পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৩-[১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’জন লোক পূর্বদিক থেকে এসে (বিশুদ্ধ ও সুচারুরূপে) বক্তৃতা উপস্থাপন করল। লোকেরা তাদের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয় কোন কোন বক্তৃতা যাদুকরী হয়। (বুখারী)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
عَن ابْن عمر قَالَ: قَدِمَ رَجُلَانِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَخَطَبَا فَعَجِبَ النَّاسُ لِبَيَانِهِمَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ لَسِحْرًا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ (رَجُلَانِ) দু’জন বক্তির নামা হলো যিবরিকান ইবনু বাদ্র এবং ‘আমর ইবনু আহতাম। তারা উভয়ে তামীম গোত্রের ছিলেন। নবম হিজরীতে বানী তামীম প্রতিনিধি দলের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে মদীনাতে আগমন করেছিলেন।
(الْمَشْرِقِ) বানী তামীম গোত্রের বসবাস ছিল ইরাকের দিকে। আর ইরাক মদীনার পূর্বে অবস্থিত। তাই বলা হয়েছে পূর্ব দিক থেকে আগমন করেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭৬৭)
(إِنَّ مِنَ الْبَيَانِ لَسِحْرًا) ‘‘নিশ্চয় বক্তব্যে যাদু আছে’’ এটা বলার উদ্দেশ্য নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মতানৈক্য করেছেন। ‘শারহুস্ সুন্নাহ্’ গ্রন্থকার বলেনঃ কতিপয় মুহাদ্দিস মনে করেন, এটা নিন্দা করে বলা হয়েছে। কেননা বক্তব্যে বানোয়াট, মনগড়া কথা কিছু বক্তা এমনভাবে উপস্থাপন করে যে মানুষ তা বিশ্বাস করে ফেলে। তাছাড়া যাদু বৈধ কোন বিষয় নয়। সাধারণত নিন্দার জন্যই অবৈধ বিষয়ের সাথে তুলনা করা হয়, কেউ কেউ মনে করেন, এ বক্তব্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
উভয়ের মাঝে সমন্বয়, সত্য বিষয়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন প্রশংসনীয় আর বাতিল বিষয়কে বক্তব্যে আকর্ষণীয় করে বর্ণনা করা নিন্দনীয়। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৭৬৭)
(البيان বিশুদ্ধ ও সুন্দর শব্দ দ্বারা মনের ভাব প্রকাশকে البيان বলে। الشعر অন্তর্মিলযুক্ত কথা যাতে সূক্ষ্ম জ্ঞান নিহিত থাকে তাকে الشعر বলে।)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৪-[২] উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন কোন কবিতা কৌশল কেবলই। (বুখারী)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنَ الشِّعْرِ حِكْمَةً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যাঃ কবিতায় (حِكْمَةً) আছে এর অর্থ হলো কবিতায় বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুন্দর কথাগুলো প্রজ্ঞাময় হিকমাহ্-এর একটি দিক হলো এটা মানুষকে মূর্খতা থেকে মুক্ত করে। আর কবিতায় যদি হিকমাহপূর্ণ কথা থাকে তাহলে তা কবির জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং মানুষ উপকৃত হয়। যেমন : উপদেশ সম্বলিত কবিতাসমূহ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৪৫; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪৪)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৫-[৩] ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কথায় অতিরঞ্জনকারীরা ধ্বংস হয়েছে। তিনি এ বাক্যটি তিনবার বলেছেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ» . قَالَهَا ثَلَاثًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যাঃ (الْمُتَنَطِّعُونَ) চরমপন্থী অর্থাৎ দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়িকারী এবং কথায় ও কাজে সীমালঙ্ঘনকারী।
* কথার সীমালঙ্ঘন হলো অনর্থক কথাকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা।
* কাজের সীমালঙ্ঘন হলো দীন গর্হিত কোন কাজকে সুন্দরভাবে উদযাপন করা।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬৭০/৭)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৬-[৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে সত্য কথা যা কোন একজন কবি বলেছেন, তা হচ্ছে লাবীদ-এর উক্তি- أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللهَ بَاطِلُ অর্থাৎ- ’’জেনে রাখ! আল্লাহ তা’আলা ছাড়া সবকিছুই বাতিল ও ধ্বংস হবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُصَدِّقُ كَلِمَةٍ قَالَهَا الشَّاعِرُ كَلِمَةُ لَبِيدٍ: أَلَا كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلَا اللَّهَ بَاطِلُ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা সর্বাধিক বিশুদ্ধ কথা এ কারণে যে, তা নীচের আয়াতের কথার সাথে মিলে গেছে,
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘‘পৃথিবী পৃষ্ঠে যা আছে সবই ধ্বংসশীল, কিন্তু চিরস্থায়ী তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)- যিনি মহীয়ান, গরীয়ান’’- (সূরাহ্ আর্ রহমা-ন ৫৫ : ২৬-২৭)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এ ধরনের কবিতা অর্থাৎ যেগুলোর অর্থ কুরআনের আয়াতের সাথে মিলে যায় সেগুলো প্রশংসনীয়।
কবি লাবীদ যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন কবিতা রচনা ছেড়ে দেন এবং বলতেন, আমার জন্য কুরআনই যথেষ্ঠ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮৪৯)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৭-[৫] ’আমর ইবনু আশ্ শারীদ (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন। একদিন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে আরোহণ করলাম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, উমাইয়াহ্ ইবনু আবী সালত-এর কোন কবিতা কি তোমার মুখস্থ আছে? আমি বললামঃ জ্বী হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সেটা শুনাও! তখন আমি সেটার একটি পংক্তি আবৃত্তি করলাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আরো শুনাও। অতঃপর আমি আরো একটি পংক্তি আবৃত্তি করলাম। এবারও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আরো শুনাও। এভাবে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (উমাইয়াহ্ ইবনু আবী সালত-এর) একশ’ পংক্তি আবৃত্তি করে শুনালাম। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: رَدِفْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ: «هَلْ مَعَكَ مِنْ شِعْرِ أُمَيَّةَ بْنِ أَبِي الصَّلْتِ شَيْءٌ؟» قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: «هِيهِ» فَأَنْشَدْتُهُ بَيْتًا. فَقَالَ: «هيهِ» ثمَّ أنشدته بَيْتا فَقَالَ: «هيه» ثمَّ أنشدته مائَة بَيت. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমাইয়াহ্-এর কবিতা পছন্দ করতেন এবং এমন কবিতা রচনায় উৎসাহিত করতেন। কেননা তাতে আল্লাহর একত্ববাদ ও পরকাল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। অতএব যে সমস্ত কবিতার বিষয়বস্তু ভালো সেগুলো আবৃত্তি ও শ্রবণ করা বৈধ। (শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৫৬/২)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৮-[৬] জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত ছিলেন। তাঁর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে অঙ্গুলিকে লক্ষ্য করে কবিতা আবৃত্তি করলেনঃ هَلْ أَنْتِ إِلَّا أُصْبُعٌ دَمِيْتِ وَفِيْ سَبِيْلِ الله مَا لقِيْتِ। অর্থাৎ- হে অঙ্গুলি! তুমি একটি অঙ্গুলি ছাড়া আর কিছুই নও। তুমি রক্তাক্ত হয়েছ ঠিকই, তবে যা কিছু হয়েছে আল্লাহর পথে হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَن جُنْدُبٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي بَعْضِ الْمَشَاهِدِ وَقَدْ دَمِيَتْ أُصْبُعُهُ فَقَالَ:
هَلْ أَنْتِ إِلَّا أُصْبُعٌ دَمِيتِ وَفِي سَبِيلِ الله مَا لقِيت
مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা কিরমানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ঘটনাটি উহুদ যুদ্ধের।
* সহীহ মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক গর্তে ছিলেন তখন ঘটনাটি ঘটে।
* আর বুখারী-এর এক বর্ণনা আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটছিলেন তখন পাথর লেগে আঙ্গুল কেটে যায়।
* মতগুলোর সমন্বয়ে মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধে ছিলেন এবং সালাতের জন্য হেঁটে যাচ্ছিলেন পথিমধ্যে ঘটনাটি ঘটে। আর মুসলিম-এর বর্ণনা নিয়ে ‘আল্লামা কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটার পড়তে ভুল আছে। غاز এর স্থানে বারী غار পড়েছেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৮৯-[৭] বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বুরায়যার দিন (যেদিন ইয়াহূদী কুরায়যাহ্ গোত্রকে অবরোধ করেছিলেন) হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি মুশরিকদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ বা বিদ্রূপাত্মক কবিতা আবৃত্তি করো! জিবরীল (আ.) তোমার সাথে আছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান (রাঃ)-কে বলতেন : তুমি আমার পক্ষ হতে কাফিরদেরকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জবাব দাও। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান (রাঃ)-এর জন্য দু’আ করতেন : হে আল্লাহ! তুমি رُوْحُ الْقُدُسِ তথা জিবরীল-এর দ্বারা হাসসানকে সাহায্য করো। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَن البَراءِ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ قُرَيْظَةَ لِحَسَّانَ بْنِ ثَابِتٍ: «اهْجُ الْمُشْرِكِينَ فَإِنَّ جِبْرِيلَ مَعَكَ» وَكَانَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِحَسَّانَ: «أَجِبْ عَنِّي اللَّهمَّ أيِّدْه بروحِ الْقُدس» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ (يَوْمَ قُرَيْظَةَ) বানী কুরায়যাহ্ মদীনার এক পার্শ্বে অবস্থানকারী ইয়াহূদী সম্প্রদায় ছিল। তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখার সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাস্সান -কে এ কথা বলেছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৯০-[৮] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ চলাকালে নিজের পক্ষর কবিদেরকে বলেছেনঃ তোমরা কুরায়শদের প্রতি ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপমূলক কবিতা আবৃত্তি করো। কেননা এটা তাদের জন্য তীরের আঘাতের তুলনায় কঠোরতর। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «اهْجُوا قُرَيْشًا فَإِنَّهُ أَشَدُّ عَلَيْهِمْ مِنْ رَشْقِ النَّبْلِ» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যাঃ উক্ত হাদীসে কাফিরদের নিয়ে ব্যঙ্গ-কবিতা রচনার বৈধতা পাওয়া যায়। তবে প্রথমেই কাফিরদের ব্যঙ্গ করা এবং গালাগালি করা উচিত নয়। কারণ তারাও প্রত্যুত্তরে ইসলামকে ও মুসলিমদের গালিগালাজ করবে। এজন্যই আল্লাহ বলেনঃ
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللهِ فَيَسُبُّوا اللهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
‘‘(হে মু’মিনগণ!) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, কেননা তারা তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত শত্রুতার বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে গালি দেবে.....’’- (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ১০৮)।
(শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৪৯০/১৫৭)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৯১-[৯] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কবি হাসসান (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল-এর পক্ষ থেকে মুশরিকদের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মোকাবিলা করতে থাকবে, ততক্ষণ রূহুল কুদস [জিবরীল (আ.)] তোমাকে সাহায্য করতে থাকবেন। ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এটাও বলতে শুনেছি, হাসসান কাফিরদের প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের কবিতা পাঠ করেছে। এতে সে মুসলিমদেরকে শান্তি ও পরিতৃপ্তি দান করেছে এবং নিজেও পরিতৃপ্তি লাভ করেছে। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنْهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لِحَسَّانَ: «إِنَّ رُوحَ الْقُدُسِ لَا يَزَالُ يُؤَيِّدُكَ مَا نَافَحْتَ عَنِ اللَّهِ وَرَسُوله» . سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «هَجَاهُمْ حَسَّانُ فَشَفَى وَاشْتَفَى» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৯২-[১০] বারা’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দাকের যুদ্ধে নিজেও মাটি কেটে সরাচ্ছিলেন। এমনকি তাঁর পেট মুবারাক ধূলোয় মলিন হয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলছিলেন : আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহ তা’আলার হিদায়াত না হত, তবে আমরা নিশ্চয় হিদায়াত পেতাম না, আমরা সাদাকা দিতাম না এবং সালাতও আদায় কতাম না। সুতরাং হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করো। আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হই, আমাদের অবস্থানে আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখো।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কবিতার চরণটি আবৃত্তি করলেনঃ إِنَّ الْأولى قَدْ بَغَوْا عَلَيْنَا إِذَا أَرَادُوْا فِتْنَةً أَبَيْنَا। অর্থাৎ- ’’প্রথমোক্ত দল (কাফিররা) আমাদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে। যখন তারা আমাদেরকে বিপর্যয়ে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা করে, তখন আমরা একে অস্বীকার করি।’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উচ্চস্বরে পংক্তিগুলো আবৃত্তি করতেন এবং اَبَيْنَا (আমরা অস্বীকার করি) اَبَيْنَا (আমরা অস্বীকার করি) কথাটি বেশি জোরে উচ্চারণ করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنِ الْبَرَّاءِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْقُلُ التُّرَابَ يَوْمَ الْخَنْدَقِ حَتَّى اغْبَرَّ بَطْنُهُ يَقُولُ:
