পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৫৯-[৫] আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি (মি’রাজের রাত্রে) আপনার প্রভুকে দেখেছেন? জবাবে তিনি (সা.) বললেন, তিনি তো এক বিরাট জ্যোতি বা আলো, অতএব আমি তাকে কিভাবে দেখতে পারি? (মুসলিম)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ سَأَلَتْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: هَلْ رَأَيْتَ رَبَّكَ؟ قَالَ: «نُورٌ أَنَّى أَرَاهُ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (291 / 178)، (443) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (نُورٌ أَنَّى أَرَاهُ) ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহ তা'আলার পর্দা তথা নূর। অতএব কিভাবে তাকে দেখব? ইমাম আবূ আবদুল্লাহ আল মাযীব্যু আয যমীর (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (أَرَاهُ) শব্দের জমির ফিরবে, আল্লাহর দিকে। এর অর্থ হলো, তার নূর তাকে দেখতে বাধা দিয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, একটি নূর কোথায় থেকে তা দেখতে পাব? তখন (أَنِّىْ) এর স্থলে (أَنَّى) হবে। কোন কোন হানাফী মাশায়েখ বলেন, মূল ইবারত হবে (نُورٌأَنَّى أَرَاهُ) অর্থাৎ আমি নূরানী আল্লাহকে দেখেছি।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, (نُورٌ أَنَّى) দুই শব্দকে একসাথে মিশিয়ে এক শব্দ বানানো বড় ভুল এবং হাদীসের ইবারতে হস্তক্ষেপ করার শামিল। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩২৮২)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৬০-[৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى. . . . وَلَقَدْ رَآهُ نزلة أُخْرَى) “(নবীর) অন্তঃকরণ মিথ্যে মনে করেনি যা সে দেখে ছিল। সে যা দেখেছে সে বিষয়ে তোমরা কি তার সঙ্গে বিতর্ক করবে? অবশ্যই সে [নবী (সা.)] তাঁকে (জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে) আরেকবার দেখেছিল” (সূরাহ আন্ নাজুম ৫৩: ১১-১৩); আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যায় বলেছেন, মুহাম্মাদ (সা.) অন্তর-চক্ষু দ্বারা আল্লাহ তা’আলাকে দু’বার দেখেছেন। (মুসলিম)
আর তিরমিযীর বর্ণনাতে আছে- উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে দেখেছেন, “ইকরিমাহ্ বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তা’আলা কি বলেননি- (لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يدْرك الْأَبْصَار) “চক্ষুসমূহ তাঁকে দেখতে পারে না, কিন্তু তিনি চক্ষুসমূহকে দেখতে পান”- (সূরা আল আ’আম ৬ : ১০৩)। উত্তরে ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ। আরে! তা তো সেই সময়ের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বিশেষ জ্যোতিতে আত্মপ্রকাশ করবেন (তখন তাঁকে দেখা সম্ভব নয়) তবে মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে (স্বাভাবিক অবস্থায়) দু’বার দেখেছেন।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
وَعَن ابْن عَبَّاس: (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى. . . . وَلَقَدْ رَآهُ نزلة أُخْرَى) قَالَ: رَآهُ بِفُؤَادِهِ مَرَّتَيْنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَة لِلتِّرْمِذِي قَالَ: رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ. قَالَ عِكْرِمَةُ قُلْتُ: أَلَيْسَ اللَّهُ يَقُولُ: (لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يدْرك الْأَبْصَار) ؟ قَالَ: وَيحك إِذَا تَجَلَّى بِنُورِهِ الَّذِي هُوَ نُورُهُ وَقَدْ رأى ربه مرَّتَيْنِ
