পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭১-[১৭] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কে এ বাক্যগুলো আমার নিকট হতে গ্রহণ করবে? অতঃপর নিজে সে মতো ’আমল করবে অথবা এমন ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেবে যে সে অনুযায়ী আমল করে। আমি বললাম : আমি হে আল্লাহর রাসূল! এরপর তিনি (সা.) আমার হাত ধরে পাঁচটি গণনা করলেন। তিনি (সা.) বললেন : ১. আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হতে বেঁচে থাকো, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে উত্তম ইবাদাতকারী, ২. আল্লাহ তোমার তাকদিরে যা বন্টন করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে, এতে তুমি হবে মানুষের মাঝে সর্বাপেক্ষা ধনবান, ৩. তোমার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে, এতে তুমি হবে পূর্ণ ঈমানদার, ৪. নিজের জন্য যা পছন্দ করো মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে, তখন তুমি হবে পূর্ণ মুসলিম এবং ৫. বেশি হাসবে না; কেননা বেশি হাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। (আহমাদ ও তিরমিযী এবং তিনি বলেছেন : হাদীসটি গরীব)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم: «من أَخذ عَنِّي هَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ فَيَعْمَلُ بِهِنَّ أَوْ يُعَلِّمُ مَنْ يَعْمَلُ بِهِنَّ؟» قُلْتُ: أَنَا يَا رَسُولَ الله فَأخذ بيَدي فَعَدَّ خَمْسًا فَقَالَ: «اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللَّهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ وَأَحْسِنْ إِلَى جَارِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَلَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكَ تُمِيتُ الْقَلْبَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
سندہ ضعیف ، رواہ احمد (2 / 310 ح 8081) و الترمذی (2305) * ابو طارق مجھول و الحسن البصری مدلس و عنعن ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (اتَّقِ الْمَحَارِمَ) অর্থাৎ তোমার ওপর আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাতে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাক।
(وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللَّهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ) আল্লাহ তোমাকে যে অংশ দিয়েছে তাতে রাজি থাক, তাহলেই তুমি সবার চাইতে ধনী হতে পারবে। অর্থাৎ আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা রেখেছেন তাতো আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেনই, তাই তুমি এতেই সন্তুষ্ট থাকো তবেই তুমি সর্বাধিক ধনী বলে বিবেচিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি তার জন্য নির্ধারিত অংশ পেয়েই সন্তুষ্ট হতে পারে যদিও তা পরিমাণে কম হয় তাহলেই সে অন্যের হাতে যা আছে তার প্রতি লোভ করে না। এতে সে অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়াই ধনী হওয়ার প্রমাণ।
(وَلَا تُكْثِرِ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكَ تُمِيتُ الْقَلْبَ) এখানে হাসির সাথে অন্তরের মৃত্যুর সম্পর্ক হলো এই, মৃতের ব্যক্তির অন্তরে যে রকম আল্লাহর যিক্র-আযকার, ভয় বা ইবাদাত-বন্দেগীর কথা স্মরণ থাকে না বা অনুভূতি জন্মায় না, অনুরূপ অধিক হাসির কারণে সীমাহীন আনন্দে মত্ত থাকায় আল্লাহর যিক্র-আযকার, ভয় বা ‘ইবাদতের কথা স্মরণ থাকে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩০৫, মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭২-[১৮] উক্ত রাবী [আবু হুরায়রাহ্ (রা.)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য ব্যস্ততা হতে মুক্ত হও। আমি তোমাদের হৃদয়কে অভাব-মুক্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার দরিদ্রতার পথ বন্ধ করে দিব। আর যদি তা না করো, তবে আমি তোমার হাতকে (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মিটাব না। (আহমাদ ও ইবনু মাজাহ)।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ: ابْنَ آدَمَ تَفْرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسِدَّ فَقْرَكَ وَإِنْ لَا تَفْعَلْ مَلَأْتُ يَدَكَ شُغُلًا وَلَمْ أسُدَّ فقرك . رَوَاهُ أَحْمد وَابْن مَاجَه
اسنادہ حسن ، رواہ احمد (2 / 358 ح 8681) و ابن ماجہ (4107) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (ابْنَ آدَمَ تَفْرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأَسِدَّ فَقْرَكَ) আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ‘ইবাদতে মশগুল থাক আমি তোমার অন্তরকে ধনাঢ্যতা দিয়ে পূর্ণ করে দিবো এবং তোমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিব।
ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) ইমরান ইবনু হুসায়ন থেকে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয় আল্লাহ তাঁর সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে দেন এবং এমন জায়গা হতে রিযকের ব্যবস্থা করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি মনোযোগী হয় আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়ার প্রতি সোপর্দ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার দায়িত্ব তারই নিজ হাতে তুলে দেন, তার কোন দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেন না। (মিক্বাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৩-[১৯] জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট এমন এক ব্যক্তির আলোচনা করা হলো, যে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীতে খুব চেষ্টা করে (কিন্তু গুনাহ হতে বেঁচে থাকার প্রতি তেমন লক্ষ্য রাখে না) এবং এমন আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো (যে ইবাদত-বন্দেগী কম করে) কিন্তু সে পরহেজগারী অবলম্বন করে (গুনাহ হতে বেঁচে চলে), তখন নাবী (সা.) বলেন, তা (ইবাদত করা এবং ’ইবাদতে সচেষ্ট থাকা) পরহেজগারীর সমতুল্য হতে পারবে না। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: ذُكِرَ رَجُلٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعِبَادَةٍ وَاجْتِهَادٍ وَذُكِرَ آخَرُ بِرِعَّةٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَعْدِلْ بِالرِّعَّةِ» . يَعْنِي الْوَرَعَ. رَوَاهُ الترمذيُّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2519 وقال : غریب) * محمد بن عبد الرحمن بن نبیہ : مجھول الحال ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (لَا تَعْدِلْ بِالرِّعَّةِ) অর্থাৎ ‘ইবাদাতকে পরহেজগারিতা দিয়ে মাপা যায় না। (الرِعَّةِ) মূলত (الورع) ছিল। এর অর্থ হলো, হারাম কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকা।
হাদীসের মূল অর্থ হলো, একজন লোক অনেক ‘ইবাদত করে কিন্তু হারাম থেকে বেঁচে থাকার পরহেজগারিতা কম। পক্ষান্তরে আরেকজন লোক ‘ইবাদত-বন্দেগী কম করলেও হারাম কার্যকলাপ সম্পর্কে খুবই পরহেজগারী। এ দুই ব্যক্তির মধ্যে কে উত্তম? এটা নাবী (সা.) এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বললেন, ‘ইবাদাতকে পরহেজগারিতার সাথে মিলিও না। অর্থাৎ মুত্তাক্বী লোকেদের ‘ইবাদত এমনিতে বেশি হয়। পরিমাণে এবং মর্যাদায় উভয় স্তরে সমান থাকে।
রাগিব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শারী'আতের পরিভাষায় (وَرَعَ) বলা হয় দুনিয়ার সহায়-সম্পদ অর্জনের জন্য তাড়াহুড়া বর্জন করা। অর্থাৎ দুনিয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত না হওয়াকে (وَرَعَ) তথা পরহেজগারিতা বলা হয়। এটা তিন প্রকার- (১) ওয়াজিব : সমস্ত হারাম কাজ হতে বিরত থাকা। এটা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। (২) মানদূব : সন্দেহজনক জিনিস হতে বিরত থাকা। অর্থাৎ কোন কাজ ইসলামী শারী'আতে জায়িয নাকি হারাম তা অস্পষ্ট হলে সে কাজ হতে বিরত থাকা। এটা তা মধ্যম পর্যায়ের লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (৩) ফযীলত বা মর্যাদাপূর্ণ কাজ : অনেক বৈধ কাজ হতে বিরত থাকা এবং সর্বনিম্ন প্রয়োজনীয়তার মধ্যে স্বীমাবদ্ধ থাকা। আর এটা নবী, শহীদ, সিদ্দীক ও সালিহীনদের জন্য প্রযোজ্য। (মিক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৪-[২০] ’আমর ইবনু মায়মূন আল আওদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে নাসীহাতস্বরূপ বললেন : পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটি কাজকে বিরাট সম্পদ মনে করো। ১. তোমার বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, ২. রোগাগ্রস্ত হওয়ার পূর্বে সুস্বাস্থ্যকে, ৩. দরিদ্রতার পূর্বে অভাবমুক্ত থাকাকে, ৪. ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং ৫. মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে। (তিরমিযী মুরসাল হিসেবে একে বর্ণনা করেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ وَهُوَ يَعِظُهُ: اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ مُرْسلا
حسن ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) [و البغوی فی شرح السنۃ (14 / 224 ح 2021) و ابن المبارک فی الزھد (2) و النسائی فی الکبری کما فی تحفۃ الاشراف (13 / 328 ح 19179)] * السند مرسل و رواہ الحاکم (4 / 306) موصولاً من حدیث ابن عباس و صححہ علی شرط الشیخین و وافقہ الذھبی و سندہ حسن ۔
