পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৩-[১১] আবূ ’আসীব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে আমাকে ডাকলেন। আমি বের হয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁর নিকট আসলাম। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন, তাঁকেও ডাকলেন এবং তিনি বের হয়ে আসলেন। পরে ’উমার (রাঃ)-এর নিকট গমন করলেন এবং তাঁকেও ডাকলেন। তিনিও বের হয়ে আসলেন। এবার তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (সবাইকে সঙ্গে নিয়ে) চললেন। অবশেষে জনৈক আনসারীর বাগানের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং বাগানের মালিককে বললেন, আমাদেরকে তাজা পাকা খেজুর খাওয়াও। অমনি সে খেজুরের একটি ছড়া এনে রাখল। আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা তা খেলেন। অতঃপর তিনি ঠাণ্ডা পানি চেয়ে আনালেন এবং পান করলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় কিয়ামতের দিন এ সমস্ত নি’আমাত সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে।
বর্ণনাকারী বলেনঃ (এ কথা শুনে) ’উমার(রাঃ) খেজুরের ছড়াটি নিয়ে জমিনের উপর আঘাত করলেন, এতে খেজুরগুলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে বিক্ষিপ্তভাবে ছিটিয়ে পড়ল, অতঃপর বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, তিনটি বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে। যথা- ১. কাপড়ের সে টুকরাটি যার দ্বারা মানুষ তার লজ্জাস্থান আবৃত করে, ২. অথবা রুটির সে খণ্ডটি যার দ্বারা সে তার ক্ষুধা নিবারণ করে, ৩. এবং ঐ ছোট্ট ঘরখানা যাতে অবস্থান করে গ্রীষ্ম ও শীত হতে আত্মরক্ষা করে। (আহমাদ ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান, মুরসাল সূত্রে)[1]
عَنْ أَبِي عَسِيبٍ
قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلًا فَمَرَّ بِي فَدَعَانِي فَخَرَجْتُ إِلَيْهِ ثُمَّ مَرَّ بِأَبِي بَكْرٍ فَدَعَاهُ فَخَرَجَ إِلَيْهِ ثُمَّ مَرَّ بِعُمَرَ فَدَعَاهُ فَخَرَجَ إِلَيْهِ فَانْطَلَقَ حَتَّى دَخَلَ حَائِطًا لِبَعْضِ الْأَنْصَارِ فَقَالَ لِصَاحِبِ الْحَائِطِ: «أَطْعِمْنَا بُسْرًا» فَجَاءَ بِعِذْقٍ فَوَضَعَهُ فَأَكَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ بَارِدٍ فَشَرِبَ فَقَالَ: «لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ القيامةِ» قَالَ: فَأخذ عمر العذق فَضرب فِيهِ الْأَرْضَ حَتَّى تَنَاثَرَ الْبُسْرُ قَبْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: يَا رَسُول الله إِنَّا لمسؤولونَ عَنْ هَذَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «نَعَمْ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ خِرْقَةٍ لَفَّ بِهَا الرَّجُلُ عَوْرَتَهُ أَوْ كِسْرَةٍ سَدَّ بِهَا جَوْعَتَهُ أَوْ حُجْرٍ يتدخَّلُ فِيهِ مَنِ الْحَرِّ وَالْقُرِّ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي «شعب الْإِيمَان» . مُرْسلا
ব্যাখ্যাঃ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هٰذَا النَّعِيمِ يَوْمَ القيامةِ ‘‘নিশ্চয় কিয়ামতের দিন এ সমস্ত নি‘আমাত সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে’’-এর মধ্যে সাধারণের প্রতি সম্বোধনের দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহর নবী রসূলগণ এ সম্পর্কে জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হলো অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। এগুলো ছাড়া একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারে না। তাই ইসলামী শারী‘আত এগুলোকে মূল্যায়ন করেছে এবং এগুলোর কারণে কাউকে জবাবদিহির সম্মুখীন করা হবে না বলে উল্লেখিত হাদীসটি প্রমাণ বহন করে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ও অপচয় থেকে বিরত থাকা জরুরী। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৪-[১২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দস্তরখান বিছানো হয়, তখন তা তুলে নেয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তিই যেন বসার স্থান হতে উঠে না যায়। আর লোকজনের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে যেন নিজ হাতকে গুটিয়ে না নেয়, যদিও সে পরিতৃপ্ত হয়ে থাকে। আর যেন কোন ওজর পেশ করে (উঠে) যায়। কেননা এটা সঙ্গীকে লজ্জিত করবে, ফলে সেও নিজের হাতখানা গুটিয়ে ফেলবে। অথচ তার আরো খাওয়ার প্রয়োজন থাকতে পারে। (ইবনু মাজাহ ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমান’’)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আবদুল আ‘লা ইবনু আ‘ইয়ান’’ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন, যিনি য‘ঈফ। সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১/৪১১, ২৩৮ নং।
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا وُضِعَتِ الْمَائِدَةُ فَلَا يَقُومُ رَجُلٌ حَتَّى تُرْفَعَ الْمَائِدَةُ وَلَا يَرْفَعْ يَدَهُ وَإِنْ شَبِعَ حَتَّى يَفْرُغَ الْقَوْمُ وَلْيُعْذِرْ فَإِنَّ ذَلِكَ يُخْجِلُ جَلِيسَهُ فَيَقْبِضُ يَدَهُ وَعَسَى أَنْ يَكُونَ لَهُ فِي الطَّعَامِ حَاجَةٌ» رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ
ব্যাখ্যাঃ (وَعَسٰى أَنْ يَكُونَ لَهٗ فِي الطَّعَامِ حَاجَةٌ) ‘‘অথচ তার আরো খাওয়ার প্রয়োজন থাকতে পারে’’। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কোন ওজর না দেখিয়ে খাওয়া হতে বিরত থাকলে তার সঙ্গীর লজ্জাবোধ হবে। আর কোন ওজর দেখিয়ে খাওয়া হতে বিরত থাকলে তখন আর সঙ্গীর লজ্জাবোধ হবে না।
ইমাম আবূ হামিদ গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যদি খাদ্যের পরিমাণ কম হয়, তখন খাওয়ার শুরুতে নিজে কিছু সময় খাওয়া হতে বিরত থাকবে, যেন তার সঙ্গী এ সময়ের মধ্যে কিছু খাদ্য গ্রহণ করে নিতে পারে। আর যদি কোন কারণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয় তবে সঙ্গীদের নিকট ওযর পেশ করতে হবে যাতে তারা লজ্জাবোধ না করে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৫-[১৩] জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকজনের সঙ্গে খেতে বসতেন, তখন সকলের শেষে খাওয়া হলে অবসর হতেন। (বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান, মুরসালরূপে বর্ণনা করেছেন)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘আবদুর রহমান বায়াউল হারবী’’ নামক অপরিচিত রাবী, যাকে চেনা যায় না। উপরন্তু হাদীসটি মুরসাল, কারণ ‘‘জা‘ফার ইবনু মুহাম্মাদ’’ মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১২/৫৪৭ পৃঃ, ৫৭৪৭ নং।
وَعَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَكَلَ مَعَ قَوْمٍ كَانَ آخِرَهُمْ أَكْلًا. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ فِي «شعب الْإِيمَان» مُرْسلا
ব্যাখ্যাঃ (كَانَ آخِرَهُمْ أَكْلًا) ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার পরে খাবার শেষ করতেন’ হাদীসটির অর্থ এ নয় যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি পরিমাণ খাবার খেতেন সেজন্য সকলের শেষে খাওয়া হতে অবসর হতেন, বরং সঙ্গীদের খাবার শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি বসে থাকতেন। যখন সকলের খাওয়া শেষ হতো তখন তিনিও খাদ্যাসন ত্যাগ করতেন। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৬-[১৪] আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে খাবার আনা হলো, পরে আমাদের সামনেও উপস্থিত করা হলো। তখন আমরা বললামঃ আমাদের খাওয়ার চাহিদা নেই। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ক্ষুধা এবং মিথ্যা উভয়কে একত্রিত করো না। (ইবনু মাজাহ)[1]
وَعَن أَسمَاء بنتِ يزِيد قَالَتْ: أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِطَعَامٍ فَعَرَضَ عَلَيْنَا فَقُلْنَا: لَا نَشْتَهِيهِ. قَالَ: «لَا تَجْتَمِعْنَ جُوعًا وَكَذِبًا» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যাঃ لَا تَجْتَمِعْنَ جُوعًا وَكَذِبًا ‘‘ক্ষুধা ও মিথ্যা একত্র হতে পারে না।’’ ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অর্থাৎ তোমরা খাবার খেতে অস্বীকার করে বলছো, আমাদের খাওয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ তোমরা ক্ষুধার্ত। এ কথার মাধ্যমে তোমরা মিথ্যা ও ক্ষুধাকে একত্রিত করে ফেললে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
সম্ভবত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের চেহারা দেখে অনুমান করতে পেরেছিলেন যে, তারা ক্ষুধার্ত। অতঃপর আমাদের খাওয়ার চাহিদা নেই- এ কথা বললে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যাকে একত্রিত করলে। কারণ খাওয়ার চাহিদাই যে ক্ষুধা। আমাদের সমাজেও এ রকম অনেক মানুষ আছে যাদের খাওয়ার চাহিদা থাকে কিন্তু প্লেটে কিছু খাওয়ার রেখে দেয় লৌকিকতাবশতঃ। এ স্বভাবটি পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৭-[১৫] ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা একত্রে খাবার খাও, পৃথক পৃথক খেয়ো না। কেননা জামা’আতের সাথে খাওয়ার মধ্যে বারাকাত হয়ে থাকে। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করছেন। আত্ তালীকুর্ রাগীব ৩/১২১, সহীহাহ্ ২৬৯১। তাহক্বীক আলবানী : খুবই দুর্বল, তবে প্রথম বাক্যটি প্রমাণিত। য‘ঈফ হওয়ার কারণ : ১. উক্ত হাদীসের রাবী সা‘ঈদ ইবনু যায়দ সম্পর্কে আবূ বকর আল বাযযার বলেন, তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়া হাদীস গ্রহণ করেন ও তা বর্ণনা করেন। আবূ বকর আল বায়হাক্বী বলেনঃ তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। আবূ হাতিম আর্ রাযী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। আবূ হাতিম ইবনু হিব্বান বলেনঃ তিনি সত্যবাদী ও হাফিয, তবে হাদীস বর্ণনায় সন্দেহ ও ভুল বলেন। আহমাদ ইবনু শু‘আয়ব আন্ নাসায়ী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনু হাজার আল ‘আস্ক্বালানী বলেনঃ তিনি সত্যবাদী তবে হাদীস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। (তাহযীবুল কামাল- রাবী নং ২২৭৬, ১০/৪৪১ নং পৃষ্ঠা)। ২.‘আমর ইবনু দীনার নামের বর্ণনাকারী সম্পর্কে আবূ আহমাদ আল হাকীম বলেনঃ তিনি আহলে ‘ইল্মদের নিকট নির্ভরযোগ্য নয়। আবূ হাকিম আর্ রাযী বলেনঃ তিনি দুর্বল। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ তিনি হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য নয়। আহমাদ ইবনু হাম্বাল বলেনঃ তিনি দুর্বল ও মুনকার। ইমাম বুখারী বলেনঃ তার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে। তার হাদীসের অনুসরণ করা যাবে না। মুহাম্মাদ ইবনু ‘আম্মার বলেনঃ তিনি দুর্বল। তাহযীবুল কামাল- ‘রাবী নং ৪৩৬১, ২২/১৩ পৃষ্ঠা।
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُوا جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا فَإِنَّ الْبَرَكَةَ معَ الجماعةِ» . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হতে বুঝা যায়, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানাদি পৃথক পৃথক না খেয়ে একত্রে বসে খাওয়াটা জরুরী। এতে বারাকাত হয়। যদি খাবার একটু কম হয় তবুও সবাই খেতে পারে আবার কখনও যদি খাবার একটু বেশি তৈরি হয় তবুও তা সবাই মিলে শেষ করতে পারে, খাবার নষ্ট হয় না। বর্তমানে অনুষ্ঠানের নামে বেগানা নারী-পুরুষ মিলে একত্রে বসে খাওয়ার যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা হারাম। এ থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৮-[১৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির মেহমানের সঙ্গে (বিদায়কালে) বাড়ির দরজা পর্যন্ত বের হওয়া সুন্নাতের অন্তরভুক্ত। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি মাওযূ‘ হওয়ার কারণ হলো ‘‘আলী ইবনু ‘উরওয়াহ্’’ নামের বর্ণনাকারী হাদীস তৈরি করতেন। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১/৪২৪ পৃঃ, ২৫৮ নং।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنَ السَّنَةِ أَنْ يَخْرُجَ الرَّجُلُ مَعَ ضَيْفِهِ إِلَى بَابِ الدَّارِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ এতে বাহ্যিকভাবে মেহমানকে বেশী সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এতে আরো একটি হিকমাত রয়েছে, তা হলো তার প্রতিবেশী যেন এটা মনে করতে না পারে যে, তার বাড়ীতে অপরিচিত (বেগানা) কোন পুরুষ প্রবেশ করেছিল। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এ হাদীসটিকে যদি সমাজের মানুষ মূল্যায়ন করে তবে সমাজ থেকে বহু অংশে যিনা-ব্যভিচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধ কমে যাবে। [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৫৯-[১৭] বায়হাক্বী’র শু’আবুল ঈমানে আবূ হুরায়রা ও ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন; আর তিনি বলেনঃ এটার সানাদ দুর্বল।[1]
وَرَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ» عَنْهُ وَعَنِ ابْن عَبَّاس وَقَالَ: فِي إِسْنَاده ضَعِيف
পরিচ্ছেদঃ ১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে
৪২৬০-[১৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে গৃহে মেহমানদারী করা হয়, উটের কুঁজের মাংস কাটার উদ্দেশে ছুরি যত দ্রুত অগ্রসর হয়, সে গৃহে বারাকাত তার চেয়েও দ্রুত প্রবেশ করে। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে আছে ‘‘জুবারাহ্ ইবনু মুগল্লিস’’ নামের একজন বর্ণনাকারী, যিনি হাদীস তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত। আরেক বর্ণনাকারী হলেন ‘‘কাসীর ইবনু সুলায়ম’’ যিনি মুনকারুল হাদীস। বিস্তারিত- তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৮৯১ ও ৪৯৮।
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْخَيْرُ أَسْرَعُ إِلَى الْبَيْتِ الَّذِي يُؤْكَلُ فِيهِ مِنَ الشَّفْرَةِ إِلَى سنامِ الْبَعِير» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কল্যাণ দ্রুত পৌঁছানোর দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে সেই বাড়ির সাথে, যে বাড়ীতে মেহমান আসলে তাকে সম্মান করার জন্য তারা দ্রুত উটের কুঁজ কাটতে যায়। উঠের কুঁজের গোশত তুলনামূলক সুস্বাদু। তাই সর্বাগ্রে তা কাটার আগ্রহ থাকে। অনুরূপভাবে যে বাড়ীতে মেহমানকে সম্মান করা হয় সে বাড়ীতেও দ্রুত কল্যাণ পৌঁছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)