পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১০৪-[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তীক্ষ্ণ দাঁতধারী যে কোন হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ ذِي نَابٍ منَ السِّباعِ فأكلُه حرامٌ» . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كل ذي ناب من السباع فاكله حرام» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসটির উপর সকল বিদ্বানদের ‘আমল রয়েছে এবং এটাই যথোপযুক্ত। অন্যদিকে যারা বলেন, হিংস্র প্রাণীর মধ্যে যেগুলো বড় দাঁত ও নখ বিশিষ্ট প্রাণী সেগুলো ভক্ষণ করা বৈধ। তাদের দলীল হলো কুরআন মাজীদের আয়াত, যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি বলুন ওয়াহীর মাধ্যমে আমার কাছে যে বিধান পাঠানো হয়েছে তাতে কোন আহারকারীর জন্য কোন বস্তু হারাম করা হয়েছে এমন কিছু আমি পাইনি।’’ (সূরাহ্ আল আন্‘আম ৬ : ১৪৫)

এর জবাবে অবশ্যই বলা যায় যে, আলোচ্য আয়াতে কারীমাটি মাক্কী তথা মক্কায় অবতীর্ণ। আর হারাম করা প্রসঙ্গে যে হাদীসগুলো রয়েছে সবগুলো হাদীসই হিজরতের পরবর্তী সময়ের। ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, শাফি‘ঈ, আহমাদ ও ইসহক (রহিমাহুমুল্লাহ) প্রমুখগণের কথা এটাই, ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-ও এমনটাই বলেছেন। ইবনুল ‘আরাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ)-এর প্রসিদ্ধ মত হলো তা মাকরূহ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১০৫-[২] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কোন তীক্ষ দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জানোয়ার এবং ধারালো পাঞ্জাবিশিষ্ট পাখি খেতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ كُلِّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ وَكُلِّ ذِي مِخْلَبٍ مِنَ الطَّيْرِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن ابن عباس قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن كل ذي ناب من السباع وكل ذي مخلب من الطير. رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ মৃত দুর্গন্ধযুক্ত প্রাণীর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ, এটা দ্বারা হারাম উদ্দেশ্য নয়। তবে ক্ষতির আশংকা প্রকট থাকলে তা হারাম হতে পারে। আমাদের কতিপয় ‘উলামা বলেন, মৃত প্রাণীর দুর্গন্ধযুক্ত গোশত খাওয়া সর্বাবস্থায় হারাম। তবে এ মতটি দুর্বল। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৩৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১০৬-[৩] আবূ সা’লাবাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহপালিত গাধার মাংস হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن أبي ثَعلبةَ قَالَ: حَرَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لُحُومَ الْحُمُرِ الْأَهْلِيَّةِ

وعن ابي ثعلبة قال: حرم رسول الله صلى الله عليه وسلم لحوم الحمر الاهلية

ব্যাখ্যাঃ অধিকাংশ ‘উলামা এ মাস্আলার ব্যাপারে মতবিরোধ করেছেন। জামহূর সহাবায়ে কিরাম, তাবি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) ও তাদের পরবর্তী ‘উলামা উল্লেখিত স্পষ্ট হাদীসগুলোর ভিত্তিতে গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া হারাম বলেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এটা হারাম নয়। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) হতে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হলো, গৃহপালিত গাধার গোশত মাকরূহে তানযীহী। দ্বিতীয় মত অনুযায়ী হারাম। তৃতীয় মত অনুযায়ী জায়িয। তবে হারাম হওয়াটাই সঠিক। যেমনটা সহাবায়ে কিরামগণ স্পষ্ট একাধিক হাদীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৩৬/২৩)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১০৭-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের (যুদ্ধের) দিন গৃহপালিত গাধার মাংস হারাম করেছেন এবং ঘোড়ার মাংস সম্পর্কে অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى يَوْمَ خَيْبَرَ عَنْ لُحُومِ الْحُمُرِ الْأَهْلِيَّةِ وَأَذِنَ فِي لُحُومِ الْخَيْلِ

وعن جابر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم نهى يوم خيبر عن لحوم الحمر الاهلية واذن في لحوم الخيل

ব্যাখ্যাঃ ঘোড়ার গোশত খাওয়ার বৈধতার ব্যাপারে ‘উলামার মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। জামহূর সালাফ এবং তাদের পরবর্তী ‘উলামার মতে তা বৈধ এতে কোন কারাহিয়্যাত বা অপছন্দনীয়তা নেই। আর এটাই ‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র, ফাজালাহ্ ইবনু ‘উবায়দ, আনাস ইবনু মালিক, আসমা বিনতু আবূ বকর, সুওয়াইদ ইবনু গাফলাহ্, ‘আলকামাহ্, আসওয়াদ, ‘আত্বা, শুরাইহ, সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র, হাসান বাসরী, ইবরাহীম নাখ‘ঈ, হাম্মাদ ইবনু সুলায়মান, আহমাদ, ইসহক, আবূ সুর, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ দাঊদ (রহিমাহুমুল্লাহ)-সহ জামহূর মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য। তবে ‘উলামার একদল এটাকে মাকরূহ মনে করেন তাদের মধ্যে ইবনু ‘আব্বাস, হাকাম, মালিক ও আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুমুল্লাহ) রয়েছেন। আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ঘোড়ার গোশত খাওয়াতে পাপ হবে, তবে তিনি হারাম উল্লেখ করেননি। তারা দলীল দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন ঘোড়া, খচ্চর, গাধা। এখানে খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও তারা খালিদ ইবনু ওয়ালীদ বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার গোশত এবং প্রত্যেক দাঁতধারী হিংস্র প্রাণীর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন- (আবূ দাঊদ)। সকল মুহাদ্দিসের মতে এ হাদীসটি য‘ঈফ। আবার কারো মতে হাদীসটি মানসূখ। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৪১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১০৮-[৫] আবূ কতাদাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎই তাকে হত্যা করে ফেললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কাছে তার (বন্য গাধার) মাংসের কিছু অবশিষ্ট আছে কি? আবূ কতাদাহ্ বললেনঃ আমাদের কাছে তার একখানা পা আছে। অতঃপর তিনি তা নিলেন এবং খেলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن أبي قتادةَ أَنَّهُ رَأَى حِمَارًا وَحْشِيًّا فَعَقَرَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ مَعَكُمْ مِنْ لَحْمِهِ شَيْءٌ؟» قَالَ: مَعَنَا رِجْلُهُ فَأَخَذَهَا فَأَكَلَهَا

