ فَوْقَ ذَلِكَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3320 وقال : حسن غریب) و ابوداؤد (4723) [و ابن ماجہ (193)] * سماک اختلط ولم یحدث بہ قبل اختلاطہ و عبداللہ بن عمیرۃ لایعرف لہ سماع من الاحنف کما قال البخاری رحمہ اللہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (السَّحَابَ. الْمُزْنَ. الْعَنَانَ) সাহাবা, মুযন ও ‘আনান- এসবগুলো মেঘের নাম। তবে (الْمُزْنَ) মেঘ বা মেঘের সাদা অংশকে বলা হয়। এখানে প্রশ্নের উদ্দেশ্য জানতে চাওয়া নয়। বরং সম্বোধিত ব্যক্তির কাছ থেকে এগুলোর এই নামের স্বীকৃতি নেয়া। প্রথমে জানা বিষয়ে প্রশ্ন করে ধীরে ধীরে অজানা বিষয়ের দিকে যাওয়া এবং সৃষ্টি থেকে স্রষ্টার দিকে যাওয়ার জন্য এভাবে প্রশ্নের মাধ্যমে জানার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি উদ্দেশ্য।
(إِنَّ بُعْدَ مَا بَيْنَهُمَا إِمَّا وَاحِدَةٌ وَإِمَّا اثْنَتَانِ أَوْ ثَلَاثٌ وَسَبْعُونَ سَنَةً) অর্থাৎ আসমান ও জমিনের দূরত্ব সত্তর বা একাত্তর বা বাহাত্তর বছরের রাস্তা। ৭১ বা ৭২ বা ৭৩ এটা বর্ণনাকারীর সন্দেহ হতে পারে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এই তিনটির যে কোন একটি বলেছেন। আবার প্রকার বর্ণনার জন্য হতে পারে। অর্থাৎ জমিনের উঁচু স্থান ও নিম্নস্থানের পার্থক্যের ভিত্তিতে দূরত্বের এই পার্থক্য হতে পারে। এর আলোকে ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) যা বলেন সেটার বিশুদ্ধতা প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, সত্তর দ্বারা উদ্দেশ্য আধিক্য বুঝানো। নির্ধারিত দূরত্ব নয়; কেননা আসমান জমিনের মাঝে পাঁচশত বছরের দূরত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উভয় বর্ণনার মতভেদের মাঝে সমন্বয় হলো, ধীর গতিতে চলা যেমন হেঁটে চলার ক্ষেত্রে পাচশত বছরের রাস্তা এবং দ্রুত চলার বেলায় সত্তর বছরের রাস্তা। সত্তরের উপরের অতিরিক্ত সংখ্যার উল্লেখ না থাকলে আমরা সত্তর দ্বারা অধিক দূরত্ব বুঝানো হয়েছে বলে ধরে নিলে পাঁচশত বছরের বর্ণনার সাথে সাংঘর্ষিক হত না। (ফাতহুল বারী হা. ১৩/৪১৩)
(حَتَّى عَدَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ) “এমনকি রাসূল (সা.) সাতটি আসমানের গণনা করেন।” অর্থাৎ আসমান ও জমিনের মধ্যে যে পরিমাণ দূরত্ব সেই পরিমাণ দূরত্ব একটি আসমান থেকে অপর আসমান পর্যন্ত। এভাবে সাতটি আসমান। প্রতিটির দূরত্ব অপরটি থেকে জমিন ও আসমানের দূরত্বের সমপরিমাণ।
(بَين أَعْلَاهُ وأسفله) এটি সপ্তম আসমানের উপর অবস্থিত সাগরের গভীরতার বিবরণ। অর্থাৎ সাগরের উপর ও নিচের মধ্যে আসমান ও জমিনের দূরত্ব বা গভীরতা রয়েছে।
( ثَمَانِيَة أَو عَال) أَو عَال শব্দটি (وَعْلٌ) এর বহুবচন। যার অর্থ মাদী হরিণ, মাদী ছাগল বা পাহাড়ী ছাগল। পরবর্তীতে ছাগলের নিতম্ব ও ক্ষুরের বিবরণ তাদের বড়ত্ব ও বিশালতার পরিমাপ সম্পর্কে কিছুটা হলেও আচ
করা যায়। কারো কারো মতে, আট ছাগল দ্বারা মূলত এই আকৃতির মালাক (ফেরেশতা) উদ্দেশ্য। কেননা পরবর্তী বাক্য (عَلَى ظُهُورِهِنَّ الْعَرْشُ) “তাদের পিঠের উপর ‘আরশ” এই অর্থকে সমর্থন করে। আর কুরআনে রয়েছে, (اَلَّذِیۡنَ یَحۡمِلُوۡنَ الۡعَرۡشَ وَ مَنۡ حَوۡلَهٗ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ) “যারা ‘আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে”- (সূরাহ আল গাফির ৪০ : ৭)।
