পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৪-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (আমার পিতা) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদল সাহাবীসহ সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর কাছে গমন করলেন। তারা সকলে ইবনু সাইয়্যাদ-কে বানী মাগালাহ্-এর টিলার পাদদেশে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলাধুলা করতে দেখতে পান। সে সময় ইবনু সাইয়্যাদ প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছার কাছাকাছি বয়সী ছিল। কিন্তু সে নবী (সা.) -এর আগমন অনুভব করতে পারেনি। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার পিঠে হাত মেরে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন সে রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনু সাইয়্যাদ রাসূল (সা.) -কে লক্ষ্য করে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, আমি (ইবনু সাইয়্যাদ) আল্লাহর রাসূল? তখন নবী (সা.) তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। এরপর তিনি (সা.) ইবনু সাইয়্যাদ-কে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখতে পাও? সে বলল, আমার কাছে সত্যবাদী (ফেরেশতা) ও মিথ্যাবাদী (শয়তান) উভয়েই আগমন করে থাকে।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার নিকট প্রকৃত ব্যাপার হজবরল হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি (আমার অন্তরে) একটি বিষয় তোমার নিকট গোপন করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) (یَوۡمَ تَاۡتِی السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِیۡنٍ) অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে যা সুস্পষ্ট (দেখা যাবে)”- (সূরাহ আদ দুখান ৪৪: ১০) তা থেকে গোপন রাখলেন।
ইবনু সাইয়্যাদ বলল, লুক্কায়িত কথা হলো, ’দুখ’ (ধোঁয়া)। তিনি (সা.) বললেন, তুমি দূর হও। কখনো তুমি নিজের সীমার বাইরে যেতে পারবে না। (অর্থাৎ ওয়াহী সম্পর্কে তোমার কোন ধারণাই নেই) এ সময় ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। সেই যদি (দাজ্জাল) হয়, তাহলে তুমি তাকে কাবু করতে সক্ষম হবে না।
আর যদি সে না হয়, তাহলে তাকে হত্যা করায় কোন লাভ নেই। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, এরপর একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও উবাই ইবনু কা’ব আল আনসারী (রাঃ) সেই খেজুর উদ্যানের দিকে রওয়ানা হলেন, যেখানে ইবনু সাইয়্যাদ ছিল। তিনি খেজুর গাছের আড়ালে গোপনে অগ্রসর হলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল ইবনু সাইয়্যাদ তাকে দেখার আগেই তিনি তার কিছু কথা শুনে নেবেন। তখন ইবনু সাইয়্যাদ একটি চাদর জড়িয়ে তার বিছানায় শোয়া ছিল এবং গুনগুন শব্দ করছিল। তখন সাইয়্যাদ-এর মা দেখতে পেল, নবী (সা.) খেজুর গাছের ডালের আড়ালে রয়েছেন। অতএব সে ইবনু সাইয়্যাদকে ডাক দিল, হে সফ! আর এটা ইবনু সাইয়্যাদ এর নাম, এই যে মুহাম্মাদ! তৎক্ষণাৎ ইবনু সাইয়্যাদ চুপ হয়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তার মা তাকে ঐভাবে থাকতে দিত, তাহলে সমস্ত কিছু স্পষ্ট হয়ে যেত। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও জনগণের মাঝে (ভাষণ দিতে) দাঁড়ালেন। আল্লাহ তা’আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করে দাজ্জালের বিষয় উল্লেখ করে বললেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে বিশেষভাবে সাবধান করে দিচ্ছি। মূলত এমন কোন নবী অতীত হননি যিনি তাঁর জাতিকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করেন নাই। কিন্তু আমি তার সম্পর্কে এমন একটি কথা বলতে চাই, যা অন্য কোন নবী স্বীয় জাতিকে বলেননি। তোমরা জেনে রাখ, সে (দাজ্জাল) কানা, আর তোমরা এটাও জেনে রাখ যে, আল্লাহ তা’আলা কানা নন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ عُمَرَ بن الْخطاب انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِهِ قِبَلَ ابْنِ الصياد حَتَّى وجدوهُ يلعبُ مَعَ الصّبيانِ فِي أُطُمِ بَنِي مَغَالَةَ وَقَدْ قَارَبَ ابْنُ صَيَّادٍ يَوْمَئِذٍ الْحُلُمَ فَلَمْ يَشْعُرْ حَتَّى ضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ظَهْرَهُ بِيَدِهِ ثمَّ قَالَ: «أتشهدُ أَنِّي رسولُ الله؟» فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ الْأُمِّيِّينَ. ثُمَّ قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟ فَرَصَّهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «آمَنت بِاللَّه وبرسلِه» ثمَّ قَالَ لِابْنِ صيَّاد: «مَاذَا تَرَى؟» قَالَ: يَأْتِينِي صَادِقٌ وَكَاذِبٌ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُلِّطَ عَلَيْكَ الْأَمْرُ» . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي خَبَّأْتُ لَكَ خَبِيئًا» وَخَبَّأَ لَه: (يومَ تَأتي السَّماءُ بدُخانٍ مُبينٍ) فَقَالَ: هُوَ الدُّخُّ. فَقَالَ: «اخْسَأْ فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ» . قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَأْذَنُ لي فِي أَنْ أَضْرِبَ عُنُقَهُ؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ يَكُنْ هُوَ لَا تُسَلَّطْ عَلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ هُوَ فَلَا خير لَك فِي قَتْلِهِ» . قَالَ ابْنُ عُمَرَ: انْطَلَقَ بَعْدَ ذَلِكَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بْنُ كَعْبٍ الْأَنْصَارِيُّ يَؤُمَّانِ النَّخْلَ الَّتِي فِيهَا ابْنُ صَيَّادٍ فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ وَهُوَ يَخْتِلُ أنْ يسمعَ مِنِ ابْنِ صَيَّادٍ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَرَاهُ وَابْنُ صَيَّادٍ مُضْطَجِعٌ عَلَى فِرَاشِهِ فِي قَطِيفَةٍ لَهُ فِيهَا زَمْزَمَةٌ فَرَأَتْ أُمُّ ابْنِ صَيَّادٍ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَتَّقِي بِجُذُوعِ النَّخْلِ. فَقَالَتْ: أَيْ صَافُ - وَهُوَ اسْمُهُ - هَذَا مُحَمَّدٌ. فَتَنَاهَى ابْنُ صَيَّادٍ. قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ تَرَكَتْهُ بَيَّنَ» . قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: «إِنِّي أُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (1354 ۔ 1355) و مسلم (95 / 2930)، (7354) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (انْطَلَقَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ) উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) সাহাবীদের একটি ছোট দলসহ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর উদ্দেশে বের হলেন। তারা তাকে মুগালাবাহ্ গোত্রের ছেলেদের সাথে খেলা রত অবস্থায় পেলেন। সে সময় ইবনু সাইয়্যাদ ছিল অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালেগ হওয়ার উপক্রম। নবী (সা.)
তার অজান্তেই পিছন দিক থেকে তার পিঠের উপর হাত রেখে বললেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর সে হতচকিত হয়ে অথবা রাগান্বিত হয়ে তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিরক্ষর ‘আরবদের নবী।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে ‘আরবদের কথা বলেছে, কারণ সে সময় অধিকাংশ ‘আরব লেখাপড়া জানত না। ইবনু সাইয়্যাদ তার কথায় যদিও একদিকে সত্যবাদী কিন্তু অপরদিকে শুধু ‘আরবের প্রতি রিসালাতকে সম্পৃক্ত করে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হয়। কেননা তিনি 'আরব ও অনরাব সকলের জন্য প্রেরিত নবী। তার এ কথা ইয়াহুদীদের কথার মতই। এটা শয়তান কর্তৃক তাকে শিখানো কথা অথবা সে ইয়াহূদীদের কাছে শুনে এ কথা বলেছে।
(ثُمَّ قَالَ ابْنُ صَيَّادٍ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟) অতঃপর ইবনু সাইয়্যাদ বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল। সে এ কথা দ্বারা নুবুওয়্যাত দাবী করছে অথবা শাব্দিক অর্থে রাসূল বলেছে। তথা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফিতনাহ্ ও পরীক্ষার জন্য প্রেরিত হয়েছে।
(فَرَصَّهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «آمَنت بِاللَّه وبرسلِه») নবী (সা.): ইবনু সাইয়্যাদ-এর কথার উত্তর দিলেন এভাবে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার ভাবার্থ হচ্ছে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করি অতএব চিন্তা করে দেখ তুমি কি সেই দলের কিনা?
রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এই উত্তরে বাহ্যিকভাবে সংশয় দেখা দিচ্ছে বাস্তবেই সে রাসূল কিনা? তবে তার ফিতনার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সঠিক কথা হচ্ছে, নবী (সা.) বলেছেন, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস রাখি এবং বিশ্বাস করি, তুমি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত নও। যদি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে তাহলে অবশ্যই তোমার প্রতি ঈমান আনতাম। নবী (সা.) -এর এই বক্তব্য সে সময়ের জন্য প্রযোজ্য যখন তিনি জানতেন না যে, তিনিই শেষ নবী, তারপর আর কোন নবী আসবে না।
নবী (সা.) -এর উপস্থিতিতে সে নবী দাবী করা সত্ত্বেও নবী (সা.) তাকে হত্যা করেননি। কারণ সে ছিল শিশু আর ইসলামে শিশু হত্যা নিষেধ অথবা সে সময় ইয়াহুদীদের সাথে মুসলিমদের শান্তি চুক্তি ছিল আর ইবনু সাইয়্যাদ তাদের মিত্র গোষ্ঠীর লোক ছিল। তার উক্ত কথার কারণে জিম্মা থেকে সে বেরিয়ে যায়নি। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে স্পষ্ট করে নুবুওয়্যাতের দাবী করেনি যেমন তার কথা, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি নবী? এটা ছিল প্রশ্নমূলক কথা, স্পষ্ট দাবীমূলক কথা নয়।
(إِنِّي خَبَّأْتُ لَكَ خَبِيئًا) আমি তোমার পরীক্ষার জন্য একটি কথা মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি। ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) -এর প্রকৃত অবস্থা সাহাবীদের নিকট প্রকাশ করার জন্য তাকে পরীক্ষা করলেন, সে সময় একটা যাদুকর শয়তান এসে তার মুখ দ্বারা কথা বলায়। নবী (সা.) যে কথা মনে লুকিয়ে রেখেছিলেন তা হলো পবিত্র কুরআনের আয়াত, (فَارۡتَقِبۡ یَوۡمَ تَاۡتِی السَّمَآءُ بِدُخَانٍ مُّبِیۡنٍ) “অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা কারণ যখন আকাশ ধুঁয়ায় ছেয়ে যাবে”- (সূরাহ আদ দুখান ৪৪: ১০)।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু সাইয়্যাদ নবী (সা.) -এর মনের কথার মধ্য থেকে শুধু একটি শব্দ বলতে সক্ষম হয়েছে আর তা হল (الدُّخٌّ ধোঁয়া) সে সম্পূর্ণ আয়াত বলতে সক্ষম হয়নি যেহেতু শয়তান এতটুকুই আসমান থেকে সংগ্রহ করে তার নিকট এসে বলেছে।
(لَا تُسَلَّطْ عَلَيْهِ) উমার (রাঃ) তাকে হত্যা করতে চাইলে নবী (সা.) বলেন, সে যদি সত্যিই তার দাবীতে সত্য হয় অর্থাৎ দাজ্জাল হয় তাহলে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। কেননা তাকে হত্যা করার জন্য ‘ঈসা আলায়হিস সালাম আগমন করবেন ও হত্যা করবেন। আর যদি তা না হয় তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। ইতোপূর্বে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইবনু মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সা.) এর উক্ত কথা দ্বারা ইঙ্গিত করছেন সম্ভবত সে দাজ্জাল কিন্তু স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
ইমাম বায়হাকী তাঁর “আল বা'সা আন্ নুসূর” কিতাবে উল্লেখ করেন, ইবনু সাইয়্যাদ-এর ব্যাপারে ‘আলিমদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। কেউ বলেন, সে দাজ্জাল; আবার কেউ বলেন, সে দাজ্জাল নয় অন্য কেউ। তাদের দলীল হলো, সহীহ হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে এই উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের সাথে অধিক সাদৃশ্য হবে ‘আবদুল উযযা ইবনু কুতুন ইয়াহুদীর সাথে। অতএব ইবনু সাইয়্যাদ দাজ্জাল নয়। তামীম আদ দারীর হাদীসে দাজ্জালের যে ফিতনার কথা বলা হয়েছে তার সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর আলোচনা এক জিনিস নয়। কিন্তু ইবনু উমার (রাঃ) এবং জাবির (রাঃ) শপথ করে বলেন, ইবনু সাইয়্যাদই মূলত দাজ্জাল, এতে কোন সন্দেহ নেই।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন, ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনাটি মূলত সন্দেহভাজন এবং সমস্যামূলক। তাই তাকে কেউ দাজ্জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ বলেন সে অন্য কেউ। আর এজন্যই নবী (সা.) তার বাণীতে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বরং তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তার মধ্যে দাজ্জালের কিছু গুণাবলি রয়েছে। অতএব সে দাজ্জাল হতে পারে আবার নাও হতে পারে।
(تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ) তোমরা নিশ্চিত করে জেনে রাখ, তোমাদের রব্ অন্ধ নন, ত্রুটিযুক্ত নন। কিন্তু সে অন্ধ জ্যোতিহীন চোখবিশিষ্ট। যা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, সে ইলাহ হওয়ার উপযুক্ত নয়।
‘আল্লামাহ্ তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, পূর্ববর্তী সকল নবীই দাজ্জাল সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে গেছেন কিন্তু সে যে অন্ধ বা আলোকহীন চোখবিশিষ্ট হবে, এ কথা কেউ হয়তো জানতেন না বা কেউ এ কথা স্পষ্ট করে বলে যাননি যে, সে হবে অন্ধ, আলোহীন, ত্রুটিযুক্ত চোখবিশিষ্ট। অথবা বলা যেতে পারে, নবী (সা.) -এর এই খবর প্রদান করার মাধ্যমে তার কারামত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কথাও জানা যায় যে, সর্বসাধারণ এমনকি তাদের জ্ঞানীরাও এ ব্যাপারে বুঝতে সক্ষম হবে যে, দাজ্জাল মিথ্যাবাদী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ৩০৫৫; শারহুন্ নাবাবী ১৮শ খণ্ড, হা. ২৯৩০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৫-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আবূ বকর ও ’উমার (রাঃ) -এর সাথে মদীনার কোন এক রাস্তায় ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাক্ষাৎ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বললেন, তুমি কি এটা সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলল, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি আল্লাহ প্রতি, তাঁর ফেরেশতগণের প্রতি, তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর পাঠানো সমস্ত রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছি। অতঃপর রাসূল (সা.) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি দেখতে পাও? সে বলল, আমি পানির উপরে একখানা সিংহাসন দেখতে পাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি সাগরের উপর ইবলীসের সিংহাসন দেখ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি আর কি দেখতে পাও? সে বলল, দু’জন সত্যবাদী এবং একজন মিথ্যাবাদী অথবা বলল, দু’জন মিথ্যাবাদী এবং একজন সত্যবাদীকে দেখতে পাই। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ও বললেন, বিষয়টি তার উপর হজবরল হয়ে পড়েছে। অতএব তোমরা তাকে পরিত্যাগ কর। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: لَقِيَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ - يَعْنِي ابْنَ صَيَّادٍ - فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ؟» فَقَالَ هُوَ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «آمَنْتُ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ مَاذَا تَرَى؟» قَالَ: أَرَى عَرْشًا عَلَى الْمَاءُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَرَى عَرْشَ إِبْلِيسَ عَلَى الْبَحْرِ وَمَا تَرَى؟» قَالَ: أَرَى صَادِقَيْنِ وَكَاذِبًا أَوْ كَاذِبَيْنِ وَصَادِقًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لُبِسَ عَلَيْهِ فَدَعُوهُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (87 / 2925)، (7346) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَقَالَ هُوَ: أَتَشْهَدُ أَنِّي رَسُولَ اللَّهِ؟) ইবনু সাইয়্যাদ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে লক্ষ্য করে উল্টা প্রশ্ন করল: আপনি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? তখন নবী (সা.) বললেন, আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি আল্লাহর রাসূলগণের প্রতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে এভাবে উত্তর দেয়ার কারণ কি তা আমরা পূর্ববর্তী হাদীসে আলোচনা করে এসেছি।
