পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৬৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের (ব্যবহৃত) আগুনের উত্তাপ জাহান্নামের আগুনের সত্তর অংশের এক অংশ মাত্র। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! (জাহান্নামীদের শাস্তিদানের জন্য) দুনিয়ার আগুন তো যথেষ্ট ছিল। তিনি (সা.) বললেন, দুনিয়ার আগুনের উপর তার সমপরিমাণ তাপসম্পন্ন জাহান্নামের আগুন আরো ঊনসত্তর ভাগ বর্ধিত করা হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
উল্লিখিত হাদীসটির শব্দগুলো বুখারীর। আর মুসলিম-এর বর্ণনার শব্দ হলো- (نَارُكُمُ الَّتِي يُوقِدُ ابْنُ آدَمَ) তোমাদের (ব্যবহৃত) আগুন যা আদম সন্তান প্রজ্বলিত করে এবং তার বর্ণনায় «عَلَيْهَا» و «كلهَا» এ শব্দ দু’টির পরিবর্তে «عَلَيْهِنَّ» و «كُلهنَّ» উল্লেখ রয়েছে।
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ: «فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَاللَّفْظُ لِلْبُخَارِيِّ. وَفِي رِوَايَةِ مُسْلِمٍ: «نَارُكُمُ الَّتِي يُوقِدُ ابْنُ آدَمَ» . وَفِيهَا: «عَلَيْهَا» و «كلهَا» بدل «عَلَيْهِنَّ» و «كُلهنَّ»
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3265) و مسلم (30 / 2843)، (7165) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءً) ইমাম গাজালী (রহিমাহুল্লাহ) “ইয়াহইয়াউ উলুমিদ্দীন”-এ বলেন, তুমি জান যে তুমি অনুমান করতে ভুল করবে। কেননা দুনিয়ার আগুন দিয়ে জাহান্নামের আগুন অনুমান করা যাবে না। কিন্তু দুনিয়াতে যেহেতু এই আগুনের শাস্তিকেই সবচেয়ে কঠিন শাস্তি মনে করা হয়। তাই এই আগুন দিয়েই উদাহরণ দেয়া হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(مِنْ سَبْعِينَ) এখানে সংখ্যাটাই মূল উদ্দেশ্য নয় বরং তাপমাত্রার আধিক্যতা হলো মূল উদ্দেশ্য, অন্য আরেক বর্ণনায় একশত গুণের কথা বলা হয়েছে। (ফাতহুল বারী হা. ৩৭৩)
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার আগুনের উপরে জাহান্নামের আগুনের শ্রেষ্ঠত্ব উক্ত আয়াত দ্বারা পুনরাবৃত্তি করলেন এজন্য যে, দুনিয়ার আগুনটা মূলতপক্ষে জাহান্নামের আগুনের কোন অংশ নয়, বরং একটা উদাহরণমাত্র, কেননা মাখলুকের ‘আযাব যদি এত ভয়ঙ্কর হয় তাহলে খালিকের ‘আযাব আরো কত ভয়ঙ্কর হবে? (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৫০০, ২৫৮৯; ফাতহুল বারী হা. ৩২৬৫)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৬৬-[২] ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে যে, তার সত্তরটি লাগাম থাকবে এবং সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে, তারা তা টেনে আনবে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سبعونَ ألفَ مَلَكٍ يجرُّونها» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (29 / 2842)، (7164) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ) অর্থাৎ জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে তার জায়গা থেকে, যেই জায়গাতে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এর সমর্থনে একটি আয়াত রয়েছে, (وَ جِایۡٓءَ یَوۡمَئِذٍۭ بِجَهَنَّمَ) “সেদিন জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে”- (সূরা আল ফাজর ৮৯ : ২৩)। আর সেদিন দ্বারা উদ্দেশ্য কিয়ামতের দিন।
(سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ) এখানে লাগামের কথা বলা হয়েছে, কেননা সত্তর হাজার মালাক (ফেরেশতা) প্রতিটা লাগাম ধরে টানবে- এটা বলার উদ্দেশ্য হলো তার বড়ত্ব বুঝানো এবং হাশরের ময়দানে চলে আসা থেকে বাধা দেয়া তবে যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ চাইবেন তাদের নিকট চলে আসবে। মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৭৩)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৬৭-[৩] নুমান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি ঐ লোকের হবে, যাকে আগুনের ফিতাসহ দু’খানা জুতা পরানো হবে, তাতে তার মগজ এমনিভাবে ফুটতে থাকবে, যেমনিভাবে তামার পাত্রে পানি ফুটতে থাকে। সে ধারণা করবে, তার অপেক্ষা কঠিন শাস্তি আর কেউ ভোগ করছে না, অথচ সে হবে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত লোক। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا مَنْ لَهُ نَعْلَانِ وَشِرَاكَانِ مِنْ نَارٍ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِي الْمِرْجَلُ مَا يُرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لَأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6561 ۔ 6562) و مسلم (364 / 213)، (516) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: হাদীসে স্পষ্টভাবে ইশারা করা হয়েছে যে, জাহান্নামীদের ‘আযাবের মধ্যে কম বেশি হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৬৮-[8] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি হবে আবূ ত্বালিব-এর। তার দুই পায়ে দু’টি আগুনের জুতা পরিয়ে দেয়া হবে। তাতে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا أَبُو طَالِبٍ وَهُوَ مُنْتَعِلٌ بِنَعْلَيْنِ يغلي مِنْهُمَا دماغه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