وعن ابي قتادة انه راى حمارا وحشيا فعقره فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «هل معكم من لحمه شيء؟» قال: معنا رجله فاخذها فاكلها

ব্যাখ্যাঃ অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে উক্ত প্রাণীর কিছু অংশ আছে কি? তারা বলল, আমাদের কাছে এটার পা আছে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং খেয়ে নিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অন্তরে বৈধতার স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার জন্যই তা খেয়ে নিয়েছিলেন। যেহেতু তাদের মাঝে জংলী গাধার গোশত খাওয়া বৈধ কিনা- এ ব্যাপারে মতপার্থক্য ছিল। তাই তাদের সন্দেহ ও সংশয় দূর করার জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা করেছিলেন। (শারহুন নাবাবী ৮ম খন্ড, হাঃ ১১৯৬/৫৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১০৯-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা ’মাররুয যহ্রান’ নামক স্থানে একটি খরগোশকে ধাওয়া করলাম। অবশেষে আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং আবূ ত্বলহাহ্’র নিকট নিয়ে এলাম। তিনি তাকে যাবাহ করলেন এবং তার পাছা ও ঊরু দু’খানা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে পাঠালেন, তিনি তা গ্রহণ করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن أنس قَالَ: أَنْفَجْنَا أَرْنَبًا بِمَرِّ الظَّهْرَانِ فَأَخَذْتُهَا فَأَتَيْتُ بهَا أَبَا طلحةَ فذبحها وَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بوَرِكِها وفخذْيها فقبِله

وعن انس قال: انفجنا ارنبا بمر الظهران فاخذتها فاتيت بها ابا طلحة فذبحها وبعث رسول الله صلى الله عليه وسلم بوركها وفخذيها فقبله

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে খরগোশ খাওয়া বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এটাই সকল ‘উলামার মত। তবে সাহাবীদের মধ্য হতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ), তাবি‘ঈনদের মধ্য হতে ‘ইকরামাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)। আর ফকীহদের মধ্য হতে মুহাম্মাদ ইবনু আবূ লায়লা (রহিমাহুল্লাহ) এটাকে মাকরূহ বলেছেন। আর খুযায়মাহ্ ইবনু জুয (রহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন; তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, খরগোশের ব্যাপারে আপনি কি বলেন, তা হালাল নাকি হারাম। তিনি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তা খাই না এবং হারামও করি না। আমি বললাম, আপনি যা হারাম করেননি তা কি আমি খেতে পারি? তিনি বললেন, আমি জানি যে, এটা (খরগোশ) রক্ত প্রবাহিত করে (অর্থাৎ শিকার করে)। এ হাদীসটি নিতান্তই দুর্বল। যদি সহীহ হয়ে থাকে তবুও এ হাদীস খরগোশ খাওয়া মাকরূহ এটা প্রমাণ করে না। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৫৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১০-[৭] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দব্ব আমি খাইও না এবং তাকে হারামও বলি না। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الضَّبُّ لَسْتُ آكُلُهُ وَلَا أُحَرِّمُهُ»

وعن ابن عمر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «الضب لست اكله ولا احرمه»

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীস থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, যা ইমাম মুসলিম ও অন্যান্য ‘উলামা উল্লেখ করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দব্বের ব্যাপারে বলেছেন, আমি এটা খাই না হারামও করি না। অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা খাও, কারণ এটা হালাল। কিন্তু এটা (দব্ব) আমার খাদ্যের মধ্য নেই (অর্থাৎ আমার অঞ্চলে এটা খাওয়া হয় না)। অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দব্ব ভুনার পাত্র থেকে হাত উঠে নিলেন। অতঃপর তাঁকে বলা হলো হে আল্লাহর রসূল! এটা কি হারাম? তিনি বললেন, না, তবে আমার অঞ্চলে এর প্রচলন নেই। কাজেই আমি এটার ব্যাপারে অনাগ্রহী তথা অভ্যস্ত নই। অতঃপর তারা সকলেই খেয়ে নিলেন, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা প্রত্যক্ষ করলেন।