(ثُمَّ اللَّهُ فَوْقَ ذَلِكَ) “তারপর আল্লাহ তার ওপর রয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা ‘আরশের উপর রয়েছেন এই বিষয়টি কুরআন হাদীসের অগণিত দলীল দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। যেখানে ব্যাখ্যার কোন সুযোগ নেই। অন্যান্য দলীলের মতো এটিও একটি স্পষ্ট দলীল। তবে আল্লাহ তা'আলার সিফাতের ব্যাপারে যতটুকু বিবরণ কুরআন হাদীসে রয়েছে আমাদেরকে ততটুকুই অবিকল সেভাবে বিশ্বাস করতে হবে। এর বাহিরে চিন্তা করে কিছু বলার আমাদের কোন সুযোগ নেই। আমরা স্পষ্ট ও অকাট্যভাবে জানতে পারি যে, আল্লাহ তা'আলা ‘আরশের উপর রয়েছেন। আমাদেরকে এতটুকু বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু কিভাবে রয়েছেন, কোন অবস্থায় রয়েছেন এসব চিন্তা করা না আমাদের জন্য বৈধ, আর না আমরা চিন্তা করে কোন সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২৭-[৩০] জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন একজন গ্রাম্য বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, লোকেরা অসহনীয় দুঃখে নিপতিত হয়েছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধার্ত, ধন হ্রাস পেয়েছে এবং গবাদি পশুসমূহ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। অতএব আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করুন। আমরা আপনাকে আল্লাহর কাছে ওয়াসীলাহ্ বানিয়েছি এবং আল্লাহকে আপনার কাছে শাফা’আতকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছি। তার কথা শুনে নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ তা’আলা খুবই পবিত্র। আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র। তিনি এ বাক্যটি বারংবার উচ্চারণ করতে থাকলেন, এমনকি তার চেহারা মুবারকের রং পরিবর্তন হতে দেখে উপস্থিত সাহাবায়ি কিরামের মুখমণ্ডলসমূহও বিবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, আফসোস তোমার প্রতি! তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ তা’আলার শান ও সম্মান তা হতে অতি মহান ও বিরাট। আক্ষেপ তোমার প্রতি। তুমি কি আল্লাহর জাত ও সত্তা সম্পর্কে অবগত আছ? তাঁর ’আরশ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এভাবে বেষ্টন করে রেখেছে। এ কথা বলে তিনি (সা.) নিজ অঙ্গুলি দ্বারা একটি গুম্বজের ন্যায় গোলাকৃতি বস্তু দেখিয়ে বললেন, আল্লাহর আরশ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে অনুরূপভাবে ঘেরাও করে রাখা সত্ত্বেও আল্লাহর বিরাটত্বের চাপে তা এমনভাবে কড়মড় শব্দ করে, যেমন- কোন বাহনের গদি কড়মড় শব্দ করতে থাকে। (আবু দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: جَهِدَتِ الْأَنْفُسُ وَجَاعَ الْعِيَالُ وَنُهِكَتِ الْأَمْوَالُ وَهَلَكَتِ الْأَنْعَام فَاسْتَسْقِ اللَّهَ لَنَا فَإِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى الله نستشفع بِاللَّهِ عَلَيْكَ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ سُبْحَانَ اللَّهِ» . فَمَا زَالَ يسبّح حَتَّى عُرف ذَلِك فِي وُجُوه أَصْحَابه ثُمَّ قَالَ: «وَيْحَكَ إِنَّهُ لَا يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا اللَّهُ؟ إِنَّ عَرْشَهُ عَلَى سَمَاوَاتِهِ لَهَكَذَا» وَقَالَ بِأَصَابِعِهِ مَثْلَ الْقُبَّةِ عَلَيْهِ «وإِنه ليئط أطيط الرحل بالراكب» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4726) * محمد بن اسحاق مدلس و عنعن و جبیر بن محمد : مستور ، لم یوثقہ غیر ابن حبان ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (وَجَاعَ الْعِيَالُ) “এবং পরিবার ক্ষুধার্ত। (عَيَالُ) শব্দের ‘আইন হরফে যবর। মানুষ তার পরিবারে যার দায়িত্ব ও খরচ বহন করে সেই তাই পরিবার। যেমন স্ত্রী, সন্তানাদি এবং দাস।
(وَنُهِكَتِ الْأَمْوَالُ) অর্থাৎ সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। এখানে সম্পদ বলতে বৃষ্টির পানিতে বেড়ে উঠে এমন সম্পদ। অনাবৃষ্টির কারণে তা ধ্বংস হয়েছে।