رواہ البخاری (لم اجدہ) [و مسلم (362 / 212)، (515)] ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসের মধ্যে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আবূ ত্বালিবই হলেন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ ‘আযাব ভোগকারী হবে। তবে গুনাহগার মুমিনদের ‘আযাবের কথা বলা হয়নি অত্র হাদীসে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৬৯-[৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে দুনিয়ার সর্বাধিক সম্পদশালী লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে চুবিয়ে উঠানো হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো আরাম-আয়েশ দেখেছ? পূর্বে কি কখনো তোমার নি’আমাতের সুখ অর্জিত হয়েছিল? সে বলবে, না আল্লাহর শপথ, হে আমার প্রভু! অতঃপর জান্নাতবাসীদের থেকে এমন এক লোককে উপস্থিত করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুঃখ-কষ্টের জীবনযাপন করেছিল। তখন তাকে মুহুর্তের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে প্রশ্ন করা হবে, হে আদাম সন্তান! তুমি কি কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ? এবং তুমি কি কখনো কঠোরতার মুখোমুখী হয়েছিলে? সে বলবে, না আল্লাহর শপথ, হে আমার প্রভু! আমি কখনো দুঃখকষ্টে পতিত হইনি। আর কখনো কোন কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِي النارِ صَبْغَةً ثمَّ يُقَال: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ؟ فَيَقُولُ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِي الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ؟ وَهَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ. فَيَقُولُ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِي بُؤْسٌ قَطُّ وَلَا رَأَيْتُ شدَّة قطّ . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (55 / 2807)، (7088) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ) এখানে কথার মধ্যে অতিরিক্ততা আছে তা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, জাহান্নামী দুনিয়ার সমস্ত ভোগ বিলাসের কথা অস্বীকার করবে আর জান্নাতী দুনিয়ার সমস্ত কষ্ট-ক্লান্তির কথা অস্বীকার করবে। কেননা জাহান্নামের কঠোরতা জাহান্নামীকে সব ভুলিয়ে দিবে আর জান্নাতীকে জান্নাতের আরাম-আয়েশ দুনিয়ার সমস্ত কষ্টকে ভুলিয়ে দিবে। অতএব ঐ বিলাসিতায় কি লাভ আছে, যার শেষ হলো জাহান্নাম এবং ঐ দুঃখে কি সমস্যা আছে যার ভবিষ্যত হলো জান্নাত। (মিরকাতুল মাফাতীহ, শারহুন নাবাবী হা. ১৭/২৮০৭)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৭০-[৬] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা কম ও সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত লোককে বলবেন, যদি গোটা পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ তোমার থাকত, তাহলে তুমি কি সেগুলোর বিনিময়ে এ শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে? সে বলবে, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আদমের ঔরসে থাকাকালে এর চেয়েও সহজতর বিষয়ে আমি আদেশ করেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না, কিন্তু তুমি এটা অগ্রাহ্য করেছ এবং আমার সাথে শারীক করেছ। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ أَكَنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: أَرَدْتُ مِنْكَ أَهْوَنَ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ أَنْ لَا تُشْرِكَ بِي شَيْئًا فَأَبَيْتَ إِلَّا أَنْ تُشْرِكَ بِي . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6557) و مسلم (51 / 2805)، (7083) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: এটা হাদীসে কুদসী অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর থেকে বর্ণনা করেন,