رواہ مسلم (285 / 176)، (437) و الترمذی (3279 وقال : حسن غریب) و حدیث الترمذی حدیث حسن و رواہ ابن خزیمۃ فی التوحید (ص 198 ح 273) و ابن ابی عاصم فی السنۃ (437 / 446) بسند حسن بہ ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (ربه مرَّتَيْنِ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, নবী মুহাম্মাদ (সা.) - কে দু’বার দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ নবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা'আলাকে দু'বার দেখেছেন। উল্লেখিত ইবারতটুকু অধিকাংশ সালাফে-সালিহীনের অভিমতের বিপক্ষে এবং সরাসরি কুরআনের আয়াতেরও বিরুদ্ধে যায়। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী হা. ৩২৭৯)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৬১-[৭] শা’বী (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে ’আরাফাতের মাঠে কাবে আহবার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি তাঁকে এ বিষয়ে (আল্লাহ তা’আলার দর্শন সম্পর্কে) প্রশ্ন করলেন। তা শ্রবণে কা’ব (রাঃ) এমন জোরে আল্লা-হু আকবার আওয়াজ দিলেন যে, তা পাহাড় পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল। তখন ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমরা হাশিম-এর বংশধর (অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী, অতএব অবাস্তব ও অযৌক্তিক কথা আমরা বলি না)। অতঃপর কা’ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা তাঁর দর্শন ও বচনকে মুহাম্মাদ (সা.) ও মূসা আলায়হিস সালাম-এর মাঝে বিভক্ত করেছেন। অতএব মূসা আলায়হি সালাম আল্লাহ তা’আলার সাথে দু’বার কথাবার্তা বলেছেন এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহকে দু’বার দেখেছেন। মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -এর কাছে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রভুকে দেখেছেন কি? জবাবে ’আয়িশাহ্ (সাঃ) বললেন, হে মাসরূক! তুমি আমাকে এমন এক কথা জিজ্ঞেস করেছ, যা শ্রবণে আমার দেহের পশম খাড়া হয়ে গেছে। মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বললাম, আপনি আমাকে সুযোগ দিন। অতঃপর আমি এ আয়াতটি পাঠ করলাম- (لقد رأى من آيَات ربّه الْكُبْرَى) “মুহাম্মাদ ও তাঁর প্রভুর বিরাট বিরাট নিদর্শনসমূহ দেখেছেন"- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১৮)। তখন ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এ আয়াত তোমাকে কোথায় নিয়ে পৌছিয়েছে? বরং তা দ্বারা জিবরীল (আঃ)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। [অতঃপর ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন,] যে লোক তোমাকে বলে, মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রভুকে দেখেছেন অথবা তাঁকে যা কিছু নির্দেশ করা হয়েছে, তা থেকে তিনি কিছু গোপন করেছেন অথবা মুহাম্মাদ (সা.) সেই পাঁচটি বিষয় অবগত ছিলেন, যেগুলো এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- (اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ) “কিয়ামাতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর নিকটই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন...”- (সূরা লুকমান ৩১ : ৩৪)। [অর্থাৎ সে লোক মুহাম্মাদ (সা.) -এর ওপর জঘন্য মিথ্যারোপ করল।
প্রকৃত কথা হলো, না তিনি আল্লাহকে দেখেছেন, না তিনি আল্লাহর কোন বিধান গোপন করেছেন, আর না তিনি ঐ পাঁচটি ব্যাপারে অবগত ছিলেন, যেগুলোর জ্ঞান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত ও তার একক বৈশিষ্ট্য]
হ্যাঁ; বরং তিনি জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছেন। অবশ্য জিবরীল আলায়হিস সালাম-কেও তিনি তাঁর আসলরূপে মাত্র দু’বার দেখেছেন। একবার সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, আরেকবার ’উক্বার ’আজইয়াদে। (আজইয়াদ মক্কা নগরীতে একটি বস্তির নাম। (أَجْيَادٍ) নামে হেরেম শরীফের একটি দ্বারও আছে) রাসূলুল্লাহ (সা.) - যখন তাঁকে প্রকৃত আকৃতিতে দেখেছেন তখন তাঁর ছয়শত ডানা ছিল এবং তা গোটা আকাশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। (তিরমিযী)