(صَحِيح)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৫-[২১] আবু হুরায়রাহ্ (রা.) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সা.) বলেছেন: তোমাদের অনেকে কেবল এমন সচ্ছল হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে যা পাপাচারে লিপ্ত করবে অথবা এমন দরিদ্রতার যা আল্লাহকে ভুলিয়ে দেবে। অথবা এমন ব্যাধির যা ধ্বংসকারী হবে। অথবা এমন বার্ধক্যের যা বিবেকশূন্য করে ফেলবে অথবা মৃত্যুর যা অতর্কিতে আগমন করবে অথবা দাজ্জালের; আর দাজ্জাল তো সবচাইতে অদৃশ্য বিষয়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মন্দ অথবা কিয়ামতের, অথচ কিয়ামত হলো অত্যন্ত কঠিন ও তিতার ন্যায়। (তিরমিযী ও নাসায়ী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا يَنْتَظِرُ أَحَدُكُمْ إِلَّا غِنًى مُطْغِيًا أَوْ فَقْرًا مُنْسِيًا أَوْ مَرَضًا مُفْسِدًا أَوْ هَرَمًا مُفَنِّدًا أَوْ مَوْتًا مُجْهِزًا أَوِ الدَّجَّالَ فَالدَّجَّالُ شَرٌّ غَائِبٌ يُنْتَظَرُ أَوِ السَّاعَةَ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ الترمذی (2306 وقال : غریب حسن) و النسائی (لم اجدہ) * محرز بن ھارون : متروک ضعفہ الجمھور ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (قاَلَباَدِرُواباِلْأَعُمالِسَبْعً) অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার ফিতনায় জর্জরিত হওয়ার আগেই বেশি বেশি সৎ ‘আমাল করতে হোক। বিশেষ করে উল্লেখিত সাতটি ফিতনাহ্ (বিপদ) দেখা দেয়ার আগেই। কারণ এগুলোর কোন একটি যখন আক্রমণ করে ফেলবে তখন সৎ ‘আমাল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।
(مُنْسِ) শব্দটি আরবী ব্যাকরণে(باب الإفعل) অথবা (التفعيل) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, এমন দারিদ্রতা যা কোন ব্যক্তিকে অস্থির করে ফেলে। ফলে সে অভাব আর ক্ষুধার তাড়নায় ‘ইবাদত বন্দেগীর কথা ভুলে যায়।
(مَوْتًا مُجْهِزًا) দ্রুত আগমনকারী মৃত্যু। অর্থাৎ হঠাৎ মৃত্যু যা অসুস্থতা অথবা বৃদ্ধ হবার কারণে ঘটে । বরং হত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু অথবা ধ্বংস স্তুপের নীচে পরে মৃত্যু ইত্যাদি যা মানুষের ধারণার বাহিরে রয়েছে।
(وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ) কিয়ামত অধিক আতঙ্ক, কঠিন ও তিক্তের। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কিয়ামত সম্পর্কে গাফেল এবং সেজন্য কোন প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ না করে অলস জীবন কাটায় কিয়ামত তার জন্য সর্বাধিক আতঙ্ক ও তিক্তের বস্তু। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩০৬, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৬-[২২] উক্ত রাবী [আবু হুরায়রাহ্ (রা.)] হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সাবধান! নিশ্চয় দুনিয়া অভিশপ্ত, তন্মধ্যে আল্লাহর যিক্র ও আল্লাহ যা কিছু ভালোবাসেন এবং জ্ঞানী ও জ্ঞান অনুসন্ধানকারী ব্যতীত সব কিছুই অভিশপ্ত। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلا ذكرُ الله وَمَا وَالَاهُ وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمٌ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (2322 وقال : حسن غریب) و ابن ماجہ (4112) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা : (إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ) অর্থাৎ দুনিয়া তার অধিবাসীকে আল্লাহ থেকে বিমুখ করে রাখে বলে তাকে অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (مَلْعُونٌ مَا فِيهَا) অর্থাৎ যারা আল্লাহর যিক্র থেকে বিমুখ তারাও অভিশপ্ত।
(وَمَا وَالَاهُ) অর্থাৎ- সৎ কাজ করার জন্য তাকে আল্লাহ ভালোবাসেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ মান্য করে, নিষেধ বর্জন করে এবং তার যিক্রে মত্ত থাকে সে অভিশপ্ত নয়। আল্লামাহ্ মুযহির (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়ায় আল্লাহ তা'আলা যে সমস্ত কার্যকলাপ পছন্দ করেন সেগুলো উদ্দেশ্য।
‘আল্লামাহ্ মানাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (مَلْعُونَةٌ) শব্দের অর্থ হলো (مروكة) অর্থাৎ বর্জনীয়। তিনি বলেন : দুনিয়াকে অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করার কারণ হলো, সে মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে বিমুখ করে প্রবৃত্তির অনুসরণে মত্ত রাখে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩২২; মিরক্বাতুল মাফতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৭-[২৩] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যদি দুনিয়ার মূল্য আল্লাহ তা’আলার কাছে মাছির একটি পাখার সমমূল্য পরিমাণ হত তাহলে তিনি কোন কাফিরকে দুনিয়াতে এক ঢোক পানিও পান করাতেন না। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شربة» رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
سندہ ضعیف ، رواہ احمد (لم اجدہ) و الترمذی (2320 وقال : صحیح غریب) و ابن ماجہ (4110) * عبدالحمید بن سلیمان ضعیف و للحدیث شاھد ضعیف عند القضاعی فی مسند الشھاب (1439) ۔