(الْأَنْعَام) “আন্'আম” দ্বারা উট, গরু, ও ছাগল- এই তিন শ্রেণির প্রাণী উদ্দেশ্য।
(نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى الله نستشفع بِاللَّهِ عَلَيْكَ) অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা ও সম্মানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে সুপারিশ কামনা করছি। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন যেন তিনি আপনাকে আমাদের সহযোগিতা করার তাওফীক দেন। রাসূল (সা.) এর কাছে এভাবে সুপারিশ চাওয়া থেকে তাকে আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতায় সমকক্ষ করার সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলা পূর্ণাঙ্গরূপে শিরকমুক্ত।
আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতায় রাসূল (সা.) -এর কোন ধরনের অংশীদারিত্ব নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেন- (لَیۡسَ لَکَ مِنَ الۡاَمۡرِ شَیۡءٌ اَوۡ یَتُوۡبَ عَلَیۡهِمۡ) “হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে ‘আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নেই”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩ : ১২৮)।
অন্যত্র বলেন (مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ) “কে আছ এমন, যে তার কাছে তাঁরই অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে?” (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৫৫); নবী (সা.)-এর কাছে এভাবে বলা বিরাট বড় অপরাধ মনে হয়, তাই তিনি এর উপর আপত্তি তুলেন এবং এভাবে তার প্রতি সুপারিশের সম্পৃক্ততায় অবাক হন। তাই রাসূল (সা.): বলেন, সুবহা-নাল্ল-হ। গুরুত্ব ও আশ্চর্যবোধ প্রকাশ করতে বারংবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ শব্দটি উচ্চারণ করেন। এমনকি তার চেহারায় পরিবর্তন প্রকাশ পায়। বারংবার এই তাসবীহ উচ্চারণ দেখে সাহাবীরা রাসূল (সা.) -এর রাগ উপলব্ধি করেন। রাসূল (সা.) -এর রাগ দেখে সাহাবীরা শঙ্কিত হন এবং তাদের চেহারায় বিবর্ণতার নিদর্শন ফুটে উঠে। ভয়ের নিদর্শন সাহাবীদের চেহারায় ফুটে উঠলে রাসূল (সা.) তাদের প্রতি নমনীয় হন এবং তাসবীহ বন্ধ করে তাদের দিকে মনোনিবেশ করে উপদেশ দেন।
(وَيْحَكَ) শব্দটি (ويلك) অর্থে আসে। তবে প্রথম শব্দটি পদস্খলনের ক্ষেত্রে মমতা প্রকাশ অর্থে ব্যবহার হয়। আর দ্বিতীয় শব্দটি ধ্বংসের জন্য দু'আ হিসেবে ব্যবহার হয়। এখানে প্রথম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ যে উদ্দেশে উদাসীন অজ্ঞ উক্তিকারী ব্যক্তি।
(لَا يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ) “আল্লাহর মাধ্যমে কারো কাছে সুপারিশ কামনা করা যায় না। আল্লাহর শান তার চেয়ে বড়।” (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
অর্থাৎ সুপারিশ কামনা সৃষ্টির কাছে হতে পারে। কাউকে সুপারিশ করার আবেদন করা যেতে পারে। যেমন নবী (সা.) দুনিয়ার জীবনের সুপারিশ করতেন। যেমন তাঁর কাছে দু'আ চাওয়া এবং আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক তাঁর দু'আ কবুল করা। এভাবে আখিরাতে যখন মানুষ বিচারের অপেক্ষায় থাকবে তখন তার কাছে সুপারিশ করার আবেদন করা হবে এবং তিনি সুপারিশ করবেন। এভাবে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য তিনি সুপারিশ করবেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কয়েক ধরনের সুপারিশ রয়েছে। মোটকথা, সুপারিশ ছোট বড়র কাছে করার নিয়ম রয়েছে। বড় ছোটর কাছে সুপারিশ করার নিয়ম নেই। তাই আল্লাহর মাধ্যমে সৃষ্টির কাছে সুপারিশ অনেক মারাত্মক কথা এবং বিরাট বিষয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ধরনের উক্তিকে বিশাল মনে করেন এবং অবাক হয়ে বার বার তাসবীহ পড়তে থাকেন।