(أَرَدْتُ مِنْكَ) এই হাদীসের বাহ্যিকটা মু'তাযিলাদের মতাদর্শের সমর্থন করে। কেননা তারা মনে করে যে, আল্লাহর ইচ্ছাশক্তিটা অস্থায়ী, স্থায়ী নয় অথচ আল্লাহ যেমন চিরস্থায়ী অনুরূপ তার ইচ্ছা, তার সমস্ত গুণাবলি স্থায়ী। অতএব এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো (إرارة) শব্দটি (امر) এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, আর ইচ্ছা ও আদেশের মধ্যে পার্থক্য হলো, যে জিনিসটা দুনিয়াতে অবশ্যই একমাত্র তার ইচ্ছাতেই চলবে সেটা হলো ইচ্ছা। আর আদেশ হলো যে তার বিরোধিতাও করার শক্তি দেয়া হবে। অতএব আমি (মুল্লা আলী ক্বারী) বলছি, নিশ্চয় ঈমানের আদেশটা সমস্ত মুকাল্লাফ (শারী'আতের আদেশপ্রাপ্ত) ব্যক্তিদের ওপর করা হয়েছে আর ঈমান আনার ইচ্ছাটা কিছু কিছু মানুষের সাথে করা হয়েছে আর কিছু কিছু মানুষের সাথে কুফরীর ইচ্ছা করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৩৩৪, শারহুন নাবাবী হা. ১৭/২০০৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৭১-[৭] সামুরাহ্ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: জাহান্নামীদের মধ্যে কোন কোন লোক এমন হবে, জাহান্নামের আগুন তার পায়ের টাখনু অবধি পৌছবে। তাদের মধ্যে কারো হাঁটু পর্যন্ত আগুন পৌছবে, কারো কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো কারো ঘাড় পর্যন্ত পৌছবে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى حُجْزَتِهِ وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّار إِلَى ترقوته» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (33 / 2845)، (7169) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জাহান্নামে গুনাহগার মুমিনদের ও শাস্তির মধ্যে কম বেশি থাকবে।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসের প্রথম অংশ শারহুস্ সুন্নাতে রয়েছে, আবূ সাঈদ এর বর্ণনায় যে, যখন মু'মিনরা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, অতএব আগুন কারো টাখনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলবে ইত্যাদি এবং শেষে রয়েছে তারা তাদেরকে চিনবে তাদের চেহারা দেখে, কেননা তাদের চেহারাগুলো আগুন খাবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
৫৬৭২-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জাহান্নামের মধ্যে কাফিরদের উভয় ঘাড়ের দূরত্ব হবে কোন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণের দূরত্ব পরিমাণ। অপর এক বর্ণনায় আছে- কাফিরের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং তার দেহের চামড়া হবে তিন দিনের সফরের দূরত্ব পরিমাণ পুরু বা মোটা। (মুসলিম)
এ প্রসঙ্গে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত «إِذا اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا» “যখন জাহান্নাম তার রবের নিকট অভিযোগ করবে” হাদীসটি «تَعْجِيلِ الصَّلَوَات» “সঠিক সময়ে সলাত আদায় করা”-এর অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
الفصل الاول (بَاب صفةالنار وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا بَيْنَ مَنْكِبَيِ الْكَافِرِ فِي النَّارِ مَسِيرَةَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ لِلرَّاكِبِ الْمُسْرِعِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «ضِرْسُ الْكَافِرِ مِثْلُ أُحُدٍ وَغِلَظُ جِلْدِهِ مَسِيرَةُ ثَلَاثٍ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَذِكْرُ حَدِيث أبي هُرَيْرَة: «إِذا اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا» . فِي بَابِ «تَعْجِيلِ الصَّلَوَات»
رواہ مسلم (44 / 2851 ، 45 / 2852)، (7185 و 7186) 0 حدیث ’’ اشتکت النار الی ربھا ‘‘ تقدم (591) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: কাফিরদের অঙ্গসমূহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হবে ‘আযাব আস্বাদন করার জন্য।
ইমাম কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এটা কাফিরদের জন্য। কেননা অনেক হাদীসে আসছে যে, অহঙ্কারীদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করা হবে ধূলিকণার মতো করে পুরুষের আকৃতিতে, এরপর জাহান্নামের শিকলে টেনে নেয়া হবে।
ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নিশ্চয় এ হাদীসটি প্রমাণ বহন করে জাহান্নামের ভিতরে কাফিরদের শরীর বড় হওয়ার ব্যাপারে। তবে ইমাম কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) যেটা উল্লেখ করেছেন সেটা হাশরের দিনের কথা বলা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৬৫৫১)