পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩২৮-[২৫] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কামীস (কুর্তা) ছিল সর্বাধিক প্রিয় পোশাক। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
عَن أم سَلمَة قَالَتْ: كَانَ أَحَبُّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمِيصَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ القميص ‘কামীস’ শব্দটি ‘আরবী ব্যাকরণের মূলনীতির ভিত্তিতে ص বর্ণে যবর এবং পেশ উভয় নিয়মে পাঠ সিদ্ধ। কামীস এর অর্থ জামা, যা দুই হাতা বা আস্তিন ও পকেটযুক্ত সেলাইকৃত হয়ে থাকে, কোন কোন এলাকায় একে কুর্তা বলে অভিহিত করা হয়।
শরীর আবৃত রাখার জন্য অল্প কাপড়ে, অল্প খরচে এটি একটি উত্তম পোশাক। সে যুগে চাদর বা অন্যান্য পোশাকের চেয়ে শরীর ঢাকার জন্য এটি ছিল একটি ভদ্র এবং শালীন পোশাক। এ জন্য তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রিয় পোশাক ছিল।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০২০; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৬২)
আজকের যুগের লম্বা পাঞ্জাবী, কাবলী সেট, এপ্রোণ ইত্যাদি শালীন পোশাকগুলোকে কামীসের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩২৯-[২৬] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামার আস্তিন হাতের কব্জি পর্যন্ত ছিল। [তিরমিযী, আবূ দাঊদ; আর ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসটি হাসান গরীব][1]
হাদীসটির য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘শাহ্র ইবনু হাওশাব’’ নামে একজন রাবী আছে। যে তার দুর্বল মুখস্থ শক্তির কারণে য‘ঈফ। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৫/৪৭৪ পৃঃ, ২৪৫৮ নং হাদীসের আলোচনা দ্রঃ।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن أسماءَ بنت يزِيد قَالَتْ: كَانَ كُمُّ قَمِيصِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الرُّصْغِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কামীসের আস্তিন বা হাতা ছিল হাতের কব্জি পর্যন্ত। رصغ শব্দের অর্থ হাতের কব্জি। এ শব্দ কোন বর্ণনায় ص এর পরিবর্তে س অক্ষর দ্বারা পঠিত হয়েছে, উভয় পঠনে অর্থ একই।
এ হাদীসের ভিত্তিতে ‘আল্লামা জুযরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সুন্নাত হলো জামার আস্তিন হতে হবে কব্জি পর্যন্ত, তা অতিক্রম করা চলবে না। কামীস ছাড়া জুব্বা, কোট ইত্যাদি পোশাকের ক্ষেত্রে মুহাক্কিক ফুকাহাদের মত হলো সেটাও অঙ্গুলির মাথা অতিক্রম করতে পারবে না। অবশ্য আবুশ্ শায়খ ইবনু হিব্বান উক্ত সনদে উল্লেখ করেছেন, كَانَ يَدُ قَمِيصِ رَسُولِ اللهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَسْفَلَ مِنَ الرُّسْغِ অর্থাৎ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কামীসের হাতা ছিল কব্জির নীচ পর্যন্ত।
তিনি মুসলিম ইবনু ইয়াসার-এর সূত্রে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, তাতে উল্লেখ আছে,
كَانَ رَسُولُ اللهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يَلْبَسُ قَمِيصًا فَوْقَ الْكَعْبَيْنِ مُسْتَوِيَ الْكُمَّيْنِ لِأَطْرَافِ أَصَابِعِه
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জামা পরিধান করতেন যার বহর পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত ছিল আর দুই হাতার ঝুল ছিল আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত। সুতরাং আস্তিনের পরিমাপ কব্জি পর্যন্তই হতে হবে এমনটি নয় বরং কেউ ইচ্ছা করলে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত তৈরি করতে পারবেন।
রইল বিভিন্ন রকম বর্ণনা। এ প্রেক্ষিতে মুহাদ্দিসগণের মতামত হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একাধিক জামা ছিল, যার কোনটির আস্তিন বা হাতা ছিল হাতে কব্জি পর্যন্ত, কোনটির ছিল আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত, কোনটি ছিল ঢোলাঢিলা, কোনটি ছিল আঁটসাট। সুতরাং কোন বর্ণনা কোন বর্ণনার বিপরীত নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০২২)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩০-[২৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই জামা পরতেন, তখন ডানদিক হতে শুরু করতেন। (তিরমিযী)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا لَبِسَ قَمِيصًا بَدَأَ بميامنه. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবহারিক কাজ-কর্ম ও গৃহস্থলী কাজ-কর্ম ডানদিক থেকে শুরু করতেন। তিনি চিরুনি করা, জুতা পরা, জামা পায়জামা ইত্যাদি পোশাক পরতেও ডানদিক থেকে শুরু করতেন। খুলতেও তিনি ডান দিক থেকে শুরু করতেন, অর্থাৎ জামা পরার সময়ও ডান হাত আস্তিনে আগে প্রবেশ করাতেন, খোলার সময়ও ডান হাত আগে বের করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৬৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩১-[২৮] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, মু’মিনের ইযার (লুঙ্গি, পেন্ট ও পায়জামা) পায়ের অর্ধনলা পর্যন্ত থাকা চাই, তবে তার নিচে টাখনু বা গিরার উপর পর্যন্ত হওয়ার মধ্যে কোন দোষ নেই। কিন্তু টাখনুর নিচে যা যাবে তা জাহান্নামে যাবে। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। তিনি আরো বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ ইযার হেঁচড়িয়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দৃষ্টি করবেন না। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِزْرَةُ الْمُؤْمِنِ إِلَى أَنْصَافِ سَاقَيْهِ لَا جُنَاحَ عَلَيْهِ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ مَا أَسْفَلَ مِنْ ذَلِكَ فَفِي النَّارِ» قَالَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «وَلَا يَنْظُرُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى مَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ মু’মিনের লুঙ্গি বা পাজামার ঝুল নিস্ফ সাক অর্থাৎ পায়ের নলার মাঝামাঝি পর্যন্ত হবে এবং তার চুড়ান্ত সীমা হবে পায়ের গিট বা গিরা পর্যন্ত। এর মাঝে যে কোন জায়গায় ঝুল পড়লে তাতে কোন দোষ নেই। এর নীচে গেলে অর্থাৎ কাপড়ের ঝুল গিরার নিচে গেলে তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। ইতিপূর্বে এ বিষয়ের পূর্ণ ব্বিরণ অতিবাহিত হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৮৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩২-[২৯] সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা [ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইযার, জামা ও পাগড়ীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ তার কোন একটিকে হিঁচড়িয়ে চলবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে তাকাবেন না। (আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن سَالم عَنْ أَبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْإِسْبَالُ فِي الْإِزَارِ وَالْقَمِيصِ وَالْعِمَامَةِ مِنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসের ব্যাখ্যাও ইতিপূর্বে হয়ে গেছে। অবশ্য সেখানে শুধু ইযার বা পায়জামা-লুঙ্গির কথা উল্লেখ হয়েছে। অত্র হাদীসে জামা ও পাগড়ীর কথা উল্লেখ হয়েছে, অর্থাৎ জামা অথবা পাগড়ীও যদি পায়ের গিরার নিচে চলে যায় তবে তার হুকুম অনুরূপ। সে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন রহমাতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না বা তার প্রতি রহম করবেন না। আর পায়ের ঐ অংশ জাহান্নামে যাবে অর্থাৎ সে স্বয়ং নিজেই জাহান্নামে যাবে। পূর্বে আলোচনা হয়েছে অবশ্য এই ঝুলানো অহংকার গর্বের সাথে হলে তার জন্য এই শাস্তি, অথবা এভাবে পোশাক পরায় যদি সে অভ্যস্ত হয়ে পরে তাহলে; অন্যথায় ভুলক্রমে হলে, অথবা অজান্তে হলে, কিংবা ঘটনাক্রমে হলে তার জন্য এ শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; শারহুন নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৫৩৪৯)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৩-[৩০] আবূ কাবশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের টুপি ছিল চ্যাপটা। (তিরমিযী এবং তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি মুনকার।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবূ সা‘ঈদ’’ তার নাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর, হাদীস বিশারদদের নিকট তিনি একজন য‘ঈফ রাবী। দেখুন- তিরমিযী ১৭৮২ নং হাদীসের আলোচনা এবং তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৩৯০-৩৯২ নং পৃঃ, ১৭৮২ নং হাদীসের আলোচনা দ্রঃ।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن أبي كبشةَ قَالَ: كَانَ كِمَامُ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُطْحًا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حديثٌ مُنكر
ব্যাখ্যাঃ كمام শব্দটি كمة এর বহুবচন, এর অর্থ টুপি। এ শব্দটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মিরক্বাতুল মাফাতীহ গ্রন্থকার বলেন, وهى القلنسوة المدؤرة গোলাকার টুপি বিশেষ, যা মাথাকে আবৃত করে রাখে।
بطحا শব্দের অর্থ সমতল বা প্রশস্ত ভূমি। এখানে টুপির চওড়া বা প্রশস্ত ছাদকে বুঝানো হয়েছে যা উঁচু হয়ে থাকে না, বরং সমতল বা চ্যাপ্টা হয়ে মাথার সাথে লেগে থাকে। কেউ কেউ বলেছেন, كمام শব্দটি كم এর বহুবচন, যেমন قفاف এর অর্থ উঁচু টিলা, অনুরূপ كمام এর অর্থ উঁচু টুপি।
بطحا এর অর্থ প্রশস্ত, ভারতীয় এবং রুমী টুপিগুলো যেমন সংকীর্ণ এমনটি নয়। বরং এর প্রশস্ততা প্রায় এক বিঘত পরিমাণ। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি মুনকার বলায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা পরিহার করা হলো।] [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৪-[৩১] উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইযার সম্পর্কে আলোচনা করলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যাপারে মহিলাদের বিধান কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এক বিঘত পরিমাণ ঝুলাতে পারবে। তখন উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেনঃ এমতাবস্থায় তার অঙ্গ (পা) খুলে যাবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে এক হাত তার অধিক যেন না হয়। (মালিক, আবূ দাঊদ, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن أم سَلمَة قَالَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ ذَكَرَ الْإِزَارَ: فَالْمَرْأَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «تُرْخِي شِبْرًا» فَقَالَتْ: إِذًا تَنْكَشِفُ عَنْهَا قَالَ: «فَذِرَاعًا لَا تَزِيدُ عَلَيْهِ» . رَوَاهُ مَالِكٌ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনকে ইযার বা লুঙ্গি ও পায়জামা ঝুলানোর পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন যে, তা হবে নিসফে সাক বা পায়ের নলার আধাআধি পর্যন্ত। উক্ত কথার প্রেক্ষিতে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) প্রশ্ন রাখেন, হে আল্লাহর রসূল! মহিলাদের ব্যাপারে কি ঐ একই হুকুম বা তাদের বিধান কি? উত্তরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা নিসফে সাক থেকে আরো এক বিঘত কাপড় ছেড়ে দিবে যাতে নিচের বাকী অংশ ঢেকে নেয়।
উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) আবার বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে তো তাদের পা বেরিয়ে থাকবে। অর্থাৎ চলার সময় তার পা উন্মুক্ত হয়ে যাবে, তখন কেমন হবে? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত পরিমাণ ঝুলিয়ে দিবে, এর বেশি নয়। এ পরিমাণ হলো লোকবিশেষ, আর এই ঝুল যাতে মাটি পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং পুরো পা দু’খানা ঢেকে থাকে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে বেশি ঝুলাতে নিষেধ করেছেন, যাতে কাপড় একেবারে মাটির সাথে হেঁচড়িয়ে ময়লা বা কর্দমাক্ত হয়ে না যায় এবং চলার সময় পা পেঁচিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৩১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৫-[৩২] আর তিরমিযী ও নাসায়ীর এক রিওয়ায়াতে ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বললেন, এমতাবস্থায় তাদের পা খুলে যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তবে তারা এক হাত পরিমাণ ঝুলাতে পারবে। তার অধিক যেন না হয়।[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ وَالنَّسَائِيِّ عَنِ ابْنِ عُمَرَ فَقَالَتْ: إِذًا تَنْكَشِفُ أَقْدَامُهُنَّ قَالَ: «فَيُرْخِينَ ذِرَاعًا لَا يزدن عَلَيْهِ»
ব্যাখ্যাঃ উপরোল্লিখিত হাদীসটি ইমাম তিরমিযী এবং ইমাম নাসায়ী স্ব স্ব গ্রন্থে ইবনু ‘উমার-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন যে, নিসফে সাক থেকে এক বিঘত কাপড়ে মহিলাদের চলার পথে পায়ের খানিকটা প্রকাশ পেয়ে যাবে তখন কেমন হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উত্তরে বললেন, তাহলে এক হাত পর্যন্ত কাপড় ঝুলাবে, এর বেশি নয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৬-[৩৩] মু’আবিয়াহ্ ইবনু ক্বুররাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন আমি মুযায়নাহ্ গোত্রের একদল লোকের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে গেলাম। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে বায়’আত করল। সে সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (জামার) বুতাম খোলা ছিল। তখন আমি আমার হাতখানা তাঁর জামার ভিতরে ঢুকালাম এবং মোহরে নুবুওয়াতটি স্পর্শ করলাম। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ مُزَيْنَةَ فَبَايَعُوهُ وَإِنَّهُ لَمُطْلَقُ الْأَزْرَارِ فَأَدْخَلْتُ يَدِي فِي جَيْبِ قَمِيصِهِ فَمَسِسْتُ الْخَاتم. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ বর্ণনাকারী মু‘আবিয়াহ্-এর পিতা কুররাহ্ ইবনু আইয়্যাস হলো ‘আরবের প্রসিদ্ধ মুযায়নাহ্ বা মুযার গোত্রের লোক। তিনি পরবর্তীতে ইরাকের বাসরাহ্ নগরীতে বাস করতেন। তিনি একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করেছিলেন, সেই সময়ের ঘটনা এখানে বর্ণনা করেছেন।
‘কামূস’ গ্রন্থকারের মতে رهط শব্দের অর্থ দল। এর সংখ্যা হলো তিন থেকে দশ। কেউ কেউ বলেছেন, এর সর্বোচ্চ সংখ্যা হলো চল্লিশ। মুযায়নাহ্ গোত্রের যারা এসেছিলেন, তারা সকলেই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বায়‘আত করলেন। এর মধ্যে বর্ণনাকারী কুররাহ্ ইবনু আইয়্যাসও ছিলেন।
এক বর্ণনায় এসেছে, মুযায়নাহ্ গোত্রের এক দল লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগমন করেছিলেন, তাদের সংখ্যা ছিল চারশত। বিভিন্ন সময় আগমনের কারণে তাদের সংখ্যায় বিভিন্ন রকম ছিল। অত্র হাদীসসহ আরো বেশ কিছু হাদীসে দেখা যায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামার বুতাম খোলা ছিল এবং গলা ছিল খোলা, ফলে গলার মধ্য দিয়ে সহজেই হাত ঢুকানো যেত।
এমনকি কিছু হাদীসে তো দেখা যায় তার জামার বুতামই ছিল না। আসলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে অবস্থা ভেদে কখনো বুতাম খোলা রাখতেন আবার কখনো আটকিয়ে রাখতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৭-[৩৪] সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কেননা তা অতি পবিত্র ও অধিক পছন্দনীয় আর তোমাদের মৃতদেরকে সাদা কাপড়ে কাফন পরাও। (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن سَمُرَة أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْبَسُوا الثِّيَابَ الْبِيضَ فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وَأَطْيَبُ وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ সাদা কাপড় ময়লা ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে সবসময় পবিত্র এবং পরিচ্ছন্ন থাকে। ‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ সাদা কাপড়ে ময়লা লাগলে সহজেই তা পরিলক্ষিত হয় ফলে মানুষ তা দ্রুত এবং বেশি বেশি ধৌত করে রাখে। যা অন্য কোন রঙিন কাপড়ের বেলায় হয় না। আবার রঙের ভিতরেও অপবিত্রতা থাকতে পারে, কিন্তু রংবিহীন সাদা কাপড় তা থেকে মুক্ত। অথবা এটা পরলে মানুষের মন অহংকার গর্ব থেকে মুক্ত থাকে যা সকল আত্মিক পবিত্রতার মূল কথা।
সাদা কাপড়ে মৃতদের কাফন দেয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ, সুতরাং সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া বিশ্বজনীন সুন্নাত বা রীতি-বিধান। সাদা কাপড়কে অধিক পবিত্র এবং উত্তম বলার কারণ হলো এটা আল্লাহর ফিতরাহ্ বা প্রকৃতির রঙের উপর বিদ্যমান।
এই ফিতরাহ্ বা প্রকৃতির উপর থাকার জন্যই আল্লাহর নির্দেশ। সুতরাং ফিতরাহ্ বা প্রকৃতির সেই সাদা রঙের কাপড়ে কাফন দেয়ার জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ। এতে এদিকেও ইশারা রয়েছে যে, জীবিত মৃত্যু প্রত্যেকেই আল্লাহর কাছে মূল ফিতরাতী বেশেই যেন ফিরে যায়। তাকেই সাদার সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাওহীদ। প্রত্যেক মানুষ ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ শিশু জন্মগতভাবে সে তাওহীদের উপরই জন্ম নেয় পরবর্তীতে পিতা-মাতা তাকে হয় ইয়াহূদী বানায়, না হয় খ্রিষ্টান। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৮১০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৮-[৩৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই পাগড়ী বাঁধতেন, তখন শামলা উভয় কাঁধের মধ্য দিয়ে (পিছনের দিকে) ঝুলিয়ে দিতেন। (তিরমিযী; আর তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পাগড়ী বাঁধতেন তখন তার পাগড়ীর দুই প্রান্ত দুই কাঁধের উপর দিয়ে পিছনে ঝুলিয়ে রাখতেন। কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় সামনের দিকে এবং পিছনের দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন। ইবনুল জাওযী ‘আল ওয়াফা’ গ্রন্থে আবূ মা‘শার-এর সূত্রে ইবনু ‘আবদুস্ সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে পাগড়ী বাঁধতেন? উত্তরে তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাথায় পাগড়ীর প্যাঁচ ঘুরিয়ে পিছন দিক থেকে সাজিয়ে তুলতেন এবং তার প্রান্ত দেশ দুই কাঁধের উপর ফেলে রাখতেন।
তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে, তার পূত্র নাফি‘ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ইবনু ‘উমারও এমনিভাবে পাগড়ী বাঁধতেন। ‘উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ, সালিম প্রমুখকে উক্ত নিয়মেই পাগড়ী বাঁধতে দেখেছি। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৩৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৩৯-[৩৬] ’আবদুর রহমান ইবনু ’আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাগড়ী বেঁধে দিলেন এবং তার একদিক আমার সামনে অপরদিক পিছনে ঝুলিয়ে দিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘সুলায়মান ইবনু খর্রাবূয’’ নামের এক বর্ণনাকারী, তাকরীরের মধ্যে ইবনু হাজার আল ‘আস্ক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সে মাজহূল। ইমাম যাহাবী বলেনঃ তাকে চেনা যায় না। আল জারহু ওয়াত্ তা‘দীল (জাওয়ামিউল কালিম সফ্টওয়্যার)। এ ছাড়াও আরেকজন বর্ণনাকারী আছে শায়খুন মিন আহলিল মদীনাহ্। যার পরিচয় জানা যায়নি। দেখুন- তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৩৩৭ পৃঃ, ১৭৩৬ নং হাদীসের আলোচনা দ্রঃ।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: عَمَّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَدَلَهَا بَيْنَ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক সময়ই সাহাবীদের মাথায় নিজ হাতে পাগড়ী বেঁধে দিতেন। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফকে তিনি নিজ হাতে পাগড়ী বেঁধে দেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার মাথায় পাগড়ী বেঁধে পাগড়ীর একপ্রান্ত সামনের দিকে এবং অপরপ্রান্ত পিছনের দিকে ঝুলিয়ে দিতেন।
মীরাক (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আবূ দাঊদ, মুসান্নাফ প্রমুখ মুহাদ্দিস মদীনার শায়খ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় পাগড়ী বেঁধে দেন, তিনি পাগড়ীর একপ্রান্ত আমার সামনের দিকে এবং অপরপ্রান্ত পিছনের দিকে ঝুলিয়ে দেন।
ইবনু আবূ শায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মাথায় পাগড়ী পরিয়ে দেন এবং তার দুই প্রান্ত কাঁধের উপর ঝুলিয়ে দেন।
সীরাত গ্রন্থসমূহে বিশুদ্ধ বর্ণনায় উল্লেখ আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো পাগড়ীর প্রান্ত দুই কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখতেন আবার কখনো প্রান্তদেশ ঝুলানো ছাড়াই পাগড়ী পরিধান করতেন। এ কথা থেকে জানা যায় যে, এসব কাজের সবই সুন্নাত। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ১৭৮১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪০-[৩৭] রুকানাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের ও মুশরিকদের মধ্যে পার্থক্য হলো টুপির উপরে পাগড়ী বাঁধা। অর্থাৎ- আমরা টুপির উপর পাগড়ী বাঁধি আর তারা টুপি ছাড়া পাগড়ী বাঁধে। (তিরমিযী, তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি গরীব এবং তার সানাদটিও মজবুত নয়।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবূ জা‘ফার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু রুকানাহ্’’ নামে একজন বর্ণনাকারী। যিনি মাজহূল, এছাড়াও তিনি তার পিতা থেকে তিনিও মাজহূল। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৬০৭২। আবুল হাসান আল ‘আসকালানী নামের বর্ণনাকারীও মাজহূল। তিরমিযী ১৭৮৪ নং হাদীসের আলোচনা।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن ركَانَة عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «فَرْقُ مَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْمُشْرِكِينَ الْعَمَائِمُ عَلَى الْقَلَانِسِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ وَإِسْنَاده لَيْسَ بالقائم
ব্যাখ্যাঃ (عَمَائِمٌ) ‘‘আমায়িম’’ শব্দটি ‘ইমামাহ্’ শব্দের বহুবচন। এ হাদীসে ‘আমায়িম’ দ্বারা ‘ইমামাহ্ বা পাগড়ী পরিধান করাকে বুঝানো হয়েছে। আল ‘আযীযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিমরা টুপি পরিধান করে এবং তার উপরে পাগড়ী পরিধান করে। শুধু টুপি পরিধান করা মুশরিকদের বেশ-ভূষা। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, এ হাদীসের মর্মার্থ হলো, আমরা টুপির উপর পাগড়ী পরতাম আর মুশরিকরা শুধু টুপি পরেই তুষ্ট থাকতো। তবে এ হাদীসটি যেহেতু সানাদ ও অর্থের দিক দিয়ে গ্রহণযোগ্য নয় সেহেতু এটির ব্যাখ্যায় বেশি কথা না বলে এ কথা বলাই যথেষ্ট যে, হাফিয ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘‘যাদুল মা‘আদ’’ গ্রন্থে বলেছেন,
وكان يلبَسُها ويلْبَسُ تحتها القَلَنسُوة. وكان يلبَس القلنسُوة بغير عمامة، ويلبَسُ العِمامة بغير قلنسُوة
‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ী পরিধান করতেন এবং তার নীচে টুপি পরতেন। তিনি পাগড়ী ছাড়া শুধু টুপিও পরতেন, আবার টুপি ছাড়া শুধু পাগড়ীও পরতেন।’’
ইমাম সুয়ূত্বী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘‘জামি‘ আস্ সগীর’’-এ ত্ববারানীর সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সাদা টুপি পরতেন। আল ‘আযীযী-এর মতে, এ বর্ণনাটির সানাদ হাসান। রওয়ানী ও ইবনু আসাকির ইবনু ‘আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
كان يلبس القلانس تحت العمائم وبغير العمائم، ويلبس العمائم بغير قلانس، وكان يلبس القلانس اليمانية، وهن البيض المضربة ويلبس القلانس ذوات الاَذان في الحرب، وكان ربما نزع قلنسوته فجعلها سترة بين يديه وهو يصلي.
‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ীর নিচে টুপি পরিধান করেতেন আবার পাগড়ী ছাড়াও টুপি পরিধান করেতেন। আবার টুপি ছাড়াও পাগড়ী পরিধান করতেন। তিনি সাদা রঙের ইয়ামানী মুদারী টুপি পরিধান করতেন। আর তিনি যুদ্ধের মধ্যে বিশেষ টুপি পরিধান করতেন। অনেক সময় তিনি সালাত আদায়ের জন্য মাথা থেকে টুপি খুলে সেটিকে নিজের সামনে সুতরাহ্ হিসেবে ব্যবহার করতেন।’’ (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০৭৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪১-[৩৮] আবূ মূসা আল আশ্’আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ স্বর্ণ ও রেশমের ব্যবহার আমার উম্মাতের নারীদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে। (তিরমিযী ও নাসায়ী। ইমাম তিরমিযী বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ।)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُحِلَّ الذَّهَبُ وَالْحَرِيرُ لِلْإِنَاثِ مِنْ أُمَّتِي وَحُرِّمَ عَلَى ذُكُورِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَقَالَ التِّرْمِذِيّ: هَذَا صَحِيح
ব্যাখ্যাঃ রেশমের কাপড় ও স্বর্ণ উম্মাতে মুহাম্মাদীর পুরুষদের জন্য হারাম- এ কথা পুরুষ শিশুদেরকেও এ হুকুমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও শিশুরা তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যাদের ওপর শারী‘আতের হুকুম মানার আবশ্যকতা রয়েছে। মূলত শিশুদেরকে যারা এসব পরিধান করাবে তাদের ক্ষেত্রে এ হারামের হুকুম প্রযোজ্য হবে। (অর্থাৎ শিশুরা যেহেতু অবুঝ সেহেতু যে সকল বুঝমান ব্যক্তিরা শিশুদেরকে রেশমের কাপড় ও স্বর্ণ পরিধান করাবে তারা এই হারামে পতিত হওয়ার গুনাহে লিপ্ত হবে।) অত্র হাদীসে স্বর্ণ দ্বারা স্বর্ণের গহনা বা অলঙ্কার উদ্দেশ্য। স্বর্ণের ও রৌপ্যের পাত্র পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য হারাম। এমনিভাবে রূপার গহনা শুধু নারীদের জন্য জায়িয। তবে আংটিসহ কিছু ক্ষেত্রে পুরুষের জন্যও রূপা ব্যবহার করা জায়িয। হাদীসে উল্লেখিত দু’টি বস্তু অর্থাৎ রেশমের কাপড় ও স্বর্ণ পরিধান করা উম্মাতে মুহাম্মাদীর নারীদের জন্য হালাল করা হয়েছে।
বুখারী ও মুসলিমে ‘উমার , আনাস , ইবনুয্ যুবায়র ও আবূ উমামাহ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ فِي الْآخِرَةِ
‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমের কাপড় পরিধান করবে সে ব্যক্তি আখিরাতে তা পরিধান করতে পারবে না (তথা নি‘আমাত থেকে বঞ্চিত)।’’
মুসনাদে আহমাদ, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও ইবনু হিব্বানে ‘আলী (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন রেশমের কাপড় তার ডান হাতে নিলেন এবং স্বর্ণ তার বাম হাতে রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, إِنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِى ‘‘এই দু’টি বস্তু আমার উম্মাতের পুরুষের জন্য হারাম’’।
বুখারী ও মুসলিমে ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّمَا يَلْبَسُ الْحَرِيرَ فِي الدُّنْيَا مَنْ لَا خَلَاقَ لَهٗ فِي الْآخِرَةِ ‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমের কাপড় পরিধান করবে তার জন্য আখিরাতের নি‘আমাতের কোন অংশ থাকবে না।’’ (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭২০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪২-[৩৯] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, তখন তাঁর নাম পাগড়ী, জামা, চাদর (ইত্যাদি) উল্লেখ করে এ দু’আ পড়তেন- ’’আল্ল-হুম্মা লাকাল হামদু কামা- কাসাওতানীহি আস্আলুকা খায়রাহূ ওয়া খয়রা মা- সুনি’আ লাহূ ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন শাররিহী ওয়া শাররি মা- সুনি’আ লাহূ’’ অর্থাৎ- হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমারই, তুমিই এ কাপড়টি আমাকে পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে তার কল্যাণ কামনা করছি এবং যে উদ্দেশে তা প্রস্তুত করা হয়েছে তারও কল্যাণ কামনা করছি এবং তার অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই এবং যে উদ্দেশে তা প্রস্তুত করা হয়েছে তার অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাই। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةً أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاءً ثُمَّ يَقُولُ «اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كسوتَنيه أَسأَلك خَيره وخيرَ مَا صُنِعَ لَهُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
ব্যাখ্যাঃ ইবনু হিব্বান আনাস (রাঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন পোশাক পরিধান করতেন তখন জুমু‘আহ বার তা পরিধান করতেন। এ হাদীস দ্বারা যদিও বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নতুন কাপড় পরিধান করার ক্ষেত্রে জুমু‘আহ বারকে নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু হাদীসটি গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় নতুন কাপড় পরিধানের কোন নির্দিষ্ট দিন বা ক্ষণ নির্ধারণ করা প্রমাণিত নয়। অত্র হাদীসে পাগড়ী, কামীস ও চাদর- এ তিনটি কাপড়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে উদাহরণ স্বরূপ। মূলত এগুলো ছাড়াও অন্যান্য কাপড় যেমন লুঙ্গি, সেলওয়ার, মোজা ইত্যাদি কাপড়ও সাধারণভাবে এ হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য।