সকল ‘উলামার ঐকমত্য রয়েছে যে, দব্ব হালাল মাকরূহ নয়। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর অনুসারীদের দৃষ্টিতে তা মাকরূহ। কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) একদল ‘উলামা থেকে বর্ণনা করেছেন, তারা বলেছেন, এটা হারাম। তাদের কোন মত বিশুদ্ধ বলে আমার মনে হয় না। যদি বিশুদ্ধও হয় তারপরও কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা গৃহীত দলীল এবং তা হালাল হওয়ার ব্যাপারে সাহাবীদের ঐকমত্য পূর্ব হতেই রয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৪৩/৩৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১১-[৮] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ তাঁকে বলেছেনঃ একদিন তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করলেন। মায়মূনাহ্ হলেন খালিদ ও ইবনু ’আব্বাস-এর খালা। এ সময় খালিদ দেখতে পেলেন, মায়মূনার কাছে রয়েছে ভাজা দব্ব। অতঃপর তিনি (মায়মূনাহ্) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে দব্ব পেশ করলেন। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত গুটিয়ে নিলেন। এ সময় খালিদ জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রসূল! দব্ব (খাওয়া) কি হারাম? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না। তবে আমাদের এলাকায় এ জীব নেই। তাই এটার প্রতি আমার ঘৃণাবোধ হয়। খালিদ বলেনঃ অতঃপর আমি তাকে নিজের দিকে টেনে নিলাম এবং তা খেতে লাগলাম, আর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن ابنِ عبَّاسٍ: أَنَّ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ دَخَلَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مَيْمُونَةَ وَهِيَ خَالَتُهُ وَخَالَةُ ابْنِ عَبَّاسٍ فَوَجَدَ عِنْدَهَا ضَبًّا مَحْنُوذًا فَقَدَّمَتِ الضَّبَّ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَنِ الضَّبِّ فَقَالَ خَالِدٌ: أَحْرَامٌ الضَّبُّ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «لَا وَلَكِنْ لَمْ يَكُنْ بِأَرْضِ قَوْمِي فَأَجِدُنِي أَعَافُهُ» قَالَ خَالِدٌ: فَاجْتَرَرْتُهُ فَأَكَلْتُهُ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْظُرُ إِلَيّ

وعن ابن عباس: ان خالد بن الوليد اخبره انه دخل مع رسول الله صلى الله عليه وسلم على ميمونة وهي خالته وخالة ابن عباس فوجد عندها ضبا محنوذا فقدمت الضب لرسول الله صلى الله عليه وسلم فرفع رسول الله صلى الله عليه وسلم يده عن الضب فقال خالد: احرام الضب يا رسول الله؟ قال: «لا ولكن لم يكن بارض قومي فاجدني اعافه» قال خالد: فاجتررته فاكلته ورسول الله صلى الله عليه وسلم ينظر الي

ব্যাখ্যাঃ ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) ‘‘মা‘আনী আল আসার’’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, একদল ‘উলামা দব্ব খাওয়া মাকরূহ বলেছেন। তাদের মধ্যে ইমাম আবূ হানীফাহ্, আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ ইবনু আল হাসান (রহিমাহুল্লাহ) রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইমাম মুহাম্মাদ (রহিমাহুল্লাহ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দব্ব হাদিয়া দেয়া হলো তিনি তা খেলেন না। অতঃপর একজন ভিক্ষুক এসে দাঁড়ালে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তাকে দব্ব হতে কিছু দেয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি এটা তাকে দিবে যা তুমি খেলে না? ইমাম ত্বহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আলোচ্য হাদীসটি দব্ব মাকরূহ হওয়ার দলীল নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম খাদ্য ভক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যের ইচ্ছা করতেন। যেমন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুরাতন বা নিম্নমানের খেজুর দান করতে নিষেধ করেছেন। আবূ দাঊদের বর্ণনায় রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দব্ব খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। এ হাদীসের ব্যাপারে ‘আল্লামা খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটির সানাদ বিশুদ্ধ নয়। ইবন হায্ম (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসে দুর্বল ও অপরিচিত রাবীগণ রয়েছে।

বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ হাদীসটি ইসমা‘ঈল ইবনু ‘আইয়্যাশ এককভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এটা দলীলযোগ্য নয়। ইবনুল জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এ হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। (ফাতহুল বারী ৯ম খন্ড, হাঃ ৫৫৩৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১২-[৯] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুরগীর মাংস খেতে দেখেছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن أبي مُوسَى قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْكُلُ لَحْمَ الدَّجَاجِ

وعن ابي موسى قال: رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم ياكل لحم الدجاج

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে মুরগী গৃহপালিত কিংবা জংলী বা জঙ্গলে বাস করে এই মুরগীসহ সকল মুরগী খাওয়া বৈধ। আর এ মর্মে সকল ‘উলামার ঐকমত্য রয়েছে। তবে কোন ‘উলামা বলেছেন, যে সকল মুরগী নাপাক খায় এগুলো খাওয়া বৈধ নয়। আবূ মূসা (রাঃ)-এর বর্ণনায় স্পষ্টত প্রমাণিত হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই। ইবনু আবূ শায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) সহীহ সনদে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ইবনু ‘উমার) যে সকল মুরগী নাপাক খায় এগুলোকে তিনদিন আবদ্ধ করে রাখতেন এরপর খেতেন। ইমাম মালিক এবং আল লায়স (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, নাপাক খায় সেই মুরগীও খাওয়াতেও কোন সমস্যা নেই। বায়হাক্বীর বর্ণনায় আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাপাক খায় এরূপ প্রাণী খাওয়া এবং তার দুধ পান করতে ও তাতে আরোহণ করতে নিষেধ করেছেন। ইবনু আবূ শায়বাহ্ হাসান সূত্রে এমনটিই বর্ণনা করেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি নাপাক খাওয়ার কারণে প্রাণীর গোশত কোন পরিবর্তন হয় তবে তা খাওয়া মাকরূহ, নয়ত মাকরূহ নয়। তবে অধিকাংশ ‘উলামা প্রাধান্য দিয়েছেন যে, এ ধরনের প্রাণীর গোশত খাওয়া মাকরূহ তানযীহী বা বৈধ, তবে না খাওয়াই ভালো। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৮২৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৩-[১০] ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে শরীক ছিলাম। তাঁর সাথে আমরা টিড্ডি খেয়েছি। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن ابنِ أبي أوْفى قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَبْعَ غَزَوَاتٍ كُنَّا نَأْكُلُ مَعَهُ الجرادَ

