পরিচ্ছেদঃ ৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - নিরাপত্তা (আশ্রয়) প্রদান
৩৯৭৭-[১] উম্মু হানী বিনতু আবূ ত্বালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি মক্কা বিজয়ের বৎসর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে দেখলাম তিনি গোসল করছেন এবং তার কন্যা ফাত্বিমাহ্ একটি চাদর দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখছেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কে এই মহিলা? উত্তরে বললাম, আমি আবূ ত্বালিব-এর কন্যা উম্মু হানী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে উম্মু হানী! তোমার আগমন কল্যাণ হোক। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গোসল শেষ করে এক বস্ত্রে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদিত করে সালাত আদায় করতে দাঁড়ালেন এবং আট রাক্’আত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালাত আদায় শেষ করলে, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাই ’আলী এমন একজন লোককে হত্যা করতে চায় যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি। সে হলো, হুবায়রাহ্-এর পুত্র অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মু হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দান করেছ, আমিও তাকে নিরাপত্তা দান করলাম। উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, এটা ছিল পূর্বাহ্নের (চাশ্তের) সালাত। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
আর তিরমিযী-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, উম্মু হানী (রাঃ) বলেন, আমি আমার স্বামীর পক্ষের দু’জন নিকটাত্মীয়কে আশ্রয় দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমরাও তাকে আশ্রয় দান করলাম।
بَابُ الْاَمَانِ
عَن أم هَانِئ بنت أَي طالبٍ قالتْ: ذهبتُ إِلى رسولِ الله عَامَ الْفَتْحِ فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَةُ ابْنَتُهُ تَسْتُرُهُ بِثَوْبٍ فَسَلَّمْتُ فَقَالَ: «مَنْ هَذِهِ؟» فَقُلْتُ: أَنَا أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَ: «مَرْحَبًا بِأُمِّ هَانِئٍ» فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ قَامَ فَصَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ مُلْتَحِفًا فِي ثَوْبٍ ثُمَّ انْصَرَفَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ زَعَمَ ابْنُ أُمِّي عَلِيٌّ أَنَّهُ قَاتِلٌ رَجُلًا أَجَرْتُهُ فُلَانَ بْنَ هُبَيْرَةَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَجَرْنَا مَنْ أَجَرْتِ يَا أم هَانِئ» قَالَت أُمَّ هَانِئٍ وَذَلِكَ ضُحًى. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي رِوَايَةٍ لِلتِّرْمِذِيِّ: قَالَتْ: أَجَرْتُ رَجُلَيْنِ مِنْ أَحْمَائِي فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قد أمنا من أمنت»
ব্যাখ্যা: ইবনুল মুনযির বলেনঃ মহিলা কর্তৃক নিরাপত্তা দান বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে সকল বিদ্বানগণ একমত। তবে ঐ উক্তি ছাড়া যা ‘আবদুল মালিক, অর্থাৎ- ইমাম মালিক-এর সাথী ইবনুল মাজিশূন যা বর্ণনা করেছেন তা ছাড়া। ইবনুল মাজিশূন বলেনঃ নিরাপত্তার বিষয় ইমামের কাছে। এর বিরোধী যা বর্ণিত হয়েছে তা তিনি বিশেষ ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইবনুল মুনযির বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি «يَسْعٰى بِذِمَّتِهِمْ أَدْنَاهُمْ» অর্থাৎ- তাদের যিম্মাদারিত্ব তাদের সর্বনিম্ন ব্যক্তিকেও পরিব্যপ্ত করবে। এতে এ কথকের উদাসিনতার উপর প্রমাণ আছে।
ইবনুল মাজিশূন-এর উক্তির মতো উক্তি সাহনূন থেকে এসেছে, তিনি বলেনঃ তা ইমাম পর্যন্ত, যদি তিনি তা বৈধতা দেন তাহলে তা বৈধ আর যদি তিনি তাকে ফিরিয়ে দেন তাহলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। (ফাতহুল বারী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩১৭১)
‘আওনুল মা‘বূদে আছে, «صلى سبحة الضحى ثمانى ركعات» নববী বলেনঃ যুহার সালাতের হাদীসের মধ্যে এটাই সর্বাধিক স্পষ্ট যা সহীহাতে আছে। তিনি বলেন, এর দ্বারা চাশ্তের সালাত উদ্দেশ্য। এর দ্বারা অত্র হাদীসের মাধ্যমে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে কাযী ‘ইয়ায ও অন্যান্যের অবস্থান প্রতিহত হচ্ছে। আর তাদের বক্তব্য এই যে, উম্মু হানী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের সময় সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন তার নিয়্যাত সম্পর্কে নয়। সুতরাং সম্ভবত ঐ সালাতটি মক্কা বিজয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় স্বরূপ ছিল, আবূ দাঊদের এ হাদীসের সানাদ বুখারীর শর্তে বিশুদ্ধ।
আহমাদ ইবনু সালিহ বলেনঃ এর উদ্দেশ্য হলো- আহমাদ বিন সালিহ এবং আহমাদ বিন ‘আমর-এর শব্দের ভিন্নতা উল্লেখ করা। আহমাদ বিন সালিহ তার শব্দ سبحة الضحى উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ- তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন চাশ্তের আট রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন। ইবনুস্ সার্হ এটা উল্লেখ করেননি। বরং তিনি বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন আট রাক্‘আত সালাত আদায় করেছেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৩য় খন্ড, হাঃ ১২৮৬)
(ذَهَبْتُ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ عَامَ الْفَتْحِ فَوَجَدْتُه يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَةُ ابْنَتُه تَسْتُرُه بِثَوْبٍ) অর্থাৎ- আমি মক্কা বিজয়ের বছর আল্লাহর রসূলের কাছে গেলাম, অতঃপর তাকে গোসলরত অবস্থায় পেলাম আর তাঁর কন্যা তাঁকে কাপড় দ্বারা আড়াল করছিল। এতে মাহরাম নারীর উপস্থিতিতে পুরুষের গোসল বৈধ হওয়ার দলীল রয়েছে, তবে শর্ত এই যে, ঐ পুরুষ ও মহিলার মাঝে কাপড় বা অন্য কিছুর পর্দা থাকতে হবে। (শারহে মুসলিম ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৩৩৬)