পোশাকের কল্যাণ হচ্ছে এর স্থায়িত্ব, পরিচ্ছন্নতা এবং জরুরী প্রয়োজনে তা পরিধান করার উপযোযী থাকা। যে সকল জরুরী উদ্দেশে এই কাপড় তৈরি করা হয়েছে তা হলো দীর্ঘ সময় গরম ও ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পাওয়া এবং গোপন অঙ্গ ঢেকে রাখা। এ সকল কাপড় পরিধানের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এসব কাপড় যেন সেসব কাঙিক্ষত উদ্দেশে পৌঁছার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেসব উদ্দেশ্যের জন্য কাপড় তৈরি করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহর ‘ইবাদাত ও আনুগত্য করতে সাহায্য নেয়া। অত্র হাদীসে যে পোশাকের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চেয়ে বলা হয়েছে তার অর্থ হলো পোশাক হারাম হওয়া, অপবিত্র হওয়া, দীর্ঘস্থায়ী না হওয়া অথবা সেসব কাপড় গুনাহ, অকল্যাণ, গর্ব-অহংকার, আশ্চর্যান্বিত হওয়া ও ধোঁকাবাজির কারণ থেকে সেসব কাপড় মুক্ত থাকা।
অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, নতুন পোশাক পরিধান করার সময় আল্লাহর প্রশংসা করা মুস্তাহাব।
ইমাম হাকিম তাঁর ‘‘আল মুসতাদরাকে’’ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا اشْتَرٰى عَبْدٌ ثَوْبًا بِدِينَارٍ أَوْ بِنِصْفِ دِينَارٍ فَحَمِدَ اللهَ إِلَّا لَمْ يَبْلُغْ رُكْبَتَيْهِ حَتّٰى يَغْفِرَ اللهُ لَهٗ.
‘‘কোন বান্দা যখন এক দীনার বা অর্ধ দীনারের বিনিময়ে কোন কাপড় ক্রয় করে, অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করে, তাহলে তার দুই হাঁটু পর্যন্ত কাপড় পৌঁছার পূর্বেই তাকে মাফ করে দেন।’’ (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৬৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪৩-[৪০] মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি খাবার খাওয়ার পর এ দু’আ, ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব’আমানী হা-যাত্ব ত্ব’আ-মা ওয়ারাযাকানীহি মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’ পড়ে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাকে এ খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতিরেকেই তিনি তা আমাকে দান করেছেন। (তিরমিযী)[1]
আর আবূ দাঊদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরিধান করে এ দু’আ, ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী কাসা-নী হা-যা- ওয়ারাযাকানীহি মিন গয়রি হাওলিম্ মিন্নী ওয়ালা- ক্যুওয়াহ্’’ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন) পড়ে তার আগের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن معاذِ بن أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ أَكَلَ طَعَامًا ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا الطَّعَامَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَزَادَ أَبُو دَاوُدَ: وَمَنْ لَبِسَ ثَوْبًا فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ
ব্যাখ্যাঃ এ হাদীসে প্রথমাংশের শেষে (وَمَا تَأَخَّرَ) ‘ওয়ামা- তাআখখারা’ অর্থাৎ ‘‘যা পরবর্তীতে হবে’’ বাক্যাংশটি আছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ তাঁর সুনানে এই অংশসহ হাদীসটি উল্লেখ করছেন বলে কিছু সংস্করণে পাওয়া যায় আবার কিছু সংস্করণে পাওয়া যায় না। তবে মিশকাত প্রণেতা সে অংশটুকু ছাড়াই হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কারী বলেন, ত্বীবী বলেছেনঃ তিরমিযী ও আবূ দাঊদে ‘ওয়ামা- তাআখখারা’ বাক্যাংশটি নেই। যদিও মিশকাতের কিছু সংস্করণে ‘ওয়ামা- তাআখখারা’ বাক্যাংশ যোগ করা হয়েছে এ ধারণায় যে, হাদীসের পরের অংশের শেষে ‘ওয়ামা- তাআখখারা’ বাক্যাংশটি আছে। অতএব এখানেও আছে মনে হয়। উল্লেখ্য যে, হাদীসের পরবর্তী অংশ তথা (غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه..... وَمَنْ لَبِسَ ثَوْبًا) অংশের শেষে ‘ওয়ামা- তাআখখারা’ বাক্যাংশটি সকল সংস্করণে রয়েছে। এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০১৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪৪-[৪১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে ’আয়িশাহ্! যদি তুমি (ইহকাল ও পরকালে) আমার সান্নিধ্য লাভের ইচ্ছা রাখো, তবে দুনিয়ার সম্পদ থেকে এ পরিমাণই নিজের জন্য যথেষ্ট মনে করো, যে পরিমাণ একজন মুসাফিরের পাথেয় হিসেবে যথেষ্ট হয় এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সাহচর্য হতে বেঁচে থাকো, আর তালি না লাগানো পর্যন্ত কোন কাপড়কে পুরাতন (ব্যবহারে অনুপযোগী) ধারণা করো না। (তিরমিযী)[1]
ইমাম তিরমিযী বলেছেনঃ এ হাদীসটি গরীব। কেননা আমরা হাদীসটি সালিহ ইবনু হাসসান ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে অবহিত হইনি। আর মুহাম্মাদ ইবনু ইসমা’ঈল (বুখারী) বলেছেনঃ সালিহ ইবনু হাসসান মুনকারুল হাদীস।
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, ‘‘সলিহ ইবনু হাস্সান’’ নামক বর্ণনাকারী খুবই দুর্বল। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১২৯৩।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَائِشَةُ إِذَا أَرَدْتِ اللُّحُوقَ بِي فَلْيَكْفِكِ مِنَ الدُّنْيَا كَزَادِ الرَّاكِبِ وَإِيَّاكِ وَمُجَالَسَةَ الْأَغْنِيَاءِ وَلَا تَسْتَخْلِقِي ثَوْبًا حَتَّى تُرَقِّعِيهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ صَالِحِ بْنِ حَسَّانَ قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ: صَالِحُ بْنُ حَسَّانَ مُنكر الحَدِيث
ব্যাখ্যাঃ ইমাম তিরমিযী নিজেই তাঁর জামি‘ কিতাবে এ হাদীসটি উল্লেখ করে হাদীসটির একটি অংশ (وَإِيَّاكِ وَمُجَالَسَةَ الْأَغْنِيَاءِ) এর ব্যাখ্যায় সহীহ মুসলিমের একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি হলো : আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلٰى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِى الْمَالِ وَالْخَلْقِ فَلْيَنْظُرْ إِلٰى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ مِمَّنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ
‘‘তোমাদের কারো দৃষ্টি যদি এমন ব্যক্তির ওপর নিপতিত হয়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে বেশি মর্যাদা দেয়া হয়েছে তাহলে সে যেন তার চেয়ে অধিক সম্পদশালীকে বাদ দিয়ে এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে তার চেয়ে হীন অবস্থায় রয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম হাঃ ৭৬১৭)
জামি‘ আত্ তিরমিযীতে হাদীসটি উল্লেখের পর ‘আওন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহিমাহুল্লাহ)-এর উক্তি উল্লেখ করেছেন, ‘আওন ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ্ বলেন,
صَحِبْتُ الأَغْنِيَاءَ فَلَمْ أَرَ أَحَدًا أَكْثَرَ هَمًّا مِنِّي أَرٰى دَابَّةً خَيْرًا مِنْ دَابَّتِي وَثَوْبًا خَيْرًا مِنْ ثَوْبِي وَصَحِبْتُ الْفُقَرَاءَ فَاسْتَرَحْتُ
‘‘আমি ধনীদের সাথে উঠা-বসা করেছি। আমি নিজের চেয়ে বেশী বিষণ্ণ অন্য কাউকে অনুভব করি না। (আমার ভারাক্রান্ত হৃদয় হওয়ার কারণ এই যে,) আমি তাদের বাহনকে আমার বাহনের চেয়ে উত্তম দেখতে পাই এবং তাদের কাপড়কে আমার কাপড়ের চেয়ে উত্তম দেখতে পাই। আর আমি গরীব লোকেদের সাথে মেলামেশা করে অনেক বেশী শান্তি অনুভব করেছি।’’
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয়তমা স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে ‘আয়িশাহ্! তুমি যদি জান্নাতে আমার সাথে আমার মর্যাদার স্তরে থাকতে চাও তাহলে দুনিয়ায় সহজ-সরল বিষয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। কারণ নিশ্চয় তুমি শেষ পরিণতির দিকে চলতে থাকা একজন পথিক মাত্র। আর তুমি ধনীরা যেখানে থাকে, উঠাবসা করে সেখান থেকে দূরে থাকবে অর্থাৎ তাদের সাহচার্য থেকে সতর্ক থাকবে। আর তোমার কোন পরিধেয় কাপড় পুরাতন হলে সাথে সাথে ফেলে দিবে না। বরং সেটি সেলাই করে পরিধান করবে।
শারহুস্ সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবনু মালিক বলেন,
رَأَيْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ؓ وَهُوَ يَوْمَئِذٍ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ وَقَدْ رَقَعَ ثَوْبَهُ بِرِقَاعٍ ثَلَاثٍ لَبَّدَ بَعْضَهَا فَوْقَ بَعْضٍ وَقِيلَ خَطَبَ عُمَرُ ؓ وَهُوَ خَلِيفَةٌ وَعَلَيْهِ إِزَارٌ فِيهِ اثْنَا عَشْرَة رُقْعَةً انْتَهٰى.
আমি ‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ)-কে দেখলাম, তিনি আমীরুল মু’মিনীন থাকাকালীন তাঁর কাপড়ে তিনটি তালি লাগিয়ে পরিধান করতে দেখেছি। তালিগুলোর কতিপয় তালি অন্যটির লাগানো হয়েছিল। আর এও বলা হয়েছে যে, একদিন খলীফাহ্ ‘উমার (রাঃ) খুত্ববাহ্ দিচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় তাঁর কাপড়ে বারোটি তালি ছিল। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৮১)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪৫-[৪২] আবূ উমামাহ্ ইয়াস ইবনু সা’লাবাহ্ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি শুনছ না? তোমরা কি শুনছ না? (অর্থাৎ- মনোনিবেশে শুনার জন্য) সাদাসিধে জীবন-যাপন করাই ঈমানের অঙ্গ, সাদাসিধে জীবন-যাপন করাই ঈমানের অঙ্গ। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
عَن أبي أُمَامَة
إِياس بن ثعلبةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا تَسْمَعُونَ؟ أَلَا تَسْمَعُونَ أَنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ أَنَّ الْبَذَاذَةَ مِنَ الْإِيمَانِ؟» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ‘‘তোমরা কি শুনছ’’ বাক্যাংশটি একাধিকবার বলা দ্বারা এর পরের কথার উপর জোর দেয়া উদ্দেশ্য। ‘‘আল বাযাযাহ্’’ অর্থ হলো খারাপ গঠন বা আকৃতি এবং কাপড়ের জীর্ণতা। তবে এখানে বাযাযাহ্ দ্বারা পোশাক-পরিচ্ছদে নম্রতা প্রকাশকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জরাজীর্ণ পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে নম্রতা প্রকাশ ঈমানের অঙ্গ। কেউ যদি চায় কখনো কখনো বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ এবং গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশে সুন্দর নয় এমন পোশাক পরিধান করবে তাহলে সেটা করা যেতে পারে। এটাই ‘বাযাযাহ্’ দ্বারা উদ্দেশ্য। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১৫৭)
যদিও উত্তম হচ্ছে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে যে নি‘আমাত দিয়েছেন তা প্রকাশ করা। এজন্যই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إن الله يحب إذا أنعم على عبد نعمة يحب أن يرى أثر نعمته على عبده
‘‘যখন আল্লাহ তা‘আলা তার কোন বান্দাকে নি‘আমাত প্রদান করেন তখন তিনি তার নি‘আমাতের আলামাত তাঁর বান্দার ওপর দেখতে ভালোবাসেন।’’
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪৬-[৪৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সুনামের পোশাক পরিধান করবে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তাকে অপমানের পোশাক পরাবেন। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شهرةٍ منَ الدُّنْيَا أَلْبَسَهُ اللَّهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ ইবনুল আসীর বলেনঃ "شُهْرَةٍ" শুহরাহ্ অর্থ হচ্ছে কোন জিনিস প্রকাশ হওয়া। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সে এমন তার পোশাকের রং অন্যান্য মানুষের পোশাকের রঙের চেয়ে ভিন্ন হওয়ার কারণে তার পোশাক মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধ হয়ে যায়। মানুষ তার পোশাকের দিকে তাদের চোখ তুলে তাকায় এবং সেও মানুষের সামনে দম্ভ ভরে চলে। এমন কথাই আছে নায়লুল আওত্বারে। এ হাদীস উল্লেখিত ‘অপমানের পোশাক’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, সে ব্যক্তি যেমন এমন কাপড় পরিধান করেছে যে কাপড় পরার কারণে সে দুনিয়ায় মানুষের মাঝে সম্মানিত হয়েছে এবং উচ্চ মর্যাদা পেয়েছে। তার বদলে কিয়ামতের দিন তাকে এমন কাপড় পরানো হবে যা তার অপমানের কারণ হবে। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, খ্যাতি প্রকাশ করে এমন পোশাক পরিধান করা হারাম। এ হাদীস দ্বারা শুধু দামী ও উৎকৃষ্ট পোশাকই উদ্দেশ্য নয়, বরং এর দ্বারা সেসব পোশাকও উদ্দেশ্য, যেগুলো সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর পরিধেয় পোশাকের বিপরীতে পরা হয় মানুষকে দেখানোর উদ্দেশে। অতঃপর মানুষ তার ঐ পোশাক দেখে অবাক হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪০২৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪৩৪৭-[৪৪] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তরভুক্ত (হয়ে যাবে)। (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ ‘‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে’’-এর অর্থে আল মানাভী ও আলকামী বলেনঃ যে প্রকাশ্যে তাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ করলো, পোশাক-পরিচ্ছদে তাদের জীবনাচার ও সংস্কৃতি এবং জীবনযাপনে তাদের কিছু কাজকর্ম গ্রহণ করলো। কারী বলেনঃ এর অর্থ হলো, যে তার নিজের পোশাক বা অন্য কিছুতে কাফির, ফাসিক, পাপিষ্ঠ, সূফী ইত্যাদি জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে। কারী বলেন, ‘‘সে তাদের অন্তর্ভুক্ত’’- এ বাক্যাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাদৃশ্য অবলম্বনকারীরা গুনাহ ও কল্যাণে সাদৃশ্য অবলম্বনকৃতদের অংশীদার হবে। আল কারী বলেনঃ যে ব্যক্তি নেককার ব্যক্তিদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তারা সম্মানিত হবে যেভাবে নেককাররা সম্মানিত হন। আর যারা ফাসিকদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তারা সম্মানিত হবে না। তবে তাদের ওপর যদি সম্মানিতদের নিদর্শন পরিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা সম্মানিত হবে কিন্তু বাস্তবে সে সম্মানের যোগ্য নয়।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘‘আস্ সিরাত আল মুসতাকিম’’ গ্রন্থে বলেন, ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-সহ অনেকেই এ হাদীস দ্বারা দলীল দেন যে, কাফির-মুশরিকদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম। যেমনটা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّه مِنْهُمْ ‘‘আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন।’’ (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্ ৫ : ৫১)
এ কথার সম্পূরক কথা বলেছেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর । তিনি বলেন,
من بنى بأرض المشركين وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت حشر معهم يوم القيامة
‘‘কেউ যদি মুশরিকদের দেশে বাড়ি নির্মাণ করে, তাদের নওরোয ও মেলায় অংশগ্রহণ করে এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাহলে তাকে কিয়ামতের দিন তাদের (মুশরিকদের) সাথেই হাশর করা হবে।’’
মুসলিম যদি মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাহলে সেটা তাকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। তবে কেউ যদি সব কিছুতে মুশরিকদের সাধে সাদৃশ্য অবলম্বন না করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাহলে যতটুকুতে সে সাদৃশ্য অবলম্বন করেছে ততটুকু দায়ই তার ওপর বর্তাবে। হোক সেটা কুফরী বা কোন সাধারণ গুনাহ কিংবা তাদের কোন নিদর্শন। এ হাদীস দ্বারা ‘আলিমগণ দলীল দিয়েছেন যে, অমুসলিমদের বেশ-ভূষার যে কোন কিছুই গ্রহণ করা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। তিরমিযীতে বর্ণিত অন্য হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا ‘‘ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় যে, আমাদের ছাড়া অন্যদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে’’।
এ বিষয়ে পরিপূর্ণ কথা রয়েছে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর লেখা ‘‘আস্ সিরাত আল মুসতাকিম’’ গ্রন্থে ‘আল্লামা আল মানবী (রহিমাহুল্লাহ)-এর লেখা ‘‘ফাতহুল কদীর’’ গ্রন্থে এবং কাযী বাশীরুদ্দীন আল কান্নূজী (রহিমাহুল্লাহ)-এর গ্রন্থাবলীতে। [সম্পাদক]