وعن ابن ابي اوفى قال: غزونا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم سبع غزوات كنا ناكل معه الجراد

ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ টিড্ডি বা ফড়িং খাওয়া বৈধ। এ ব্যাপারে ‘উলামার ঐকমত্য রয়েছে। অতঃপর ইমাম শাফি‘ঈ, আবূ হানীফাহ্, আহমাদ এবং জামহূর ‘উলামা বলেছেন, টিড্ডি বা ফড়িং সর্বাবস্থায় বৈধ। যদিও তা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা পরে থাকে। মুসলিম শিকার করুক কিংবা অগ্নিপূজক শিকার করুক, কিংবা এমনিতে মারা পরুক। অথবা যে কোন কারণে তা মারা পরুক না কেন, সর্বাবস্থায় তা হালাল। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৮০৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৪-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি খাবত্ব বাহিনীর অভিযানে শরীক ছিলাম। আবূ ’উবায়দাহ্ -কে বাহিনীর আমির নিযুক্ত করা হয়েছিল। (তথায়) আমরা এক সময় ভীষণ ক্ষুধায় পতিত হয়েছিলাম। তখন সমুদ্রের (তীরে) একটি মৃত মাছ উঠে এসেছিল। তার মতো এত বিশালাকার মাছ ইতঃপূর্বে আমরা দেখিনি। তাকে বলা হত, ’আম্বার। আমরা অর্ধ মাস পর্যন্ত তা হতে খেলাম। পরে আবূ ’উবায়দাহ্ তার হাড়সমূহ হতে একখানা হাড় নিয়ে খাড়া করলেন। আর তার নিচে দিয়ে একজন উটে আরোহিত হয়ে অনায়াসে অতিক্রম করল। অতঃপর মদীনায় এসে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (বিষয়টি) বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তোমরা খাও, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য রিজিক হিসেবে তা পাঠিয়েছেন। আর যদি তোমাদের কাছে তার অবশিষ্ট কিছু মওজুদ থাকে, আমাদেরকেও খেতে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে তার কিছু অংশ পাঠিয়ে দিলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن جابرٍ قَالَ: غَزَوْتُ جَيْشَ الْخَبْطِ وَأُمِّرَ عَلَيْنَا أَبُو عُبَيْدَةَ فَجُعْنَا جُوعًا شَدِيدًا فَأَلْقَى الْبَحْرُ حُوتًا مَيِّتًا لَمْ نَرَ مِثْلَهُ يُقَالُ لَهُ: الْعَنْبَرُ فَأَكَلْنَا مِنْهُ نِصْفَ شَهْرٍ فَأَخَذَ أَبُو عُبَيْدَةَ عَظْمًا مِنْ عِظَامِهِ فَمَرَّ الرَّاكِبُ تَحْتَهُ فَلَمَّا قَدِمْنَا ذَكَرْنَا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «كُلُوا رِزْقًا أَخْرَجَهُ اللَّهُ إِلَيْكُمْ وَأَطْعِمُونَا إِنْ كَانَ مَعَكُمْ» قَالَ: فَأَرْسَلْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُ فَأَكله

وعن جابر قال: غزوت جيش الخبط وامر علينا ابو عبيدة فجعنا جوعا شديدا فالقى البحر حوتا ميتا لم نر مثله يقال له: العنبر فاكلنا منه نصف شهر فاخذ ابو عبيدة عظما من عظامه فمر الراكب تحته فلما قدمنا ذكرنا ذلك للنبي صلى الله عليه وسلم فقال: «كلوا رزقا اخرجه الله اليكم واطعمونا ان كان معكم» قال: فارسلنا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم منه فاكله

ব্যাখ্যাঃ এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্ত প্রাণীর (‘আম্বার নামক মাছ) গোশত চাওয়া, এর তা দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের তা হালাল হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। উক্ত প্রাণী হালাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত খাদ্যের মাধ্যমে বারাকাত কামনা করেছেন।