তবে বুখারী ও মুসলিম-এর বর্ণনাতে কিছু বাক্য বৃদ্ধি ও পার্থক্যসহ বর্ণিত আছে। যথা- মাসরূক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ’আয়িশাহ্ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, দূরত্বে যদি তাই হয়, যা আপনি বলেছেন, তাহলে আল্লাহর বাণী- (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰی ۙ﴿۸﴾ فَکَانَ قَابَ قَوۡسَیۡنِ اَوۡ اَدۡنٰی ۚ﴿۹﴾) “অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, অতঃপর আরো কাছে এলেন, তখন সে নৈকট্য ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম”- (সূরাহ আন্ নাজম ৫৩ : ৮-৯)। এটার অর্থ কি? উত্তরে ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, এর দ্বারা জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। তিনি সাধারণত মানুষের আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে আসতেন, কিন্তু এবার তিনি তাঁর প্রকৃতরূপে রাসূল-এর সামনে এসেছিলেন, ফলে তা গোটা আকাশ জুড়ে গিয়েছিল।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
وَعَن الشّعبِيّ قَالَ: لَقِيَ ابْنُ عَبَّاسٍ كَعْبًا بِعَرَفَةَ فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ فَكَبَّرَ حَتَّى جَاوَبَتْهُ الْجِبَالُ. فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: إِنَّا بَنُو هَاشِمٍ. فَقَالَ كَعْبٌ: إِنَّ اللَّهَ قَسَّمَ رُؤْيَتَهُ وَكَلَامَهُ بَيْنَ مُحَمَّدٍ وَمُوسَى فَكَلَّمَ مُوسَى مَرَّتَيْنِ وَرَآهُ مُحَمَّدٌ مَرَّتَيْنِ. قَالَ مسروقٌ: فَدخلت على عَائِشَة فَقلت: هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟ فَقَالَتْ: لَقَدْ تَكَلَّمْتَ بِشَيْءٍ قَفَّ لَهُ شَعَرِي قُلْتُ: رُوَيْدًا ثُمَّ قَرَأْتُ (لقد رأى من آيَات ربّه الْكُبْرَى) فَقَالَتْ: أَيْنَ تَذْهَبُ بِكَ؟ إِنَّمَا هُوَ جِبْرِيلُ. مَنْ أَخْبَرَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا رَأَى رَبَّهُ أَوْ كَتَمَ شَيْئًا مِمَّا أُمِرَ بِهِ أَوْ يَعْلَمُ الْخَمْسَ الَّتِي قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: (إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ) فَقَدْ أَعْظَمَ الْفِرْيَةَ وَلَكِنَّهُ رَأَى جِبْرِيلَ لَمْ يَرَهُ فِي صُورَتِهِ إِلَّا مَرَّتَيْنِ: مَرَّةً عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَمَرَّةً فِي أَجْيَادٍ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ قَدْ سَدَّ الْأُفُقَ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَرَوَى الشَّيْخَانِ مَعَ زِيَادَةٍ وَاخْتِلَافٍ وَفِي رِوَايَتِهِمَا: قَالَ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) ؟ قَالَتْ: ذَاكَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأْتِيهِ فِي صُورَةِ الرَّجُلِ وَإِنَّهُ أَتَاهُ هَذِهِ الْمَرَّةَ فِي صُورَتِهِ الَّتِي هِيَ صُورَتُهُ فَسَدَّ الْأُفُقَ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (3278) * فیہ مجالد بن سعید : ضعیف و اصل الحدیث عند البخاری [4855] و مسلم [177]، بغیر ھذا اللفظ) و الروایۃ الثانیۃ صحیحۃ متفق علیھا (رواھا البخاری : 3235 و مسلم : 290 / 177)، (439) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (حَتَّى جَاوَبَتْهُ الْجِبَالُ) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, তিনি (কাব) আওয়াজ উঁচু করে এমন তাকবীর দিলেন পাহাড় পর্যন্ত আকাশ প্রতিধ্বনি দিল, মনে হচ্ছিল যে, তিনি প্রশ্নটাকে খুব বড় মনে করেছিলেন তাই তিনি তাকবীর দিয়েছেন। হয়তো ঐ প্রশ্নটি ছিল আল্লাহর দর্শন সম্পর্কিত, তাই তার শরীরের পশম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
