লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৭২৭-[৩০] জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন একজন গ্রাম্য বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বলল, লোকেরা অসহনীয় দুঃখে নিপতিত হয়েছে। পরিবার-পরিজন ক্ষুধার্ত, ধন হ্রাস পেয়েছে এবং গবাদি পশুসমূহ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। অতএব আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করুন। আমরা আপনাকে আল্লাহর কাছে ওয়াসীলাহ্ বানিয়েছি এবং আল্লাহকে আপনার কাছে শাফা’আতকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছি। তার কথা শুনে নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ তা’আলা খুবই পবিত্র। আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র। তিনি এ বাক্যটি বারংবার উচ্চারণ করতে থাকলেন, এমনকি তার চেহারা মুবারকের রং পরিবর্তন হতে দেখে উপস্থিত সাহাবায়ি কিরামের মুখমণ্ডলসমূহও বিবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, আফসোস তোমার প্রতি! তুমি জেনে রাখ, আল্লাহ তা’আলার শান ও সম্মান তা হতে অতি মহান ও বিরাট। আক্ষেপ তোমার প্রতি। তুমি কি আল্লাহর জাত ও সত্তা সম্পর্কে অবগত আছ? তাঁর ’আরশ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এভাবে বেষ্টন করে রেখেছে। এ কথা বলে তিনি (সা.) নিজ অঙ্গুলি দ্বারা একটি গুম্বজের ন্যায় গোলাকৃতি বস্তু দেখিয়ে বললেন, আল্লাহর আরশ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে অনুরূপভাবে ঘেরাও করে রাখা সত্ত্বেও আল্লাহর বিরাটত্বের চাপে তা এমনভাবে কড়মড় শব্দ করে, যেমন- কোন বাহনের গদি কড়মড় শব্দ করতে থাকে। (আবু দাউদ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)
وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: جَهِدَتِ الْأَنْفُسُ وَجَاعَ الْعِيَالُ وَنُهِكَتِ الْأَمْوَالُ وَهَلَكَتِ الْأَنْعَام فَاسْتَسْقِ اللَّهَ لَنَا فَإِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى الله نستشفع بِاللَّهِ عَلَيْكَ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ سُبْحَانَ اللَّهِ» . فَمَا زَالَ يسبّح حَتَّى عُرف ذَلِك فِي وُجُوه أَصْحَابه ثُمَّ قَالَ: «وَيْحَكَ إِنَّهُ لَا يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ وَيْحَكَ أَتَدْرِي مَا اللَّهُ؟ إِنَّ عَرْشَهُ عَلَى سَمَاوَاتِهِ لَهَكَذَا» وَقَالَ بِأَصَابِعِهِ مَثْلَ الْقُبَّةِ عَلَيْهِ «وإِنه ليئط أطيط الرحل بالراكب» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد اسنادہ ضعیف ، رواہ ابوداؤد (4726) * محمد بن اسحاق مدلس و عنعن و جبیر بن محمد : مستور ، لم یوثقہ غیر ابن حبان ۔ (ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (وَجَاعَ الْعِيَالُ) “এবং পরিবার ক্ষুধার্ত। (عَيَالُ) শব্দের ‘আইন হরফে যবর। মানুষ তার পরিবারে যার দায়িত্ব ও খরচ বহন করে সেই তাই পরিবার। যেমন স্ত্রী, সন্তানাদি এবং দাস।
(وَنُهِكَتِ الْأَمْوَالُ) অর্থাৎ সম্পদ হ্রাস পেয়েছে। এখানে সম্পদ বলতে বৃষ্টির পানিতে বেড়ে উঠে এমন সম্পদ। অনাবৃষ্টির কারণে তা ধ্বংস হয়েছে।
(الْأَنْعَام) “আন্'আম” দ্বারা উট, গরু, ও ছাগল- এই তিন শ্রেণির প্রাণী উদ্দেশ্য।
(نَسْتَشْفِعُ بِكَ عَلَى الله نستشفع بِاللَّهِ عَلَيْكَ) অর্থাৎ আপনার ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা ও সম্মানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে সুপারিশ কামনা করছি। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন যেন তিনি আপনাকে আমাদের সহযোগিতা করার তাওফীক দেন। রাসূল (সা.) এর কাছে এভাবে সুপারিশ চাওয়া থেকে তাকে আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতায় সমকক্ষ করার সন্দেহ সৃষ্টি হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলা পূর্ণাঙ্গরূপে শিরকমুক্ত।
আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতায় রাসূল (সা.) -এর কোন ধরনের অংশীদারিত্ব নেই। আল্লাহ তা'আলা বলেন- (لَیۡسَ لَکَ مِنَ الۡاَمۡرِ شَیۡءٌ اَوۡ یَتُوۡبَ عَلَیۡهِمۡ) “হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে ‘আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নেই”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩ : ১২৮)।
অন্যত্র বলেন (مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ) “কে আছ এমন, যে তার কাছে তাঁরই অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে?” (সূরা আল বাকারাহ্ ২ : ২৫৫); নবী (সা.)-এর কাছে এভাবে বলা বিরাট বড় অপরাধ মনে হয়, তাই তিনি এর উপর আপত্তি তুলেন এবং এভাবে তার প্রতি সুপারিশের সম্পৃক্ততায় অবাক হন। তাই রাসূল (সা.): বলেন, সুবহা-নাল্ল-হ। গুরুত্ব ও আশ্চর্যবোধ প্রকাশ করতে বারংবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ শব্দটি উচ্চারণ করেন। এমনকি তার চেহারায় পরিবর্তন প্রকাশ পায়। বারংবার এই তাসবীহ উচ্চারণ দেখে সাহাবীরা রাসূল (সা.) -এর রাগ উপলব্ধি করেন। রাসূল (সা.) -এর রাগ দেখে সাহাবীরা শঙ্কিত হন এবং তাদের চেহারায় বিবর্ণতার নিদর্শন ফুটে উঠে। ভয়ের নিদর্শন সাহাবীদের চেহারায় ফুটে উঠলে রাসূল (সা.) তাদের প্রতি নমনীয় হন এবং তাসবীহ বন্ধ করে তাদের দিকে মনোনিবেশ করে উপদেশ দেন।
(وَيْحَكَ) শব্দটি (ويلك) অর্থে আসে। তবে প্রথম শব্দটি পদস্খলনের ক্ষেত্রে মমতা প্রকাশ অর্থে ব্যবহার হয়। আর দ্বিতীয় শব্দটি ধ্বংসের জন্য দু'আ হিসেবে ব্যবহার হয়। এখানে প্রথম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ যে উদ্দেশে উদাসীন অজ্ঞ উক্তিকারী ব্যক্তি।
(لَا يُسْتَشْفَعُ بِاللَّهِ عَلَى أَحَدٍ شَأْنُ اللَّهِ أَعْظَمُ مِنْ ذَلِكَ) “আল্লাহর মাধ্যমে কারো কাছে সুপারিশ কামনা করা যায় না। আল্লাহর শান তার চেয়ে বড়।” (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
অর্থাৎ সুপারিশ কামনা সৃষ্টির কাছে হতে পারে। কাউকে সুপারিশ করার আবেদন করা যেতে পারে। যেমন নবী (সা.) দুনিয়ার জীবনের সুপারিশ করতেন। যেমন তাঁর কাছে দু'আ চাওয়া এবং আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক তাঁর দু'আ কবুল করা। এভাবে আখিরাতে যখন মানুষ বিচারের অপেক্ষায় থাকবে তখন তার কাছে সুপারিশ করার আবেদন করা হবে এবং তিনি সুপারিশ করবেন। এভাবে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য তিনি সুপারিশ করবেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কয়েক ধরনের সুপারিশ রয়েছে। মোটকথা, সুপারিশ ছোট বড়র কাছে করার নিয়ম রয়েছে। বড় ছোটর কাছে সুপারিশ করার নিয়ম নেই। তাই আল্লাহর মাধ্যমে সৃষ্টির কাছে সুপারিশ অনেক মারাত্মক কথা এবং বিরাট বিষয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ধরনের উক্তিকে বিশাল মনে করেন এবং অবাক হয়ে বার বার তাসবীহ পড়তে থাকেন।
(وإِنه ليئط أطيط الرحل بالراكب) অর্থাৎ অতিরিক্ত ভারি আরোহীর ফলে বাহন যেমন শব্দ করে, ‘আরশের বিশালতার কারণেও মালায়িকা (ফেরেশতারাগণ)-ও ঠিক তেমনি হয়রান হয়ে যায়।
এ খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'আরশের বিশালতা বুঝাতে বাহ্যত একটি ধারণা দেয়ার জন্য এমন বলা হয়েছে। নতুবা আল্লাহ তা'আলার সিফাতের বিবরণ দেয়া নিষিদ্ধ; এখানে আল্লাহর গুণাবলি উল্লেখ দ্বারা গুণাবলি পর্যালোচনা করা উদ্দেশ্য নয় এবং উক্ত অবস্থার সীমাবদ্ধতা বর্ণনা করাও উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লাহ তা'আলা বড়ত্ব বুঝাতে মানুষের মেধার ধারণ ক্ষমতা মোতাবেক এমন উপমা দেয়া। প্রশ্নকারী যাতে আল্লাহ তা'আলার বড়ত্ব ও মহত্ব সহজেই উপলব্ধি করতে পারে। অর্থাৎ যার ‘আরশের বিশালতা এই তা কিভাবে কারো কাছে সুপারিশের মাধ্যম বানানো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।