আলোচ্য হাদীস থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, সামুদ্রিক সকল মৃত প্রাণী খাওয়া বৈধ। চাই সেটা নিজে নিজে মারা যাক কিংবা শিকারীর দ্বারা মারা যাক। আর মাছ খাওয়ার বৈধতার উপর সকল ‘উলামার ঐকমত্য রয়েছে। তবে আমাদের কোন কোন ‘উলামা বলেছেন, ব্যাঙ খাওয়া হারাম, কারণ তা হত্যা করা নিষেধ, এ মর্মে হাদীস রয়েছে। আর এ মতের প্রবক্তা হলেন আবূ বকর সিদ্দীক, ‘উমার এবং ইবনু ‘আব্বাস  প্রমুখগণ। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) ব্যাঙ সহ সকল সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া বৈধ বলেছেন। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মাছ ছাড়া সামুদ্রিক কোন প্রাণী হালাল নয়। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৫-[১২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারো (খাদ্য গ্রহণের) পাত্রে মাছি পড়ে, তখন গোটা মাছিটিকে তাতে ডুবিয়ে দেবে। অতঃপর তাকে তুলে ফেলে দেবে। কেননা তার ডানদ্বয়ের এক ডানায় নিরাময় এবং অপর ডানায় রোগ থাকে। (বুখারী)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِي إِناءِ أحدِكم فَلْيَغْمِسْهُ كُلَّهُ ثُمَّ لِيَطْرَحْهُ فَإِنَّ فِي أَحَدِ جَنَاحَيْهِ شِفَاءً وَفِي الْآخَرِ دَاءً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «اذا وقع الذباب في اناء احدكم فليغمسه كله ثم ليطرحه فان في احد جناحيه شفاء وفي الاخر داء» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসটি এ মর্মে দলীল : ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার জন্য মাছি মারা বৈধ। আর তা ফেলে দিতে হবে খাওয়া যাবে না। আর মাছি পানিতে পরে মারা গেলেও পানি নাপাক হয় না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পানিতে ডুবে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এ কথা সকলেই জানা যে, মাছি পানিতে ডুবালে মারা যাবে। বিশেষ করে খাদ্য যদি গরম হয়। যদি মাছি পড়ার কারণে পানীয় খাদ্য নাপাকই হত তাহলে খাদ্য ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিতেন। আর এটাই হত সংশোধনের নির্দেশ। আর এ হুকুমটা মাছি জাতীয় সকল প্রাণীর জন্য প্রযোজ্য। যেমন মৌমাছি, মাকড়সা ইত্যাদি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩৮৪০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৬-[১৩] মায়মূনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদিন একটি ইঁদুর ঘিয়ের মধ্যে পড়ে মরে গেল এবং এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ইঁদুর ও তার আশেপাশের ঘি ফেলে দাও এবং অবশিষ্ট ঘি খাও। (বুখারী)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن ميمونةَ أَنَّ فَأْرَةً وَقَعَتْ فِي سَمْنٍ فَمَاتَتْ فَسُئِلَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَقَالَ: «ألقوها وَمَا حولهَا وكلوه» . رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن ميمونة ان فارة وقعت في سمن فماتت فسىل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: «القوها وما حولها وكلوه» . رواه البخاري

ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, পানি ব্যতীত তরল জাতীয় খাদ্যে যখন নাপাক পতিত হবে তখন উক্ত খাদ্য নাপাক হয়ে যাবে। চাই তা বেশি হোক বা কম হোক। অন্যদিকে পানির বিধানটা ভিন্ন। পানির পরিমাণ যদি বেশি থাকে আর তাতে যদি নাপাকি থাকে, তাহলে নাপাকির কারণে পানির বৈশিষ্ট্য না বদলানো পর্যন্ত তা নাপাক হবে না। তেলের ব্যাপারে সকল ‘উলামা একমত, যদি তাতে ইঁদুর কিংবা কোন নাপাক বস্তু পতিত হয় তবে তা নাপাক হয়ে যাবে। অধিকাংশ ‘উলামার মতে তা খাওয়া কিংবা বিক্রি কোনটাই বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, উক্ত তেল বিক্রি করা বৈধ। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৭৯৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মাইমূনাহ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৭-[১৪] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন। তিনি বলেন, তোমরা সব সাপই মারবে। বিশেষ করে পিঠে দু’টি কালো রেখাবিশিষ্ট এবং লেজ কাটা সাপ অবশ্যই মেরে ফেলবে। কেননা এগুলো চক্ষুর জ্যোতি নষ্ট করে এবং গর্ভপাত ঘটায়। ’আবদুল্লাহ বলেন, একদিন আমি একটি সাপ মারার জন্য তার পিছনে ধাওয়া করলাম। এমন সময় আবূ লুবাবাহ্ আমাকে ডেকে বললেন, তাকে মেরো না। আমি বললাম, : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সকল সাপ মেরে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বললেন, এ নির্দেশের পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গৃহে বাস করে, যেগুলোকে ’আওয়ামির বলা হয় ঐগুলোকে বধ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن ابْن عمر أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: اقْتُلُوا الْحَيَّاتِ وَاقْتُلُوا ذَا الطُّفْيَتَيْنِ وَالْأَبْتَرَ فَإِنَّهُمَا يَطْمِسَانِ الْبَصَرَ وَيَسْتَسْقِطَانِ الْحَبَلَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَبَيْنَا أَنَا أُطَارِدُ حَيَّةً أَقْتُلَهَا نَادَانِي أَبُو لُبَابَةَ: لَا تَقْتُلْهَا فَقُلْتُ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِقَتْلِ الْحَيَّاتِ. فَقَالَ: إِنَّهُ نَهَى بَعْدَ ذَلِكَ عَنْ ذَوَات الْبيُوت وَهن العوامر

وعن ابن عمر انه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول: اقتلوا الحيات واقتلوا ذا الطفيتين والابتر فانهما يطمسان البصر ويستسقطان الحبل قال عبد الله: فبينا انا اطارد حية اقتلها ناداني ابو لبابة: لا تقتلها فقلت: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم امر بقتل الحيات. فقال: انه نهى بعد ذلك عن ذوات البيوت وهن العوامر

ব্যাখ্যাঃ অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাড়ীতে অবস্থানকারী (সাপরূপী) জিনগুলোকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক আনসারী যুবক তার বাড়ীতে একটি সাপ হত্যা করে, অতঃপর ঘটনাস্থলেই যুবকটিও মারা যায়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মদীনাতে কতকগুলো জীন ইসলাম গ্রহণ করেছে, যখন তোমরা তাদের কাউকে (সাপরূপে) দেখবে তখন তিনবার ঘোষণা করে দাও। এরপর যদি পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে তবে মেরে ফেল। কারণ সে শয়তান। আল মাযিনী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, মদীনার কোন সাপকে পূর্ব সতর্ক করা ছাড়া হত্যা করা যাবে না। যেমন একাধিক হাদীসে তা এসেছে। সতর্ক করার পরও যদি স্থান ত্যাগ না করে তাহলে হত্যা করতে হবে। আর মদীনাহ্ ছাড়া সকল ভূখন্ড, বাড়ী-ঘরে অবস্থিত সাপ কোন সতর্ক ছাড়াই হত্যা করা বৈধ। কেননা সাপ হত্যা করার নির্দেশ সংক্রান্ত অনেক বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একদল ‘উলামা বলেছেন, সতর্ক করা ছাড়া সাপ হত্যা নিষেধ হওয়ার বিধানটা সকল শহরের সকল বাড়ী ঘরে অবস্থিত সাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কতিপয় ‘উলামা বলেছেন, সাপ হত্যার নির্দেশটা বাড়ীতে অবস্থানকারী জীন এবং লেজ কাটা দুই তিলকধারী সাপ ছাড়া সকল সাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর লেজকাটা ও দুই তিলকধারী সাপ বাড়ীতে থাকুক বা অন্যস্থানে থাকুক সর্বাবস্থায় সর্বস্থানে তা হত্যা করা আবশ্যক। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২৩৩/১২৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৮-[১৫] আবূ সায়িব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আবূ সা’ঈদ আল খুদরী -এর নিকট গেলাম। আমরা তার কাছে বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ তাঁর খাটের নিচে কোন কিছুর নড়াচড়া শুনতে পাই। তাকিয়ে দেখলাম, ঐখানে একটি সাপ। আমি তৎক্ষণাৎ তাকে মারার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। সে সময় আবূ সা’ঈদ সালাত আদায় করছিলেন। তিনি আমাকে বসে থাকার জন্য ইঙ্গিত করলেন। আমি অমনি বসে পড়লাম। অতঃপর তিনি সালাত শেষ করে ঘরের একটি কক্ষের দিকে ইশারা করে বললেন, তুমি কি ঐ কক্ষটি দেখছ? আমি বললামঃ জ্বী হ্যাঁ। তখন তিনি বললেনঃ এ কক্ষে আমাদের বংশের এক যুবক থাকত। সে ছিল সদ্য বিবাহিত দম্পতি। তিনি আরো বলেন, উক্ত যুবকটিসহ আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে খন্দাকের যুদ্ধে শরীক হয়েছিলাম। যুবকটি দ্বিপ্রহরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে অনুমতি নিয়ে বাড়িতে চলে যেত। (প্রতিদিনের নিয়মমাফিক) একদিন সে তাঁর নিকট অনুমতি চাইল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি তোমার হাতিয়ারখানা সঙ্গে নিয়ে যাও। কেননা আমি বানী কুরায়যার পক্ষ হতে তোমার ওপর আক্রমণের আশঙ্কা করি।

সুতরাং লোকটি নিজের হাতিয়ার সমেত বাড়ির দিকে প্রত্যাবর্তন করল। সে এসে দেখতে পেল, তার স্ত্রী (ঘরের) উভয় দ্বারের মাঝখানে দণ্ডায়মান। তাকে এ অবস্থায় দেখে তার আত্মসম্ভ্রমে আঘাত লাগল। ফলে সে তৎক্ষণাৎ তার দিকে বর্শা ছুড়ার জন্য উদ্যত হলো। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সে (স্ত্রী) বলে উঠল, তুমি তোমার বর্শা গুটিয়ে নাও। ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে দেখো, কিসে আমাকে বাহিরে আসতে বাধ্য করেছে। লোকটি গৃহে প্রবেশ করতেই দেখল, প্রকাণ্ড একটি সাপ বিছানার উপর জড়ো হয়ে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ সে বর্শা দ্বারা তাকে আক্রমণ করল এবং বর্শার ফলকে তাকে গেঁথে ফেলল। অতঃপর ঘরের বাইরে এনে বর্শাটি মাটিতে গেড়ে রাখল। এ অবস্থায় সাপটি লাফিয়ে তার ওপর আক্রমণ করল। এরপর জানা যায়নি তাদের উভয়ের মধ্যে কে আগে মৃত্যুবরণ করেছে- সেই সাপ না যুবক।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা এসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ঘটনাটি জানালাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, (হে আল্লাহর রসূল!) আল্লাহর কাছে তার জন্য দু’আ করুন, যেন তিনি তাকে আমাদের জন্য জীবিত করে দেন। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করো। অতঃপর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ সমস্ত গৃহে কিছু ’আওয়ামির (বসবাসকারী জীন) থাকে। অতএব যখনই তোমরা তাদেরকে ঘরের মধ্যে দেখতে পাও, তখনই তাদেরকে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য তিনবার নির্দেশ দাও। এতে যদি চলে যায়, তবে উত্তম, অন্যথা তাদেরকে মেরে ফেলো। কেননা তা কাফির।

অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ যাও, তোমরা তোমাদের সাথিকে দাফন করো। অপর এক রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদীনায় বহু জীন আছে। তাদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। সুতরাং যদি তোমরা তাদের কোন একটিকে ঘরের মধ্যে দেখতে পাও, তখন তিনদিন যাবৎ ঘর ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দাও। আর এরপরও যদি দেখতে পাও, তাকে বধ করে ফেলো। কেননা তা শয়তান।
(মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن أبي السَّائِب قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ فَبَيْنَمَا نحنُ جلوسٌ إِذ سمعنَا تَحت سَرِيره فَنَظَرْنَا فَإِذَا فِيهِ حَيَّةٌ فَوَثَبْتُ لِأَقْتُلَهَا وَأَبُو سَعِيدٍ يُصَلِّي فَأَشَارَ إِلَيَّ أَنِ اجْلِسْ فَجَلَسْتُ فَلَمَّا انْصَرَفَ أَشَارَ إِلَى بَيْتٍ فِي الدَّارِ فَقَالَ: أَتَرَى هَذَا البيتَ؟ فَقلت: نعم فَقَالَ: كَانَ فِيهِ فَتًى مِنَّا حَدِيثُ عَهْدٍ بِعُرْسٍ قَالَ: فَخَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى الْخَنْدَقِ فَكَانَ ذَلِكَ الْفَتَى يَسْتَأْذِنُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَنْصَافِ النَّهَارِ فَيَرْجِعُ إِلَى أَهْلِهِ فَاسْتَأْذَنَهُ يَوْمًا فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خُذْ عَلَيْكَ سِلَاحَكَ فَإِنِّي أَخْشَى عَلَيْكَ قُرَيْظَةَ» . فَأَخَذَ الرَّجُلُ سِلَاحَهُ ثُمَّ رَجَعَ فَإِذَا امْرَأَتُهُ بَيْنَ الْبَابَيْنِ قَائِمَةٌ فَأَهْوَى إِلَيْهَا بِالرُّمْحِ لِيَطْعَنَهَا بِهِ وَأَصَابَتْهُ غَيْرَةٌ فَقَالَتْ لَهُ: اكْفُفْ عَلَيْكَ رُمْحَكَ وَادْخُلِ الْبَيْتَ حَتَّى تَنْظُرَ مَا الَّذِي أَخْرَجَنِي فَدَخَلَ فَإِذَا بِحَيَّةٍ عَظِيمَةٍ مُنْطَوِيَةٍ عَلَى الْفِرَاشِ فَأَهْوَى إِلَيْهَا بِالرُّمْحِ فَانْتَظَمَهَا بِهِ ثُمَّ خَرَجَ فَرَكَزَهُ فِي الدَّارِ فَاضْطَرَبَتْ عَلَيْهِ فَمَا يُدْرَى أَيُّهُمَا كَانَ أَسْرَعَ مَوْتًا: الْحَيَّةُ أَمِ الْفَتَى؟ قَالَ: فَجِئْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهُ وَقُلْنَا: ادْعُ اللَّهَ يُحْيِيهِ لَنَا فَقَالَ: «اسْتَغْفِرُوا لِصَاحِبِكُمْ» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ لِهَذِهِ الْبُيُوتِ عَوَامِرَ فَإِذَا رأيتُم مِنْهَا شَيْئا فحرِّجوا عَلَيْهَا ثَلَاثًا فإنْ ذَهَبَ وَإِلَّا فَاقْتُلُوهُ فَإِنَّهُ كَافِرٌ» . وَقَالَ لَهُمْ: «اذْهَبُوا فَادْفِنُوا صَاحِبَكُمْ» وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «إِنَّ بالمدينةِ جِنَّاً قد أَسْلمُوا فَإِذا رأيتُم مِنْهُم شَيْئًا فَآذِنُوهُ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنْ بَدَا لَكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ فَاقْتُلُوهُ فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي الساىب قال: دخلنا على ابي سعيد الخدري فبينما نحن جلوس اذ سمعنا تحت سريره فنظرنا فاذا فيه حية فوثبت لاقتلها وابو سعيد يصلي فاشار الي ان اجلس فجلست فلما انصرف اشار الى بيت في الدار فقال: اترى هذا البيت؟ فقلت: نعم فقال: كان فيه فتى منا حديث عهد بعرس قال: فخرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم الى الخندق فكان ذلك الفتى يستاذن رسول الله صلى الله عليه وسلم بانصاف النهار فيرجع الى اهله فاستاذنه يوما فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «خذ عليك سلاحك فاني اخشى عليك قريظة» . فاخذ الرجل سلاحه ثم رجع فاذا امراته بين البابين قاىمة فاهوى اليها بالرمح ليطعنها به واصابته غيرة فقالت له: اكفف عليك رمحك وادخل البيت حتى تنظر ما الذي اخرجني فدخل فاذا بحية عظيمة منطوية على الفراش فاهوى اليها بالرمح فانتظمها به ثم خرج فركزه في الدار فاضطربت عليه فما يدرى ايهما كان اسرع موتا: الحية ام الفتى؟ قال: فجىنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وذكرنا ذلك له وقلنا: ادع الله يحييه لنا فقال: «استغفروا لصاحبكم» ثم قال: «ان لهذه البيوت عوامر فاذا رايتم منها شيىا فحرجوا عليها ثلاثا فان ذهب والا فاقتلوه فانه كافر» . وقال لهم: «اذهبوا فادفنوا صاحبكم» وفي رواية قال: «ان بالمدينة جنا قد اسلموا فاذا رايتم منهم شيىا فاذنوه ثلاثة ايام فان بدا لكم بعد ذلك فاقتلوه فانما هو شيطان» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা তিনদিন ঘোষণা দাও, এরপর যদি আত্মপ্রকাশ করে তবে হত্যা করে ফেল। ‘উলামাগণ বলেছেন, যখন তিনদিন সতর্ক করার পরে না যাবে তখন মানতে হবে যে, তারা বাড়ীতে অবস্থানকারী জীন নয়। আর জীনদের মধ্য যারা ইসলাম কবুল করেছে তারাও নয়। বরং আত্মপ্রকাশকারী সাপটি শয়তান। সুতরাং সাপ হত্যা করতে আর কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। মুসলিম জীন এবং বাড়ীতে অবস্থানকারী জীন যে সুবিধা পাবে উক্ত সাপের জন্য তা আর থাকবে না। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২৩৬/১৩৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সায়িব (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১১৯-[১৬] উম্মু শরীক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ এটা ইব্রা-হীম (আ.)-এর বিরুদ্ধে আগুনে ফুঁক দিয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَن أم شريك: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَقَالَ: «كَانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيم»