(مَاذَا تَرَى؟) নবী (সা.) এ তাকে পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ? সে বলল, পানির উপর একটি ‘আরশ। নবী (সা.) তার জবাবে বললেন, তুমি সাগরের উপর ইবলীসের ‘আরশ দেখতে পাও। এছাড়া আর কি দেখতে পাও? সে বলল, আমি দু’জন সত্যবাদী ও একজন মিথ্যাবাদী অথবা দু'জন মিথ্যাবাদী ও একজন সত্যবাদী দেখতে পাই। অর্থাৎ আমার কাছে দু'জন ব্যক্তি এসে সত্য সংবাদ দেয় আর একজন মিথ্যা সংবাদ দেয়। ইবনু সাইয়্যাদ-এর এ কথার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে মূলত মিথ্যুক। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে যাকে সাহায্য করা হয় সে সন্দেহমূলকভাবে কথা বলবে না।
(لُبِسَ عَلَيْهِ فَدَعُوهُ) অর্থাৎ তার নিকট বিষয়টি জ্যোতিষীর কারণে উলোটপালট হয়ে গেছে, অতএব তাকে পরিহার কর, তার কোন কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। (মিরকাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৮দশ খণ্ড, হা. ২৯২৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৬-[৩] উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] হতে বর্ণিত। ইবনু সাইয়্যাদ নবী (সা.) কে জান্নাতের মাটি সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি (সা.) বললেন, তা ময়দার মতো সাদা এবং নির্ভেজাল কস্তরির মতো (সুগন্ধি) হবে। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْهُ أَنَّ ابْنَ صَيَّادٍ سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ تُرْبَةِ الْجَنَّةِ. فَقَالَ: «در مَكَّة يبضاء ومسك خَالص» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (93 / 2928)، (7352) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (در مَكَّة يبضاء ومسك خَالص) জান্নাতের মাটি হবে পরিষ্কার সাদা আটার মতো, আর তাতে মিস্ক জাতীয় সুগন্ধি পাওয়া যাবে।
কামূস গ্রন্থে বলা হয়েছে, (دَرْمَكَّتٌ) হচ্ছে (دَقِيقُ الْحُوَّارَى، وَالتُّرَابُ النَّاعِمُ) তথা সাদা আটা এবং মসৃণ মাটি।
নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, (الدَّرْمَكَةُ) হচ্ছে সাদা আটা। জান্নাতের মাটিকে তার সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্য হলো তা হবে সাদা ও মসৃণ এবং মিসকের সাথে তুলনা করার কারণ হলো তা হবে সুগন্ধিযুক্ত। আর প্রত্যেক সাদা খাবারকে (حُوَّارَى) বলা হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৮দশ খণ্ড, হা. ২৯২৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৭-[৪] নাফি (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন মদীনার কোন এক পথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাথে ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হলো। তখন ইবনু উমার (রাঃ) তাকে এমন একটি কথা বললেন, যাতে সে খুবই রাগান্বিত হলো। এমনকি রাগে সে এমনভাবে ফুলে উঠল যেন গলি (পথ) ভরে গেল। অতঃপর ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর বোন হাফসার নিকট গেলেন এবং হাফসার কাছে সেই খবর আগেই পৌছেছিল। তখন হাফসাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহ তা’আলা তোমার প্রতি দয়া করুন। তুমি ইবনু সাইয়্যাদ থেকে কি (জানতে) চেয়েছিলেন? তুমি জান না যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (দাজ্জাল) কোন এক বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অত্যধিক ক্রোধান্বিত অবস্থায় বের হবে। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ نَافِعٍ قَالَ: لَقِيَ ابْنُ عُمَرَ ابْنَ صَيَّادٍ فِي بَعْضِ طُرُقِ الْمَدِينَةِ فَقَالَ لَهُ قَوْلًا أَغْضَبَهُ فَانْتَفَخَ حَتَّى مَلَأَ السِّكَّةَ. فَدَخَلَ ابْنُ عُمَرَ عَلَى حَفْصَةَ وَقَدْ بَلَغَهَا فَقَالَتْ لَهُ: رَحِمَكَ اللَّهُ مَا أَرَدْتَ مِنِ ابْنِ صياد؟ أما علمت أَن رَسُول اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّمَا يَخْرُجُ مِنْ غضبةٍ يغضبها» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (98 / 2932)، (7359) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (فَانْتَفَخَ) রাগে ফুলে উঠল, (السِّكَّةَ) গলি বা পথ। (إِنَّمَا يَخْرُجُ مِنْ غضبةٍ يغضبها) অর্থাৎ দাজ্জাল হঠাৎ করে রেগে যাবে এবং আত্মপ্রকাশ করবে আর নুবুওয়্যাত দাবী করবে ও ফিতনাহ্ বিস্তার করবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৮-[৫] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাথে মক্কার পথে যাত্রী হলাম। সে আমাকে বলল, আমি লোকের পক্ষে থেকে আশ্চর্যজনক ধারণার সম্মুখীন হয়েছি। লোকেরা বলে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তানাদি হবে না? অথচ আমার সন্তানাদি আছে। এ কথাটি তিনি কি বলেননি যে, সে কাফির? অথচ আমি একজন মুসলিম। তিনি কি এ কথাটি বলেননি যে, সে মক্কাহ্ ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না? অথচ আমি মদীনাহ থেকে এসেছি এবং মক্কায় যাচ্ছি। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, অতঃপর সে আমাকে শেষ কথাটি বলল যে, আল্লাহর শপথ! জেনে রাখুন, আমি তার (দাজ্জালের) জন্ম সময়, জন্মস্থান এবং বর্তমানে সে কোথায় থাকে নিশ্চিতভাবে জানি এবং আমি তার বাপ মাকেও চিনি। রাবী [আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ)] বলেন, তার এই শেষ কথাটি আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল। তখন আমি বললাম, তোর সারাদিন অকল্যাণ হোক, তখন (সফর সঙ্গীদের) কেউ বলল, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, তুমিই সেই (ব্যক্তি)? সে বলল, যদি দাজ্জালের পদবি (গুণাবলি) আমাকে প্রদান করা হয়, তাহলে তাকে অপছন্দ করব না। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: صَحِبْتُ ابْنَ صياد إِلَى مَكَّة فَقَالَ: مَا لَقِيتُ مِنَ النَّاسِ؟ يَزْعُمُونَ أَنِّي الدَّجَّالُ أَلَسْتَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّهُ لَا يُولَدُ لَهُ» . وَقَدْ وُلِدَ لِي أَلَيْسَ قَدْ قَالَ: «هُوَ كَافِرٌ» . وَأَنا مُسلم أَو لَيْسَ قَدْ قَالَ: «لَا يَدْخُلُ الْمَدِينَةَ وَلَا مَكَّةَ» ؟ وَقَدْ أَقْبَلْتُ مِنَ الْمَدِينَةِ وَأَنَا أُرِيدُ مَكَّةَ. ثُمَّ قَالَ لِي فِي آخِرِ قَوْلِهِ: أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ مَوْلِدَهُ وَمَكَانَهُ وَأَيْنَ هُوَ وَأَعْرِفُ أَبَاهُ وَأُمَّهُ قَالَ: فَلَبَسَنِي قَالَ: قُلْتُ لَهُ: تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ. قَالَ: وَقِيلَ لَهُ: أَيَسُرُّكَ أَنَّكَ ذَاكَ الرَّجُلُ؟ قَالَ: فَقَالَ: لَوْ عُرِضَ عَلَيَّ مَا كَرِهْتُ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (91 ۔ 89 / 2927)، (7349) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (مَا لَقِيتُ مِنَ النَّاسِ؟ يَزْعُمُونَ أَنِّي الدَّجَّالُ) ইবনু সাইয়্যাদ আশ্চর্য হয়ে বলে, আমি মানুষের কথা থেকে সবচেয়ে বেশি অবাক হই যখন তারা আমার ব্যাপারে বলে যে, আমি দাজ্জাল অথচ নবী (সা.) দাজ্জালের ব্যাপারে বলেছেন, তার কোন সন্তান হবে না, আমার তো সন্তান আছে, সে হবে কাফির আর আমি মুসলিম, সে মক্কাহ্ ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না কিন্তু আমি তো মদীনাহ্ থেকে আসলাম আবার মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা করেছি।
(أَمَا وَاللَّهِ إِنِّي لَأَعْلَمُ مَوْلِدَهُ وَمَكَانَهُ وَأَيْنَ هُوَ) সাবধান! আল্লাহর কসম! আমি দাজ্জালের জন্মগ্রহণের সময়কাল, জন্মস্থান এবং বর্তমানে সে কোথায় আছে সব জানি এবং তার মা-বাবা কে তাও জানি।
(فَلَبَسَنِي) হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) বলেন, এতে সন্দেহ সৃষ্টি হলো।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথা শুনে তার ব্যাপারে আমার মধ্যে সন্দেহ তৈরি হল। যেহেতু সে প্রথমে দাবী করল আমি একজন মুসলিম আবার পরক্ষণই গায়িব সম্পর্কে দাবী করল যে, আমি অধিক জানি। আর যে গায়িবের দাবীদার সে কাফির। অতএব তার মুসলিম ও কাফির হওয়া না হওয়া নিয়ে আমি সন্দিহান হলাম।