(هَل رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ؟) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি প্রতিটি আয়াত পড়েছি, যার উপসংহার হলো এই আয়াতটি, (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) “সে তার প্রতিপালকের বড় বড় নিদর্শন দেখেছিল”- (সূরা আন নাজম ৫৩: ১৮)। যেমন অন্য আরেকটি বর্ণনাতে তার সমর্থন করে, অর্থাৎ: قُلْتُ لِعَائِشَةَ: فَأَيْنَ قَوْلُهُ (ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) অতএব আমি বলব, অন্য বর্ণনাটির মধ্যেও (رَأَى) শব্দটি নেই, অতএব স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তিনি (আল্লাহ) উদ্দেশ্য নিয়েছেন তার মান মুতাবেক বড় একটি নিদর্শন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فَقَالَتْ: أَيْنَ تَذْهَبُ بِكَ؟) আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ তুমি আয়াতের অর্থ থেকে যা বুঝেছ ভুল বুঝেছ এবং এই মত পোষণ করছ। আর আয়াত তাকে এই ভুল মতের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথাটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, অতএব সার কথা হলো উক্ত আয়াতে জিবরীল আলায়হিস সালাম-ই উদ্দেশ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩২৭৮)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৬২-[৮] ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বর্ণনা করেন। আল্লাহর বাণী- (فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) ফলে [নবী (সা.) ও জিবরীলের মাঝে] দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা আরো কম”- (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ৯) এবং (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى) “(নবীর) অন্তঃকরণ মিথ্যে মনে করেনি যা সে দেখেছিল” (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১১) ও (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) “সে তার প্রতিপালকের বড় বড় নিদর্শন দেখেছিল”- (সূরাহ্ আন্ নাজম ৫৩ : ১৮) এ সকল আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরীল (আঃ)-কে দেখেছেন এবং তার ছয়শত ডানা আছে। (বুখারী ও মুসলিম)
আর তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) (مَا کَذَبَ الۡفُؤَادُ مَا رَاٰی) (সূরা আন নাজম ৫৩ : ১১)-এর সম্পর্কে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - জিবরীল (আঃ)-কে এক জোড়া সবুজ পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন, তিনি আকাশ ও জমিনের মধ্যবর্তী শূন্যতাকে জুড়ে রেখেছেন।
আর বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, (لَقَدۡ رَاٰی مِنۡ اٰیٰتِ رَبِّهِ الۡکُبۡرٰی) (সূরা আন্ নাজম ৫৩ : ১৮)-এর ব্যাখ্যায় ইবনু মাস্উদ (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সবুজ রঙের রফরফ (পরিহিত জিবরীল আলায়হিস সালাম-কে) দেখেছেন, যা গোটা আকাশ জুড়ে রেখেছে।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