ব্যাখ্যা : (لَوْ كَانَتِ الدُّنْيَا تَعْدِلُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ مَا سَقَى كَافِرًا مِنْهَا شربة) উক্ত হাদীসের সারমর্ম হলো এই যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার নিকট দুনিয়ার মূল্য এবং মর্যাদা অত্যন্ত নগণ্য। সামান্য মাছির ডানা পরিমাণও নয়। অর্থাৎ একশতের ভিতর শূন্যেরও নিচে। এজন্য দুনিয়াতে মুমিন মুশরিক সবাই আহার পায় এবং সমানভাবে বিচরণ করতে পারে। পক্ষান্তরে আল্লাহর কাছে যদি সরিষার দানা পরিমাণ মূল্য থাকত তবে আল্লাহর অনুগ্রহ শুধু মু'মিনরাই ভোগ করত। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা, ২৩২০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৮-[২৪] (আবদুল্লাহ) ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা বাগ-বাগিচা ও ক্ষেত-খামার (আগ্রহের সাথে) গ্রহণ করো না। ফলে তোমরা দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَتَّخِذُوا الضَّيْعَةَ فَتَرْغَبُوا فِي الدُّنْيَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان»
حسن ، رواہ الترمذی (2328 وقال : حسن) و البیھقی فی شعب الایمان (10391) ۔
(إِسْنَاده جيد)
ব্যাখ্যা : এখানে (الضَّيْعَةَ) শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো চাষাবাদ, ফসলি জমি, বাগান, গ্রামীণ জনপদ ইত্যাদি।
নিহায়াহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির (ضَّيْعَةَ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সম্পদ যা তার জীবিকার কাজ সম্পন্ন করে। যেমন- বিভিন্ন শিল্পকর্ম, ব্যবসায়-বাণিজ্য, চাষাবাদ বা অন্য কিছু।
আল ক্বামূস গ্রন্থে বলা হয়েছে, (الضَّيْعَةَ) -এর অর্থ ফসলী জমি।
(فَتَرْغَبُوا فِي الدُّنْيَا) এখানে উদ্দেশ্য হলো, এমন সব কাজকর্মে সব সময় ব্যস্ত না থাকা যেগুলো সঠিক সময় “ইবাদাত-বন্দেগী করতে বা একেবারেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এমন কাজ বেছে নেয়া উচিত যাতে সময়মত “ইবাদতসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩২৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৭৯-[২৫] আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি (যে পরিমাণ) ইহকাল ভালোবাসে সে (সে পরিমাণ) তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, পক্ষান্তরে যে পরকালকে মুহাব্বাত করে, সে সেই পরিমাণ ইহকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অতএব যা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে তার উপর তাকে প্রাধান্য দাও যা চিরস্থায়ী থাকবে। (আহমাদ ও বায়হাক্বী’র শুআবুল ঈমান)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحَبَّ دُنْيَاهُ أَضَرَّ بِآخِرَتِهِ وَمَنْ أَحَبَّ آخِرَتَهُ أَضَرَّ بِدُنْيَاهُ فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى» . رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان»
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (4 / 412 ح 1993) و البیھقی فی شعب الایمان (10337 ، نسخۃ محققۃ : 9854 و فی السنن الکبری 3 / 370) [و الحاکم (3 / 319 ، 4 / 308)] * وقال المنذری :’’ المطلب : لم یسمع من ابی موسی ‘‘ ۔
ব্যাখ্যা : (فَآثِرُوا مَا يَبْقَى عَلَى مَا يَفْنَى) অবিনশ্বরকে নশ্বরের উপর প্রাধান্য দাও। ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যার সামান্য জ্ঞান ও ঈমান আছে সে ব্যক্তি এটা জানে যে, দুনিয়া অস্থায়ী এবং আখিরাত চিরস্থায়ী। আর এ জানার ফল হলো যে, সে অস্থায়ী বস্তুর প্রতি বিমুখ হবে এবং স্থায়ী বস্তুর প্রতি মনোযোগী হবে। আর অস্থায়ী বস্তুর প্রতি বিমুখতা ও স্থায়ী বস্তুর প্রতি মনোযোগিতার আলামত হলো সে মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, দুনিয়া ও পরকাল হলো বাট-খারার দু'টি পাল্লা। একটি ভারী হলে অন্যটি হালকা হবে। অতএব দুনিয়ার পাল্লা ভারী হলে পরকালের পাল্লা হালকা হবে। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) স্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন যাতে পরকালের পাল্লা ভারী হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮০-[২৬] আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, দীনারের দাসকে ও দিরহামের দাসকে অভিসম্পাত করা হয়েছে। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لُعِنَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَلُعِنَ عَبْدُ الدِّرْهَمِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2375 وقال : حسن غریب) * یونس بن عبید و شیخہ الحسن البصری مدلسان و عنعنا و صح الحدیث بلفظ :’’ تعس عبد الدینار و الدرھم ‘‘ (رواہ البخاری : 886 وغیرہ) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (لُعِنَ عَبْدُ الدِّينَارِ) অর্থাৎ এ ব্যক্তি রহমত ও অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হোক, যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা (অর্থাৎ টাকা পয়সা) পুঞ্জিভূত করতে চরম আগ্রহী এবং অঢেল সম্পদের মালিক হিসেবে বেঁচে থাকার আশায় গুণে গুণে সম্পদ হিফাযাত করে রাখে। এ ধরনের ব্যক্তিরা যেন অর্থ সম্পদের খাদেম ও গোলাম, এজন্য (عَبْدُ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সম্পদ পুঞ্জিভূতকারীকে দীনার ও দিরহামের গোলাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে তার মালিক বলা হয়নি, কারণ সে সম্পদের মুহাব্বাতে এতটাই মোহগ্রস্ত যে, সে তা হতে কক্ষনো মুক্ত হতে পারে না। যেমন গোলাম তার মুনীবমুক্ত হতে পারে না। আর সম্পদের মধ্য হতে দীনার ও দিরহাম উল্লেখ করার কারণ হলো তা দুনিয়ার সম্পদের মূল। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৭৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮১-[২৭] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে মেষ-বকরীর দলের মধ্যে ছেড়ে দিলে ততটুকু ক্ষতিসাধন করে না, যতটুকু কোন ব্যক্তির ধন সম্পদের ভালোবাসা ও মর্যাদার লালসা তার দীনের ক্ষতি করে থাকে। (তিরমিযী ও দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ والشرف لدينِهِ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ والدارمي
حسن ، رواہ الترمذی (2376 وقال : حسن صحیح) و الدارمی (2 / 304 ح 2733) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : (مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا...) উল্লেখিত হাদীসের সারমর্ম হলো এই সম্পদ এবং ঐশ্বর্য পাওয়ার নেশায় মোহগ্রস্ত ব্যক্তির ধর্মীয় কাজে যতটুকু পরিমাণ ক্ষতি হয় কোন বকরীর পালে ক্ষুধার্ত দুটি নেকড়ে ছেড়ে দিলেও ততটুকু পরিমাণ ক্ষতি হয় না।
কাজেই লোভ করা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর যদি সেটা সম্পদশালী হওয়া আর অভিজাত্য ও ঐশ্বর্যের ব্যাপারে হয় তাহলে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মাল ক্ষতিকর এজন্য যে, তা মানুষের মধ্যে এক প্রকার ক্ষমতা সৃষ্টি করে যা মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণের দিকে আহ্বান করে এবং দুনিয়ার নি'আমাতের মধ্যে ডুবে থাকার দিকে আকৃষ্ট করে। ফলে সে ব্যক্তি নি'আমাতের মধ্যে ডুবে থাকা পছন্দ করে। কখনো তা এত বৃদ্ধি পায় যে, সে যদি হালাল উপায়ে তা অর্জন করতে না পারে তাহলে সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে যা তাকে আল্লাহ স্মরণ বিমুখ করে তুলে। অভিজাত্য তথা সুনাম অর্জন ক্ষতিকর এজন্য যে, মানুষ এই সুনাম অর্জনের জন্যই সম্পদ ব্যয় করে যা অতি সূক্ষ্ম শিরক। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৭৬; মিক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮২-[২৮] খব্বাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: মু’মিন ব্যক্তি (জীবনধারণের উদ্দেশে) যা খরচ করে, তাকে তার পুণ্য দেয়া হয়। কিন্তু সে এ মাটির মধ্যে যা ব্যয় করে (তাতে কিছুই দেয়া হয় না)। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن خباب عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا أَنْفَقَ مُؤْمِنٌ مِنْ نَفَقَةٍ إِلَّا أُجِرَ فِيهَا إِلَّا نَفَقَتَهُ فِي هَذَا التُّرَابِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
صحیح ، رواہ الترمذی (2483 وقال : صحیح) و ابن ماجہ (4163) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসে বলা হয়েছে যে, পরিবার-পরিজনের পিছনে যে ব্যক্তি যত প্রকার সম্পদ ব্যয় করে তার সেই সকল ব্যয়ের কারণে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু ঘর-বাড়ী নির্মাণের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে ব্যয় করে তথা সুখ্যাতি অর্জনের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘর বাড়ী নির্মাণ করে এজন্য তাকে কোন সাওয়াব দেয়া হবে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৪৮৩; মিক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৩-[২৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : (কোন ব্যক্তির জীবনধারণের) প্রত্যেকটি খরচ আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় খরচ করার মধ্যে গণ্য- কেবল ঘর-বাড়ি ব্যতীত। কেননা তাতে কোন উপকার নেই। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন : হাদীসটি গরীব]
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «النَّفَقَةُ كُلُّهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا الْبِنَاءَ فَلَا خَيْرَ فِيهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ
اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2482) * زافر : صدوق ضعیف الحدیث ضعفہ الجمھور من کثرۃ اوھامہ کما حققتہ فی التعلیق علی تھذیب التھذیب ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা: (إِلَّا الْبِنَاءَ) এখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থাৎ অপচয় করার কারণে কোন সওয়াব নেই।
(মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৪-[৩০] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বের হলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। এ সময় তিনি একটি উঁচু গম্বুজ দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন : এটা কি? সাথীগণ বললেন : এটা অমুক আনসারী ব্যক্তির। এটা শুনে তিনি (সা.) নীরব রইলেন এবং তা (ঘৃণাভরে) নিজের মনেই রেখে দিলেন। পরিশেষে যখন সেই ঘর ওয়ালা এসে লোকজনের মধ্যে রাসুল (সা.) -কে সালাম করল, তখন তিনি তার দিক হতে চেহারা ঘুরিয়ে নিলেন। এভাবে কয়েকবার করল, এমনকি লোকটি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর অসন্তুষ্টি এবং তার দিক হতে মুখ ফেরানো অনুধাবন করে রসূল (সা.)-এর সাহাবীদের নিকট ব্যাপারটি প্রকাশ করে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি রসূলুল্লাহ (সা.) -কে (আমার প্রতি) অসন্তুষ্ট দেখছি। তারা বললেন : রসূল (সা.) এ দিকে বের হয়ে তোমার গম্বুজটি দেখেন (এতে তিনি অসন্তুষ্ট হন)। এ কথা শুনে লোকটি তার গম্বুজের দিকে ফিরে গেল এবং তা ভেঙ্গে চুরমার করে জমিনের সাথে মিশিয়ে দিলো। এরপর আবার একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) এদিকে বের হলেন; কিন্তু গম্বুজটি দেখলেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, গম্বুজটির কি হলো? তারা বললেন : তার মালিক আমাদের নিকট এসে আপনার অসন্তুষ্টির কথা বললে আমরা তাকে এর কারণ অবগত করলাম, অতঃপর সে তা ভেঙ্গে ফেলেছে। তখন রসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : সাবধান! একান্ত প্রয়োজনীয় ঘর ব্যতীত অন্য কোন ইমারত তার মালিকের জন্য বিপদ (’আযাবের কারণ হবে)। (আবু দাউদ)
(শাইখ আলবানী (রহ.) প্রথমে এই হাদিসটিকে যঈফ বলেছিলেন, তবে পরবর্তীতে তিনি এটিকে সহিহ বলেছেন)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا وَنَحْنُ مَعَهُ فَرَأَى قُبَّةً مُشْرِفَةً فَقَالَ: «مَا هَذِهِ؟» قَالَ أَصْحَابُهُ: هَذِهِ لِفُلَانٍ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ فَسَكَتَ وَحَمَلَهَا فِي نَفْسِهِ حَتَّى إِذَا جَاءَ صَاحِبُهَا فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فِي النَّاسُ فَأَعْرَضَ عَنْهُ صَنَعَ ذَلِكَ مِرَارًا حَتَّى عرفَ الرجلُ الغضبَ فِيهِ والإِعراضَ فَشَكَا ذَلِكَ إِلَى أَصْحَابِهِ وَقَالَ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأُنْكِرُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالُوا: خَرَجَ فَرَأَى قُبَّتَكَ. فَرَجَعَ الرَّجُلُ إِلَى قُبَّتِهِ فَهَدَمَهَا حَتَّى سَوَّاهَا بِالْأَرْضِ. فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَلَمْ يَرَهَا قَالَ: «مَا فَعَلَتِ الْقُبَّةُ؟» قَالُوا: شَكَا إِلَيْنَا صَاحِبُهَا إِعْرَاضَكَ فَأَخْبَرْنَاهُ فَهَدَمَهَا. فَقَالَ: «أَمَا إِنَّ كَلَّ بِنَاءٍ وَبَالٌ عَلَى صَاحِبِهِ إِلَّا مَا لَا إِلَّا مَا لَا» يَعْنِي مَا لَا بُدَّ مِنْهُ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
اسنادہ صحیح ، رواہ ابوداؤد (5237) ۔
ব্যাখ্যা : (أَمَا إِنَّ كَلَّ بِنَاءٍ وَبَالٌ عَلَى صَاحِبِهِ) সাবধান সকল ঘরবাড়ী তার মালিকের জন্য কিয়ামত দিবসে শাস্তির কারণ হবে। এ দ্বারা উদ্দেশ্য সেই ঘরবাড়ী যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য হলো এর দ্বারা অহংকার প্রকাশ করা ও অতিরিক্ত সুখ-সাচ্ছন্দ্যে মেতে থাকা। ঐ ঘর-বাড়ী উদ্দেশ্য নয় যা মানব কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে যেমন মসজিদ, মাদরাসা ও সরাইখানা ইত্যাদি। কেননা এগুলো পরকালের সাওয়াবের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়। অনুরূপভাবে মানুষের প্রয়োজনীয় খাবার, পোশাক ও বাসস্থান বানানো এর অন্তর্ভুক্ত নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৫-[৩১] আবু হাশিম ইবনু ’উতবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে উপদেশস্বরূপ বললেন : সমস্ত ধন-সম্পদের মধ্যে তোমার জন্য একজন খাদিম ও আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহারের জন্য একটি সওয়ারীই যথেষ্ট। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ। আর মাসাবীহের কোন কোন গ্রন্থে (عُتْبَة) এর স্থলে (عُتْبَد)। অর্থাৎ- “তা”-এর পরিবর্তে “দাল” আছে, কিন্তু এটা ভুল।)”।