(وإِنه ليئط أطيط الرحل بالراكب) অর্থাৎ অতিরিক্ত ভারি আরোহীর ফলে বাহন যেমন শব্দ করে, ‘আরশের বিশালতার কারণেও মালায়িকা (ফেরেশতারাগণ)-ও ঠিক তেমনি হয়রান হয়ে যায়।
এ খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'আরশের বিশালতা বুঝাতে বাহ্যত একটি ধারণা দেয়ার জন্য এমন বলা হয়েছে। নতুবা আল্লাহ তা'আলার সিফাতের বিবরণ দেয়া নিষিদ্ধ; এখানে আল্লাহর গুণাবলি উল্লেখ দ্বারা গুণাবলি পর্যালোচনা করা উদ্দেশ্য নয় এবং উক্ত অবস্থার সীমাবদ্ধতা বর্ণনা করাও উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লাহ তা'আলা বড়ত্ব বুঝাতে মানুষের মেধার ধারণ ক্ষমতা মোতাবেক এমন উপমা দেয়া। প্রশ্নকারী যাতে আল্লাহ তা'আলার বড়ত্ব ও মহত্ব সহজেই উপলব্ধি করতে পারে। অর্থাৎ যার ‘আরশের বিশালতা এই তা কিভাবে কারো কাছে সুপারিশের মাধ্যম বানানো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২৮-[৩১] জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমাকে এ অনুমতি দেয়া হয়েছে যে, আমি আল্লাহ তা’আলার ’আরশ বহনকারী মালায়িকার (ফেরেশতাদের) মধ্য হতে একজন মালাক (ফেরেশতার) অবস্থা প্রকাশ করব। সেই মালাকের কানের লতি হতে তার ঘাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব সাতশত বছরের পথ। (আবু দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُذِنَ لِي أَنْ أُحَدِّثَ عَنْ مَلَكٍ مِنْ مَلَائِكَةِ اللَّهِ مِنْ حَمَلَةِ الْعَرْشِ أَنَّ مَا بَيْنَ شحمة أُذُنَيْهِ إِلَى عَاتِقَيْهِ مَسِيرَةُ سَبْعِمِائَةِ عَامٍ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (4727) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: হাদীসে ‘আরশ বহনকারী মালায়িকাহ্’র বিশালতা বর্ণনা করা হয়েছে। যাদের কানের লতি থেকে কাঁধের দূরত্ব এই; তাদের শরীরের বিশালতা চিন্তার বাহিরে। আর এমন ফেরেশতারা যে ‘আরশ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে সেই ‘আরশের বিশালতার কল্পনা করা দুষ্কর। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২৯-[৩২] যুরারাহ্ ইবনু আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি তোমার প্রভুকে দেখেছ? এ কথা শুনে জিবরীল আলায়হিস সালাম কেঁপে উঠে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমার ও তার মাঝখানে সত্তরটি নূরের পর্দা রয়েছে। যদি আমি তার কোন একটির কাছাকাছি হই, তবে আমি পুড়ে যাব। (এরূপ ’মাসাবীহ’ কিতাবে বর্ণিত)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَن زُرَارَة بن أوفى أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِجِبْرِيلَ: هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ فَانْتَفَضَ جِبْرِيلُ وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ سَبْعِينَ حِجَابًا مِنْ نُورٍ لَوْ دَنَوْتُ مِنْ بَعْضِهَا لاحترقت «. هَكَذَا فِي» المصابيح
اسنادہ ضعیف ، و ذکرہ البغوی فی مصابیح السنۃ (4 / 30) [و ابو الشیخ فی العظمۃ (2 / 677 ۔ 678) و الدارمی (فی الرد علی المریسی ص 172)] * السند صحیح الی زرارۃ رحمہ اللہ و لکنہ : مرسل ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (فَانْتَفَضَ جِبْرِيلُ) “জিবরীল কেঁপে উঠেন” জিবরীলের কাছে এই প্রশ্নটাই বিশাল মনে হয়। এমন উক্তি শুনে তিনি আল্লাহ তা'আলার মর্যাদার ভয়ে কাঁপতে থাকেন। বলা হয়, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা'আলাকে দেখা যাবে। কেননা পরকালীন জগতে আল্লাহ তা'আলাকে দেখা অসম্ভব হলে রাসূল (সা.) জিবরীল আলায়হিস সালাম -কে লক্ষ করে এমন প্রশ্ন করতেন না।