ইবনুল মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সে দাজ্জালের জন্ম ও অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছে দাবী করল কিন্তু স্পষ্ট করে না বলেই রেখে দিল যা আমাকে সন্দিহান করে তুলল। অথবা তার এ সমস্ত কথা, আমার সন্তান আছে, মক্কাহ্ ও মদীনায় প্রবেশ এবং মানুষ আমাকে দাজ্জাল মনে করে, আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল।
(أَيَسُرُّكَ أَنَّكَ ذَاكَ الرَّجُلُ؟) আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি তোমাকেই সেই ব্যক্তি তথা দাজ্জাল বলা হয় তাহলে কি খুশি হবে? তখন ইবনু সাইয়্যাদ বলল, যদি দাজ্জালের ঐ সমস্ত গুণাবলি যার দ্বারা সে মানুষকে ধোঁকা দিবে, পথভ্রষ্ট করবে, আমাকে তা দেয়া হয় তাহলে আমিও অপছন্দ করব না। মোট কথা হচ্ছে, দাজ্জালের গুণাবলিতে খুশি হওয়া দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হচ্ছে যে, সে মূলত কাফির। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৪৯৯-[৬] ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, দেখলাম তার চোখ ফোলা। আমি প্রশ্ন করলাম, কখন থেকে তোমার চক্ষুর এ অবস্থা, যা আমি দেখছি? সে বলল, আমি জানি না। তখন আমি বললাম, তুমি জান না অথচ তা তোমার মাথায় রয়েছে? তখন সে বলল, যদি আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করেন, তবে তিনি তোমার লাঠির মধ্যেও দৃষ্টিশক্তি সৃষ্টি করতে ক্ষমতা রাখেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তার নাকের ছিদ্র থেকে গাধার আওয়াজের চেয়েও বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: لَقِيتُهُ وَقَدْ نَفَرَتْ عَيْنُهُ فَقُلْتُ: مَتَى فَعَلَتْ عَيْنُكَ مَا أَرَى؟ قَالَ: لَا أَدْرِي. قُلْتُ: لَا تَدْرِي وَهِيَ فِي رَأْسِكَ؟ قَالَ: إِنْ شَاءَ اللَّهُ خَلَقَهَا فِي عَصَاكَ. قَالَ: فَنَخَرَ كأشد نخير حمَار سَمِعت. رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (99 / 2932)، (7360) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (وَقَدْ نَفَرَتْ عَيْنُهُ) তার চোখ ফুলে উঠেছে। যেন দুই চোখের মাঝে মাংস ফুলে উঠে চামড়া ঝুলে পড়েছে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তার চক্ষু ফুলে উঠেছে, উঁচু হয়ে উঠেছে।
(قُلْتُ: مَتَى فَعَلَتْ عَيْنُكَ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা'আলা কখন তোমার চক্ষুকে এমন করেছেন? আমি তা ফুলা দেখছি। এতে যেন ইবনু সাইয়্যাদ পরীক্ষায় পড়ে গেল, সেকি তাতে একমত পোষণ করবে, না ভিন্নমত পোষণ করবে। তাই সে উত্তর দিল, আমি জানি না।
(قُلْتُ: لَا تَدْرِي وَهِيَ فِي رَأْسِكَ؟) আমি [ইবনু উমার (রাঃ)] বললাম, তুমি জান না, অথচ এটা তোমার মাথায়ই রয়েছে? স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব বলে মনে হওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবেই এটা সম্ভব। সৃষ্টিগতভাবে তার চোখে কোন কিছু ঘটতে পারে যা সে জানে না। কেননা যখন তাক্বদীরের বিষয় চলে আসে চক্ষু তখন অন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের দোষ ধরা থেকে অন্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু পরের দোষ ঠিকই ধরতে পারে। অন্যের চোখের ময়লা দেখতে পায় কিন্তু নিজের চোখের কাষ্ঠখণ্ডও দেখতে পায় না।
(قَالَ: إِنْ شَاءَ اللَّهُ خَلَقَهَا فِي عَصَاكَ) ইবনু সাইয়্যাদ উত্তর দিল আল্লাহ তা'আলা কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে তোমার অতি নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও তুমি জানতে পারবে না।
কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু উমার (রাঃ)-এর কথা, তা তোমার মাথায়ই রয়েছে অথচ তুমি তা জান না? এ কথার প্রেক্ষিতে ইবনু সাইয়্যাদ বলে, আল্লাহ কিছু সৃষ্টি করতে চাইলে অতি নিকটতম হওয়া সত্ত্বেও তুমি তা জানতে পারবে না। সে এ কথা দ্বারা বুঝাতে চাচ্ছে, হয়তো চোখে এমন কিছু ঘটে যেতে পারে যার অনুভূতি তার মধ্যে থাকে না। মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটে যায় যা নিয়ে সে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে, অন্য কিছুর অনুভূতি উপলব্ধি করতেই পারে না।
মিরক্বাত লেখক বলেন, এ রকম দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে, যেমন- কেউ যদি অধিক আনন্দে থাকে বা দুশ্চিন্তায় থাকে সে ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে না।
(فَنَخَرَ كأشد نخير حمَار) সে নাক দিয়ে এমন বিকট আওয়াজ করছে, যেমন- গাধা আওয়াজ করে থাকে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, (اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ) “নিশ্চয় সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হচ্ছে গাধার আওয়াজ”- (সূরা লুকমান ৩১: ১৯)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৮তম খণ্ড, হা. ২৯৩২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৫০০-[৭] মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলতেন যে, ইবনু সাইয়্যাদই দাজ্জাল। তখন আমি বললাম, আপনি আল্লাহর শপথ করে বলছেন? জবাবে তিনি বললেন, আমি ’উমার (রাঃ) কে এ সম্পর্কে নবী (সা.) -এর সামনে কসম করে বলতে শুনেছি, অথচ নবী (সা.) তাতে কোন আপত্তি করেননি। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ قَالَ: رَأَيْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَحْلِفُ بِاللَّهِ أَنَّ ابْنَ الصَّيَّادِ الدَّجَّالُ. قُلْتُ: تَحْلِفُ بِاللَّهِ؟ قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ عُمَرَ يَحْلِفُ عَلَى ذَلِكَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُنْكِرْهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (7355) و مسلم (94 / 2929)، (7353) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَحْلِفُ بِاللَّهِ أَنَّ ابْنَ الصَّيَّادِ الدَّجَّالُ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল্লাহর নামে শপথ করে বলেন, নিশ্চয় ইবনু সাইয়্যাদই দাজ্জাল। তাকে বলা হলো, তুমি কসম করে বলছ যে, ইবনু সাইয়্যাদই দাজ্জাল অথচ তার ব্যাপারটি সন্দেহভাজন। শুধুমাত্র ধারণা করে এ কথা বলা হয়। তখন তিনি উত্তর দিলেন, ‘উমার (রাঃ) স্বয়ং রাসূল (সা.) -এর উপস্থিতিতে কসম করে বলেছেন, নিশ্চয় সেই দাজ্জাল, কিন্তু নবী (সা.) তাকে বাধা দেননি। যদি সে দাজ্জাল নাই হত তাহলে রাসূল (সা.) অবশ্যই তা অপছন্দ করতেন বা বাধা দিতেন। যেহেতু তিনি চুপ ছিলেন তাই কসম করা বৈধ হয়েছে।
অথবা বলা যায়, ‘উমার (রাঃ) দাজ্জাল দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন ইবনু সাইয়্যাদ ঐ সমস্ত দাজ্জালের একজন যারা নুবুওয়্যাত দাবী করবে অথবা মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করবে। প্রকৃতপক্ষে সে আসল দাজ্জাল নয়। যেহেতু রাসূল (সা.) নিজেই তার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না যা তার উক্তি থেকে প্রমাণিত হয়। তিনি তাকে বলেছিলেন, যদি সে দাজ্জাল হয় তাহলে তুমি তার হত্যাকারী নও, তাকে হত্যা করবে ‘ঈসা আলায়হিস সালাম। আর যদি সে না হয় তাহলে তাকে হত্যার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। এখানে ‘উমার (রাঃ) রাসূল -এর নিরবতার উপর প্রবল ধারণা করে কসম করেছেন এবং এটা তার জন্য বৈধ হয়েছে। [আল্লাহ সর্বাধিক ভালো জানেন।]
মিরকাত গ্রন্থকার বলেন, নবী (সা.) ‘উমার (রাঃ)-কে বাধা দেননি কারণ তিনি ঐ সমস্ত দাজ্জালদের একজন যাদের ব্যাপারে তিনি মানুষকে সতর্ক করেছিলেন এই বলে, (يَخْرُجُ فِي أُمَّتِي دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ) “আমার এই উম্মতের মধ্যে ৩০ জনের মতো মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আর ইবনু সাইয়্যাদ ঐ সমস্ত দলের একজন থেকে বাদ নয়। কেননা সে নবী (সা.) -এর উপস্থিতিকেই নুবুওয়্যাত দাবী করেছিল, তাই ‘উমার (রাঃ)-এর কসম করা সত্য বহির্ভূত হয়নি অথবা তিনি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন তার মধ্যে দাজ্জালের কিছু গুণাবলি রয়েছে। আল্লাহই এ ব্যাপারে ভালো জানেন।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১৩দশ খণ্ড, হা. ৭৩৫৫; ‘আওনুল মাবুদ ৭ম খণ্ড, হা. ৪৩২৩)