পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ

৫৫০৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) - বলেছেন: সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। অচিরেই ইবনু মারইয়াম ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন। তিনি (খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতীক) শূলী ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযইয়াহ্ প্রথা রহিত করবেন (অর্থাৎ ইসালাম গ্রহণ ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করা হবে না) এবং মাল-সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, কেউই তা কবুল করবে না। সেই সময় একটি সিজদাহ্ দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা অপেক্ষা অধিক উত্তম হবে। অতঃপর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, যদি তোমরা চাও (তবে প্রমাণ হিসেবে) এ আয়াতটি পাঠ কর- (وَ اِنۡ مِّنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِهٖ قَبۡلَ مَوۡتِهٖ) “তাঁর [ঈসা (আঃ) এর] ওফাতের পূর্বে প্রতিটি আহলে কিতাব তার উপরে ঈমান আনবে"- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪: ১৫৯)। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب نزُول عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ليوشكَنَّ أَن ينزلَ فِيكُم ابنُ مَرْيَم حكَمَاً عَدْلًا فَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَيَفِيضُ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ حَتَّى تكون السَّجْدَة الْوَاحِدَة خيرامن الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا» . ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: فاقرؤا إِن شئْتم [وإِنْ من أهل الْكتاب إِلاّ ليُؤْمِنن بِهِ قبل مَوته] الْآيَة. مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2222) و مسلم (242 / 155)، (389 و 390) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «والذي نفسي بيده ليوشكن ان ينزل فيكم ابن مريم حكما عدلا فيكسر الصليب ويقتل الخنزير ويضع الجزية ويفيض المال حتى لا يقبله احد حتى تكون السجدة الواحدة خيرامن الدنيا وما فيها» . ثم يقول ابو هريرة: فاقروا ان شىتم [وان من اهل الكتاب الا ليومنن به قبل موته] الاية. متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (2222) و مسلم (242 / 155)، (389 و 390) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: (فَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ) অতঃপর তিনি খ্রিষ্টানদের ক্রশ চিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন। শারহুস্ সুন্নাহ ও অন্যান্য গ্রন্থে এর অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, তিনি খ্রিষ্টীয় মতবাদকে ধ্বংস করে দীনে হানীফের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করবেন।
(وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ) এবং তিনি শুকর মেরে ফেলবেন। অর্থাৎ তিনি শুকর লালন পালন ও তা খাওয়া হারাম ঘোষণা করবেন এবং হত্যার নির্দেশ দিবেন।
শারহুস্ সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মূলত শুকর সম্পূর্ণভাবে অপবিত্র। যেহেতু ‘ঈসা আলায়হিস সালাম ইসালামী শারী'আহ মোতাবেক শুকরকে মেরে ফেলতে বলবেন আর শারী'আতে উপকারী বস্তু ধ্বংস করা বৈধ নয়। আর এটাও প্রমাণিত হয় যে, শুকর সম্পূর্ণভাবে হারাম হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনের সাথে কখনো তা বৈধ হতে পারে।
(وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ) আর তিনি আহলে কিতাবের উপর থেকে জিযইয়াহ্ বা কর প্রথা উঠিয়ে দিবেন এবং তাদেরকে ইসালামে দীক্ষিত করবেন। মূলত সত্য দীন ছাড়া আর কেউ তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে না। অথবা তিনি তাদের ওপর থেকে জিযইয়াহ্ বা কর উঠিয়ে দিবেন এ কারণে যে, তখন তা গ্রহণ করার মত কোন লোক থাকবে না। সম্পদের প্রাচুর্যতার কারণে সম্পদের প্রতি কারো লোভ থাকবে না। এর প্রমাণ হচ্ছে। হাদীসের পরবর্তী বাক্য (وَيَفِيضُ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ) অর্থাৎ সম্পদ এত অধিক হবে যে, তা কেউ গ্রহণ করবে না।