(سَبْعِينَ حِجَابًا مِنْ نُورٍ) নূরের সত্তর পর্দা। কারো মতে সত্তর পর্দার দূরত্ব দ্বারা আল্লাহ তা'আলার মর্যাদার পূর্ণাঙ্গতা ও জিবরীল তথা সৃষ্টির গুণের অপূর্ণতা বুঝানো হয়েছে। তবে এ জাতীয় ব্যাপারে সালাফদের মতাদর্শ হলো, হাদীসকে বাহ্যিক অর্থে বিশ্বাস করে তার বিবরণ ও অবস্থা আল্লাহ তা'আলার জ্ঞানের উপর ছেড়ে দেয়া। তাই আমরা পর্দার হাকীকত ও তত্ত্বের পিছনে না পড়ে এবং কোন ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই সরল অর্থে বিশ্বাস করব।
(لَوْ دَنَوْتُ مِنْ بَعْضِهَا لاحترقت) অর্থাৎ নূরের এসব পর্দার কোন একটির কাছে গেলে আমি পুড়ে যাব। কোন কোন বর্ণনায়, এক আঙ্গুল পরিমাণ কাছে চলে গেলে এমন হবে বলে বর্ণিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭৩০-[৩৩] আর আবূ নু’আয়ম তার হিলইয়াহ’ গ্রন্থে আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে জিবরীল আলায়হিস সালাম-এর কেঁপে উঠার কথাটি সেই বর্ণনায় উল্লেখ নেই।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَرَوَاهُ أَبُو نُعَيْمٍ فِي «الْحِلْيَةِ» عَنْ أَنَسٍ إِلَّا أَنه لم يذكر: «فانتفض جِبْرِيل»
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابو نعیم فی حلیۃ الاولیاء (5 / 55) * فیہ ابو مسلم قائد الاعمش : ضعیف و الاعمش مدلس و عنعن ان صح السند الیہ ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: তবারানী তাঁর আওসাতে হাদীসটি (فَانْتَفَضَ جِبْرِيلُ) “জিবরীল কেঁপে উঠলেন” এ বাক্য ছাড়াই বর্ণনা করেছেন। তবারানীর বর্ণনা হলো,
(عن أنس بن مالك عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال سألت جبريل عليه السلام هل ترى ربك قال إن بيني و بينه سبعين حجابامن نور لورأيت أدناهالاحترقت) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেন: আমি জিবরীল আলায়হিস সালামকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি তোমার রবকে দেখেছো? তিনি বললেন, আমার ও তার মাঝে সত্তরটি আলোর পর্দা রয়েছে। আমি তার একেবারে কাছেরটিতে গেলে পুড়ে যাবো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭৩১-[৩৪] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা যেদিন ইসরাফীল আলায়হিস সালাম-কে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তখন হতে নিজের দুই পায়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন। চক্ষু তুলেও দেখেন না। তার এবং তার প্রভুর মাঝখানে সত্তরটি নূরের পর্দা রয়েছে। তিনি তার যে কোন একটি পর্দার কাছাকাছি হলে তখনই তা তাঁকে জ্বালিয়ে ফেলবে। (তিরমিযী এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি সহীহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ إِسْرَافِيلَ مُنْذُ يَوْمَ خَلْقَهُ صَافًّا قَدَمَيْهِ لَا يَرْفَعُ بَصَرَهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الرَّبِّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَبْعُونَ نورا مَا مِنْهَا من نورٍ يدنو مِنْهُ إِلاّ احْتَرَقَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ
ضعیف ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) [و رواہ الطبرانی فی الکبیر (11 / 379 ۔ 380 ح 12061) و البیھقی فی شعب الایمان (157 ، نسخۃ محققۃ : 155) و فی السند محمد بن عبد الرحمن بن ابی لیلی ضعیف مشھور ضعفہ جمھور المحدثین و فی السند علۃ أخری] ۔
