পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ -‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর অবতরণ
৫৫০৬-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় ইবনু মারইয়াম সত্যপরায়ণ শাসকরূপে অবতরণ করবেন। তিনি শূলী ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযইয়াহ্ প্রথা রহিত করে দেবেন। লোকেরা জোয়ান জোয়ান তাজা-তাগড়া উষ্ট্ৰীসমূহ ছেড়ে দেবে, অথচ কেউই তার প্রতি গুরুত্ব দিবে না। মানুষের অন্তর হতে কার্পণ্য, হিংসা ও বিদ্বেষ সমূলে দূর হয়ে যাবে এবং ঈসা আলায়হিস সালাম মানুষদেরকে সম্পদ প্রদানের জন্য ডাকবেন, কিন্তু (প্রয়োজন না থাকায়) কেউই তা গ্রহণ করবে না। (মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে- তিনি (সা.) বলেছেন, তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? যখন ইবনু মারইয়াম তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে ইমাম হবেন। (অর্থাৎ ’ঈসা আলায়হিস সালাম হবেন শাসক, আর সালাতের ইমামতি করবেন মাহদী)
الفصل الاول (بَاب نزُول عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام)
وَعنهُ قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَاللَّهِ لَيَنْزِلَنَّ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَادِلًا فَلَيَكْسِرَنَّ الصَّلِيبَ وَلَيَقْتُلَنَّ الْخِنْزِيرَ وَلَيَضَعَنَّ الْجِزْيَةَ وَلَيَتْرُكَنَّ الْقِلَاصَ فَلَا يسْعَى عَلَيْهَا ولتذهبن الشحناء وَالتَّحَاسُدُ وَلَيَدْعُوَنَّ إِلَى الْمَالِ فَلَا يَقْبَلُهُ أَحَدٌ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ. وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا قَالَ: «كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُم»
رواہ مسلم (243 / 155)، (391) و الروایۃ الثانیۃ ، رواھا البخاری (3449) و مسلم (244 / 155)، (392) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (لَيَتْرُكَنَّ الْقِلَاصَ) যুবতী উটনীকে ছেড়ে দিবেন অর্থাৎ তার মাধ্যমে কোন কাজ করা হবে না। যেহেতু এ ধরনের উটনী আরো অধিক থাকবে অথবা এর অর্থ হচ্ছে উটের যাকাত গ্রহণ করা ও আদায় করার জন্য কাউকে নির্দেশ দিবেন না। যেহেতু গ্রহণ করার মতো কেউ থাকবে না। অথবা উট দেখাশুনার জন্য সেগুলোর সাথে কোন রাখাল থাকবে না। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ এটাও হতে পারে, এর মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদ সংগ্রহের জন্য ভ্রমণ করা ছেড়ে দিবে, যেহেতু তারা অভাবমুক্ত হবে।
(ولتذهبن الشحناء) তাদের মধ্যে থেকে হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হবে। ফলে কোন শত্রুতা থাকবে না। কেননা দুনিয়ার প্রতি লোভ-লালসার কারণেই এগুলো হয়ে থাকে, যেহেতু অন্তরে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা থাকবে না, তাই হিংসা-বিদ্বেষ বিতাড়িত হবে।
(كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا نَزَلَ ابْنُ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُم) তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? যখন ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম তোমাদের নিকট অবতীর্ণ হবেন, অথচ তোমাদের মাঝে ইমাম (মাহদী) বিদ্যমান থাকবেন।
অত্র হাদীসাংশে (إِمَامُكُمْ مِنْكُم) বলতে বুঝাচ্ছে, তোমাদের মধ্য থেকেই হবেন না ‘ঈসা আলায়হিস সালাম। কেননা তিনি খলীফাহ্ বা প্রতিনিধি হিসেবে আসবেন। অথবা, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘ঈসা আলায়হিস সালাম নবী (সা.) -এর উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হবেন না, বরং তার উম্মতের সমর্থনকারী হিসেবে ও সহযোগী হিসেবে আসবেন।
‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: (إِمَامُكُمْ) শব্দে (كُمْ) সর্বনাম দ্বারা ঈসা আলায়হিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ‘ঈসা আলায়হিস সালাম তোমাদের ধর্মের অনুসারী হয়ে সালাতের ইমামতি করবেন। অথবা এটাও হতে পারে যে, তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের ইমামের মাধ্যমে সম্মানিত হবে। এমতাবস্থায় তোমাদের মাঝে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম অবতরণ করবেন তখন তোমাদের অবস্থা কেমন হবে? তখন ‘ঈসা আলায়হিস সালাম তোমাদের দীনের সম্মানে তোমাদের ইমামের পিছনে সালাতের ইকতিদা করবেন। এর প্রমাণ হচ্ছে পরবর্তী আগত হাদীস। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
আবূ যার আল হারাবী বলেন, যাওবাকী (রহিমাহুল্লাহ) কতিপয় পূর্বসুরী ‘আলিম থেকে বর্ণনা করেন, (إِمَامُكُمْ مِنْكُم) এর অর্থ হচ্ছে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম কুরআন দ্বারা ফায়সালা করবেন ইঞ্জীল দিয়ে নয়।
ইবনু তীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: (إِمَامُكُمْ مِنْكُم) এর অর্থ হচ্ছে, শারী'আতে মুহাম্মাদী কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে এবং প্রত্যেক যুগে কতিপয় বিচক্ষণ ‘আলিম থাকবে। এর দ্বারা এটা বুঝায় না যে, “ঈসা আলায়হিস সালাম অবতীর্ণ হলে তিনি ইমাম হবেন। যদি ধরে নেয়া হয় যে, তিনি ইমাম হবেন, তাহলে এর অর্থ হলো তিনি তোমাদের জামা'আতের একজন হবেন।
‘আল্লামাহ্ ইবনু জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি ‘ঈসা আলায়হিস সালাম এসে ইমামতি করেন তাহলে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে, তিনি কি নতুন কোন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে আসবেন, নাকি প্রতিনিধি হিসেবে আসবেন? তাই তিনি মুক্তাদী হিসেবে মসজিদে সালাত আদায় করবেন। যাতে নবী (সা.) -এর বাণী- (لَانَبِيَّ بَعْدِي) আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না- এ কথার প্রতি কোন সন্দেহের দাগ না লাগে।
কিয়ামতের পূর্বে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আগমন করে ইমামের পিছনে ইক্তিদা করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর জমিনে কোন সময় নেতৃত্বশূন্য থাকবে না। আল্লাহই সর্বাধিক ভালো জানেন। (ফাতহুল বারী ৫ম খণ্ড, হা, ৩৪৪৯)