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن أبي هَاشم بن عُتبَةَ قَالَ: عَهِدَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّمَا يَكْفِيكَ مِنْ جَمْعِ الْمَالِ خَادِمٌ وَمَرْكَبٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ. وَفِي بَعْضِ نسخ «المصابيح» عَن أبي هَاشم بن عتيد بِالدَّال بدل التَّاء وَهُوَ تَصْحِيف
سندہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 290 ح 22863) و الترمذی (2327) و النسائی (8 / 218 ۔ 219 ح 5374) و ابن ماجہ (4103) و ذکرہ البغوی فی مصابیح السنۃ (3 / 423 ۔ 424 ح 4027 و فیہ ’’ عتبۃ ‘‘ بالتاء) * ابو وائل رواہ عن سمرۃ بن سھم وھو رجل مجھول و روی النسائی فی الکبری (5 / 507 ح 9812) بسند حسن عن بریدۃ رضی اللہ عنہ رفعہ : ((یکفی احدکم من الدنیا خادم و مرکب)) وھو یغنی عنہ ۔
ব্যাখ্যা : (خَادِمٌ) অর্থাৎ সফরে খাদেমের প্রয়োজন দেখা দেয় বিধায় এখানে ‘খাদেম’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। (فِي سَبِيلِ اللَّهِ) অর্থাৎ- জিহাদ, হজ্জ অথবা জ্ঞান অর্জনসহ সর্বাবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহার হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৬-[৩২] ’উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) বলেছেন: আদম সন্তানের জন্য বসবাসের একখানা ঘর, লজ্জাস্থান ঢাকার একখানা কাপড়, একখণ্ড শুকনা রুটি ও কিছু পানি ব্যতীত আর কিছুই রাখার হাক্ব বা অধিকার নেই। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيْسَ لِابْنِ آدَمَ حَقٌّ فِي سِوَى هَذِهِ الْخِصَالِ: بَيْتٌ يَسْكُنُهُ وَثَوْبٌ يُوَارِي بِهِ عَوْرَتَهُ وجلف الْخبز وَالْمَاء . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
اسنادہ حسن ، رواہ الترمذی (2341 وقال : صحیح) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : ‘আল্লামাহ্ কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (الحَقٌّ) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মানুষ প্রয়োজনের কারণে যার প্রতি মুখাপেক্ষী হয় এবং তা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। এটাই হলো (المال) শব্দের প্রকৃত উদ্দেশ্য। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৪১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৭-[৩৩] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি [রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট] এসে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষেরাও আমাকে ভালোবাসবে। তিনি বললেন: দুনিয়া বর্জন করো, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষের নিকট যা আছে তার প্রতি লোভ করো না। তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালোবাসবে। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللَّهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ. قَالَ: «ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبُّكَ اللَّهُ وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
ضعیف ، رواہ الترمذی (لم اجدہ) و ابن ماجہ (4102) * فیہ خالد بن عمرو القرشی : کذاب قضاع ولہ متابعات مردودۃ و شواھد ضعیفۃ فالسند موضوع و الحدیث ضعیف ۔
ব্যাখ্যা : (ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبُّكَ اللَّهُ) তুমি দুনিয়া পরিত্যাগ কর তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। অর্থাৎ দুনিয়ার ঐশ্বর্য অর্জন করার ক্ষমতা থাকতেও জাহান্নামের ভয়ে ও জান্নাতের আশায় ঐশ্বর্য অর্জনের পথ পরিহার করে আল্লাহর পথে জীবন ব্যয় করলেই আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন।
(وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبَّكَ النَّاسُ) মানুষের নিকট যা আছে তুমি তা পাওয়ার আশা পরিত্যাগ কর তাহলেই মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে। অর্থাৎ তোমার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তুমি যদি মানুষের কাছে হাত না পাতো এবং চাওয়ার মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট না দাও তাহলেই মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৮-[৩৪] (আবদুল্লাহ) ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সা.) একটি চাটাইয়ে ঘুমিয়েছিলেন, তা হতে উঠলে তাঁর দেহে চাটাইয়ের দাগ পড়ে যায়। তখন ইবনু মাসউদ (রাঃ) আরয করলেন: হে আল্লাহর রসূল! আপনি যদি আমাদেরকে আদেশ দিতেন তবে আমরা আপনার জন্য একখানা বিছানা তৈরি করে বিছিয়ে দিতাম। তিনি (সা.) বললেন: দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? মূলত আমার ও দুনিয়ার উপমা হলো একজন ঐ আরোহীর ন্যায়, যে একটি গাছের নীচে ছায়ায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিলো, অতঃপর বৃক্ষটিকে ছেড়ে চলে যায়। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَن ابْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَامَ عَلَى حَصِيرٍ فَقَامَ وَقَدْ أَثَّرَ فِي جَسَدِهِ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَبْسُطَ لَكَ وَنَعْمَلَ. فَقَالَ: «مَا لِي وَلِلدُّنْيَا؟ وَمَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