وَعَن ابْن مَسْعُود فِي قَوْلِهِ: (فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى) وَفِي قَوْلِهِ: (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى) وَفِي قَوْلِهِ: (رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى) قَالَ فِيهَا كُلِّهَا: رَأَى جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَهُ سِتُّمِائَةِ جَنَاحٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ قَالَ: (مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى) قَالَ: رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جِبْرِيلَ فِي حُلَّةٍ مِنْ رَفْرَفٍ قَدْ مَلَأَ مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَهُ وَلِلْبُخَارِيِّ فِي قَوْلِهِ: (لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى) قَالَ: رَأَى رَفْرَفًا أَخْضَرَ سَدَّ أُفُقَ السَّمَاءِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (4856 و الروایۃ الاخیرۃ : 4858) و مسلم (282 ، 281 / 174)، (432) و الترمذی (3283 وقال : حسن صحیح) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৬৩-[৯] ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) ইবনু আনাস (রহিমাহুল্লাহ)-কে আল্লাহর বাণী- (اِلٰی رَبِّهَا نَاظِرَۃٌ) “তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে”- (সূরাহ্ আল কিয়া-মাহ্ ৭৫ : ২৩); সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় এবং বলা হয়, এক সম্প্রদায় (মু’তাযিলাগণ) বলে যে, এর অর্থ তারা স্বীয় সাওয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তখন ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারা মিথ্যা বলেছে। তারা এ আয়াতের কি ব্যাখ্যা করবে? (کَلَّاۤ اِنَّهُمۡ عَنۡ رَّبِّهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ) “কাফিরদেরকে তাদের প্রভুর দর্শন থেকে আলাদা রাখা হবে”- (সূরাহ্ আল মুত্বাফফিফীন ৮৩ : ১৫)।
অতএব ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আয়াতটির ভাষ্য থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ঈমানদার লোকেরা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলাকে চাক্ষুষ দেখতে পাবে। তিনি আরো বলেন, কিয়ামতের দিন যদি ঈমানদারগণ তাদের প্রভুর দেখা না পায়, তাহলে- (كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لمحجوبون) এ বাক্য দ্বারা আল্লাহ তা’আলা কাফিরদেরকে তাঁর দর্শন না পাওয়াতে তিরস্কার করতেন না। (শারহুস্ সুন্নাহ)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
وسُئل مَالك بن أَنسٍ عَن قَوْله تَعَالَى (إِلى ربِّها ناظرة) فَقِيلَ: قَوْمٌ يَقُولُونَ: إِلَى ثَوَابِهِ. فَقَالَ مَالِكٌ: كَذَبُوا فَأَيْنَ هُمْ عَنْ قَوْلُهُ تَعَالَى: (كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لمحجوبونَ) ؟ قَالَ مَالِكٌ النَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَى اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَعْيُنِهِمْ وَقَالَ: لَوْ لَمْ يَرَ الْمُؤْمِنُونَ رَبَّهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَمْ يُعَيِّرِ اللَّهُ الْكَفَّارَ بِالْحِجَابِ فَقَالَ (كَلَّا إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لمحجوبون) رَوَاهُ فِي «شرح السّنة»
ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (15 / 329 ۔ 330 قبل ح 4393 بدون سند) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (فَقِيلَ: قَوْمٌ يَقُولُونَ...) উল্লেখিত গোষ্ঠী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মু'তাযিলা ফিরকা। কেননা তারা আখিরাতে আল্লাহর দর্শনকে অস্বীকার করে, তাই তারা ঐ আয়াতের (إِلى ربِّها ناظرة) অর্থাৎ তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে ব্যাখ্যা করে এভাবে: তাদের রবের প্রতিদানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। যা একদম স্পষ্ট অপব্যাখ্যা, তাই ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) রাগান্বিত হয়ে বললেন যে, তারা আল্লাহর উপরে মিথ্যারোপ করে, এরপর তিনি কুরআন থেকে একটি দলীল দিলেন যে, আল্লাহ বলেন, (کَلَّاۤ اِنَّهُمۡ عَنۡ رَّبِّهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّمَحۡجُوۡبُوۡنَ) অর্থাৎ তারা (কাফিরগণ) সেদিন তাদের রবের থেকে আড়ালকৃত হবে- (সূরাহ আল মুত্বাফিফীন ৮৩ : ১৫)। অতএব এ আয়াতের তারা কি ব্যাখ্যা করবে? আর সমস্ত মানুষ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মুমিনগণ, কেননা কাফিররা আল্লাহকে দেখতে পারবে না। অতএব যদি মু'মিনগণ আল্লাহকে না দেখে তাহলে কাফিরদেরকে আড়াল করার কোন অর্থ হয় না? তাই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মু'তাযিলাদের মতাদর্শ ভ্রান্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তাআলার দর্শনলাভ
৫৬৬৪-[১০] জাবির (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ যখন তাদের আনন্দ উপভোগে লিপ্ত থাকবে, এমন সময় হঠাৎ তাদের ওপর একটি আলো চমকিত হবে, তখন তারা মাথা তুলে সেদিকে তাকিয়ে দেখবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উপর থেকে তাদের দিকে লক্ষ্য করে আছেন। সে সময় আল্লাহ তা’আলা বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! আসসালা-মু আলায়কুম (তোমরা আরামে ও নিরাপদে থাক) আল্লাহর কালামে (سَلٰمٌ ۟ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ) “দয়াময় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদেরকে সালাম’ বলে সম্ভাষণ করা হবে”- (সূরাহ্ ইয়াসীন ৩৬ : ৫৮); দ্বারা এ সময়ের অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তা’আলা জান্নাতীদের দিকে এবং জান্নাতীগণ আল্লাহর দিকে দৃষ্টি দিবে, ফলে তারা আল্লাহর দর্শন থেকে চক্ষু ফিরিয়ে অন্য কোন নি’আমাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে না এবং আল্লাহ তা’আলা আড়াল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এক দৃষ্টিতে শুধু সেদিকে চেয়ে থাকবে, সবশেষে কেবলমাত্র তাঁর নূর এবং বারাকাত অবশিষ্ট থাকবে। (ইবনু মাজাহ)।
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب رؤيةالله تَعَالَى)
وَعَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بَيْنَا أَهْلُ الْجَنَّةِ فِي نَعِيمِهِمْ إِذْ سَطَعَ نورٌ فَرفعُوا رؤوسَهم فَإِذَا الرَّبُّ قَدْ أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ مِنْ فَوْقِهِمْ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ قَالَ: وَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى (سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رحيمٍ) قَالَ: فَيَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَيَنْظُرُونَ إِلَيْهِ فَلَا يَلْتَفِتُونَ إِلَى شَيْءٍ مِنَ النَّعِيمِ مَا دَامُوا يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ حَتَّى يَحْتَجِبَ عَنْهُمْ وَيَبْقَى نُورُهُ وَبَرَكَتُهُ عَلَيْهِم فِي دِيَارهمْ . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ ابن ماجہ (184) * الفضل الرقاشی : منکر الحدیث و رمی بالقدر ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসটিও জান্নাতে আল্লাহর দর্শনকে প্রমাণ করে, কুরআনের এক আয়াতে এদিকেই ইশারা দেয়া হয়েছে,
(اِنَّ اَصۡحٰبَ الۡجَنَّۃِ الۡیَوۡمَ فِیۡ شُغُلٍ فٰکِهُوۡنَ ﴿ۚ۵۵﴾ هُمۡ وَ اَزۡوَاجُهُمۡ فِیۡ ظِلٰلٍ عَلَی الۡاَرَآئِکِ مُتَّکِـُٔوۡنَ ﴿۵۶﴾ لَهُمۡ فِیۡهَا فَاکِهَۃٌ وَّ لَهُمۡ مَّا یَدَّعُوۡنَ ﴿ۚۖ۵۷﴾ سَلٰمٌ ۟ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ ﴿۵۸﴾) অর্থাৎ “নিশ্চয় জান্নাতীরা সেদিন আনন্দ করবে তারা এবং তাদের স্ত্রীরা সকলে মিলে ছায়ার নিচে গদির উপর টেক লাগিয়ে। আর তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন রকমের ফল এবং তারা যা চাইবে তাই পাবে আর তাদের দয়াময় রবের পক্ষ থেকে সালাম পাবে"- (সূরা ইয়াসীন ৩৬: ৫৫-৫৮)। (মিকাতুল মাফাতীহ)