পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৮১-[৩২] ’আবদুল হামীদ ইবনু জুবায়র ইবনু শায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়াব (রহিমাহুল্লাহ)-এর কাছে বসেছিলাম। তিনি আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করলেন যে, তাঁর দাদা ’’হাযন’’ (حَزْن) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কী? তিনি জবাবে বললেনঃ আমার নাম ’’হাযন’’। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমার নাম ’’সাহল’’ (سَهْل) রাখলাম। তিনি বললেনঃ আমি আমার নাম পরিবর্তন করতে চাই না। কেননা এ নাম আমার পিতা রেখেছেন। ইবনু মুসাইয়াব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, তারপর হতে (এ নামের দরুন) আমাদের পরিবার দুঃখন্ডকষ্টে দিনাতিপাত করছে। (বুখারী)[1]
عَنْ
عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ فَحَدَّثَنِي أَنَّ جَدَّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا اسْمُكَ؟» قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ قَالَ: «بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ» قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمَّانِيهِ أَبِي. قَالَ ابْنُ الْمُسَيَّبِ: فَمَا زَالَتْ فِينَا الْحُزُونَةُ بَعْدُ. رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যাঃ ফাতহুল বারীতে রয়েছে, ‘আবদুল হামিদ ইবনু জুবায়র ইবনু শায়বাহ্ বলেছেন, আমি বসেছিলাম সা‘ঈদ ইবনু আল মুসাইয়্যাব-এর নিকটে, অতঃপর তিনি আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তার দাদা হাযন (حزن) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, আমার নাম হাযন حزن (দুঃখ, কষ্ট, বেদনা...)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, বরং তুমি سهل (সাহল)। রাবী বলেন, আমি আমার নাম পরিবর্তন করতে সক্ষম নই, যে নাম রেখেছেন আমার আববা। তখন ইবনুল মুসাইয়্যাব বলেন, এরপর থেকে আমাদের মাঝে আল হাযূনাহ্ الحزونة চিন্তা ঝামেলা অবস্থান করে, চলতে থাকে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৯৩)
শিক্ষা : এ হাদীস থেকে বুঝা যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ ও সুন্নাতকে অনুসরণ করার জন্য অপছন্দনীয় নাম পরিবর্তন করা ও তার আদেশের আনুগত্য করা। এটাতে কল্যাণ অবশ্যই রয়েছে। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা অবগত আছেন আমরা তা অবগত নই। অতএব আমরা জানতে পারলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত ও আদেশ না পালন করলে অশান্তি আসতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হিফাযাত করেন। যা সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে অবশ্যই নাম পরিবর্তন করব যা বিভিন্ন রিওয়ায়াতে উল্লেখ রয়েছে।
পরিচ্ছেদঃ ৮. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - নাম রাখা
৪৭৮২-[৩৩] আবূ ওয়াহ্ব আল জুশামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখবে। আল্লাহ তা’আলার নিকট নামসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম হলো ’আবদুল্লাহ এবং ’আবদুর রহমান। আর (অর্থ ও প্রকৃতির দিক দিয়ে) বেশি সত্য নাম হলো- ’’হারিস’’ (কর্ষণকারী) ও ’’হাম্মাম’’ (ইচ্ছা পোষণকারী) ও এবং সবচেয়ে মন্দ নাম হলো, ’’হারব’’ (লড়াই) ও ’’মুররাহ্’’ (তিক্ততা ও দুঃখ)। (আবূ দাঊদ)[1]
বিঃ দ্রঃ এ হাদীসটিকে আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) প্রথমে য‘ঈফ বলেছিলেন, য‘ঈফুল জামি‘ ২৪৩৫, ইরওয়া ১১৭৪, আল কালিমুত্ব ত্বইয়িব ২১৭ নং। অতঃপর তিনি তার (য‘ঈফ) মতটি থেকে ফিরে এসে সহীহ বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৯০৪, ১০৪০; আল কালিমুত্ব ত্বইয়িব ২১৮ নং, দারুল মা‘আরিফ ও তার ভূমিকায় ৫ নং পৃষ্ঠা দ্রঃ। দেখুন- তারাজু‘আতুল ‘আল্লামা আল আলবানী ফিত্ তাসহীহ ১/৬ পৃঃ, হাঃ ৪৩।
وَعَنْ
أَبِي وَهَبٍ الْجُشَمِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَسَمُّوا أَسْمَاءَ الْأَنْبِيَاءِ وَأَحَبُّ الْأَسْمَاءِ إِلَى اللَّهِ عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ وَأَصْدَقُهَا حَارِثٌ وهمامٌ أقبحها حربٌ ومُرَّة» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-গণের নামে নাম রাখার অনুমোদন দিয়েছেন এবং বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় নাম আল্লাহর নিকট ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুর রহমান এবং অধিক সত্য নাম হারিস ও হাম্মান, আর নিকৃষ্ট নাম হারব ও মুররাহ্।
নাসায়ীর এক বর্ণনায় রয়েছে, মুনযিরী বলেনঃ "وَكَانَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ الْفَأْلَ الْحَسَنَ وَالِاسْمَ الْحَسَنَ" নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর (فأل) (ফাল)-কে সুন্দর ও উত্তম নামকে ভালোবাসেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
শিক্ষা : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবীগণের নাম রাখার অনুমতি দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুর রহমান অতি প্রিয় নাম। আর উত্তম ও সুন্দর নাম হলে ভালো এবং নিকৃষ্ট নাম অপছন্দ করেন। আর পরিবর্তন করেন এবং পরিবর্তন করতে অনুপ্রেরণা প্রদান করেন। [সম্পাদক]