وَاللَّهِ لَوْلَا اللَّهُ مَا اهْتَدَيْنَا وَلَا تَصَدَّقْنَا وَلَا صلَّينا
فأنزلنْ سكينَة علينا وثبِّتِ الْأَقْدَام إِن لاقينا
إِنَّ الأولى قَدْ بَغَوْا عَلَيْنَا إِذَا أَرَادُوا فِتْنَةً أَبَيْنَا
يَرْفَعُ بِهَا صَوْتَهُ: «أَبَيْنَا أَبَيْنَا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৯৩-[১১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহযাবের যুদ্ধে মুহাজির ও আনসারগণ পরিখা খনন ও মাটি সরাতে লাগল, আর বলতে লাগল- আমরা ঐ লোক, যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে জিহাদের জন্য বায়’আত করেছি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা জীবিত থাকি।’’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদের জবাবে বললেনঃ ’’হে আল্লাহ! পরকালের জীবন ছাড়া আর কোন জীবন নেই। তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা করো।’’ (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَن أنسٍ قَالَ: جَعَلَ الْمُهَاجِرُونَ وَالْأَنْصَارُ يَحْفِرُونَ الْخَنْدَقَ وَيَنْقُلُونَ الترابَ وهم يَقُولُونَ:
نَحن الذينَ بَايعُوا محمَّداً عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِينَا أَبَدَا
يَقُولُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُجِيبُهُمْ:
اللَّهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلْأَنْصَارِ والمهاجرة
مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ (اَللّٰهُمَّ لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَهْ) এর মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখিরাতী জীবনের স্থায়িত্ব বুঝিয়েছেন। যে ব্যাপারে একাধিক কুরআনের আয়াত পাওয়া যায়।
আল্লাহ বলেনঃ (وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَّأَبْقٰى) ‘‘অথচ আখিরাতই অধিক উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।’’ (সূরাহ্ আল আ‘লা- ৮৭ : ১৭)
وَقَالَ النَّوَوِيُّ: هُوَ مَا يَسُدُّ الرَّمَقَ. وَقَالَ الْقُرْطُبِيُّ أَيْ: مَا يَقْرِيهِمْ وَيَكْفِيهِمْ بِحَيْثُ لَا يُشْعِرُهُمُ بِالْجَهْدِ وَلَا يُرْهِقُهُمُ الْفَاقَةُ وَلَا تُذِلُّهُمُ الْمَسْأَلَةُ وَالْحَاجَةُ، وَلَا يَكُونُ فِي ذَلِكَ أَيْضًا فُضُولٌ يُخْرِجُ إِلَى التَّرَفُّهِ وَالتَّبَسُّطِ فِي الدُّنْيَا وَالرُّكُونِ إِلَيْهَا
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আখিরাত (দুনিয়াবী) আকাঙক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আখিরাতমুখী তাদেরকে সীমিত করে দেয় যাতে তাদের কষ্টানুভব হয় না। আর হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না এবং কোন প্রয়োজন বা চাওয়া তাদেরকে লাঞ্ছিত করে না। আর এটা তাদের জন্য অতিরিক্ত হবে না। এটা দুনিয়াতে তাদেরকে প্রশস্ততা দিবে এবং পরকালমুখী করবে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ কথা বলার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝাতে চেয়েছেন যে, সাহাবীরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যে ওয়া‘দা করেছেন তা যদি পূর্ণ করেন তাহলে তাদেরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিদান দান করবেন যা একমাত্র আখিরাতে পাবে। কেননা আখিরাত হলো চিরস্থায়ী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৯. প্রথম অনুচ্ছেদ - বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তি
৪৭৯৪-[১২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির পেটকে পুঁজ দ্বারা পরিপূর্ণ করা, যা পেটকে নষ্ট করে দেয়, তা কবিতা দ্বারা ভর্তি করা অপেক্ষা উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبَيَانِ وَالشِّعْرِ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِأَنَّ يمتلىءَ جَوْفُ رَجُلٍ قَيْحًا يَرِيهِ خَيْرٌ مِنْ أَنْ يمتلئ شعرًا» مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির উদ্দেশ্য হলো কাব্য চর্চায় বেশি মনোনিবেশ করাটা কুরআন শিক্ষা ও শারী‘আতের জ্ঞান শিক্ষা থেকে বিরত রাখে। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি কাব্য চর্চার নিন্দা করেছেন।
‘আল্লামা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এর দ্বারা শুধু ঐ সমস্ত কবিতা উদ্দেশ্য যেগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিন্দা করা হয়েছে। তবে অনেকেই এ মতকে গ্রহণ করেননি বরং বলেছেন, এর দ্বারা সকল কবিতা চর্চায় বেশি মনোনিবেশ করার বিষয়টি নিষেধ করা হয়েছে।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৫৫; শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৫৭/৭)