حسن ، رواہ احمد (1 / 391 ح 3709) و الترمذی (2377 وقال : صحیح) و ابن ماجہ (4109) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা : মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (مَا لِي وَلِلدُّنْيَا) এর অর্থ হলো, দুনিয়ার প্রতি আমার কোনই মুহাব্বাত নেই। কারণ আমি আখিরাতকে অনুসন্ধান করি এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ২৩৭৭; মিক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৮৯-[৩৫] আবু উমামাহ্ (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আমার বন্ধুদের মধ্যে সে মু’মিনই আমার নিকট ঈর্ষার পাত্র, যে ইহকাল ঝামেলামুক্ত, সালাতের ব্যাপারে আন্তরিক, আল্লাহর ’ইবাদত ভালোভাবে আদায় করে এবং গোপনীয় অবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যে থাকে। মানুষের কাছে অপরিচিত- তার প্রতি অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করা হয় না, তার রিযক প্রয়োজন পরিমাণ হয় এবং তাতেই সে তুষ্ট থাকে। এ কথাগুলো বলে নবী (সা.) নিজের হাতের অঙ্গুলির মধ্যে চুটকি মেরে বললেন: এ অবস্থায় হঠাৎ একদিন তাকে মৃত্যু গ্রাস করে। তার জন্য ক্রন্দনকারিণীও কম হয় এবং মীরাসের সম্পদও স্বল্প ছেড়ে যায়। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَغْبَطُ أَوْلِيَائِي عِنْدِي لَمُؤْمِنٌ خَفِيفُ الْحَاذِ ذُو حَظٍّ مِنَ الصَّلَاةِ أَحْسَنَ عِبَادَةَ رَبِّهِ وَأَطَاعَهُ فِي السِّرِّ وَكَانَ غَامِضًا فِي النَّاسِ لَا يُشَارُ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافًا فَصَبَرَ عَلَى ذَلِكَ» ثُمَّ نَقَدَ بِيَدِهِ فَقَالَ: «عُجِّلَتْ مَنِيَّتُهُ قَلَّتْ بَوَاكِيهِ قَلَّ تُراثُه» . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ وَابْن مَاجَه
اسنادہ ضعیف ، رواہ احمد (5 / 252 ح 22520) و الترمذی (2347) [و ابن ماجہ (4117) بسند آخر فیہ صدقۃ بن عبداللہ و ایوب بن سلیمان ضعیفان)] * علی بن یزید : ضعیف جدًا و عبید اللہ بن زحر : ضعیف ، و للحدیث طرق کلھا ضعیفۃ کما حققتہ فی تخریج مسند الحمیدی (911) و النھایۃ (30) ۔
(ضَعِيفٌ)
ব্যাখ্যা : (أَغْبَطُ أَوْلِيَائِي عِنْدِي لَمُؤْمِنٌ) আমার নিকটে অধিক ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ও আমার সাহায্যকারী যার প্রতি ঈর্ষা করা যায় এবং যার অবস্থায় কামনা করা যায় সে এমন মু'মিন যার মধ্যে। পরবর্তীতে বর্ণিত গুণাবলি রয়েছে। অর্থাৎ অত্র হাদীসে বর্ণিত গুণাবলিসম্পন্ন মু'মিন ব্যক্তিই আমার নিকট অধিক প্রিয়।।
(عُجِّلَتْ مَنِيَّتُهُ) তার মৃত্যু দ্রুত সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ হাদীসে বর্ণিত গুণাবলি যার মধ্যে আছে সে তার সুন্দর অবস্থার জন্য নিজেই তাজ্জব বনে যাবে। আর তার মৃত্যু হবে সহজে। দুনিয়ার সাথে তার সম্পর্কের বেরিয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫১৯০-[৩৬] উক্ত রাবী [আবূ উমামাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : আমার রব্ মক্কার বাতহা’ (প্রশস্ত উপত্যকা) আমার জন্য স্বর্ণে পরিণত করে দেয়ার বিষয় আমার নিকট পেশ করলেন, তখন আমি বললাম : না, হে আমার প্রভু! বরং আমি একদিন পরিতৃপ্ত এবং আরেক দিন ক্ষুধার্ত থাকতে চাই। অতএব আমি যখন অভুক্ত থাকব তখন তোমার কাছে সকাতরে বিনয় প্রকাশ করব এবং তোমাকে স্মরণ করব। আর যখন পরিতৃপ্ত হব তখন তোমার গুণকীর্তন করব এবং তোমার শোকর আদায় করব। (আহমাদ ও তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: عَرَضَ عَلَيَّ رَبِّي لِيَجْعَلَ لِي يطحاء مَكَّة ذَهَبا فَقلت: لَا يارب وَلَكِنْ أَشْبَعُ يَوْمًا وَأَجُوعُ يَوْمًا فَإِذَا جُعْتُ تَضَرَّعْتُ إِلَيْكَ وَذَكَرْتُكَ وَإِذَا شَبِعَتُ حَمِدْتُكَ وَشَكَرْتُكَ . رَوَاهُ أَحْمد وَالتِّرْمِذِيّ
اسنادہ ضعیف جذا ، رواہ احمد (5 / 254 ح 22543) و الترمذی (2347) * علی بن یزید ضعیف جدًا و عبید اللہ بن زحر ضعیف ، انظر الحدیث السابق (5189) ۔
(ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (فَإِذَا جُعْتُ تَضَرَّعْتُ إِلَيْكَ وَذَكَرْتُكَ وَإِذَا شَبِعَتُ حَمِدْتُكَ وَشَكَرْتُكَ) উক্ত হাদীসাংশের ব্যাখ্যায় ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) ধৈর্য এবং কৃতজ্ঞতার মাঝে সমন্বয় সাধন করেছেন। কারণ এ দুটি হলো একজন মুমিনের পরিপূর্ণ গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)