(ضَعِيف)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭৩২-[৩৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা যখন আদম আলায়হিস সালাম ও তাঁর বংশধরকে সৃষ্টি করলেন, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) বললেন, হে প্রভু! তুমি এমন এক সষ্টিজীব সৃষ্টি করেছ, যারা খাওয়া-দাওয়া ও পানাহার করবে, বিবাহ-শাদি করবে এবং যানবাহনে আরোহণ করবে। অতএব তাদেরকে দুনিয়া তথা পার্থিব সম্পদ দিয়ে দাও এবং আমাদেরকে পরকাল প্রদান কর। আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকেছি, তাকে ঐ বস্তুর সমান করব না যাকে كُنْ (হয়ে যাও) শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করেছি। (বায়হাকী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْ جَابِرٌ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَذُرِّيَّتَهُ قَالَتِ: الْمَلَائِكَةُ: يَا رَبِّ خَلَقْتَهُمْ يَأْكُلُونَ وَيَشْرَبُونَ وَيَنْكِحُونَ وَيَرْكَبُونَ فَاجْعَلْ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الْآخِرَةَ. قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: لَا أَجْعَلُ مَنْ خَلَقْتُهُ بيديَّ ونفخت فِيهِ مِنْ رُوحِي كَمَنْ قُلْتُ لَهُ: كُنْ فَكَانَ «. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي» شُعَبِ الْإِيمَانِ
اسنادہ ضعیف ، رواہ البیھقی فی شعب الایمان (149 ، نسخۃ محققۃ : 147) * ھشام بن عمار اختلط و الانصاری لم اعرفہ وجاء تصریحہ فی روایۃ جنید بن حکیم و لا یدری من ھو ؟ و عبد ربہ بن صالح القرشی وثقہ ابن حبان وحدہ فھو مجھول الحال ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: হাদীসে ইসরাফীল 'আলায়হিস সালাম-এর দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থার বিবরণ দেয়া হয়েছে। ইসরাফীল আলায়হিস সালাম-কে সৃষ্টির সময়ই দু পা জড়ো তথা এক পায়ের সাথে আরেক পা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তিনি এভাবে কোনদিন না হেলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কোন সময় শিঙ্গায় ফুঁকারের নির্দেশ এসে যায় সেই অপেক্ষায় এমনভাবে রয়েছেন যে, উপরের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। আল্লাহর মর্যাদা ও ভয় তার চোখ অবনমিত করে রেখেছে।
(سَبْعُوْنَ نُوْرًا) “সত্তরটি আলো” অর্থাৎ জিবরীল ও আল্লাহ তা'আলার মাঝে যেমন সত্তরটি নূরের পর্দা রয়েছে, ঠিক তেমনি ইসরাফীল ও আল্লাহ তা'আলার মাঝেও অনুরূপ পর্দা রয়েছে। যদি কোন পর্দার নিকটে ইসরাফীল যান বলে ধরে নেয়া হয়, তবে তিনিও জিবরীল-এর মতো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা ও ইসরাফীল-এর মাঝে নূরের যে আবরণ রয়েছে সেই নূরের দিপ্তিও ইসরাফীল-এর চোখ ধারণ করতে অক্ষম।
(فَاجْعَلْ لَهُمُ الدُّنْيَا وَلَنَا الْآخِرَةَ) অর্থাৎ দুনিয়াকে তাদের জন্য স্থায়ীভাবে করে দাও আর আখিরাতের নিআমাতকে কেবল আমাদের জন্য নির্ধারিত করে দাও; কেননা আমরা দুনিয়ার নি'আমাত থেকে বঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু মানুষ দুনিয়ার নি'আমাত ভোগ করেছে। আমরা ভোগ করিনি। তাই এর বদলে আখিরাতের পুরো নি'আমাত আমাদের জন্য করে দাও।
(لَا أَجْعَلُ مَنْ خَلَقْتُهُ بيديَّ) “অর্থাৎ যে মানুষকে আমি আমার হাতে বানিয়েছি, আমি যার মাঝে আত্মা ফুঁকেছি, তোমাদের আবেদনে তাদেরকে আখিরাতের নি'আমাত থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ যাকে আমি আমার নিজ হাতে বানিয়েছি, যাকে বানানোর দায়িত্ব অন্য কারো হাতে অর্পণ করিনি, যার মাঝে আমি নিজে আত্মা ফুঁকেছি তার মর্যাদা ও যাদেরকে কেবল নির্দেশ দিয়ে বানিয়েছি তাদের মর্যাদা সমান হতে পারে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)