(حَتَّى تكون السَّجْدَة الْوَاحِدَة خيرامن الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا) এমনকি একটি সিজদাহ্ দেয়া দুনিয়া ও তার যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম হবে। কেননা তাতে ‘ইবাদতের মাধ্যমে প্রশান্তি অর্জন নিহিত রয়েছে। এখানে সিজদাহ্ বলতে পরিপূর্ণ সালাতকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। যেহেতু সালাতের মধ্যে সিজদাহও অন্তর্ভুক্ত। ‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাস্তবেই একটি সিজদার মূল্যায়ন এমনটি হবে। যেহেতু মানুষেরা আল্লাহর আদেশ পালনে অনুরাগী হবে এবং দুনিয়া থেকে বিরাগী হবে। তাই তাদের কাছে একটি সিজদাহ্ দুনিয়া ও তার যাবতীয় বস্তু হতে উত্তম হবে।।

অতঃপর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমরা চাইলে পবিত্র কুরআনের এই আয়াত পড়ে দেখ, আহলে কিতাবের প্রত্যেকেই তার মৃত্যুর পূর্বে 'ঈসা আলায়হিস সালাম-এর প্রতি ঈমান আনবে।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ‘ঈসা আলায়হিস সালাম শেষ যামানায় এই দুনিয়ায় আগমন করবেন, যা রাসূলের বাণীর সত্যায়নকারী সাব্যস্ত করে। অর্থাৎ আহলে কিতাবের প্রত্যেকেই “ঈসা আলায়হিস সালাম-এর মৃত্যুর পূর্বেই তার প্রতি ঈমান আনবে। তখন শুধু ইসলাম ধর্মই অবশিষ্ট থাকবে অন্য কোন ধর্ম থাকবে না। অথবা আয়াতের অর্থ এরূপও হতে পারে আহলে কিতাবের প্রত্যেকেই প্রাণ হরণের পূর্বেই মুহাম্মাদ (সা.) -এর প্রতি ঈমান আনবে। কিন্তু তখন তার ঈমান কোনই কাজে আসবে না। অথবা প্রত্যেক আহলে কিতাবই মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে কিন্তু তা কোনই কাজে আসবে না। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর মতই অধিক গ্রহণযোগ্য।  (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ৩৪৪৮; শারহুন নাবাবী ২য় খণ্ড, হা. ২৪২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ

৫৫০৬-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় ইবনু মারইয়াম সত্যপরায়ণ শাসকরূপে অবতরণ করবেন। তিনি শূলী ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযইয়াহ্ প্রথা রহিত করে দেবেন। লোকেরা জোয়ান জোয়ান তাজা-তাগড়া উষ্ট্ৰীসমূহ ছেড়ে দেবে, অথচ কেউই তার প্রতি গুরুত্ব দিবে না। মানুষের অন্তর হতে কার্পণ্য, হিংসা ও বিদ্বেষ সমূলে দূর হয়ে যাবে এবং ঈসা আলায়হিস সালাম মানুষদেরকে সম্পদ প্রদানের জন্য ডাকবেন, কিন্তু (প্রয়োজন না থাকায়) কেউই তা গ্রহণ করবে না। (মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে- তিনি (সা.) বলেছেন, তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? যখন ইবনু মারইয়াম তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে ইমাম হবেন। (অর্থাৎ ’ঈসা আলায়হিস সালাম হবেন শাসক, আর সালাতের ইমামতি করবেন মাহদী)

الفصل الاول (بَاب نزُول عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام)

وَعنهُ قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ لَيَنْزِلَنَّ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَادِلًا فَلَيَكْسِرَنَّ الصَّلِيبَ وَلَيَقْتُلَنَّ الْخِنْزِيرَ وَلَيَضَعَنَّ الْجِزْيَةَ وَلَيَتْرُكَنَّ الْقِلَاصَ فَلَا يسْعَى عَلَيْهَا ولتذهبن الشحناء وَالتَّحَاسُدُ وَلَيَدْعُوَنَّ إِلَى الْمَالِ فَلَا يَقْبَلُهُ أَحَدٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا قَالَ: «كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُم»

رواہ مسلم (243 / 155)، (391) و الروایۃ الثانیۃ ، رواھا البخاری (3449) و مسلم (244 / 155)، (392) ۔
(صَحِيح)

وعنه قا ل: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «والله لينزلن ابن مريم حكما عادلا فليكسرن الصليب وليقتلن الخنزير وليضعن الجزية وليتركن القلاص فلا يسعى عليها ولتذهبن الشحناء والتحاسد وليدعون الى المال فلا يقبله احد» . رواه مسلم. وفي رواية لهما قال: «كيف انتم اذا نزل ابن مريم فيكم وامامكم منكم» رواہ مسلم (243 / 155)، (391) و الروایۃ الثانیۃ ، رواھا البخاری (3449) و مسلم (244 / 155)، (392) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (لَيَتْرُكَنَّ الْقِلَاصَ) যুবতী উটনীকে ছেড়ে দিবেন অর্থাৎ তার মাধ্যমে কোন কাজ করা হবে না। যেহেতু এ ধরনের উটনী আরো অধিক থাকবে অথবা এর অর্থ হচ্ছে উটের যাকাত গ্রহণ করা ও আদায় করার জন্য কাউকে নির্দেশ দিবেন না। যেহেতু গ্রহণ করার মতো কেউ থাকবে না। অথবা উট দেখাশুনার জন্য সেগুলোর সাথে কোন রাখাল থাকবে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ এটাও হতে পারে, এর মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদ সংগ্রহের জন্য ভ্রমণ করা ছেড়ে দিবে, যেহেতু তারা অভাবমুক্ত হবে।

(ولتذهبن الشحناء) তাদের মধ্যে থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হবে। ফলে কোন শত্রুতা থাকবে না। কেননা দুনিয়ার প্রতি লোভ-লালসার কারণেই এগুলো হয়ে থাকে, যেহেতু অন্তরে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা থাকবে না, তাই হিংসা-বিদ্বেষ বিতাড়িত হবে।

(كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُم) তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? যখন ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম তোমাদের নিকট অবতীর্ণ হবেন, অথচ তোমাদের মাঝে ইমাম (মাহদী) বিদ্যমান থাকবেন।
অত্র হাদীসাংশে (إِمَامُكُمْ مِنْكُم) বলতে বুঝাচ্ছে, তোমাদের মধ্য থেকেই হবেন না ‘ঈসা আলায়হিস সালাম। কেননা তিনি খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি হিসেবে আসবেন। অথবা, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘ঈসা আলায়হিস সালাম নবী (সা.) -এর উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হবেন না, বরং তার উম্মতের সমর্থনকারী হিসেবে ও সহযোগী হিসেবে আসবেন।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: (إِمَامُكُمْ) শব্দে (كُمْ) সর্বনাম দ্বারা ঈসা আলায়হিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ‘ঈসা আলায়হিস সালাম তোমাদের ধর্মের অনুসারী হয়ে সালাতের ইমামতি করবেন। অথবা এটাও হতে পারে যে, তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের ইমামের মাধ্যমে সম্মানিত হবে। এমতাবস্থায় তোমাদের মাঝে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম অবতরণ করবেন তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? তখন ‘ঈসা আলায়হিস সালাম তোমাদের দীনের সম্মানে তোমাদের ইমামের পিছনে সালাতের ইকতিদা করবেন। এর প্রমাণ হচ্ছে পরবর্তী আগত হাদীস। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

আবূ যার আল হারাবী বলেন, যাওবাকী (রহিমাহুল্লাহ) কতিপয় পূর্বসুরী ‘আলিম থেকে বর্ণনা করেন, (إِمَامُكُمْ مِنْكُم) এর অর্থ হচ্ছে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম কুরআন দ্বারা ফায়সালা করবেন ইঞ্জীল দিয়ে নয়।
ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: (إِمَامُكُمْ مِنْكُم) এর অর্থ হচ্ছে, শারী'আতে মুহাম্মাদী কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে এবং প্রত্যেক যুগে কতিপয় বিচক্ষণ ‘আলিম থাকবে। এর দ্বারা এটা বুঝায় না যে, “ঈসা আলায়হিস সালাম অবতীর্ণ হলে তিনি ইমাম হবেন। যদি ধরে নেয়া হয় যে, তিনি ইমাম হবেন, তাহলে এর অর্থ হলো তিনি তোমাদের জামা'আতের একজন হবেন।
‘আল্লামাহ্ ইবনু জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি ‘ঈসা আলায়হিস সালাম এসে ইমামতি করেন তাহলে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে, তিনি কি নতুন কোন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে আসবেন, নাকি প্রতিনিধি হিসেবে আসবেন? তাই তিনি মুক্তাদী হিসেবে মসজিদে সালাত আদায় করবেন। যাতে নবী (সা.) -এর বাণী- (لَانَبِيَّ بَعْدِي) আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না- এ কথার প্রতি কোন সন্দেহের দাগ না লাগে।
কিয়ামতের পূর্বে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আগমন করে ইমামের পিছনে ইক্তিদা করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর জমিনে কোন সময় নেতৃত্বশূন্য থাকবে না। আল্লাহই সর্বাধিক ভালো জানেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খণ্ড, হা, ৩৪৪৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ

৫৫০৭-[৩] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার উম্মতের একদল লোক সত্যের উপর দৃঢ় থেকে (বাতিলের বিরুদ্ধে বিজয়ীরূপে কিয়ামত পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকবে। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) অবতরণ করবেন। সে সময়ের লোকেদের আমীর বা নেতা (ইমাম মাহদী) তাকে বলবেন, আপনি এদিকে আসুন এবং লোকদেরকে সালাত আদায় করিয়ে দিন। তিনি বলবেন না; বরং তোমরা একে অপরের ইমাম। আল্লাহ তা’আলা এ উম্মাতকে মর্যাদা দান করেছেন। (মুসলিম)।

الفصل الاول (بَاب نزُول عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام)

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَة» . قا ل: فَينزل عِيسَى بن مَرْيَمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ: تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ: لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ الله هَذِه الْأمة . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّانِي

رواہ مسلم (247 / 156)، (395) ۔
(صَحِيح)

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا تزال طاىفة من امتي يقاتلون على الحق ظاهرين الى يوم القيامة» . قا ل: فينزل عيسى بن مريم فيقول اميرهم: تعال صل لنا فيقول: لا ان بعضكم على بعض امراء تكرمة الله هذه الامة . رواه مسلم وهذا الباب خال عن الفصل الثاني رواہ مسلم (247 / 156)، (395) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ) সঠিক পন্থা অবলম্বন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অথবা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য চেষ্টা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
(ظَاهِرِينَ) শত্রুর ওপর বিজয় লাভ করবে। যেহেতু আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, (فَاِنَّ حِزۡبَ اللّٰهِ هُمُ الۡغٰلِبُوۡنَ) “সাবধান, নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয় লাভ করবে।” (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫: ৫৬)

(فَينزل عِيسَى بن مَرْيَمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ: تَعَالَ صَلِّ لَنَا) ঈসা ইবনু মারইয়াম আলায়হিস সালাম কিয়ামতের পূর্বে অবতরণ করবেন। তখন তাদের (মুসলিমদের) আমীর বলবেন, আসুন, সালাতের ইমামতি করুন। কেননা, ইমামের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন যিনি সবচেয়ে উত্তম। আর আপনি হলেন নবী, আপনিই উপযুক্ত। তখন তিনি বলবেন, না আমি ইমাম হব না, কেননা এর দ্বারা মানুষ ধারণা করবে তোমাদের ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। অথবা, তিনি ইমামতি করবে না, যেহেতু তোমাদের ইমামের জন্য ইকামত দেয়া হয়েছে। তাই তিনিই ইমামের জন্যে উত্তম ব্যক্তি। প্রথম মতটিই সঠিক। হাদীসের পরবর্তী বাক্যে এ কথার সমর্থন পাওয়া যায়:
(إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ الله هَذِه الْأمة) নিশ্চয় তোমাদের কতকের ওপর কতককে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণার্থে আমীর নিযুক্ত করা হয়েছে। আর আমার ওপর দায়িত্ব হলো ঐ আমীরকে সহায়তা করা।
(تَكْرِمَةَ الله هَذِه الْأمة) এই উম্মতে মুহাম্মাদীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মানিত করার জন্য।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার অর্থ হলো, আল্লাহর বিধান হলো মুসলিমদের ইমাম হবেন তাদেরই একজন এবং তাদের আমীর হবেন তাদের অপরজন তাদের সম্মানের জন্য ও তাদের মর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২২২৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে