পরিচ্ছেদঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭৬-[১৭] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবনু ওয়ালীদ -কে বানী জাযীমাহ্-এর বিরুদ্ধে অভিযানে পাঠালেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানালেন। কিন্তু তারা ’’আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি’’ সঠিকভাবে বাক্যটি উচ্চারণ না করে ’’আমরা স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করেছি’’ এ বাক্যটি উচ্চারণ করতে থাকে। এমতাবস্থায় খালিদ তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করতে লাগলেন এবং বন্দীদেরকে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। একদিন তিনি আমাদের প্রত্যেককে স্বীয় বন্দীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিলেন। আমি (বর্ণনাকারী) বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আমার বন্দীকে হত্যা করব না এবং আমার সাথীরাও কেউ তাদের বন্দীকে হত্যা করবে না। অতঃপর ঘটনাটি আদ্যোপান্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলাম। এতদশ্রবণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর দু’ হাত উপরে উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! খালিদ-এর কৃত অপরাধ হতে আমি তোমার নিকট আমার দায়মুক্তি ঘোষণা করছি। এভাবে দু’বার বললেন। (বুখারী)[1]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: بَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَالِدَ بْنَ الْوَلِيدِ إِلَى بَنِي جَذِيمَةَ فَدَعَاهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ فَلَمْ يُحْسِنُوا أَنْ يَقُولُوا: أَسْلَمْنَا فَجَعَلُوا يَقُولُونَ: صَبَأْنَا صَبَأْنَا فجعلَ خالدٌ يقتلُ ويأسِرُ وَدَفَعَ إِلَى كُلِّ رَجُلٍ مِنَّا أَسِيرَهُ حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمٌ أَمَرَ خَالِدٌ أَنْ يَقْتُلَ كُلُّ رَجُلٍ مِنَّا أَسِيرَهُ فَقُلْتُ: وَاللَّهِ لَا أَقْتُلُ أَسِيرِي وَلَا يَقْتُلُ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِي أسيره حَتَّى قدمنَا إِلَى النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فذكرناهُ فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ أَنِّي أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صنعَ خالدٌ» مرَّتينِ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

عن ابن عمر قال: بعث النبي صلى الله عليه وسلم خالد بن الوليد الى بني جذيمة فدعاهم الى الاسلام فلم يحسنوا ان يقولوا: اسلمنا فجعلوا يقولون: صبانا صبانا فجعل خالد يقتل وياسر ودفع الى كل رجل منا اسيره حتى اذا كان يوم امر خالد ان يقتل كل رجل منا اسيره فقلت: والله لا اقتل اسيري ولا يقتل رجل من اصحابي اسيره حتى قدمنا الى النبي صلى الله عليه وسلم فذكرناه فرفع يديه فقال: «اللهم اني ابرا اليك مما صنع خالد» مرتين. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (وَدَفَعَ إِلٰى كُلِّ رَجُلٍ مِنَّا أَسِيْرَه حَتّٰى إِذَا كَانَ يَوْمٌ) ত্বীবী বলেনঃ অর্থাৎ- তিনি আমাদের কাছে বন্দী হস্থান্তর করলেন এবং তাকে ঐ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিলেন যেদিন তিনি বন্দীকে হত্যার ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশ দিবেন। অতঃপর তিনি বন্দীদের হত্যার ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশ করলেন।

(حَتّٰى قَدِمْنَا إِلَى النَّبِى ﷺ) ত্বীবী বলেনঃ এখানে ভাষ্য গোপন আছে- আর তা হলো আমাদের কোনো ব্যক্তি তার বন্দীকে হত্যা করবে না। বরং সে তাকে ঐ পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আল্লাহর রসূলের কাছে আগমন না করব। অতঃপর আগমন করা পর্যন্ত আমরা সংরক্ষণ করেছি।

(اَللّٰهُمَّ أَنِّىْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ) খত্ত্বাবী বলেনঃ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল বন্দীদের صَبَأْنَا উক্তি থেকে কি উদ্দেশে তা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তাদের ক্ষেত্রে খালিদ-এর ধীরস্থিরতা বর্জন এবং তাড়াতাড়ি করাকে অপছন্দ করলেন। কেননা الصَّبَأَ এর অর্থ এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মের দিকে বের হয়ে যাওয়া- এ কারণে মুশরিকরা আল্লাহর রসূলকে ‘সবী’ বলে ডাকত। আর এটা মূলত তার নিজ ধর্মের বিরোধিতা করার কারণে। অতএব তাদের صَبَأْنَا উক্তি থেকে এ উদ্দেশ্য হওয়ার সম্ভাবনা রাখছে যে, আমরা আমাদের দীন হতে ইসলাম ছাড়া অন্য দীন ইয়াহূদী, অথবা খ্রীষ্টান অথবা অন্য কোনো ধর্মের দিকে বের হয়ে গেছি। এ উক্তি যেহেতু ইসলাম ধর্মের দিকে স্থানান্তর হওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট নয়, তাই খালিদ তাদের হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। কেননা ইসলাম গ্রহণ করার কারণে রক্তপাত বন্ধ হওয়ার শর্তসমূহ পাওয়া যায়নি। আরও সম্ভাবনা রাখছে যে, খালিদ ধারণা করেছে, তারা আনুগত্যের প্রতি অবজ্ঞা করে ‘ইসলাম’ শব্দ উচ্চারণ করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

খত্ত্বাবী বলেনঃ খালিদ মুজতাহিদ হওয়ায় খালিদের কর্মের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শাস্তি দেননি। এ সত্ত্বেও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খালিদ-এর কর্ম থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে দু‘আ করার হিকমাত হলো এ কথা জানিয়ে দেয়া যে, তিনি খালিদকে এ কাজ করার অনুমতি দেননি। আর তিনি তা করেছেন এ আশঙ্কায় যে, কেউ ধারণা করতে পারে যে, খালিদ -এর বন্দী হত্যা করায় তাঁর অনুমতি রয়েছে। আর পরবর্তীতে অন্য যে কেউ এমন কাজে যাতে তিরস্কৃত হয়।

ইবনুল বাত্ত্বল বলেনঃ মুজতাহিদ ব্যক্তির ফতোয়া যদি বিদ্বান দলের ফতোয়ার বিপরীত হয়- এ ক্ষেত্রে যদিও মুজতাহিদ ব্যক্তি হতে পাপ রহিত হয়ে যায় তথাপিও অনেকের কাছে ভুলকারী ব্যক্তির জরিমানা আবশ্যক। এটা মতানৈক্যপূর্ণ। আর যা স্পষ্ট তা হলো- কোনো কাজ থেকে নিজেকে মুক্তি দাবী করা ঐ কাজের কর্তার পাপকে আবশ্যক করে না। জরিমানাকেও আশ্যক করে না, কেননা ভুলকারী ব্যক্তির পাপ মার্জনা করা হয় যদিও তার কাজ প্রশংসিত না হয়। (ফাতহুল বারী ১৩শ খন্ড, হাঃ ৭১৮৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad