পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০১-[৪৩] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ছিলাম, এমন সময় খাবার আনা হলো। আমি অদ্যাবধি ওর চেয়ে বেশি বারাকাতময় খাবার কখনো দেখিনি, প্রথমভাগে যা আমরা খেয়েছিলাম। আর না অতি অল্প বারাকাত যা তার শেষ ভাগে ছিল। আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! এমনটি হলো কেন? তিনি বললেনঃ আমরা যখন খাচ্ছিলাম, তখন আল্লাহর নাম নিয়ে আরম্ভ করেছিলাম। অতঃপর এক লোক (আমাদের সাথে) খেতে বসেছে, সে আল্লাহর নাম নেয়নি, ফলে তার সাথে শয়তানও খাবার খেয়েছে। (শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
এ হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো এর সনদে ‘‘আবূ মুহাম্মাদ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুস্ সমাদ আল জাওযাজানী’’ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন, যিনি মাজহূলুল হাল। এছাড়াও ইবনু লাহী‘আহ্ নামক বর্ণনাকারী য‘ঈফ। এছাড়াও হাদীস আছে, মুসনাদে আহমাদে ২৩৫২২।
الْفَصْلُ الثَّانِي
عَن أبي أَيُّوب قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُرِّبَ طَعَامٌ فَلَمْ أَرَ طَعَامًا كَانَ أَعْظَمَ بَرَكَةً مِنْهُ أَوَّلَ مَا أَكَلْنَا وَلَا أَقَلَّ بَرَكَةً فِي آخِرِهِ قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ هَذَا؟ قَالَ: «إِنَّا ذَكَرْنَا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ حِينَ أَكَلْنَا ثُمَّ قَعَدَ مَنْ أَكَلَ وَلَمْ يُسَمِّ اللَّهَ فَأَكَلَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ» . رَوَاهُ فِي شرح السّنة
ব্যাখ্যাঃ (فَلَمْ أَرَ طَعَامًا كَانَ أَعْظَمَ بَرَكَةً مِنْهُ أَوَّلَ مَا أَكَلْنَا) ‘‘আহারের প্রথম পর্যায়ের বারাকাতের মতো এত বারাকাত আর কোন খাবারে দেখিনি।’’ অর্থাৎ আমরা যখন আহার করা শুরু করলাম তখন ঐ খাবারে প্রচুর বারাকাত অর্জিত হচ্ছিল। এত বারাকাত ইতিপূর্বে আমি কখনো দেখিনি।
(وَلَا أَقَلَّ بَرَكَةً فِىْ آخِرِه) ‘‘এবং খাবারের শেষের দিকে এত কম বারাকাতও কখনো দেখিনি’’। অর্থাৎ আমরা যখন ঐ আহার গ্রহণের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছালাম তখন খাবারের বারাকাত এত কমে গেল যে, এত কম বারাকাতও আমি কখনো দেখিনি।
(إِنَّا ذَكَرْنَا اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ حِينَ أَكَلْنَا) ‘‘আমরা যখন খাবার খাচ্ছিলাম তখন আমরা সবাই ‘বিসমিল্লা-হ’ বলেছিলাম’’। অর্থাৎ খাবার শুরুতে আমরা সবাই ‘বিসমিল্লা-হ’ বলার কারণে খাদ্যে বারাকাত নাযিল হচ্ছিল। অত্র হাদীস থেকে এটা জানা যায় যে, খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হ’ বললে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। তবে সেই সাথে ‘রহমা-নির রহীম’ যুক্ত করা উত্তম। জুনুবী, ঋতুবতী এবং নিফাসগ্রস্ত মহিলার ক্ষেত্রেও খাবার গ্রহণের শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলা মুস্তাহাব যদি এর দ্বারা কুরআন তিলাওয়াত উদ্দেশ্য না করেন। তবে কুরআন তিলাওয়াতের নিয়্যাতে ‘‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’’ পাঠ করা উপযুক্ত লোকেদের জন্য হারাম।
(ثُمَّ قَعَدَ مَنْ أَكَلَ وَلَمْ يُسَمِّ اللهَ فَأَكَلَ مَعَهُ الشَّيْطَانُ) ‘‘অতঃপর এমন এক ব্যক্তি খেতে বসলো যে, ‘বিসমিল্লা-হ’ বলেনি ফলে তার সাথে শয়তান খেতে থাকলো। অতএব দ্রুত খাদ্যের বারাকাত শেষ হয়ে গেল।’’
‘বিসমিল্লা-হ’ বলে আহার শুরু করা হলেও পরবর্তীতে কোন ব্যক্তি ঐ খাবারে অংশীদার হলে প্রথমে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলা ঐ পরবর্তী লোকের জন্য যথেষ্ট নয় বরং পরবর্তীতে আসা লোককে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলে খাবার শুরু করতে হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০২-[৪৪] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায় এবং আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায়, (স্মরণ হওয়ার পর) সে যেন বলে, ’’বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’’ (অর্থাৎ- খাবারের প্রথমে এবং শেষে আল্লাহর নামে)। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ فَنَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اللَّهَ عَلَى طَعَامِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ أوَّلَه وآخرَه . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (فَنَسِىَ أَنْ يَذْكُرَ اللهَ عَلٰى طَعَامِه) ‘‘সে যদি খাবার খাওয়ার শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায়’’। এ হাদীস থেকে জানা গেল যে, খাওয়ার সময় যে কোন ভাবে আল্লাহকে স্মরণ করাই যথেষ্ট। যেমন ‘আলহাম্দুলিল্লা-হ’ অথবা ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’ অথবা ‘‘আশহাদু আল্লা- লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’’ বলে তাহলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে যদিও ‘বিসমিল্লা-হ’ বলাই উত্তম।
(فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللهِ أوَّلَهٗ وَآخرَهٗ) তাহলে সে যেন বলে ‘‘বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’’ অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নামে। আর খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলতে ভুলে গেলে খাবার মাঝে যখনই স্মরণ হবে তখনই ‘‘বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’’ বলবে। তাহলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৫৮)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৩-[৪৫] উমাইয়াহ্ ইবনু মাখশী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি বিসমিল্লা-হ না পড়েই খাওয়া শুরু করল, অবশেষে মাত্র একটি গ্রাস অবশিষ্ট রইল, যখন সে তা মুখের কাছে তুলে বলে উঠল, ’’বিসমিল্লা-হি আও্ওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’’ (অর্থাৎ- খাবারের প্রথমে এবং শেষে আল্লাহর নামে)। তার অবস্থা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন, অতঃপর বললেনঃ এতক্ষণ পর্যন্ত শয়তান ঐ লোকটির সঙ্গে খাচ্ছিল। আর যখনই সে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করল, তখনই শয়তান তার পেটের মধ্যে যা কিছু ছিল বমি করে দিলো। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো এর সনদে আছে ‘‘আল মুসান্না ইবনু ‘আবদুর রহমান’’ নামক একজন বর্ণনাকারী যাকে চেনা যায় না (মাজহূল)। দেখুন- ইরওয়া ৭/২৬, ১৯৬৫; শু‘আবুল ঈমান ৫৮৩২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৫২।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن أُميَّةَ بن مَخْشِيٍّ قَالَ: كَانَ رَجُلٌ يَأْكُلُ فَلَمْ يُسَمِّ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْ طَعَامِهِ إِلَّا لُقْمَةٌ فَلَمَّا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ فَضَحِكَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ: «مَا زَالَ الشَّيْطَانُ يَأْكُلُ مَعَهُ فَلَمَّا ذَكَرَ اسْمَ اللَّهِ اسْتَقَاءَ مَا فِي بَطْنه» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (فَلَمَّا ذَكَرَ اسْمَ اللهِ اسْتَقَاءَ مَا فِىْ بَطْنِه) ‘‘যখনই ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা হলো তখনই শয়তান তার পেটে যা ছিল বমি করে বের করে দিল। এখানে বমি করার বিষয়টি প্রকৃত বমি নাও হতে পারে অথবা এ অর্থও হতে পারে যে, ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ না বলার ফলে যে বারাকাত চলে গিয়েছিল ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলাতে ঐ বারাকাত খাদ্যের মধ্যে ফিরে এলো। তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ শয়তানের জন্য বা বৈধ হয়েছিল ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ না বলার কারণে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলার ফলে তা তার বিপদ হয়ে দাঁড়ালো।
হাদীসের শিক্ষা : অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, খাবার সময় ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা ওয়াজিব।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৬৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৪-[৪৬] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খানাপিনা হতে অবসর হতেন, তখন এ দু’আ পড়তেন- ’’আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্’আমানা- ওয়াসাকা-না- ওয়াজা’আলানা- মুসলিমীন’’ (অর্থাৎ- সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলিমদের অন্তরভুক্ত করেছেন)। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো এর সনদে আছে ‘‘হাজ্জাজ ইবনু আরত্বত’’ নামক একজন মুদাল্লিস রাবী। যিনি عَنْ (‘আন) দ্বারা হাদীস বর্ণনা করেছেন। আরও আছে আবূ সা‘ঈদ-এর ভাইয়ের ছেলে নামক বর্ণনাকারী, যিনি মাজহূল; য‘ঈফুল জামি‘ ৪৪৩৬।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِهِ قَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (إِذَا فَرَغَ مِنْ طَعَامِه) ‘‘যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খাবার যাওয়া শেষ করতেন।’’ অর্থাৎ যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সামনে উপস্থাপিত খাবার খেয়ে অবসর হতেন, তা তাঁর নিজ বাড়ীতে স্বীয় পরিবার-পরিজনের সাথেই হোক অথবা তার মেহমানদের সাথে অথবা তাঁর কোন সাহাবীর বাড়ীতেই হোক। এর প্রমাণ হলো তিনি তাঁর দু‘আর মধ্যে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন।
(جَعَلَنَا مُسْلِمِينَ) ‘‘আমাদেরকে মুসলিম বানিয়েছেন।’’ আমাদেরকে একত্ববাদী এবং ধর্মীয় সকল বিষয়ে তাঁর আনুগত্যকারী বানিয়েছেন।
হাদীসের শিক্ষা : যখন নতুন কোন নি‘আমাত অর্জিত হয় তখন ঐ নি‘আমাতের মোকাবিলায় তাঁর প্রশংসা করা মুস্তাহাব।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৮ম খন্ড, হাঃ ৩৪৮৭; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৮৪৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৫-[৪৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাবার খেয়ে শুকরিয়া আদায়কারী সংযমী সায়িমের (রোযাদারের) ন্যায় (সাওয়াবের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়)। (তিরমিযী)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ كَالصَّائِمِ الصابر» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যাঃ (الطَّاعِمُ) ‘‘আহারকারী’’ অর্থাৎ পানাহারকারী। (الشَّاكِرُ) ‘‘কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী’’ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিম্নপর্যায় হলো খাবার শুরুতে ‘‘বিসমিল্লা-হ’’ বলা এবং খাবার শেষ হলে ‘‘আলহামদুলিল্লা-হ’’ বলা।
(كَالصَّائِمِ الصَّابِرِ) ‘‘ধৈর্য ধারণকারী সায়িমের’’ সিয়ামের ধৈর্যের নিম্নপর্যায় হলো রোযা ভঙ্গকারী সকল কর্ম হতে বিরত থাকা। এতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, ধৈর্যধারণকারী দরিদ্র ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ধনী ব্যক্তির চাইতে উত্তম। কেননা যাকে তুলনা করা হয় তার চেয়ে যার সাথে তুলনা করা হয় তার মর্যাদা বেশী। অত্র হাদীসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীকে ধৈর্যধারণকারীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। অতএব ধৈর্যধারণকারীর মর্যাদা বেশী। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৬-[৪৮] আর ইবনু মাজাহ ও দারিমী হাদীসটি সিনান ইবনু সান্নাহ্-এর মাধ্যমে তার পিতা হতে বর্ণনা করেছেন।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَابْن مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ عَنْ سِنَانِ بْنِ سَنَّةَ عَنْ أَبِيه
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৭-[৪৯] আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কিছু খেতেন বা পান করতেন, তখন এ দু’আ পড়তেন, ’’আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব’আমা ওয়াসাকা- ওয়াসাও্ ওয়াগাহূ ওয়াজা’আলা লাহূ মাখরাজা-’’ (সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য যিনি খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন, অতি সহজে তা উদরস্থ করিয়েছেন এবং [মলদ্বার দিয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশ] বের হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।)। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن أبي أيوبٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَكَلَ أَوْ شَرِبَ قَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَ وَسَقَى وَسَوَّغَهُ وَجَعَلَ لَهُ مخرجا» رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (سَوَّغَهٗ) ‘‘তা স্যুপেয় করেছেন’’ অর্থাৎ খাদ্য ও পানিয়কে সহজেই কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করিয়েছেন।
(وَجَعَلَ لَهٗ مَخْرَجًا) ‘‘এবং তা নির্গমনের রাস্তা বানিয়েছেন।’’ অর্থাৎ প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা তৈরি করেছেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা খাদ্যকে তার থলিতে অবস্থান করার জন্য একটা সময় নির্ধারণ করেছেন। যাতে তার উপকারী অংশ ও ক্ষতিকর অংশ পৃথক হতে পারে। অতঃপর উপকারী অংশ রক্ত গোশত ও চর্বি আকারে থেকে যায় আর ক্ষতিকর অংশ মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসে। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর বড় অনুগ্রহ। এজন্যই বান্দার অন্তর দিয়ে তার কৃতজ্ঞতা করা মুখে তা প্রকাশ করা এবং অঙ্গ দ্বারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ অনুযায়ী কাজ করা অপরিহার্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৮৪৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৮-[৫০] সালমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি তাওরাতে পড়েছি, খাওয়ার পরে উযূ করলে খাদ্যের মধ্যে বারাকাত হাসিল হয়। এ কথাটি আমি (কোন এক সময়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ খাবারের বারাকাত খাওয়ার পূর্বে উযূ করা এবং তার পরে উযূ করা। (তিরমিযী ও আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ রাবী আছেন, তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ২৩৭৮৩; ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ)-ও কইস ইবনু রবী‘-কে য‘ঈফ বলেছেন। দেখুন- তিরমিযী ১৮৪৬ নং হাদীসটির আলোচনা দ্রঃ।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن سلمانَ قَالَ: قَرَأْتُ فِي التَّوْرَاةِ أَنَّ بَرَكَةَ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ بَعْدَهُ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهُ وَالْوُضُوءُ بعدَه» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (بَرَكَةُ الطَّعَامِ الْوُضُوءُ قَبْلَهٗ وَالْوُضُوءُ بَعْدَهٗ) ‘‘খাওয়ার পূর্বে উযূ করা ও তার পরে উযূ করাতে বারাকাত রয়েছে’’। খাওয়ার পূর্বে উযূ করা দ্বারা দুই হাত ধৌত করা উদ্দেশ্য। অনুরূপভাবে খাওয়ার পরে দুই হাত এবং মুখ ধৌত করা যাতে হাত ও মুখ থেকে চর্বি দূর হয়ে যায়। সালমান (রাঃ)-এর প্রশ্নের জওয়াবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথার মধ্যে এটা ইঙ্গিত হতে পারে যে, তাওরাতেও খাওয়ার পূর্বে ও পরে হাত ধৌত করার কথা ছিল কিন্তু ইয়াহূদীগণ তা পরিবর্তন করে শুধু পরের কথা বলেছে পূর্বের কথা বলেনি অথবা এটাও হতে পারে যে, খাওয়ার পূর্বে হাত ধৌত করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শারী‘আতের বিধান যা পূর্ববর্তী শারী‘আতের বিধান নয়। খাওয়ার পূর্বে হাত ধৌত করার হিকমাত এই যে, কর্মে নিযুক্ত থাকার ফলে হাত ময়লাযুক্ত হয়ে যায়, ধৌত করার ফলে ঐ ময়লা দূর হয়ে হাত পবিত্র ও পরিষ্কার হয়। তাই আগে হাত ধুয়ে নিবে। অতঃপর যে খাদ্য গ্রহণ করবে তাতে তৃপ্তিও লাগবে এবং তা সহজেই পরিপাক হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৪৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২০৯-[৫১] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগার হতে বাইরে এলেন, এমন সময় তাঁর সামনে খাবার আনা হলো। তখন লোকেরা বলে উঠল, আমরা কি আপনার জন্য উযূর পানি আনব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ শুধুমাত্র সালাতের প্রস্তুতি নেবার জন্য আমাকে উযূ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ مِنَ الْخَلَاءِ فَقُدِّمَ إِلَيْهِ طَعَامٌ فَقَالُوا: أَلَا نَأْتِيكَ بِوَضُوءٍ؟ قَالَ: «إِنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوءِ إِذَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَأَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِيّ
ব্যাখ্যাঃ (إِنَّمَا أُمِرْتُ بِالْوُضُوءِ إِذَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ) ‘‘আমি তো শুধুমাত্র সালাতে প্রস্তুতি নেবার জন্য উযূ করতে আদিষ্ট হয়েছি’’। অর্থাৎ উযূ ভঙ্গ হয়ে গেলে সালাতে দাঁড়ানোর আগে উযূ করা ওয়াজিব, অন্য সময় নয়। সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পেরেছিলেন যে, প্রশ্নকারী মনে করতেন যে, খাওয়ার আগেও উযূ করা ওয়াজিব, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জওয়াব দিলেন সালাতের পূর্বেই উযূ করা ওয়াজিব খাওয়ার পূর্বে নয়। এ কথা দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, শুধুমাত্র সালাতের ক্ষেত্রেই উযূ করা ওয়াজিব, অন্য সময় নয়। কেননা কা‘বাহ্ ঘর ত্বওয়াফ করার পূর্বে সর্বসম্মতভাবে উযূ করা ওয়াজিব। (মুসহাফ স্পর্শ করা এবং তিলাওয়াতের সাজদার সময় উযূ করা ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকলেও ত্বওয়াফের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য নেই- অনুবাদক) হাফিয ইবনুল কইয়ূম বলেনঃ খাওয়ার পূর্বে হাত ধৌত করা মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে দু’টি মত রয়েছে।
১. হাত ধৌত করা মুস্তাহাব ২. তা মুস্তাহাব নয়। সঠিক কথা হলো তা মুস্তাহাব নয়। এক্ষেত্রে তিনি ইমাম নাসায়ীর বরাতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে হাদীস উল্লেখ করেছেন তাতে আছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়খানার কাজ শেষে বেরিয়ে আসলেন, অতঃপর খাবার খেলেন পানি স্পর্শ না করেই’’ এ হাদীসের সানাদ সহীহ। পক্ষান্তরে খাওয়ার পূর্বে ও পরে হাত ধৌত করার হাদীস দুর্বল। এজন্য সুফ্ইয়ান (রহিমাহুল্লাহ) খাওয়ার পূর্বে হাত ধৌত করা অপছন্দ করতেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩৭৫৬)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১০-[৫২] আর ইবনু মাজাহ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَرَوَاهُ ابْن مَاجَه عَن أبي هُرَيْرَة
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১১-[৫৩] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে এক পাত্র সারীদ আনা হলো। তখন তিনি লোকেদেরকে বললেনঃ তোমরা এর পাশ থেকে খাও, মাঝখান থেকে খেয়ো না। কেননা খাদ্যের বারাকাত মাঝখানে অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী)[1]ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ। আর আবূ দাঊদ-এর বর্ণনাতে আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাবার খায়, সে যেন পাত্রের উপরিভাগ হতে না খায়; বরং তার নিম্নভাগ হতে খায়। কেননা বারাকাত উপরিভাগে (মাঝখানেই) অবতীর্ণ হয়।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّهُ أُتِيَ بِقَصْعَةٍ مِنْ ثَرِيدٍ فَقَالَ: «كُلُوا مِنْ جَوَانِبِهَا وَلَا تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهَا فَإِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ فِي وَسَطِهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حسن صَحِيح
ব্যাখ্যাঃ (كُلُوا مِنْ جَوَانِبِهَا) ‘‘তোমরা তার পার্শ্ব থেকে খাও’’। অর্থাৎ প্রত্যেকেই যেন তার নিজের পার্শ্ব থেকে খায়। (وَلَا تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهَا) ‘‘তোমরা তার মাঝখান থেকে খাবে না।’’ (فَإِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ فِىْ وَسَطِهَا) ‘‘কেননা মাঝখানে বারাকাত অবতীর্ণ হয়। মাঝখানটা বারাকাত অবতীর্ণ হওয়ার উপযুক্ত স্থান, কেননা মাঝখানে বারাকাত অবতীর্ণ হলে চতুস্পার্শ্বের লোকেরাই তা দ্বারা উপকৃত হতে পারবে। এর হিকমাত এও হাতে পারে যে, মাঝখানের অংশে সবাই সমান অংশীদার। অতঃপর তাতে কেউ যদি লোভের বশবর্তী হয়ে আক্রমণ চালায় তাহলে ঐ বারাকাত বন্ধ হয়ে যায়। কেননা লোভ অশুভ। আর লোভী ব্যক্তি বঞ্চিত হয়ে থাকে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
অত্র হাদীসের শিক্ষা : পাত্রের মাঝখান থেকে না খেয়ে তার কিনারা থেকে খাওয়া বিধিসম্মত।
শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) এবং অন্যরা বলেনঃ পাত্রের মাঝখান থেকে খাওয়া মাকরূহ।
ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রুটি খেলেও তার মাঝখান থেকে খাবে না বরং তা কিনারা থেকে খাবে। কেননা খাদ্যের মাঝখানে বারাকাত নাযিল হয়ে থাকে যেমনটি হাদীসে বলা হয়েছে। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮০৫)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১২-[৫৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনো হেলান দিয়ে খাবার খেতে দেখা যায়নি। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’জন লোককেও পিছনে রেখে চলেননি। (আবূ দাঊদ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن عبد الله بن عَمْرو قَالَ: مَا رُئِيَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ مُتَّكِئًا قَطُّ وَلَا يَطَأُ عقبه رجلَانِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ (مَا رُئِىَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ مُتَّكِئًا قَطُّ) ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কখনোই হেলান দিয়ে খেতে দেখা যায়নি’’। অর্থাৎ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চারজানু হয়ে বসে অথবা একদিকে হেলে পরে খাবার খাননি।
(وَلَا يَطَأُ عَقِبَهٗ رَجُلَانِ) ‘‘তাঁর পিছনে দু’জন মানুষ তাকে অনুসরণ করেননি।’’ অর্থাৎ তিনি লোকজনের সামনে তথা অগ্রে চলেননি। বরং তিনি লোকজনের মাঝখানে অথবা পিছনে চলতেন। এটা ছিল তাঁর নম্রতার বহিঃপ্রকাশ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৬৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৩-[৫৫] ’আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জায্ই (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু রুটি ও মাংস আনা হলো, এ সময় তিনি মসজিদে ছিলেন। তিনি তা খেলেন এবং তাঁর সাথে আমরাও খেলাম। অতঃপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং সালাত আদায় করলেন। আর আমরাও তাঁর সাথে সালাত আদায় করলাম। অথচ আমরা আমাদের হাতগুলো কঙ্করে মুছে নেয়া ছাড়া অধিক কিছু করিনি। (ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخُبْزٍ وَلَحْمٍ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَأَكَلَ وَأَكَلْنَا مَعَهُ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى وَصَلَّيْنَا مَعَهُ وَلَمْ نَزِدْ عَلَى أَنْ مَسَحْنَا أَيْدِيَنَا بِالْحَصْبَاءِ. رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (وَلَمْ نَزِدْ عَلٰى أَنْ مَسَحْنَا أَيْدِيَنَا بِالْحَصْبَاءِ) ‘‘আমরা আমাদের হাতগুলো ছোট ছোট পাথর দ্বারা মাসেহ করা ব্যতীত আর কিছু করিনি। অর্থাৎ আমরা শেষে হাত ধৌত না করে শুধুমাত্র পাথরে তা মুছে সালাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছি। অতিরিক্ত পরিষ্কার করিনি দ্রুত সালাতে দাঁড়ানোর জন্য। অথবা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, হাত ধৌত না করাও বৈধ। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটাও বুঝিয়েছেন যে, হাত ধোয়ার জন্য বেশী কষ্ট করার দরকার নেই। হাতের ময়লা পরিষ্কার হওয়াই যথেষ্ট। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৪-[৫৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু মাংস আনা হলো এবং তাঁর সম্মুখে পাঁজরের অংশটিই রাখা হলো। তিনি তা খেতে খুব বেশি পছন্দ করতেন। তাই তিনি তা হতে দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে খেলেন। (তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: أَتَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَسَ مِنْهَا. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهٗ) ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গোশতের রান দেয়া হলো কেননা তিনি তা ভালোবাসতেন’’। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রান ভালোবাসার কারণ হলো তা দ্রুত সিদ্ধ হয় এবং তা অধিক সুস্বাদু এবং ময়লা থেকে এর অবস্থান অধিক দূরবর্তী।
(فَنَهَسَ مِنْهَا) ‘‘অতঃপর তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খেলেন।’’ ইবনুল মালিক বলেনঃ দাঁত দিয়ে গোশত ছিঁড়ে খাওয়া মুস্তাহাব, কেননা তা নম্রতা ও অহংকারহীনতার প্রমাণ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৩৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৫-[৫৭] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ছুরি দিয়ে মাংস কেটো না। কেননা তা অনারবদের কাজ; বরং তা দাঁত দিয়ে কামড়ে খাও। কারণ তা বেশি সুস্বাদু এবং হজমের দিক দিয়ে ভালো। (আবূ দাঊদ ও বায়হাক্বী এবং তারা উভয়েই বলেছেন যে, এ হাদীসটির সানাদ সুদৃঢ় নয়।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো এর সনদে ‘‘আবূ মা‘মার আস্ সুদ্দি আল মাদানী’’ নামক একজন বর্ণনাকারী আছেন, যার নাম আবূ মি‘শার নাজীহ। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা‘ঈদ আল কত্ত্বান তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করতেন না। তাকে তিনি খুবই দুর্বল মনে করতেন। এমনকি অন্যরা যখন তার কথা বলত তখন তিনি হাসতেন। অন্যান্যরাও তার বিষয়ে কথা বলেছেন। তন্মধ্যে ইমাম নাসায়ী বলেনঃ আবূ মি‘শার-এর অনেক মুনকার হাদীস আছে, তার মধ্য হতে এটি একটি মুনকার হাদীস। বিস্তারিত দেখুন- ‘আওনুল মা‘বূদ শার্হ সুনান আবূ দাঊদ ১০/১৮০ পৃঃ, ৩৭৭৮ নং হাদীসের আলোচনা দ্রঃ। শু‘আবুল ঈমান ৫৮৯৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৫০২২।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقْطَعُوا اللَّحْمَ بِالسِّكِّينِ فَإِنَّهُ مِنْ صُنْعِ الْأَعَاجِمِ وَانْهَسُوهُ فَإِنَّهُ أَهْنَأُ وَأَمْرَأُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيمَانِ وَقَالا: ليسَ هُوَ بِالْقَوِيّ
ব্যাখ্যাঃ (فَإِنَّهٗ مِنْ صُنْعِ الْأَعَاجِمِ) ‘‘তা অনারবদের (অহংকারীদের) কাজ’’। অর্থাৎ ছুরি দিয়ে গোশত কেটে খাওয়া অনারবদের অভ্যাস, অতএব তোমরা এ কাজকে অভ্যাসে পরিণত করো না। গোশত যদি পরিপক্ক তথা নম্র থাকে তাহলে তা কেটে খাবে না কিন্তু অপরিপক্ক থাকার ফলে যদি ছুরি দিয়ে কাটার প্রয়োজন হয় তাহলে তা কাটা যাবে। কেননা বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোশত ছুরি দিয়ে কেটে খেয়েছেন। অতএব নিষেধ তাহরীমের জন্য নয় বরং তানযীহি।
(وَانْهَسُوهُ فَإِنَّهٗ أَهْنَأُ وَأَمْرَأُ) ‘‘তোমরা তা দাঁত দিয়ে কেটে খাও, কেননা এভাবে খাওয়া মজাদার এবং পরিপাকের জন্যও উত্তম।’’ বলা হয়ে থাকে هَنَأَ الطَّعَامُ وَمَرَأَ যখন বিনা ক্লেশে খাদ্য কণ্ঠনালী অতিক্রম করে।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাদীসের মমার্থ হলো ছুরি দিয়ে কেটে খাওয়াটা অনারবদের মতো অভ্যাসে পরিণত করো না। বরং তা যখন পরিপক্ক থাকে তখন দাঁত দিয়ে কেটে খাও আর যখন অপরিপক্ক থাকে তখন ছুরি দিয়ে কেটে খাও। ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ছুরি দিয়ে কেটে খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা পরিপক্ক গোশতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৭৭৪) [সম্পাদক]
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৬-[৫৮] উম্মুল মুনযির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে এলেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন ’আলী। আমাদের গৃহে খেজুরের ছড়া ঝুলানো ছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেতে লাগলেন এবং তাঁর সাথে ’আলীও খাচ্ছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’আলীকে বললেনঃ হে ’আলী! তুমি থামো। (বিরত হও) কেননা তুমি সদ্য রোগমুক্ত। উম্মুল মুনযির (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমি তাদের জন্য শালগম জাতীয় সবজি ও যব তৈরি করে দিলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ’আলী! এটা হতে খাও, তা তোমার উপযোগী। (আহমাদ, তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن أُمِّ المنذِر قَالَتْ: دَخَلَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَهُ عَلِيٌّ وَلَنَا دَوَالٍ مُعَلَّقَةٌ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ وَعَلِيٌّ مَعَهُ يَأْكُلُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَعَلِيٍّ: «مَهْ يَا عَلِيُّ فَإِنَّكَ نَاقِهٌ» قَالَتْ: فَجَعَلْتُ لَهُمْ سِلْقًا وَشَعِيرًا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَلِيُّ مِنْ هَذَا فَأَصِبْ فَإِنَّهُ أَوْفَقُ لَكَ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ
ব্যাখ্যাঃ হাফিয ইবনু হাজার আল ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ উম্মুল মুনযির আল আনসারী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খালাদের একজন ছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে দুই ক্বিবলাতেই সালাত আদায় করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাড়ীতে ‘আলী (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাতেই হাদীসে উল্লেখিত ঘটনাটি ঘটে। ত্ববারানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ তিনি উম্মুল মুনযির বিনতু কায়স ইবনু ‘আমর ইবনু ‘উবায়দ ইবনু ‘আমির ইবনু গনাম ইবনু ‘আদী ইবনুন্ নাজ্জার। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ২০৩৭)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৭-[৫৯] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্যপাত্রের তলানি (নিচে লেগে থাকা অংশ) পছন্দ করতেন। (তিরমিযী ও বায়হাক্বী- শু’আবুল ঈমান)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَنَسٍ
قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْجِبُهُ الثُّفْلُ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان
ব্যাখ্যাঃ যায়নুল ‘আরব (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এখানে সুফল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো খাদ্য খাওয়ার পর পাত্রে যা অবশিষ্ট থাকে। এখানে বিনয়-নম্রতা ও ধৈর্যশীলতার উপর অবিচল থাকার ক্ষেত্রে পাত্রের তলায় অবশিষ্ট খাবার চেটে খাওয়ার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আর এ হাদীসে অধিকাংশ ধনী ব্যক্তিদের নীতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তারা অহংকার করে ও খাবার পাত্রের তলা চাটতে ঘৃণা করে এবং পাত্রে খাদ্য রেখেই পানি ঢেলে দেয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৮-[৬০] নুবায়শাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি পেয়ালাতে খায় এবং পরে তা চেটে নেয়, পাত্রটি তার জন্য মাগফিরাত কামনা করে। (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী। আর তিরমিযী বলেছেনঃ হাদীসটি গরীব।)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো এর সনদে আছে ‘‘মু‘আল্লা ইবনু রশীদ’’ নামের একজন অপরিচিত রাবী। বিস্তারিত দেখুন- তাহক্বীক মুসনাদে আহমাদ ২০৭৪৩, য‘ঈফুল জামি‘ ৫৪৭৮।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن نُبَيْشَة
عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَكَلَ فِي قَصْعَةٍ فَلَحَسَهَا اسْتَغْفَرَتْ لَهُ الْقَصْعَةُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيب
ব্যাখ্যাঃ এখানে উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে যে রিজিক ও নি‘আমাত দান করেছেন তার প্রতি সম্মান ও বিনয় প্রদর্শনের নিমিত্তে পাত্রের তলা চেটে খাওয়া এবং খাবার নষ্ট করা থেকে বেঁচে থাকা। ‘আল্লামা মুল্লা আল কারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যেহেতু পাওয়া যাবে পাত্র চেটে যাওয়ার কারণে তাই বলা হয়েছে, পাত্রটাই যেন তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছে। সে ক্ষেত্রে এটার হাকাক্বিহ অর্থ গ্রহণে কোন বাধা নেই।
‘আল্লামা তূরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ পাত্র তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এ ইবারত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে ব্যক্তি পাত্রে খাদ্য খায় এবং অহংকার হতে মুক্ত থাকে তার জন্য ক্ষমা আবশ্যক হয়ে যায়। অতএব এটাকে পাত্রের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কেননা ওটাই তো ক্ষমা পাওয়ার কারণ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮০৪)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২১৯-[৬১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় রাত্রিযাপন করে যে, তার হাতের মধ্যে খাদ্যের চিহ্ন (তেল, চর্বি ইত্যাদি) থেকে যায়, সে তা ধৌত করেনি। পরে কোন কিছু তার অনিষ্ট করে, তবে সে যেন নিজেকেই দোষারোপ করে।
(তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ بَاتَ وَفِي يَدِهِ غَمَرٌ لَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهُ شَيْءٌ فَلَا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সাধারণত খাবারের পর ধৌত না করা হাতে যে কোন ক্ষতি পৌঁছার সম্ভাবনা থাকে।
ইবনু আরসালান (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আশনান-সববুন (বিশেষ ধরনের উদ্ভিত যা সাবানের কাজ করে) ও এর সমার্থসম্পন্ন বস্তু (সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, মাটি-ছাই ইত্যাদি) দ্বারা হাত ধৌত করাই উত্তম। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮৬০)
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২২০-[৬২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে রুটির সারীদ এবং হায়সের সারীদ ছিল প্রিয় খাদ্য। (আবূ দাঊদ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে বাসরার এক অপরিচিত লোক আছে। এ লোকটির নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। তাই হাদীসটি য‘ঈফ। বিস্তারিত দেখুন- সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ১৭৫৮।
الْفَصْلُ الثَّانِي
وَعَن ابنِ عبَّاسٍ قَالَ: كَانَ أَحَبَّ الطَّعَامَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الثَّرِيدُ مِنَ الْخُبْزِ والثريدُ منَ الحَيسِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যাঃ আন্ নিহায়াতে রয়েছে যে, হায়স হলো খেজুর, পনির, ঘি ও আটার সমন্বয়ে তৈরিকৃত খাদ্য। ইবনু আরসালান (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এটা তৈরি করার নিয়ম হলো, ‘আজওয়াহ্ খেজুর মধ্য হতে বিচি ফেলে দিয়ে তা ঘি বা তার সমজাতীয় বস্তুর সঙ্গে মিশিয়ে হাত মাড়াই করার ফলে হায়স খাদ্য তৈরি হয়। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ম খন্ড, হাঃ ৩৭৭৯)