وعن ام شريك: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم امر بقتل الوزغ وقال: «كان ينفخ على ابراهيم»

 ব্যাখ্যাঃ অপর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রথম প্রহারেই গিরগিটি হত্যা করবে তার জন্য ১০০ নেকী তার ‘আমলনামায় লিখা হবে। দ্বিতীয় প্রহারে মারলে তার থেকে কম নেকী পাবে আর তৃতীয় প্রহারে মারলে দ্বিতীয় প্রহারে মারার থেকে কম নেকী পাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে প্রথম প্রহারে মারলে ৭০ নেকী পাবে। ‘উলামাগণ এ মর্মে একমত যে, গিরগিটি ক্ষতিকারক প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। وَزَغِ শব্দটির বহুবচন হলো أَوْزَاغٌ وَوِزْغَانٌ ইত্যাদি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রাণীর হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হত্যার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। কারণ তা মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রাণী। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২৩৭/১৪২)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু শারীক (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১২০-[১৭] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁকলাস মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাকে ক্ষুদ্র ফাসিক বলে অভিহিত করেছেন। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

وعن سعد بن ابي وقاص ان رسول الله صلى الله عليه وسلم امر بقتل الوزغ وسماه فويسقا. رواه مسلم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১২১-[১৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গিরগিটিকে প্রথম আঘাতে বধ করবে, তার জন্য (’আমলনামায়) একশত নেকি লিখা হবে। আর দ্বিতীয় আঘাতে মারলে (তার জন্য) তার চাইতে কম এবং তৃতীয় আঘাতে মারলে (তার জন্য) তা অপেক্ষা কম লিখা হবে। (মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَتَلَ وَزَغًا فِي أولَّ ضَرْبَة كتبت لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَفِي الثَّانِيَةِ دُونَ ذَلِكَ وَفِي الثَّالِثَة دون ذَلِك» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من قتل وزغا في اول ضربة كتبت له ماىة حسنة وفي الثانية دون ذلك وفي الثالثة دون ذلك» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা ‘ইয্যুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রথম প্রহারে গিরগিটি হত্যার সাওয়াবের আধিক্যের কারণ হলো, হতে পারে প্রথম প্রহারে মারলে প্রাণীর প্রতি ইহসান করা হয়, বিধায় সাওয়াব বেশি। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর প্রতি ইহসান ফরয করেছেন, কাজেই যখন তোমরা হত্যা করবে তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে। অথবা ভালো কাজ দ্রুত সমাধার জন্যও সাওয়াব বেশি হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَسَارِعُوا إِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَبِّكُمْ ‘‘তোমরা কল্যাণে অগ্রগামী হও’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩৩)। আর এ উভয় কারণই সাপ কিংবা বিচ্ছুর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ উভয় প্রাণীর মধ্যে বিপর্যয়ের আধিক্য রয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২৫৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যেসব প্রাণী খাওয়া হালাল ও হারাম

৪১২২-[১৯] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন কোন একজন নবীকে একটি পিপীলিকা দংশন করেছিল। ফলে তাঁর নির্দেশে পিপীলিকার গোটা বস্তিটাই আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ওয়াহীর মাধ্যমে (প্রশ্নের সুরে) বললেনঃ মাত্র একটি পিপীলিকাই তোমাকে দংশন করেছিল, আর তুমি তাদের এমন একটি সম্প্রদায়কে জ্বালিয়ে দিলে অথচ এরা সর্বক্ষণ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَرَصَتْ نَمْلَةٌ نَبِيًّا من الأنبياءِ فأمرَ بقربةِ النَّمْلِ فَأُحْرِقَتْ فَأَوْحَى اللَّهُ تَعَالَى إِلَيْهِ: أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَحْرَقْتَ أُمَّةً مِنَ الْأُمَمِ تُسَبِّحُ؟

وعنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: قرصت نملة نبيا من الانبياء فامر بقربة النمل فاحرقت فاوحى الله تعالى اليه: ان قرصتك نملة احرقت امة من الامم تسبح؟

ব্যাখ্যাঃ ‘আল্লামা নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীস এটাই প্রমাণ করে যে, উক্ত নবীর শারী‘আতে পিপীলিকা হত্যা এবং আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়া বৈধ ছিল। কারণ আলোচ্য হাদীসে হত্যা এবং পুড়িয়ে মারার ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই, বরং এক পিপীলিকার অপরাধে একাধিক পিপীলিকার শাস্তি প্রদানের অভিযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে শর্তসাপেক্ষে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ ছাড়া কোন প্রাণী আগুনে জ্বালানো আমাদের শারী‘আতে বৈধ নয়।

আর পিপীলিকা (কারণ ছাড়া) হত্যাও বৈধ নয়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিপীলিকা ও মৌমাছি মারতে নিষেধ করেছেন। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩০১৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২০: শিকার ও যাবাহ প্রসঙ্গে (كتاب الصيد والذبائح) 20. Game and Animals Which May Be Slaughtered
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১৯ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৯ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে